মোঃআরিফ উল্লাহ
করোনা ভাইরাস নামক এক অদৃশ্য দূর্যোগের থাবায় নাকাল মধ্যবিত্তের কপালে নতুন চিন্তার ভাজ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি। দুবেলা ভাত খাওয়াই যেন আজ দুরূহ হয়ে পড়েছে। কোভিড ১৯ এর কারণে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত অনেক পরিবার শহর ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমিয়েছে কিন্তু তাতেও যেন রক্ষা মেলেনি, বর্তমানে দিনের পর দিন দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েই চলেছে, আজ তেলের দাম বাড়লো তো কাল ডালের দাম আর সেইসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাসা ভাড়া, যাতায়াত খরচ ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ এর ফলে মধ্যবিত্ত পরিবারের একবেলার খাবারের চাহিদা যোগানোর চিন্তাও বেড়ে যাচ্ছে, এক গবেষণায় দেখা যায় কোভিড ১৯ এর কারণে আয় কমে যাওয়ায় ৫২ শতাংশ মানুষ তাদের খাবার কমিয়ে দিয়েছে। পরিবারের কর্তাদের হতাশার বার্তা আর মনের সুপ্ত আর্তনাদ যেন কোনো ভাবেই আমাদের সরকারের কর্মকর্তাদের নিকট পৌছাতে পাড়ছে না।
একটি পণ্যের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে অন্য পণ্যের দাম না বাড়ালে যেন চলেই না, হোক সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির পণ্য। বলছি গ্যাস ও পানির কথা। কিছু দিন আগে ১৩ লিটার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ছিল ৯৫০ টাকার যা বেড়ে এখন ১৬০০ টাকা অন্যদিকে পানির দাম ২০ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য সুপারিশ করছে ওয়াসা। একটু অদ্ভুত মনে হলেও সত্য যে গত ১৩ বছরে ১৬ বার পানির দাম বৃদ্ধি করেছে আমাদের ওয়াসা। দাম বৃদ্ধির পরপর ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তাদের ভ্রাম্যমাণ পন্য বিক্রয় সেবা চালু করে থাকে যা দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্তের একমাত্র ভরসা। আর তাই এই পরিবারের মানুষগুলী ট্রাক আসার আধাবেলা আগে থেকে অপেক্ষমাণ থাকে কারণ দিন শেষে যে আবার কাজে যেতে হবে নাহয় কাল চুলায় আগুণ জলবে না।
আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের মোট জনসংখ্যার একতৃতীয়াংশ মানুষকে মধ্যবিত্ত অবস্থানে দেখতে চাই, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সূত্র থেকে জানা গেছে বর্তমানে মোট জনসনংখ্যার ২০ শতাংশ মধ্যবিত্ত কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে ১ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ অতি দরিদ্র আর মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ দারিদ্র মানুষ রয়েছে। আমাদের স্বপ্নের সাথে বর্তমান পরিস্থিতির তফাৎ অনেক কিন্তু আমরা বাঙ্গালী তাই আমরা অসাধ্যকে সাধ্যের কাতারে নিয়ে আসতে পারি, যেমন পেরেছি ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাকে নিজের করেনিতে তেমনি পেরেছি পদ্মা সেতুর মত বড় প্রকল্পকে সফল করতে। সকলের মনে আজ একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিশেষ করে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের মাঝে, তা হলো “স্বাধীন হয়েও কিছু অসাধু মানুষের কাছে আমরা আজও কেনো পরাধীন?”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এটাও বলছে আমাদের মাথাপিছু আয় ৩২৭ ডলার বেড়ে ২ হাজার ৫৫৪ ডলার হয়েছে যা ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ২২৭ ডলার। তবে কি তৈলাক্ত মাথায় তৈল পড়ছে আর মধ্যবিত্ত দরিদ্র হচ্ছে, দরিদ্র পথের ভিখারি হচ্ছে? উন্নয়ন আমরা সকলেই চাই আর এই উন্নয়ন হতে হবে সমতার ভিত্তিতে। অন্যথায় জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন কিছু অসাধু স্বার্থলোভী ব্যবসায়ীর কাছে এভাবে জিম্মি হয়ে থাকবে, এর সাথে লাখো শহিদের আত্নদানে অর্জিত মহান স্বাধীনতা জাতীর কল্যাণের বিপরিতে কিছু অসাধু স্বার্থলোভী কারবারির স্বার্থ হাসিলে ব্যবহার হবে যা কখনো হতে দেয়া যাবে না। স্বাধীনতা সমতা ও ন্যায্যতার কথা বলে, কেউ খাবার অপচয় করবে আর কেউ ৩বেলা না খেয়ে থাকবে, ধনী আরো ধনী হবে আর গরীব আরো গরীব হবে এমন নীতি কেবল স্বাধীনতা বিরোধীরাই অনুসরণ করতে পারে।
দেশের উন্নয়নের সাথে কোনো ভাবেই যেন পাল্লা দিয়ে চলতে পাড়ছে না আমাদের দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত নামক এই বিশাল শ্রেণী, আত্নসম্মানের ভয়ে সকল কষ্ট মুখ বুঝে সয্য করে যাওয়া এই মানুষগুলী তখনি নিজের কষ্টের কথা প্রকাশ করে যখন তারা নিতান্তই অপারগ। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে দেশের নাগরিকের চাহিদার বিষয়কেও সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখার দায়িত্ব সরকারের। তাই দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যে ভর্তুকির ব্যবস্থা ও কঠোর তদারকির মাধ্যমে বাজার স্থিতিশীল রাখা। অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। সামনে রমজানকে পুঁজি করে দ্রব্যমূল্যের দাম যেন বৃদ্ধি করতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া, যাতে করে ২০৩০ সালে আমরা আমাদের নির্ধারিত স্বপ্ন পূরণে ও এসডিজি অর্জনে ব্যর্থ না হই।
লেখকঃ মোঃ আরিফ ঊল্লাহ উন্নয়ন কর্মী, ইমেইলঃ arifcbiu@gmail.com
|