আব্দুল খালেক খোন্দকার : লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্ত ও আত্নত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এদেশে সকল জনগনের সমান অধিকার রয়েছে। গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করেছেন। উদ্দেশ্য জনগণের দেশ জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। আমরা এবিষয়টিকে সাধুবাদ জানাই।
তবে এব্যাপারে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও এশিয়া বাণী পত্রিকার প্রধান উপদেষ্টা জনাব তাজুল ইসলাম অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের সংস্কার কর্মসূচির মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা অন্ত্র্ভূক্তি কররার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর প্রস্তাবনাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতএব সেগুলো এখানে তুলে ধরা হলোঃ
জনাব তাজুল ইসলাম বলেন, “অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের সংস্কার কর্মসূচির মধ্যে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে ফিরিয়ে আনতে হবে। তবে সংস্কার পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এ তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কার্যকর করবেন। সংবিধানে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এমনভাবে ফিরিয়ে আনতে হবে যেন পরবর্তী কোন সরকার এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে না পারে, সে বিষয়টি সংবিধানে লিপিবদ্ধ করতে হবে। জনাব তাজুল আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সদস্য সংখ্যা হবে ১৫ জন। এই ১৫ জনের মধ্যে চলমান সরকার থেকে থাকবেন ৫ জন সদস্য। ২য় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল থেকে থাকবেন ৩ জন এবং ৩য় সংখ্যা গরিষ্ঠ দল থেকে থাকবেন ২ জন সদস্য। এই নিয়ে ১০ জন। এছাড়া আইনজীবী, ব্যাবসায়ী, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী বা বিভিন্ন পেশাজীবীদের মধ্য থেকে আরও ৫ জন সদস্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারে থাকবেন। এ নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মোট সদস্য সংখা হবে ১৫ জন এবং তাদের মেয়াদকাল হবে ১৫০ দিন বা ৫ মাস। অর্থাৎ এই ১৫০ দিনের মধ্যে তাদেরকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে নূতন সরকারের হাতে দায়িত্ব অর্পণ করে দিতে হবে। এই ৫ মাসের মধ্যে প্রথম ২ মাস সেনাবাহীনি সন্মুখে থেকে সন্ত্রাস ও দূর্ণীতি দমন করবে এবং পরবর্তী ৩ মাস তত্বাবধায়ক সরকার সুষ্ঠ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরী করবেন। এছাড়াও সরকারের মেয়াদ পূর্তির ৫ মাসের কম সময়ের মধ্যে যদি কোন সংসদ সদস্যের মৃত্যু বা অন্য কোন কারনে সংসদের পদ শুন্য হয় তবে ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য ৫ মাসের কম সময়ের মধ্যে কোন উপ নির্বাচন দেয়া চলবে না। এ বিষয়টিও সংবিধানে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, আমাদের দেশে ১% ভোট প্রদান হলেই নির্বাচন বৈধ হবে বলে যে নিয়মটি চালু আছে তা পরিবর্তন করে ৫০% এর অধিক ভোট গণনা হলে তবেই নির্বাচনটি বৈধ হবে। ৫০% নীচে ভোট প্রদান হলে নির্বাচন বৈধ হবে না এবং এমর্মে সংবিধানে সুস্পষ্টভাব লিখিত থাকতে হবে। আমাদের দেশে লক্ষ করা যায় একপক্ষ অপর পক্ষের লোকদের ভোট দানে বিরত রাখতে চেষ্টা করে। কিন্তু কমপক্ষে ৫০% ভোট প্রদান না হলে নির্বাচন বৈধ হবে না নিমিত্তে আইন হলে, রাজনৈতিক দলগুলি নিজ তাগাদায় অধিক সংখ্যক ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত নিশ্চিত করবেন এবং সন্তোষজনক ভোটার উপস্তিতি ভোট প্রদানের মাধ্যমে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে।
ইতোমধ্যে অনেকেই প্রস্তাব করেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি একজন দুইবারের বেশী হতে পারবেনা উল্লেখকরে তাজুল ইসলাম বলেন, এটি একটি উত্তম প্রস্তাব এবং আমরাও এবিষয়ে পূর্ণ সমর্থন করি। জনাব তাজুল বলেন, নোবেল বিজয়ী বিশ্ব সমাদৃত ব্যক্তিত্ব প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস একজন বিশ্বস্ত ও উপযুক্ত ব্যক্তি। তিনি তাঁর মেধা ও কর্ম তৎপরতার মাধ্যমে সংস্কার কাজ দ্রুতই সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন এবং একটি সুন্দর নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বলে দেশের জনগণ দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করে।“
স্বাধীনতা লাভের পর অর্ধশত বৎসর পার হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত দেশে কোন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসে নাই। দেশে নির্বাচনের নামে প্রহসন ও ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার প্রচেষ্টা এদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা, দূর্ণীতি ও হানাহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যা দূর করার জন্যে দেশে নির্বাচন সংক্রান্ত স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব দেশের ধ্বংসপ্রাপ্ত বিভিন্ন প্রতিষ্টানে সংস্কার সম্পন্ন করে সম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা এবং এর মাধ্যমে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকারের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার প্রদান করা।
এমন এক শাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে যেখানে ‘দেশ জনগণের জন্য হবে কিন্তু জনগণ দেশের জন্য হবে না।‘ বর্তমানে একটি ধারনা তুলে ধরা হয় যে, সবার আগে দেশ। কিন্তু এটা ভ্রান্ত ধারনা। সবার আগে দেশের মানুষ এমন ধারনাই যুক্তি সংগত। কারন মানুষই যদি না বাঁচে দেশ দিয়ে লাভ কি? কাজেই যে সরকারই দেশে পরিচালনার দায়ীত্বে আসুন না কেন দেশের মানুষের স্বার্থ তাকে আগে দেখতে হবে।
দেশের মানুষের করের টাকায় দেশ চলে। একজন ভিক্ষুকের টাকাও দেশ পরিচালনার কাজে ব্যবহ্রত হয়। প্রশ্ন উঠতে পারে কীভাব? উত্তর হলো, একজন ভিক্ষুক ভিক্ষার জন্ একটি বাটি ক্রয় করেন কিন্তু প্রস্তুত কারক ঐভাবেই পণ্যটির মূল্য নির্ধারণ করে রেখেছেন যার মধ্যে সরকারের করের টাকা ঐ ভিক্ষুককেই পরিশোধ করতে হয়। এভাবেই জনগনের করের টাকায় দেশ চলে।
যাহোক বিশ্ব নন্দিত ব্যক্তিত্ব ডঃ মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্র যন্ত্রের সঠিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মালিানা দেশের মানুষের হাতে ফিরে আসুক এটাই সবার কামনা। আর যেন কেউ তার বাপের সম্পত্তি বলে দেশে লুটপাট চালাতে না পারে এমনটাই দেশের মানুষের আকাঙ্খা।।
|