মিয়া আবদুল হান্নান : ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত। প্রকৃতির দক্ষিণা দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া। কোকিলের কণ্ঠে আজ বসন্তের আগমনী গান। ফুলে ফুলে ভ্রমরও করছে খেলা। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। সব কিছুই জানান দিচ্ছে আজ পহেলা ফাল্গুন।ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির আজ এতো বর্ণিল সাজ। বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সাথে তরুণ হৃদয়েও লেগেছে দোলা। সকল কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের উপস্থিতি। তাই কবির ভাষায়- ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’।আবাল-বৃদ্ধা, তরুণ-তরুণী বসন্ত উম্মাদনায় আজকে মেতে উঠবে। শীতকে বিদায় জানানোর মধ্য দিয়েই বসন্ত বরণে চলবে ধুম আয়োজন। শীত চলে যাবে রিক্ত হস্তে, আর বসন্ত আসবে ফুলের ডালা সাজিয়ে। বাসন্তী ফুলের পরশ আর সৌরভে কেটে যাবে শীতের জরা-জীর্ণতা।বসন্তকে সামনে রেখে গ্রাম বাংলায় মেলা, সার্কাসসহ নানা বাঙালি আয়োজনের সমারোহ থাকবে। ভালোবাসার মানুষেরা মন রাঙাবে বাসন্তি রঙ্গেই। শীতের সঙ্গে তুলনা করে চলে বসন্তকালের পিঠা উৎসবও।এদিকে, দিনটিকে আরো উপভোগ্য করে তুলতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন গ্রহণ করেছে নানা কর্মসূচি। বসন্ত আসলে চারিদিকে গাছে গাছে ফুলের সমারোহ দেখা দেয়। চারদিকে কোকিলের কন্ঠের কুহু কুহু ডাক শোনা যায়। বাংলাদেশে বসন্ত এক অন্যতম ঋতু। এই ঋতুর সবার মনে দোলা দিয়ে … গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আগামীকাল বুধবার ১৪ ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন। এইদিন পালিত হয় বসন্ত বরনে। বসন্তকে বরণ করে নেয়ার জন্য বাংলাদেশে প্রতিবছর বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। বাংলাদেশে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদ এই দিনকে বরণ করতে চারুকলার বকুলতলায় এবং ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে প্রতিবছর জাতীয় বসন্ত উৎসব আয়োজন করে।‘পলাশ ফুটেছে, শিমুল ফুটেছে, এসেছে ফাগুন মাস’। এই পংতিটি একটি গানের কলি। অর্থাৎ ফাল্গুন মাস এলেই পলাশ ফুল ফুটে। ফুটে শিমুলসহ হরেকরকম ফুল। শুরু হয় বসন্তকাল। ফাগুন মাসের প্রায় মধ্যভাগ থেকে পলাশ ফুল ফুটতে শুরু করে। শীতকালে পলাশ ফুল গাছের পাতা ঝরে যায়। বসন্ত বা ফাগুনের প্রারম্ভে নতুন পাতার কুড়ি গজিয়ে ফুল ফুটতে শুরু করে। সারা ডাল থোকা থোকা টকটকে লাল ও হলদেটে লাল ফুলে ভরে যায়। যে বাগানে পলাশ ফুল ফুটে সে বাগান লাল ফুলে ভরে গেলে মনে হয় যেন বাগানে আগুন লেগেছে। কিন্তু এবার দেখা গেছে প্রকৃতিতে এক বিশাল বৈপরীত্য। মাঘ মাস হচ্ছে তীব্র শীতের মাস। গ্রামে-গঞ্জে প্রবচন রয়েছে ‘মাঘ মাইয়া জারে বৈশের শিং লড়ে। এ বছর মাঘে কোন শীত ছিল না। মাঘের ৭ তারিখের পর হঠাৎ শীত উধাও হয়ে যায়। অনেকের ধারণা ছিল মাঘ মাসে সাধারণত শীত হঠাৎ উধাও হয়ে আবার হঠাৎ জেঁকে বসে। এবারো হয়তো তাই হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। মাঘের ৭ তারিখের পর শীত আর ফিরে আসেনি। লোকজন বলছে এবছর শীত আধা পথে এসে ফিরে গেছে। সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে আগাম বসন্ত। মাঘের মধ্যভাগ থেকেই ক্ষণে ক্ষণে শুরু হয় দক্ষিণা মলয়। যা শীতকে উড়িয়ে নিয়ে যায় শীতের দেশে। প্রকৃতিতে দেখা দেয় ব্যাপক পরিবর্তন। পৌষের মধ্যভাগেই এ বছর আমের মুকুল ফুটতে শুরু করে। কোথাও কোথাও দেখা দেয় জাম ও লিচুর মুকুলও। বনে বনে বিভিন্ন গাছগাছালীতে ফুল ফুটতে শুরু করে। মাঘের মধ্যভাগে এ বছর ফুটতে শুরু করেছে চোখ ধাঁধানো লাল ফুল পলাশ। শীতকালেই বনে বনে দেখা দিয়েছে ফাগুনের আগুন পলাশ ফুলের সমাহার। রক্তরাঙ্গা এই ফুল দেখে থমকে দাঁড়ায় পথিক। এখন কোন ঋতু? শীত না বসন্ত। অনেকে ভুল করে ভেবে নেয় এটা বসন্ত। শীতের প্রকৃতিতে বসন্তের আগমনকে প্রকৃতির আগ্রাসন বলে মনে করছে অনেকেই। কোন আগ্রাসনই যেমন মঙ্গলজনক নয় তেমনই শীতের প্রকৃতিতে বসন্তের আগ্রাসনও মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। কিন্তু কেন এই বৈরীতা। প্রকৃতিপ্রেমী লোকজন বলছে প্রকৃতির রক্তবাহী নালী হচ্ছে নদ-নদী, খাল-বিল। স্বাধীনতার উত্তরকালে নদী আগ্রাসনের শিকার হয়েছে আমাদের ভাটির প্রকৃতি। নদী আগ্রাসনে পদ্মাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর অববাহিকার প্রকৃতি ধীরে ধীরে বিবর্ণ আকার ধারণ করছে। আজকের প্রকৃতির এই বিবর্তিত রূপ একদিনের নয়। দীর্ঘ আগ্রাসনের পরিণতিতে প্রকৃতি হারাচ্ছে এর স্বকীয়তা। অদূর ভবিষ্যতে এই বিবর্ণ প্রকৃতি পরিণত হবে এক ভয়াল মরুতে। অকাল বসন্ত এরই ইংগিতবহ বলে মনে করছে সচেতন মানুষ।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : মো: তাজুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়: ২১৯ ফকিরের ফুল (১ম লেন, ৩য় তলা), মতিঝিল, ঢাকা- ১০০০ থেকে প্রকাশিত ।
ফোন: ০২-৭১৯৩৮৭৮ মোবাইল: ০১৮৩৪৮৯৮৫০৪, ০১৭২০০৯০৫১৪
Web: www.dailyasiabani.com ই-মেইল: [email protected]