মোমিন মেহেদী
বাংলাদেশকে কখনোই ভালো না বেসে পারেন নি যারা; তারা আজো জীবন্ত ইতিহাসের পাতায়। সেই ইতিহাসের রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে যেতে বলতে তৈরি হই আলোর কথা-ভালোর কথা। আর একারণেই সাহসের সাথে বলছি- পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার পর এবার মৃত্যুকূপ হলো আধুনিক ঢাকার বনানী। বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউর এফ আর টাওয়ার নামের ২২তলা ভবনের কয়েকটি ফ্লোর আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে। আগুনে ২৫ জন নিহত ও ৭৫ জন আহত হয়েছে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৭১ জন নিহত ও ৬৭ জন আহত হয়। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বনানীতে ঘটল এই মর্মান্তিক ঘটনা। আধুনিক ঢাকায় কোনো ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে এত প্রাণহানির ঘটনা এই প্রথম। আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রাণ মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পৃথক চারটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি উদ্ধারকারী দল ভবনে প্রবেশ করে। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দলও ভেতরে যায়। বিভিন্ন তথ্য সূত্র থেকে জানতে পেরেছি- ভবনের ৭ থেকে ১১ তলা পর্যন্ত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এফ আর টাওয়ারের ৯ তলা থেকে ১৩ তলা পর্যন্ত পাঁচটি ফ্লোর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। ফাল্গুনের তপ্ত দুপুরেও ধোঁয়ার কারণে ওই এলাকা ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। ধোঁয়ায় আটকেপড়া অসংখ্য মানুষ বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিল। এই আকুতি তৈরি করেছে আমার মত অসংখ্য মানুষের মনে প্রশ্নের পর প্রশ্ন। তবে উত্তর এসেছে দায়সাড়া গোছের। আর একারণেই বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, দায়সাড়া গোছের রাষ্ট্রপরিচালনাকারীদের জন্যই যে ২২ তলা ভবনটির সবকটি ফ্লোরেই কোনো না কোনো অফিস আছে, আর নিচের দুটি তলায় মার্কেট; সেই সহ¯্র মানুষের ভবনটিতে ১২ জন করে ধারণ ক্ষমতার তিনটি লিফট ও জরুরি সিঁড়ি আছে দুটি। বেজমেন্টে পার্কিং আছে। আগুনের পর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে লিফট বন্ধ হয়ে যায়। প্রচন্ড ধোঁয়ার কারণে সাততলা থেকে উপরে যারা ছিল তারা সিঁড়ি দিয়ে নামতে পারেনি। যে কারণে একাধিক ব্যক্তিকে লোহার রড হাতে নিয়ে ভবনের কাচ ভাঙতে দেখা যায়। যাতে ভাঙা কাচ দিয়ে ধোঁয়া বেরিয়ে যায়। অন্যান্য ফ্লোরেও একইভাবে ধোঁয়া বের করার জন্য আটকেপড়া লোকজন কাচ ভেঙে দেন। আতঙ্কিত মানুষ লাফিয়ে নিচে পড়ে। কেউ কেউ পাইপ বা তার বেয়ে নিচে নামেন। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে লাফ দিয়ে অন্য ভবনে চলে যান। অসহনীয় জ্যাম আর জনারণ্যের কারনে নির্মম চুড়িহাট্টা ট্রাজেডি, বনানী ট্রাজেডি সহ প্রায় সকল ট্রাজেডিতে ফায়ার সার্ভিস ইউনিট পৌছেছে দেরিতে। তবুও আমাদের ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- আগুন দ্রুততার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে বনানী-গুলশান এলাকায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেত। ভবনটির ফায়ারের ছাড়পত্র ছিল কিনা, বা নকশার বাইরে ভবনে কিছু ছিল কিনা খতিয়ে দেখা হবে। ফায়ার সার্ভিস দেরিতে আসা ও অগ্নিনির্বাপণের কাজ বিলম্বের প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল। তা ছাড়া আমাদের অত্যাধুনিক গাড়িগুলো সম্পূর্ণ ডিজিটাল। এগুলো সেট করতে কিছুটা সময় লাগে। ভবনে সোফা সেট, পর্দাসহ সিনথেটিকের তৈরি বিভিন্ন উপকরণ ছিল, যা অতিমাত্রায় দাহ্য। এগুলো থেকে প্রচন্ড ধোঁয়া হওয়ায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রচন্ড বেগ পেতে হয়। আমরা আগুন পেয়েছি ১২ ও ১৩ তলাতে। আগুন ৮ তলা থেকেও উঠতে পারে ৯ তলা থেকেও উঠতে পারে। তবে আমরা ১২ তলাতে আগুন পেয়েছি। আগুন কোন ফ্লোরে কীভাবে লেগেছে তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। আমরা আটকে পড়া অন্তত ১০০ জনকে উদ্ধার করেছি। উঁচু ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা বিশ্বের সবচাইতে বিপজ্জনক ফায়ার ফাইটিং। ভবনটির দুই পাশে খালি জায়গা ছিল না। এ ধরনের ভবনে আগুন লাগলে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। আমাদের ২২টি টিম কাজ করেছে। শুরুতে ডিফেন্সিভ ও পরে অফেন্সিভ মুডে কাজ করি। আগুন লাগার খবর পাওয়ার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। রাস্তায় যানজটের বিষয়টিও আপনার বিবেচনায় রাখতে হবে। কোথায় থেকে আগুনের সূত্রপাত সেটা তদন্ত করে বলা যাবে। প্রাথমিক সার্চে ভেতরে কেউ আটকা পড়েনি। আমরা বড় লেডার দিয়ে উদ্ধার করেছি। ভবনের এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে লোকজন চলে গেছে। চরম বাস্তবতা হলো- নির্মম অগ্নিকান্ডগুলোর পর আমরা দেখেছি যে, আগুনের কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, নির্মাণজনিত ত্রুটি অনুসন্ধানসহ এ ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ করার জন্য চারটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ফায়ার সার্ভিস এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এসব কমিটি করেছে। বাংলাদেশে সমস্যায় আক্রান্ত জনগনের জন্য সমাধান নিয়ে কে কি ভেবেছে আমার জানা নেই। তবে আমি বরাবরই সমস্যা দেখলে সমাধানের জন্য নিরন্তর রাজনৈতিক কর্মসূচী ও লেখালেখি করে যাচ্ছি। কেন যেন কানে বাজছে- নরককুন্ডের ক্ষেত্র যেন ‘তৈরি হয়েই ছিল’; যেভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল চকবাজারের আগুন; ক্যানেস্তারাগুলো কাজ করেছে ‘বোমার মত’। অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর এক কর্মী কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন আজগর লেনের পাশে। কিন্তু সরু রাস্তা দেখে কোন পথে যাবেন, তা নিয়ে পড়েন দ্বিধায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন- ‘মানুষ পালাচ্ছিল। কেউ বলছিল হায়দার বক্স দিয়ে যেতে, কেউ বলছিল আজগর লেন দিয়ে ঢুকতে। আজগর লেনের উত্তর মাথা থেকে চুড়িহাট্টা মসজিদের সামনের আগুন দেখা যাচ্ছিল। তখন আজগর লেন দিয়েই গাড়ি ঢুকালাম। আগে আসলে কী হবে? প্রায় সাড়ে ৪ হাজার লিটার পানির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন গাড়িটি সরু রাস্তা দিয়ে ঢুকাতে বেগ পেতে হয়েছে চালককে। চালক আমাদের বলে, ‘ভাই গাড়ি আজগর লেনের রাস্তা দিয়ে ঢুকবে না’। তখন আমরা চালককে অভয় দিয়ে ঢুকাই। গাড়িটি যদি তখন না ঢোকানো যেত, তাহলে আগুন আরও উত্তরে চলে আসত। রাস্তায় যানজট থাকলেও বোর্ড অফিসের সামনে দিয়ে আমার গাড়ি লালবাগ ফায়ার স্টেশন থেকে আনতে সময় লেগেছে ৩ মিনিট ৫২ সেকেন্ড। গাড়ি ঢোকানোর পরই ফায়ারম্যান শাহজালাল আর দিপুল পাইপ টান দিয়ে নামিয়ে পানি ছুড়তে শুরু করেন। আগুনের তীব্রতা দেখে আরও ইউনিটের প্রয়োজনের কথা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানান তিনি। অগ্নিকান্ডস্থল থেকে সোয়া এক কিলোমিটার দূরত্ব থেকে লালবাগ ফায়ার স্টেশনের গাড়ি আসার পরপরই চলে আসে পলাশী ফায়ার স্টেশনের গাড়ি। ভয়াবহ এই আগুন নেভাতে আরও ৩৫টি ইউনিট পরে যুক্ত হয়। এত কিছুর পরও সত্য কথাটি হলো- রাস্তা সরু হওয়ার কারণে হাইরাইজ ভবনে অগ্নিনির্বাপণের জন্য আমাদের যেসব গাড়ি আছে, তার একটাও ঢোকেনি। ওই সব গাড়ি ঢোকানো গেলে আরও তাড়াতাড়ি আগুন নেভানো যেত। কারণ সরু রাস্তা আর এ ধরনের অবস্থায় প্রচুর ক্রাউডি হয়।’ উন্নত বিশ্বে যেখানে আগুন লাগে, সেখানেই পৌছে যায় অত্যাধুনিক ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। শুধু পৌছে গিয়েই শেষ নয়; উদ্ধার করার জন্য একদিকে থাকে ক্রেন, উন্নমানের ট্রলি সহ বিভিন্ন উদ্ধার যন্ত্র এবং পানি বোঝাই গাড়ি। অথচ বাংলাদেশে? তা নেই-ই, বরং গিয়ে আগুন নেভাতে পানি খুঁজতে থাকে। কোথাও নেই পানি উত্তলন যন্ত্রও। এমন অনেক কারনেই আজ যখন গবেষষার চেষ্টা করি, তখনজানতে পারি- বাংলাদেশে নানা ধরনের দুর্ঘটনায় যতই প্রাণ যায়, তার ৭১ শতাংশই কেড়ে নেয় সড়ক। অর্থাৎ, বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় ১০০ জন নিহত হলে তার ৭১ জনই প্রাণ হারায় সড়ক দুর্ঘটনায়। দুর্ঘটনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জীবনহানি ঘটছে নৌপথে। ২০১৮ সালে দেশে সাত ধরনের দুর্ঘটনায় যত মানুষ মারা গেছে, তার ১৮ শতাংশই প্রাণ হারিয়েছে নৌ দুর্ঘটনায়। জীবন কেড়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে পরের অবস্থানে রয়েছে আগুন। গত বছর দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে শতকরা প্রায় ২ জন নিহত হয় অগ্নিকান্ডের ঘটনায়। গত মাসে আগুনে চুড়িহাট্টায় ৭১ জন নিহত হওয়ার পর বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুনে ২৫ জনের প্রাণ যায়। অর্থাৎ, এ বছরের প্রথম তিন মাসে অগ্নিকান্ডের এ দুটি বড় দুর্ঘটনায় ৯৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ সংখ্যা ২০১৬-১৭ সালে অগ্নিকান্ডে সারা দেশে নিহতের সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৩৫০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১ হাজার ৬৯ জন। আগের বছর সড়ক দুর্ঘটনায় জীবন গেছে ২ হাজার ২১৭ জনের। যদিও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা এর কয়েক গুণ বেশি। সরকার প্রদত্ত তথ্য সবসমই বাংলাদেশে সীমিত এসেছে। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী এই সংখ্যা দ্বিগুন ছাড়িয়ে গেছে। কারণ হিসেবে বহু বিষয় থাকলেও একটি বিষয় সবচেয়ে বড়; আর তা হলো- অপরিকল্পিত নগর। আইন না মানার প্রবণতা। কর্তৃপক্ষের অবহেলা। সব মিলিয়ে মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে বাস রাজধানী ঢাকার মানুষের। পুরনো ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকা হিসেবে খ্যাত নিমতলী ও চুড়িহাট্টায় আগুনের বিভীষিকার কথা এখনও কেউ ভুলতে পারেনি। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার অভিজাত এলাকা হিসেবে খ্যাত বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে ফারুক-রুপায়ন টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মুহূর্তের মধ্যে নিভে গেল ২৫ তাজা প্রাণ। প্রশ্ন হলো, কত অশ্রুজলে থামবে এমন মৃত্যু। কত স্বজনহারা মানুষের গগনবিদারী আর্তনাদে কর্তৃপক্ষের টনক লড়বে। কত অসহায় পরিবার বাড়লে কার্যকর হবে আইন। কত বিপর্যয়, চোখের সামনে বিভীষিকাময় মৃত্যু হলে গড়ে উঠবে নিরাপদ নগরী। বাড়বে নাগরিক সচেতনতা। প্রশ্নগুলো ফের সামনে এসেছে। নগরীর ৯৫ ভাগ ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ভবনে অগ্নি নিরাপত্তায় নেয়া হয়নি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। যেমন ছিল না বনানীর এফআর টাওয়ারে। ভবনটির সিঁড়িপথও ছিল অপ্রতুল। অনুমোদনহীন কয়েকটি তলা বাড়ানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই এফআর টাওয়ারের চারপাশে গা ঘেষে ঘেষে নির্মাণ করা হয়েছে একের পর এক সুউচ্চ ভবন। অথচ বিল্ডিং কোড অনুযায়ী এক ভবন থেকে অন্য ভবনের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম রয়েছে। চরম বাস্তবতা হলো- এফআর টাওয়ার থেকে বেরিয়ে আসার জরুরী পথ ছিল না; যা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক। ফায়ার এক্সিট বা আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জরুরী নির্গমন পথ থাকলে হয়ত এত হতাহত হতো না। কিংবা আগুন নেভানোর নিজস্ব ভাল ব্যবস্থা থাকলে ক্ষয়ক্ষতি এতটা হতো না। তাছাড়া বিল্ডিং কোড অনুযায়ী- প্রতিটি ভবনে থাকতে হবে স্মোক ডিটেক্টর বা ধোঁয়া শনাক্তকারী যন্ত্র। এই যন্ত্র বসানো হলে কোন তলায় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা এর ওপর উঠে গেলেই একটি শব্দ করে ভবনের সবাইকে সতর্ক করে দেবে। থাকবে হিট ডিটেক্টর সিস্টেম। এই যন্ত্র বসানো হলে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে সবাইকে জানিয়ে দেবে। এ ছাড়া একজন অগ্নিনির্বাপক কর্মকর্তা থাকবেন, যিনি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সবকিছু তদারক করবেন। সুউচ্চ ভবনে হেলিপ্যাড থাকা বাধ্যতামূলক। প্রতি সাড়ে ৫০০ বর্গফুট আয়তনের জন্য একটি করে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকতে হবে। এরপরও প্রতি তিন মাস পর পর ফায়ার ড্রিল বা অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সুউচ্চ ভবনে কমপক্ষে দুটি সিঁড়িপথ থাকবে। এমনটা হলে আর হারাতে হতো না তাজা প্রাণগুলো। সবকিছুর নেপথ্য কারণ দুর্নীতি। ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজউক সহ সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রেই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অসংখ্য ভবন নির্মিত হচ্ছে। ঝুঁকি বাড়ছে আমাদের মৃত্যুর। এমতবস্থায় সকল সেক্টরের দুর্নীতি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি সময়ের আলোচিত দৈনিক এশিয়া বানীর প্রকাশক জনাব তাজুল ইসলামের যুক্তিনুসারে ভ্রাম্যমান ফায়ার সার্ভিস পয়েন্ট প্রত্যাশা করছি। তাঁর মতে যদি চকবাজারে ফায়ার সার্ভিস যথাযথ সময়ে পৌছতে পারতো, তাহলে কিছু প্রাণ হয়তো আরো বেঁেচ যেতো, ক্ষয় ক্ষতিও কম হতো। একই কথা বনানী বা গুলশানের বেলাও। যেহেতু একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছেই, সেহেতু সতর্কতার সাথে ভ্রাম্যমান ফায়ার সার্ভিস ইউনিট কিছু গুরুত্ত্বপূর্ণ ও ঝুঁকির্পূর্ণ এলাকায় রাখলে নিরাপত্তায় অগ্রসর হবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি আমি ব্যাক্তিগতভাবে চাই ঋরৎব যুফৎধহঃ -এর ব্যবস্থা করা হোক। যেহেতু ১ কিলোমিটার দূরের পুকুর থেকে পানি সংযোগ দেওয়া হয়েছিলো চকবাজারে। মানুষের পায়ের চাপে সেই পানি প্রবাহ বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো; সেহেতু তার থেকে উত্তরণের জন্য ঋরৎব যুফৎধহঃ খুবই জরুরী। যা আমাদের দেশের রাজনীতিক বা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ভাবেনইনি। অথচ ১৮০১ সালে আবিষ্কার হয়েছে। ২১৮ বছরেও এদেশে কোথাও ঋরৎব যুফৎধহঃ লাগানো হয়নি। আমরা কি এতটাই পিছিয়ে?’ হ্যাঁ, আমরা রাজনীতি-ক্ষমতা আর দুর্নীতির গ্যারাকলে পড়ে অনেক পিছিয়ে আছি। পুরো জাতি পিছিয়ে আছে। কেননা, প্রতিদিন এই দেশে শত কোটি টাকার রাজনৈতিক কর্মসূচী পালিত হয়; দুর্নীতি হয় অন্তত ৩ থেকে ৪ শত কোটি টাকার। চাঁদা ওঠে ঠেলা গাড়ি-রিক্সা-সিএনজি-বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে বড় বড় জুয়ার কোটে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৭০ কোটি টাকা। তবু বাংলাদেশ পিছিয়ে যায়, কারণ একটাই এই টাকা জনগনের রক্ত চুষে চুষে পাচার হয় আমেরিকায়-মালয়েশিয়ায়-অস্টেলিয়ায়-কানাডায়-লন্ডনে আর রাশিয়া বড় বড় পতিতার দেশে। বউকে নিয়ে দেশে থাকেন নেতারা, বিদেশ গেলে সেখানে থাকেন রক্ষিতাদের সাথে। তাই গজব নেমে আসে বাংলাদেশে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য সবসময় বলে এসেছেন নীতিহীন নেতা-দুর্নীতিবাজদের বেলায় তিনি জিরো টলারেন্সে। কিন্তু তার ক্ষমতার এই মসনদ তো ধরে রেখেছেন নেতা নামক জুয়ারী-চাদাবাজ-জঙ্গী-সন্ত্রাসী আর আমলা-প্রশাসনের রাঘব বোয়ালরা। তারা যেভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিকে ঘোরায়, সেদিকেই ঘোরে বাংলাদেশ। পাশাপাশি শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-সমাজ এমনকি ধর্মীয় কমূসূচীও চলে তাদের মত করে। তারা হয়তো জানেই না যে, এই ঢাকায় ৩০৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় আড়াই কোটি লোক থাকে (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২৩০০০+ জন) আর কোন দুর্ঘটনা ঘটতেছে না বলে বলে মুখে ফেনা উঠাচ্ছেন নীতি আদর্শ বিবর্জিত রাজনীতি ও প্রশাসনিক কর্তাগন। উত্তরণ প্রয়োজন, খুবই প্রয়োজন তাই সবার প্রতি অনুরোধ জানাই- চলুন নিবেদিত থাকি সত্য-সাহস-আদর্শ আর নীতির সাথে সকল সমস্যা সমাধানের জন্য নিরন্তর...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি ও প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় পরিবেশধারা
|