করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এই ক্রান্তিকালে জাতি হিসেবে আমাদের সকলের কাঙিক্ষত, প্রত্যাশিত ও অলংঘনীয় গুরুদায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। জাতীয় জীবনের এই সংকট মোকাবেলায় আপনি আমি ও আমাদের যে যার আবস্থান থেকে রাষ্ট্রের সুনাগরিক হিসেবে সঠিক ও যর্থাথ দায়িত্ববোধে উদ্ভ’দ্ধ হয়ে নিজেদের মেধা, মমনশীলতা, দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে যুগোপযোগি কৌশল অবলম্বন পূর্বক সাহায্য ও সহযোগিতা করা নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। এছাড়াও ক্ষুধা, দারিদ্র্য মুক্ত, বৈষম্যহীন, সমৃদ্ধ ও উন্নত সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে মুজিব শতবর্ষের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে দেশের তরে ত্যাগ স্বীকার করে প্রতিদান দ্য়োও দেশের ,দশের ,সময়ের দাবী। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) থেকে উদ্ভ’ত এই মহাদুর্যোগ রাষ্ট্র কিংবা সরকারের পক্ষে একা মোকাবেলা প্রায় অসম্ভব। এ জন্য আমাদের ধর্ম, বর্ণ, দল-মত, বিভিন্ন শ্রেণীপেশার-গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের মধ্যকার স্বার্থগত দ্ব›দ্ব -বিরোধর ঊর্ধ্বে ওঠে কিংবা মিমাংশা-নিষ্পত্তি করে জাতীয় একাত্মতা সৃষ্টি করতে হবে। কারণ দল-মত-পথের চেয়ে দেশের স্বার্থই সবচেয়ে বড়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এখনো সে রকম কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ পর্যবেক্ষণে পরিলক্ষিত হয়নি। দৃশ্যত হবে কি-না তাও নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ,সংশয় রয়েছে। যদি আমরা এমনটাই করতে না পারি বা ব্যর্থ হই তা হলে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা তথা সরকারী ত্রাণ ,প্রণোদনাসহ অন্যান্য সরকারী সাহায্য সুপরিকল্পিত ,সমন্বিত ও সুষমভাবে বন্টন করতে ব্যর্থ হবো। ইতোমধ্যে সরকারী ত্রাণ বিতরণে বিশৃংখলা, সমন্বয়হীনতা, স্থান-কাল-পাত্র ভেদাভেদ, দলীয় পরিচয় বিবেচনা, দলীয় পরিচয়ে ডিলারশীপ প্রদান, অসম বন্টনসহ নানা অনিয়ম সকলের দৃষ্টিগোচরীভ’ত হয়েছে। এছাড়াও জনপ্রতিনিধি নামধারী তথাকথিত মেম্বার, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, মেয়র এবং স্বার্থান্বেষী দলবাজ নেতা-কর্মী কর্তৃক সরকারী ত্রাণ আত্মসাৎ, চুরি এবং ইদুরের বৈশিষ্টধারণ করে গর্তে লুকিয়ে রাখার মত নির্লজ্জ্ব, ন্যাক্কারজনক ,অমার্জনীয়, আত্মঘাতী ঘটনা সংগঠিত হয়েছে যা জাতীয় জীবনে আরো একটি নেতিবাচক ইতিহাস রচিত হয়েছে। যে কোন রাষ্ট্র জাতীয় সংকটকাল মোকাবেলা ও সংকট উত্তরণের নিমিত্তে জাতীয় মাসসিক শক্তি, চেতনা, ইতিহাস -ঐতিহ্য এর শক্তিতে বলীয়ান হয়ে কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাষ্ট্র ,জনগণ ও রাষ্ট্রূীয় যন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে পুনরোজ্জীবিত করে অর্থনৈতিক চাকা সহ সামগ্রিক সূচক সচল ও গতিশীল করা হয়। এ জন্য কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দেয়া হয়। এতদপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র তথা রাষ্ট্রীয় সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টদের পুর্ণ্যদ্যেমে সেবা প্রদানের জন্যও উৎসাহমূলক প্রণোদন্ াঘোষনা করা হয়। বর্তমান প্রেক্ষিতে আমাদের দেশের সরকারও করোনা সংকট মোকাবেলায় কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য , সেবাখাত সহ বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করা হয়েছে। পাতা/০২ জাতি প্রত্যাশা করে, রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা বন্টনে সংর্কীণ দলীয় পরিচয়, নির্দিষ্ট ধর্ম-বর্ণ,দল-মত, গোষ্ঠী, স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা না করে সততা, নৈতিকতা ও মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটিয়ে সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় এনে সুপরিকল্পিত, সমন্বিত ও সুশৃংখলভাবে দক্ষতার সাথে সুষমভাবে বন্টন করা হবে। আর এ জন্য সর্বাগ্রে যেটি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে জাতীয় ঐক্য। কারণ ঐক্যমত্যেই ঐশ্বর্য, মতানৈক্যই মাশুল। এই জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে সবার মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ গড়ে ওঠবে । সবার মাঝে ন্যায়বোধ ও জাতীয় মানসিক শক্তি এবং মানবিক গুলাবলীর বিকাশ ঘটব্।ে আর এর মাধ্যমে বর্তমান সংকট ও তৎপরবর্তী নানা চ্যালেঞ্জ এর সুষ্ঠু ও সফলভাবে সমাধান করা যাবে মর্মে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি স্বস্তিদায়ক নয়। এমন কি বিদ্বেষপূর্ণ, বিবেদপূর্ণ, একগুয়ে, অনমনীয়, অসৌজন্যমূলক এবং অগণতান্ত্রিক। ফলশ্রæতিতে রাজনৈতিক ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় যন্ত্র বা রাষ্ট্রীয় সংগঠন, অর্থনৈতিক বিবিধ শক্তি তথা রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক বিবিধ শক্তি বা উপাদান ভারসাম্যপূর্ণ নয়। অর্থনৈতিক শক্তি তথা কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা ,কর্তৃত্ব, প্রভাব-প্রতিপত্তি সমাজের মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে পুঞ্জিভ’ত। অর্থ্যাৎ যারা দলীয় নেতা-কর্মী তাঁরাই এমপি, তাঁরাই সরকার, তাঁরাই মন্ত্রি, তাঁরাই আইনপ্রণেতা। আবার তাঁরাই কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-ব্যাণিজ্যের মালিক। অধিকন্তু তাঁরাই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, এনজিও, দাতাগোষ্ঠী, বহুজাতিক কোম্পানী, চাপসৃষ্টিকারীগোষ্ঠী , মিডিয়া, সিভিল সোসাইটি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণকর্তা। এই রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে সরকারী প্রণোদনা যখন যেভাবে বন্টন করা হোক না কেন তা চক্রাকার আবর্তে বৃত্তের মধ্যেই থাকবে। আপামর জনসাধারণ এর সুফল ভোগ থেকে বরাবরই বি ত থাকবে কিংবা বৈষম্যের শিকার হবে। যে মহৎ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে দেশের সর্বস্তরের শ্রেণী-পেশার মানুষকে টার্গেট করে ন্যায়নীতির ভিত্তিতে প্রণোদনা বন্টনের কথা তা ব্যর্থতায় পর্যবশিত হবে। রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার মধ্যকার সর্ম্পক যদি একাকার হয় কিংবা পার্থক্য নিরূপন করা যায় না, তখন রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়ন ঘটে। সমাজের বিপুল সংখ্যক জনগণ যদি আইন সভার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, তখন অর্থনৈতিক শক্তি বা গোষ্ঠীর নেতারা রাজনৈতিক ক্ষমতায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বা চাপসৃষ্টি করে নিজেদের স্বার্থের অনুক’লে রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পরিচালনা করে। ফলশ্রæতিতে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে চরম অরাজকতা, বিশৃংখলা, অস্তিতিশীলতা , সহিংসতা, পেশী শক্তির ব্যবহার, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি সহ নানা অসামাজিক, অনৈতিক ,অমানবিক অপকর্ম সংঘঠিত হয়। ইতোমধ্যে জাতি এই দুষ্টচক্রের মুখোশ উন্মোচন করেছে অথবা নিজেদের কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিজস্ব স্বরূপ প্রদর্শন করেছে। সম্প্রতি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সফল রাষ্ট্রনায়ক, দেশরতœ, স্বাধীন বাংলাদের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে অকপটে স্বীকার করে বলেছেন-” বৃত্তবানদের চাই চাই গেল না”। এই দুষ্ট দুর্বৃত্তচক্রের চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই, সীমা নেই,শুধুই অতৃপ্তি, অসন্তুষ্টি, আগা-গোড়া গ্রাস করার লালসা-বাসনা। সাম্প্রতিক কালের সরকারী ত্রাণ চুরি, আত্মসাৎ, ইদুর পাতা/০৩ স্বভাবের মত চাল-ডাল-তেল গর্তে লুকিয়ে রাখা, নগদ সহায়তা প্রদানে অনিয়ম, পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ইত্যাদি ছিল পরবর্তী বিষয়গুলোর দীর্ঘদিনের ধারাবাহিকতা । যেমন খাদ্যে ভেজাল, সড়ক দূর্ঘটনা, ক্যাসিনো কান্ড, রূপপুরের বালিশ কান্ড, হসপিটালের পর্দা কান্ড, ব্যাংক কেলেংকারী, শেয়ার বাজার কেলেংকারী, দিবালোকে নরহত্যা ইত্যাদি। করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং তৎপ্রেক্ষিতে করোনা উত্তর জটিল সমীকরণ ঘটবে, থাকবে নানা চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাও। যেমনঃ সামাজিক অস্তিরতা, দারিদ্য্র, দুর্ভিক্ষ, বেকারত্ব, কর্মসংস্থান, মুদ্রাস্ফীতি, বাজার সংকোচন, অর্থনৈতিক মন্দাসহ অনাকাঙিক্ষত অস্তিতিশীল পরিবেশ। এমন কি রাজনৈতিক অস্তিরতার দরুণ নেতৃত্বের সংকট, বৈধতার সংকট, জনবিক্ষোভ-বিদ্রোহ ও ঘটতে পারে। যদি আমরা এই রাজনৈতিক দুষ্ট চক্রাকার বৃত্তকে বা রাজনৈতিক দূর্বৃত্তপনা ভাঙতে না পারি কিংবা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হই তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের জাতীয় জীবনে নানা সংকট, সমস্যা ও মানবিক বিপর্যয়ও সৃষ্টি হতে পারে। সরকারই হচ্ছে জনগণের আশা-ভরসার কেন্দ্র স্থল। সরকারের সদিচ্ছা ও মহৎ উদ্যোগ যেমনঃ বিচারবুদ্ধি, সংযম, সহিষ্ণুতা, নৈতিকতা, উদার গণতান্ত্রিক মনোভাব, রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে পরিচালনা, জনগণকে সুশিক্ষিত, সুনাগরিক, ন্যায়পরায়ন, বিবেকবান ও মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন করে গড়ে তোলা এবং অপর পক্ষে জনগণের অধিকার ও দায়িত্ববোধ সচেতন হ্ওয়া, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ,পারস্পরিক সমঝোতা ও সহমর্মিতাই পারে মোদ্দাকথায়, সরকারের সদিচ্ছা ও জনগণের সচেতনতাই পারে রাজনৈতিক দূর্বৃত্তপনা ভাঙতে কিংবা নিয়ন্ত্রণ করে সংকট মোকাবেলা ও উদ্ভ’ত সমস্যা, চ্যালেঞ্জ এর সুষ্ঠু সমাধান করতে। দেশের প্রতি আনুগত্য ও কৃতজ্ঞা প্রকাশের এখনই সময়। এখনই সময় দেশ মাতৃকার কল্যাণে প্রতিদান দেওয়ার। কারণ মানুষ র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্বাঁচে আশায়, দেশ বাঁচে মানুষের ভালবাসায়। মা, মাটি ও মানুষকে সুরক্ষা করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে জীবনকে স্বার্থক ও মহৎ করে তুলি। কবির কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলি- ”স্বার্থক জন্ম মাগো, জন্মেছি এই দেশে স্বার্থক জনম মাগো, তোমায় ভালবেসে”। -----০---- লেখকঃ মো. আবদুস সালাম, ব্যাংকার এবং কক্সবাজার সুইমিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও চীফ কোচ।
|