মিয়া আবদুল হান্নান : কবর জিয়ারত করা, কবরস্থানে গিয়ে মৃত মুসলমানদের জন্য দোয়া করা ও মৃত্যুর কথা স্মরণ করা সুন্নত ও সওয়াবের কাজ। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাঝে মাঝেই সাহাবিদের কবরস্থান জান্নাতুল বাকিতে যেতেন এবং বেশ কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করতেন, কবরবাসীদের জন্য দোয়া করতেন।
কবরস্থানে গিয়ে অতিরিক্ত আবেগ প্রকাশ ও শরিয়ত-নিষিদ্ধ কাজকর্ম ঠেকাতে একবার রাসুল (সা.) কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন। পরবর্তীতে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়ে তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন থেকে তোমরা কবর জিয়ারত কর। কারণ কবর জিয়ারত দুনিয়ার আকর্ষণ কমিয়ে দেয় ও পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজা: ১৫৭১)
কবর জিয়ারত করতে গিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবরবাসীকে সালাম দিয়ে দোয়া করতেন। সাহাবিদেরও তিনি সালাম দিয়ে দোয়া করতে শিখিয়েছেন। বুরায়দাহ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবরস্থানে গেলে এ দোয়া পড়তে শিখিয়েছেন,
অর্থ: হে কবরবাসী মুমিন ও মুসলিমগণ! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ অবশ্যই আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হচ্ছি। আমরা আমাদের ও তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। (সহিহ মুসলিম: ৯৭৫)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদিনার কবরস্থান হয়ে যাচ্ছিলেন, এ সময় তাদের দিকে মুখ করে বললেন,
অর্থ: হে কবরবাসী, তোমাদের ওপর শান্তি বৰ্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিন, (পরকালের যাত্রায়) তোমরা আমাদের আগে গেছ আর আমরাও তোমাদের অনুসরণ করবো। (সুনানে তিরমিজি: ৫৯৬)
জানাজার নামাজে মৃতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দোয়া করেছিলেন,
অর্থ: হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করে দিন, তার ওপর করুণা করুন, তাকে শক্তি দিন এবং তাকে রেহাই দিন। তার উপর সহৃদয় হোন এবং তার জন্য উত্তম অভ্যর্থনার ব্যবস্থা করুন এবং তাকে পানি, বরফ ও তুষার দ্বারা ধৌত করে দিন। তার গুনাহসমূহ পরিস্কার করে দিন যেভাবে সাদা কাপড় দাগমুক্ত করে ধৌত করা হয়। সে যে ধরণের আবাসের সঙ্গে পরিচিত তার থেকে তাকে উত্তম আবাস দিন এবং যে ধরনের পরিবারের সঙ্গে পরিচিত তার থেকে উত্তম পরিবার দিন এবং তার স্ত্রীর চেয়ে উত্তম স্ত্রী দিন। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং কবরের ফিতনা থেকে এবং জাহান্নামের আগুন থেকে তাকে রক্ষা করুন। (সহিহ মুসলিম: ৯৬৩)
এ দোয়াটিও কবর জিয়ারত করতে গিয়ে পড়া যায়। এ ছাড়া কোরআন হাদিসে উল্লিখিত অন্যান্য দোয়াও পড়া যায়। নিজের ভাষায়ও মৃতের আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনা করে দোয়া করা যায়।
|