আব্দুল খালেক খোন্দকার : সমসাময়িক বিষয়ক বিশ্লেষক ও এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা জনাব তাজুল ইসলাম মনে করেন, ২০০ টাকা মূল্যমানের নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্প ছাপিয়ে মূল্যবান কাগজের সাশ্রয় করা উচিত।
তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ১০০ টাকা মূল্যের ২টি ষ্ট্যাম্প ব্যবহার করে ২০০ টাকা মূল্য মানের ষ্ট্যাম্পের প্রয়োজন মেটানো হচ্ছে। ফলে এই অতি মূল্যবান কাগজের প্রচুর অপচয় হচ্ছে।
১০০ টাকা মূল্যের ষ্ট্যাম্পে যতটুক ফাঁকা স্থান থাকে সেখানেই পূর্ণ বক্তব্যটি লেখা সম্ভব। কিন্তু ২০০ টাকা মূল্যের ষ্ট্যাম্প না থাকায় ১০০ টাকা মূল্যের দু’টি পাতা ব্যবহার করার প্রয়োজন হচ্ছে। আর এর ফলে এই মূল্যবান কাগজের ব্যপক অপচয় হচ্ছে। সুতরাং এক পাতা বিশিষ্ট ২০০ টাকা মূল্যমানের ষ্ট্যাম্পের ব্যবস্থা থাকলে অযথা ১০০ টাকা মূল্যের দুইটি পাতা ব্যবহার করা লাগত না। ফলে বিপুল অর্থ ও সম্পদ সাশ্রয় করা সম্ভব হতো।
সুতরাং বিশ্লেষক মোঃ তাজুল ইসলাম মনে করেন, ২০০ টাকা মূল্যমানের নন-জুডিশিয়াল রেভিনিউ ষ্ট্যাম্পের পাতা ছাপানো ও এর প্রতুতলতা প্রাপ্যতা সার্বজনিন হলে দেশের প্রচুর অর্থও যেমন সাশ্রয় করা যেত তেমনিভাবে নন-জুডিশিয়াল সংক্রান্ত কার্যাবলী মানুষের জন্য সহজ হয়ে যেত।
এ কথা জানা যায় যে, দেশের চারটি বিভাগীয় শহরের নিম্ন আদালতে গড়ে প্রতিদিন ২০০, ১০০ তার চেয়ে কম মূল্যমানের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের ব্যবহার সবচেয়ে বেশী। আর মাঝে মাঝেই নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই সুযোগে বিক্রেতাদের একটি অংশ প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ছয় থেকে দশ গুণ বেশি স্ট্যাম্পের অতিরিক্ত মূল্য আদায় থাকে।
সংকটের কারনে একটি আদালত ভবন এলাকায় ১৫০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ৯০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে বলে খবরে জানা গয়েছিল। বন্দর নগরী এবং রাজধানী ঢাকায় আবাসিক প্লটের জন্য আবেদন করতে ইচ্ছুক লোকদের একটি ভাল সংখ্যক, কাঙ্ক্ষিত স্ট্যাম্প সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছিল বলেও জানা যায়।
নিরাপত্তা কাগজের অভাবে বাংলাদেশ সরকারি প্রেসে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ছাপানোর কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হয়ে থাকে।
স্ট্যাম্পের সরবরাহের অবস্থান প্রকৃত চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট অপর্যাপ্ত হওয়ায় ক্রেতারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পগুলি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সহ অন্যান্য বাণিজ্যিক চুক্তি ও সমস্ত ধরণের আইনি কার্যক্রমের সম্পাদনের জন্য অপরিহার্য।
উদাহরণস্বরূপ, সমস্ত ধরণের ব্যবসায়িক চুক্তিতে প্রবেশ করতে হলে, চূড়ান্তকরণ এবং আইনি সমাপ্তির জন্য এই স্ট্যাম্পগুলির ব্যবহার প্রয়োজন। স্ট্যাম্পগুলি অবশ্যই নথিতে ব্যবহার করতে হবে যাতে অ্যাটর্নির ক্ষমতা প্রসারিত করা, বিক্রয় এবং বিক্রয় চুক্তির জন্য চুক্তি করা, দলিলের প্রত্যয়িত অনুলিপি প্রস্তুত করা, বিবাহের চুক্তি, হলফনামা ঘোষণা করা ইত্যাদি। এইভাবে, এটা স্পষ্ট হওয়া উচিত যে এই স্ট্যাম্পগুলির প্রাপ্যতার সংকট বা ঘাটতি বিপুল সংখ্যক নিয়মিত ব্যবহারকারীদের পক্ষে সবচেয়ে অসুবিধার এসব কিছুই
তাই যে বক্তব্য এক পাতাতেই সাবলীলভাবে লিখে শেষ করা যায় সেই বক্তব্য লিখতে দুই পাতা ব্যবহার করা, আবার এই মূল্যবান কাগজ, নিতান্তই জাতীয় সম্পদের অপচয় ও অপব্যবহার। লক্ষ্য করা যায় যে শুধু এই রেভিনিউ ষ্ট্যাম্পই নয়, সমাজে আমাদের জাতীয় সম্পদের ব্যপক অপচয় ও অপব্যবহার হচ্ছে। দেশের মূল্যবান প্রকৃতিক সম্পদের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই এই গ্যাস নানাভাবে অপচয় হচ্ছে। অযথা চুলা জ্বালিয়ে রেখে এই গ্যাসের মারাত্নক ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে। পানির অপচয় আমাদের দেশে সবচেয়ে বশী। এক বালতি পানিতে যে কাজ হয় তা করতে পাঁচ-ছয় বালতি পরিমান পানি ব্যবহার করছি।
ইসলাম ধর্মে অপব্যয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ। সূরাঃ আল-ইসরা, আয়াত-২৭.
এখানে ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। মধ্যপস্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “এবং যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করেনা, কৃপনতাও করেনা, আর তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী” [সূরা আল-ফুরকান: ৬৭]
যাহোক ব্যক্তি পারিবারিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রেই আমাদের অপব্যয় ও অপচয় বন্ধ করতে হবে তবেই আমরা জাতা হিসাবে উন্নতি করতে পারব।
|