মিয়া আবদুল হান্নান : বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মিলন পবিত্র হজ (১৪৪৪ হিজরী) আজ। মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় প্রায় বিশ লক্ষাধিক মুসলিম নর নারী আজ মঙ্গলবার পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে মিনা থেকে আরাফা ময়দানে জড়ো হচ্ছেন। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখর এখন সৌদি আরবের পবিত্র আরাফাতের ময়দান। পাপমুক্তি আর আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ এই পবিত্র হজ পালন করছেন। আজ ফজরের পর গোটা দুনিয়া থেকে আগত মুসলমানরা মিনা থেকে ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়েছেন।আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়ায়ই হজ। হিজরী বছরের ৯ জিলহজ হজ পালনে মুসলিম উম্মাহ ঐতিহাসিক এ ময়দানে উপস্থিত হয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, আরফাতে অবস্থান করাই হলো হজ। (নাসাঈ ৩০৪৪) এ দিনটিতেই ইসলাম পরিপূর্ণতা পায়। এ বিষয়ে আরাফার দিনে অবতীর্ণ হয়েছে কোরআনে কারিমের সর্বশেষ আয়াত ’আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার য়িামত পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলাম তোমাদের দীন মনোনীত করলাম।...(সূরা মায়েদা: আয়াত ০৩)। পবিত্র হজ উপলক্ষে মক্কা, মদিনা, মিনা, আরাফাত ময়দান, মুজদালিফা ও এর আশপাশের এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে সৌদিআরব সরকার। আল্লাহর মেহমান হাজিদের সেবা কার্যক্রম পরিচালনায় সৌদি আরব সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
আরাফার ময়দান সংলগ্ন মসজিদে নামিরা থেকে দেওয়া হয় হজের খুৎবা। আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরায় জোহরের নামাজের আগে পবিত্র হজের খুৎবা পাঠ করবেন শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদ। শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদ সৌদি আরবের সিনিয়র উলামা কাউন্সিলের সদস্য। তিনি মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ ড. মাহের বিন হামাদ বিন মুয়াক্বল আল-মুয়াইকিলির পরিবর্তে বিভিন্ন সময় নামাজের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ মসজিদ আল নামিরায় আরাফাত দিবসে হজ পালনে খুৎবা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করে শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাইদকে নিযুক্ত করেছেন। এদিকে শায়খ ড. ইউসুফ আরাফার দিনের ইমাম হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন হারামাইন শরিফাইনের পরিচালনা পর্ষদের প্রধান ড. শায়খ আব্দুর রহমান আস-সুদাইস।বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালের দুই বছর পবিত্র হজে ছিল নানা বাধ্যবাধকতা। তবে ২০২২ সালে অনেকটা মুক্ত অবস্থায় পালিত হয়েছিল হজ। গত বছর হজযাত্রীদের মধ্যে অন্যরকম এক ভাবাবেগ কাজ করছে। তারা মুখে মাস্ক ছাড়াই হজ করতে পারছেন। করোনা ভাইরাসের অনুমোদিত টিকার সম্পূর্ণ ডোজ নিয়েছেন- এমন ১০ লাখ হজযাত্রী হজ পালন করেিছলন। এর মধ্যে ৮ লাখ ৫০ হাজার বিদেশি। বাকিরা সৌদি আরবের নাগরিক। এইবার সবচেয়ে বেশি মানুষ হজ পালন করছে।
আজ ৯ জিলহজ মূল হজের দিন হাজিরা আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকবেন। ৪ বর্গমাইল আয়তনের এই বিশাল সমতল মাঠের দক্ষিণ দিকে মক্কা হাদা তায়েফ রিং রোড, উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাত সীমান্ত পশ্চিমে আরো প্রায় পৌনে ১ মাইল বিস্তৃত। মুসলমানদের অতি পবিত্র এই ভূমিতে যার যার মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে তারা ইবাদত করবেন; হজের খুৎবা শুনবেন এবং জোহর ও আসরের নামাজ পড়বেন। আল্লাহ তা’আলার জিকির-আসকারে মশগুল থাকবেন। বাংলায় হজের খুৎবা শোনা যাবে যে ওয়েবসাইটে বাংলায় হজের খুৎবা শোনা যাবে।এরপর তারা মুজদালিফার উদ্দেশ্যে আরাফাত ময়দান ত্যাগ করবেন এবং মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ এশার ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন এবং সমস্ত রাত অবস্থান করবেন। মিনায় জামারাতে নিক্ষেপ করার জন্য ৭০টি কংকর এখান থেকে সংগ্রহ করবেন। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে মিনার উদ্দেশে রওয়ানা হবেন হাজীরা।
১০ জিলহজ মিনায় পৌঁছার পর হাজিদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। প্রথমে মিনাকে ডান দিকে রেখে হাজিরা দাঁড়িয়ে শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ করবেন। দ্বিতীয় কাজ আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানি করা। অনেকেই মিনায় না পারলে মক্কায় ফিরে গিয়ে পশু কোরবানি দেন। তৃতীয় পর্বে মাথা ন্যাড়া করা। চতুর্থ কাজ তাওয়াফে জিয়ারত। মিনায় রাত যাপন করে জিলহজের ১১ তারিখ দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত হাজিরা বড়, মধ্যম ও ছোট শয়তানের ওপর সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন।
আর এ কাজটি করা সুন্নত। পরদিন ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থান করে পুনরায় একইভাবে হাজিরা তিনটি শয়তানের ওপর পাথর নিক্ষেপ করবেন। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা শেষ হলে অনেকে সূর্যাস্তের আগেই মিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যাবেন। আর মক্কায় পৌঁছার পর হাজিদের একটি কাজ অবশিষ্ট থাকে। সেটি হচ্ছে কাবা শরিফ তাওয়াফ করা। একে বলে বিদায়ি তাওয়াফ। স্থানীয়রা ছাড়া বিদায়ি তাওয়াফ অর্থাৎ কাবা শরিফে পুনরায় সাতবার চক্কর দেওয়ার মাধ্যমে হাজিরা সম্পন্ন করবেন পবিত্র হজ পালন।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : মো: তাজুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়: ২১৯ ফকিরের ফুল (১ম লেন, ৩য় তলা), মতিঝিল, ঢাকা- ১০০০ থেকে প্রকাশিত ।
ফোন: ০২-৭১৯৩৮৭৮ মোবাইল: ০১৮৩৪৮৯৮৫০৪, ০১৭২০০৯০৫১৪
Web: www.dailyasiabani.com ই-মেইল: dailyasiabani2012@gmail.com