আবদুল খালেক খোন্দকার : সমসাময়িক বিষয়ক বিশ্লেষক ও দৈনিক এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা জনাব তাজুল ইসলাম পুলিশ সংস্কার কমিশনের উদ্দেশ্যে বলেছেন, গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য ব্যতীত অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের সাধারন ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে তাদের শুধরানোর সুযোগ দেয়া উচিত।
দেশব্যপি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে হলে গণহারে পুলিশ ছাটাই ও বহিষ্কারের পরিবর্তে তাদের বিশেষ শর্তে ও কঠোর নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে কাজে লাগানো উচিত।
বিশ্লেষক ইসলাম বলেন, অপরাধ দমনে পেশাদারি পুলিশ বাহিনী বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ হয়ে থাকেন। এমন কথা প্রচলিত আছে যে, পুলিশ বাতাসেও অপরাধের গন্ধ পায়। এমন পেশাগত দক্ষ বাহিনীকে ঢালাওভাবে প্রত্যাহার করা হলে অপরাধ দমনে দক্ষতার অভাব দেখা দিতে পারে।
তিনি বলেন, বর্তমানে পুলিশ ব্যবস্থার বেহাল অবস্থার সুযোগ নিয়ে অপরাধিরা মাথা চারা দিয়ে উঠেছে। লক্ষ করলে দেখা যায়, সম্প্রতি দেশে ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে প্রকাশ্য প্রতারণা উদ্বেগহারে বেড়ে গেছে। সড়ক দূর্ঘটনাও উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। কিন্তু রাস্তা-ঘাটসহ সর্বক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা থাকলে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হতো যা বিকল্প ব্যবস্থায় কার্যকরী নয়।
এই বিশ্লেষক বলেন, ছাত্র পরিচালিত গণ আন্দোলনের পরে দেশের পুলিশ ব্যবস্থা সম্পূর্নরূপে ভেঙ্গে পরেছিল। ইতোমধ্যে বহু সংখ্যক পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তা পালিয়েছেন ও বহিষ্কার হয়েছেন। বাদ বাকীরাও মনোবল হারিয়ে বিপর্যস্ত ছিলেন। এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা সহ রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ব্যর্থতার কথাও অনেকে বলাবলি করছেন। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন বলেও অনেকে দাবি করছেন। যার ফলে অপরাধের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে বলেও অনেকে মত প্রকাশ করেছেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম বলেন, যে সব পুলিশ সদস্য গুরুতর অপরাধে জরিত নয় সেই সকল পুলিশদের ভুল সংশোধনের নিমিত্ত সাধারন ক্ষমা ঘোষণা করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের সম্পৃত্ত রাখা উচিত। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ বিভাগে মৌলিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত, আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা এবং তাদের বেতনভাতা, আবাসন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং কল্যাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গীকার করা হয়েছে।
পুলিশ বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই বিশ্লেষক বলেন, দুর্ণীতি রোধ ও মানুষের মধ্যে নৈতিকতা বৃদ্ধি করতে এমন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের পুলিশসহ অন্যান্য বিভাগে নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জ্ঞানী ও মহৎ ব্যক্তিদের উচ্চপদে নিয়োগ প্রদানের ব্যবস্থা প্রচলন করতে হবে যাতে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির পাশাপাশি কর্মকর্তাদের নৈতিকগুনেরও প্রতিফলন ঘটে। তাদের নৈতিক গুনাবলীর কারনে সমাজ ও সাধারন মানুষ উপকৃত হবেন। আর এভাবেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে দুর্নীতি ও নৈতিক অবক্ষয় দূর হবে। ড. বেনজির, ড. ওমুক ড. তমুক ও হারুনদের মত পুলিশ প্রধানদের ডিগ্রির অভাব ছিল না। কিন্তু তাদের নৈতিকতার অভাব ছিল। আর সে কারনেই গোটা পুলিশ বাহিনীকে তারা কলঙ্কিত করেছিল। তারা জনগণের জান-মাল রক্ষার পরিবর্তে বিভিন্ন অপকর্মে জরিয়ে পরে এবং দেশ ও জনগণের অকল্পনীয় ক্ষতি তো করেছনই বরং গোটা পুলিশ বাহিনীকে বদনামের ভাগিদার করেছেন যা সমসাময়িক কোন দেশের ইতিহাসে নাই। বাংলাদেশে যে সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা রয়েছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে সময়ের পরিক্রমায় পুলিশ বিভাগে যুগোপযোগী সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন পেশাগত প্রণোদনা ও উৎকর্ষতা নিশ্চিত করা ক্রমাগত কঠিন হচ্ছে, তেমনিভাবে পুলিশ সেবার প্রত্যাশিত মানে ঘাটতিসহ এ বিভাগের প্রতি জনগণের প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির ঘাটতি হচ্ছে।
|