জুমআ`র দিনের ফজিলত ৮০ বছরের নফল এবাদতের সওয়াব লাভ ও ৮০ বছরের গুনাহ্ মাফ
মিয়া আবদুল হান্নান : জুমার দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় জুমার দিনের ফজিলত বেশি। এই দিনের মধ্যে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বিশেষ কিছু সওয়াব নিহিত রেখেছেন। তাই এই দিনে রয়েছে বিশেষ কিছু আমল। যাতে রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে গুনাহ মাফের সুযোগ।তবে সর্বপরি গুনাহ মাফসহ সকল ইবাদত কবুল করার মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তিনি ইচ্ছা করলে কবুল করবেন আর ইচ্ছা না করলে কবুল করবেন না। কিন্তু আমাদেরকে তার সৃষ্ট বান্দা হিসেবে একচিত্তে আল্লাহরই ইবাদতে মশগুল থাকা জরুরি।জুমাআর দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে হাদিসে এসেছে। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর না উঠে ওই স্থানে বসা অবস্থায় ৮০ বার নিম্নে উল্লেখিত দরুদ শরীফ পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হবে এবং ৮০ বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব তার আমল নামায় লেখা হবে।..
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়াসাল্লিম তাসলিমাজুমার দিনের আরো কিছু আমলের মধ্যে রয়েছে, সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা। হাদিসে এসেছে, জুমার দিনে সুরা কাহফ তিলাওয়াত করলে কিয়ামতের দিন আকাশতুল্য একটি নূর প্রকাশ পাবে। আর বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করা এবং বেশি বেশি জিকির করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুক। আমিন।
|
মিয়া আবদুল হান্নান : জুমার দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় জুমার দিনের ফজিলত বেশি। এই দিনের মধ্যে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বিশেষ কিছু সওয়াব নিহিত রেখেছেন। তাই এই দিনে রয়েছে বিশেষ কিছু আমল। যাতে রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে গুনাহ মাফের সুযোগ।তবে সর্বপরি গুনাহ মাফসহ সকল ইবাদত কবুল করার মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তিনি ইচ্ছা করলে কবুল করবেন আর ইচ্ছা না করলে কবুল করবেন না। কিন্তু আমাদেরকে তার সৃষ্ট বান্দা হিসেবে একচিত্তে আল্লাহরই ইবাদতে মশগুল থাকা জরুরি।জুমাআর দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে হাদিসে এসেছে। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর না উঠে ওই স্থানে বসা অবস্থায় ৮০ বার নিম্নে উল্লেখিত দরুদ শরীফ পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হবে এবং ৮০ বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব তার আমল নামায় লেখা হবে।..
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়াসাল্লিম তাসলিমাজুমার দিনের আরো কিছু আমলের মধ্যে রয়েছে, সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা। হাদিসে এসেছে, জুমার দিনে সুরা কাহফ তিলাওয়াত করলে কিয়ামতের দিন আকাশতুল্য একটি নূর প্রকাশ পাবে। আর বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করা এবং বেশি বেশি জিকির করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুক। আমিন।
|
|
|
|
ইসলাম ডেস্ক : রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়েছে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম ও ওফাত দিবস ১২ রবিউল আওয়ালকে।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর দিবসটিতে বাংলাদেশের সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন ও অফিস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এছাড়া বিদেশি কূটনৈতিক মিশন ও দূতাবাসগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
অবিলম্বে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম ও ওফাত দিবস ১২ রবিউল আউয়াল মুসলমানদের কাছে এক পবিত্র দিন। এ দিনটি মুসলমানরা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পালন করেন।
|
|
|
|
অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশের আকাশে শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) কোথাও ১৪৪২ হিজরি সালের পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে ১৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার পবিত্র জমাদিউস সানি মাস ৩০ দিন পূর্ণ হবে এবং আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি রোববার থেকে পবিত্র রজব মাস গণনা করা হবে। প্রেক্ষিতে আগামি ২৬ রজব ১৪৪২ হিজরী, ২৬ ফাল্গুন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ১১ মার্চ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে মি`রাজ পালিত হবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আলতাফ হোসেন চৌধুরী।
সভায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মিজান-উল-আলম, ওয়াকফ প্রশাসক আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ফারুক আহম্মেদ (অতিরিক্ত দায়িত্ব), মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের উপ-সচিব মো: শাফায়াত মাহবুব চৌধুরী, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোঃ মাহবুব আলম, অতিরিক্ত প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মোঃ শাহেনুর মিয়া, বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপ-পরিচালক মোঃ আবদুর রহমান, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের পিএসও আবু মোহাম্মদ ,মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার অধ্যক্ষ মো: আলমগীর রহমান, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, লালবাগ শাহী জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুহাম্মদ নেয়ামতুল্লাহ ও চকবাজার শাহী জামে মসজিদ এর খতিব মুফতি শেখ নাঈম রেজওয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরবি শব্দ `লাইলাতুল` অর্থ রাত, আর `মেরাজ` অর্থ ঊর্ধ্বগমন। মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী, ২৬ রজব দিনগত রাতে ঊর্ধ্বাকাশে ভ্রমণ করে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) আল্লাহ তায়ালার সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন। এ বছর সেই রাতটি পড়েছে আগামী ২২ মার্চ।
লাইলাতুল মেরাজ মুসলমানদের কাছে বিশেষ মর্যাদার। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নফল ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে এই মূল্যবান রাত কাটান। অনেকে নফল রোজাও রাখেন এ দিন।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : মুসলমানদের সপ্তাহিক প্রধান ইবাদত হলো জুমআর খুতবাহহ শোনা এবং নামাজ আদায় করা। এ দিন মুসল্লিরা আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে দ্রুত মসজিদের দিকে চলে আসবে। কুরআনুল কারিমের নির্দেশনাও এটি। মসজিদে এসে মনোযোগের সঙ্গে আদব রক্ষা করে জুমআর খুতবাহহ শোনাও ইবাদত। এ ব্যাপারে রয়েছে হাদিসের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। কী সেই দিক নির্দেশনা?
জুমআর দিন মসজিদে এসেই নির্ধারিত নামাজ আদায় করে সামনের (প্রথম) কাতার থেকে সারি পূরণ করে বসে যাওয়া এবং জুমআর খুতবাহহ শোনার জন্য অপেক্ষা করাই অন্যতম আদব। তবে জুমআর খুতবাহহ শোনার সময়ও রয়েছে কিছু আদব ও নিয়ম।
জুমআর খুতবাহহ অত্যন্ত চুপচাপ, মনোযোগ, একাগ্রতা, আসক্তি, আবেগ ও আগ্রহের সঙ্গে শোনা। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দিকনির্দেশনাগুলো সর্বান্তকরণে আমল করার জন্য বিশৃঙ্খলা না করে নিরবে মনোযোগ দিয়ে ভালোভাবে শোনার নির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে পাকে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `যে ব্যক্তি গোসল করে জুমআর নামাজ পড়তে এসে নির্ধারিত (সুন্নাত) নামাজ পড়ল; তারপর নিরবে (বসে অত্যন্ত মনোযোগ ও একাগ্রতার সঙ্গে খুতবাহ শুনতে) থাকল, দ্বিতীয় খুতবাহ থেকে অবসর হওয়ার পর ইমামের সঙ্গে ফরজ নামাজ আদায় করল; তার গত এক জুমআ থেকে অন্য জুমআ (এক সপ্তাহ) বরং আরও অতিরিক্তি তিন দিনের অর্থাৎ গত ১০ দিনের গোনাহ মাফ করে দেয়া হলো।` (মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, (খুতবাহর গুরুত্ব এত বেশি যে,) খতিব খুতবাহ দেয়ার জন্য বের হয়ে (মিম্বারে) এলে তখন (মসজিদে উপস্থিত মুসল্লিদের জন্য) কোনো নামাজ পড়া এবং কথা বলাও জায়িজ নেই।` (ইবনে মাজাহ)
মনে রাখতে হবে জুমআর খুতবাহ হচ্ছে মুমিন মুসলমানের জন্য হেদায়েত ও কল্যাণের নসিহত। জীবন পরিচালনার পথনির্দেশিকা। যা ভালোভাবে একাগ্রতার সঙ্গে শোনে সে অনুযায়ী আমল করাই মুমিনের একান্ত কাজ।
সুতরাং জুমআর দিন মসজিদে এসে কোলাহল, বিশৃঙ্খলা, কথাবার্তা ও শোরগোল করা যাবে না। নির্ধারিত সুন্নাত নামাজ পড়ে মনোযোগের সঙ্গে খুতবাহ শোনার জন্য অপেক্ষা করা। খুতবাহ শুরু হলে তা একাগ্রতার সঙ্গে আমলের নিয়েতে শোনাই মুমিন মুসলমানের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমআর দিন একাগ্রতার সঙ্গে জুমআর খুতবাহ শোনার তাওফিক দান করুন। খুতবাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
|
|
|
|
ধর্ম ডেস্ক : স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক ভালোবাসা ও মায়া-মমতার উপর প্রতিষ্ঠিত দাম্পত্য জীবন। মহান আল্লাহ তাআলা ভালোবাসা ও সুখ-শান্তিময় এ বন্ধনের কথা তুলে ধরেছেন কুরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
`তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, তিনি মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ, পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছ। আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।` (সুরা রূম : আয়াত ২০-২১)
সংসার জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক সুসম্পর্ক ও ভালবাসার মর্যাদা ব্যাপক। কুরআন ও হাদিসের বর্ণনাসহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জীবনে এর অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। দাম্পত্য জীবনে সাধারণ আচার-আচরণে রয়েছে সাওয়াব, কল্যাণ ও ভালোবাসার হাতছানি। যা হতে পারে দুনিয়ার সব মানুষের জন্য গ্রহণীয় ও অনুকরণীয় আদর্শ। তাহলো- > পাস্পরিক ভালোবাসা - রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণ তাঁকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। আর প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম সুন্নাত বা আদর্শ হচ্ছে স্ত্রীকে ভালোবাসা। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `আমার কাছে তোমাদের পার্থিব সামগ্রীর মধ্য থেকে প্রিয় করে দেয়া হয়েছে- `স্ত্রী ও সুগন্ধিকে। আর নামাজকে আমার জন্য বানানো হয়েছে চক্ষু শীতলকারী।` (ত্বাবারানি)
- স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের ভালোবাসা যদি আল্লাহর জন্য হয় আবার ঘৃণা করাও যদি তার জন্য হয় তবে তারা আরশের ছায়ায় স্থান পাওয়া ৭ শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত হবে। সুতরাং দাম্পত্য জীবনে দ্বীনদারী, ইবাদত-বন্দেগি, সততা, নৈতিকতা, সচ্চরিত্র, সদাচার ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভালোবাসা এবং ঘৃণা হবে আল্লাহর জন্য।
- দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর যদি একে অপরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে এবং নিজের জন্য যা পছন্দ করে তার সঙ্গীর জন্যও তাই পছন্দ করে ; তবে তারা উভয়ে ঈমানের প্রকৃত সাধ অস্বাদন পাবে। হাদিসে এসেছে- হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ অনুভব করবে- - অন্য সবার তুলনায় যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল অধিক প্রিয়। - যে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তাঁর বান্দাকে ভালোবাসে। আর - যাকে আল্লাহ কুফর থেকে মুক্তি দিয়েছেন, তারপর সে কুফরের দিকে ফিরে যাওয়াকে এমন অপছন্দ করে যেমন আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে।` (মুসলিম)
> পারস্পরিক কথাবার্তা দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরের সঙ্গে সুন্দর ভাষায় কথা বলে তবে হাদিসের পরিভাষায় তাদের জন্য রয়েছে সাদকা করার সাওয়াব। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `একটি ভালো কথা হল সাদকা।` (বুখারি)
> হাসি মুখে কথা বলা দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরের সঙ্গে মুচকি হেসে কথা বলে তবে হাদিসের পরিভাষায় তাদের জন্য তাতেও রয়েছে সাদকা করার সাওয়াব। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `তোমার ভাইয়ের (সাক্ষাতে) মুচকি হাসাও একটি সাদকা।` (তিরমিজি)
> পরস্পরিক আনন্দ দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরকে খুশি করা আল্লাহর কাছে নেক আমল হিসেবে বিবেচিত। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় কাজ হলো- কোনো মুসলিমের হৃদয়ে আনন্দ প্রবেশ করানো।`
> পরস্পরের উপকার দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরের কোনো উপকার করে বা ভালো কাজ করে তবে এর বিনিময়ে সাদকার সাওয়াব লাভ করবে। আর একজন অপর জনের উপকার করায় আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ ও প্রিয় মানুষ হওয়ার মর্যাদা লাভ করবে তারা। একাধিক হাদিসে এসেছে- - রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `প্রতিটি ভালো কাজ সাদকা। আর তোমার তোমাদের ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাটাও একটি ভালো কাজ।` (তিরমিজি) - `যে ব্যক্তি মানুষের বেশি উপকার করে সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ।` (ইবনে হিব্বান) - `আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তি সর্বাধিক প্রিয় যে সর্বাধিক মানুষের উপকার করে।`
> পারিবারিক খরচ দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক খরচ বহন ও একে অপরের মুখে খাবার তুলে দেয়ায় রয়েছে শ্রেষ্ঠ সাদকার সাওয়াব পাওয়ার ঘোষণা। হাদিসে এসেছে- প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `শ্রেষ্ঠ সাদকা হল, একজন মানুষ তার স্ত্রীর মুখে এক লোকমা খাবার তুলে দেবে।` (বুখারি ও মুসলিম) শুধু তা-ই নয়, অন্য হাদিসে `স্ত্রী পরিবারের জন্য খরচ করাকেও সাদকার সওয়াব বলা হয়েছে` যদি সাদকার নিয়তে খরচ করা হয়।`
> বিধিনিষেধ মেনে চলা দাম্পত্য জীবনে আল্লাহর বিধিনিষেধ মেনে চলায় রয়েছে বিশেষ সাওয়াব ও উপকারিতা। স্বামী স্ত্রী যদি একে অপরকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করে, তাতেই তারা সদকার সাওয়াব পাবে। হাদিসে এসেছে- `সৎ কাজের আদেশ দেয়া, অসৎ কাজ হতে বিরত রাখা সাদকা।` (মুসলিম)
মনে রাখতে হবে দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সুসম্পর্ক ও স্বাভাবিক কথাবার্তায় শুধু সাওয়াবই নয় বরং পারিবারিকভাবে তা হতে পারে পরস্পরের দাওয়াতি কাজের অংশ। পরিবারে উভয়েই হতে পারে স্বাতন্ত্র দাঈ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জীবনেও এর শুভ সূচনা হয়েছিল। তিনি সর্ব প্রথম নিজ স্ত্রী হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছেই নবুয়তের দাওয়াত দিয়েছিলেন। তার কথা ও কাজের সুন্দর প্রকাশ ও বাস্তবায়ন হয়েছিল আম্মাজান হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার মাঝে। সর্বকালে সর্বযুগে বিশ্বনবি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পারিবারিক জীবন অনুপ্রেরণা ও কল্যাণ লাভের একমাত্র উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে মাঝে সব স্বাভাবিক কথা ও কাজকে সাওয়াবে পরিপূর্ণ করে দিন। হাদিসের আলোকে শান্তিপূর্ণ সুখময় জীবন হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
|
|
|
|
আতিক আল মাসউদ : নামাজ এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়। এ ইবাদত আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার অনন্য একটি মাধ্যম।
মুমিন জীবনের অন্যতম একটি ইবাদত হলো সালাত বা নামাজ। ইসলামের প্রথম স্তম্ভ সালাত এবং কেয়ামতের দিন সর্ব প্রথম বিচার ফয়সালা হবে সালাতের মাধ্যমে।
রাসূল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব হবে। (তিরমিজি)
দৈনন্দিন জীবনে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে বিঘ্নতা, অলসতা ও নানা ধরনের চিন্তার সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। এর প্রধান কারণ হলো সালাতে একনিষ্ঠতা, মনোযোগ না থাকা।
একনিষ্ঠ ছাড়া সালাত কখনো আল্লাহ কবুল করবেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা একনিষ্ঠতার সঙ্গে আমার ইবাদত কর। (সুরা বাইয়্যিনা-৫)
সালাতে পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ সাধনে পাঁচটি কৌশল রয়েছে।
প্রথম কৌশল হলো, অন্তরের মধ্যে এই অনুভব করা এটা শেষ নামাজ। মৃত্যু এমন একটি বিষয়ের যা কখন আসে বলা যায় না।
দুনিয়া এখন গ্লোবাল ভিলেজের মাধ্যমে হাতের মুঠোয়, কিন্তু মৃত্যু এর বাহিরের একটি অজানা-অধরা বিষয়।
সালাতে যখন দাঁড়াবে তখন এটা অনুভব করতে হবে এটাই বিদায়ী নামাজ। রাসূল (সা.) বলেছেন, যখন তুমি সালাতে দাঁড়াও তখন তুমি বিদায়ী সালাত পড়। (মুসনাদে আহমদ)। হতে পারে এটি জীবনের শেষ নামাজ।
সালাতে মনোযোগ বৃদ্ধির দ্বিতীয় কৌশল হলো, এ অনুভব করা সালাত হলো আল্লাহর সঙ্গে বান্দার কথোপকথনের মাধ্যম।
সালাতের মাধ্যমে গোলাম ও মনিবের মাঝে কথা বলা যায়। যদিও সেটা আমাদের শ্রবণ হয় না, তবুও এ মনোভাব ধারণ করতে হবে অন্তর দ্বারা আমরা কথা বলছি।
আল্লাহতায়ালা বলেন, বান্দা যখন নামাজ পড়ে তখন তা আমি আধা-আধি ভাগ করি এবং তার কথার উত্তর দিয়ে থাকি। (বুখারী)
বান্দা যখন বলে, সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি এই বিশ্বজগতের মালিক। তখন আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার প্রশংসা আদায় করেছে।
এভাবে প্রতিটি কথার উত্তর দিয়ে থাকেন। এই অনুভবটা অন্তরের মাধ্যে লালন করতে পারলে নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধি হবে।
সালাতে মনোযোগ বৃদ্ধির তৃতীয় কৌশল হলো, ধীরস্থির হয়ে সালাত আদায় করা। সালাত মুমিন জীবনে সবরের (ধৈর্য) শিক্ষা দেয়।
সালাত নম্র-ভদ্র হয়ে বিনয়ের সাথে আদায় করতে হয়।
আল্লাহতায়ালা বলেন, মুমিনরা তাদের সালাতে বিনয়ী অবলম্বন করে। (সুরা মুমিনুন-০২)
যত্নসহকারে সালাত আদায় না করলে সালাতে মনোযোগ সাধন হবে না। কেরাত, রুকু ও সেজদায় ধীরস্থিরতা অবলম্বন করতে হবে।
রাসূল (সা.) বলেছেন, লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বড় চোর ওই ব্যক্তি যে, ধীরস্থিরভাবে নামাজ পড়ে না ও রুকু সেজদায় দেরি করে না। (তীবরানি)
তাসবিহ তাহলিলগুলো অর্থসহ জানার মাধ্যমে ধীরস্থিরভাবে সালাত আদায় করতে হবে; যার ফলে মনোযোগ অন্যদিকে ঝুঁকে পড়ার সুযোগ থাকবে না।
সালাতে মনোযোগ বৃদ্ধির চতুর্থ কৌশল হলো এ অনুভব করা- আমি আল্লাহর সঙ্গে দেখা করছি।
আল্লাহতায়ালা সার্বক্ষণিক আমাদের প্রতি দৃষ্টি রাখেন কিন্তু দুনিয়ার কোনো চর্মচক্ষু দ্বারা তাকে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব না।
সালাতের ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এমনভাবে, যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন। (বুখারি, মুসলিম)
আল্লাহর সামনে যখন মাথানত করতে হয় তখন এই ভয়ে করতে হবে তিনি যেন আমাকে দেখতে পাচ্ছেন।
পৃথিবীর সব চোখ এড়ানো যায় কিন্তু আল্লাহর চোখ কখনো এড়ানো সম্ভব নয়। বান্দা যখন সেজদা দেয় তখন আল্লাহর কুদরতি পায়ের উপরে সিজদা দেয়।
সুতরাং এক্ষেত্রে খুবই সজাগ থাকতে হবে। এই অনুভব লালন করতে পারলে ভয় বৃদ্ধি পাবে ও পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ সাধন হবে।
সালাতে মনোযোগ বৃদ্ধির সর্বশেষ কৌশল হলো- পূর্ববর্তীদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।
পূর্ববর্তী হলো- সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ী, তাবে-তাবেইন ও বিশিষ্ট ইসলামী স্কলাররা। কারণ তারা সর্বত্র আল্লাহকে বেশি ভয় করে এবং তাদের মতের ভিত্তিতে অসংখ্য মাসয়ালার সমাধান হয়ে থাকে।
রাসূল (সা.) যেভাবে নামাজ পড়তেন সাহাবায় কেরাম নিজ চোক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তাদের থেকে ধারাবাহিকভাবে আলেমরা শিক্ষা লাভ করেছেন।
তাদের এই শিক্ষার আলোকে দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করতে পারলে খুশু, বিনয়ীভাব ও পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ লাভ সম্ভব হবে।
তাই আমাদের সবার উচিত এই পাঁচটি কৌশল দৈনন্দিন অনুশীলন করা। এগুলোর মাধ্যমে নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা রাখি- ইনশাআল্লাহ।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ, মীরসরাই, চট্টগ্রাম।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : জুমআর দিন মসজিদে আসা খুতবা শোনা ও নামাজ পড়া মুমিন মুসলমানের সাপ্তাহিক ইবাদত। এ দিন নামাজ পড়তে মসজিদে যেতে হয়। তবে মসজিদে গিয়ে বসার ক্ষেত্রে কিছু আদব ও নিয়ম রয়েছে। এ সম্পর্কে হাদিসের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
জমআর দিন আগে আগে মসজিদে গিয়ে প্রথম কাতারে বসার ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এরপর যারা যখন যাবে, পর্যায়ক্রমে তাদের সাওয়াব ও মর্যাদা দেয়া হবে মর্মে হাদিসের নির্দেশনা এসেছে।
তবে প্রথম কাতারে বসার ক্ষেত্রে কাউকে ডিঙিয়ে বা কারো কাঁধ ও মাথার উপর দিয়ে লাফিয়ে সামনে যাওয়ার ব্যাপারে রয়েছে বিধিনিষেধ। এক্ষেত্রে করণীয়- জুমআর নামাজ জামে মসজিদে পড়া। মসজিদে গিয়ে যেখানে জায়গা পাওয়া যাবে সেখানেই বসা। করো মাথা ও কাঁধের উপর দিয়ে লাফিয়ে সামনে যেতে চেষ্ট না করা। এর দ্বারা মানুষের শারীরিক কষ্ট ও মানসিক দুঃখ অনুভব হয় এবং তাদের নীরবতা, একাগ্রতা ও মনোযোগের ব্যঘাত ঘটে।
জুমআর দিন দুই ব্যক্তির মাঝে ফাঁক করে সামনে যাওয়ার ব্যাপারে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উৎসাহিত করেননি। হাদিসে এসেছে- হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন আল্লাহ্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,`যে ব্যক্তি জুমআর দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, এরপর (মসজিদে) যায়, আর দু`জনের মধ্যে ফাঁক করে না (যেখানে জায়গা পায় সেখানেই অবস্থান করে) এবং তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ সালাত আদায় করে। আর ইমাম যখন (খুতবার জন্য) বের হন তখন চুপ থাকে। তার এ জুমআ এবং পরবর্তী জুমআর মধ্যবর্তী সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।` (বুখারি)
তবে কোনো মুসলমানের সুবিধার্থে কিংবা আদব-শৃঙ্ক্ষলা রক্ষায় সামনের কাতার থেকে পেছনের কাতারে অর্থাৎ প্রথম কাতার থেকে দ্বিতীয় কাতারে আসার ব্যাপারে হাদিসে বরকতের ঘোষণা এসেছে- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `যে ব্যক্তি এক মুসলমান ভাইয়ের সুবিধার্থে প্রথম কাতার ছেড়ে দ্বিতীয় সারিতে আসে, আল্লাহ তাআলা তাকে প্রথক সারির দ্বিগুণ পুরস্কার ও সাওয়াব দান করবেন।` (তিবরানি)
সুতরাং উল্লেখিত হাদিসের আলোকে এ বিষয়গুলো প্রমাণিত যে, মসজিদে গিয়ে যেখানে জায়গা পাওয়া যাবে সেখানেই অবস্থান গ্রহণ করা। সেখানে বসেই মসজিদের পরিবেশ বজায় রাখা। আর মসজিদের আদব রক্ষার্থে প্রথম সারি থেকে পেছনে আসার প্রয়োজন হলে কারও মনো নষ্ট না করে দ্বিতীয় সারিতে চলে আসা।
তবে বিনা প্রয়োজনে কাউকে একদিকে সরিয়ে তার মাথা ও কাঁধের উপর দিয়ে লাফিয়ে সামনে না যাওয়াই উত্তম ও আদব। যেখানে জায়গা খালি পাওয়া যাবে সেখানেই বসে পড়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমআর দিন মসিজদে বসার আদব মেনে চলার তাওফিক দান করুন। ইসলামের সৌন্দর্য প্রকাশে হাদিসের নির্দেশনা যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। জুমআর দিনের আজিমাত ও ফজিলত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
|
|
|
|
মাহমুদ আহমদ : সমাজের প্রতিটি স্তরে মন্দ কাজের ছড়াছড়ি। আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে যে, দিনের পর দিন নানা অপকর্মের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ছোট বড় কোনো পাপকেই আমরা পাপ মনে করছি না। আমাদের চিন্তা-চেতনা এমন যে, যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবো, মৃত্যু কখনো স্পর্শ করতে পারবে না। প্রকৃত পক্ষে এমন চিন্তা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, মৃত্যু যখন আসবে তখন পাহাড়সম ধন-সম্পদ এবং ক্ষমতা তা ঠেকাতে পারবে না। তারপরও আমরা প্রতিনিয়ত বিরামহীনভাবে মন্দ কাজ করেই যাচ্ছি। আল্লাহকে ভুলে যাচ্ছি। মৃত্যুর কথাও স্মরণ করছি না। মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করছেন- `তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু তোমাদের স্পর্শ করবেই।` (সুরা নিসা : আয়াত ৩৪)
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সবচেয়ে বুদ্ধিমান কে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করে এবং মৃত্যুর পরের জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।` (ইবনে মাজাহ)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হে মানব সম্প্রদায়! সুখ শান্তি বিনাশকারী মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ কর।` (তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
দুনিয়ার চাকচিক্যময় জীবনের মোহে আমরা বেশির ভাগ সময় মত্যুর মতো অবধারিত সত্য ভুলে নানা অপরাধে জড়িয়ে পাড়ি। আমরা যদি মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করি তবে বিভিন্ন অপকর্ম ও সব মন্দ কাজ থেকে রক্ষা পেতে পারি। এ কথাই বলেছেন বিশ্বনবি- `জীবনের স্বাদ বিনষ্টকারী মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ কর।` (তিরমিজি)
যখন মৃত্যুর কথা স্মরণ হবে তখনই ভালো কাজ করবে মানুষ। তখনই অন্যায় অপরাধ থেকে ফিরে থাকবে। আর তাতে পরকালের ভান্ডার ভারি হতে থাকবে। হাদিসে এসেছে- এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! দুনিয়াতে সবচেয়ে বুদ্ধিমান কারা? তিনি জবাবে বললেন, যারা বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করে এবং প্রস্তুতি গ্রহণ করে। দুনিয়া ও পরকালে তারাই সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরবে।` (মুজামুল কাবির)
দুনিয়াতে আমরা দুইদিনের মুসাফির। অথচ আমাদের চলাফেরা ও আচার-আচরণে এসব ভুলে যাই।
কারণে-অকারণে একে অপরের ওপর রেগে যাই। ঝগড়াবিবাদে জড়িয়ে পড়ি। হাদিসে এসেছে- হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কাঁধে ধরে বললেন, দুনিয়াতে এভাবে কাটাও যেন তুমি একজন মুসাফির বা পথিক।`
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, `তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সকাল বেলার অপেক্ষা কর না বরং সকালে উপনীত হয়ে সন্ধ্যার অপেক্ষা কর না। সুস্বাস্থ্যের দিনগুলোতে রোগ-ব্যধির দিনগুলোর জন্য প্রস্তুতি নাও আর জীবদ্দশায় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর।` (বুখারি)
আসুন ভেবে দেখি আমরা কীভাবে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবো। মৃত্যুর প্রধান প্রস্তুতি হল- নিজেকে প্রতিনিয়ত ভালো কাজে নিয়োজিত রাখা এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা। কথায় কথায় এমন কিছু না বলা, যাতে গোনাহ বা অন্যায় সংঘটিত হয়। ফলে আল্লাহ আমাদের ওপর অসন্তুষ্ট হবেন। যেভাবে উপদেশ দিয়েছেন বিশ্বনবি- `তোমরা নেক আমলের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতের অংশ সাদৃশ ফেতনায় পতিত হওয়ার আগেই।` (মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করার মাধ্যমে ভালো কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
|
|
|
|
ধর্ম ডেস্ক : জামাআতে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও কল্যাণ একাকি নামাজ পড়ার চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতের সবাইকে জামাআতে নামাজ আদায়ের জোর তাগিদ ও নির্দেশ দিয়েছেন।
জামাআতে নামাজ পড়ায় রয়েছে বিশেষ ৫টি সুফল ও উপকারিতা, যা একাকি নামাজ পড়ায় অর্জন করা সম্ভব নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকনির্দেশনায় তা সুস্পষ্ট এবং প্রমাণিত। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
> বিশেষ সাওয়াব জামাআতে নামাজ আদায়ে রয়েছে বিশেষ সাওয়াব। একাকি নামাজ পড়ার ব্যক্তির চেয়ে ২৭ গুণ বেশি সাওয়াবের কথা এসেছে হাদিসের বিশুদ্ধ বর্ণনায়- হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, `একাকির নামাজ অপেক্ষা জামাআতে নামাজ সাতাশ গুণ উত্তম।` (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, মুয়াত্তা মালেক)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পুরুষদের পক্ষে জামায়াতে নামাজ আদায় করার ছাওয়াব তার ঘরে ও বাজারে নামাজ পড়ার চেয়ে পঁচিশ গুণ বেশি। এর (মসজিদে নামাজ আদায়ের) কারণ হলো- - কোনো ব্যক্তি যখন ভালোভাবে অজু করে নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করে এবং নামাজ ছাড়া তার মনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য না থাকে; তখন মসজিদে প্রবেশ না করা পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপের (কদমের) বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং একটি গোনাহও মাফ হয়ে যায়। - মসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সে নামাজের অপেক্ষায় বসে থাকে, ততক্ষণ সে নামাজের অনুরূপই ছাওয়াব পেতে থাকে। - আর যে ব্যক্তি নামাজ আদায়ের পর কাউকে কষ্ট না দিয়ে ওজুসহ মসজিদে অবস্থান করে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার ক্ষমার জন্য এই বলে দোয়া করতে থাকে- `হে আল্লাহ! এ (ব্যক্তি) কে তুমি ক্ষমা করে দাও; হে আল্লাহ! এর তাওবা কবুল কর; হে আল্লাহ! এর প্রতি তুমি দয়া প্রদর্শন কর।` (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, মুয়াত্তা মালেক)
> ফেরেশতাদের দোয়া হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অজু অবস্থায় তার নামাজের স্থানে যতক্ষণ অবস্থান করে, ফেরেশতারা তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত (ক্ষমা ও রহমতের) দোয়া করতে থাকে। তারা দুআ করে- `হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! তাকে দয়া করুন।` (বুখারি)
নামাজের জন্য অপেক্ষা কিংবা নামাজ পরবর্তী সময়ে অপেক্ষা; এ সবই মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামাজের আগে কিংবা পরেই হয়ে থাকে।
> মুনাফেকি থেকে মুক্তি হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `মুনাফেকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন হলো এশা ও ফজরের নামাজ। যদি তারা এর প্রতিদান সম্পর্কে জানতো, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও (মসজিদে) নামাজে এসে অংশগ্রহণ করতো।` (বুখারি) এ দুই ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাআতের সঙ্গে আদায় করা অনেক কঠিন। সুতরাং যারা এশা এবং ফজর নামাজ মসজিদে এসে জামাআতে আদায় করবে তারা মুনাফেকি থেকে মুক্তি পাবে।
> সারারাত নামাজ পড়ার সাওয়াব হজরত ওসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- `যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করল, সে অর্ধেক রাত কেয়াম (নামাজ আদায়) করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করল (অর্থাৎ এশা এবং ফজর নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করল) সে যেন সারারাত কেয়াম (নামাজ আদায়) করল।` (মুসলিম)
জামাআতের সঙ্গে এশা ও ফজর নামাজ পড়ার মাধ্যমেই সব মুমিন মুসলমানের দ্বারাই সারারাত জেগে নামাজ পড়ার সাওয়াব অর্জন করা সম্ভব।
> গোনাহ মাফ ও মর্যাদা লাভ হজরত আবু সাইদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সামনে সমবেত সাহাবাদের প্রশ্ন করেন- আমি কি তোমাদের এমন একটি কাজের কথা বলবো না? যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের গুনাহকে মাফ করবেন এবং তোমাদের নেকিকে বাড়িয়ে দেবেন!`
সমবেত সব সাহাবারা বললেন, `অবশ্যই; হে আল্লাহর রাসুল!` রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, `প্রতিবন্ধকতা থাকলেও যথাযথভাবে অজু করে পায়ে হেঁটে মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা।` (ইবনে মাজাহ)
জামাআতে নামাজ পড়া ব্যক্তিদের জন্য উল্লেখিত সুফলগুলো নির্ধারিত। সুতরাং সবার উচিত, জামাআতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। হাদিসে ঘোষিত বিশেষ মর্যাদা ও সুফলগুলো অর্জন করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাআতে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে উল্লেখিত সুফলগুলো পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
|
|
|
|
মাহমুদ আহমদ : পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছি, রমজানের রোজা রাখছি এবং অন্যান্য ভালো কাজও করছি কিন্তু সংসারে অশান্তি যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না।
নামাজে যে দোয়া করছি তাও কবুল হচ্ছে না, সন্তানরাও নানান খারাপ কাজে লিপ্ত। এর কারণ কি? এর মূল কারণ হচ্ছে আমার অন্তর ও বাহির এক নয়।
আমি মুখে বলি একটা আর করি অন্য। আমি অন্যকে যে নসিহত করি তা নিজেই পালন করি না। নিজ ঘরে সেই নসিহতের আমল নেই। আমার সবকিছুতে মিথ্যা ছেয়ে আছে।
হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, `পবিত্রতা ছাড়া নামাজ আর চুরি ও আত্মসাতের সম্পদের সদকা কবুল হয় না।` (সহিহ মুসলিম)
তাই যেব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে তার পুণ্যকর্ম আল্লাহর দরবারে মূল্যহীন।
আসলে যারা মিথ্যা বলে আল্লাহতায়ালার তাদের ওপর ভরসা নেই। তারা মনে করে মিথ্যা বলে আমি অনেক কিছু অর্জন করে নিব কিন্তু তারা বুঝে না যে, এই মিথ্যাই তাকে ধ্বংস করে ছাড়বে, তার সন্তানদের ভবিষ্যত সে নষ্ট করছে। মিথ্যাবাদীদের মূলত ঈমান নেই।
যেভাবে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, `আল্লাহর নিদর্শনাবলীতে যারা ঈমান রাখে না কেবল তারাই মিথ্যা আরোপ করে থাকে।` (সুরা নাহাল, আয়াত: ১০৫)
মহানবী (সা.) বলেছেন, `তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ে মিথ্যা কসম করা থেকে বিরত থেকো। কেননা এর কারণে (সাময়িক) পণ্য বেশি বিক্রি হলেও বরকত কমে যায়।` (মুসলিম)
এখন আমরা কি দেখছি? ব্যবসায়-বাণিজ্য যে কাজই করছি সব কিছুতে মিথ্যাকে প্রাধান্য দিচ্ছি, যার ফলে সংসারের শান্তি যেন বিনষ্ট হয়ে গেছে।
একই সঙ্গে আমার ইবাদত-বন্দেগি আল্লাহর দরবারে কোন কাজে আসছে না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমার সকল কাজে মিথ্যার ছড়াছড়ি। যদিও আমরা জানি মিথ্যা বলার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ, তারপরও মিথ্যাই যেন আমার সঙ্গী।
দেহের প্রতিটি অঙ্গের বিষয়ে আল্লাহর দরবারে আমাদেরকে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। সামান্য লাভের জন্য মিথ্যা বলে পার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন: `আর যে বিষয় তোমার জানা নেই সে বিষয়ে কোন অবস্থান নিও না। নিশ্চয় কান, চোখ ও হৃদয়-এগুলোর প্রত্যেকটি সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।` (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৩৬)
আল্লাহতায়ালা আরো ইরশাদ করেন, `আর তোমাদের জিহ্বা দ্বারা বানানো মিথ্যার ওপর নির্ভর করে বলো না যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম, আল্লাহর ওপর মিথ্যা রটানোর জন্য। নিশ্চয় যারা আল্লাহর নামে মিথ্যা রটায়, তারা সফল হবে না।` (সুরা নাহাল, আয়াত : ১১৬)
সর্বক্ষেত্রে যারা সত্য বলে তাদের পুরস্কারস্বরূপ রয়েছে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি আর যার সাময়িক লাভের জন্য মিথ্যাকে জীবনের সঙ্গী বানিয়ে নিয়েছে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন।
হাদিসে এসেছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: `সত্যবাদিতা কল্যাণের দিকে পথ দেখায় এবং কল্যাণ মানুষকে জান্নাতের পথে নিয়ে যায়। কোন মানুষ সত্য কথা বলতে থাকলে আল্লাহ তাকে সত্যবাদীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। মিথ্যাচার পাপাচারের দিকে নিয়ে যা
য় এবং পাপাচার মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। কোন লোক মিথ্যা কথা বলতে থাকলে আল্লাহ তাকে মিথ্যাবাদীদের তালিকাভুক্ত করেন।` (বোখারি ও মুসলিম)
মহানবী (সা.) বলেন, `মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলে, তখন মিথ্যার দুর্গন্ধে ফেরেশতারা মিথ্যাবাদী থেকে এক মাইল দূরে চলে যায়।` (তিরমিজি)
এখন বলুন, আমি নামাজ-রোজা যাই করিনা কেন মিথ্যা যদি পরিত্যাগ না করি তাহলে আমার এ আমলে কোন লাভ নেই। তাই যেভাবেই হোক মিথ্যা পরিত্যাগ করতেই হবে। মিথ্যা পরিত্যাগ ছাড়া আমার ইবাদত আল্লাহর কাছে কোনই মূল্য নেই।
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলার কারণে কারণে প্রতিনিয়ত কতই না সুখের সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে।
এছাড়া আমাদের মিথ্যা বলার কারণে সন্তানদের ওপরও এর মন্দ প্রভাব বিস্তার করে। যারফলে সন্তানরাও মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত হয়ে যায় আর ধীরে ধীরে তারা পরিবারের বদনামের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তাই আসুন, নিজেদের পুণ্যকর্মগুলোকে আল্লাহর দরবারে গৃহীত করার জন্য মিথ্যা পরিত্যাগ করি আর পাপকর্মের জন্য তার কাছে ক্ষমা চাই।
আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে তার ক্ষমার চাদরে আবৃত করে নিন, আমিন।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
|
|
|
|
ইসলাম ডেস্ক : পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, (তিনিই) আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই।
তিনি চিরঞ্জীব-জীবনদাতা ও চিরস্থায়ী-স্থিতিদাতা। তন্দ্রা ও নিদ্রা তাকে আচ্ছন্ন করতে পারে না। আকাশসমূহে যা আছে ও পৃথিবীতে যা আছে সব তারই। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৫)।
ইসলাম এই দাবি করে যে, এই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা হলেন একজন জীবন্ত প্রভূ প্রতিপালক। তিনি নিজ বান্দাদের জন্য বর্তমান যুগেও সেভাবেই প্রকাশিত হন যেভাবে পূর্ববর্তী যুগসমূহে প্রকাশিত হতে থেকেছেন।
আদি থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত তার গুণাবলীর কোন একটি গুণও নষ্ট হয় নি। তিনি আজও সেভাবেই শুনতে পান যেভাবে পূর্বে শুনতেন আর আজও সেভাবেই পুণ্যবানদের সাথে ব্যবহার করেন যেভাবে পূর্বে করতেন।
আল্লাহতায়ালার জীবন্ত এবং চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী হওয়াই মানুষকে তার ওপর ঈমান আনতে, তার সাথে সম্পর্ক রাখতে, তার প্রতি ভালোবাসা পোষণ করতে বাধ্য করে। যদি তিনি জীবন্ত এবং অনাদি ও অনন্ত না হন তাহলে তার জীবন সম্পর্কেও ভীতি থেকে যাবে যে, তিনি আবার আমাদের পূর্বেই না মারা যান।
আল্লাহতায়ালা নিজের জীবন্ত হওয়ার প্রমাণ দেয়ার মাধ্যমে তার ওপর তাওয়াক্কুল করার দাওয়াত দিয়েছেন এভাবে যে, তিনি বলেন: আর তুমি সেই চিরঞ্জীব (সত্তার) ওপর ভরসা কর যার মৃত্যু নেই। (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৫৮)।
আল্লাহপাক আরও ইরশাদ করেন: এ (পৃথিবীতে) যা-ই আছে সবই নশ্বর, কিন্তু প্রতাপ ও মর্যাদার অধিকারী তোমার প্রভু-প্রতিপালকের সত্তা অবিনশ্বর। (সুরা রহমান, আয়াত: ২৬-২৭)।
অর্থাৎ পৃথিবী ও আকাশের সব জগতের প্রত্যেকটি সত্তা পরিবর্তনশীল এবং নশ্বর। আর যার ওপর কোন পরিবর্তন এবং ধ্বংস আপতিত হবে না তিনিই হলেন খোদা।
আল্লাহতায়ালার ওপর ঈমান এবং বিশ্বাসই প্রকৃত পক্ষে ধর্মের ভিত্তি এবং আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্রবিন্দু। এটি ছাড়া ধর্মের চিন্তাই করা যায় না।
ইসলাম আল্লাহতায়ালার সত্তাকে একটি জীবন্ত বাস্তবতা বা নিদর্শন রূপে উপস্থাপন করেছে। তিনি এক জীবন্ত এবং চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী প্রভূ। তার জীবন্ত সত্তার একটি প্রমাণ হলো, তিনি নিজ বান্দাদের দোয়া শুনেন এবং সেগুলোর উত্তর দেন।
যেভাবে আল্লাহতায়ালা কোরআনে ইরশাদ করেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। (সুরা মুমিন, আয়াত: ৬০)।
আল্লাহর সঙ্গে মহানবীর (সা.) সম্পর্ক এবং এক জীবন্ত সৃষ্টিকর্তার ওপর ঈমান এবং এর প্রমাণের হাজার হাজার উদাহরণের মাঝ থেকে শুধুমাত্র একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছি।
মহানবী (সা.) বিভিন্ন বাদশাহদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে পত্র লিখেন। মহানবীর (সা.) এই চিঠি যখন ইরানের বাদশাহ কিসরার কাছে পৌঁছে তখন এই চিঠির লেখা পড়ে তার এত রাগ হয় যে, সে এই চিঠিকে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে এবং বলে, আমার গোলাম হয়ে আমাকে এভাবে সম্বোধন করে।
এরপর সে তার ইয়ামেনের গভর্নরকে হুকুম দেয়, এই আরবী অর্থাৎ মহানবীকে বন্দী করে আমার সামনে উপস্থাপন করা হোক। অতএব ইয়ামেনের গভর্নর মহানবীকে (সা.) বন্দী করার জন্য দু`জন লোক প্রেরণ করে। তারা মদীনায় পৌঁছে মহানবীকে (সা.) উপদেশের মাধ্যমে বুঝায় যে, আপনি আমাদের সাথে চলুন নতুবা কিসরা আপনার দেশকে ধ্বংস করে দিবে। তিনি (সা.) বলেন, তোমরা আজ রাতে এখানে অবস্থান কর, আমি ইনশাল্লাহতায়ালা আগামীকাল তোমাদের উত্তর দিব।
তারপর তারা যখন দ্বিতীয় দিন মহানবীর (সা.) কাছে যায় তখন মহানবী (সা.) বলেন: তোমাদের মালিকের (অর্থাৎ ইয়ামেন এর অধিকারীর) কাছে গিয়ে বলে দাও যে, আমার প্রভু তার প্রভুকে (অর্থাৎ কিসরাকে) আজ রাতে হত্যা করেছেন।
যখন ইয়ামেনের গভর্নরের কাছে মহানবীর (সা.) এই উত্তর পৌঁছে তখন সে বলে, এ ব্যক্তি যেই কথা বলেছে যদি সত্যিই এমন হয়ে যায় তাহলে সে সত্যিই আল্লাহর এক নবী হবে।
অতএব কিছুদিন পর গভর্নরের নামে কিসরার পুত্রের চিঠি আসে যাতে লিখা ছিল, আমি দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে নিজ পিতাকে হত্যা করেছি।
এমনই ছিল জীবন্ত আল্লাহর সাথে মহানবীর (সা.) সম্পর্ক। যার ফলে মহানবীকে (সা.) সর্বাবস্থায় আল্লাহতায়ালা নিরাপত্তার বেষ্টনিতে রেখেছিলেন।
আসলে আল্লাহতায়ালাকে যারা ভালোবাসেন, যাদের হৃদয় পাক-পবিত্র, তারা যখন আল্লাহকে স্মরণ করে, তাকে ডাকেন, তার সাহায্য কামনা করেন তখন আল্লাহ তাদের ডাক শুনেন এবং তার সাহায্যের জন্য ছুটে আসেন।
যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন: `এবং যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তখন বল, আমি নিকটে আছি। আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনার উত্তর দেই যখন সে আমার নিকট প্রার্থনা করে। সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার ওপর ঈমান আনে যাতে তারা সঠিক পথ প্রাপ্ত হয়` (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬)।
তাই আমাদের সবার উচিত হবে এই জীবন্ত আল্লাহর সাথে প্রেমময় সম্পর্ক গড়ে তোলা, তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলে জীবন পরিচালনা করা।
আসুন! সব ধরনের অপকর্ম থেকে নিজেক দূরে রাখি এবং আল্লাহর স্মরণে সময় অতিবাহিত করি।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : জুমআর নামাজের জন্য তাড়াতাড়ি মসজিদের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করাই এ দিনের প্রধান কাজ। এ দিন ক্ষমা মর্যাদা পাওয়ার সহজ আমল ঘোষণা করেছেন বিশ্বনবি। জুমআর দিনের মর্যাদাপূর্ণ এ আমলগুলো কী?
আজানের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত মসিজদের দিকে যাওয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। যারা এ নির্দেশ মেনে প্রথম ওয়াক্তে মসজিদে গিয়ে প্রথম সারিতে অবস্থান নেবে তাদের জন্য তিন তিন বার মাগফেরাতের দোয়া করেছেন বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে- হজরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম কাতারের লোকদের জন্য তিনবার মাগফেরাতের (ক্ষমার) দোয়া করতেন। আর দ্বিতীয় সারির লোকদের জন্য একবার মাগফেরাতের দোয়া করতেন` (ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)
যারা প্রথম ওয়াক্তে মসজিদে উপস্থিত হতে পারবেন তাদের দ্বারাই সম্ভব প্রথম সারিতে অবস্থান করা। আর তাতে মিলবে দুটি ফজিলত ও মর্যাদা। একটি হলো- প্রথম ওয়াক্তে মসজিদে যাওয়ার কুরবানির সাওয়াব আর দ্বিতীয়টি হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা লাভ।
কেননা মুমিন মুসলমানের প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নসিহত ছিল যে, তারা জুমআর দিন প্রথম ওয়াক্তে মসজিদে যাবে এবং প্রথম কাতারে অবস্থান করবে। আর তাতে মিলবে অসাধারণ সব নেয়ামত ও পুরস্কার। অন্য হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণন করেন , রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `যে ব্যক্তি জুমআর দিন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এমনভাবে গোসল করল যেমন পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করে। অর্থাৎ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সারা শরীর পানি ঢেলে খুব ভালোভাবে শরীর পরিস্কার করল তারপর প্রথম ওয়াক্তে মসজিদে গিয়ে পৌঁছল। তাহলে সে যেনো একটি গরু কুরবানি করল। যে ব্যক্তি তারপর ২য় সময়ে গিয়ে পৌঁছল সে যেন একটি শিংওয়ালা দুম্বা কুরবানি করল। তারপর যে ব্যক্তি ৪র্থ সময়ে গিয়ে পৌঁছল সে যেন আল্লাহর রস্তায় একটি ডিম দান করল। তারপর খতিব বা ইমাম যখন খুতবা পড়ার জন্য বের হন; তখন ফেরেশতা মসজিদের দরজা ছেড়ে দিয়ে খুতবাহ শোনেন ও নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে এসে বসেন।` (বুখারি ও মুসলিম)
হাদিস দুটি প্রথম ওয়াক্তে মসজিদে আসার এবং প্রথম সারিতে বসার ব্যাপারে যেমন গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তেমনি এর চমৎকার মর্যাদাপূর্ণ ফজিলতও বর্ণনা করা হয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, মানুষ যদি প্রথম কাতারের ফজিলত কত বেশি? তা জানত তবে প্রথম সারিতে বসার জন্য প্রতিযোগিতা ও লটারির সাহায্য নিতো। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, `মানুষের প্রথম কাতারের সাওয়াব ও পুরস্কার সম্পর্কে জানা নেই। যদি প্রথম কাতারের সাওয়াব ও পুরস্কারের কথা জানতে পারতো তা হলে প্রথম সারির জন্য লটারির সাহায্য নেয়ার প্রয়োজন হতো।` (বুখারি ও মুসলিম)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমআর দিনকে গুরুত্ব দেয়া। আগে পবিত্রতা অর্জন করে মসজিদে যাওয়া। প্রথম ওয়াক্তের দিকে লক্ষ্য রাখা এবং মসজিদের প্রথম কাতারে অবস্থান করা।
মনে রাখা জরুরি প্রথম কাতারে বা সারিতে অবস্থানকারীর মাগফেরাতের জন্য প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন বার দোয়া করেছেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমআর দিন তার নির্দেশ ও বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষত ফজিলত ও মর্যাদা লাভে প্রথম ওয়াক্তে মসজিদে গিয়ে প্রথক সারিতে অবস্থান করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
|
|
|
|
ধর্ম ডেস্ক : জান্নাত মুমিনের সেরা প্রাপ্তি। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনটি গুণের অধিকারী ব্যক্তির জন্য আল্লাহর রহমতের জান্নাত প্রস্তুত বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের হিসাবও হবে সহজ। হাদিসে পাকে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `তিনটি বৈশিষ্ট্য বা স্বভাব যার মধ্যে থাকবে আল্লাহ তার হিসাব সহজ করে দেবেন এবং নিজ রহমতে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন নিবেদন করলেন- হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের বাবা-মা আপনার জন্য কুরবান হোক। সেই তিনটি বৈশিষ্ট্য বা স্বভাব কী? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাহলো- - যে তোমাকে বঞ্চিত করেছে; তাকে তুমি দান করবে। - যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে; তার সঙ্গে তুমি সম্পর্ক গড়বে। আর - যে তোমার ওপর জুলুম করেছে; তাকে তুমি ক্ষমা করে দেবে।` (তাবারানি, আত-তারগিব ওয়াত তারহিব)
সর্বোপরি কথা হলো অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর যে ব্যক্তি অত্যাচারীকে ক্ষমা করে দেবে; তার জন্য রয়েছে পছন্দনীয় জান্নাতের ঘোষণা। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `জান্নাতের মহা মর্যাদাবান একটি দরজা রয়েছে। এ দরজা দিয়ে ওই ব্যক্তিই প্রবেশ করবে; যে তার ওপর জুলুমকারীকে ক্ষমা করে দেবে।` (আল-ইহসান ইলাল ইয়াতিম, নুজহাতুল মাজালেস)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, পরকালের হিসাব সহজ হওয়ার এবং আল্লাহর বিশেষ রহমতের জান্নাতে স্থান পাওয়ার জন্য উল্লেখিত তিনটি স্বভাব নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করা। আর এতে মহান আল্লাহ মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে সহজ হিসাব ও জান্নাত দান করবেন। পরকালে হিসাব সহজ হতে বেশি বেশি এ দোয়া করা- اللَّهُمَّ حَاسِبْنِي حِسَابًا يَسِيرًا উচ্চারণ : `আল্লাহুম্মা হাসিবনি হিসাবাই ইয়াসিরা`। অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার হিসাবকে সহজ করে দিন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সহজ হিসাব দান, মর্যাদা বৃদ্ধি এবং বিশেষে রহমতের জান্নাত দান করুন। আমিন।
|
|
|
|
ধর্ম ডেস্ক : বিয়ের জন্য উকিল বা অভিভাবক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ে পড়ানো থেকে শুরু করে সব কাজেই উকিল বা অভিভাবকের প্রয়োজন। কিন্তু উকিল ছাড়া কি বিয়ে হবে? আবার বিয়ের জন্য উকিল বা অভিভাবক হওয়ার শর্তই বা কী?
হ্যাঁ, বিয়ের জন্য অভিভাবক তথা উকিল নিযুক্ত থাকা আবশ্যক। কেননা উকিল বা অভিভাবক ছাড়া কোনো বিয়ে নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উকিল বা অভিভাবক ছাড়া যে নারী বিয়ে করবে তার বিয়েকে বাতিল বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে নারী নিজেই নিজের বিয়ে সম্পন্ন করবে; তার বিয়ে বাতিল বাতিল বাতিল; অভিভাবক বা উকিল যদি ওই নারীর বিয়েতে বাধা সৃষ্টি করে। তবে যার উকিল বা অভিভাবক নেই, দেশের সুলতান (জনপ্রতিনিধি) সুলতান বা শাসক তার উকিল বা অভিভাবক হবে।` (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
অভিভাবক হওয়ার জন্য শর্ত সুতরাং বিয়ের জন্য যেমন উকিল বা অভিভাবক আবশ্যক তেমনি ৬ টি শর্তের আলোকে একজন ব্যক্তি উপযুক্ত অভিভাবক বা উকিল হতে পারবে। আর তাহলো- - বিয়ের উকিল বা অভিভাবক হতে হলে তাকে অবশ্যই আকল বা বিবেক সম্পন্ন হতে হবে। পাগল বা মস্তিষ্কবিকৃত হলে হবে না। - প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে। নাবালেগ বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোনো ব্যক্তি উকিল বা অভিভাবক হতে পারবে না। - বিয়ের জন্য অবশ্যই অভিভাবকবা উকিলকে স্বাধীন বা মুক্ত হতে হবে। পরাধীন বা ক্রীতদাস কখনো অভিভাবক বা উকিল হতে পারবে না। - বিয়ের উকিল বা অভিভাবককে অবশ্যই পুরুষ হতে হবে। কোনো নারীর জন্য বিয়ের অভিভাবক হওয়ার সুযোগ নেই। - যার বিয়ে হবে এবং যিনি অভিভাবক হবেন উভয়কেই একই দ্বীনের অনুসারি হতে হবে। অর্থাৎ কোনো মুসলিম ব্যক্তির বিয়ের সময় অভিভাবক অন্য ধর্মের হতে পারবে না। যেমন- - কোনো অবিশ্বাসী বা ভিন্ন ধর্মের অনুসারী কেউ কোনো মুসলিম নারীর অভিভাবক হতে পারবে না। আবার - আবার কানো মুসলিম ব্যক্তি কোনো অবিশ্বাসী নারীর অভিভাবকও হতে পারবে না। - যিনি উকিল বা অভিভাবক হবেন তাকে যোগ্য ও উপযুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ বিয়ের জন্য কুফূ বা সমতা রক্ষার ক্ষেত্রে বিয়ের কল্যাণ-ক্ষতি সম্পর্কিত জ্ঞানের অধিকারী হওয়া আবশ্যক।
মনে রাখতে হবে বিয়ের অভিভাবক বা উকিল হতে হলে উল্লেখিত শর্তগুলো থাকতে হবে। এর কোনো একটি না থাকলে কেউ বিয়ের জন্য অভিভাবক বা উকিল হতে পারবে না। তবে অভিভাবক হওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে দাদা, ভাই, চাচার ওপর অভিভাবক হওয়ার দায়িত্ব চলে আসবে। একান্তই যদি আত্মীয়দের মধ্যে কাউকে পাওয়া না যায় তবে দেশের মুসলিম শাসক কিংবা জনপ্রতিনিধি বিয়ের সময় অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে পারবে।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, অভিভাবক হওয়ার আগে উল্লেখিত বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন নিজের মধ্যে আছে কিনা তা দেখে নেয়া। নতুবা যার মধ্যে এ গুণ ও যোগ্যতাগুলো আছে তাকে অভিভাবক নিযুক্ত করা। কেননা অভিভাবক বা উকিল ছাড়া কোনো বিয়ে হবে না।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে যথাযথ অভিভাবকত্বের মাধ্যমে হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী বিয়ে সম্পাদন করার তাওফিক দান করুন। উপযুক্ত অভিভাবক বা উকিল হতে উল্লেখিত শর্তের আলোকে নিজেদের গঠন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
|
|
|
|
ধর্ম ডেস্ক : কারো জন্য বদ-দোয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। কেননা বদ-দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বিশেষ কারণে তিনি বদ-দোয়া করতে নিষেধ করেছেন। দোয়া কবুলের মুহূর্তগুলোতেও বদ-দোয়া করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু কেন? হাদিসে এসেছে-
হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `তোমরা নিজেদের সন্তান-সন্তুতি ওপর, নিজেদের ধন-সম্পদের ওপর বদ-দোয়া কর না। কেননা হতে পারে তোমরা আল্লাহর কাছে এমন সময়ে এমন কিছু প্রার্থনা করলে, যখন তার কাছে প্রার্থনা করলে তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে দেবেন।` (মুসলিম)
মনে রাখতে হবে মহান আল্লাহ কখন, কোন ব্যক্তির প্রার্থনা কবুল করবেন, তা তিনি ছাড়া আর কেউ জানেন না। তাই মন চাইলেই কারো জন্য বদ-দোয়া করা ঠিক নয়। বিশেষ করে নিজ সন্তান-সন্তুতি কিংবা ধন-সম্পদের ব্যাপারেও বদ-দোয়া করা ঠিক নয়। কেননা সন্তান-সন্তুতি ও ধন-সম্পদ আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিজ সন্তান-সন্তুতি, ধন-সম্পদসহ কারো ব্যাপারে যে কোনো সময় বদ-দোয়াকরা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। সবার জন্য কল্যাণের দোয়া করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : জুমুআ`র নামাজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নামাজ। جُمُعَة (জুমু`আহ) শব্দটি আরবি। এর অর্থ একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া। সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হলো শুক্রবার। আর শুক্রবারের শ্রেষ্ঠ নামাজ হলো জুমুআ`। জুমুআ`র নামাজের বিভিন্ন ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, জুমুআ` হচ্ছে শ্রেষ্ঠ দিবস। জুমুআ` নামে পবিত্র কুরআনে একটি স্বতন্ত্র সুরা নাজিল হয়েছে। যেহেতু, সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন শুক্রবারে প্রাপ্তবয়স্ক মুমিন-মুসলমান একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই স্থানে একত্রিত হয়ে জামাতের সঙ্গে সে দিনের জোহরের নামাজের পরিবর্তে এই নামাজ ফরজরূপে আদায় করে, সে জন্য এই নামাজকে `জুমুআ`র নামাজ` বলা হয়।শুক্রবারের দিন জোহরের নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। জুমুআ`র দুই রাকাত ফরজ নামাজ ও ইমামের খুতবাকে জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। সপ্তাহের এদিনে জুমিআ`র খতিব উম্মতের যাবতীয় প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে নির্দেশনা ও সমাধানমূলক উপদেশ দিয়ে থাকেন খুতবায়।এই দিনে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এক কাতারে মিলিত হন। মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- জুমুআ`র নামাজ না পেলে আমরা কী করব-?কারও জুমুআ`র নামাজ এক রাকাত ছুটে গেলে বাকি আরো এক রাকাত ইমামের সালাম ফেরানোর পর উঠে পড়ে নিলে তার জুমুআ` হয়ে যাবে। অনুরূপ কেউ দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর আগে থেকে পেলেও ওই রাকাত এবং তার সঙ্গে আর এক রাকাত পড়লে তারও জুমুআ`র নামাজ হয়ে যাবে।কিন্তু যদি কেউ দ্বিতীয় রাকাতের রুকু শেষ হওয়ার পর জামাতে শামিল হয়, তাহলে সে জুমুআ`র নামাজ পাবে না। এই অবস্থায় তাকে জোহরের ৪ রাকআত আদায়ের নিয়তে জামাআতে শামিল হয়ে ইমামের সালাম ফেরানোর পর ৪ রাকআত ফরজ পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, সৌদি উলামা-কমিটি ১/৪১৮, ৪২১)আর কেউ যদি জুমুআ`র নামাজ না পায় বা মসজিদে গিয়ে দেখে জুমিআ` শেষ হয়ে গেছে তবে তাকে জোহরের নামাজ পড়তে হবে। কারণ জামাত ছাড়া জুমুআ`র নামাজ হয় না।হাদিসে এসেছে, ইবনে মাসঊদ (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমুআ`র এক রাকআত পেয়ে যায়, সে ব্যক্তি যেন আর এক রাকাত পড়ে নেয়। কিন্তু যে (দ্বিতীয় রাকআতের) রুকু না পায়, সে যেন জোহরের ৪ রাকআত পড়ে নেয়।` (ইবনে আবী শাইবা, ত্বাবারানী, বায়হাকী, আলবানী : ৬২১)
পবিত্র কোরআনে সূরা আল (৯ আয়াত) জুমুআ`হ্ ইরশাদ করা হয়েছেঃ--أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ বাংলা তরজমা: -ইয়া আইয়্যাহল্লাযীনা আমানু ইযা নূদিয়া লিসসালাতি মিইঁ য়াওমিল জুমুআ`তি ফাসআ`ওইলা যিকরিল্লাাহি ওয়া যারূল্ বাইআ` যালিকুম খাইরুল্ লাকুম ইন্ কুন্তুুম তা`লামিন।
`মুমিনগণ, জুমুআ`র দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ।` (সূরা:অতএব জুমুআ`র নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এ নামাজ ছেড়ে দিলে হাদিসে ভয়াবহ ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি মুসলিমকে অবশ্যই জুমুআ`র নামাজ গুরুত্বসহ পড়া উচিত। আল জুমুআ`, আয়াত: ৯)অতএব জুমুআ`র নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এ নামাজ ছেড়ে দিলে হাদিসে ভয়াবহ ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি মুসলিমকে অবশ্যই জুমুআ`র নামাজ গুরুত্বসহ পড়া উচিত।
|
|
|
|
|
|
|