মিয়া আবদুল হান্নান : মানুষ সৃষ্টির আগে মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছেন। অথচ আল্লাহর জন্য এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু কী উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ এমনটি করেছিলেন? পরামর্শ চাওয়ার মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?
সৃষ্টিজগতের সব ব্যাপারে সবাই মহান আল্লাহর কাছে মুখাপেক্ষী। কোনো সৃষ্টির কাছে মহান আল্লাহ মুখাপেক্ষী নন। তারপরও মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টির আগে ফেরেশতাদের সঙ্গে পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু কেন?
এ পরামর্শ গ্রহণের মধ্যে নিহিত রয়েছে অনেক বড় হেকমত ও শিক্ষা। যাতে মানুষও যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরস্পরে কল্যাণের জন্য পরামর্শ গ্রহণ করে। মানুষ সৃষ্টির আগে মহান আল্লাহ এ বিষয়টি শিক্ষা দেওয়ার জন্যই ফেরেশতাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন। যা কোরআনে এভাবে ওঠে এসেছে-
‘আর (স্মরণ কর) যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করবো।’ তারা বলল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকেও সৃষ্টি করবেন; যারা সেখানে অশান্তি ঘটাবে ও রক্তপাত করবে? অথচ আমরাইতো আপনার গুণগান করছি এবং আপনারই পবিত্রতা বর্ণনা করে থাকি।’ তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা জানি যা তোমরা জান না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৩০)
পরামর্শ গ্রহণে আল্লাহর হেকমত
ফেরেশতাসহ জগতের সব সৃষ্টিই তার আয়ত্বাধীন। এমন কোনো বিষয় নেই; যা তাঁর আওতার বাইরে কিংবা কারো কাছে কোনো ব্যাপারে তিনি মুখাপেক্ষী। বরং জগতের সবকিছু তার মুখাপেক্ষী। এরপরও ফেরেশতাদের কাছে পরামর্শ গ্রহণ ছিল মানুষের জন্য অনেক বড় শিক্ষা।
মূলত ফেরেশতাদের সঙ্গে পরামর্শ গ্রহণ উদ্দেশ্য ছিল না এবং এর কোনো আবশ্যকতাও নাই। কিন্তু তারপরও ‘একটি সৃষ্টি নিয়ে পরামর্শ গ্রহণ’ বিষয়টিকে রূপ দেওয়া হয়েছে। যাতে করে মানুষ যে কোনো কাজ করার আগে পরস্পরের মধ্যে পরামর্শরীতি ও তার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করতে পারে। যেমন-
‘কোরআনুল কারিমের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন কাজে ও ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়েছিল। অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন কোরআনের অহির ধারক ও বাহক। যেখানে তাঁর কথা ও কাজের ব্যাপারে কোরআনের ঘোষণা ছিল এমন-
‘আর সে মনগড়া কথাও বলে না। তাতো কেবল অহি, যা তার প্রতি অহিরূপে প্রেরণ করা হয়। তাকে শিক্ষা দান করেছেন প্ৰচণ্ড শক্তিশালী। প্রজ্ঞার অধিকারী। এরপর সে স্থির হয়েছিল।’ (সুরা নজম : আয়াত ৩-৬)
তাঁর কাজ-কর্ম এবং প্রত্যেক অধ্যায় ও দিক অহির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে দেওয়া হতো। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে সব বান্দার জীবনে পরামর্শ গ্রহণের রীতির প্রচলন ও শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁকেও পরামর্শ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন।
মুমিন মুসলমানের উচিত, যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে একে অপরের সঙ্গে পরামর্শ গ্রহণ করা। যে পরামর্শের ফলে কল্যাণ বয়ে আসবে। এটি ছিল উম্মাতে মুসলিমার জন্য পরামর্শ গ্রহণের শিক্ষা ও তাগিদ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ আয়াত থেকে পরামর্শ গ্রহণের শিক্ষা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। কোরআনের পরামর্শ গ্রহণ করে সাওয়াব ও বরকত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
|