বাংলার জন্য ক্লিক করুন
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * হাত বদলে পাচার হচ্ছে চাঁদপুরের ইলিশ   * অন্তর্বর্তী সরকার মব জাস্টিস সমর্থন করে না: উপদেষ্টা নাহিদ   * ইসরায়েলে ১৪০ রকেট ছোড়ার দাবি হিজবুল্লাহর   * ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধের ৪৮ দিন পর মারা গেলেন নয়ন   * জাতিসংঘে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের কথা তুলে ধরবেন ড. ইউনূস   * তোফাজ্জল হত্যা: ঢাবির ৬ শিক্ষার্থীর দায় স্বীকার   * লেবানন থেকে ইসরায়েলে ১৭ হামলা   * তোফাজ্জলকে হত্যার আগে চাওয়া হয় ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা   * ১ অক্টোবর থেকে হর্ন-প্লাস্টিকমুক্ত বিমানবন্দর   * সরকারি ছয় ব্যাংকের এমডি অপসারণ  

   সারা দেশ
  আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর "মাস্টারমাইন্ড" ওসি "সায়েদ" পলাতক, যোগ দেননি নতুন কর্মস্থলে
 

কাজী সাইফ উদ্দিন : রাজধানী ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় গণহত্যার পর মরদেহ গুনে গুনে ভ্যানে তোলা ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় এক এক করে বের হয়ে আসছে আড়ালে থাকা কুশীলবদের নাম। অনুসন্ধানে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলা এই ঘটনার "মাস্টারমাইন্ড" হিসেবে উঠে এসেছে আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদের নাম।

নিজের দায় এড়িয়ে ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে নানা কৌশল ও ছলনার আশ্রয় নিলেও শেষ পর্যন্ত ফেঁসেই যাচ্ছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ওসি এ এফ এম সায়েদ। গ্রেফতার আতংকে ইতোমধ্যে গা ঢাকা দিয়েছেন ওসি এ এফ এম সায়েদ ।
খোদ পুলিশের একটি সূত্র বলছে, নিজেকে আড়াল করতে নানা কৌশল খাটিয়েও শেষ রক্ষা না হওয়ায় যে কোন মুহূর্তে অবৈধ পথে দেশত্যাগের পরিকল্পনা করছেন এ এফ এম সায়েদ। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ইতিমধ্যেই ইমিগ্রেশনসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তার বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।সূত্রমতে, ২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী এসআই (নিরস্ত্র) পদে পুলিশে যোগ দেয়া এ এফ এম সায়েদ খুলনা মহানগরের ৪ নং মিয়া পাড়া মহল্লার মোহাম্মদ ইসমাইলের পুত্র। তার পুলিশ পরিচিতি নং -বিপি-৮০০৬১৪৫৩৩৬।
৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেদিন বিকেলে লাশের স্তূপে আরো লাশ তোলা এবং পরে পোড়ানোর একাধিক ভিডিও প্রকাশ্যে এলে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, বীভৎস ও নারকীয় ওই ঘটনার নির্দেশদাতা হিসেবে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ডিউটি করেছেন সিভিল ড্রেসে। পড়নে ছিলো নীল রঙের পোলো শার্ট, কালো রঙের ট্রাউজার। এক হাতে ব্যান্ডেজ। ট্রাউজারের পকেটে ছিলো ওয়্যারলেস সেট। প্রচন্ড টেনশনে খেয়েছেন একের পর এক সিগারেট।
সেদিন ঘটনাস্থলে থাকা পরিদর্শক, উপ-পরিদর্শক এবং কনষ্টেবল পদের প্রত্যক্ষদর্শী চার পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, লাশ ভ্যানে তোলার পূর্বপর ঘটনা জুড়ে যা কিছু ঘটেছে সকল কিছুর নেতৃত্বে ছিলেন আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ।

তার নির্দেশেই লাশ পড়ানোর জন্য পেট্রোল জোগাড় করেছিলেন আশুলিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরাফাত উদ্দিন ও আশুলিয়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই ) মনির। প্লাস্টিকের বোতলে করে আনা হয়েছিলো পেট্রোল। তিন দফায় গাড়িটিতে ছিটানো হয় পেট্রোল।

পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশ্নের জবাব এতদিন ওসি এ এফ এম সায়েদ বলে আসছিলেন, "ঘটনার সময় তিনি ছিলেন থানার অভ্যন্তরে। পরণে ছিলো পুলিশের পোশাক। লাশের স্তূপ এমনকি লাশ পোড়ানো ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না।"
অথচ সাক্ষ্য প্রমাণ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণীতে উঠে আসছে উল্টো চিত্র। প্রত্যক্ষদর্শী খোদ পুলিশ সদস্যরা মুখ খোলায় এখন পুরো ঘটনাটা মোড় নিচ্ছে অন্যদিকে। পরিচয় গোপন রাখার স্বার্থে উপ-পরিদর্শক পদের একজন কর্মকর্তা বলেন, "গুলি করে হত্যার পর মরদেহ ভ্যানে তোলা এমনকি আগুন লাগানোর ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন ওসি এ এফ এম সায়েদ স্যার। আমি নিজের চোখে‌ দেখেছি, আশুলিয়া থানার কনষ্টেবল মুকুল চোকদার যখন ভ্যানের স্তূপে লাশ তুলছিলেন তখন সামনেই অস্থিরভাবে তিনি পায়চারি করছিলেন। টেনশনে ধরাচ্ছিলেন একের পর এক সিগারেট।
ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের
লাশের স্তূপের ভিডিওটা একটু খেয়াল করে দেখেন। ১ মিনিটের মাথায় যিনি হেঁটে যাচ্ছেন, নীল গেঞ্জি পরিহিত ব্যক্তিটিই তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ স্যার। তার সঙ্গে ছিলেন আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদুর রহমান ও পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন নির্মল কুমার দাস। নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপ-পরিদর্শক পদের আরেকজন কর্মকর্তা জানান, থানার পূর্ব পাশে যখন গাড়ি`সহ লাশ পুড়িয়ে দেয়া হয়,সেখানে আমি নিজের চোখে আশুলিয়া থানার ওসি এ এফ এম সায়েদ স্যার ও আশুলিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরাফাত উদ্দিনকেও দেখেছি। তার 🌹প্যান্টের পকেটে থাকা বোতলে পেট্রোল ছিলো"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক জানান, "কয়েকদিনের বিশ্রামহীন টানা ডিউটির কারণে ডিবির গোটা টিম ছিল ক্লান্ত। ওসি এ এফ এম সায়েদ স্যার অতিরিক্ত ফোর্স চেয়ে রিকুইজিশন পাঠান ইউনিট কমান্ডার ঢাকা জেলার তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্ ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) আব্দুল্লাহিল কাফী স্যারের কাছে। পুলিশ সুপার হিসেবে সুপার নিউমারারি পদোন্নতি প্রাপ্ত আব্দুল্লাহিল কাফী স্যার আমাদের জোর করে আশুলিয়ায় ডিউটি করতে পাঠান। "ডিউটি করার মত শারীরিক ও মানসিক শক্তি নাই" - একথা বলতেই তিনি আমাদের একজন অফিসারকে ধমক দেন। বাধ্য হয়ে আমরা আশুলিয়ার দিকে রওনা দেই। সড়ক পথ ছাত্র জনতার দখলে থাকায় সাভার থেকে ধামরাই ঘুরে পেছন দিক দিয়ে যেতে হয় আশুলিয়া থানায়। গত ৪ আগস্ট দিবাগত রাত ২ টায় পৌঁছে আমরা ওসি আশুলিয়ার কাছে রিপোর্ট করি। পরদিন ৫ আগস্ট সকাল আনুমানিক সাড়ে দশটার দিকে এ এফ এম সায়েদ স্যার হ্যান্ড মাইকে পুলিশ সদস্যদের থানার সামনে সমবেত হবার নির্দেশ দেন।
থানা ও ফাঁড়ির পুলিশ ছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন গোয়েন্দা পুলিশ,টুরিস্ট পুলিশ ও রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের (আরআরএফ) সদস্যরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র -জনতার আন্দোলনের ডাকা মার্চ টু ঢাকা` কর্মসূচি মোকাবেলায় এ এফ এম সায়েদ স্যারের নির্দেশে আমরা অবস্থান করি নবীনগর চন্দ্র মহাসড়কে। দুপুর সরকার পতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিপুল সংখ্যক মানুষ থানার দিকে অগ্রসর হন। থানার পূর্বদিকে তখন নেতৃত্বে ছিলেন আশুলিয়া থানার তৎকালীন ওসি এ এফ এম সায়েদ। সঙ্গে ছিলেন পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদুর রহমান ও পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন নির্মল কুমার দাস।
ক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার উদ্দেশ্যে এক পর্যায়ে ওসি এ এফ এম সায়েদ দু`হাত উপরে তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে বলেন,"আপনারা জিতেছেন,আমরা হেরে গেছি। এখন সবাই বাসায় চলে যান"। তবে থানামুখী ছাত্র জনতার ঢল ক্রমাগত বাড়তে থাকলে ছাত্র - জনতা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। সে সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি করলে বেশ কয়েকজন মারা যান। পরে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকা লাশগুলো একটি ভ্যানে তুলে স্তূপ করা হয় এবং পুলিশের গাড়িতে স্থানান্তর করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
সূত্রমতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সরকারের নির্দেশে থানায় যোগ দেন ওসি এ এফ এম সায়েদ। এর মধ্যে গত ৩০ আগস্ট ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। দেখা যায়, মাথায় পুলিশের হেলমেট। সাদা পোশাকের ওপর পুলিশের ভেস্ট পরা এক ব্যক্তি আরেকজনের সহায়তায় চ্যাংদোলা করে নিথর এক যুবকের দুই হাত ধরে ভ্যানের ওপর তুলছেন। ভ্যানের ওপর আরও কয়েকটি নিথর দেহ স্তূপ করে রাখা। দেহগুলো থেকে ঝরে পড়া রক্তে ভিজে গেছে সড়কের কিছু অংশ। বিছানার চাদরের মতো একটি চাদর দিয়ে তাঁদের ঢেকে রাখা হয়েছে। পাশেই পুলিশের হেলমেট, ভেস্ট পরা আরও কয়েকজন"। ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভয়ংকর ওই ভিডিও সারা দেশে আলোচনার ঝড় তুললেও ঘটনাটি ঠিক কোথাকার সেটি সম্পর্কে তখন পর্যন্ত পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন অনেকেই।
দেয়ালে সাঁটানো আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদপ্রার্থী আবুল হোসেনের ছবি সংবলিত ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানানো পোস্টার,দেয়ালের ভেতরের অংশের আমগাছ ও পাশে হেলমেট হাতে হেঁটে যাওয়া ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেনকে সনাক্তের মাধ্যমে এএফপির ফ্যাক্ট-চেকিং এডিটর কদরুদ্দীন শিশির তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে ঘটনাটি ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার নিকটবর্তী এলাকায় বলে উল্লেখ করার পর নড়ে চড়ে বসে ঢাকা জেলা পুলিশ।
রোববার ১ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থানা থেকে এ এফ এম সায়েদকে সরিয়ে দেয়া হয়। বদলী করা হয় কক্সবাজারের উখিয়ায় ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন)। ওই দিনই পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ও সাজেদুর রহমানকে প্রধান করে গঠন করা হয় চার সদস্যের এ তদন্ত কমিটি‌।
সূত্রমতে, ওসি এ এফ এম সায়েদের প্রভাব প্রতিপত্তি আর হুমকির মুখে প্রথম দিকে অনেকেই মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছিলেন। অজানা আশঙ্কায় ছিলেন অনেকেই। তদন্ত কমিটি প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য গ্রহণসহ ওই ঘটনার নানা আলামত সংগ্রহ করছে। তবে সাক্ষ্য দিতে তদন্ত কমিটি এ এফ এম সায়েদকে বারংবার ডাকলেও তাতে তিনি সাড়া দেননি। এমনকি কক্সবাজারের উখিয়ায় ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নেও তিনি যোগ দেন‌ নি। এর মধ্যে সোমবার ২ সেপ্টেম্বর রাতে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টাকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা জেলার তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( বর্তমানে বরখাস্ত এবং ডিমান্ডে আছেন) আব্দুল্লাহ হিল কাফীকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)। অন্যদিকে আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় সম্পৃক্ত ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেনকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজধানীর আফতাবনগর থেকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। তবে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন ঘটনার মাস্টারমাইন্ড আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের দাপটে এ এফ এম সায়েদ ঢাকা জেলায় চাকরি করেছেন একটানা ১০ বছর ১০ মাস ৬ দিন। এ সময়টাতে তিনি ঘুরেফিরে আশুলিয়া থানার সেকেন্ড অফিসার, গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকা উত্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র মতে, এ এফ এম সায়েদ ২০০৬ সালের ৫ মার্চ যশোর জেলা পুলিশ লাইনে এসআই পদে যোগ দেন। ২০০৮ সালের ২৬ মার্চ রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স খুলনায় বদলির পর একই বছরের ৬ নভেম্বর যোগ দেন সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন্সে। পরের বছর ৪ অক্টোবর তাকে বদলী করা হয় বাগেরহাট পুলিশ লাইন্সে। প্রভাবশালীদের ছাত্রছায়ায় ২০০৯ সালের ৩১ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ক্রাইম বিভাগে বদলীর পর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। ঢাকা মহানগরের তেজগাঁও থানায় এসআই হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ২০১৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানায় এসআই হিসেবে যোগ দিয়ে দায়িত্ব পান সেকেন্ড অফিসারের। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবার পর তার ছাত্রছায় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন ওসি এ এফ এম সায়েদ।
পদোন্নতি পেয়ে পরিদর্শক পদে ওসি হিসাবে যোগদান প্রথমে ঢাকা জেলা (উত্তর)গোয়েন্দা পুলিশে। তারপর ঘুরেফিরেই আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় অপরাধ জগতের মাফিয়া 889থেকে শুরু করে ভূমিদস্যু, ঝুট সন্ত্রাসীদের সাথে হাত মিলিয়ে উপার্জন করেন কোটি কোটি টাকার অর্থ।
সূত্রমতে, নিজের নামে না করলেও স্ত্রী স্বজনদের নামেই খুলনায় জাহাজ, জমি, ফ্ল্যাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেনামে সম্পদ গড়েছেন পুলিশের এই ধূর্ত কর্মকর্তা সায়েদ। এক দশকের বেশি সময় ঢাকায় থাকার কারণে পরে প্রাইস পোস্টিং হিসেবে ২০২১ সালের ২২ মার্চ তাকে বদলি করা হয় নারায়ণগঞ্জের আকর্ষণীয় রূপগঞ্জ থানায়।
দ্বাদশ সংসদে ডামী নির্বাচনের প্রাক্কালে পুলিশের লোক দেখানো রদবদলে কেবলমাত্র জেলার এক থানা থেকে আরেক থানায় ওসিদের বদলি করা হলেও ব্যতিক্রম ছিলেন এএফএম সায়েদ।
২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে বদলি হয়ে যোগ দেন আশুলিয়া থানার ওসির দায়িত্বে।আশুলিয়া থানায় মাত্র ৮ মাস ২৩ দিন দায়িত্ব পালনের মধ্যে তার নেতৃত্বে ৫ আগষ্ট ছাত্র- জনতার অভ্যুত্থান ঘিরে আশুলিয়া থানার ঘটে লাশ পোড়ানোর রোমহর্ষক বীভৎস ঘটনা। সেদিন গণহত্যা আড়াল করতে স্কুল ছাত্র আস-সাবুর, আবদুল মান্নান, মিজানুর রহমান, তানজিল মাহমুদ সুজয়, সাজ্জাদ হোসেন সজল এবং বায়েজিদকে হত্যা করে আশুলিয়া থানার সামনেই পুলিশ ভ্যানে তাদের লাশ পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে আত্মগোপনে থাকা এএফএম সায়েদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এসব ঘটনায় তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। তাহলে কেন নতুন কর্মস্থানে যোগদান না করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন- এর কোন সদুত্তর দেন নি পলাতক ওসি এ এফ এম সায়েদ।

যোগাযোগ করা হলে তদন্ত কমিটির প্রধান পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সাজেদুর রহমান জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে সুক্ষভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শির স্বাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। তদন্তে বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন তদন্তের প্রয়োজনে এ এফ এম সায়েদের সঙ্গেও কথা বলবে তদন্ত কমিটি।
আইন ও সালিস কেন্দ্রের চেয়ারপারসন এবং সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, গুলি করার জন্য আইন আছে। প্রথমেই ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি লাগবে। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৯৬-১০৬ ধারায় আত্মরক্ষার অধিকার সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৯৯ ধারায় বলা হয়েছে আঘাত যতটুকু প্রতিকারও ঠিক ততটুকু করতে পারবে। প্রতিঘাত আঘাতের বেশি হতে পারবে না। পিআরবিতে আছে, হাঁটুর নিচে গুলি করতে হবে। মাথায়, মুখে, বুকে গুলি করার কোনো এখতিয়ার নেই। যেভাবে গুলি করা হয়েছে সেটি আইনানুগ হয়নি। আর আশুলিয়ার ঘটনা তো গণহত্যা। সেই হত্যাযজ্ঞের আলামত ধ্বংস করার জন্য লাশ পুড়িয়ে দেওয়া বীভৎস ঘটনা জঘন্য অপরাধ। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত।
এসব ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ছাড়াও আশুলিয়া থানায় পৃথক মামলায় তৎকালীন ওসি এ এফ এম সায়েদকে আসামি করা হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন এ এফ এম সায়েদ। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ জানান, মানবতাবিরোধী এমন অপরাধের সাথে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।



সংবাদটি পড়া হয়েছে মোট : 91        
   শেয়ার করুন
Share Button
   আপনার মতামত দিন
     সারা দেশ
যেভাবে অশান্ত হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম
.............................................................................................
অন্তর্বর্তী সরকার মব জাস্টিস সমর্থন করে না: উপদেষ্টা নাহিদ
.............................................................................................
দিনাজপুরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, স্যালাইনের সংকট
.............................................................................................
ট্রলারে এলো ১০২ মণ ইলিশ, ১৯ লাখ টাকায় বিক্রি
.............................................................................................
ফ্যাসিবাদীদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে: উপদেষ্টা নাহিদ
.............................................................................................
পাহাড়ে সন্ত্রাসী আস্তানা, অস্ত্র-ড্রোনসহ প্রযুক্তি সরঞ্জাম উদ্ধার
.............................................................................................
কাপাসিয়ায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী রিমির বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা
.............................................................................................
বনানী থেকে ২ কোটি টাকার বিদেশি মদ উদ্ধার
.............................................................................................
রাঙ্গামাটিতে ১৪৪ ধারা জারি
.............................................................................................
গাইবান্ধায় ঘাঘট লেক পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু
.............................................................................................
পুলিশের ২৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার রদবদল
.............................................................................................
সীমান্তে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ আটকে দিলো বিজিবি
.............................................................................................
খাগড়াছড়িতে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, নিহত ৩
.............................................................................................
সারা দেশে ৯৭ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
.............................................................................................
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী গ্রেফতার
.............................................................................................
ভারুয়াখালী-খুরুশকূল সংযোগ সেতু নির্মাণে ধীরগতি, প্রতিকার চেয়ে এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান
.............................................................................................
কক্সবাজারে ৭ দিন ব্যাপী বৃক্ষরোপন অভিযান ও বৃক্ষমেলার শুভ উদ্বোধন
.............................................................................................
যৌথ অভিযানে এখন পর্যন্ত ১৮৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৮৪
.............................................................................................
হত্যা মামলায় সাবেক এমপি মমিন মন্ডলের পিএস গ্রেপ্তার
.............................................................................................
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৬ শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার
.............................................................................................
Digital Truck Scale | Platform Scale | Weighing Bridge Scale
Digital Load Cell
Digital Indicator
Digital Score Board
Junction Box | Chequer Plate | Girder
Digital Scale | Digital Floor Scale
Dynamic Solution IT
POS | Super Shop | Dealer Ship | Show Room Software | Trading Software | Inventory Management Software
Accounts,HR & Payroll Software
Hospital | Clinic Management Software

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : মো: তাজুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়: ২১৯ ফকিরের ফুল (১ম লেন, ৩য় তলা), মতিঝিল, ঢাকা- ১০০০ থেকে প্রকাশিত । ফোন: ০২-৭১৯৩৮৭৮ মোবাইল: ০১৮৩৪৮৯৮৫০৪, ০১৭২০০৯০৫১৪
Web: www.dailyasiabani.com ই-মেইল: [email protected]
   All Right Reserved By www.dailyasiabani.com Dynamic Scale BD