প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ ব্র্যাক আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আয়োজনে শিশু যত্ন সেবা প্রদানকারী উদ্যোক্তা তৈরি ও নগরীর বিভিন্ন স্থানে ডে কেয়ার স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্প অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ইউডিপি সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মাসুদ আহমদ এর সভাপতিত্বে ও ইউডিপি ঢাকা অঞ্চলের সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার তুহিন আলম ও ডেপুটি ম্যানেজার আয়েশা সিদ্দিকার পরিচালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মীর খায়রুল আলম। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান সমাজ কল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহম্মদ মামুন-উল-হাসান, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বিকাশ সরকারসহ প্রমুখ।
সভার শুরুতে প্রকল্পের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন ব্র্যাক বিআইইডি’র সিনিয়র ফিল্ড ম্যানেজার দিলরুবা বেগম এবং বিআইজিডি’র প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর রাইসা আদিবা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মীর খায়রুল আলম বলেন, নগরায়ন, অভিবাসন এসব কারণে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে একক পরিবারে পরিণত হচ্ছে। আর বাবা মা উভয়ে কর্মজীবী হওয়ার কারণে যেসব পরিবারের শিশুরা ঠিকমত বেড়ে উঠার পরিবেশ পাচ্ছে না, তাদের মনোসামাজিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। বাড়িতে ডে কেয়ার সেন্টার চালু হলে শিশু ঠিকমত যত্ন ও সুরক্ষা পাবে বলে তিনি মনে করেন এবং সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
পুলিশ পরিদর্শক বিকাশ সরকার বলেন, এই প্রজেক্টের মাধ্যমে কর্মজীবী মায়েদের দুর্ভোগ লাঘব হবে এবং ডে কেয়ার সেন্টারগুলো মায়েদের ভরসাস্থল হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে ডে কেয়ার সেন্টারের উদ্যোক্তা নূর বানু বলেন, আগে তার স্বামী ঘরের বাইরে যেতে দিতেন না। পরবর্তীতে তিনি ব্র্যাকের মাঠকর্মীদের মাধ্যমে এই প্রজেক্টের কথা জানতে পারেন ও প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি নিজ বাড়িতেই চার জন শিশুসহ একটি ডে কেয়ার সেন্টার চালু করেছেন এবং কিছু টাকা আয় করছেন। এসময় অংশগ্রহণহকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ইউডিপি প্রোগ্রামের ম্যানেজার-অপারেশন রেজভিনা পারভীন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি মাসুদুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, নারীদের আত্মনির্ভরশীলতা ও স্বাবলম্বনের কথা উঠলেই সাধারণত হাঁস-মুরগি পালন, সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ ইত্যাদির কথা মাথায় আসে। কিন্তু এখন সময় এসেছে এসব গতানুগতিক চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিজ বাড়িতেই ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন করে উদ্যোক্তারা যেমন বাড়তি কিছু আয় করতে পারবেন তেমনি কর্মহীন নারীরা নিশ্চিন্তে যে কোন আয়মুখী কাজে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবী নারী হিসেবে অর্থনৈতিক সাবলম্বিতা অর্জন এবং পরিবার ও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।
উল্লেখ্য যে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ব্র্যাক নারী ও শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে নানা ধরণের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠানটি Evedience on Child Care (EEC) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে ঢাকা (কুনিপাড়া, বেগুনবাড়ি, মধুবাগ), টঙ্গী, সাভার ও গাজীপুর এলাকাতে। উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে শিশু যত্ন সেবা প্রদানকারী উদ্যোক্তা তৈরি এবং নারীদের কাজের উপর এর প্রভাব ও শিশুর বিকাশের ফলাফলগুলো বোঝার চেষ্টা করা হবে। প্রকল্পের কার্যক্রমের অংশ প্রকল্পকালীন সময়সীমার মধ্যে ব্র্যাক নতুন ২০০ উদ্যোক্তা চিহ্নিত করবে যারা বাড়িতে ডে কেয়ার সেন্টার চালাবে। প্রত্যেক উদ্যোক্তার জন্য ১৬ জন মা যাদের ২-৫ বছর বয়সী সন্তান আছে এবং যারা শিশু যত্নের সেবা নিচ্ছেন না তাদের খুঁজে বের করা হবে। মোট ৩২০০ মা এবং শিশু থাকবে। এছাড়াও ১৫০ টি দলকে খেলাধুলা ভিত্তিক শিশু যত্ন ও ব্যবসা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং অন্য ৫০ টি দলকে সাধারণ ব্যবসায়িক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যারা শিশু যত্ন ব্যবসা শুরু করবেন না। সর্বোপরি ৩০০ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ দেখার জন্য আইসিডিডিআরবি’র সাথে মিলে ‘ব্রেইন ইমেজিং’ গবেষণা করা হবে।
|