নিজস্ব প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক ও দি এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা মোঃ তাজুল ইসলাম বলেছেন ইসরায়েলের মত পারমানবিক বোমার অধিকারি আগ্রাসী দেশের সাথে মোকাবেলা করে বেঁচে থাকতে হলে ইরানকে অবশ্যই পারমানবিক অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম হতে হবে। নচেৎ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে ইরানের পক্ষে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পরবে। বিশেষ করে ইসরায়েলের আগ্রাসন থেকে পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে বাঁচাতে ইরানকে পারমানবিক অস্ত্রে সজ্জিত হতে হবে।
এই বিশ্লেষক আরও বলেন, বাঁচার অধিকার সবারই আছে। বর্তমান বিশ্বে আগ্রাসী দেশের হাত থেকে বাঁচতে পারমানবিক বোমা রক্ষাকবচ হিসাবে কাজ করছে বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমেরিকার মুহুর্মহ ধমক-ধামক ও চোখ রাঙানি থেকে বাঁচতে হলেও শিল্প-সাহিত্যে অগ্রসর ইরানকে পারমানবিক অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম হতে হবে। নইলে পরাশক্তির দেশগুলো তাকে খেয়ে ফেলবে। বিশ্লেষক তাজুল বলেন, আমেরিকা নামক দেশটি শক্তের ভক্ত আর নরমের যম। এই ট্রাম্প তার পূর্বের মেয়াদে পারমানবিক বোমা তৈরি থামানোর অজুহাতে আফগানিস্থানের উপর মাদার বোমা নামক সর্ব বৃহৎ বোমা নিক্ষেপ করে আফগানিস্থানের সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করে ও সেখানে বহু লোককে হত্যা করে। এরপর ঐ মাদার বোমা নিয়ে উত্তর কোরিয়ার উপর নিক্ষেপের জন্য অগ্রসর হয়। উত্তর কোরিয়ার নিকটবর্তী হতেই চীন আমেরিকাকে সতর্ক করে বলে যে, উত্তর কোরিয়ার উপর বোমা ফেলতে আমেরিকার দ্বিতীয়বার ভেবে দেখা উচিত। কারন আফগানিস্থান ও উত্তর কোরিয়া এক জিনিস নয়। উত্তর কোরিয়ার উপর বোমা ফেলে জান নিয়ে আমেরিকার জাহাজ ফিরে যেতে পারবে না। কারন ততক্ষনে উঃ কোরিয়া পারমানবিক বোমা তৈরি করে ফেলেছে। একথা শুনে আমেরিকা আর টু শব্দ না করে ওখান থেকে শটকে পরে। অর্থাৎ আমেরিকা শক্তের ভক্ত আর নরমের যম তা প্রমান পায়। বিশ্লেষক তাজুল আরও বলেন পাকিস্তানের উপর এই একই ইস্যু নিয়ে আমেরিকা অনেক হামকি-ধামকি করেছিল। কিন্তু পাকিস্তান আমেরিকার হুমকি-ধামকি অগ্রাহ্য করে পারমানবিক বোমা তৈরি করলে পাকিস্তানের কাছে যুদ্ধ বিমান বিক্রয়ের জন্য আমেরিকা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের যে চুক্তি করেছিল সেই চুক্তি বাতিল করে এবং পাকিস্তানের নিকট থেকে নেয়া সেই বিপুল অংকের টাকাও আমেরিকা ফেরত দেয় নাই। কিন্তু পাকিস্তান থেমে থাকে নাই। পারমানবিক বোমা তৈরি করে তারা আগ্রাসী প্রতিবেশি দেশের সাথে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করেছে। নইলে উগ্র ও আগ্রাসী প্রতিবেশি দেশ এতদিন পাকিস্তানকে গিলে খেত। রাশিয়া যখন ইউক্রেনের উপর আগ্রাসী আক্রমন চালায় তখন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকগণ বলেছিলেন যে, ইউক্রেন যদি সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়ে ইউক্রেনে থাকা বিপুল পরিমানে পারমানবিক বোমা রাশিয়ার কাছে ফেরৎ না দিত তবে রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রোমন করার সাহস করত না। বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম আরও মনে করেন যে, পারমানবিক বোমা কোন দেশকে বহিঃশক্তির আগ্রাসন ও আক্রোমনে থেকে বাঁচার রক্ষা কবচ হিসাবে কাজ করে। অর্থাৎ পারমানবিক অস্ত্রে সজ্জিত কোন দেশে বহিঃশক্তি আক্রমোন করার সাহস করে না। এজন্য পারমানবিক অস্ত্র তৈরির অধিকার ইরানের অবশ্যই আছে। আজ ইসরায়েল ফিলিস্থিনে যেভাবে গণহত্যা চালাচ্ছে, যদি ঐ ভূখন্ডে পরাশক্তি ইসরায়েলের সমকক্ষ কোন শক্তি থাকত তাহলে ইসরায়েল একচেটিয়াভাবে মানুষ খুন করতে পারত না। ইসরায়েলকে পূর্ণ সামরিক সাহায্য অব্যাহত রেখে ইরানকে হুমকি-ধামকি দেওয়া আমেরিকার শিষ্টাচার লঙ্ঘনের চরম বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয় বলে এই বিশ্লেষক মত প্রকাশ করেন। আমেরিকা ইরানকে দুই মাসের সময় বেধে দিয়েছে। দুই মাস পর আমেরিকা ইরানের সামরিক স্থাপনা বোমা মেরে গুড়িয়ে দেবে। কিন্তু এই বিশ্লেষক প্রশ্ন করেন কোন অধিকারে আমেরিকা এটা করবে? ইরানকে শক্তিহীন করে ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য দখল করতে? কিন্তু আশার বিষয় যে সৌদি, কুয়েত, কাতারসহ মধ্যপ্রচ্যের দেশগুলো আমেরিকার দূরভিসন্ধি দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছে। তারা আমেরিকাকে জানিয়ে দিয়েছে যে তারা তাদের দেশ ব্যবহার করে ইরানের উপর আক্রোমণ করতে দেবে না। এইভাবে যদি মুসলিম দেশগুলো এক হতে পারে তবেই তারা পৃথিবীতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে বলে বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম মত প্রকাশ করেন। এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বোমা হামলার হুমকি বাস্তবায়ন করেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর প্রতিশোধমূলক জবাব পাবে। ঈদুল ফিতরের নামাজের পর দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে এমন কথা বলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। অন্যদিকে ট্রাম্প আবারও হুমকি দিয়ে বলেন, তেহরান যদি ওয়াশিংটনের সঙ্গে নতুন পরমাণু চুক্তিতে সম্মত না হয়, তাহলে ইরানে বোমা হামলা চালানো হবে। তিনি মার্চের শুরুর দিকে ইরানের নেতৃত্বের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন, যেখানে দুই মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। খামেনি বলেন, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের শত্রুতা সবসময় ছিল। তারা আমাদের আক্রমণের হুমকি দিচ্ছে, যা আমরা খুব সম্ভব বলে মনে করি না। তবে যদি তারা কোনও ধরণের দুষ্কর্ম করে, তাহলে অবশ্যই কঠোর প্রতিশোধমূলক জবাব পাবে। তিনি আরও বলেন, আর যদি তারা অতীতের মতো আমাদের দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চিন্তা করে, তাহলে ইরানের জনগণ নিজেরাই তাদের মোকাবিলা করবে। যাহোক গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের চিঠির জবাব দিয়েছে ইরান। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান জানান, তেহরান ওয়াশিংটনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় যাবে না। তবে সর্বোচ্চ নেতা খামেনির নির্দেশ অনুযায়ী পরোক্ষ আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাঘাইএক টুইট বার্তায় জানান, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য `বোমা হামলার` হুমকি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার মূলনীতির প্রতি গুরুতর অবমাননা। তিনি বলেন, হিংসা হিংসার জন্ম দেয়। শান্তি শান্তির পথ দেখায়। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই পথ বেছে নিতে হবে এবং তার ফলাফল মেনে নিতে হবে। তবে তেহরান বরাবরই বলেছে যে, তার পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ বেসামরিক শক্তি উৎপাদনের জন্য।
|