মিয়া আবদুল হান্নান : সুরা মাআরিজ কোরআনের ৭০তম সুরা, এর আয়াত সংখ্যা ৪৪, রুকু সংখ্যা ২। সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। মক্কার কাফেররা ইসলামের কেয়ামত, আখেরাত, জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কিত বক্তব্য নিয়ে বিদ্রূপ ও উপহাস করতো এবং নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই মর্মে চ্যালেঞ্জ করতো যে, আপনি সত্যবাদী হলে আল্লাহর আজাব নিয়ে আসুন। সুরা মাআরিজে তাদের এ চ্যালেঞ্জের জবাব দেওয়া হয়েছে।
সুরা মাআরিজের আলোচ্যবিষয় কাফেরদের অবিশ্বাস, পরিণতি, আখেরাত, কেয়ামত, জাহান্নামের শাস্তি, মানুষের বিভিন্ন মন্দ স্বভাব, মুমিনদের উত্তম বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি।
সুরা মাআরিজের ৩৬-৪৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন, (৩৬) ফামা-লিল্লাযীনা কাফারূ কিবালাকা মুহতিঈন। কাফেরদের হল কি যে, তারা তোমার দিকে ছুটে আসছে? (কোরআন পাঠ শুনে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করার জন্য)
(৩৭) আনিল ইয়ামীনি ওয়া আনিশ শিমালি ইঝীন। ডান ও বামদিক থেকে দলে দলে।
(৩৮) আইয়াতমাউ কুল্লু-মরিইম মিনহুম আইঁ ইউদখালা জান্নাতা নাঈম। তাদের প্রত্যেকেই কি প্রত্যাশা করে যে, তাকে দাখিল করা হবে নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতে?
(৩৯) কাল্লা ইন্না খালাকনাহুম মিম্মা ইয়া‘লামূন। কক্ষনো না, আমি তাদেরকে কী থেকে সৃষ্টি করেছি তা তারা জানে। (তুচ্ছ অপবিত্র পানি থেকে সৃষ্ট মানুষের এমন কোনো সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য বা গুণ নেই যে কারণে সে জান্নাত লাভ করতে পারে। মানুষ জান্নাত লাভ করবে তার উত্তম কাজের বদলায়)।
(৪০) ফালা উকসিমু বিরাব্বিল মাশারিকি ওয়াল মাগারিবি ইন্না লাকাদিরূন। আমি শপথ করছি উদয়াচল ও অস্তাচলসমূহের পালনকর্তার, নিশ্চয়ই আমি সক্ষম!
(৪১) ‘আলাআন নুবাদ্দিলা খাইরাম মিনহুম ওয়ামা-নাহনুবিমাছবূকীন। যে, তাদের স্থলবর্তী করব তাদের অপেক্ষা উৎকৃষ্ট মানবগোষ্ঠীকে এবং কেউ আমাকে ব্যর্থ করতে পারবে না।
(৪২) ফাযারহুম ইয়াখূদূ ওয়া ইয়ালআবূ হাত্তা ইউলাকূ ইয়াওমা হুমুল্লাযী ইঊআদূন। কাজেই তাদেরকে অনর্থক কথাবার্তা ও খেল তামাশায় মত্ত থাকতে দাও যতক্ষণ না তারা সে দিনের সাক্ষাৎ লাভ করে যে দিনের ওয়াদা তাদেরকে দেয়া হয়েছিল।
(৪৩) ইয়াওমা ইয়াখরুজূনা মিনাল আজদাসি সিরাআন কাআন্নাহুম ইলা নুসুবিইঁ ইঊফিদূন। সে দিন তারা দ্রুতবেগে কবর থেকে বের হবে, যেন তারা তাদের প্রতিমাদের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে।
(৪৪) খাশিআতান আবসারুহুম তারহাকুহুম যিল্লাতুন যালিকাল ইয়াওমুল্লাযী কানূ ইঊআদূন। তাদের দৃষ্টি থাকবে অবনত। হীনতা তাদের আচ্ছন্ন করে রাখবে। এটাই সেই দিন, যার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেওয়া হতো।
এ আয়াতগুলো থেকে আমরা যে শিক্ষা ও নির্দেশনা পাই: ১. আল্লাহর বাণী নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করা কাফেরদের বৈশিষ্ট্য। মক্কার কাফেররা আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তার ওপর অবতীর্ণ কোরআনের বাণী নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতো।
২. মানুষ জান্নাতে যাবে তার ঈমান ও নেক আমলের কারণে। শিরক ও অন্যান্য গুনাহ থেকে পবিত্র থাকার বদলায়। সৃষ্টিগত কোনো গুণ বা বৈশিষ্ট্যের কারণে মানুষ জান্নাতবাসী হবে না।
৩. যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের পুনরায় সৃষ্টি করার ক্ষমতাও রাখেন। আখেরাতের জীবন সত্য। একদিন সবাইকে আল্লাহর দরবারে সমবেত হতে হবে এবং নিজের কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে।
৪. দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। ঈমান ও নেক আমল থেকে দূরে থেকে যারা দুনিয়ার ভোগ বিলাসে গা ভাসিয়ে দিয়েছে, খুব শীঘ্রই মৃত্যুর মাধ্যমে তাদের মোহভঙ্গ হবে এবং কবর ও আখেরাতের জীবনে তাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
|