গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতে বসে এখনও তিনি দেশ বিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছেন। গত বছরের জুলাই-আগস্টে তার নির্দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। শেষ পর্যন্ত তিনি যে কোনো উপায়ে হলেও ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
এদিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে জুলাই বিপ্লব, শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া এবং দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে।
আল জাজিরার উপস্থাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বলেন, শেখ হাসিনা দাবি করেন তিনি এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভারতে থেকে বিভিন্ন সময় বিবৃতি দিচ্ছেন। অন্তর্বর্তী সরকার ভারতে তার অবস্থানকে কীভাবে দেখে?
এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলন হয়েছিল। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ অন্যান্য রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে। বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে এবং আমি তাকে স্পষ্ট করি, ঠিক আছে যদি শেখ হাসিনাকে আপনি রাখতে চান তাহলে এ বিষয়ে আমি কিছু করতে পারব না। কিন্তু অবশ্যই তিনি যখন সেখানে থাকবেন, তার কথা বলা উচিত হবে না।
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন ড. ইউনূস। কারণ তার বক্তব্য আমাদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে। তার বক্তব্যের কারণে দেশের মধ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে। এজন্য দেশের মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এ সময় আল-জাজিরার সাংবাদিক জানতে চান, তখন মোদী কী বলেছিলেন। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি বলেছিলেন, ভারত হলো এমন একটি দেশ যেখানে সামাজিক মাধ্যম সবার জন্য উন্মুক্ত। তিনি এটি পারবেন না। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে সেটা তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ শিরোনামে তার ওই সাক্ষাৎকারটি রোববার (২৭ এপ্রিল) আল-জাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। সাক্ষাতকারে নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো তাদের জন্য ভালো সমাধান। তিনি বলেন, দেশের জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে চলে যেতে বলছে না, বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, তারা বলছে না, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যেতে দাও। আজই আমাদের নির্বাচন। কেউ তা বলেনি। আমরা সেদিকেই যাচ্ছি। আমরা এমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি যেখানে লোকজন বলছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বিগত সরকারের অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করে দেশে অর্থবহ সংস্কার এবং অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথাও বলেছেন তিনি।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে যে তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি।
গুজরাটে আটক ব্যক্তিরা ‘বাংলাদেশি’ কি না কীভাবে জানলো ভারতীয় পুলিশ? তাছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে। তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এই আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
আল জাজিরার উপস্থাপক প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অন্যরা রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে। যেমন লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। এর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে?
আল জাজিরার উপস্থাপক প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অন্যরা রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে। যেমন লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। এর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে?
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়টি সম্পূর্ণ পৃথক ইস্যু। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সমস্যা নিয়ে কাজ করছি এবং তারা যেন নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্যও কাজ করছি। আমাদের চিন্তা হলো, কীভাবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া তৈরি করা যায় যেন রোহিঙ্গারা তাদের নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে এবং নিরাপদ পুনর্বাসন করতে পারে।
|