মোঃ মোসলেহ উদ্দিন বাচ্চু : টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মুসুল্লিদের খাবার পানি ও ওজুর পানির তিব্র সংকট দেখা দিলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জায়েদা খাতুনের নির্দেশে উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের সার্বিক তত্ত্ববধানে পানির সমস্যা নিরসন করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক প্রয়োজনিয়তা সার্বিক সহযোগিতা করা হয় বলে জানিয়েছেন তত্ত্বাবধাক প্রকৌশলী সুদীপ বসাক ও উপসহকারী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন।
প্রকৌশলী সুদীপ বসাক আজ শনিবার জানান, অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ইতিপূর্বে তিব্র বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়। আমরা মেয়রের নির্দেশে তাক্ষৎনিক আমাদের নিজস্ব পানির পাম্প থেকে প্রায় ৫০ হাজার লিটারের অধিক পানি সরবরাহ করেছি। এছাড়াও সিটি করপোরেশনের হাজারের উপরে বল্লানটিয়ার মুসুল্লিদের সেবা প্রদানে ইজতেমা ময়দানে বিভিন্ন পয়েন্টে ও খিত্তায় খিত্তায় কাজ করছে। বিশ্ব ইজতেমাকে সফল করতে গাজীপুর সিটি মেয়রের প্রতিটি নির্দেশনা আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছি। মুসুল্লিদের সেবা প্রদানে আমাদের টিম কাজ করছে। এবারের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের বিশ্ব ইজতেমা সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে মেয়র উপদেষ্টা সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম একের পর এক পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছেন। তিনি উভয় পক্ষের মুরুব্বীদের সঙ্গে তাদের প্রয়োজনিয়তা নিয়ে পরামর্শ করেছেন। ময়দানের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সরেজমিনে ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। যেখানে যেটা প্রয়োজন মনে করছেন সেটাই তিনি পরিপূর্ণ করে দিতে কাজ করছেন। মুসুল্লিরা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে আল্লাহর দিদার লাভে মনোযোগ ইবাদতে নিজেকে উজার করে দিতে পারে সে লক্ষ্যে তাদের আনুসাঙ্গিক প্রয়োজনিয়তা মিটাতে উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন।
সুদীপ বসাক আরো বলেন, এবারের প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমাকে শান্তিপূর্ণভাবে সফল ও স্বার্থক করতে মেয়রের নির্দেশে ১ম পর্বে প্রায় ২ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়েছে। ইজতেমাকে সফল করতে সরকারের সব দিক নির্দেশনা ফলো করে সার্বিক কর্মসূচি গাজীপুর সিটি করপোরেশনে পক্ষ থেকে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে সকল প্রকার বর্জ্য ময়লা আর্বজনা পরিস্কারসহ মুসুল্লিদের যা যা প্রয়োজন তা মেটানোর পূর্ণ চেষ্টা করা হয়েছে। আমি মনে করি এবারের বিশ্ব ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হতে যাচ্ছে।
এদিকে দ্বিতীয় দিন শনিবারও শান্তিপূর্ণভাবে ইজতেমার কার্যক্রম চলছে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মনোবাসনায় নিজের ইমান, আমল ও আখলাককে পরিপূর্ণ শুদ্ধরূপে গড়ে তুলতে বয়ান শুনছেন ইজতেমার শীর্ষ আলেম ও মুরুব্বীদের। শনিবার বাদ ফজরের বয়ান দিয়ে ইজতেমার দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রমের সূচনা করা হয়।
বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের পদভারে টঙ্গীর তুরাগতীর এখন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। টঙ্গীতে বিশ্বইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন শনিবারও ছিল টুপি-পাঞ্জাবি পরা মানুষের ঢল।
শনিবার টঙ্গী অভিমুখী বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ছিল মানুষের ভিড়। শনিবারও ইজতেমায় মুসল্লিদের আগমন অব্যাহত ছিল। ধুলা, ময়লা, শীতসহ নানা প্রতিকূলতা উপক্ষো করে ময়দানে আসা সকল মুসুল্লীদের মনোযোগ এখন আলেমদের বয়ানের দিকে। আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে টঙ্গীর তুরাগ তীর মুখিরত। ফজরের নামাজের পর থেকে রাত পর্যন্ত অবিরাম চলছে বিভিন্ন ভাষায় বয়ান। দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট আলেমগণ বিভিন্ন বিষয়ের উপর বয়ান করছেন। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মনোনিবেশ করে ঈমান, আখলাক ও দ্বীনের বিভিন্ন বয়ান শুনেন। প্রথম ও দ্বিতীয় দিন শনিবার বাদ ফজর থেকে তুরাগ তীরে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে লাখ-লাখ মুসল্লির উদ্দেশ্যে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করা হয়।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে শনিবার বাদ ফজর মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা সাঈদ বিন সা’দ, তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মুফতি ওসামা ইসলাম। সকাল সাড়ে ১০টায় তালিমে হালকা বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুল আজিম। বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা শরিফ সাহেব, তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা মাহমুদুল্লাহ। বাদ আসর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা ওসমান সাহেব, তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা আজিম উদ্দিন। বাদ আসর বয়ানের পর ‘যৌতুক বিহীন’ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মুফতি ইয়াকুব সাহেব, তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ।
ইজতেমায় মূল বয়ান উর্দূতে হলেও অংশ নেওয়া বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লিদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এদিন বাদ আসর ইজতেমার বয়ান মঞ্চের পাশেই বসবে বাদ আছর ইজতেমার বয়ান মঞ্চের পাশেই বসবেই যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর অনুষ্ঠিত হয়।
কনের সম্মতিতে ও তার অনুপস্থিতিতে ইজতেমা ময়দানে বর এবং কনে পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় ওই বিয়ে। অভিভাবকরা দম্পতিদের নাম তালিকাভুক্ত করান। বিয়ের পর বয়ান মঞ্চ থেকেই মোনাজাতের মাধ্যমে নব দম্পতিদের সুখ-সমৃদ্ধিময় জীবন কামনা করা হবে। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় মোহর ফাতেমীর নিয়মানুযায়ী। এ নিয়ম অনুযায়ী মোহরানার পরিমাণ ধরা হয় দেড়শ’ তোলা রুপা বা তার সমমূল্য অর্থ। এবার এ পর্বে প্রায় ৭২ জোড়া বিয়ে সম্পাদন হয়েছে।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল রবিবার হেদায়তি বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে এবারের বিশ্বইজতেমা। আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে রবিবার সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে।
|