পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ‘চূড়ান্ত’ সমাবেশের ডাকে উত্তপ্ত দেশটির রাজনীতি। বাঁচা-মরার লড়াইয়ে রাত পোহালেই ইসলামাবাদের রাজপথে নামার কথা পিটিআইয়ের। সরকারের তরফ থেকে সমাবেশ ঠেকাতে চলছে বিভিন্ন স্তরের দরকষাকষি। ইসলামাবাদ হাইকোর্টও এই সমাবেশ করতে নিষেধ করেছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) পিটিআইয়ের সমাবেশ স্থগিত নিয়ে সরকার ও সাবেক ক্ষমতাসীন দলের তরফ থেকে পাল্টাপাল্টি দাবির কথা শোনা যাচ্ছে। এর ফলে আগামীকাল পাকিস্তানে সত্যি কী ঘটতে যাচ্ছে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি।
দ্য ডনের খবর অনুযায়ী, শনিবার পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গহর আলী খান বলেছেন, তাদের দলের উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত নেবে পিটিআই তাদের পরিকল্পিত বিক্ষোভ আগামীকাল করবে কিনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি এই বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, এমন খবর গণমাধ্যমে আসার পরই এই মন্তব্য করেছেন গহর আলী খান। রেডিও পাকিস্তানের তথ্য মতে, ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বৃহস্পতিবারের রায়ের আলোকে পিটিআই প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার পিটিআইয়ের পরিকল্পিত বিক্ষোভকে অবৈধ ঘোষণা করেন ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। গত সপ্তাহে পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান ২৪ নভেম্বর চূড়ান্ত বিক্ষোভের ডাক দেন। এবারের আন্দোলনে দলটি চারটি দাবি জানিয়েছে। এগুলো হলো দেশের ২৬তম সংবিধান সংশোধনী বাতিল, গণতন্ত্র ও সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের ম্যান্ডেট পুনরুদ্ধার এবং নির্দোষ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা শেষে গহর জানান, তিনি দলের উপদেষ্টার সঙ্গে বিক্ষোভের বিষয়ে পরামর্শ করে পিটিআইয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে নাকভিকে জানাবেন। এর আগে গহরকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের (আইএইচসি) রায় সম্পর্কে অবহিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা হাইকোর্টের রায় মানতে বাধ্য। তাই কোনো মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি বা সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে না। তবে এখনো পিটিআই নেতারা হাইকোর্টের রায় এবং ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি ও পাঞ্জাবে জনসমাবেশের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শক্তি প্রদর্শনের এই পরিকল্পনার ব্যাপারে অনড় রয়েছেন। আদালতের রায়ের কয়েক ঘণ্টা পর ইমরান খানের তরফ থেকে বার্তা দিয়ে স্ত্রী বুশরা বিবি বলেন, ইমরান খানকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হলে এবং তিনি জনগণকে নির্দেশনা দিলে তবেই বিক্ষোভের তারিখ পরিবর্তন করা যেতে পারে।
একই সঙ্গে জনগণকে বিক্ষোভের তারিখ পরিবর্তনের খবর বিশ্বাস না করতে এবং রোববার ঘর থেকে বের হয়ে বিক্ষোভে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। শক্ত অবস্থানে সরকার শনিবার সারাদিন পিটিআইয়ের আগামীকালের সমাবেশ নিয়ে সতর্কবার্তা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রীরা। একের পর এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রীরা পিটিআইকে বিক্ষোভের পরিকল্পনা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী যেকারও বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, গ্রেপ্তার ও আইনি পরিণতির হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, পিটিআইয়ের সঙ্গে কোনো স্তরের যোগাযোগ নেই। গহরকে শুধু আইএইচসির আদেশ পালনের জন্য বলা হয়েছে। পাঞ্জাবের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আজমা বোখারী বলেন, আইএইচসি রাজনৈতিক দলের বিক্ষোভ নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে। যদি তারা রাজনীতি করতে জানত, তাহলে এটি কোনো সমস্যা হতো না। জঙ্গি হামলার শঙ্কা এদিকে পিটিআইয়ের সমাবেশের আগে জঙ্গি হামলা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশটির ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম অথরিটি (ন্যাক্টা) কর্তৃপক্ষ। এদিন দেশের বড় বড় শহরে নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। পুরো শহর নাকাবন্দি পিটিআইয়ের বিক্ষোভের আগে পাঞ্জাবজুড়ে সোমবার পর্যন্ত, রাওয়ালপিন্ডিতে মঙ্গলবার পর্যন্ত এবং ইসলামাবাদে দুই মাসের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইসলামাবাদ পুলিশ পিটিআইয়ের বিক্ষোভ মোকাবিলায় একটি বিস্তৃত নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর মধ্যে রাস্তা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো কন্টেইনার দিয়ে বন্ধ করা, নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন, স্ট্রাইক এবং গ্রেপ্তারি দল গঠন এবং ডিজিটাল নজরদারি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পাকিস্তানি পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, নিরাপত্তা পরিকল্পনার আওতায় ৬ হাজার ৩২৫ জন রাজধানী পুলিশের সদস্য এবং অন্যান্য বাহিনীর ২১ হাজার ৫০০ কর্মী মোতায়েন করা হবে। প্রায় ১ হাজার ২০০ কন্টেইনার ব্যবহার করে রাজধানীর প্রবেশপথ এবং রাস্তা বন্ধ করা হবে। ইসলামাবাদের ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ স্থান সিল করে দেয়া হবে। ইতিমধ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ বন্ধ করা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া রাওয়ালপিন্ডি প্রশাসনও ৬ হাজারের বেশি দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করেছে। তাছাড়া শহরের ৭০টি পয়েন্টে কন্টেইনার এবং প্রতিবন্ধকতা স্থাপন করে সিলগালা করা হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হতে পারে বলেও গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে।
|