বিশেষ প্রতিবেদক : সমসাময়িক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও দৈনিক এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা মোঃ তাজুল ইসলাম বলেছেন, সৌদি আরবের ঘারে কাঁঠাল ভেঙ্গে ট্রাম্প রাশিয়-ইউক্রেন যুদ্ধের মীমাংসা করছেন। অথচ পাশেই ইসরায়েল শত শত নিষ্পাপ নারী-পুরুষ ওশিশু হত্যা করছে সে ব্যাপারে এসব বড় বড় দেশের যেন কোন দৃষ্টিই নেই।
সৌদি আরব তার নিজের তেল-খরি পুড়িয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধ করছেন। আর ট্রাম্প ইউক্রেন থেকে অর্থ-খনি এনে ঐগুলি নিরীহ ফিলিস্থনি নারী ও শিশু হত্যার কাজে ব্যবহার করবেন ও গাজায় বিলাসখানা বানাবেন। আর সৌদি আরব ট্রাম্পের এই কুটিল চালের মধ্যস্থতা করছেন। এটা কেমন একটা প্রহসন।
বিশ্লেষক তাজুল বলেন সৌদি আরবের উচিত ছিল আগে ফিলিস্থিনে শান্তি স্থাপনের চষ্টা করা। আরব ভূখন্ডেই ইসরায়েল প্রায় দেড় বছর ধরে হাজার হাজার নিরপরাধ নারী ও শিশুকে হত্যা করে আসছে। যুদ্ধ বিরতির চুক্তি লংঘন করে ইসরায়েল এই পবিত্র রমজান মাসে প্রতিদিনই নিরীহ ফিলিস্থিনিদের হত্যা করছে। গত এক সপ্তাহে কয়েকশত মানুষ হত্যা করেছে যাদের ৭০ শতাংশই শিশু। ইসরায়েল এযাবত গাজায় ৫০ হাজারেরও বেশি নিরপরাধ মানুষ হত্যা করেছে। এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন গাজায় মানবতার পরাজয় হয়েছে। পৃথিবীর কোন দেশ নিরপরাধ শিশু সহ এত মানুষ ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে নাই। আমেরিকার সরাসরি মদদে ইসরায়েল পৃথিবীর ইতিহাসে এত জঘন্য হত্যাকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে অথচ আমেরিকা কখনও সৌদি আরবকে বলে নাই যে আপনি এই যুদ্ধের মীমাংসা বা মধ্যস্থতা করুন। কিন্তু এখন সৌদি আরবের দেন-দরবার ও মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ মীমাংসার পথে। ইউক্রেন থেকে ট্রাম্প ফায়দা লুটে নিয়ে নিবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আজ অসহায় গাজাবাসীর চিৎকার ও আর্তনাদে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত সাহায্যের জন্য সেখানকার নারী-পুরুষ ও শিশু গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কান্না করছে। কিন্তু এই কান্নার ধ্বনি সৌদিআরব ও আমেরিকার কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না। সৌদি আরব রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য নিজের তেল-খড়ি পুড়িয়ে মধ্যস্থতা করছেন এটা খুব ভাল কথা। কিন্তু প্রতিবেশি একটি মুসলিম জনপদের নিরপরাধ মানুষকে যে নিষ্ঠুর ইসরায়েল প্রতিনিয়ত হত্যা করছে এই বিষয়টিকে সৌদি আরবের সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মুখপাত্র আব্দেল লতিফ আল-কানুয়া। উত্তর গাজার জাবালিয়ায় এক শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি বোমা হামলায় প্রাণ হারান এই নেতা। যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করে গত ১৮ মার্চ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকা গাজায় হামলা শুরুর পর থেকে বেসামরিক নাগরিকদের পাশাপাশি হামাস ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গত ২৩ মার্চ ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন খান ইউনিসের শিক্ষা বিভাগের প্রধান সুপারভাইজার জিহাদ আল-আঘা। স্ত্রী ও ৩ সন্তান নিয়ে তিনি নিজ বাড়িতেই ছিলেন। বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে সপরিবারে তাঁকে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনারা। এক দিন পর ২৪ মার্চ ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন মানার আবু খাতের নামের আরও এক সরকারি কর্মকর্তা। তিনি খান ইউনিস শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফের হামলায় প্রাণ হারায় তাঁর দুই পুত্রও।
এ দুই সরকারি কর্মকর্তাকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানানোর তীব্র নিন্দা করেছে মানবাধিকার সংস্থা ইউরো মেডিটারেনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটর। এই দুজন ছাড়াও ১৫ মার্চ উপত্যকায় পুনরায় হামলা শুরুর পর ১৮ মার্চ পর্যন্ত তিন দিনে নিহত হয়েছেন আরও চারজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, যাঁরা বিচার বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত ছিলেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১০ হামাস নেতার। তাঁরা হলেন সংগঠনটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইসমাইল বারহৌম, সালাহ আল বারদাওয়েল, সাবেক হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ে, সাবেক হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার, সালেহ আল সারাহ, মারওয়ান ইস্সা, জাকারিয়া মুয়াম্মার, জামিলা আশ-শান্তি এবং জাওয়াদ আবু শাম্মালা। এছাড়াও গাজায় গত ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮২ জন আহত হয়েছে, জানায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হামাসের মুখপাত্র আবদুল-লতিফ আল-কানোয়া গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া শহরে নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে, এবং গ্রুপটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, নেতৃবৃন্দ ও মুখপাত্রদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলা তাদের মনোবল ভেঙে ফেলতে পারবে না।
লেবাননে, ইয়োহমোর আল-শাকিফ নামক দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় অন্তত তিন জন নিহত হয়েছে, বলে জানায় স্থানীয় মিডিয়া ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েল দাবি করেছে যে, তারা দক্ষিণ লেবাননের দেরদঘাইয়া এলাকায় একটি হিজবুল্লাহ কমান্ডারকেও হত্যা করেছে। ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়াতেও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, লাতাকিয়া উপকূলীয় শহরটির আশেপাশে একাধিক আক্রমণ চালানো হয়েছে, বলে জানায় সিরিয়ার মিডিয়া।
|