উপ-সম্পাদকীয় : রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ধারণ করা। জলাধারকে ধারণ করে গড়ে উঠেছে অনিন্দ্যসুন্দর এই প্রকল্প। প্রতিদিন হাতিরঝিলের রাস্তায় গাড়ি চলাচলের অতিরিক্ত শত শত মানুষ এখানে ঘুরতে যায় একটুখানি প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে।
কিন্তু হাতিরঝিলের জলাধার এখন ভ্রমণপিপাসুদের জন্য অস্বস্তি বয়ে আনছে। এই ঝিলের পানিতে এখন উৎকট গন্ধ। চলতি মৌসুমে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়ার পর থেকে ঝিলের পানিতে দুর্গন্ধ বাড়ছে। ভ্রমণপিপাসু নগরবাসী এখানে এলেও দুর্গন্ধের কারণে বেশিক্ষণ থাকতে পারছে না।
শুধু এ মৌসুমে নয়, প্রকল্পটি উদ্বোধনের পর থেকেই শুষ্ক মৌসুমে দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। সমালোচিত হয় রাজউক। পানির উৎকট গন্ধের কারণে যেসব নাগরিক এই রুট ব্যবহার করে গাড়িতে যাতায়াত করেন, তারা এখন রুট পরিবর্তন করছেন। আর বিকালবেলায় আগে যে পরিমাণ দর্শক হাতিরঝিল এলাকায় যেতেন, সেই সংখ্যা এখন কমে গেছে অনেক।
হাতিরঝিল প্রকল্পটি নির্মিত হয়েছিল ২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে। পানির উৎকট গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে গত বছর ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পানিশোধন প্রকল্প হাতে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এরই মধ্যে এক বছর পেরিয়ে গেলেও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।
প্রকল্পটি আগামী বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত যেহেতু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি, তাই প্রশ্ন উঠেছে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা জলে যাবে কি না। হাতিরঝিলের পানি দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ার কারণ স্পষ্ট। এই প্রকল্প নির্মিত হয়েছিল বৃষ্টির পানি ধারণ করার জন্য।
কিন্তু সেখানে ওয়াসার ড্রেনের মাধ্যমে স্যুয়ারেজের বর্জ্য ঢুকছে, এ কারণেই পানি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়েছে। বস্তুত হাতিরঝিলে স্যুয়ারেজ বা শিল্পবর্জ্যরে সংযোগ বন্ধে যেসব উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন ছিল, সেগুলো নেয়া হয়নি। এখন হাতিরঝিলের পানিকে দুর্গন্ধমুক্ত করতে হলে স্যুয়ারেজ ও পয়ঃবর্জ্য সংযোগ বন্ধ করতে হবে।
এ দায়িত্ব নিতে হবে রাজউক অথবা অন্য কোনো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে বুয়েট এবং হাতিরঝিল বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোরও দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই।
রাজধানী ঢাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশ পাওয়া ভার। ব্যতিক্রম হাতিরঝিল প্রকল্প। দৃষ্টিনন্দন এ এলাকায় এলে বুক ভরে নিশ্বাস নেয়ার সুযোগ আসে, দেখার সুযোগ ঘটে মনোরম দৃশ্য।
আমরা আশা করব, অচিরেই হাতিরঝিলের পানি দুর্গন্ধমুক্ত করে প্রকল্পটিকে নিষ্কলুষ করা হবে। তা না হলে যে উদ্দেশ্যে এ প্রকল্পটি নির্মিত হয়েছিল, তা নস্যাৎ হয়ে যাবে।
|