বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় বিক্ষোভের মুখে শনিবার (২ নভেম্বর) বন্ধ হয়ে যায় দেশনাটক দলের ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী। এদিন নাট্যদলটির প্রদর্শনী চলার সময়ে দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নাটক বন্ধের নির্দেশ দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ।
এদিকে নাটক বন্ধ হওয়া নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এবার বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস উইং থেকে একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৪ নভেম্বর) প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত শনিবার জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ‘দেশ নাটক’ প্রযোজিত নাটক ‘নিত্যপুরাণ’ মঞ্চায়নের সময় এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভকারীদের নির্বৃত্ত করার লক্ষ্যে ফ্যাসিস্ট সরকার যেভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিত, সে প্রক্রিয়ায় না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য শিল্পকলা একাডেমি একাধিকবার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা ক্ষান্ত হয়নি। বরং তাদের সংখ্যা বেড়ে গেলে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবার উপক্রম হয়। তখন অভিনয়শিল্পী ও দর্শকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ‘দেশ’ নাটকের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে দর্শকের কাছে দুঃখপ্রকাশ করে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, কিন্তু গত ৩ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে দেশের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় ‘শিল্পকলায় নাটকের প্রদর্শনী বন্ধের ঘটনা সমর্থন করে না সরকার’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের মূল বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ফলে এটি জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। প্রকৃতপক্ষে তিনি বিক্ষুব্ধকারীদের নাটক বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাকে অর্থাৎ শিল্পচর্চার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সরকার সমর্থন করে না মর্মে বুঝিয়েছেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
তাছাড়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সর্বাবস্থায় জনগণের, শিল্পচর্চার ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশ্বাস করে। এ জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি উক্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে কাজ করছে।
প্রেস উইং থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি চায় না শিল্পকলার কণ্ঠ কেউ রোধ করুক। কেননা, বাংলাদেশের হাজার বছরের নাটকের ইতিহাস আছে। নাটকের মাধ্যমেই সমাজের ত্রুটি বিচ্যুতি ও বিকল্প ধারণা তুলে ধরা সম্ভব। তাই যারা নাটক করতে চায় তাদের নাটক করতে দিতে হবে। নাটক দেখেই দর্শক বিবেচনা করবে তাদের নাটক তারা গ্রহণ করবে কি না।
বাংলাদেশে সকল দলের নাটক করার বিষয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সার্বিক সহযোগিতা রয়েছে। শিল্পকলা একাডেমি মনে করে, জুলাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তির কারণে নাটকের দল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে প্রচেষ্টা সাংস্কৃতিক সংগঠন বা নাটকের দলের থাকা উচিত। কোনো দলের ভেতরে বিতর্কিত কেউ যদি থাকে, যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অস্বীকার করে এবং স্বৈরাচারীর দোসর হয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের কার্যক্রমকে এখনও সমর্থন করে তাহলে দলের পক্ষ থেকেই তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এসব গণহত্যার দোসর বা সমর্থনকারীদের তিরস্কার করে, নিন্দা জানায়। সুস্থ, উৎসবমুখর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনবান্ধব শিল্পচর্চায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পাশে থেকে দেশের শিল্প সংস্কৃতিকে সমুন্নত রাখতে দেশের সাংবাদিক, সংস্কৃতিসেবীসহ দেশের জনসাধারণ এগিয়ে আসবে এটাই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রত্যাশা।
|