আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নাইজার থেকে ফরাসি রাষ্ট্রদূত ও সেনা সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। একইসঙ্গে নাইজারের সঙ্গে সকল ধরনের সামরিক সহযোগিতা বন্ধ করারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নাইজারের সেনাবাহিনী দেশটির ক্ষমতা দখলের পর দেশটির সঙ্গে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যেই এই পদক্ষেপ নিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
অবশ্য এর আগে গত আগস্টের শেষের দিকে নাইজারে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সামরিক জান্তা। তা সত্ত্বেও নাইজারে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটিতেই থাকবেন বলে সেসময় জানিয়ে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ।
তবে রোববার ফ্রান্স তার রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের পাশাপাশি নাইজারের সাথে সমস্ত সামরিক সহযোগিতা বন্ধ করবে বলে ঘোষণা দেন ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেন, ‘ফ্রান্স (নাইজার থেকে) তার রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমাদের রাষ্ট্রদূত এবং বেশ কয়েকজন কূটনীতিক ফ্রান্সে ফিরে আসবেন।’
তিনি আরও বলেছেন, নাইজারের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার ‘অবসান’ হয়েছে এবং ফরাসি সৈন্যরা ‘আগামী মাসগুলোতে’ ফিরে আসবেন।
এদিকে গত জুলাই মাসে নাইজারের ক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তা ফ্রান্সের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। বার্তাসংস্থা এএফপিতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জান্তা বলেছে, ‘এই রোববার আমরা নাইজারের সার্বভৌমত্ব অর্জনের নতুন একটি পদক্ষেপকে উদযাপন করছি।’
বিবিসি বলছে, স্থলবেষ্টিত পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটিতে প্রায় দেড় হাজার ফরাসি সৈন্য রয়েছে। সামরিক অভ্যুত্থানের জেরে রাজধানী নিয়ামেতে নিয়মিত বিক্ষোভসহ পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে ফরাসি উপস্থিতির বিরুদ্ধে কয়েক মাসের বিদ্বেষ এবং বিক্ষোভের পরে প্যারিসের সিদ্ধান্তটি সামনে এলো।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেছেন, তিনি এখনও নাইজারের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে তার দেশের ‘একমাত্র বৈধ ক্ষমতাসীন নেতা’ হিসাবে বিবেচনা করছেন এবং তাকে তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তিনি ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ‘জিম্মি’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন।
নাইজারে গত ২৬ জুলাই মোহাম্মদ বাজুমকে প্রেসিডেন্ট প্যালেসে অবরুদ্ধ করে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান ঘটায় প্রেসিডেন্ট গার্ডের সদস্যরা। এরপর তাকে বন্দি করা হয় এবং অভ্যুত্থানকারীরা ক্ষমতা গ্রহণ করে। তবে ম্যাক্রোঁ নাইজারের ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টের প্রতি ফ্রান্সের সমর্থনও বরাবরই পুনর্ব্যক্ত করে এসেছেন।
এছাড়া গত আগস্টে সামরিক অভ্যুত্থানের মুখে বাজুমের পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তকে সাহসী বলেও অভিহিত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। রোববার ফ্রান্সের এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তিনি (মোহাম্মদ বাজুম) এই অভ্যুত্থানের লক্ষ্যবস্তু হয়েছিলেন কারণ তিনি সাহসী সংস্কার চালিয়েছিলেন।’
মূলত নাইজার হচ্ছে পশ্চিম আফ্রিকার বেশ কয়েকটি সাবেক ফরাসি উপনিবেশগুলোর মধ্যে একটি যেখানে সামরিক বাহিনী সম্প্রতি ক্ষমতা দখল করেছে। এর আগে বুরকিনা ফাসো, গিনি, মালি এবং চাদেও সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলে নিয়েছে। আর সর্বশেষ অভ্যুত্থান হয়েছে গত আগস্টে গ্যাবনে।
এছাড়া আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে রাশিয়ার ওয়াগনার ভাড়াটে গোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান ভূমিকা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগও রয়েছে। রুশ এই বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত এবং আফ্রিকায় নতুন কিছু সামরিক জান্তাকেও সাহায্য করছে তারা।
এছাড়া পশ্চিম আফ্রিকান দেশগুলোর জোট ইকোওয়াস নাইজারে অভ্যুত্থানকারীদের বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি দিয়েছে। জোটটি বলেছে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে সাংবিধানিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করতে দেশটিতে সেনা মোতায়েন করতে প্রস্তুত তারা।
তবে গোষ্ঠীটি এখনও সেই ধরনের কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। অবশ্য বিদেশি সেনারা আক্রমণ করলে তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য মালি ও বুরকিনা ফাসোর সেনাদের নাইজারে প্রবেশের অনুমোদন দিয়ে রেখেছে নাইজারের সামরিক জান্তা।
|