কে জানে কবে কখন কোথায় মানুষ বুঝেছিল তারও প্রয়োজন দিনক্ষণ, সময়, তারিখ নির্ধারণ। সূর্য ও চন্দ্রের আবর্তনে বদলে যাওয়া পৃথিবীতে বদলে যাওয়া মন, বদলে যাওয়া প্রকৃতী তাকে প্রস্তুত করেছে বেঁচে থাকার, টিকে থাকার অন্তহীন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে। শীত, খরা, রৌদ্র, বর্ষা, বাদল, ঝড়-ঝঞ্ঝা, অতীবৃষ্টি, প্লাবন মানুষকে সয়ে যেতে হয়েছে প্রকৃতীর পালাবদলে। মানুষ যখন আদিম যুগ থেকে কৃষি যুগে প্রবেশ করে, তখন তাকে ক্ষণ, দিন, তারিখের দিকে যেতে হয়েছে। কৃষি উৎপাদন যেহেতু আবহাওয়ানির্ভর, আবহাওয়া অনুকূল হলে ফসলের আশা করা যায়, প্রতিকূল হলে আশা করা যায় না। কৃষিজাত ফসল স্বল্প সময়ে উৎপাদন সম্ভবপর হয় না। কারণ আবহাওয়ার খামখেয়ালি ছাড়াও রয়েছে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। তাই অনিশ্চয়তা এবং দীর্ঘমেয়াদি বিধায় কৃষকের ভিত গড়ে ওঠে প্রকৃতীর প্রতি নির্ভরশীলতায়। সীমাহীন দুঃখ, কষ্ট, দুর্দশা সয়ে সয়ে প্রাচীন কৃষিজীবীরা যখন প্রচুর কৃষিজাত শস্যের উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে, তখন তারা মনে করেছে প্রকৃতী তাদের প্রতি কৃপা দেখিয়েছে। সেই মানুষই তার প্রয়োজনে ক্ষণ, সময় গণনা নির্ধারণ করে নিয়েছে।
বর্ষ গণনার সূচনা কবে থেকে হয়েছে তা নিরূপণ করা না গেলেও এটা স্পষ্ট যে, অনৈতিহাসিককালেও বর্ষ গণনা হতো, যা ছিল অলিখিত। কিন্তুু ছিল তার অস্তিত্ব। জীবন-জীবিকার মৌলিক প্রয়োজনে মানুষ তৈরি করে নিয়েছিল তার বর্ষপঞ্জি। তবে এটা ঠিক বর্ষ, মাস, সপ্তাহ, দিন, প্রহর ইত্যাদি সৃষ্টির মূলে জ্যোতিষশাস্ত্র একক ভূমিকা পালন করেছে। তাই দেখা যায়, বর্ষ গণনায় যে বারো মাসের নাম আছে তার অধিকাংশই নামাঙ্কিত করা হয়েছে নক্ষত্রের নামে। আর সপ্তাহের দিনগুলো নামাঙ্কিত হয়েছে গ্রহের নাম থেকে। চব্বিশ ঘণ্টাকে চারটি প্রহরে বিভাজিত করা হয়েছে। এভাবেই আবর্তিত হয়ে এসেছে। এক পর্যায়ে মানুষ দিনপঞ্জি তৈরি করে। বিবর্তনের ধারায় মানুষ বর্ষপঞ্জি প্রণয়ন করেছে। তাই দেখি প্রত্যেক জাতি ও সম্প্রদায় নববর্ষ আবাহনে উদ্দীপ্ত হয়। রাতের শেষে আসে দিন, দিনের শেষে রাত। এই আসা-যাওয়ার মতো একটি বছর আসে আর একটি বছর চলে যায়। এই বর্ষকেই মানুষ তার স্থানিক ও কালিক প্রয়োজনে তৈরি করেছে বর্ষপঞ্জি হিসেবে। বাঙালি সমাজে কৃষি সভ্যতার সূচনাকাল থেকেই বাংলা সনের উদ্ভবের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এমন মত প্রকাশ করেন ইতিহাসবিদ ও নৃতাত্ত্বিকরা। তাদের মতে, সমাজ বিকাশের ধারায় সেভাবেই বাংলা সনের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই বাংলা সন ঠিক কখন কবে প্রচলিত হয়েছিল, তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। বাঙালি কৃষকের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ন্ত্রক ভূমিকায় রয়েছে বর্ষপঞ্জি বা বাংলা সন। কৃষি সভ্যতার পাশাপাশি নাগরিক সভ্যতায়ও বাংলা সন প্রভাব ফেলেছে। এমনকি জাতীয়তাবাদি সংগ্রামের ধারায় বাঙালির বাংলা সন পথ দেখিয়েছে। খুঁজে এনে দিয়েছে বাঙালির নিজস্ব দেশ, রাষ্ট্র, ভাষা, সন, সংস্কৃতি। তবে বাংলা সন ঠিক কখন, কীভাবে প্রচলিত হয়েছিল তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। তবে নানা মুনির নানা মতের মতো কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে তা ঘুরপাক খায়। পরোক্ষ প্রমাণে বলা হয়, সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তন করেন। তবে এটা ঠিক যে, যদি তিনি সরাসরি এই সন প্রবর্তন না-ও করে থাকেন, তবু এর প্রচলনে তার পরোক্ষ অবদান অনস্বীকার্য। কারণ সম্রাট আকবর সর্বভারতীয় ইলাহি সন প্রবর্তন করেছিলেন। বাংলা সন সেই ইলাহি সনের প্রত্যক্ষ প্রভাবেই প্রচলিত হয়েছে। তাই গবেষক ও ইতিহাসবিদ মনে করেন, বাংলা সন সম্রাট আকবর বা অন্য কোনো মুসলমান রাজা-বাদশা বা সামন্ত প্রভু প্রবর্তন করেছিলেন। অবশ্য বাংলা বছর পুনরায় প্রবর্তন ও খাজনা আদায়ের কাজে ব্যবহার শুরু হয় আকবরের সময় থেকে। কিন্তুু আকবর এই বাংলা পঞ্জিকা প্রথম তৈরি করেননি। এটা কৃষিকার্য ও আবহাওয়ার জন্য প্রচলিত ছিল বহু শতক ধরে। কালিদ কোন কোন গবেষক বাংলার সুলতানী আমলের শাসক হোসেন শাহকে বাংলা সনের প্রবর্তক বলে মনে করেন। কারো মতে, সপ্তম শতকের রাজা শশাংক বঙ্গাব্দের প্রবর্তক। আবার ভারতের উড়িষ্যার খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ কাশিপ্রসাদ জয়সওয়াল মনে করেন হিজরী সন থেকে বঙ্গাব্দ এসেছে। আকবরের সিংহাসন আরোহণের বছর ছিল ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ, যা ৯৬৩ হিজরি এবং ৯৬৩ বঙ্গাব্দের সমান। তার এই মত পরবর্তীতে অনেকেই সমর্থন করেছেন। তার মতে, আকবরের প-িত রাজা টোডরমল ইলাহি সনের প্রচলন ঘটানোর সময় এর স্থানীয় ও প্রতিবেশের সাথে সংগতি রেখে বাংলা সন বা বঙ্গাব্দে রূপান্তর করান। তবে বঙ্গাব্দের সঙ্গে আকবর প্রবর্তিত তারিখ ই ইলাহির সমপৃক্ততা সকলেই মেনে নিয়েছেন এমনটি নয়। ১৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। তখন এ অঞ্চলের নামকরণ করা হয় সুবে বাংলা। বাংলা সন প্রবর্তনের ফলে বঙ্গদেশে কৃষিজীবী সমাজের কাজের সুবিধা হয়, সম্রাটের সুবিধা হয় খাজনা আদায়ে। প্রাচীনকাল থেকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন বর্ষপঞ্জি প্রচলিত ছিল, যেমন বিক্রমাব্দ, শতাব্দ প্রভৃতি। মুসলিম বিজয়ের পর ভারতবর্ষে হিজরি সন চালু হয়। এই বিভিন্ন বর্ষপঞ্জি থাকায় খাজনা আদায়ে সমস্যা হতো। সম্রাট আকবর চান্দ্র হিজরি সনকে সৌর সনে রূপান্তরিত করে ফসলি সনরূপে ভারতের সর্বত্র প্রচলন করেন। এই সন প্রবর্তনের মূলে খাজনা আদায়ই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। মুঘল আমলেও বাংলায় হিজরি সন ব্যবহার হতো। হিজরি সন চান্দ্র বছরের এবং তা ৩৫৪ দিনে হয়। ফলে ফসল কাটার ক্ষেত্রে সমস্যা হতো। কারণ কৃষকরা বিগত বছর যে তারিখে ফসল কেটেছিল পরের বছর সেই তারিখ ১১ দিন এগিয়ে গেছে। তাই সম্রাট আকবর হিজরির যে সন তখন ছিল, সেই সময় থেকেই এক সৌর সংবৎ-র প্রবর্তন করেন। এটিই বঙ্গাব্দ। এই মতটি বহুল প্রচারিত। বলা হয়, ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ তারিখে বঙ্গাব্দের গণনা শুরু। এরও ২৯ বছর আগে সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহণের দিন। তবে এই মতকে গ্রহণ করেননি ইতিহাসবিদ সুখময় মুখোপাধ্যায়। তার মতে, ঐতিহাসিক সত্য বলে বিষয়টি মনে করা হলেও তা সঠিক নয়। আইন-ই- আকবরী বা আকবরণামা-তে অথবা অন্যান্য সমসাময়িক ঐতিহাসিকদের লেখা গ্রন্থে কোথাও আকরব কর্তৃক হিজরিকে সৌর উৎসবে পরিবর্তিত করার উল্লেখ পাওয়া যায় না। আকবর আমলে শুধু হিজরি সন ব্যবহৃত হতো তা নয়, হিন্দূরা শতাব্দ, বিক্রম সংবৎ প্রভৃতি ব্যবহার করতেন। এ সমস্তরই বছর ৩৬৫ দিনের সৌর বছর। তার মতে, কৃষকরা তারিখ অনুসারে ফসল কাটে না। তারা নির্দিষ্ট ঋতুতে ফসল কাটে। মধ্য এশিয়ান ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ও বাঙ্গালা সন: বঙ্গ, বাঙ্গালা গ্রন্থে বলেছেন, ............ এটা পরিষ্কার যে, আকবরের রাজত্বের পূর্বে বাংলা সন বা বঙ্গাব্দ ব্যবহারের কোন নিশ্চিত প্রমাণ নেই। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ও আলোচিত তথ্যাদি আকবরের আমলে চান্দ্র হিজরি অব্দের সংস্কারের মধ্যেই বঙ্গাব্দের সূচনার ইঙ্গিত করে। এর বিপরীত কোন ঘটনা নির্দেশক-বিশ্বাসযোগ্য তথ্য সূত্র আবিষ্কৃত না হওয়া পর্যন্ত এ মতই গ্রহণযোগ্য। বঙ্গাব্দের প্রবর্তক হিসেবে বাংলার প্রতাপশালী রাজা শশাংককে চিহ্নিত করেছেন সুখময় মুখোপাধ্যায়। তার মতে, শতাব্দ নামে যা এখন পরিচিত, তা প্রবর্তন করেছিলেন কুশান রাজা। পরে তাকে বিক্রমাদিত্যের শক বিজয়ের বছর থেকে প্রবর্তিত বলে ঘোষণা করা হয়। মিথিলায় প্রচলিত লক্ষণ সেন সংবৎ যে বছর থেকে প্রবর্তিত হয়েছে বলে ধরা হয় তখনো বাংলার রাজা লক্ষণ সেন জন্মগ্রহণ করেননি। অথচ এই সংবৎ চালু হবার দেড়-দু-শো বছর পরে তারই নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। সে হিসেবে শশাংকের নামের সঙ্গে বঙ্গাব্দ যুক্ত করা হয়। সুখময় মুখোপাধ্যায় যদিও তার এই যুক্তির পক্ষে তেমন সমর্থন পাননি। অবশ্য তিনি কোনভাবেই সম্রাট আকবরকে কৃতীত্ব দিতে চাননি। রাজা শশাংক সম্ভবত সপ্তম শতাব্দির প্রথম ভাগে শেষ গুপ্ত রাজাদের অবলুপ্তির পর গৌড়-বঙ্গের অধিপতি হন। ৩০০ গুপ্তাব্দ নামাঙ্কিত একটি তাম্রশাস্ত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। চৈনিক পরিব্রাজক ইয়ান চোয়াং তার ভ্রমণ বৃত্তান্তে শশাংক সম্পর্কে যে নাতিদীর্ঘ মন্তব্য করেছেন, তাতে প্রশংসা কমই। বলেছেন, কর্ণসুবর্ণের অধিপতি বৌদ্ধ ধর্মের প্রবল দূরাÍা অধিপতি শশাংক কর্তৃক হর্ষবর্ধনের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা নিহত হয়েছিলেন। কারো মতে ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল ১ বৈশাখ সোমবার বঙ্গাব্দের গণনা শুরু হয়। ঐদিনই শশাংক গৌড়বঙ্গে স্বাধীনভাবে রাজত্ব শুরু করেন। অর্থাৎ ঐদিন তার রাজ্যাভিষেক ঘটে। তবে প্রথম থেকেই নববর্ষ যে বৈশাখে শুরু হয়েছিল, সে নিয়ে মতানৈক্য আছে। অর্থাৎ বঙ্গাব্দ বা বাংলা সনের প্রথম মাস কোনিট, তাতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাস চিহ্নিত হয়েছে। কারো মতে ফাøুন মাসের পূর্ণিমা, কারো মতে অগ্রহায়ণ মাস বাংলা নববর্ষের প্রথম মাস ছিল। এটা তো ঠিক; একটা সময় ছিল যখন বাংলায় বছর শুরু হতো অগ্রহায়ণেই। আর বছরের শেষ মাস ছিল কার্তিক। এর পেছনে কাজ করতো খুবই একটা সাধারণ বিষয়। সাধারণ মানুষ চন্দ্রের গতিবেগ দেখে বছর গণনা করতে পারতো না। তারা সরল-সোজা কিছু লক্ষণ দেখে বছর নির্ধারণ করতো। এজন্য জ্যোতিষশাস্ত্র গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। বাংলা সন-তারিখ বিশেষজ্ঞ যতীন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য বাংলা পুঁথির তালিকা সমন¦য় গ্রন্থে বঙ্গাব্দ সম্বন্ধে উল্লেখ করেছেন, সুলতান হোসেন শাহের সময় এই সন প্রচলিত হয়। হোসেন শাহের রাজত্বকালে বঙ্গাব্দ চালু বিষয়ে সুখময় মুখোপাধ্যায় বিপরীত যুক্তি দেখান। তার মতে, হোসেন শাহের ছেলে নসরত শাহ একটি সংবৎ প্রবর্তন করেছিলেন; তা নসরতশাহী সন নামে পরিচিত। বঙ্গাব্দের সঙ্গে তার তফাত দুবছরের। ১০৮৩ নসরতশাহী সন ও ১০৮১ বঙ্গাব্দ লেখা লিপি মিলেছে। সুতরাং বঙ্গাব্দ যদি হোসেন শাহ প্রবর্তন করতেন, তবে তার ছেলে নতুন একটি সংবৎ প্রবর্তন করবেন কেন? যতীন্দ্রমোহন তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, কোন কোন পুঁথিতে বঙ্গাব্দকে যবন নৃপতে শতাব্দ বলা হয়েছে। রামগোপাল দাসের রসকল্পবল্লী-র পুঁথিতেও বঙ্গাব্দকে যাবনী বৎসর বলা হয়েছে। সুখময় মুখোপাধ্যায় বলেছেন, কিন্তুু এতে প্রমাণিত হয় না মুসলমান নৃপতি হোসেন শাহ বঙ্গাব্দ প্রবর্তন করেছিলেন। ইতিহাসবিদ কেপি জয়সওয়াল বঙ্গাব্দ হিজরি থেকে এসেছে মত প্রকাশ করলেও অনেকে ভিন্নমত তুলে ধরেছেন। নেপাল সম্পর্কিত গ্রন্থে বহু আগে ফরাসী গবেষক সিলভ্যঁ লেভিঁ উল্লেখ করেছেন, স্রং সন নামে একজন তিব্বতি রাজা, যিনি ৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা হন এবং মধ্যভারত ও পূর্বভারত জয় করেন। তিনি এই বঙ্গাব্দ প্রবর্তন করেন এবং তার নাম অনুসারেই নাম হয় সন। তিনি মূলত ধ্বনিগত মিল সন-এর ভিত্তিতে এ কথা বলেছেন। গৌড়বঙ্গে এমন কোন প্রতাপশালী তিব্বতি রাজার উল্লেখ পাওয়া যায় না, যিনি সন ব্যবহার করতে পারেন। সম্রাট আকবর ভারতে প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী মাস বা সাপ্তাহিক দিনের নাম পরিবর্তন করেননি। যার ফলে ফসলি সন হিসেবে তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ঐহিতাসিক সত্য বটে। আকবরের সময় গোড়ার দিকে বাংলা বর্ষপঞ্জি অর্থাৎ তারিখ-এ-এলাহির মাসগুলোর নাম ছিল কারওয়াদিন, খোরদাদ, তীর, আমারদাদ, শাহরিয়ার, আবান, আয়ুব, দাই, বাহাম এবং ইস্কান্দার। পরে বাংলা ১২ মাসের নাম নক্ষত্রের সঙ্গে মিলিয়ে করা হয়। বিশাখা নক্ষত্রের নাম থেকে বৈশাখ, জাইষ্ঠা থেকে জ্যৈষ্ঠ, সার থেকে আষাঢ়, শ্রাবণী থেকে শ্রাবণ, ভাদ্রপতা থেকে ভাদ্র, অশ্বিনী থেকে আশ্বিন, কার্তিকা থেকে কার্তিক, অগ্রাহিয়ন থেকে অগ্রহায়ণ, পৌষা থেকে পৌষ, মাঘা থেকে মাঘ, ফালগুনী থেকে ফালগুন, চিত্রা থেকে চৈত্র। মুঘল আমলের প্রভাবে ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চল, যেমন পশ্চিমবঙ্গ আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যায় বৈশাখেই বর্ষ শুরু হয়। বাংলা সন বাঙালি কৃষিজীবী মানুষের জীবনযাপনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কৃষি এ অঞ্চলের প্রধান অবলম্বন হওয়ায় বাংলা সন সাধারণ মানুষের নিত্যকর্ম ও রুটি-রুজির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। কারণ উৎপাদন ব্যবস্থা সভ্যতার একটি অঙ্গ। বাংলা সন সেই মূল শেকড়ের সঙ্গে সম্পর্কিত রয়েছে। বাংলা সনের প্রবর্তক যারাই হোন না কেন, মূলত কৃষিজীবী মানুষই তাদের প্রয়োজনে তৈরি করে নিয়েছে বর্ষপঞ্জি। লেখক: কবি, গবেষক, প্রাবন্ধিক। (সংকলিত)
|