মিয়া আবদুল হান্নান : বাসে আগুনের ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা মামলায় আগাম জামিন পেয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ দলের শতাধিক নেতা-কর্মী। বুধবার (১৮ নভেম্বর) হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আগাম জামিনের এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে আগাম জামিনের মেয়াদ শেষ হলে নেতা-কর্মীদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ নভেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মোট ১১টি বাস পোড়ানো হয়।
এসব ঘটনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের দায়ী করে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ১০টির বেশি মামলা হয়। এসব মামলায় বিএনপির কয়েক শ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়।গত ১৬ নভেম্বর রোববার বিএনপির আইন সম্পাদক কায়সার কামাল জানান, ১৪টি মামলায় বিএনপির ১৪০ জন নেতা-কর্মী হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ পৃথক জামিন আবেদনগুলো হাইকোর্টে শুনানির জন্য ওঠে।বিএনপির নেতা-কর্মীরা আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন চান। আদালতে জামিন আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরী, শাহজাহান ওমর, সালাউদ্দিন দোলন, রুহুল কুদ্দুস, মজিবুর রহমান ও কাজী মো. জয়নাল আবেদিন। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনসহ, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের শতাধিক নেতাকর্মীর জামিন হয় এ দিন। জামিন নিয়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মামলা হামলা দিয়ে কাজ হবে না। আমাদের আন্দোলন দমাতে পারবে না। তবে জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কিনা সে ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান।
* * পুলিশের ১৩ মামলায় আসামি বেড়ে ৫ শতাধিকে দাড়িয়েছে। রাজধানীতে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইশরাক হোসেনসহ ৫ শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে ১৩টি মামলা করেছে পুলিশ। মামলাগুলোতে গ্রেফতার হওয়া ৪১ জনের মধ্যে ৩২ জনকে রিমান্ড করেছেন আদালত। ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীজুড়ে নাশকতার ঘটনায় ভাড়াটে অপরাধীরা অংশ নেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা।ডিএমপি জানিয়েছে, ঘটনাস্থলের ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নাশকতাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১০টি বাস পোড়ানোর ঘটনায় জড়িতদের ধরতে বেশির ভাগকে এরই মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।বাস পোড়ানোর ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় সর্বোচ্চ ৯ জনসহ ৮ থানায় মোট ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ৪১ জনকে আদালতে তুলে ৭ দিন করে রিমান্ড চাইলে বিচারক ৩২ জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ৫১৭ জনকে আসামি করে ৮ থানায় ১১টি মামলা করেছে পুলিশ। শাহবাগ ও মতিঝিল থানার ৬ মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইশরাক হোসেন, যুবদল সাধারণ সম্পাদক টুকু এবং ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ২৩৪ জনকে। একটি মামলায় সর্বোচ্চ ৯৫ জনকে আসামি করেছে ভাটারা থানা।ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে পরিচালক উপপুলিশ কমিশনার ওয়ালিদ হোসেন সময় সংবাদকে বলেন, নাশকতায় ভাড়াটে অপরাধীরা অংশ নেয়। জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই বাস পোড়ানো হয়। রাজনৈতিক পরিচয়ধারী অনেক আসামি রয়েছেন যারা আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
|