ড. মো: শাহজাহান কবীর : ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষকে খুশি করা অত্যন্ত গুরুত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ কাজ। এজন্যই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) পারস্পরিক হাদিয়া বিনিময়ে উৎসাহিত করেছেন। কারণ, এর দ্বারা অন্তরে ভালোবাসা তৈরি হয়। পারস্পরিক সম্পর্ক আরো মজবুত হয়। যা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য খুবই সহায়ক।
পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্নীয়-স্বজনের খোজ-খবর রাখা্ এবং বিপদে আপদে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা প্রত্যেক মুমিন মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব। প্রতিবেশীদের সাথে সদ্ভাব ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা শুধু ইসলামের নির্দেশনাই নয়; বরং এতে অনেক ফজিলত ও মর্যাদাও রয়েছে। কেননা, আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা, তাদের খোঁজ-খবর নেয়া, তাদের কাছে আসা-যাওয়া করাও ইবাদতেরই অংশ।
হাদিসে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার রিজিক প্রশস্ত হওয়া এবং মৃত্যুর সময় পিছিয়ে দেয়া কামনা করে, তার উচিত আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।’ (সহীহ বুখারি) আবার আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম। হাদিসে শরীফে বর্ণিত, - রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহীহ বুখারি) অপর হাদিসে বর্ণিত, রাসূলে কারিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা পরস্পর হাদিয়া আদান-প্রদান কর, তাহলে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।’ (আদাবুল মুফরাদ) সুতরাং হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী আমাদেরকে আত্নীয়-স্বজনদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে ও এ বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করতে ঈদ উপলক্ষ্যে হাদিয়া আদান-প্রদান করা অত্যন্ত সহায়ক। হাদিয়া দেওয়ার ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সুরা বাকারার ২৬২ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘যারা তাদের সম্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করে, এরপর খোটা বা তুলনা দিয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তার অনুগমন করে না। তাদের জন্য রবের কাছে রয়েছে তাদের বিনিময়, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ হাদিয়া এবং দানের পার্থক্যের ফলাফল হলো, রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং তা নিজে ব্যবহারও করতেন। তবে তিনি সদকা গ্রহণ করতেন কিন্তু নিজে ব্যবহার করতেন না। বরং অন্যদের দিয়ে দিতেন। হাদিয়া ব্যবহার করতে নিষেধ নেই। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ৪ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘তারা যদি খুশি হয়ে তোমাদেরকে দিয়ে দেয়, তাহলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।’ হাদিয়া আদান-প্রদানের মাধ্যমে হিংসা দূর হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বিনিময় কর। কেননা, এর দ্বারা অন্তরের সঙ্কীর্ণতা ও হিংসা দূর হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমদ) হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর নিয়ম ছিল তিনি হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং এর বিনিময়ে নিজেও কিছু হাদিয়া হিসেবে দিয়ে দিতেন।’
হাদিয়ার বিনিময়ে দাতাকে কিছুই দেওয়ার না থাকলে অন্তত জাযাকাল্লাহু খায়রান (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন) এতটুকু বললেও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বলে গণ্য হবে । হাদিস শরীফে বর্ণিত, হজরত জাবের (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক (সা.) বলেন, ‘যাকে হাদিয়া দেওয়া হয় যদি তার কাছে হাদিয়ার বিনিময়ে দেওয়ার মতো কিছু থাকে তাহলে দিয়ে দেবে। আর যার কাছে দেওয়ার মতো কিছুই না থাকে তাহলে সে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তার প্রশংসা করে দেবে এবং তার ব্যাপারে ভালো কথা বলে দেবে। যে এমন করল সে কৃতজ্ঞতা আদায় করল। (তিরমিজি) আত্মীয় এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ়করণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের সুরা নিসার ৩৬ আয়াতে এরশাদ করেন-
‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করো না এবং সদয় ব্যবহার কর বাবা-মার সঙ্গে, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন, প্রতিবেশী এবং অনাত্মীয় অসহায় মুসাফির এবং নিজের সঙ্গী -সহচর ও পথচারীদের সঙ্গে। আমরা যেন নিজেদের ভাই, আত্মীয়-স্বজন, আপনজন এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে সর্বোত্তম আচরণ করি। সব ভালো কাজের বিষয়ে তাদের সহযোগিতা করি। ঈদের সময় তাদের খুশির জন্য হাদিয়া প্রদান করি। তবে কাউকে হাদিয়া দিয়ে খোটা দেয়া যাবে না। হাদিয়া দিয়ে খোটা দেয়া খুবই ভয়ঙ্কর অপরাধ ও ক্ষতির কারণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘খোটাদানকারী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (সহীহ মুসলিম) আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পারস্পরিক হাদিয়া বিনিময়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।
|