আবু সায়েমঃ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জেলে সেজে সারারাত রুদ্ধশ্বাস অভিযান পরিচালনা করে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের সাড়ে ১২ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চকরিয়া থানার সুযোগ্য ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী। কক্সবাজার জেলায় তিনি একমাত্র ওসি সর্ববৃহৎ ইয়াবার চালান উদ্ধার করে সব রেকর্ড ভেঙে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন । কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ওসি হিসেবে যোগদান করে কর্মকালীন সকল সফলতার দ্বার উন্মোচন করেছেন তিনি। কৃতিত্ব ও সফলতার ফলস্বরূপ জেলায় তিনি ১৫ বারের চেয়ে বেশি শ্রেষ্ঠ ওসির সম্মাননা পেয়েছেন। পেয়েছেন পুলিশের সর্বোচ্চ পদক ` পুলিশ ফোর্স এক্সেমপ্লেরি গুড সার্ভিস ব্যাজ। অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনকালে তিনি জেলার প্রতিটি উপজেলায় অপরাধ দমনের মাধ্যমে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালিয়ে ইয়াবা নির্মূলে রেখেছেন তিনি ব্যাপক অবদান। এবার চকরিয়া থানায় ১২ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করায় আইজিপি কর্তৃক মানি রিওয়ার্ড ও সম্মাননা পেয়েছেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী। এ ছাড়া ওই ঘটনায় এজাহার নামীয় এক আসামিকে গ্রেফতার করে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী নেয় আদালত।গত ৬ জুন (বৃহস্পতিবার) জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ক্রাইম কনফারেন্সে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম, অন্যান্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসার ও সকল থানার অফিসার ইনচার্জের উপস্থিতিতে আইজিপির দেওয়া মানি রিওয়ার্ডের দেড় লাখ টাকা ও সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এর আগেও কক্সবাজার ডিবির ওসি থাকাকালে ইয়াবার একটি বড় চালান উদ্ধার করেছি। যেটি সারা দেশে সাড়া ফেলেছিল। এবার আরও একটি বড় ইয়াবার চালান উদ্ধার করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। এই সাহসিকতাপূর্ণ কাজের সফলতায় আইজিপি মানি রিওয়ার্ড ও সম্মাননা আমাকে আরও ভালো কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া এই অর্জন আমার সাথে থাকা চকরিয়া থানার সকল কর্মকর্তা ও কনস্টেবলেরও। আমি মনে করি যেকোনো মানুষের ভালো কাজের পুরস্কার তার কাজের গতিকে বাড়িয়ে দেয়। পুলিশের সর্বোচ্চ এ সম্মাননা ও পুরস্কার আমার দায়িত্বকে আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সামনের দিনগুলোতে রাষ্ট্রের দেয়া দায়িত্ব ও মাদকের বিরুদ্ধে ঘোষিত জিরো টলারেন্স বাস্তবায়নে জীবন বাজি রেখেই কাজ করব। জনগণের জান মালের নিরাপত্তা প্রদান আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক সহ সর্বোপরী মডেল থানা হিসেবে রুপান্তরিত করতে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি। সংশ্লিষ্ট তথ্য সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৫ শে সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলা পুলিশে বড় রদবদল হয়। তখন শেখ মোহাম্মদ আলী কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ০১ (এক) বছর ওসি, ডিবি হিসেবে জেলা গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত থাকাকালীন ২০২১ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারী এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ মাদকের চালান ১৭,৫০,০০০ (সতের লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) পিস ইয়াবা ট্যাবলেট (যাহার আনুমানিক বাজার মূল্য ৫৩ কোটি টাকা) এবং ইয়াবা বিক্রয়ের নগদ ১,৭০,৬৮,৫০০/- (এক কোটি সত্তর লক্ষ আটষট্টি হাজার পাচঁশত) টাকা জব্দ করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেন। ০৬ (ছয়) জন আসামী গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃত ০১ জন আসামী বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। তাঁর এ সাহসিকতাপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ তৎকালীন চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি (বর্তমানে অতিরিক্ত আইজিপি) আনোয়ার হোসেন, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী’কে ক্রেষ্ট এবং সার্টিফিকেট প্রদান করেন। তাঁর অন্যতম এ সাফল্যসহ ০১ বছরে প্রায় ২৪ লক্ষাধিক ইয়াবা ট্যাবলেট এবং ১১ টি অস্ত্র-গুলি উদ্ধার, জ্বীনের বাদশা সেজে সাধারণ মানুষের টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারকদের গ্রেফতার, অপহরণ মামলার শিশু ভিকটিম ও অন্যান্য ভিকটিম উদ্ধার, চোরাইকৃত অসংখ্য গাড়ি ও মোটরসাইকেল উদ্ধারপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ও ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ তৎকালীন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) রাষ্ট্রীয় পদক আইজিপি ব্যাজ প্রদান করেন। উল্লেখ্য যে, তিনি ২০১৬ সালে ডবলমুরিং মডেল থানা, সিএমপি, চট্টগ্রাম এ ওসি (তদন্ত) হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন তাঁর এধরণের ভালো ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ তৎকালীন আইজিপি এ.কে.এম শহিদুল হক, বিপিএম, পিপিএম তাঁকে রাষ্ট্রীয় পদক আইজিপি ব্যাজ প্রদান করেন।
সংশ্লিষ্ট তথ্য সূত্রে আরো জানা যায়, গত ১০ অক্টোবর, ২০২১ সালে তিনি পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন। অফিসার ইনচার্জ পেকুয়া থানা হিসেবে কর্মরত থাকাকালে পেকুয়া থানার ইতিহাসে সর্বোচ্চ মাদক চালান ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) পিস ইয়াবা ট্যাবলেট (যাহার অনুমান মূল্য ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা) উদ্ধারসহ ০১ টি প্রাইভেট কার, ০৩ টি মোটরসাইকেল জব্দ ও ০৬ জন আসামীকে গ্রেফতার করেন। জাল টাকা দিয়ে প্রতারণাকারী প্রতারকচক্রকে গ্রেফতার, অস্ত্র-গুলি উদ্ধারসহ তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করেন।
তিনি গত ২০২২ সালের ২৯ শে মে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন। উখিয়া থানায় প্রায় ১৮ মাস (১ বছর ০৬ মাস) কর্মরত থাকাকালীন সময়ে তিনি লক্ষ লক্ষ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার, ইয়াবা গডফাদার হিসেবে পরিচিত জামাই শফিউল্লাহ’কে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ২০,০০০ (বিশ হাজার) পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন। রোহিঙ্গা জামাই শফিউল্লাহ বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দিতে স্বীকার করেন যে, সে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট আশ্রয় শিবিরে মায়ানমার বর্ডার ক্রস করে নিয়ে আসেন যার বাজারমূল্য শত কোটি টাকার বেশি। জনাব শেখ মোহাম্মদ আলী অসংখ্য অস্ত্র-গুলিসহ আলোচিত রোহিঙ্গা আসামীদের গ্রেফতার করেন। এ সমস্থ অস্ত্র-গুলি রামুর জোয়ারিয়ানালা হতে উখিয়া হয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশের সময় এই চৌকশ পুলিশ কর্মকর্তা কৌশলে রোহিঙ্গা আসামীদেরকে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেফতার করেন। তার এই সাহসিকতা ও ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ কক্সবাজার জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুল ইসলাম, বিপিএম, পিপিএম (বার) তাঁকে কক্সবাজার জেলার শ্রেষ্ট অফিসার ইনচার্জ হিসেবে মনোনীত করে ক্রেষ্ট প্রদান করেন। তিনি উখিয়া থানায় কর্মরত থাকালীন অসংখ্য ক্লু-লেস খুনের মামলার রহস্য উৎঘাটন, অপহরণ মামলার রোহিঙ্গা শিশু ভিকটিম ও অন্যান্য ভিকটিম উদ্ধারপূর্বক মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রকে গ্রেফতারসহ বিকাশ প্রতারক চক্রকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। সর্বশেষ তিনি বর্তমানে চকরিয়া থানায় কর্মরত আছেন।
গত ১৫ ই নভেম্বর, ২০২৩ সালে চকরিয়া থানার অফিসার ইনর্চাজ হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর এই চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা গত ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিঃ চকরিয়া থানাধীন খুটাখালী নদীতে জেলে সেজে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সারারাত মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে মায়ানমার থেকে সাগর পথে ট্রলার যোগে আনা ১২ লক্ষ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট (যার অনুমান বাজারমূল্য ৩৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা), যা পুলিশ বাহিনী কর্তৃক দেশের দ্বিতীয় সবোর্চ্চ বৃহৎ চালান জব্দ করেন। উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে ২০২১ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারী দেশের সর্ববৃহৎ ১৭,৫০,০০০ (সতের লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) পিস ইয়াবা ট্যাবলেট (যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৫৩ কোটি টাকা) ইয়াবা চালানও তিনি উদ্ধারপূর্বক জব্দ করেছিলেন। কৌশলে নৌযান থেকে লাপিয়ে পড়া এজাহারনামীয় পলাতক আসামী শাহজাহান’কে পরদিন অর্থাৎ ৩০/০৪/২০২৪ খ্রিঃ দিবাগত রাত ২ টার সময় টেকনাফ থানা এলাক থেকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃত আসামী শাহজাহান বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন যে, শাহজাহানসহ ইয়াবা সংঘবদ্ধ চক্র চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মায়ানমার থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে ট্রলার যোগে নিয়ে যাচ্ছিল। উল্লেখ্য যে, এই ১২ লক্ষ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে গেলে দেশের লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরী মাদকাশক্ত হয়ে পড়ার আশংকা ছিল। অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ আলীর দূরদর্শিতা ও সাহসিকতারপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুল ইসলাম, বিপিএম, পিপিএম (বার) তাঁকে জেলার শ্রেষ্ট মাদক উদ্ধারকারী কর্মকর্তা ও শ্রেষ্ট অফিসার ইনচার্জ হিসেবে মনোনীত করে ক্রেষ্ট প্রদান করেন। প্রসঙ্গত, এই চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা কক্সবাজার জেলায় ১৫ (পনের) বার শ্রেষ্ট অফিসার ইনচার্জ হিসেবে মনোনীত হন। চকরিয়া থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদানের পর চকরিয়াকে তিনি অনেকাংশে মাদকমুক্ত করতে সক্ষম হন। চকরিয়া থানায় যোগদানের পর বেশ কয়েকটি অস্ত্র-গুলি উদ্ধারপূর্বক আসামী গ্রেফতার করেন।
সরেজমিনে থানা পরিদর্শনকালে থানায় আগত সেবাপ্রার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় , থানায় জিডি, অভিযোগ, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, মামলা রুজুসহ কোন ক্ষেত্রেই থানায় কোন টাকা-পয়সার লেনদেন ছাড়াই আন্তরিকতার সাথে সেবা পাওয়া যায়। সাধারণ মানুষ থানার প্রত্যক্ষ সেবা পেয়ে মহান আল্লাহর কাছে ওসি শেখ মোহাম্মদ আলীর জন্য দু-হাত তুলে দোয়া করেন। পুরো কক্সবাজার জেলা তাঁর এমন বীরত্বপূর্ণ সেবামূলক সৃজনশীল কর্মকান্ডে প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
প্রসঙ্গত, ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যান বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং দুই কন্যা সন্তানের স্বার্থক পিতা। তাঁর স্ত্রী দীনা মরিয়ম ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স শেষ করে এফসিএমএ কোর্স সম্পন্ন করেছেন এবং তাঁর ৭ টি ছোট গল্প ও শিশুতোষ গল্প প্রকাশিত হয়েছে। তিনি একজন স্বনামধন্য লেখিকা হিসেবে সুপরিচিত।
|