প্রতি বছর অক্টোবরের প্রথম সোমবার সারাদেশে এই দিবসটি পালিত হয়। ১৯৮৫ সালে এই দিনটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। বিশ্ব জুড়ে সব মানুষের নিরাপদ ও মানসম্মত বাসস্থান নিশ্চিতের সচেতনতা বাড়াতে ১৯৮৬ সাল থেকে এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে। এই বছরও অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে।
“আশ্রয় আমার অধিকার” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ১৯৮৬ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে প্রথম বিশ্ব বসতি দিবস পালন করা হয়। ১৯৮৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট ৩৬টি প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করা হয়েছে। এ বছর তুরস্কের বালিকেসিরে “বৈষম্য হ্রাসের অঙ্গিকার করি, সবার জন্য টেকসই নগর গড়ি’’ প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করা হবে। এই প্রতিপাদ্য বিষয়ের লক্ষ্য হলো Triple ‘C’ Crises: Covid-19, Climate Change, Conflict এর কারণে নগরায়নের বৈষম্য ও Vulnerabilities গুলো চিহ্নিত করে যথাযথ কাযক্রম গ্রহণ।
২০২২ সালের তিনটি অগ্রাধিকারের প্রথমটি হল সবার জন্য পর্যাপ্ত আবাসন সরবারহ। দ্বিতীয় অগ্রাধিকারে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে জলবায়ু সমাধানে অবদানকারী হিসেবে শহরগুলির মূল ভুমিকাকে সম্বোধন করা এবং ২০২২-২০২৩ এর তৃতীয় অগ্রাধিকার হল টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা স্থানীয়করণ।
আমাদের সংবিধানের ১৬ নং অনুচ্ছেদে এর ১৮(ক) উপঅনুচ্ছেদেও নগর এবং গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য দুর করার কথা উল্লেখ আছে।
নগরায়ন আজকের বিশ্বের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা এবং প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আসে। শহরগুলি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের কেন্দ্রস্থল। এই ক্ষেত্রে পরিবেশগত, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অসুবিধা নানান প্রতিবন্ধকতার মূল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জাতিসংঘ কর্তৃক ২০১৬ সালে নতুন আরবান এজেন্ডা গৃহীত হওয়ার সাথে সাথে সারা বিশ্বে জাতীয় এবং পৌর সরকারগুলি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য- ১১ (SDG-11) অর্জনের জন্য একটি রূপান্তরমূলক পথে যাত্রা শুরু করেছে।
কক্সবাজার বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলির মধ্যে একটি। কক্সবাজার শহরে বিশ্ব বসতি দিবসের লক্ষ্যগুলি সফলভাবে পুরণ করার বিভিন্ন সম্ভাবনা রয়েছে। উপকুলীয় শহর হিসেবে Cox’s Bazar এর ক্ষেত্রে কিছু ভিন্ন মাত্রা আছে। শহরটি Climate related impact এর Ground Zero| অপরদিকে কক্সবাজারে প্রায় ১.২০ মিলিয়ন রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ায় এখানকার জনসংখ্যার ঘনত্ব জাতীয় গড়ের প্রায় ৩/৪ গুণ। এ কারণে এখানে বিভিন্ন জায়গায় অপরিকল্পিত আবাসন গড়ে উঠেছে ও এগুলো বর্ণিত বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে এবং প্রাকৃতিক ইকো-সিস্টেমে একটি বিরাট চাপ সৃষ্টি করছে।
ফলাফল হিসেবে কক্সবাজার বাংলদেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় শহরগুলির মধ্যে একটি, তাই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করার এবং স্থানীয় উপায়গুলি যাচাই করার মাধ্যমে এই অঞ্চল কার্যকরভাবে জলবায়ু সমাধানে অবদান রাখতে পারে। শহরটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা স্থানীয়করণের অবদান রাখার সম্ভাবনা রাখে, ইহা টেকসই পদ্ধতিতে সুনীল অর্থনীতি, মৎস এবং ইকো-ট্যুরিজম খাতের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব। এ বিষয়ে কক্সবাজার স্থানীয় সরকার, বিশেষ করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিশ্ব বসতি দিবসের উদ্দেশ্য পূরণ এবং সঠিক প্রতিফলন নিশ্চিত করার একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করতে পারে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা, জলবায়ু সংকট মোকাবেলার সম্ভাব্য সমাধান বের করা এবং এসডিজি আরও স্থানীয়করণ করা সম্ভব।
কমোডর এম. এন. আবছার (অবঃ) চেয়ারম্যান কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
|