মিয়া আবদুল হান্নান : ৫৭০ সালের এই দিনে ১২ রবিউল আউয়াল আরবের মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।আজ সোমবার (১২ রবিউল আউয়াল)১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ৫৭০ সালের এই দিনে মানব জাতির জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম এর শুভ আবির্ভাব ঘটে। দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত। ৫৭০ সালের এই দিনে (১২ রবিউল আউয়াল) আরবের মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম ।ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। এ সকল কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর জীবনের ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। আজ সোমবার, ১২ রবিউল আউয়াল। এ দিন মানব জাতির শিরোমণি মহানবী হযরত মুহম্মদ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম এর জন্ম ও ওফাতের দিন। জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম । আবার এই দিনে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান সারা জাহান কাঁদিয়ে । জন্ম ৫৭০ খ্রি. (৫৩ হিজরিপূর্ব) মক্কা, হেজাজ, আরব।
মৃত্যু ৮ জুন ৬৩২ খ্রি. (১১ হিজরি; বয়স ৬১–৬২) মদিনা, হেজাজ, আরব সমাধিস্থল মসজিদে নববির, সবুজ গম্বুজের নিচের সমাধিক্ষেত্র, মদিনা, সৌদি আরব ২৪°২৮′০৩″ উত্তর ৩৯°৩৬′৪১ কুরআন সুন্নাহর আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র গুরুত্ব ও তাৎপর্য ঈদ ও মিলাদ প্রসঙ্গ: ঈদ অর্থ খুশী, আনন্দ, মিলাদ অর্থ জন্মদিন, জন্মকাল, জন্মস্থান, জম্মোৎসব, ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার হয়। এ অর্থে ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থ অদৃশ্যের সংবাদদাতা আল্লাহর প্রেরিত বান্দা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম`র শুভাগমন উপলক্ষে শরয়ী পন্থায় খুশী, আনন্দ উদযাপন করা। আল্লাহর প্রিয় হাবীবের শুভাগমনের স্মৃতি বিজড়িত রবিউল আউয়াল শরীফের মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষা করুন। নূর নবীজির পৃথিবীতে শুভাগমনের ঐতিহাসিক মহিমান্বিত রবকত মন্ডিত দিন বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর খুশী উদযাপনের দিন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিবসটি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ও আবহমান কাল থেকে পৃথিবীর দেশে দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশেষ গুরুত্বের সাথে পালিত হয়ে আসছে। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। আজ বাদ মাগরিব বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব গেইটে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন।
অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে- ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, সেমিনার, ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুতবা লিখন প্রতিযোগিতা, ক্বিরাত মাহফিল, হামদ-না’ত, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, ইসলামী বইমেলা, বিশেষ স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করছে। এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫৪টি ইসলামিক মিশন ও ৮টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫৪টি ইসলামিক মিশন ও ৮টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
আল কুরআনের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের গুরুত্ব: মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন, হে প্রিয় হাবীব আপনি বলে দিন, তারা যেন আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশি উদযাপন করে উক্ত খুশি ও আনন্দ তাদের সমুদয় সঞ্চয় থেকে অতি উত্তম। উপরে বর্ণিত আয়াত সমূহে যেরূপভাবে নেয়ামতের র্চচা ও স্মরণ করার উল্লেখ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে অত্র আয়াতে দয়া, অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশী উদযাপনের নির্দেশ রয়েছে। প্রিয় নবী যে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহর রহমত, এতে মুসলিম মিল্লাতের কোন দ্বিমত নেই। অত্র আয়াতে যদি ফজল ও রহমত দ্বারা অন্য কিছু উদ্দেশ্য করা হয় তাও হুজুরের ওসীলায় সৃজিত। সর্বাবস্থায় প্রিয় রাসুলের পবিত্র সত্তা আল্লাহ পাকের সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত হওয়া প্রমাণিত। উভয় জাহানে তারই রহমতের বারিধারা প্রবাহিত, সুতরাং তাঁর গুণগান শান মান মর্যাদা ও মাহাত্ম্য স্মরণ করা ও আলোচনা করা বিধাতার আনুগত্যের নামান্তর, পক্ষান্তরে এর বিরোধিতা করা অস্বীকার করা অকৃতজ্ঞতার পরিচায়ক। হাদীস শরীফের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবীর তাৎপর্য: হযরত কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, প্রিয় রাসুলের কাছে সোমবার দিবসে রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে প্রিয় নবী এরশাদ করেন, এ দিনেই আমি আবির্ভূত হয়েছি এবং এদিনেই আমার উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।(মিশকাত শরীফ ১৭৯ পৃষ্ঠা) আখেরী নবী প্রিয় নবীর উপরোক্ত হাদিস থেকে মিলাদুন্নবী তথা আখেরী নবী প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম জন্ম দিবস ও নুযুলে কুরআন দিবসের গুরুত্ব এবং ঐতিহাসিক স্মরণীয় দিবসের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন ও নেয়ামত প্রাপ্তির কৃতজ্ঞতা স্বরূপ রোজা পালনের বৈধতা প্রমাণিত হলো। সুতরাং সাপ্তাহিক হিসেব অনুসারে প্রতি সোমবার যেমনি মুসলমানদের নিকট ঐতিহাসিক গুরুত্ব রাখে তেমনি বার্ষিক হিসেবে ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ বিশ্ব মুসলমানদের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ এবং এ মাসে এ দিবসের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা অপরিসীম। ২৭ শে রমজান পবিত্র কুরআন অবতরনের দিন হিসেবে যেভাবে গোটা রমজান মাস সম্মানিত স্মরণীয় বরণীয়। তেমনিভাবে প্রিয় নবীর বেলাদত দিবস সোমবার ১২ রবিউল আউয়াল মাসে হওয়ার কারণে গোটা মাস মুসলিম মিল্লাতের কাছে ঐতিহাসিকভাবে সমাদৃত এবং এ মাসের গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব ওলামায়ে ইসলামের সর্বসম্মতিক্রমে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। প্রসঙ্গত ঃবোখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম আহমদ বিন মুহাম্মদ কুস্তালানী মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (র.) প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেন যে, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রা.) এর মতো বিশ্ববিখ্যাত ওলামায়ে কেরাম বলেন, প্রিয় নবীর জন্মদিবস শবে ক্বদর থেকে উত্তম, আরো বলেন শুক্রবার আদম (আ.) এর জন্ম দিবস হওয়ার কারণে যদি সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর গ্রহণযোগ্যতা সর্বজন স্বীকৃত হয় তাহলে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জন্ম দিবসের পবিত্র ক্ষণ ও মুহূর্ত তোমার ধারণা মতে কেমন হওয়া উচিত। তাঁর সমুন্নত মর্যাদার যথার্থ বর্ণনা আদৌ কি সম্ভব। (জুরকানী শরহে মাওয়াহিব পৃঃ ১৩২-১৩৫ মাদারেজুন্নবুয়ত ২য় খন্ড ১৩ পৃষ্ঠা)ঈদ ও মিলাদ প্রসঙ্গ: ঈদ অর্থ খুশী, আনন্দ, মিলাদ অর্থ জন্মদিন, জন্মকাল, জন্মস্থান, জম্মোৎসব, ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার হয়। এ অর্থে ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থ অদৃশ্যের সংবাদদাতা আল্লাহর প্রেরিত বান্দা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র শুভাগমন উপলক্ষে শরয়ী পন্থায় খুশী, আনন্দ উদযাপন করা। এতদ উপলক্ষে নবীজির জন্মকালীন অলৌকিক ঘটনাবলীর বর্ণনা করা, তাঁর বাল্যজীবন, শৈশব, কিশোর জীবন, মক্কী জীবন, মদনী জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, হিজরত, জিহাদ, ইসলামী দাওয়াত প্রচার সম্প্রসারণ, সার্বিক বিষয়াদির গুরুত্ব ও তাৎপর্য আলোচনা করার নামই মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এক শ্রেণির লোকেরা প্রচার করে থাকে ইসলামে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা দুই ঈদ ছাড়া তৃতীয় কোন ঈদের অস্তিত্ব নেই। এ দাবী ভিত্তিহীন, মনগড়া কুরআন সুন্নাহ বিরোধী। দেখুন! ঈসা (আ)’র উপর আসমান থেকে খাবার ভর্তি দস্তরখানা অবতীর্ণ হওয়ার দিন, আরাফাতের দিন, শুক্রবার জুমার দিনসহ আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত প্রাপ্তির দিন সমূহকে ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করার বর্ণনা কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আল কুরআনে ঈদ শব্দের ব্যবহার: “ঈসা ইবনে মরিয়ম বলেন, হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রভূ আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা অবতরণ করুন। এটা হবে আমাদের পূর্ববতীও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ স্বরূপ। (সূরা: আল মায়িদা, আয়াত: ১১৪)আসমান থেকে খাদ্য অবরতণের দিবস যদি ঈদের দিবস হয়। যে দিন সমগ্র সৃষ্টির মূল ধরাধামে তাশরীফ এনেছেন সে দিন কেনই বা ঈদের দিবস হবে না? ঈদে মীলাদুন্নবী হিসেবে এ দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য কতইনা গুরুত্ববহ কতইনা আনন্দের।
কুরআনের আয়াত অবতরণের দিন যদি ঈদের দিন হয়। ছাহেবে কুরআনের শুভাগমন দিবস অবশ্যই ঈদের দিবস। আমীরুল মুমেনীন হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, এক ইয়াহুদী লোক আমীরুল মুমেনীনকে বললেন, হে আমীরুল মুমেনীন, আপনারা আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত পাঠ করেন, সে ধরনের আয়াত যদি আমাদের উপর নাযিল হতো, সে দিনকে আমরা ঈদ হিসেবে পালন করতাম। আমীরুল মুমেনীন বলেন, সে আয়াত কোনটি? তখন ইয়াহুদী বলল, আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দ্বীনাকুম ......... তখন হযরত ওমর (র.) এরশাদ করেন, আমরা সে আয়াত এবং আয়াত নাযিল হওয়ার স্থানকে ছিনি। (মুসনাদ আবু য়া’লা: ১৩৪) জুমাআর দিন মুসলমানদের ঈদের দিন: প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় এটা (জুমাবার) ঈদের দিন। আল্লাহ তা’য়ালা এটা মুসলমানদেরকে দান করেছেন। (নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং ১৬৬৬) মিলাদ বিদ্বেষীরা অভিযোগ করে এ দিন উম্মত হিসেবে রোজা না রেখে মিলাদ আয়োজন করা, জশনে জুলুস বের করা, সভা-সেমিনার আয়োজন করা, আলোক সজ্জা করা, তাবাররুক বিতরণ করা ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করা বিদআত। এসব জ্ঞান পাপীদের উপরোক্ত বক্তব্য, মন্তব্য অজ্ঞতা ও মূর্খতার পরিচায়ক। অথচ নবীজি রাহমাতুল্লীল আলামীন হিসেবে শুভাগমনের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ খুশী, আনন্দ উদযাপন করা মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনের অনুসরণ। যেমন জুমার দিনকে ঈদের দিন বলা হয়েছে এরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় জুম’আর দিন হল ঈদের দিন, তোমরা ঈদের দিনকে রোজার দিন করোনা। তোমরা এর আগে বা পরের দিন রোজা রাখ। (নাসায়ী শরীফ: ১৬৬৬) প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার শুভাগমনের মাসে ও দিনে নফল নামায আদায় করা, দান সাদকা করা, স্মরণ সভা, আলোচনা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, মিলাদুন্নবী, জশনে জুলুছ, আলোকসজ্জা, শোভাযাত্রা, খানা পিনার আয়োজন, মিষ্টান্ন বিতরণ ইত্যাদি কর্মসূচী পালন করা এবং তাঁর স্মরণে খুশি উদযাপন করা আল্লাহর ও রাসুলের আনুগত্য বৈ কি? পক্ষান্তরে এর বিরোধিতা অকৃতজ্ঞতার পরিচায়ক।
নবীজির শুভাগমন বিশ্ববাসীর জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত: মহীয়ান ¯্রষ্টা বিশ্ববাসীর প্রতি তাঁর প্রিয় হাবীব রাহ্মাতুল্লীল আলামীনের প্রেরণকে মহান আল্লাহর সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত বলে অভিহিত করেছেন, এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমীনদের প্রতি বড়ই অনুগ্রহ করেছেন, যেহেতু তিনি তাদের মধ্যে তাদেরই কল্যাণ্যার্থে একজন সম্মানিত রসুল প্রেরণ করেছেন। (সূরা: ৩, আলে ইমরান, পারা ৪, আয়াত: ১৬৪) ঈমানদারদের উপর সর্বোত্তম নিয়ামত প্রেরণ করে তাদেরকে ধন্য ও কৃতার্থ করেছেন। সুতরাং ঈমানদার মাত্রই সকলের উপর এ নিয়ামতের যথার্থ মূল্যায়ন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা অবশ্যই কর্তব্য। বিশেষত ঃ যে মাসে যে দিনে এ মহান অনুগ্রহ দান করেছেন সে মাসে সেদিনে এ নিয়ামতের আলোচনা করা স্রষ্টার নির্দেশেরই অনুগামিতা। আল্লাহ পাক কুরআন শরীফের বহুস্থানে খোদাপ্রদত্ত নিয়ামতের আলোচনা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং বিভিন্নভাবে এ নিয়ামতের যথার্থ স্মরণ করার নির্দেশ করেছেন। বিশেষতঃ সুরা দোহায় এরশাদ করেছেন,আপনার পালন কর্তার নিয়ামতের র্চচা করুন।(পারা-৩০ রুকু ১৮) অতঃপর আল্লাহ পাক নিয়ামতের অবমূল্যায়ন ও অস্বীকারকারীদের পরিণতি সম্পর্কে এরশাদ করেছেন আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যারা অকৃতজ্ঞ হয়ে আল্লাহর নিয়ামতকে পরিবর্তন করে দিয়েছে।(পারা ১৩ রুকু ১৭) বোখারী শরীফ ও অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থ সমূহে মুফাসসিরকুল শিরোমনি হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস ও হযরত ওমর (রা.) হতে বর্ণিত আছে, একমাত্র কাফিররাই আল্লাহর নিয়ামতের অকৃতজ্ঞ হতে পারে। আয়াতে বর্ণিত “নিয়ামাতুল্লাহ” দ্বারা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামাকে বুঝানো হয়েছে।( বুখারী শরীফ ৩য় অধ্যায় ৬পৃষ্ঠা) আরব বিশ্বে মীলাদুন্নবী উদযাপন: মিলাদুন্নবী ইসলামী ঐক্যের প্রতীক, ইসলামী ঐতিহ্যের স্মারক। ইসলামী সংস্কৃতির এক গৌরবময় ও বরকতময় আমল, হাজার বৎসর ধরে পৃথিবীর দেশে দেশে এ ধারা আবহমান কাল থেকে প্রচলিত। মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র সমাদৃত। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম ইবনে জওযী (৫১০-৫৭৯হি.) বর্ণনা করেন, সর্বদা মক্কা মদীনায়, মিশর, ইয়েমেন, সিরিয়া, এমনকি পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত সমগ্র আরববাসীরা মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র মাহফিল আয়োজন করে আসছেন, রবিউল আউয়াল শরীফের নবচন্দ্র উদিত হলে তারা খুশী, আনন্দে উদ্বেলিত হয় এবং বিশেষ গুরুত্বসহকারে মিলাদ পাঠ ও শ্রবণের ব্যবস্থা করে থাকেন এতে তাঁরা অসংখ্য সওয়াব ও মহা সাফল্য অর্জন করে থাকেন। (আল্লামা ইমাম ইবনে জওযী ৫৭৯হি. কর্তৃক বিরচিত মীলাদুন্নবী) সর্বদা মুসলমানরা রবিউল আউয়াল মাসে ঈদে মিলাদুন্নবী মাহফিল উদযাপন করে আসছে, তারা দান সাদকা, কল্যাণধর্মী কার্যক্রম ও খুশী উদযাপন করে থাকে। তারা ঐ দিন উত্তম পূণ্যময় কাজের চেষ্ঠা করে এবং নবীজির শানে মিলাদ পাঠের ব্যবস্থা করে থাকে। (মাছাবাতা বিস সুন্নাহ, পৃ: ৬০) হে আল্লাহ! ঈদে মিলাদুন্নবীর এ মহান দিবসে আমাদেরকে আপনার ভালবাসা ও আপনার প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন।
|