উৎপাদনশীলতার সুফল উৎপাদনকারী এককভাবে ভোগ করে না, সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সমানভাবে ভোগ করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
শনিবার (৮ জুন) রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও) আয়োজিত ‘ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ এবং ‘ইনস্টিটিউশনাল এপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত শিল্পায়ন আর শিল্পায়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে উৎপাদনশীলতা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো শিল্প ও সেবা খাতে উৎপাদনশীলতার প্রসার ঘটিয়ে জনগণের জীবনমানের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এনপিও বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন খাত, উপ-খাত এবং শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠান খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে যুগোপযোগী কলাকৌশল সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ, সেমিনার, কর্মশালা, পরামর্শ সেবা ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আসছে। উৎপাদনশীলতার সুফল শুধু উৎপাদনকারী এককভাবে ভোগ করে না। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সমানভাবে ভোগ করতে পারে।
তিনি বলেন, জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে শিল্পখাতের অবদান ক্রমবর্ধমান রাখতে শিল্প মন্ত্রণালয় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। শিল্পখাতকে বিশ্ব পর্যায়ে প্রতিযোগিতা সক্ষম করে তোলার লক্ষ্যে প্রযুক্তিভিত্তিক, উচ্চ অগ্রাধিকার শিল্প সৃষ্টি, পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন প্রক্রিয়া, সুসংহত ব্যক্তিখাত গড়ে তোলাসহ পণ্যের গুণগতমান উন্নয়ন, এসএমই খাতের উন্নয়ন ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য মন্ত্রণালয় সুনির্দিষ্ট লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ক্ষুদ্র শিল্পসহ অন্যান্য উদ্যোক্তাদের আর্থিক সুবিধা ও স্বল্পসুদে ঋণপ্রদান, পণ্য বহুমুখীকরণ, মূল্য সংযোজনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি, অবকাঠামো উন্নয়নসহ শিল্প কারখানার সংস্কার, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও শিল্পপণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই শিল্পায়নের প্রসারের মাধ্যমে জিডিপিতে শিল্পখাতের অংশ বাড়াতে সদাসচেষ্ট শিল্প মন্ত্রণালয়।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, দেশের শিল্প ও সেবা ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত পণ্যের উৎকর্ষতা সাধনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। আমি মনে করি ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রীয় এ স্বীকৃতি শিল্প-কারখানায় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও উৎকর্ষতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আজকে যারা আছে ব্যবসায়ীরা তারাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এদেশের ব্যবসায়ীরা দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটটা আমরা আশাকরি বিশেষ করে শিল্প কলকারখানা কেন্দ্রিক। যাদের কাঁচামাল আমদানি করতে হয়, যারা আছেন তাদের দিকে লক্ষ্য করার চেষ্টা করেছি। অন্যান্য যে সব দিকগুলো আছে সেগুলোর দিকে আমরা বড় রকমের রেয়াদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি, আমরা একটা সময় এটার লাগাম ধরতে পারবো। আমাদের যে ক্রাইসিস (সংকট) আছে সেটার উত্তরণ ঘটাতে। মনে করি এ বছরের শেষ নাগাদ আমাদের মুদ্রা বাজারেও স্থিতিশীল আসবে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যারা আছেন তারা বিশাল দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আপনারা যারা রপ্তানি করছেন যারা দেশীয় বাজারে স্থিতিশীল রেখেছেন সেখানে আপনাদের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাঝারি ব্যবসায়ী প্রত্যেকেই আমাদের যে ইকোনোমিক লাইফ লাইন আছে, সারা বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষের যে চাওয়া পাওয়া আছে আপনারাই পূরণ করে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের বিশাল অর্জন আছে। এ অর্জনগুলোকে ধরে রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ হিসেবে অতিথি ছিলেন শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম। এছাড়া সভাপতি ছিলেন ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও) মহাপরিচালক মুহাম্মদ মেসবাহুল আলম।
উৎপাদনশীলতায় অবদান রাখায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে প্রাণ-আরএফএলের ৫ প্রতিষ্ঠানসহ ২২ প্রতিষ্ঠান।
পুরস্কার পাওয়া পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বঙ্গ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস লিমিটেড বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রথম ও মাল্টি লাইন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তৃতীয় পুরস্কার লাভ করেছে। তাছাড়া বঙ্গ প্লাস্টিক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রথম, গেটওয়েল লিমিটেড তৃতীয় ও রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে দ্বিতীয় পুরস্কার লাভ করেছে।
|