মিয়া আবদুল হান্নান : পঞ্চম থেকে দশম সংসদ নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, জোটের রাজনীতিই ভোটের ফলাফল নির্ধারণ করেছে। এই সময়ে জাতীয় পার্টি ও জামায়াত প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। একই সঙ্গে সংসদেও নিজেদের অবস্থান পোক্ত করেছিল দল দুটি, জোটের রাজনীতিই ভোটের ফলাফল নির্ধারণ করেছে।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এরশাদ সরকারের পতনের পর। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ওই নির্বাচন হয়। নির্বাচনের আগেই এরশাদবিরোধী আন্দোলনে গড়ে ওঠা জোট বা ঐক্য অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ৮–দলীয় জোটের শরিকেরা জোটবদ্ধ নির্বাচন করার চেষ্টা করলেও আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে একমত হতে পারেনি। আওয়ামী লীগ অনেকটা একলা চলো নীতি অবলম্বন করে। এ কারণে আওয়ামী লীগ বাদে ৮–দলীয় জোটের অন্য শরিকেরা এবং ৫–দলীয় বাম জোটের সমন্বয়ে গঠন করা হয় গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট। এ সময় আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও একপর্যায়ে ৫টি দলকে ৩৬টি আসন ছেড়ে দেয়। এ কারণে গণতান্ত্রিক ঐক্যজোটের ভেতরেও দেখা দেয় ভিন্ন প্রতিক্রিয়া। অনেক আসনে এই জোটের প্রার্থীরা ৮–দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে, কোথাও গণতান্ত্রিক ঐক্যজোটের প্রার্থী আবার কোথাও দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমান উল্লাহ আমান যে অংশগ্রহন করবেন এটি তার মাথায় ছিলো না। তিনি মাত্র ডাকসুর ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে মাত্র ৬ মাস হলো। তখন আমান উল্লাহ আমান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের আহবায়ক। নবীন একজন ছাত্রদল কর্মী। এর মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য তিনি মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকারের পতনের পর বিজয়ী বীর আমান উল্লাহ আমানকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিলো কেরানীগঞ্জ থানাধীন জিন্জিরা ঈদগাহ মাঠে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাজার হাজর নেতা-কর্মী ছাত্র - জনতা উপস্থিত ছিলেন। তারা মুহুর্মুহু করতালির মাধ্যমে ডাকসুর ভিপি আমান উল্লাহ আমানকে বরণ করে নিয়েছিলেন। আমান উল্লাহ আমানকে একনজর দেখার জন্য মানুষ হুমরি খেয়ে পরছিলেন। তিনি মঞ্চে বক্তব্য দেয়ায় সময় হাজার হাজার বিএনপির নেতা কর্মীরা শ্লোগানে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত করে তোলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঢাকা -৩ আসনে আমানকে চাই! আমানকে চাই। সেদিন, সেসময়ের জনমত জরিপ ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা জনগনের আশা আকাঙ্ক্ষার কথা দেশনেত্রী, আপোষহীন নেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জানতে পারলেন। হটাৎ একদিন ম্যাডাম ডাকসু ভিপি আমান উল্লাহ আমানকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, আমান তোমাকে ঢাকা -৩ কেরানীগঞ্জ থেকে সংসদ নির্বাচন করতে হবে। তিনি বললেন , ম্যাডাম আমার তো নির্বাচন করার প্রস্তুতি নেই সবে মাত্র ডাকসুর ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হলাম। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। আমান উল্লাহ আমান বললেন এই অবস্থায় আমি কীভাবে নির্বাচন করি? দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একটু ধমকের সুরে বললেন,আমি যেটা করি সেটি তোমাকে শুনতে হবে। আমি শুনছি শুধু বাঘ বাঘ, সেই বাঘকে তোমার শিকার করতে হবে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই বাঘকে ধরাশায়ী পরাজিত করতে হবে। তৎকালীন সময়ে কেরানীগঞ্জ ঢাকা-৩ আসনে নির্বাচন করবেন আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসিন মন্টু। সবাই তাকে বাঘ উপাধি ব`লেই ডাকতো। আমান উল্লাহ আমান জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক, তাকে মনোনয়ন বোর্ডে যেতে হয়নি। ধানমন্ডি ২৭ এর পাশে বিএনপি`র নেতা জুলমত আলী খানের বাসায় স্থায়ী কমিটির মিটিং ডেকে আমান উল্লাহ আমানকে ও তৎকালীন যুবদলের সভাপতি মির্জা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ তাদের তিন জনকে ডেকে নিলেন। স্থায়ী কমিটির মিটিং শেষে নিচে নেমে স্থায়ী কমিটির সদস্য পরবর্তীতে অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান বললেন আমাদের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমান উল্লাহ আমান আগামী পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেরানীগঞ্জ ঢাকা-৩ আসন থেকে অংশগ্রহণ করবেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের সাথে সাক্ষাৎ করে আমান উল্লাহ আমান বলেন, আমি কিছু বলার আগেই ম্যাডাম হ্যাঁ, তুমি কেরানীগঞ্জ থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সদস্য পদে নির্বাচন করবে। আমান উল্লাহ আমান বলেন, তা হলে আমার একটু কথা আছে, শ্রদ্ধেয় বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দাদা আমার সিনিয়র, যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে তাহলে দাদাকে মন্ত্রীত্ব দিতে হবে। ম্যাডাম বললেন, ঠিক আছে আমি দেখবো, তোমরা কাজ করে যাও। সে নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়েছিল। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দাদা মন্ত্রী হয়েছিলো। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমান উল্লাহ আমান সর্ব কনিষ্ঠ প্রার্থী হিসেবে রাজধানীর ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী তীর ঘেষে কেরানীগঞ্জ জনবহুল এলাকা থেকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি কেরানীগঞ্জ উপজেলা ঢেলে সাজাতে উন্নয়নের জন্য চিন্তা ভাবনা করেন। বিশাল এরিয়া নিয়ে কেরানীগঞ্জ ছিলো বাতির নীচে অন্ধকার, তেমনি কেরানীগঞ্জ একটু অবহেলিত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকা। রাস্তাঘাট ব্রীজ কালভার্টের বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী এই নদীর মাঝখানে একটি দ্বীপ কেরানীগঞ্জ উপজেলা হযরতপুর ইউনিয়ন থেকে কোন্ডা ইউনিয়নকে আলোকিত করার জন্য তিনি ( আমান উল্লাহ আমান) তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে যা-ই দাবি করেছেন তিনি কেরানীগঞ্জ বাসীদের জন্য সবকিছু দিয়েছেন।
(নব্বইর গণ- গণঅভ্যুত্থান ও কিছু কথা বই থেকে) চলমান - ৫
|