মিয়া আবদুল হান্নান : স্বৈরাচার এরশাদ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন আলহাজ আমান উল্লাহ আমান। সেই সঙ্গে কেরানীগঞ্জের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশ মুক্তি আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন, স্বৈরশাসককে দেশ থেকে বিলুপ্তি করার প্রত্যয় নিয়ে দুর্বার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অতি সাধারণ অবস্থা ও অবস্থান থেকে সারা কেরানীগঞ্জের জাতীয়তাবাদী শক্তিকে একত্রিত করার কাজ শুরু করেন। সেই দ্বায়ীত্বের একটি হচ্ছে কেরানীগঞ্জের পথে প্রান্তরে জনগনকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টিকারী আলহাজ আমান উল্লাহ আমান একটি নাম একটি ইতিহাস।
২০২২ সালে আমান উল্লাহ আমান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তৎকালিন ঢাকা-৩ সংসদীয় আসনের বিপুল ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য।
ব্যক্তিগত বিবরণ জন্ম : ২৫ জানুয়ারি ১৯৬২ ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন ১নং হযরতপুর ইউনিয়নের বয়াতিকান্দি গ্রামে মাদবর বংশে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা -মরহুম মেঘু মিয়া মাদবর , মাতা- মরহুমা করিমন নেসা, দাম্পত্য সঙ্গী - সহধর্মিণী সাবেরা আমান বিএসএস ( অনার্স) এম এস এস-(ঢা,বি) , একমাত্র পুত্র ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমি, দুই মেয়ে- বড় মেয়ে-নাফিসা আমান, ছোট মেয়ে-নাবিলা আমান। রাজনৈতিক দল : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), প্রাক্তন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,পেশা- রাজনীতিবিদ। প্রারম্ভিক জীবন : আলহাজ আমান উল্লাহ আমান একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী। কেরানীগঞ্জ ঢাকা ৩ সংসদীয় আসনের ৪ বারের সংসদ সদস্য তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক আহ্বায়ক এর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২২ সালে আমান উল্লাহ আমান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কাজের মেয়াদ ১৯৯১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কাজের মেয়াদ অক্টোবর ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত। নিষ্ঠার সাথে দ্বায়িত্ব কর্তব্য পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া, তৎকালিন ঢাকা-৩ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য কাজের মেয়াদ ১৯৯১ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০০৬ পর্যন্ত। রাজনৈতিক জীবন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে যোগদানের মাধ্যমে আমান রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি বিএনপির ঢাকা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় ছিলেন। এছাড়া ১৯৯০-৯১ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদলে নেতা হিসেবে তিনি সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মাধ্যমে । তিনি ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের (ডাকসু) সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতা ছিলেন তিনি, যার ফলে জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জননিরাপত্তা বিরোধী ৫৭টি মামলায় আমান উল্লাহ আমানকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ৯ মে ২০০৮ তারিখে, ৬ মার্চ ২০০৭ তারিখে দায়ের করা একটি চাঁদাবাজির মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তার স্ত্রীও এই মামলায় একজন আসামি ছিলেন। যুবলীগের এক রাজনীতিকের হত্যা মামলা থেকে আমান উল্লাহ আমানের নাম অব্যাহতি দেওয়ার জন্য কেরানীগঞ্জ মডেল থানার একজন প্রাক্তন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলো স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকার। ৯ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে তেতুলঝোরা এবং আমিনবাজারে গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। ২০১৪ সালের নভেম্বরে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কর্তৃক ঘোষিত সাধারণ ধর্মঘটের সময় সহিংসতার জন্য দায়ের করা চারটি মামলায় ২০১৪ সালে আমানকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ তারিখে, পুলিশ হেফাজত থেকে একজন আসামীকে ছিনিয়ে নেওয়ার মামলায় আমানকে কারাগারে পাঠানো হয়। ছেলে ইরফান ইবনে আমানকে ঢাকা-২ সংসদীয় আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি কর্তৃক মনোনীত করা হয় ।
১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমান উল্লাহ আমান বিএনপির মনোনয়নে ঢাকা-৩ আসন থেকে নির্বাচন করে ৯৭,২৯৯ ভোট লাভ করেন ও তৎকালীন আওয়ামী যুব লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি , আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে পরাজিত করে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নেতা কেরানীগঞ্জের (বাঘ) মোস্তফা মহসিন মন্টু নৌকা মার্কা প্রতীকে ৬৬,২২০ ভোট পেয়েছিলেন।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন এবং ও ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে ১,২৪,০৯৬ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শাহ জাহান ৫২,৬৬২ ভোট পেয়েছিলেন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নসরুল হামিদ বিপুকে পরাজিত করে ১,৬৯,৯৮০ ভোট পেয়ে পুনরায় বিজয়ী হন।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নসরুল হামিদ বিপু ৮৯,৩৭৫ ভোট পেয়েছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি সরকার গঠন করলে আমান প্রথমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০০১ পুনরায় তার দল সরকার গঠন করার পর তাকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় যা তিনি ২৮ অক্টোবর ২০০৬ সাল পর্যন্ত পালন করেন।দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শ্রম ও জনশক্তি প্রতিমন্ত্রী দ্বায়িত্ব পালনকালে ২০০৪ সালে, তিনি জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মহাপরিচালক জুয়ান সোমাভিয়ার সাথে দেখা করে জনকল্যাণ উন্নয়নমূলক আলোচনা করেন। (নব্বইর গণ- গণঅভ্যুত্থান ও কিছু কথা বই থেকে) চলমান - ১৩
|