রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও কথার লড়াই বন্ধ হওয়া উচিত : তাজুল ইসলাম
তারিখ
:
26-01-2025
আব্দুল খালেক খোন্দকার : দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দের মধ্যে ইদানিং ভুল বুঝাবুঝি, সন্দেহ ও কথার লড়াই চলছে। এ ব্যাপারে সমসাময়িক বিষক বিশ্লেষক ও দৈনিক এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা তাজুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ, ভুল বোঝাবুঝি ও কথার লড়াই বন্ধ হওয়া উচিত। বাস্তবিক ভাবে লক্ষ করলে দেখা যায় বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কথার লড়াই যেন বেড়েই চলেছে। বিশেষকরে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির মধ্যে এই কথার লড়াই বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য ও মন্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।
বিশ্লেষক তাজুল বলেন, ২০২৪ এর জুলাই-আগষ্টে একহাজার ছয়শত মানুষের মূল্যবান প্রাণ আর ২০ হাজার মানুষের ঝরে যাওয়া রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন এই দেশ। অথচ রাজনৈতিক দলগুলার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও কথার লড়াই জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলার উচিত হবে কথার লড়াই বন্ধ করা এবং দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা বজায় থাকতে সহায়তা করা। তা না হলে জনগণ যদি ভুলের মধ্যে পরে যায় তাহলে কারও জন্যে মঙ্গলজনক হবে না। তাই বিএনপির মতো বৃহৎ একটি দলের এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারও উষ্কানীতে কান না দিয়ে দলের ভিতর যেন শৃঙ্খলা বজায় থাকে সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এই বিশ্লেষক মনে করেন, চলমান সংষ্কার দেশের রাজৈনতিক দলগুলোর জন্য আত্নশুদ্ধির একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। এই আত্নশুদ্ধি কার্যক্রম সকল রাজনৈতিক দলকে সানন্দে গ্রহণ ও সহযোগিতা করা উচিত। এর ফলে প্রতিটি রাজনৈতিক দল আরও গণমূখী হয়ে উঠবে এবং দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারবে। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে যে জুলাই-আগষ্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবটিতে শিশু সহ কচিকাঁচা ছাত্র ও সাধারন মানুষের আত্নত্যাগ কোন নির্দিষ্ট দলকে ক্ষমতার মসনদে বসানোর জন্য সংঘটিত হয় নাই। এই বিপ্লব ছিল দেশের মালিকানা, দেশের মানুষের হাতে ফিরিয়ে দেয়া। সর্বোপরি ন্যায়কে অন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল এই বিপ্লবের প্রধান উদ্দেশ্য। কোন রাজনৈতিক দলেরই একথা ভাবার সুযোগ নাই যে, নিষ্পাপ শিশুদের রক্তের বিনিময়ে যে রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারীতা ও দুঃশাসন দেশ থেকে বিদূরীত হয়েছে সেই স্বেচ্ছাচারীতা ও দুঃশাসনের পূণঃসম্ভাবনা আবার কোন না কোনভাবে ফিরে আসুক। অন্যায় ও দূর্ণীতির কারণ দুর না করে হুট করে নির্বাচন করে ফুট করে কোন দলকে স্বৈরাচারী হতে দেয়ার সুযোগ করে দেয়া যাবে না বলে দেশের শান্তিকামী ও সচেতন মানুষ মনে করেন। এজন্য সঠিক সংষ্কারের মাধ্যমে দেশের সকল বিভাগকে পরিশুদ্ধ করা সময়ের দাবী। বিশ্লেষক ইসলাম বলেন, তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের খবর শোনা যাচ্ছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য ভাল। এতে গণতন্ত্রের বিকাশে সহায়তা হবে। তরুণদের দল গঠনের ব্যাপারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, তরুণদের রাজনৈতিক দল গঠনে আমরা সাধুবাদ জানাই তবে সরকার ও প্রশাসনের সহায়তা নিলে জনগণ তাতে নিন্দা জানাবে। বিএনপির মহাসচিবও তরুণদের রাজনৈতিক দল গঠনকে স্বাগত জানিয়েছেন। এখানে উল্লেখ করতে হয় যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশে প্রথম বহুদলীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়া রাজনৈতিক সহনশীলতার পরাকাষ্টা দেখিয়ে নিজে একজন সামরিক বাহীনির ব্যক্তি হওয়া সত্বেও এই দেশে একাধিক গণতন্ত্র দলের কার্যক্রম ও বিকাশকে সহায়তা করেছিলেন। সে দিক বিবেচনা করলে বিএনপি একটি মহৎ দল। কাজেই বর্তমানের বিএনপিও তাদের প্রতিষ্ঠাতার পদাঙ্ক অনুসরন করবে বলে বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম মনে করেন। অবশ্য এরই মধ্যে অন্যান্য কিছু দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। অনেকেই নতুন এই দলকে সরকারের এক অভিসন্ধি হিসাবে দেখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু গণতন্ত্রের কল্যানে দেশ ও জনগণের কল্যাণে এখন সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে সহমর্মিতার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত এবং সকলে মিলেমিশে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে গণতান্ত্রিকভাবে এগিয়ে নিতে হবে এটাই এখন সবার কামনা। আর উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানার উক্তিটি ধারণ করতে হবে "আমরা দায়িত্বে যাব ক্ষমতায় নয়।" এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যা জনৈক উপদেষ্টা মহাদয়া তাঁর একটি কথায় উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেন, সকল রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য "আমরা দায়িত্বে গেলে" "আমরা ক্ষমতায় গেলে" একথা সঠিক নয়। কারণ রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করে জন সেবা করার পরিবর্তে ক্ষমতা প্রদর্শন করলে তা গণবিরোধী কাজে পরিণত হয়। বিধায় রাজনৈতিক নেতাদের বলা উচিত "আমরা দায়িত্বে গেলে" “আমরা ক্ষমতায় গেলে” একথা তাদের বলা আদৌ উচিত নয়। উপদেষ্টা মহাদয়ার এই নীতি যদি দেশের রাজনৈতিক দল ও নেতারা মনে ধারন করেন তবে দেশে গণতন্ত্রের ঘোমটার আড়ালে আর কোন স্বৈরতন্ত্রের জন্ম হবে না, এটাই দেশের মানুষের বিশ্বাস। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে দেশের রাজনৈতিক দলগুলার শুভবুদ্ধি জাগ্রত হোক। এটাই সবার কামনা।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : মো: তাজুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়: ২১৯ ফকিরের ফুল (১ম লেন, ৩য় তলা), মতিঝিল, ঢাকা- ১০০০ থেকে প্রকাশিত ।
ফোন: ০২-৭১৯৩৮৭৮ মোবাইল: ০১৮৩৪৮৯৮৫০৪, ০১৭২০০৯০৫১৪
Web: www.dailyasiabani.com ই-মেইল: [email protected]