আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৫ ডিসেম্বর বড়দিন। ২০১৯ বছর আগে জেরুজালেমের কাছাকাছি বেথলেহেম নগরীর এক গোয়ালঘরে আজকের দিনে জন্ম নিয়েছিলেন খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশু। মানবজাতির ত্রাণকর্তা যিশু হিংসা, বিদ্বেষ, পঙ্কিলতার পথ থেকে মানুষকে উদ্ধার করে তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন ভালোবাসা, করুণা, মিলন ও সুন্দরের পথ।
যিশুর জন্মদিন শুধু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের জন্য আনন্দবার্তা বয়ে আনেনি, সমগ্র মানবজাতির জন্যই দিনটি আনন্দের। পৃথিবীতে বহু মহামানব এসেছেন মানব সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করতে। কিন্তু কারোর জন্মদিনে এভাবে বিশ্বব্যাপী উদযাপন করা হয় না। ২৪ ডিসেম্বর যে উৎসবের শুরু, তার শেষ ৫ জানুয়ারিতে। ইংরেজি নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে।
বড়দিনের আগমনে মানুষের মাঝে ঈশ্বরের স্বর্গীয় ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে রোমান ক্যাথলিক খিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, ‘ঈশ্বর প্রত্যেককেই ভালোবাসেন। এমনকী আমাদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ব্যক্তিটিও তার ভালোবাসা বঞ্চিত হন না।’
বড়দিন উপলক্ষে পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘আমরা প্রায়ই ভাবি ভালো কাজ করলে ঈশ্বর আমাদের ভালো করবেন, আর খারাপ করলে তিনি আমাদেরকে সাজা দেবেন। কিন্তু ঈশ্বর আসলে এমন নন। তিনি সবাইকে ভালোবাসেন, যে ভালো কাজ করে তাকে, আর যে খারাপ কাজ করে তাকেও ভালোবাসেন।’
বড়দিনের আগের রাতে গতকাল মঙ্গলবার ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায় সমবেত হাজার হাজার মানুষের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে একথা বলেন পোপ। বড়দিন পালনকালে প্রথা অনুযায়ী বিশ্বকে বার্তা দিতে পোপ বুধবার আবারো সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায় উপস্থিত হবেন।
ক্রিস্টমাসে কেনো মাতামাতি? এক গো-শালায় কুমারী মা মেরির কোলে জন্মেছিলেন যিশু। মানুষের মনে ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা জাগিয়ে বিশ্ব থেকে হিংসা দূর করতে ক্রুশ বিদ্ধ হয়ে প্রাণ দিতেও দ্বিধা করেননি তিনি। তার অনুগামীরা সমাজে খ্রিস্টান হিসেবে পরিচিত। ধর্ম ভাগ হয়ে যায় ক্যাথলিক আর প্রোসেস্টান্টে। যিশুর বাণী সম্বলিত গ্রন্থ পরে বাইবেল নামে পরিচিত হয় বিশ্বে।
কেনো ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন? খিস্টানদের ধর্মীয়গন্থ বাইবেলে যিশুর কোনো জন্মতারিখ দেয়া নেই। তবে যীশুর জন্মের আগে রোমে প্রথম খ্রিস্টান সম্রাটের আমলে ২৫ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো বড়দিন উদযাপিত হয়েছিল। কয়েক বছর পরে, পোপ জুলিয়াস আনুষ্ঠানিকভাবে ওই তারিখকে যীশুর জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে এর গোরাপত্তন।
ক্রিসমাস ট্রি উৎসবে ক্রিসমাস গাছ সাজানোর রীতি হাজার বছরের পুরনো। উত্তর ইউরোপে তখন ফার গাছকে এভাবে সাজানো হতো। ফার গাছ ছাড়াও আলো দিয়ে সাজানো হত চেরি গাছকে। যারা খুব গরিব, তারা কাঠের টুকরো জড়ো করে ত্রিভুজ আকার দিয়ে তাকে সাজাতেন।
ধীরে ধীরে ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে এমন রীতি পালনের প্রথা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। আলো, মিষ্টি, খেলনা, তারা, ঘণ্টা দিয়ে সাজানো হয় গাছটি। ধীরে ধীরে বড়দিনের এই উৎসবের ঢেউ এসে লাগে ভারতীয় উপমহাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেও। একইভাবে ২৫ ডিসেম্বরে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয় এসব দেশেও।
|