রাজধানীতে ডেঙ্গু মশার সঙ্গে এবার কিউলেক্স মশার উপদ্রব। দিন নেই, রাত নেই, ঘরে কিংবা বাইরে, বাসা কিংবা অফিস সব জায়গাতেই মশার উপদ্রব। শুধু রাত নয়, দিনেও কয়েল জ্বালাতে হচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। ওষুধ বা স্প্রে কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না মশা। প্রতি বছর মশার পেছনে ১৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তারপরও মশার কামড় থেকে নিস্তার পাচ্ছেন না দুই মহানগরের বাসিন্দারা। মশার যন্ত্রণায় এখন অতিষ্ঠ জনজীবন।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ কাউন্সিলর আত্মগোপনে চলে যান। এরপর অন্তর্র্বতী সরকার গঠনের পর দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করা হয়। নিয়োগ দেওয়া হয় প্রশাসক। এর কিছুদিন পর কাউন্সিলরদের অপসারণ করে সরকার। দায়িত্ব দেওয়া হয় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের। কর্মকর্তাদের নিজস্ব কাজের বাইরে অতিরিক্ত হিসেবে কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে কাজের চাপে নাগরিক সেবা অনেকটাই ভেঙে পড়ে। অনেকটাই নিয়ম রক্ষার কাজ করছেন মশক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মাঠপর্যায়ে মশককর্মীদের কাজ তদারকি না থাকায় বেড়েছে ডেঙ্গু ও কিউলেক্স মশার উপদ্রব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই সিটি করপোরেশনের কয়েকজন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আমাদের নিয়মিত দাপ্তরিক কাজের চাপ অনেক বেশি। পাশাপাশি কাউন্সিলরদের কাজও করতে হয়। আগে মশার ওষুধের চাহিদা দিতেন কাউন্সিলররা। সে ওষুধ থাকত তাদের অফিসে। সেখান থেকে মশককর্মীরা প্রতিদিন নিয়ে সকালে লার্ভিসাইডিং ও সন্ধ্যায় অ্যাডাল্টিসাইডিং করতেন। এখন কাউন্সিলররা না থাকায় ওষুধ নিতে হচ্ছে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে। কিন্তু কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা এদিকে যথেষ্ট নজর দিতে পারছেন না। ফলে রাজধানীর মশক নিধন কার্যক্রমে চলছে হযবরল অবস্থা।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন প্রতি বছর ১৫০ কোটি টাকার বেশি মশার পেছনে খরচ করে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বাজেট ধরা হয়েছে ১৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ১১০ কোটি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। গত বছর ১৬২ কোটি টাকা বাজেট করেছিল সংস্থা দুটি। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ১১৫ কোটি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৭ কোটি টাকা।
মশার উৎস নির্মূলে মশক নিধন কর্মীদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে রাজধানীবাসীর। উত্তর সিটি করপোরেশনে মাঠপর্যায়ে যেসব মশককর্মী কাজ করেন, এর মধ্যে প্রায় ৮৫ ভাগই আউটসোর্সিং করা। এমনকি কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে ওষুধ ছিটিয়ে টাকা নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মশককর্মী সিটি করপোরেশনের হলেও তারা মাস্টাররোলে কাজ করেন।
জুরাইন এলাকার বসবাসকারী কামরুল ইসলাম বলেন, মশার সঙ্গে আমাদের এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আগে সন্ধ্যায় উপদ্রব বেশি থাকলেও এখন দিন-রাত সমানতালে। মশা বাড়লেও ওষুধ ছিটাতে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের এলাকায় আগে থেকেই মশার উপদ্রব বেশি, বর্তমান সময়ে এসে এ উপদ্রব আরও বেড়েছে। বাসায় ছোট বাচ্চা থাকার কারণে দিনের বেলাতেও মশারি টানিয়ে রাখতে হয় আমাদের। মিরপুর সাড়ে ১১ এলাকার বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন বলেন, মশা নিধনে কর্মীদের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। তারা নিয়মিত আসছেন না। প্রতি ওয়ার্ডে মশার ওষুধ ¯েপ্রম্যান হিসেবে কাজ করেন ১৩ জন। এর মধ্যে অধিকাংশকে মাঠে দেখা যায় না।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। প্রতিদিনই মশককর্মীরা ওষুধ স্প্রে করছেন। সেটা আবার মশক সুপারভাইজাররা ফেসবুকে লাইভ করছেন। আবার সেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মনিটরিং করছেন কর্মকর্তারা। তবে মশককর্মী সবাইকে সঠিকভাবে তদারকি করা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ।
|