মো: আরিফ ঊল্লাহ
বৃষ্টিময় সকাল, দমকা হাওয়া বইছে। মেঠো পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছি। হাঁটতে হাঁটতে বাজারের খানিক সামনে এসে দেখি কিছু মানুষ একজোট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভেবেছিলাম কোন বেদ - বেদী হয়তো সাপের খেলা দেখাচ্ছে অথবা বিশাল আকারের কোনো মাছ আজ বাজারে ওঠেছে। কিন্তু না, বাতাসের সাথে ভেসে আসছিল কান্নার শব্দ। এবার পথ পরিবর্তন না করে পারলাম না, একটু যেতেই শুনি কেউ করুণ কন্ঠে আর্তনাদ করছে;
- আরে আর নো- মাইজ্জ, (আমাকে আর মেরো না)।
- আরে আর নো মাইজ্জ,
- আই আর ন— গইজ্জোম,(আমি আর এমন করবো না)।
তারপর আমার পাশ দিয়ে ৮-৯ বছরের এক শিশু চিৎকার করতে করতে যাচ্ছে। আর বলছে:
-ওমা অনে হড়ে? আব্বারে মারিফেলের।
(আম্মাজান আপনি কোথায়? আব্বুকে মেরে ফেলছে)।
ভীড় ঠেলে লোকটিকে দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম কারণ তার চেহারা দেখতে পাইনি। না দেখার পেছনের কারণ হল, তাকে এমনভাবে প্রহার করা হইয়েছে যে, সে মাথা তুলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে এবং রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে দেখলেও চিনতে পারতাম না। তখনি এক মহিলা (২৫-২৮),
এক লুঙ্গিওয়ালার পায়ে ধরে সে কি আর্তনাদ ! কিন্তু পাষণ্ড বহদ্দারের ( টলারের মালিক) মনে তার এই আহাজারি পৌঁছেনি। সেই মহিলার পাশে নিষ্পাপ আরো দুই সন্তান, যাদের চোখের জল আর নাকের পানি মিলে একাকার।
কিন্তু নিষ্ঠুর লুঙ্গিওয়ালার মনে যে দয়া হয়না,
বরং চিৎকার করে বলছে:
- ইতে এত্তোর সাহস হত্তু পাইলো?
(সে এতো সাহস কোথায় পেলো?)
- আর মাছ আরে নো- হই বেচি ফেলাইলো!!!
(আমার মাছ আমাকে না বলে বিক্রি করে দিলো!)
তারপর ঐ মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বলছে:
- তরে আর তর জামাইরে হাস্যবাজার (কক্সবাজার) আর নো- দেহি ফান। (তোকে আর তোর জামাইকে আর কখনো কক্সবাজারে যেন না দেখি।) তারপর সেই জেলেকে ছেড়ে দেয়া হলো। তাকে রিক্সায় বসানোর অনেক চেষ্টা করা হলেও সে নিজের ভারসাম্য ধরে রাখতে পারছিলনা। শেষ পর্যন্ত তাকে রিক্সার পাটাতনে রাখা হলো। কারণ বসার ক্ষমতা যে সে হারিয়ে ফেলেছে। হায়রে গরিব! লোকটিকে রিক্সায় করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর পাশে ছোট ছোট নিষ্পাপ শিশু গুলির কান্নায় সারা মহল্লা যেন স্থবির হয়ে গেল।
খানিক পর জানতে পেলাম ঐ ব্যক্তি মাছ ধরার টলারের কাজ করে। সে বহদ্দারকে (টলারের মালিক কে) না জানিয়ে কিছু মাছ বিক্রি করায় তার উপর এমন অমানবিক অত্যাচার চালানো হইয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারনে বিগত ৬ মাস বেকার ছিল। বৃদ্ধ মা, তিন সন্তান ও তার স্ত্রীকে নিয়ে তার পরিবার। যাদের মুখে এক লোকমা ভাত দিতে গিয়ে তাকে চুরির মতো অপরাধ করতে হলো। এর পর এই জেলেকে আর আমাদের মহল্লায় দেখা যায়নি।
|