কামরুল হাসান মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জ শহরের একমাত্র শিশু পার্কটি বর্তমানে অযত্ন আর অবহেলায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। পার্কের অব্যবস্থাপনার কারণে খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে শিশুরা। পৌরবাসীর দাবি, দ্রুত পার্কটিকে সংস্কার করে শিশুদের জন্য এটি পুনরায় উন্মুক্ত করা হোক।
মানিকগঞ্জ শহরের কেন্দ্রস্থল শহীদ রফিক চত্বরের দক্ষিণ পাশে ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ পার্কটি অবস্থিত। ২০০৭ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রায় এক একর জমির ওপর মুক্তিযোদ্ধা পৌর শিশু পার্কটি নির্মিত হয়। এটি দীর্ঘদিন শিশুদের জন্য বিনোদন ও খেলাধুলার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ২০১২ সালে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ২০১৭ সালে নাগরিকদের দাবির প্রেক্ষিতে পার্কটি সংস্কারে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয় এবং ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি শৌচাগার নির্মিত হয়। সংস্কার কাজ শেষে ২০১৮ সালে এটি পুনরায় উদ্বোধন করা হয়। তবে, করোনার প্রভাবে দীর্ঘদিন পার্কটি বন্ধ থাকায় তা আবারও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
সরেজমিনে পার্কটি ঘুরে দেখা গেছে, বৈদ্যুতিক ট্রেন মরিচাপড়া অবস্থায় অকেজো হয়ে রয়েছে। দোলনা, স্লিপারসহ অন্যান্য রাইডগুলো মাটিতে পড়ে আছে। ডাইনোসর, বাঘ, ভালুকসহ বিভিন্ন ভাস্কর্যের রং উঠে তাদের সৌন্দর্য হারিয়েছে। পার্কে বসার জায়গাগুলো নোংরা এবং চারপাশ ঝোপঝাড়ে ভরা। দীর্ঘদিনের অবহেলায় এটি বখাটে ও মাদকসেবীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে।
পশ্চিম দাশড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমান জানান, শিশুদের বিনোদনের জন্য শহরের মধ্যে কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। ডিসি অফিসের সামনে পার্কটি থাকলেও সেটি ব্যবহারের উপযোগী নয়। দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।
বান্দুটিয়া এলাকার সাবিনা ইয়াসমিন নামে এক গৃহিনীর সোথে কথা হলে তিনি বলেন, সম্প্রতি তার ছেলেকে নিয়ে পার্কে গিয়েছিলেন। পার্কের গেটে তালা দেওয়া এবং ভেতরের নাজুক পরিবেশ দেখে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন উল্লেখ করেন, পার্কটি পরিত্যক্ত থাকায় রাতে প্রায়ই মাদকসেবীদের আড্ডা বসে সেখানে। আমরা চাই দ্রুত পার্কটিকে সংষ্কারের পাশাপাশি মাদকসেবীদের আইনের আওতায় আনা হোক।
সুজনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, শিশুদের মানসিক বিকাশে খেলাধুলা অপরিহার্য। এটি শুধু শিশুদের মানসিক বিকাশে নয়, বরং পুরো জেলার নাগরিকদের বিনোদনের সুযোগ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অচিরেই সংস্কার না করলে এটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক সানজিদা জেসমিন বলেন, পার্কটির অবস্থা সম্পর্কে আমি জানি। পৌরসভার আর্থিক সংকট থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে শিশুদের কথা মাথায় রেখে এটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জেলা শহরের একমাত্র শিশু পার্কটি দ্রুত সংস্কার করে শিশুদের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন পৌরবাসী।
|