ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যেতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে তার ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া কিছুদিন লন্ডনে বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে সময় কাটাবেন। সেখান থেকে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, লন্ডনের ভিসা ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র নেওয়া হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা এখনো পাওয়া যায়নি।
খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যাডামের যাওয়ার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তাই কবে যাচ্ছেন তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না।
বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর একজন নেতা বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) লন্ডন যাওয়ার আগে তার আমেরিকার ভিসা কনফার্ম করার চেষ্টা চলছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে পরিবারের সদস্য, ব্যক্তিগত চিকিৎসক, মেডিকেল বোর্ডের সদস্য, ব্যক্তিগত সহকারী, নার্স এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতাসহ ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তাদের সবার লন্ডনের ভিসা ইতোমধ্যে হয়ে গেছে।
বিএনপির আরেকটি সূত্র বলছে, আগামী ৩০ নভেম্বর লন্ডনে যাবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার আগে বা পরে খালেদা জিয়া লন্ডনে যেতে পারেন।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই যুক্তরাজ্যে যান খালেদা জিয়া। ওই বছরের ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন তিনি। সেই সময় খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যের ডা. হ্যাডলি ব্যারির চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট সংক্রান্ত মামলায় কারাগারে যান খালেদা জিয়া। এরপর ২০২০ সালে করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দেয়। তবে তিনি রাজনীতি ও দেশের বাইরে যেতে পারবেন না— এমন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। যার ফলে, কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন তিনি। এই সময়ে বেশ কয়েকবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন খালেদা জিয়া। চলতি বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে পরদিনই (৬ আগস্ট) বেগম জিয়ার মুক্তির আদেশ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
সম্প্রতি খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. জাহিদ হোসেন জানান, বেগম জিয়ার শারীরিক সুস্থতার ওপর নির্ভর করে অতি দ্রুত তাকে বিদেশে মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
অধ্যাপক জাহিদ উল্লেখ করেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে প্রথমে লং ডিসটেন্স স্পেশালাইজড এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর সেখান থেকে তাকে তৃতীয় একটি দেশে মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি মেডিক্যাল সেন্টারে নেওয়া হবে।
৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, হৃদরোগ, লিভার সিরোসিসসহ নানা রোগে ভুগছেন।
২০২১ সালের নভেম্বরে খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তাকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দেয় তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। তারপর থেকে তখনকার আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে অনুমতি চেয়ে একাধিকবার আবেদন করে তার পরিবার। কিন্তু প্রতিবারই আইনের দোহাই দিয়ে অনুমতি দেয়নি সরকার।
ওমরাহ করতে সৌদি যেতে পারেন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার পথে খালেদা জিয়াকে ওমরাহ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে সৌদি আরব সরকার। গতকাল খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আল দুহাইলান তার দেশের যুবরাজের পক্ষে এই আমন্ত্রণ জানান।
বিএনপির একটি সূত্র বলছে, চিকিৎসা শেষে ফেরার পথে ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে খালেদা জিয়ার।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা বর্তমানে অনেক ভালো। তিনি মানসিকভাবে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন।
|