রাশিয়ার কুরস্ক এলাকায় আবারও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি মিসাইল ছুড়েছে ইউক্রেন। এতে ন্যাটোর সমর্থনও রয়েছে। এখন আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী দু-এক দিনের মধ্যে রাশিয়া তার নতুন হাইপারসনিক ওরেশনিক মিসাইল দিয়ে পাল্টা আক্রমণ করতে পারে। এবার ন্যাটোর ঘাঁটিতেও হামলা হতে পারে। রাশিয়ার সেনাবাহিনী হামলার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত করেছে। শুধু প্রেসিডেন্ট পুতিনের সবুজ সংকেতের অপেক্ষা।
এর আগে ইউক্রেনের নিপ্রো শহরে গত বৃহস্পতিবার রাশিয়া একটি বিমান হামলা চালায়, যে সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সচরাচর যেমন বিমান হামলা হয়, ওই হামলা সেরকম ছিল না। হামলার পর বিস্ফোরণ ঘটে, যা স্থায়ী হয়েছিল তিন ঘণ্টা। ওই হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন জাতির উদ্দেশে এক টিভি ভাষণে ক্ষেপণাস্ত্রটি কী ধরনের ছিল তা স্পষ্ট করে জানান। তিনি বলেন, রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী ইউক্রেইনে নতুন প্রচলিত মাঝারি-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যার কোডনাম ‘ওরেশনিক’। রাশিয়ান ভাষায় ওরেশনিক শব্দটির অর্থ হচ্ছে ‘হ্যাজেল ট্রি’ (বড় ঝোপ আকারের গাছ)। পুতিন বলেছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের গতির চেয়ে ১০ গুণ বেশি গতিতে ছুটে গেছে। এমন গতির কারণে রাডারের পক্ষে এই ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করার কোনো উপায় বর্তমানে নেই। এখন জেনে নেওয়া যাক এই ক্ষেপণাস্ত্রের আওতার মধ্যে কোন কোন ন্যাটো ঘাঁটি রয়েছে পোল্যান্ড : এই ক্ষেপণাস্ত্রটি এখানে লাস্ক এয়ার বেস আক্রমণ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ফোর্স এই জায়গায় উপস্থিত। লাটভিয়া : সেলোনিয়া সামরিক প্রশিক্ষণ এলাকা, এখানে ন্যাটোর বৃহত্তম প্রশিক্ষণ শিবির রয়েছে। লিথুয়ানিয়া : রুডনিঙ্কাই সামরিক ঘাঁটি। এটি জার্মানির একটি সম্ভাব্য স্থায়ী বিদেশি ঘাঁটি। যেখানে প্রায় ৫ হাজার জার্মান সেনা থাকে। এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। রোমানিয়া : দেবসেলু সামরিক ঘাঁটি, আমেরিকান এজিস অ্যাশোর মিসাইল এখানে রাখা হয়েছে। মিহাইল কোগালনিশিয়ানু সামরিক ঘাঁটি। বুলগেরিয়া : বেজমার এয়ার বেস, এখানে আমেরিকার দূরপাল্লার বিমানের বেস এবং স্টোরেজ সুবিধা রয়েছে। নভো সেলো রেঞ্জ যেখানে ন্যাটো সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কসোভো : ক্যাম্প বলকান এলাকায় আমেরিকার সবচেয়ে বড় ঘাঁটি বন্ডস্টিল। ফিনল্যান্ড : মিকেলি। ন্যাটোর মাল্টি কর্পস ল্যান্ড কম্পোনেন্ট হেডকোয়ার্টার এখানে নির্মিত হতে যাচ্ছে। এটি রাশিয়ান সীমান্ত থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে। সুইডেন : কার্লসক্রোনা নৌ ঘাঁটি। বাল্টিক সাগরে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ন্যাটো সেনারা এখানে উপস্থিত রয়েছে। জার্মানি : রামস্টেইন বিমান ঘাঁটি। এখানে আমেরিকা ও ন্যাটোর বিমান ঘাঁটি রয়েছে। এটি এই এলাকায় এবং মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান অপারেশনের সদর দপ্তর। বেলজিয়াম : ইউএস আর্মি গ্যারিসন বেনেলাক্স এবং ক্লেইন ব্রগেল এয়ার বেস (আমেরিকান পারমাণবিক অস্ত্র এখানে রাখা হয়েছে।) নেদারল্যান্ড : ভলকেল এয়ার বেস, যেখানে আমেরিকান পারমাণবিক অস্ত্র রাখা হয়। ইতালি : অ্যাভিয়ানো এয়ার বেস, যেখানে আমেরিকান পারমাণবিক অস্ত্র রাখা হয়। গ্রিস : এখানেও ন্যাটোর নৌবাহিনীকে সহায়তা করার পরিকাঠামো রয়েছে। স্পেন : রোটা নেভাল বেস, যেটি ছয়টি আমেরিকান ডেস্ট্রয়ারের স্থায়ী আবাস। পর্তুগাল : লাজেস এয়ার বেস, এখানে ন্যাটোর ট্রান্সআটলান্টিক লজিস্টিক্যাল হাব। ওরেশনিক মিসাইলের শক্তি এটি একটি হাইপারসনিক মিডিয়াম রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল (গজইগ)। যা সর্বোচ্চ ১২,৩০০ কিমি/ঘণ্টা গতিতে ৫৫০০ কিলোমিটার রেঞ্জ পর্যন্ত হামলা করতে পারে। এটিতে একসঙ্গে ছয় থেকে আটটি অস্ত্র বসানো যায়। অর্থাৎ এটি একসঙ্গে অনেকগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করতে পারে। রাশিয়ার আস্ট্রাখান থেকে এই মিসাইল ছোড়া হলে ইংল্যান্ডে পৌঁছতে ১৯ মিনিট, বেলজিয়ামে ১৪ মিনিট, জার্মানিতে পৌঁছতে ১১ মিনিট এবং পোল্যান্ডে পৌঁছতে মাত্র ৮ মিনিট সময় লাগবে। রাশিয়ান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ভিক্টর লিটোভকিন বলেছেন যে আমেরিকা এবং ন্যাটোর এই মিসাইল রোখার ক্ষমতা নেই।
|