অনলাইন ডেস্ক : কোনো নভোচারী যদি মহাকাশযানে চড়ে কৃষ্ণগহবরে ঢুকে পড়েন, তাহলে কী হবে? এই ব্যাপারটিই কম্পিউটার সিমুলেশন করে দেখল মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা। এই সিমুলেশন হয়তো ভবিষ্যতে আমাদের ব্ল্যাকহোলের ‘ঘটনা-দিগন্তে’ ঝাঁপ দিতে সহায়তা করবে। ইভেন্ট হরাইজন বা ‘ঘটনা-দিগন্ত’ হলো ব্ল্যাকহোলের সীমা। এই দিগন্ত পেরিয়ে কোনো বস্তু একবার ভেতরে ঢুকে পড়লে আর ফিরে আসতে পারে না; এমনকি আলোও নয়।
নাসার এই সিমুলেশনটি আমাদের কৃষ্ণগহবরের রহস্যময় অন্দরে উঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের জ্যোতিঃপদার্থবিদ জেরেমি গ্লিটম্যান নেতৃত্ব দিয়েছেন এই প্রকল্পে। এই সিমুলেশনে ব্যবহার করা হয়েছে ডিসকাভার নামের এক সুপারকম্পিউটার। তাতে বিপুল পরিমাণ ডাটা বা উপাত্তের সন্নিবেশ করা হয়েছে।
প্রকল্পটির গন্তব্য ছিল একটি অতিভরের ব্ল্যাকহোল, যা আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির একেবারে কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাকহোলটির মতো। এই সিমুলেশনে দেখানো হয়েছে অতিনাটকীয় কিছু দৃশ্য। একজন ভার্চুয়াল পর্যবেক্ষক মহাকাশযান নিয়ে ৪০ কোটি মাইল দূর থেকে ব্ল্যাকহোলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছে একটি ক্যামেরা।
অন্যদিকে দূর থেকে আরেকজন পর্যবেক্ষক লক্ষ রাখছেন ঘটনার দিকে। ক্যামেরাসহ পর্যবেক্ষক ব্ল্যাকহোলের কাছাকাছি গিয়ে দেখবেন, একটি উত্তপ্ত গ্যাসের চাকতি ঘুরছে তাঁকে ঘিরে। এই চাকতির পেছনে থাকা নক্ষত্রগুলোর চেহারা দেখা যাবে বিকৃত—যেমনটা ত্রুটিপূর্ণ আয়নায় দেখা যায়। কারণ ব্ল্যাকহোলের বিশাল ভর এর আশপাশের স্থান-কালকে (স্পেস-টাইম) বাঁকিয়ে দেয় প্রবলভাবে।
ক্যামেরা যত এগোবে ততই ব্ল্যাকহোল ঘিরে থাকা চাকতি, যাকে অ্যাক্রেশন ডিস্ক বলে, তা উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হতে থাকবে।
উজ্জ্বল হবে আশপাশের নক্ষত্রগুলোও। এ সময় ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষীয় টানে দ্রুত এগোতে থাকবে পর্যবেক্ষকসহ ক্যামেরাটি। মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যেই ক্যামেরা ঘটনা-দিগন্তরেখায় পৌঁছে যাবে। কিন্তু দূরে থাকা পর্যবেক্ষক দেখবেন, ক্যামেরা যত ঘটনা-দিগন্তের কাছাকাছি যাচ্ছে, তার গতি তত কমছে। তিনি দেখবেন, ক্যামেরাটি যেন কখনোই ঘটনা-দিগন্তে পৌঁছবে না। কম্পিউটারের সিমুলেশনে নাসার কল্পিত ক্যামেরা অভিযানের দুটি সম্ভাব্য ফল পাওয়া যাবে। একটি চিত্রে ক্যামেরা অল্পের জন্য ইভেন্ট হরাইজনের কাছে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়। অন্যটিতে ক্যামেরাটিকে দেখা যাবে সেই সীমা টপকে ভেতরে ঢুকে যেতে। ক্যামেরা ঘটনা-দিগন্তের সীমা অতিক্রম করার পর এটি ‘স্পাগেটিফিকেশন’ নামের এক নাটকীয় প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে। কৃষ্ণগহবরের অতি শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ক্যামেরাটিকে টানবে ভীষণ জোরে। এতে ক্যামেরাটি ১২.৮ সেকেন্ডের মধ্যে রাবারের মতো লম্বা হবে। তারপর ছিন্নভিন্ন হয়ে ধূলিকণায় পরিণত হবে।
বিকল্প চিত্রটিতে দেখা যাবে, নাসার ক্যামেরা ইভেন্ট হরাইজনের খুব কাছ দিয়ে ঘুরবে, কিন্তু তা অতিক্রম করবে না। সেখানে ‘সময়’ অদ্ভুত আচরণ করবে। সময়ের গতি ধীর হতে হতে অসীম হয়ে যাবে। ক্যামেরার সঙ্গে থাকা নভোচারীর কাছে তা স্বাভাবিক গতিতেই চলবে, কিন্তু অনেক দূর থেকে যাঁরা দেখবেন, তাঁদের মনে হবে সময়ের গতি ধীর হয়ে গেছে। এর নাটকীয় একটা ফল আছে। কাছে যাওয়া ব্যক্তি পৃথিবীতে ফিরে এসে দেখবেন, তাঁর সমবয়সীরা সব অনেক বুড়ো হয়ে গেছে, কিংবা হয়তো মারা গেছে।
সূত্র : এনডিটিভি
|