ষষ্ঠবারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সব ধাপ মিলেও ৪০ শতাংশও ছুঁতে পারেনি ভোটের হার। ভোটার উপস্থিতির এমন হাল নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের ভাষ্য, এই নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবে তো ব্যাপক অংশগ্রহণ হয়নি। যখন রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক অংশগ্রহণ হয়, তখন ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বেড়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে সেদিক থেকে এটি একটি কারণ হয়ে থাকতে পারে।
রোববার (৯ জুন) ১৯টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
নিজেদের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ৬০-৭০ শতাংশ হলে আমরা আরও সন্তুষ্ট হতাম। আশা করি মানুষ আগামীতে আরও সচেতন হবে, গণতান্ত্রিক চেতনা উপলব্ধি করে ভোটমুখী হবেন।
তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ জুন শেষ হওয়া ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চার ধাপে গড়ে ভোট পড়েছে ৩৬.১৩ শতাংশ। এই চার ধাপে ৪৪২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়। রোববার (৯ জুন) অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৯টি উপজেলায় নির্বাচন। এর মধ্য দিয়ে দেশের ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে ৪৬৯টিতে নির্বাচন সম্পন্ন করল নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি।
রোববারের নির্বাচনে ১১৮০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৩৫টি ভোটকেন্দ্রের হিসাব পাওয়ার কথা জানিয়ে বিকেলে সিইসি বলেন, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ভোট পড়েছে ৪৩ দশমিক ৯১ শতাংশ।
ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবার গত ৮ মে অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের ১৩৯টি উপজেলায় ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পড়েছে। ২১ মে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ২৯ মে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ৮৭ উপজেলায় ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। ৫ জুন চতুর্থ ধাপে ৬০ উপজেলায় ভোট হয়। এ ধাপে ভোটের হার ৩৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
এর আগে ২০১৯ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ৪৪৫টি উপজেলা নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়ার হার ছিল ৪০.৪৯ শতাংশ।
নির্বাচনের মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সিইসি বলেন, কিছু কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেই থাকে। অর্থের লেনদেন হয়ে থাকে। অনৈতিকভাবে অর্থের লেনদেনের খবরও আমরা পেয়ে থাকি। এগুলো বাস্তবতা। তবে সার্বিকভাবে আমার মনে হয়, নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হয়েছে। প্রশাসন, পুলিশের যে ভূমিকা তা প্রশংসনীয়। আমাদের নির্দেশনা তারা কঠোরভাবে প্রতিপালন করছেন। রাজনৈতিক সদিচ্ছাও ছিল খুব ইতিবাচক।
‘তবে এবার নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল। দেখা গেছে দুই-একটি দল ছাড়া রাজনৈতিক প্রতীকে অংশগ্রহণ করেনি। যার ফলে নির্বাচনটা আগের মতো স্থানীয়ভাবে ব্যক্তিভিত্তিক হয়েছে। যদিও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা অংশগ্রহণ করেছেন, তবে রাজনৈতিক পরিচয়ে নয়।-বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
ভোটার উপস্থিতি কম নিয়ে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ কম থাকার কথা জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোটারদের কেন্দ্রে আনার দায়িত্ব হচ্ছে প্রার্থীর। প্রার্থীরা তাদের কাছে আবেদন জানাতে পারে। এতে ভোটাররা কতটুকু সাড়া দেবে, এটা তাদের ওপর নির্ভর করে। তারা রাজনৈতিকভাবে সচেতন। তারা সেটা বিবেচনা করতে পারে। তবে আমাদের জন্য সেটা বিবেচ্য নয়। আমাদের জন্য বিবেচ্য হচ্ছে ভোটটা যেন শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠুভাবে হয় এবং ভোটার যারা তারা যেন শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। এখন যদি তারা ওখানে জোর করে ভোট দিয়ে থাকে তাহলে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না। সেই দিকটা আমরা বিশেষ করে জোর দিয়েছি। কোনো কিছুই স্থির থাকে না। আশাকরি এটা ইম্প্রুভ হবে।
উপজেলা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হওয়ায় আপনারা সন্তুষ্ট কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এটা সন্তুষ্টি, অসন্তুষ্টির বিষয় না। চট করে বলতে পারব না। আমরা হতাহতের খবর পাইনি। ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি এমনটা হয়নি। সেদিক থেকে এটা ইতিবাচক। সেই দিক থেকে আমরা সন্তুষ্ট বোধ করছি।
|