এমএম রহমাতুল্লাহ: উপমহাদেশের সবচেয়ে পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী দল বাংলাদেশ মুসলিম লীগের দশম জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে শনিবার। সকাল সাড়ে দশটায় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হবে। অধিবেশনে জাতীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের উত্তরসূরী। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর শেখ মুজিবুর রহমানের গড়া সেক্যুলার আওয়ামী লীগ সরকার দলটিকে নিষিদ্ধ করলেও ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ আইনি বৈধতা পায়। এরপর আবদুস সবুর খান বাংলাদেশে মুসলিম লীগকে পুনর্গঠন করে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। মুসলিম লীগের অপর নেতা শাহ আজিজুর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন। আগেই উল্লেখ করেছি, ১৯০৬ সালে ঢাকায় নবাব স্যার সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজন ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর, নিখিল ভারত মুসলিম লীগ ভেঙ্গে পাকিস্তান মুসলিম লীগ গড়ে ওঠে এবং পূর্ব পাকিস্তানে দলটি ক্ষমতায় আসে। কিন্তু ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রদেশটিতে যুক্তফ্রন্টের হাতে প্রাদেশিক আইনসভার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীকালে ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তান মুসলিম লীগ তিনটি পৃথক দল কনভেনশন লীগ, কাউন্সিল লীগ ও কাইয়ুম লীগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগের জন্ম হলেও শেখ মুজিবুর রহমানের গড়া সেক্যুলার আওয়ামী লীগ সবসময়ই দলটির বিরোধিতা করতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পূর্ব পাকিস্তান থেকে সদ্যগঠিত বাংলাদেশে দল তিনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতি সৈয়দ এবি মাহমুদ হোসেনের জারিকৃত রাজনৈতিক দল নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশের ফলে দল তিনটি বৈধতা অর্জন করে। এরপর উভয় দল একীভূত হয়ে ১৯৭৬ সালের ৮ আগস্টে একটি একক রাজনৈতিক দল হিসেবে গঠিত হয়। পরবর্তীতে এটি ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ সালে নিবন্ধন লাভ করে। ১৯৭৮ সালে এটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়েছিল। আবদুস সবুর খান দলটির রক্ষণশীল অংশের এবং শাহ আজিজুর রহমান উদারপন্থী অংশের নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীতে শাহ আজিজুর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন। আবদুস সবুর খানের নেতৃত্বাধীন দলটি ১৯৭৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে ২০ টি আসন জিতেছিল। সবুর খানের মৃত্যুর পর বাংলাদেশ মুসলিম লীগ একাধিক ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এর দুটি বিভক্ত অংশের নাম বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, যেগুলো বর্তমানে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিবন্ধিত। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ইতিহাসে ৪ জন প্রধানমন্ত্রীর ২ জন ছিলেন মুসলিম লীগ নেতা। বাংলাদেশ মুসলিম লীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মহসীন রশিদ এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল খায়ের। এর আগে ২৪ জুলাই, ২০২৪ ইং তারিখে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি, সাবেক এমপি এডভোকেট বদরুদ্দোজা সুজা শারীরিক অসুস্থতার কারণে দলের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি চান। বর্তমানে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ বাংলাদেশের একটি অন্যতম জনপ্রিয় দল। বলাই বাহুল্য, দেশের বেশীরভাগ রাজনৈতিক দলের বর্তমান নেতৃবৃন্দের প্রায় সবাই মুসলিম লীগের উত্তরসূরী।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : মো: তাজুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়: ২১৯ ফকিরের ফুল (১ম লেন, ৩য় তলা), মতিঝিল, ঢাকা- ১০০০ থেকে প্রকাশিত ।
ফোন: ০২-৭১৯৩৮৭৮ মোবাইল: ০১৮৩৪৮৯৮৫০৪, ০১৭২০০৯০৫১৪
Web: www.dailyasiabani.com ই-মেইল: [email protected]