রিকি শেখ গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : প্রেমের টানে হাজার মাইল দূর চীন থেকে লিউ সিলিয়ান নামের এক চীনা যুবক ছুটে এসেছেন বাংলাদেশের গোপালগঞ্জে। প্রেমিকা সীমা আক্তারের জন্য তার এই যাত্রা শুধু প্রেমের গভীরতাই নয়, বরং দুই দেশের সংস্কৃতির এক অপূর্ব মিলনও ঘটিয়েছে।
এই যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্ব হওয়া নতুন কিছু নয়। তবে সেই বন্ধুত্ব থেকে প্রেম, আর প্রেম থেকে সরাসরি বাংলাদেশে এসে বিয়ের সিদ্ধান্ত—নিশ্চয়ই এক অনন্য দৃষ্টান্ত। প্রেমিকা সীমা আক্তার জানিয়েছেন, প্রায় ছয় মাস আগে ফেসবুকে লিউ সিলিয়ানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর প্রতিদিন কথা বলা, ভিডিও কল এবং সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠে গভীর সম্পর্ক।
প্রেমিক লিউ সিলিয়ান চীনের একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কিন্তু প্রেমের কাছে কোনো বাধাই টেকেনি। দুই মাস ছুটি না পেয়ে শেষ পর্যন্ত চাকরি ছেড়ে বাংলাদেশে আসার কঠিন সিদ্ধান্ত নেন। তার এই সিদ্ধান্তই প্রমাণ করে, তার ভালোবাসা কতটা নিঃস্বার্থ ও ত্যাগের।
গত বৃহস্পতিবার রাত ২টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন লিউ সিলিয়ান। প্রেমিকার বাবা মো. আবুল হোসেন হাওলাদার নিজে তাকে রিসিভ করে নিয়ে আসেন গোপালগঞ্জের নিচুপাড়া এলাকায়। সেখানে সীমার পরিবারের সদস্য ও পাড়া-প্রতিবেশীরা ভিড় করেন তাকে দেখার জন্য।
লিউ সিলিয়ান নিজের ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নাম রাখেন মো. সাদেকুর রহমান সানি। এরপর এফিডেভিট করে এবং কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে সীমাকে বিয়ে করেন। শুধু তাই নয়, গতকাল রোববার ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
সীমার বাবা বলেন, “ছেলে ও মেয়ের একে অপরের প্রতি ভালোবাসা দেখে পরিবারও রাজি হয়ে যায়। দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হয় এবং সোমবার আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।”
সীমা আক্তার বলেন, “আমি খুবই খুশি। কারণ, আমার ভালোবাসার মানুষ হাজার মাইল দূর থেকে এসেছে শুধু আমাকে বিয়ে করার জন্য। সে সত্যিই ভালো মনের একজন মানুষ এবং আমাকে খুব ভালোবাসে।” তিনি আরও বলেন, “আমি জানতাম, যদি সে সত্যি ভালোবাসে, তাহলে অবশ্যই আসবে। আর সে তা করে দেখিয়েছে।”
সীমার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “প্রথমে আমরা কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু ছেলেটির আচরণ দেখে বুঝতে পেরেছি, সে সত্যিই ভালো মনের মানুষ।” এলাকাবাসীরাও তার সাহস ও ভালোবাসার গল্পে মুগ্ধ।
সানি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ খুব ভালো। সীমা ও তার পরিবার আমাকে আপন করে নিয়েছে। আমি সীমাকে খুব ভালোবাসি।” তিনি জানান, এক মাসের মধ্যে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সীমাকে চীনে নিয়ে যাবেন। তিনি আরও বলেন, “আমি সবার দোয়া চাই, যেন সীমাকে সারাজীবন ভালোবাসতে পারি।”
নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণের বিষয়ে সানি বলেন, “ভালোবাসার জন্য আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। এখন আমি মো. সাদেকুর রহমান সানি। সীমার পরিবারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, তারা আমাকে তাদের পরিবারের একজন হিসেবে গ্রহণ করেছে।”
|