বাংলার জন্য ক্লিক করুন
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * স্কুল-কলেজে সমাবেশে পাঠের জন্য নতুন শপথ ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি   * জুনে রিজার্ভ দাঁড়াবে ৩০ বিলিয়ন ডলার: গভর্নর   * আমাকে ‘বিদেশি’ বললে অন্যের গায়েও পড়তে পারে: নাগরিকত্ব নিয়ে খলিলুর   * অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কারখানায় হামলা হলে ছাড় দেবে না সরকার   * শেরপুরে নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপরে   * উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইনসের ইঞ্জিনে আগুন   * শিগগির যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু করবে রাশিয়া-ইউক্রেন: ট্রাম্প   * জামিন পেলেন নুসরাত ফারিয়া   * ভারতের ১৫টি আমের চালান বিমানবন্দর থেকে ফেরত দিল যুক্তরাষ্ট্র   * গাজায় বড় আকারের স্থল অভিযান শুরু করল ইসরায়েল  

   মতামত -
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                 
বিশ্বের সবচেয়ে বড় খোয়ার বা জেলখানা

ফিরোজ মাহবুব কামাল: যখন কোন জায়গার চারপাশে দেয়াল বা কাঁটা তারের বেড়া দেয়া হয়, তখন সে জায়গাটি একটি নতুন পরিচয় চায়। সেটি গরু ছাগলের খোঁয়াড় অথবা জেলখানার। কারণ খোঁয়াড় বা জেলখানার চার পাশেই উঁচু দেয়াল বা কাঁটাতারের বেড়া থাকে। বাংলাদেশের চারপাশে সেরূপ বেড়া দিয়েছে ভারত। ইউরোপে ৫০টি দেশের পাশাপাশি অবস্থান। দেশগুলির মাঝে কাঁটাতারের বেড়া নাই। দক্ষিণ আমেরিকায় ১২টি সার্বভৌম রাষ্ট্র; সেখানেও কাঁটাতারের বেড়া নাই। আরব বিশ্বে ২২টি রাষ্ট্র; সেখানেও নাই কোন কাঁটা তারের বেড়া। কারণ, সভ্য মানুষেরা কখনোই প্রতিবেশীকে চোর ডাকাত ও গরু ছাগল ভাবে না। ফলে তাদের থেকে বাঁচতে কাঁটা তারের বেড়া দেয়না। প্রশ্ন হলো, ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী শাসকচক্রের মানসিকতা বুঝার জন্য কি কোন গবেষণার প্রয়োজন আছে? কাঁটা তারের এ বেড়াই কি যথেষ্ট নয়?

২১ বছরের পাকিস্তানী আমলে ভারত এরূপ বেড়া পূর্ব পাকিস্তান ঘিরে দেয়নি। এ দেয়াল একান্তই ১৯৭১’য়ের অর্জন। ফলে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খোঁয়াড় বা জেলখানায়। এ খোঁয়াড় বা জেলখানায় ১৮ কোটি মনুষ্য প্রাণীর বসবাস। ভারত পরিণত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ইসরাইলে। ইসরাইলও একই ভাবে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে গাজা ও ফিলিস্তিনের অন্যান্য অংশকে ঘিরে। ফিলিস্তিনকে পরিণত করেছে জেলখানায়। আরব মুসলিমদের সাথে ইসরাইলে যেরূপ আচরণ, ভারতেরও সেরূপ আচরণ বাংলাদেশীদের সাথে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, এ ভারতীয়দেরকেই একাত্তরের চেতনাধারীরা অকৃত্রিম বন্ধ মনে করে!

জেলখানার বাসিন্দাদের কথাবলা, লেখালেখি ও মিটিং-মিছিলের স্বাধীনতা থাকে না। নির্বাচনে অংশ নেয়া ও ভোটদানের স্বাধীনতাও থাকে না। বাংলাদেশীদেরও সে স্বাধীনতা ছিল না মুজিব শেখ ও হাসিনা শেখের শাসনামলে। স্বাধীন ভাবে কথা বললে, লেখালেখি করলে বা মিটিং-মিছিল করলে নির্যাতিত হতে হতো এবং লাশ হতে হতো। এ ছিল একাত্তরে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবস্থা –যা নিয়ে একাত্তরের চেতনাধারীরা আবার উৎসবও করে!

কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ভারত বুঝাতে চায়, বাংলাদেশের জনগণ গরু ছাগল অথবা ডাকাত। তাই জেলখানাই তাদের জন্য বাসস্থান। বাংলাদেশীদের জন্য এরচেয়ে বড় অপমান আর কি হতে পারে? অথচ এ অবধি বাংলাদেশের কোন সরকারই ভারতের এ নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেনি। বরং ভারতের সাথে নতজানু সম্পর্ক রেখে চলেছে। কারণ মুজিব শেখ থেকে শুরু করে হাসিনা শেখ অবধি অতীতের সবগুলি সরকারই ছিল ১৯৭১’য়ের চেতনাধারী। একাত্তরের এ চেতনা ভারতের প্রতি অনুগত হতে শেখায়। এবং ভারতকে মনিব বলতে শেখায়। একাত্তরের এ চেতনার ফলে অধিকৃত হয়েছে বাঙালি মুসলিমের চেতনার মানচিত্র এবং অসম্ভব করেছে স্বাধীন ভাবে বেড়ে উঠা। তাই স্বাধীন ভারে বাঁচতে হলে দাফন করতে হবে একাত্তরের হিন্দুত্ববাদী ও বাঙালি ফ্যসিবাদী বয়ান। ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর ভারতসেবক স্তাবকশ্রেণী ভেগে যেত বাধ্য হয়েছে। এখন সময় এসেছে একাত্তরের হিন্দুত্ববাদী ও বাঙালি ফ্যসিবাদী চেতনামুক্ত নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের।

তবে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের আগে নতুন চেতনা নির্মাণ করতে হবে। সে চেতনা নির্মাণে ফিরে যেতে হবে রাষ্ট্র নির্মাণের ইসলামী বয়ানে। সে জন্য ফিরে যেত হবে মুসলিমদের নিজস্ব বয়ানে। সে কাজে অনুসরণ করতে হবে নবীজী (সা:)’র রাষ্ট্র নির্মাণের ভাবনা ও সূন্নত। সভ্য ও উন্নত রাষ্ট্র নির্মাণের জিহাদে নবীজী (সা:)’র সে সফল সূন্নত ছাড়া কি ভিন্ন পথ আছে? সেটি হোক আজকের বাঙালি মুসলিমদের রাজনৈতিক সাধনা। এ সাধনা আরব মুসলিমদের বিশ্বশক্তিতে পরিণত করেছিল। এ পথে চলে বাংলাদেশও পেতে বিশ্বের মঞ্চে সম্মানজনক আসন। এবং একমাত্র এ পথেই মুসলিমগণ প্রিয় হতে পারে তাদের সর্বশক্তিমান রব’য়ের কাছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় খোয়ার বা জেলখানা
                                  

ফিরোজ মাহবুব কামাল: যখন কোন জায়গার চারপাশে দেয়াল বা কাঁটা তারের বেড়া দেয়া হয়, তখন সে জায়গাটি একটি নতুন পরিচয় চায়। সেটি গরু ছাগলের খোঁয়াড় অথবা জেলখানার। কারণ খোঁয়াড় বা জেলখানার চার পাশেই উঁচু দেয়াল বা কাঁটাতারের বেড়া থাকে। বাংলাদেশের চারপাশে সেরূপ বেড়া দিয়েছে ভারত। ইউরোপে ৫০টি দেশের পাশাপাশি অবস্থান। দেশগুলির মাঝে কাঁটাতারের বেড়া নাই। দক্ষিণ আমেরিকায় ১২টি সার্বভৌম রাষ্ট্র; সেখানেও কাঁটাতারের বেড়া নাই। আরব বিশ্বে ২২টি রাষ্ট্র; সেখানেও নাই কোন কাঁটা তারের বেড়া। কারণ, সভ্য মানুষেরা কখনোই প্রতিবেশীকে চোর ডাকাত ও গরু ছাগল ভাবে না। ফলে তাদের থেকে বাঁচতে কাঁটা তারের বেড়া দেয়না। প্রশ্ন হলো, ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী শাসকচক্রের মানসিকতা বুঝার জন্য কি কোন গবেষণার প্রয়োজন আছে? কাঁটা তারের এ বেড়াই কি যথেষ্ট নয়?

২১ বছরের পাকিস্তানী আমলে ভারত এরূপ বেড়া পূর্ব পাকিস্তান ঘিরে দেয়নি। এ দেয়াল একান্তই ১৯৭১’য়ের অর্জন। ফলে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খোঁয়াড় বা জেলখানায়। এ খোঁয়াড় বা জেলখানায় ১৮ কোটি মনুষ্য প্রাণীর বসবাস। ভারত পরিণত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ইসরাইলে। ইসরাইলও একই ভাবে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে গাজা ও ফিলিস্তিনের অন্যান্য অংশকে ঘিরে। ফিলিস্তিনকে পরিণত করেছে জেলখানায়। আরব মুসলিমদের সাথে ইসরাইলে যেরূপ আচরণ, ভারতেরও সেরূপ আচরণ বাংলাদেশীদের সাথে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, এ ভারতীয়দেরকেই একাত্তরের চেতনাধারীরা অকৃত্রিম বন্ধ মনে করে!

জেলখানার বাসিন্দাদের কথাবলা, লেখালেখি ও মিটিং-মিছিলের স্বাধীনতা থাকে না। নির্বাচনে অংশ নেয়া ও ভোটদানের স্বাধীনতাও থাকে না। বাংলাদেশীদেরও সে স্বাধীনতা ছিল না মুজিব শেখ ও হাসিনা শেখের শাসনামলে। স্বাধীন ভাবে কথা বললে, লেখালেখি করলে বা মিটিং-মিছিল করলে নির্যাতিত হতে হতো এবং লাশ হতে হতো। এ ছিল একাত্তরে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবস্থা –যা নিয়ে একাত্তরের চেতনাধারীরা আবার উৎসবও করে!

কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ভারত বুঝাতে চায়, বাংলাদেশের জনগণ গরু ছাগল অথবা ডাকাত। তাই জেলখানাই তাদের জন্য বাসস্থান। বাংলাদেশীদের জন্য এরচেয়ে বড় অপমান আর কি হতে পারে? অথচ এ অবধি বাংলাদেশের কোন সরকারই ভারতের এ নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেনি। বরং ভারতের সাথে নতজানু সম্পর্ক রেখে চলেছে। কারণ মুজিব শেখ থেকে শুরু করে হাসিনা শেখ অবধি অতীতের সবগুলি সরকারই ছিল ১৯৭১’য়ের চেতনাধারী। একাত্তরের এ চেতনা ভারতের প্রতি অনুগত হতে শেখায়। এবং ভারতকে মনিব বলতে শেখায়। একাত্তরের এ চেতনার ফলে অধিকৃত হয়েছে বাঙালি মুসলিমের চেতনার মানচিত্র এবং অসম্ভব করেছে স্বাধীন ভাবে বেড়ে উঠা। তাই স্বাধীন ভারে বাঁচতে হলে দাফন করতে হবে একাত্তরের হিন্দুত্ববাদী ও বাঙালি ফ্যসিবাদী বয়ান। ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর ভারতসেবক স্তাবকশ্রেণী ভেগে যেত বাধ্য হয়েছে। এখন সময় এসেছে একাত্তরের হিন্দুত্ববাদী ও বাঙালি ফ্যসিবাদী চেতনামুক্ত নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের।

তবে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের আগে নতুন চেতনা নির্মাণ করতে হবে। সে চেতনা নির্মাণে ফিরে যেতে হবে রাষ্ট্র নির্মাণের ইসলামী বয়ানে। সে জন্য ফিরে যেত হবে মুসলিমদের নিজস্ব বয়ানে। সে কাজে অনুসরণ করতে হবে নবীজী (সা:)’র রাষ্ট্র নির্মাণের ভাবনা ও সূন্নত। সভ্য ও উন্নত রাষ্ট্র নির্মাণের জিহাদে নবীজী (সা:)’র সে সফল সূন্নত ছাড়া কি ভিন্ন পথ আছে? সেটি হোক আজকের বাঙালি মুসলিমদের রাজনৈতিক সাধনা। এ সাধনা আরব মুসলিমদের বিশ্বশক্তিতে পরিণত করেছিল। এ পথে চলে বাংলাদেশও পেতে বিশ্বের মঞ্চে সম্মানজনক আসন। এবং একমাত্র এ পথেই মুসলিমগণ প্রিয় হতে পারে তাদের সর্বশক্তিমান রব’য়ের কাছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে যা করণীয়
                                  

ফিরোজ মাহবুব কামাল: একটি দেশের জনগণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তার স্বাধীনতা। এটিই হলো যে কোন সভ্য ও স্বাধীন দেশের জন্য খরচের সবচেয়ে বড় খাত। স্বাধীনতার বিপরীত হলো শত্রু দেশের পদতলে গোলামী। তখন বাঁচতে হয় গলায় গোলামীর শিকল ঝুলিয়ে। গোলামদের জন্য অসম্ভব হয় নিজ ধর্ম, নিজ আশা-আকাঙ্ক্ষা, ইজ্জত ও স্বাধীনতা নিয়ে বেড়ে উঠা। তাই যারা স্বাধীনতা ও ইজ্জত নিয়ে বেড়ে উঠতে চায় তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজ দেশের স্বাধীনতা বাঁচানোর সর্বাত্মক প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনে সর্বশক্তি দিয়ে যুদ্ধ। এর বিকল্প নেই।

মুসলিম দেশের স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে জনগণের মনে গড়তে হবে সুস্থ ও শক্তিশালী ইসলামী চেতনা। এবং সে চেতনাকে অবশ্যই শত্রুর বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে হবে। কারণ ইসলামী চেতনার ভূগোলকে বাঁচাতে না পারলে মুসলিম দেশের ভূগোলকে বাঁচানো যায় না। উপমহাদেশের মুসলিমদের পাকিস্তান প্রজেক্ট ব্যর্থ হওয়ার মূল কারণ, দেশটি ১৯৪৭’য়ের প্যান-ইসলামী চেতনার ভূগোলকে জাতীয়তাবাদী, বর্ণবাদী, ফ্যাসিবাদী ও বামধারার শত্রুদের আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে পারেনি। তখন জনগণের -বিশেষ করে ছাত্রদের চেতনার ভূমি প্লাবিত হয়েছিল জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম ও সমাজতন্ত্রের ন্যায় হারাম মতবাদে। ১৯৭১’য়ে সে হারাম মতবাদ গুলির মিশ্রণ নিয়ে জন্ম নেয় পাকিস্তান ভাঙ্গার চেতনা। ইসলামের শত্রুগণ সেটিকে বলে একাত্তরের চেতনা। একাত্তরের চেতনা হলো ইসলামশূন্য ভারতসেবী সেকুলার ফ্যাসিবাদী চেতনা। এ চেতনায় মুসলিম দেশের স্বাধীনতা বাঁচে না, গণতন্ত্রও বাঁচে না। অতীতে এ চেতনাটি ভারতের গোলামী উপহার দিয়েছিল। উপহার দিয়েছিল মুজিব-হাসিনার ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন, গণহত্যা, সেনাহত্যা, গুম-খুন, ফাঁসি ও আয়নাঘর। তাই এ চেতনা বাঁচলে ভারতের গোলামিও বাঁচবে। তাই স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে একাত্তরের এই হারাম চেতনাকে অবশ্যই দাফন করতে হবে। দাফন করতে হবে স্বাধীনতা যুদ্ধের নামে গড়া ভারতসেবীদের একাত্তরের বয়ান। বাঙালি মুসলিমের স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে বস্তুত বিশুদ্ধ ইসলামী চেতনা নির্মাণে বিকল্প নাই। যারা বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক অঙ্গণের যোদ্ধা -এ পবিত্র জিহাদটি মূলত তাদের।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে ১৯৪৭`য়ের চেতনাটি গ্রহণ করতে হবে -যা বাঙালি মুসলিমদের প্রকৃত স্বাধীনতা দিয়েছিল। বুঝতে হবে বাংলাদেশের বর্তমান ভু রাজনৈতিক মানচিত্রটি একাত্তরের নয়, বরং ১৯৪৭’য়ের চেতনার অর্জন। আজও ১৯৪৭’য়ের এ চেতনাই বাংলাদেশের স্বাধীন ভূগোলকে বাঁচাতে পারে। তাছাড়া ১৯৪৭’য়ের সে চেতনাটি পবিত্রতা ছিল; সেটি সমৃদ্ধ ছিল প্যান-ইসলামী চেতনায। মুসলিম লীগের ভারত ব্যাপী স্লোগান ছিল: “পাকিস্তান কা মতলব কিয়? লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। অর্থ: পাকিস্তানের জন্ম কেন? লক্ষ্য হলো কালেমার বিজয়। এটি এক বিশাল ঈমানী ঘোষণা। ইসলামে আসাবিয়াত হারাম। ইসলামী পরিভাষায় আসাবিয়াত বলতে বুঝায় ভাষা, গোত্র, বর্ণ ও অঞ্চলের নামে মুসলিম উম্মাহর মাঝে বিভক্তি গড়া। এরূপ আসাবিয়াতী চেতনাকে ব্যবহার করা হয় উম্মাহর মধ্য ফিতনা সৃষ্টির কাজে। তাদের যুদ্ধটি মূলত মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডার বিরুদ্ধে। তারা চায় শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করতে। মহান আল্লাহ তায়ালা চান, মুসলিমদের মাঝে একতা গড়তে; আর শয়তান ও তার এজেন্টগণ চায় বিভক্তি গড়তে।

মহান আল্লাহ তায়ালা ফিতনাকে মানব হত্যার চেয়েও জঘন্য বলেছেন। খুনিদেরর লক্ষ্য মানব খুন করা, আর ফিতনা সৃষ্টিকারীদের নাশকতাটি উম্মাহর বিরুদ্ধে। তারা আঘাত হানে উম্মাহর দেহে। তাই শরিয়তী আইনে এটি শাস্তিযোগ্য গুরুতর অপরাধ। একাত্তরে বাংলাদেশ সৃষ্টির যুদ্ধ হয়েছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে। শরিয়তের দৃষ্টিতে সেটি ছিল আসাবিয়াতের যুদ্ধ। তাই এটি ছিল হারাম যুদ্ধ। তাই কোন ইসলামী দল, কোন আলেম, কোন ইমাম বা কোন পীর সাহেব পাকিস্তান ভাঙ্গাকে সমর্থন করেনি। এটি ছিল বাঙালি ফ্যাসিবাদী, সেক্যুলারিস্ট ও বামধারা নেতাকর্মীদের যুদ্ধ।

সেক্যুলারিস্টদের কাছে বিবাহবহির্ভুত যৌন জীবন তথা ব্যভিচার প্রেম রূপে নন্দিত হয়। ইসলামে সেটি জ্বিনা; জ্বিনাকারী বিবাহিত হলে শাস্তি হলো পাথর মেরে হ্ত্যা। তেমনি তাদের কাছে ভাষা, বর্ণ ও অঞ্চলের ভিত্তিকে মুসলিম দেশকে খণ্ডিত করাটি স্বাধীনতার যুদ্ধ রূপে গণ্য হয়। এবং এ হারাম যুদ্ধের নায়কগণ তাদের কাছে বীরের মর্যাদা পায়। কিন্তু দেশে আল্লাহর শরিয়তী আইন থাকলে তাদের পিঠে চাবুকের আঘাত পড়তো। নবীজী (সা:)’র আমলে সে তো শাস্তিই দেয়া হয়েছে। তাই একাত্তরের আসাবিয়াতের হারাম চেতনা বাঙালি মুসলিমদের জন্য কখনোই কোন রহমত বয়ে আনবে না। বরং আনবে প্রতিশ্রুত আযাব। তাই ফিরে যেতে হবে ১৯৪৭’য়ের কালেমা সমৃদ্ধ ইসালমী চেতনার দিকে।

বুঝতে হবে বাঙালি মুসলিমদের মূল শত্রু হলো আগ্রাসী ভারত। ভারতীয় পৌত্তলিক হিন্দুত্ববাদীরা অতীত কখনোই বাঙালি মুসলিমের বন্ধু ছিল না। আজও বন্ধু নয়। এবং ভবিষ্যতেও বন্ধু হবে না। কারণ, মুসলিমে বন্ধু হওয়াই তাদের জন্য অসম্ভব। এবং সে সত্যটি সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহর চেয়ে আর কে ভাল জানেন। তাই তিনি তাদের সাথে বন্ধুত্বকে হারাম করেছেন। ১৯৪৭ এরাই বাঙালি হিন্দুরাই মুসলিমদের সঙ্গ ছেড়ে এবং বাংলাকে বিভক্ত করে ভারত ভূমিতে অবাঙালি হিন্দুদের সাথে একাত্ম হয়েছিল। এমন ঘৃণার চেতনা নিয়ে হিন্দুত্ববাদীরা কি কখনো বাঙালি মুসলিমদের বন্ধু হতে পারে? সেটি অসম্ভব। এ ঐতিহাসিক সত্যটি যতদিন বাঙালি মুসলিমরা না বুঝবে, ততদিন তাদের বিপদ থেকেই যাবে। বুঝতে হবে, ভারতপ্রেম নিয়ে কখনোই বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঁচানো যাবে না। ১৯৭১ থেকেই সে ভারতপ্রেম গোলামী, লুণ্ঠন ও ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই দেয়নি।

স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে যেমন শক্তিশালী ইসলামী চেতনার পরিচর্যা দিতে হবে, তেমনি গড়ে তুলতে হবে শক্তিশালী সেনাবাহিনী। স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে এর বিকল্প নাই। বুঝতে হবে বাংলাদেশ ইসরাইলের চেয়ে ক্ষুদ্রতর নয়। বাংলাদেশে অর্থনীতিও পাকিস্তানের চেয়ে দুর্বল নয়। তাই বাংলাদেশের সেনাবাহিনী পাকিস্তানের চেয়ে শক্তিশালী রূপে গড়তেই হবে।

বুঝতে হবে, নানা ভাষা, নানা বর্ণ ও নানা রাজ্যের হিন্দুরা হিন্দুত্ববাদী বিশাল ভারত ভূমিতে একতাবদ্ধ। সংখ্যায় তারা ১৪০ কোটির অধিক। তারা যুদ্ধাংদেহী। বার বার দেশটির নেতারা বাংলাদেশ দখলের হুমকি দিচ্ছে। তাদের আগ্রাসনের মুখে বাংলাদেশের একার পক্ষে স্বাধীনতা বাঁচানো অসম্ভব। বুঝতে হবে, বাংলাদেশ জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন ও ইতালির চেয়ে শক্তিশালী নয়। কিন্তু এরপরও স্বাধীনতা বাঁচানোর তাগিদে ইউরোপের শক্তিশালী এই দেশগুলি একতাবদ্ধ হয়েছে ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন‌ গঠন করেছে। এটিই হলো তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা। সে প্রজ্ঞার পথ ধরতে বাংলাদেশকেও। তাই বন্ধু খুঁজতে হবে এবং তাদের সাথে বলিষ্ঠ একতা গড়তে হবে। এমন একতা ফরজ। এ ফরজ পালন না করলে স্বাধীনতা হারাতে হবে। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকেও প্রতিশ্রুত আযাব আসবে। সে আযাব আসতে পারে এমন কি পরাধীনতা রূপে। বিভক্তি গড়ার শাস্তি তাই ভয়ানক -যা বলা হয়েছে সুরা আল ইমরানের ১০৫ নম্বর আয়াতে। বাঙালি জীবনে সে শাস্তি ১৯৭১’য়ে পাকিস্তান থেকে বিভক্তির পর দেখা গেছে।

সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা মূলক বন্ধুত্ব গড়তে হবে পাকিস্তান ও তুরস্কের ন্যায় সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী মুসলিম দেশগুলির সাথে। বন্ধুত্ব গড়তে হবে চীনের সাথেও। প্রয়োজনে পাকিস্তান ও তুরস্কের সাথে সামরিক চুক্তিও করতে হবে। এটি শুধু রাজনৈতিক প্রয়োজন নয়, শরীয়তের দিক দিয়ে মুসলিম দেশগুলির সাথে এরূপ একতা ও সহযোগিতা ফরজ। এমন একতা গড়লে মহান আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। কারণ তিনি মুসলিমদের মাঝে একতা পছন্দ করেন। মুসলিমদের জন্য কিসে বিপদ সেটি তাঁর চেয়ে আর কে ভাল জানেন? এজন্যই তিনি মুসলিমদের মাঝে একতা ও সহযোগিতাকে ফরজ করেছেন এবং বিভক্তিকে হারাম করেছেন।

অপরদিকে শয়তান চায় বাঙালি মুসলিমগণ যেন অন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। সেটি শত্রু দেশ ভারতও চায়। কারণ তাতে বাংলাদেশকে দখলে রাখার কাজটি সহজ হয়। তাই বাঙালি মুসলিমদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি সর্বশক্তিমান আল্লাহকে খুশি করবে, না পৌত্তলিক কাফেরদের ও তাদের বন্ধু সেকুলার বাঙালি কাপিলিকদের খুশি করবে। বুঝতে হবে ভারতকে খুশি করার পথটি হলো গোলামীর পথ। সেটি হলো শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্ত ফ্যাসিস্ট শত্রুদের পথ। এ পথটি কখনোই স্বাধীনতার পথ হতে পারে না। বরং সেটি পরীক্ষিত গোলামীর পথও। ১৮/০৫/২০২৫

পাকিস্তান কেন ভেঙ্গে গেল?
                                  

মূল কারণটি চেতনার বৈষম্য

ফিরোজ মাহবুব কামাল: বিগত একশত বছরে মুসলিম উম্মাহর জীবনে দু্টি বৃহৎ বিপর্যয় এসেছে। প্রথমটি হলো ১৯২৪ সালে উসমানিয়া খিলাফতের বিলুপ্তি। দ্বিতীয়টি হলো ১৯৭১ সালে অখণ্ড পাকিস্তানের বিভক্তি। ঘুর্ণিঝড়ে বা ভূমিকম্পে গৃহ ভেঙ্গে গলে গৃহবাসীকে পথে বসতে হবে। তেমনি কোন দশে ভেঙ্গে গেল দেশবাসীকে নানা রূপ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়। সে বিপর্যয় থেকে বাঁচাতেই মহান আল্লাহ তায়ালা বিভক্তিকে হারাম করেছেন এবং একতাকে ফরজ করেছেন। ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়াসহ আরব বিশ্বের দেশগুলি যেভাবে অধিকৃত হলো, গাজা যেরূপ গণহত্যা ও ধ্বংস যজ্ঞের এবং সমগ্র আরব বিশ্বে জুড়ে যে স্বৈরাচারি দুঃশাসন -তার মূল কারণ হলো উসমানিয়া খেলাফতের বিলুপ্তি। উসমানিয়া খেলাফতই আরবদের ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তির আগ্রাসন থেকে বহু শত বছর যাবত নিরাপত্তা দিয়েছিল। তেমনি পাকিস্তান খণ্ডিত হওয়াতে নিরাপত্তা হারিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমগণ। অধিকৃত কাশ্মীর ও আরাকানের মুসলিমদের জীবনে যেমন গণহত্যা ও দুর্ভোগ বেড়েছে তেমনি গণহত্যা, নির্যাতন ও বঞ্চনা বেড়েছে ভারতীয় মুসলিমদের। অপর দিকে বাঙালি মুসলিমদের গণতন্ত্র, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতাও আজ ভারতীয় আগ্রাসনের মুখে। ১৯৭১’য়ের পর বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল এক ভারতীয় অধিকৃত রাজ্যে।


তবে মুসলিম উম্মাহর বিপর্যয় শুধু খেলাফত ও পাকিস্তানের ন্যায় বৃহৎ দুটি রাষ্ট্র ভেঙ্গে যাওয়া নিয়ে নয়, তার চেয়েও বড় বিপর্যয়ের কারণ, মুসলিমদের চেতনার পচন। চেতনার সে পচন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মুসলিম ভূমির বিভক্তির ন্যায় হারাম ও নাশকতার কর্ম নিয়ে মুসলিম বিশ্বে আজ বিজয় উৎসব হয়। যেমন বাংলাদেশে হয় প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর। খেলাফত ভেঙ্গেছে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ ও ফরাসী কাফিরগণ। সে কাজে তাদের সহায়তা দিয়েছে আরব জাতীয়তাবাদী ও গোত্রবাদীরা। পাকিস্তান ভেঙ্গেছে ভারতীয় পৌত্তলিক কাফিরগণ। তাদের সহায়তা দিয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা। খেলাফত ও পাকিস্তান -উভয় দেশই কাফিরশক্তি ভেঙ্গেছে তাদের নিজ স্বার্থে। এবং ভাঙ্গার পর ক্ষমতায় বসিয়েছে তাদের অনুগত দাসদের। ফলে মুসলিম বিশ্বে নতুন করে শুরু হয়েছে দাস বংশের শাসন। বিস্ময়ের বিষয় হলো, কাফিরশক্তির সে বিজয় নিয়ে মুসলিমগণ উৎসব করে। তাই বিপদ শুধু মুসলিম বিশ্বের বিভক্তি নিয়ে নয়, বরং গুরুতর বিপদ হলো মুসলিমদের ঈমানশূণ্যতা ও বিবেকশূণ্য নিয়ে। ঈমান ও বিবেক বেঁচে থাকলে কি তারা কাফির শক্তির বিজয় এবং বিভক্তির ন্যায় হারাম কর্ম নিয়ে কখনো উৎসব করতো?

পাকিস্তান কেন ভেঙ্গে গেল -তা নিয়ে অবশ্যই গবেষণা হওয়া উচিত। এবং গবেষণা হওয়া উচিত কি করে ভেঙ্গে গেল উসমানিয়া খেলাফত -তা নিয়েও। কারণ তা থেকে মুসলিম উম্মাহর শিখবার বিষয়টি বিশাল। একজন মানুষ মারা গেলে ডাক্তারগণ তার মৃত্যুর কারণ বের করার চেষ্টা করে। কারণ যে মারা যায়, সে জীবিতদের জন্য শিক্ষনীয় বহু কিছু রেখে যায়। তাই সেটি জানার জন্য এমন কি পোস্টমর্টেম করে অনুসন্ধান করা হয়। প্রয়োজনে কবর খুঁড়ে লাশ বের করা হয়। সে বিষয়টি একই ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে কোতন দেশ ভেঙ্গে গেলে। এ নিবন্ধের আলোচ্য বিষয়, পাকিস্তান কেন ভেঙ্গে গেল -সেটি। মুসলিম উম্মাহর জন্য অতিশয় ক্ষতিকর বিষয় হলো তৎকালীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ মুসলিম দেশটি ভেঙ্গে যাওয়া। পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়াতে মুসলিম উম্মাহ হারিয়েছে বহু ভাষা, বহু বর্ণ ও বহু অঞ্চল নিয়ে গঠিত এ রাষ্ট্রটি। এতে দুর্বল হয়েছে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে ভারতের গোলাম রাষ্ট্রে। এবং পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়াতে ভারত পরিণত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে, এবং স্বপ্ন দেখছে বিশ্বশক্তির হওয়ার। বস্তুত ১৭৫৭ সালে সিরাজুদ্দৌলার পরাজয়ের পর ১৯৭১’য়ে পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়াটি হলো বাঙালি মুসলিমদের জন্য দ্বিতীয় বড় বিপর্যয়।

পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়া থেকে মুসলিম উম্মাহর জন্য শিক্ষনীয় বিষয়টি বিশাল। বিশেষ করে তাদের জন্য, যারা বিশ্ব রাজনীতিতে মুসলিম উম্মাহর উত্থান ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে ভাবেন। অনেকের অভিমত, পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার মূল কারণ রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য ও অবিচার। অথচ পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ যতটা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বৈষম্য, তার চেয়ে অধিক দায়ী হলো নৈতিক ও চেতনার বৈষম্য। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝে নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বৈষম্যটি ছিল বিশাল। জনগণের নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সামর্থ্যটি গড়ে তোলে কবি-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা। তাই একটি দেশের ভূ-রাজনৈতিক ভূগোলের মতই গুরুত্বপূর্ণ হলো তার চেতনার ভূগোল বা মানচিত্র। রাজনৈতিক মানচিত্র বাঁচাতে হলে তাই সহায়ক চেতনার মানচিত্র গড়তে হয় ও সেটিকে বাঁচাতে হয়। সেটি সামর্থ্যটি উর্দু সাহিত্যের বিশাল। কারণ উর্দু সাহিত্য তার সৃষ্টি থেকে কসমোপলিটান; গড়ে উঠেছে সমগ্র ভারতের নানা প্রদেশের মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও কবি-সাহিত্যিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। ফলে এ সাহিত্যের পাঠকদের মাঝে গড়ে উঠেছে চেতনার সমতা। উর্দু সাহিত্যের নির্মাণে যেমন উত্তর প্রদেশ, বিহার ও মধ্য প্রদেশের মুসলিম জ্ঞানসাধকদের ভূমিকা রয়েছে তেমনি রয়েছে পাঞ্জাব, বাংলা, সিন্ধু ও সীমান্ত প্রদেশের জ্ঞান সাধকদের ভূমিকাও। ব্রিটিশ শাসনামলে উর্দু ভাষায় সবচেয়ে বেশী পত্রিকা ছাপা হতো বাংলার রাজধানী কলকাতা থেকে। সে আমলে উর্দু ভাষার সবচেয়ে প্রভাবশালী পত্রিকা ছিল মাওলানা আবুল কালাম আযাদের সম্পাদিত “আল হিলাল‍”; সেটিও প্রকাশিত হতো কলকাতা থেকে। ফলে উর্দু ভাষা থেকে বেশী লাভবান হয়েছিল বাঙালি মুসলিমগণ।


যুদ্ধ শুরু হয় উর্দুর বিরুদ্ধে

ব্রিটিশ আমলে বাংলার স্কুল গুলিতে মুসলিম ছাত্রদের জন্য উর্দু অথবা ফার্সি ভাষঅ বাধ্যতামূলক ছিল। কারণ বাংলা ভাষায় মুসলিম ছাত্রদের চেতনায় পুষ্টি জুগানোর মত কোন সাহিত্যই ছিল না। তাছাড়া বাংলার মাদ্রাসাগুলোতেও শিক্ষার মাধ্যম ছিল উর্দু। মাদ্রাসা ও স্কুলে উর্দু থাকায় বাংলার শিক্ষিত মুসলিমগণ উর্দু পত্রিকা ও পুস্তক পাঠের সামর্থ্য রাখতো। এমন কি বহু প্রসিদ্ধ উর্দু বই লিখেছেন বাঙালি মুসলিমগণ। ফলে বাংলার বুকে পাকিস্তানের পক্ষে প্যান ইসলামী চেতনার নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই উর্দু সাহিত্য। এতে বাংলা পরিণত হয় মুসলিম লীগের মূল দুর্গে। ইসলামের শত্রুপক্ষ বিষয়টি বুঝতো। তাই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পরই যুদ্ধ শুরু হয বাংলার বুক থেক উর্দুর নির্মূলে। সে যুদ্ধের লক্ষ্য, বাঙালি মুসলিমের চেতনায় ইসলামী জ্ঞানের পুষ্টির পথ বন্ধ করে দেয়া। সে সাথে আলিঙ্গণ করা হয় রবিন্দ্রনাথসহ অন্যান্য পৌত্তলিক হিন্দুদের রচিত হিন্দুয়ানী সাহিত্যকে। তবে এর পূর্বে বাংলার বুকে উর্দুর বিরুদ্ধে যুদ্ধটি ব্রিটিশ আমলেও হয়েছে। কলকাতা কেন্দ্রিক হিন্দু বাঙালিদের পত্র-পত্রিকা ও হিন্দু বাঙালি বাবুরা বাংলার স্কুল থেকে উর্দু বিলুপ্তির দাবী তোলে। কিন্তু বাংলার গণশিক্ষা বিভাগের ইংরেজ পরিচালক (DPI) তাদের সে দাবী গ্রহণ করেননি। তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলন বাংলা সাহিত্যে ইসলামের বিষয়ে জ্ঞানদানের জন্য পুস্তক না থাকাতেই উর্দু ও ফার্সির কোন বিকল্প নাই। সেদিন হিন্দু বাবুরা তাদের ষড়যন্ত্রে সফল হলে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাই হয়তো সেদিন মারা পড়তো।

কিন্তু উর্দুর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বার যুদ্ধ শুরু হয় ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর। প্যান-ইসলামী চেতনার বিনাশে সাহিত্য-সংস্কৃতির নামে বাঙালি মুসলিমের মনে বিষ প্রয়োগ শুরু হয়। সেটি হিন্দুদের রচিত পৌত্তলিক সাহিত্যের জোয়ার সৃষ্টি করে। পূর্ব পাকিস্তানে গভর্নর মোনেয়েম খান ষাটের দশকের মধ্য ভাগে রবিন্দ্র সঙ্গীত বন্ধের উদ্যোগ নেন। কিন্তু বাঙালি বাম ও সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীদের চাপে তিনি ব্যর্থ হন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের মাঝে ইসলামী চেতনাধারীদের সংখ্যাটি ছিল অতি নগন্য এবং দুর্বল। ফলে হিন্দুত্বাবাদী, জাতীয়তাবাদী ও বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের সৃষ্ট জোয়ার রূখতে তারা ব্যর্থ হন। পরিতাপের বিষয় হলো, পাকিস্তানের সে দুর্যোগ মুহুর্তে দেশের আলেমদের ময়দানে দেখা যায়নি। তারা ছিল নিষ্ক্রিয়; সেদিন মাদ্রাসার অঙ্গণ থেকে তারা বাইরে বের হননি।


হিন্দুদের রচিত সাহিত্যের জোয়ার আনতে সে সময় নেতৃত্ব দেয় বাঙালি জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্ট, সেক্যুলারিস্ট ও বামধারার বুদ্ধিজীবীরা। ফলে জোয়ার আসে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির। ১৯৫২’য়ের ভাষা আন্দোলন সে হিন্দুয়ানী জোয়ারকে তীব্রতর করে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গণে শহীদ মিনারের নামে পূজা স্তম্ভ, নগ্ন পদে সে স্তম্ভে ফুল দেয়া, শিখা অনির্বান, বসন্ত বরণ, সড়কে আলপনা আঁকা -এসবই হলো হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির প্রতীক। সে সহায়ক বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে দ্রুত বেড়ে উঠে আওয়ামী লীগের বাঙালি ফ্যাসিবাদী রাজনীতি। তাই যারা বলে ১৯৫২’য়ের ভাষা আন্দোলন থেকেই যুদ্ধ শুরু হয় পাকিস্তান ভেঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের -তারা মিথ্যা বলে না। এ যুদ্ধের কেন্দ্র ভূমিতে পরিণত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

বাঙালি মুসলিমের ট্রাইবালিজম বনাম পশ্চিম পাকিস্তানীদের প্যান-ইসলামিজম

গায়ের রং, পানাহার ও পোষাক-পরিচ্ছদের ভিন্নতা নিয়েও মানুষ একই ভূমিতে একত্রে বসবাস করতে পারে; কিন্তু সেটি অসম্ভব হয় নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও চেতনার ভিন্নতার কারণে। একত্রে বসবাসের জন্য শুধু রাজনৈতিক ভূগোলটি এক হলে হয় না, চেতনার ভূগোলটিও এক হতে হয়। বাঙালি মুসলিমদের সমস্যা হলো অন্য ভাষার মুসলিমদের সাথে বসবাসের নৈতিক সামর্থ্যটি অতি সামান্য। তারা বেড়ে উঠেছে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ট্রাইবালিজম নিয়ে। শেখ মুজিব সেটিকে বাঙালি বর্ণবাদী ফ্যাসিবাদে পরিণত করে। বাঙালি মুসলিমদের এ ব্যর্থতার কারণ, বাংলার বুকে অন্য ভাষী মানুষের বসবাস বড় আকারে না থাকাতে সে সামর্থ্য ও অভ্যাস তাদের গড়েই উঠেনি। তারা বাস করছে অন্য ভাষী মুসলিমদের থেকে বিচ্ছিন্ন এক ট্রাইবাল চরিত্র নিয়ে; ফলে ১৯৪৭’য়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তাদের মাঝে বিহার, উত্তর প্রদেশ, সীমান্ত প্রদেশ বা ভারতের অন্য প্রদেশ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে বসবাস করতে এসেছে তাদেরকে তারা আপন করে নিতে পারেনি। সেটির অতি সহিংস চিত্র দেখা গেছে ১৯৭১’য়ে অবাঙালিদের বিরুদ্ধে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে।

১৯৭১’য়ে নিহত অবাঙালিদের সঠিক সংখ্যটি জানার কোন সুযোগ রাখা হয়নি। অবাঙালিদের বিরুদ্ধে সেরূপ একটি নৃশংস গণহত্যা যে চলেছে সেটিই বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে এ অপরাধের অপরাধীরা গায়েব করেছে। মুজিব ও হাসিনা আমলে চলেছে বুদ্ধিবৃত্তিক ফ্যাসিবাদ; এ বিষয়ে কোন গবেষণার সুযোগ দেয়া হয়নি। তবে অনেকের ধারণা, কমপক্ষে দুই লাখ বিহারীকে একাত্তরে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষিতা হয়েছে বহু হাজার বিহারী নারী। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর সে নৃশংতার বিবরণ এখন সামনে আসতে শুরু করেছে। কারণ, সে নৃশংসতার বহু সাক্ষী এখনো বেঁচে আছে।

একাত্তরের সে নৃশংসতায় প্রতিটি অবাঙালি পরিবারকে হারাতে হয়েছে তাদের গৃহ, দোকানপাট ও চাকুরি। আশ্রয় নিতে হয়েছে খোলা আকাশের নীচে কোন এক বস্তিতে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের চিত্রটি ছিল ভিন্নতর। সেখানে পাঞ্জাবী, সিন্ধু,পাঠান ও বেলুচগণ পাশাপাশি বসবাস করছে শত শত বছর ধরে। একাত্তরে প্রায় ৪ লাখ বাঙালি পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাস করতো; তাদের অধিকাংশই সেখানে ছিল সরকারি চাকুরি সূত্রে। তারা সবাই ১৯৭৪’য়ের মধ্যেই বাংলাদেশে ফিরে আসে। বাংলাদেশে অবাঙালিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানো হলেও তার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থানরত বাঙালিদের কারো হত্যা করা হয়েছে, ধর্ষণ করা হয়েছে বা তাদের ঘরবাড়ী কেড়ে রাস্তায় বসানো হয়েছে -তার প্রমাণ নাই। এ থেকেই পরিচয় মেলে পশ্চিম পাকিস্তানীদের চেতনার। পশ্চিম পাকিস্তানের অবাঙালি মুসলিমগণ সেদিন কসমোপলিটান ও প্যান-ইসলামী চেতনার পরিচয় দিয়েছে। করাচী, লাহোর, ইসলামাদ, কোয়েটাসহ পাকিস্তানের প্রতিটি বড় বড় শহরই হলো কসমোপলিটান। এ শহরগুলিতে নানা প্রদেশের জনগণ ভিন্ন ভিন্ন উচ্চারণ নিয়ে উর্দুতে কথা বলে, কিন্তু কেউ কারো উচ্চারণ নিয়ে বিদ্রুপ করে না। কারো মুখের ভিন্ন ভাষা নিয়ে সেখানে প্রশ্ন তোলা হয়না। কিন্তু সে তূলনায় বাঙালিরা অতি আঞ্চলিক ও সংকীর্ণ মনের।


নিজ অভিজ্ঞতা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের সে কসমোপলিটান চেতনার কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। লাহোরের কিং এডওয়ার্ড মেডিক্যাল কলেজ হলো পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে পুরাতন মেডিক্যাল কলেজ। সেটি এখন বিশ্ববিদ্যালয়। কলেজের শতকরা ৯০ ভাগের বেশী ছাত্র-ছাত্রীই পাঞ্জাবী। আমি যখন সে কলেজের ছাত্র, তখন সে প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বৃহৎ ছাত্র সংগঠনের প্রধান ছিলেন একজন বাঙালি ছাত্র। সংসদ নির্বাচনে সে ছাত্র সংগঠনটিই বিজয়ী হতো। আরো বিস্ময়, লাহোরের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় হলো সমগ্র পাকিস্তানের সবচেয়ে পুরোন ও বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়। পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার পর সত্তরের দশকে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন তারিকুর রহমান নামে বাংলাদেশের শেরপুর জেলার এক ছাত্র। আরেক বিস্ময়: পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার পর করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন মহিউদ্দীন নামে নোয়াখালীর এক ছাত্র।

উপরিউক্ত এ বিষয়গুলো সামান্য বিষয় নয়, এগুলি একটি জনগোষ্ঠির চেতনার পরিচয় দেয়। বাংলাদেশে কি এটা ভাবা যায় যে, কোন বিহারী বা অন্য কোন অবাঙালি ছাত্র বাংলাদেশের কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংসদে ছাত্রদের ভোটে নির্বাচিত হবে? কিন্তু পাকিস্তানে সেটি সম্ভব। অথচ এ বাঙালিরা সত্তরের দশকে স্লোগান দিত তারা নাকি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতি! কিন্তু সেটি কিসের বলে? শ্রেষ্ঠ হতে হলে তো মনটাও বড় হতে হয়। পাকিস্তানে এখন ২০ লাখের বেশী বাঙালির বসবাস। এরা গেছে ১৯৭১’য়ে স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের পর। সেখানে তারা ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তুলেছে। অথচ বাংলাদেশে বিহারীদের বস্তিতে থাকতে হচ্ছে। তাদেরকে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর কোন জায়গা দেয়া হচ্ছে না। নেয়া হচ্ছে না সরকারি চাকুরিতে। তাদের বঞ্চিত রাখা হয়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা থেকে। অথচ এ বিশাল অবিচার নিয়ে কথা বলার মত মানবিকগুণ সমৃদ্ধ বুদ্ধিজীবী বা সাংবাদিক বাংলাদেশে তেমন একটা নাই। জার্মানীর স্কুলে ইহুদীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার ইতিহাস পড়ানো হয়। অথচ বিহারীদের বিরুদ্ধে একাত্তরে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলো সেগুলি স্থান পাচ্ছে না বাংলাদেশের ইতিহাসের বইয়ে। অথচ সেগুলিও তো বাঙালি ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশীরা কি এগুলি নিয়ে ভাববে না?

পাকিস্তানের জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৬০ জন পাঞ্জাবী। অথচ দেশটির প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ইমরান খান -যিনি একজন পাঠান। পাকিস্তানে পাঠানদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৫ ভাগ মাত্র। ইমরান খানের দল পাঞ্জাবী নওয়াজ শরীফকে হারিয়ে শুধু পাকিস্তানে নয়, পাঞ্জাব প্রদেশেও ক্ষমতাসীন হয়েছে। সিন্ধিদের সংখ্যা শতকরা ১৬ ভাগ। জুলফিকার আলি ভূট্টো ও তাঁর মেয়ে বেনজির ভূট্টো সিন্ধি হয়েও তারা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা উর্দু। অথচ দেশটির শতকরা ১০ ভাগ মানুষের মাতৃ ভাষা্ও উর্দু নয়। যে পাঞ্জাবীরা শতকরা ৬০ জন, তারা কখনোই এ দাবী তুলেনি যে পাঞ্জাবীকে দেশের রাষ্ট্র ভাষা করতে হবে। বাঙালিরা কি কোনদিন সেটি মেনে নিত? পাঞ্জাবী দেশের বৃহত্তর স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়েছে, ক্ষুদ্র আঞ্চলিক স্বার্থকে নয়।


আওয়ামী ফাসিস্টদের তাণ্ডব

পশ্চিম পাকিস্তানীদের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠছিল পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্যান-ইসলামী চেতনার ভিত্তিতে। এ চেতনার মূল কথা হলো মুসলিমগণ বেড়ে উঠবে ভাষা, বর্ণ ও অঞ্চল ভিত্তিক পরিচয়ের উর্দ্ধে উঠে মুসলিম ভাতৃত্বের পরিচয় নিয়ে। কিন্তু এর ১৮০ ডিগ্রি বিপরীত চেতনা নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে গড়ে উঠছিল বাঙালি বর্ণবাদী ফ্যাসিবাদ। এবং সে উগ্র ফ্যাসিবাদের সূতিকাগৃহে পরিণত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিপুল সংখ্যায় জন্ম নিতে থাকে পাকিস্তানের ঘরের শত্রু। একাত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঙালিদের বিরুদ্ধে “একটা একটা ছাতু ধরো, সকাল বিকাল নাস্তা করো” এ ধরণের কুৎসিত ভাষায় স্লোগান দেয়া হতো। ছাতু বলতে বুঝানো হতো অবাঙালিদের। একাত্তরের শুরুতেইব দৈহিক নির্যাতন শুরু হয় অবাঙালি ছাত্রদের উপর। ফলে তারা ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই এমন ছিল যারা এসেছিল পশ্চিম পাকিস্তান থেকে।

কুৎসিত মনের এরূপ হিংস্র বাঙালিগণ গড়ে উঠছিল ছাত্র লীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের ন্যায় ইসলামশূণ্য ছাত্র সংগঠনের ছত্রছায়ায়। পরিতাপের বিষয় হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন এরূপ অসভ্য কুৎসিত মানসিকতার চর্চা হচ্ছিল তখন তৎকালীন বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা সে অসভ্যতার বিরুদ্ধে নীরব থাকার নীতি গ্রহণ করে। ফলে এরূপ অসভ্য বর্বর মানসিকতাকে নিন্দা করে তারা একটি বাক্যও উচ্চারণ করেনি। পত্রিকায় কোন নিবদ্ধও লেখেনি। ফলে এভাবেই সবার চোখের সামনে দিনের পর দিন অবাঙালিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর জন্য সহায়ক ঘৃণা ও বিদ্বেষপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। গণহত্যার পূর্বে প্রতি দেশে ফ্যাসিবাদীরা এমনটিই করে থাকে। ইহুদীদের বিরুদ্ধে সেরূপ ঘৃণা সৃষ্টি করেছিল জার্মান ফ্যাসিস্টগণ। পূর্ব পাকিস্তানে সেরূপ একটি পরিবেশ সৃষ্টির ফল হলো, যখন বিহারীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, গণধর্ষণ ও লুটপাট চালানো হলো বাঙালি বুদ্ধিজীবী, বাঙালি মিডিয়া ও বাঙালি রাজনীতিবিদগণ সম্পূর্ণ নীরব থাকলো।

শেখ মুজিব তার ৭ মার্চের ভাষনে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থানরত সৈনিকদের অনাহারে হত্যার ঘোষনা দেয়। অবরোধ করা হয় ক্যান্টনমেন্টগুলোকে। হাতের কাছে যার যা আছে তা নিয়ে যুদ্ধে নামার ডাকা দেয়। এভাব মুজিব একটি যুদ্ধকে অনিবার্য করার চেষ্টা করছিল। অথচ পাকিস্তান সরকার আলোচনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। অথচ আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পক্ষ থেকে প্রচার দেয়া হয় বাঙালিদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।

কাদের সিদ্দিকী হাত-পা বাধা ৪ জন বিহারীকে ঢাকা স্টেডিয়ামে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছিল। এই অসভ্য আওয়ামী ফ্যাসিস্টের সে নৃশংস বর্বরতার চিত্রটি আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে প্রকাশিত হলেও ঢাকার কোন পত্রিকায় সে চিত্র প্রকাশিত হয়নি। সে নৃশংসতা তাদের কাছে কোন খবরই গণ্য হয়নি। ঢাকার মিডিয়া জগত যে কতটা বাঙালি ফ্যাসিস্টদের হাতে অধিকৃত হয়েছিল এবং নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা যে কতটা মারা পড়েছিল -এ হলো তার প্রমাণ।


অসভ্যতার চাষাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ও মিডিয়ায়

পাকিস্তান ১৯৭১’য়ের ১৬ ডিসেম্বর ভূ-রাজনৈতিক ভাবে বিভক্ত হওয়ার আগেই আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক ভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের বহু আগেই পাকিস্তানের প্যান-ইসলামী মুসলিম ভাতৃত্বের চেতনা কবরস্থ হয়েছিল আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুর্বৃত্তদের হাতে। বিহারীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা, গণধর্ষণ ও তাদের ঘরবাড়ী দখলের ন্যায় নৃশংস বর্বরতা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহল এবং দেশের বুদ্ধিজীবী মহল ও মিডিয়া মহলের লোকদের প্রতিক্রিয়াটি ছিল এমন, যেন তারা না কিছু শুনেছে, না কিছু দেখেছে। একাত্তরে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের বিবেকহীনতা ও দায়িত্বহীনতার এ হলো দলিল। উল্লেখ্য হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ একই রূপ বিবেকশূণ্যতার পরিচয় দিয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলেও। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুশত শিক্ষক বিবেকশূণ্যতায় এতোটাই নীচে নেমেছিল যে , ২০১৮সালের ভোটডাকাতির নির্বাচনকে তারা সুষ্ঠ নির্বাচন বলে যুক্ত বিবৃতি দিয়েছিল।

পশ্চিম পাকিস্তানীদের থেকে পূর্ব পাকিস্তানীদের নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বৈষম্যের বড় কারণ, বাঙালি সেক্যুলারিস্টগণ বিশ্বটাকে দেখে রবীন্দ্রনাথ এবং অন্যান্য হিন্দু সাহিত্যিকদের দৃষ্টিতে। তাদের চেতনা পুষ্টি পেয়ে থাকে তাদের রচিত সাহিত্য থেকে। ফলে পৌত্তলিক ভারতের প্রতি রবীন্দ্রনাথের মত তাদেরও আনুগত্য গড়ে উঠে। বাড়ে থাকে ভারত বন্দনাও। অখণ্ড পাকিস্তানের চেয়ে অখণ্ড ভারত তাদের কাছে বেশী প্রশংসা পেতে থাকে। সেরূপ এক প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথের পৌত্তলিক গানকে বাংলাদেশীদের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। অনেক বাঙালিরাই ভারতকে দেখে বাংলাদেশের জন্মদাতা রূপে। ভারতও তাই মনে করেন। এরই প্রমাণ, ভারতের The Time of India বাংলাদেশের সৃষ্টিতে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল ম্যানেক শ’র ভূমিকা নিয়ে একটি বিশাল নিবন্ধ প্রকাশ করে। উক্ত নিবন্ধে ম্যানেক শ’কে father of a nation অর্থাৎ বাংলাদেশের জনক বলে আখ্যায়ীত করে। উল্লেখ্য যে বাংলাদেশ সরকার তার প্রতিবাদ করেনি।

তবে প্রতিবাদ না করার কারণও রয়েছে। একাত্তরের পাকিস্তান ভাঙ্গার যুদ্ধটি ছিল শেখ মুজিবের একান্তই দলীয় যুদ্ধ। সে যুদ্ধের লক্ষ্য ছিল, ক্ষমতা দখল। শেখ মুজিবের লক্ষ্য কখনোই বাঙালির স্বাধীনতা দেয়া ছিলনা। স্বাধীনতা দেয়া লক্ষ্য হলে গণতন্ত্রকে কেন কবরে পাঠাবে? মৌলিক মানবাধিকার কেন কেড়ে নিয়ে বাকশালী স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা দিবে? তার লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশকে ভারতের একটি আশ্রিত রাজ্যে পরিণত করা। মুজিবের সে এজেন্ডা নিয়ে বাংলাদেশ শাসন করেছে শেখ হাসিনা।

একাত্তরের যুদ্ধে জনগণের সম্পৃক্ততা না থাকাতে মুক্তিবাহিনী একটি জেলা বা মহকুমা দূরে থাক, ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে যুদ্ধ শুরুর পূর্ব পর্যন্ত একটি থানাও মুক্ত করতে পারিনি। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছে আড়াই লাখ সৈন্যের বিশাল ভারতী সেনাবাহিনী। তারাই মুজিবকে ক্ষমতায় বসায়। অথচ আফগানিস্তানে যখন ১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন সৈন্যের অবস্থান, তখনও তালেবানরা শতকরা ৬০ ভাগ ভূ-খন্ডের উপর নিজেদের দখল বজায় রেখেছে। এজন্যই হাসিনার ন্যায় বাকশালীগণ বলে, ক্বিয়ামত অবধি ভারতের ঋণ শোধ দেয়া যাবে না। কথা হলো, পিতার ঋণ কি কখনো শোধ দেয়া যায়? যে পিতা, সে তো সব সময়ের জন্যই পিতা। এজন্যই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণ বাংলাদেশের পাশে কোন শত্রু দেখে না। কারণ, ভারতের ন্যায় জন্মদাতা পিতাকে তো শত্রু ভাবা যায় না।

অপর দিকে পশ্চিম পাকিস্তানীরা বিশ্বটাকে দেখে আল্লামা ইকবালের দৃষ্টিতে। ফলে তাদের রয়েছে মাথা তুলে দাঁড়ানোর জজবা। তারা ভারতকে দেখে প্রতিদ্বন্দী শত্রু রূপে। সম্প্রতি ২০২৫ সালের মে’মাসের কয়েক দিনের যুদ্ধে পাকিস্তান ভারতকে তার সামর্থ্য ভাল ভাবেই দেখিয়ে দিয়েছে। ভারত যখন পারমানবিক বোমা বানায়, তখন সে বোমা পাকিস্তানও বানায়।ভারত যখন মিজাইল বানায়, পাকিস্তানও মিজাইল বানায়। ফলে পাকিস্তান পরিণত হয়েছে ৫৭টি মুসলিম দেশের মাঝে সামরিক দিক দিয়ে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশে। অথচ বাংলাদেশ একটি রাইফেলও নিজে বানানোর প্রয়োজনীতা বোধ করে না। সেটিকে অপচয় মনে করে। কারণ স্বাধীন ভাবে বাঁচার আগ্রহ গোলামদের থাকে না। ভারতসেবী বাঙালি ফ্যাসিস্ট, সেক্যুলারিস্ট ও বামধারার কাপালিকগণ একাত্তরে বাংলাদেশীদের মনে সে গোলামী চেতনাকেই নির্মাণ করেছে। এমন গোলামী চেতনা নিয়ে কি স্বাধীন ও নিরাপদ দেশ নির্মাণ করা যায়? পাকিস্তান ভেঙ্গে গেছে বস্তুত চেতনার অঙ্গণে এরূপ বিশাল পার্থক্যের কারণে।


সামনে নতুন ভাবনা

২০২৪ য়ের জুলাই-আগস্ট বিপ্লব শুধু হাসিনার বিরুদ্ধে ছিলনা; সে লড়াইটি ছিল মুজিব-হাসিনার স্থাপিত ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ আজ হাসিনামুক্ত, সে সাথে ভারতমুক্তও। ফলে সুযোগ এসেছে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের। মনে রাখতো হবে বাঙিলত্ব বা সেক্যুলারিজম নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঁচানো যাবে না। শুধু গণতন্ত্র দিয়েও এ স্বাধীনতা বাঁচানো যাবেনা। স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণে অবশ্যই ১৯৪৭ সালের ইসলামী দর্শনকে ধারণ করতে হবে। একমাত্র সেরূপ দর্শনই স্বাধীনতার পক্ষে বয়ান বা যুক্তি তৈরী করে। সে ইসলামী দর্শনই ১৯৪৭ সালে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সামর্থ্য দিয়েছিল। সে দর্শনের সামর্থ্য তাই পরীক্ষিত। আজও বাংলাদেশের সামনে ভিন্ন পথ নাই।

স্বাধীনতা বাঁচানোর খরচটি বিশাল। সে খরচ জুগানোর সামর্থ্য বাঙালি মুসলিমদের একার নাই। একতা তাই অনিবার্য। এবং সেটিই মহান আল্লাহ তায়ালার বিধান। রাশিয়া ভীতি জার্মান, ফরাসী, ইতালীয়, স্পানিশ, ডাচ, পোলিশদের ন্যায় ইউরোপীয়দের ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন নির্মাণে বাধ্য করেছে। একই রূপ ভারত ভীতি বাঙালি মুসলিম নেতাদের ১৯৪৭’য়ে অখণ্ড পাকিস্তান নির্মাণে বাধ্য করেছিল। তাছাড়া শত্রুরা একতাবদ্ধ। বাঙালি, গুজরাতী, মারাঠী, বিহারী, পাঞ্জাবী, তামিল ও অসমিয়া হিন্দুদের ন্যায় সকল হিন্দুরা আজ একতাবদ্ধ। অথচ হিন্দুধর্মে এরূপ একতা ফরজ নয়। অথচ একতা ফরজ হলো মুসলিমদের উপর। একতা গড়লে খুশি হন মহান আল্লাহ তায়ালা। বিভক্তি গড়লে খুশি হয় শয়তান। ১৯৭১’য়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও তাদের অনুসারী বাঙালিগণ শয়তান ও তার পৌত্তলিক খলিফাদের খুশি করার পথ বেছে নিয়েছিল।

বাঙালি মুসলিমদেরও আজ অবশ্যই বেছে নিতে হবে মহান আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করার পথ -যেমনটি বেছে নিয়েছিলেন ১৯৪৭‌’য়ের বাঙালি মুসলিম নেতাগণ। সেটি অন্য মুসলিমদের সাথে একতার পথ। বিভক্তিতে অবাধ্যতা হয় সর্বশক্তিমান মহান রব’য়ের হুকুমের। আর যারা অবাধ্য হয়, তাদেরকে নানা রূপ আযাব দিয়ে শাস্তি দেয়াই তার সূন্নত। সেটি হতে পারে শত্রু শক্তির গোলামী, শোষণ, নির্যাতন ও মৃত্যু। শেখ মুজিব তো বিভক্তি গড়ে এবং পাকিস্তান ভেঙ্গে বাঙালি মুসলিমদের জন্য সে শাস্তিই ডেকে এনেছিল। ফলে আযাব এসেছিল ভারতের অধিকৃতি, দুর্ভিক্ষ ও ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন রূপে। ফলে সামনে বাঁচার পথটি হতে হবে একতাবদ্ধ উম্মাহ রূপে বেড়ে উঠার।

তাই আজকের বাঙালি মুসলিমদের লক্ষ্য হতে হবে শুধু গণতন্ত্র নয়, শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক সুবিচারও নয়। এগুলি কল্যাণকর। তবে এগুলি বিভক্তির আযাব থেকে বাঁচাবে না। বাঁচাবে না বাঙালি মুসলিমদের স্বাধীনতাকেও। সে আযাব থেকে বাঁচতে হলে এবং নিজেদের স্বাধীনতাকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই একতার পথ ধরতে হবে। একমাত্র এ পথেই বাঙালি মুসলিমদের স্বাধীন ভাবে বেড়ে উঠা নিশ্চিত হতে পারে। ১৬/০৫/২০২৫

ভারত-পাকিস্তান; রাশিয়া-ইউক্রেন; ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধ থামিয়ে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার মাধ্যমে ট্রাম্প কি শান্তি স্থাপনের হ্যাট্রিক করতে পারবেন? বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
                                  

আব্দুল খালেক খোন্দকার : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল মঙ্গলবার সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে তিন দিনের সফর হিসেবে প্রথম সৌদিতে গেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরাবিয়া সহ কাতার এবং ইউনাইটেড আরব আমিরাত ভ্রমণ করছেন। ইসরায়েলে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা বাতিল করছেন। তার এই ভ্রমণ একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। বলা হচ্ছে যে তিনি সৌদি আরব থেকে এক ট্রিলিয়ন বিনিয়োগে আশা করছেন। আবার এ গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষাণা দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারেন।

এসব ঘটনা পর্য্যালোচনা করে বাংলাদেশী বিশ্লেষক ও দৈনিক এশিয়া বাণীর প্রধান পৃষ্টপোষক মোঃ তাজুল ইসলাম বলেছেন, ট্রাম্প পাকিস্তান ও ভারতের রক্তাত সংঘাত বন্ধ করেছেন। ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনষ্কি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন আলোচনায় বসছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তুরষ্কে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সেখানে যোগদান করবেন বলে জানা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ট্রাম্প চীনের সাথে বানিজ্যে শুল্ক বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে বন্ধুত্বের সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। প্রতি উত্তরে চীনও সমানভাবে শুল্ক কমানো সহ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম বলেন, মধ্যপ্রাচ্য সফরের ভিতরেই ট্রাম্প যদি ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেন তবে পাকিস্তান-ভারত; রাশিয়া-ইউক্রেন ও গাজা-ইসায়েল তিনটি মারাত্নক যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে তিনি শান্তি স্থাপনের হ্যাট্রিক করতে পারেন। আর তিনি এটা করতে সক্ষম হলে গোটা পৃথিবী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিকট কৃতজ্ঞ থাকবে। তাঁর নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এবং শান্তিতে নোবেল পুরুষ্কার পদকটি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুঁজে বেড়াবে। ইতোমধ্যে সবাই বলছে যে এই অশান্ত পৃথিবীতে ট্রাম্পের হাত ধরেই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর এটি ট্রাম্পের প্রথম সৌদি সফর। সৌদির পর কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবেন ট্রাম্প।
রিয়াদে টারম্যাক বিমানবন্দরে ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়েছেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। বিশিষ্ট ব্যক্তি ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ট্রাম্প ও যুবরাজ সালমানকে বেগুনি কার্পেটে হেঁটে যেতে দেখা গেছে। এ ছাড়া দুই নেতাকে একে অপরের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা গেছে।
ইসরায়েলকে থামাতেই হবে। নচেৎ তারা শিশু ও সাধারন মানুষ একজনকেও বাঁচতে দিবে না। আর এ কাজটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষেই সম্ভব।
এদিকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাস মার্কিন ইসরায়েলি এক জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। গাজায় থাকা এ জিম্মিকে মুক্তির পরও উপত্যকায় বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। এতে আরও অন্তত ৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
জানা যায়, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে। সোমবারের হামলায় অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। এদিকে হামাস গোষ্ঠী একজন মার্কিন-ইসরায়েলি সেনা এডান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গাজার ওপর ইসরায়েলের অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। গাজার পুরো জনগোষ্ঠী দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের চলমান হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫২ হাজার ৮৬২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এ হামলায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত এক লাখ ১৯ হাজার ৬৪৮ জন। অন্যদিকে সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা হাজারো মানুষ নিখোঁজ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন যে, তার দেশ যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু করতে মধ্যস্থতাকারীদের কাতারে পাঠাবে। নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা স্থগিত থাকবে।

পিনাকী ভট্টাচার্যের কৃতিত্ব ও বিতর্কিত বিষয়
                                  

ফিরোজ মাহবুব কামাল: পিনাকী ভট্টাচার্য একজন অতি জনপ্রিয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক, লেখক এবং বুদ্ধিজীবী। বাংলাদেশের রয়েছে তার বহু লক্ষ ভক্ত। তার রয়েছে দেশের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতিকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা। আমি নিজেও তার ব্লগের একজন নিয়মিত শ্রোতা। অভিভূত হই তার বাচনভঙ্গি, উপস্থাপন, গভীর বিশ্লেষণ, বহুমুখী জ্ঞান ও গণশিক্ষামূলক বক্তব্য দেখে। দুর্বোধ্য বিষয়কে সহজ ভাবে বোঝানোর সামর্থ্যও অতি প্রশংসনীয়। বাংলা ভাষায় আমি তার মত এতো ভাল প্রাঞ্জল ও চিত্তাকর্ষক উপস্থাপক খুব একটা দেখিনি। ভিডিও উপস্থাপনাকে তিনি শুধু জ্ঞানদানের বাহনে নয়, বিনোদনের মাধ্যমে পরিণত করেছেন। এখানেই তাঁর কৃতিত্ব। হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও কোন কোন ভিডিও’তে ইসলাম ও মুসলিমদের বিষয়ে যা বক্তব্য রাখেন সেটি অতি প্রশংসনীয়। সে কাজটি অনেক মুসলিমও করছে না। কোন হিন্দুর পক্ষে থেকে এরূপ কাজ আগে হয়নি।


কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করি। সেটি হলো ১৯৭১ নিয়ে তার বিচার-বিশ্লেষণ ও বয়ান। একাত্তর নিয়ে তার বয়ানটি ইসলামপন্থীদের বয়ান থেকে ভিন্ন। আমি মনে করি, তার উচিত একাত্তর প্রসঙ্গে ইসলামপন্থীদের দৃষ্টিভঙ্গিকে সঠিক ভাবে জানা। দেশের সংহতি, বিভক্তি ও বিচ্ছন্নতা নিয়ে ইসলামের সুস্পষ্ট হালাল-হারামের বিধান রয়েছে। প্রতিটি ঈমানদারকে মেনে চলতে হয় সে বিধানকে। আলেমদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতভেদ থাকলেও একটি মুসলিম দেশকে খণ্ডিত করা যে হারাম -তা নিয়ে তাদের মাঝে কোন বিরোধ নাই। তাই কোন ইসলামী দল, কোন মুফতি বা আলেম এবং কোন পীর সাহেব বা ইমাম সাহেব পাওয়া যাবে না যারা একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙ্গাকে সমর্থন করেছে।

পাকিস্তান ভাঙ্গা ছিল আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কম্যুনিস্ট পার্টি ও হিন্দুত্ববাদীদের প্রজেক্ট। তাদের সে প্রজেক্টের সাথে একাত্ম ছিল ভারত, ইসরাইল ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। যারা পাকিস্তান ভাঙ্গার বিরোধীতা করেছিল তাদেরকে কি স্বাধীনতার বিরোধী বলা যাবে? বিচ্ছিন্নত আর স্বাধীনতা এক বিষয় নয়। একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হয়েছে, স্বাধীন হয়নি। বরং ভারতে একটি আশ্রিত গোলাম রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ১৯৭১’য়ের পূর্বেই বাঙালি মুসলিমগণ পূর্ণ স্বাধীন ছিল। এমন কি আওয়ামী লীগও তাদের ১৯৭০’য়ের নির্বাচনি মেনিফেস্টোতে আঞ্চলিক বৈষম্যের কথা বললেও পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলাকে কোথাও পরাধীন বলে উল্লেখ করেনি। একাত্তরে যারা অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল তাদের সুস্পষ্ট ও বলিষ্ঠ বয়ান রয়েছে। বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদী শাসকচক্র ও ফ্যাসিস্ট বুদ্ধিজীবীগণ ইসলামপন্থীদের সে বয়ান এতো কাল সামনে আসতে দেয়নি। পিনাকীর উচিত, সেটি জানা। সে জানলে একাত্তর প্রসঙ্গে তাঁর বয়ান বস্তুনিষ্ঠ হতো।

বুঝতে হবে, ১৯৭১’য়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে দুটি বিপরীতধর্মী রাজনৈতিক বয়ান প্রচলিত ছিল। একটি ছিল ইসলামপন্থী ও পাকিস্তানপন্থীদের বয়ান, অপরটি হলো ইসলাম থেকে দূরে সরা সেক্যুলারিস্ট, জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্ট, হিন্দুত্ববাদী ও বামপন্থীদের বয়ান। লক্ষনীয় হলো,উল্লেখিত দ্বিতীয় পক্ষটির অধিকাংশই ভারতপন্থী। এ দুটি ভিন্ন বিপরীতমুখী রাজনৈতিক বয়ান এখনো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেঁচে আছে। এবং বেঁচে আছে তাদের অনুসারীরাও। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা গর্তে ঢুকলেও একাত্তরের সেক্যুলার বয়ান এখন ফেরি করছে বিএনপি। পিনাকী ভট্টাচার্যের বক্তব্য থেকে মনে হয়, তিনি একাত্তর প্রসঙ্গে ইসলাম বিরোধী সেক্যুলারিস্ট শিবিরের বয়ানকেই সঠিক মনে করেন। এবং ভান্ত ও অপরাধী মনে করেন ইসলামপন্থীদের। তিনি বিশ্বাস করেন একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙার যুদ্ধটি সঠিক ছিল। এমন কি একাত্তরের ২৫ শে মার্চের গণহত্যার জন্য ইসলামপন্থীদের দায়ী মনে করেন।

২০১৩ সালে শাহবাগী ফ্যাসিস্টদের আন্দোলন চলা কালে ইসলামপন্থীদের অপরাধী আখ্যায়ীত করে পিনাকী একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন। সে বিবৃতির ভাষ্যকে তিনি আজও সঠিক মনে করেন। সে বিবৃতিতে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, ২৫ শে মার্চের গণহত্যার পরও ইসলামপন্থীরা কেন অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষ নিল? কেন তারা পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রীসভায় যোগ দিল? ২৫ শে মার্চের গণহত্যার পরও অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষ নেয়া এবং পূর্ব পাকিস্তানের মন্ত্রীসভায় অংশ নেয়াকে তিন যুদ্ধাপরাধ মনে করেন। এক্ষেত্রে তিনি বাঙালি ফ্যাসিস্ট, সেকুলারিস্ট, হিন্দুত্ববাদী ও বামধারার লোকদের পূর্ণ অনুসারী। বস্তুত সেরূপ এক অভিন্ন চেতনার কারণেই তিনি ২০১৩ সালে শাহবাগের মঞ্চে ইসলাম বিরোধী ফ্যাসিস্টদের সাথে একাত্ম্য হতে পেরেছিলেন। তিনি সাম্প্রতিক এক ভিডিও’তে বলেছেন শাহবাগীদের মঞ্চে যাওযার জন্য তিনি তাওবা করেছেন। কিন্তু লক্ষণীয় হলো, তাওবা করলেও একাত্তর প্রসঙ্গে এখনো তিনি সেই পুরনো ইসলামবিরোধী সেকুলার শাহবাগী বয়ানের পুনরাবৃত্তি করে থাকেন এবং পাকিস্তানপন্থীদের অপরাধী বলেন। এটি কি পিনাকীর দ্বিচারিতা নয়?

কেন এ নিবন্ধ?

পিনাকী ভট্টাচার্যের বহু বক্তব্যের সাথে আমি একমত। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এবং ভারতীয় আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তার বহু বক্তব্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সহায়ক। আমি নিজেও সে যুদ্ধে বহু দশক যাবত জড়িত। তার বহু ভিডিও ভাল লাগে বলেই আমি অন্যদের কাছে সেগুলি ফরোয়ার্ড করে থাকি। কিন্তু এর অর্থ এ নয়, ১৯৭১ প্রসঙ্গে যেগুলিকে আমি সঠিক এবং যেগুলিকে ভ্রান্ত মনে করি -সেগুলিকে লুকিয়ে যাবো। তখন তো অপরাধ হবে সত্য গোপনের। ১৯৭১ প্রসঙ্গে আমার নজরে পড়েছে পিনাকী ভট্টাচার্যের কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক বিভ্রাট। লক্ষ্যনীয় হলো, হাসিনার পতন হলেও হাসিনাপন্থীদের কিছু একাত্তরের কিছু সেক্যুলার বয়ান তিনি প্রচার করে চলেছেন। তাতে নতুন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংহতি প্রতিষ্ঠার পথটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি একাত্তরের পাকিস্তানপন্থীদের এখনো যুদ্ধাপরাধী বলছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টি করছেন। তাঁর ১১ই মে’র ভিডিও তার প্রমাণ। তাতে ভারতীয় RAW এবং ভারতপন্থী ফ্যাসিস্টগণ দারুন ভাবে লাভবান হচ্ছে। তাই এ বিষয় নিয়ে কিছু কথা তুলে ধরা আমি জরুরি মনে করি। এজন্যই এ নিবন্ধটি লেখা। আশাকরি গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি তিনি বুঝার চেষ্টা করবেন।

বুঝতে হবে চিন্তার মডেলটি

কোন একটি ঘটনার বিশ্লেষণে বিচারকের রায় কিরূপ হবে -সেটি নির্ভর করে বিচারকের চেতনায় ধারণকৃত চিন্তার মডেল (pradigm of thought)’‌য়ের উপর। কারণ, মগজে ধারণকৃত চেতনার সে বিশেষ মডেলটি নির্ধারণ করে দেয় তার সিদ্ধান্ত, কর্ম ও বিচার কিরূপ হবে -সেটি। কোটি কোটি মানুষ একই ভূগোল, একই ভাষা, একই আলো-বাতাস, একই রূপ পানাহার ও একই আকাশের নিচে বসবাস করলেও সবার চেতনার রূপ ও বয়ান এক নয়। সবাই একই ঘটনা কি আমরা একই ভাবে দেখিনা। একই ঘটনার একই রূপ বিচারও করি না। ‌চেতনার মডেলের ভিন্নতার কারণেই আমরা কেউ মুসলিম হই, কেউ হিন্দু হই, কেউ সেকুলার হই, কেউ কমিউনিস্ট হই এবং কেউ নাস্তিক হই।

তাই মানুষের বিচার, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও সংস্কৃতি পাল্টাতে হলে তার চেতনার মডেল পাল্টাতে হয়। এই ভিন্নতার উপর নির্ভর করে গড়ে উঠে ভিন্ন ভিন্ন রায়। তাই একজন ব্যক্তির বয়ান দেখে পরিচয় মেলে তার চেতনার মডেলের। কারো কুফুরি, বেইমানী, মুনাফিকি, নাস্তিকতা, পৌত্তলিকতা, ইসলাম বিরোধীতা তার গায়ে লেখা থাকে না, সেটি বোঝা যায় তার বয়ানের মধ্যে। কারণ বয়ানের মধ্যে তার চিন্তার মডেল কথা বলে। সে জ্ঞানগর্ভ কথাটি মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন এভাবে:
قُلْ كُلٌّۭ يَعْمَلُ عَلَىٰ شَاكِلَتِهِۦ فَرَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَنْ هُوَ أَهْدَىٰ سَبِيلًۭا
অর্থ: (হে নবী) বলুন, প্রত্যেক ব্যক্তিই কাজ করে তার মগজে ধারণকৃত ধারণার মডেল অনুযায়ী; অতঃপর একমাত্র তোমাদের রবই জানে সিদ্ধান্ত গ্রহণে, পথচলায়, কর্ম বা বয়ানে কে সঠিক তথা হিদায়েত প্রাপ্ত।” –(সূরা ইসরা, আয়াত ৮৪। উপরিউক্ত আয়াতে “শাকেলা” শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। Advanced Learners’ Arabic to English Dictionery এবং প্রসিদ্ধ আল মাওয়ারিদ ডিকশোনারীতে “শাকেলা” শব্দির অর্থ মডেল, অবয়ব, ফ্যাশন বলা হয়েছে। উপরিউক্ত আয়াতে বর্ণিত সে মডেল, অবয়ব বা ফ্যাশনটি ব্যক্তির দেহের নয় বরং তার চিন্তা-চেতনা ও ধারণার -যা নিয়ন্ত্রণ করে তার কর্ম, চরিত্র, বুদ্ধিবৃত্তি ও রাজনীতি। তাই একাত্তর নিয়ে পিনাকী ভট্টাচার্য যা বলেছেন তার পিছনে তাঁর মনের গভীর কাজ করছে বিশেষ একটি চিন্তার মডেল। এবং সেটি যে ইসলামী নয় তা তো সুস্পষ্ট। বরং সেটি ইসলামী জ্ঞানশূণ্য সেক্যুলারদের অনুরূপ। তাই তার বয়ানটি ২০১৩ সালের শাহবাগী ফ্যাসিস্টদের অতি কাছের।

গভীর অন্ধকারে বিশাল পাহাড়ও অদৃশ্য থেকে যায়। একই কারণ মনের জাহিলিয়াতে তথা অন্ধকারে প্রকট সত্যও অজানা থেকে যায়। সত্য না জানার কারণেই মূর্তি, গরু, সাপ, এমনকি পুরুষের লিঙ্গও পূজনীয় হয়ে ওঠে। সনাতন অজ্ঞতা তখন সনাতন ধর্মে পরিণত হয়। এজন্যই মানব জীবনের সবচেয়ে বড় জিহাদটি হলো অজ্ঞতার বিরুদ্ধে জিহাদ। অজ্ঞতাই মানুষের বড় শত্রু; কারণ সেটি মানুষকে জাহান্নামের যাত্রী করে। ‌পবিত্র কুরআনের সূরা ফুরকানের ৫২ নম্বর আয়াতে তাই মহান আল্লাহ সুবহানাতায়ালা অজ্ঞতার বিরুদ্ধে জিহাদকে “জিহাদে কাবিরা” তথা সবচেয়ে বড় জিহাদ বলেছেন। বলা হয়েছে:
فَلَا تُطِعِ ٱلْكَـٰفِرِينَ وَجَـٰهِدْهُم بِهِۦ جِهَادًۭا كَبِيرًۭا

অর্থ: “সুতরাং কাফিরদের অনুসরণ করবে না; এবং তাদের বিরুদ্ধে কুর’আন দিয়ে বড় জিহাদটি করো।” পবিত্র কুর’আনকে এখানে বড় জিহাদের অস্ত্র রূপে ব্যবহারের হুকুম দেয়া হয়েছে। জিহাদ এখানে রণাঙ্গণের সশস্ত্র শত্রুর বিরুদ্ধে নয়, বরং কাফিরদের জাহেলিয়াতের তথা অজ্ঞতার বিরুদ্ধে। সে সাথে নিজের অজ্ঞতার বিরুদ্ধেও। জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে এ জিহাদে যে ব্যক্তি ব্যর্থ হয়, তার পক্ষে আর কোন জিহাদে অংশ নয়া সম্ভব হয় না। সে তখন অজ্ঞতার জোয়ারে ভেসে যায়; বাঁচে মহান আল্লাহ তায়ালার বিরুদ্ধে বেইমানী ও বিদ্রোহ নিয়ে এবং পরিনামে সে জাহান্নামে গিয়ে হাজির হয়। ইসলামে তাই নামাজ-রোজা ফরজ হওয়ার আগে জ্ঞানার্জনকে ফরজ করা হয়েছে। এটিই হলো জাহিলিয়াত তথা অজ্ঞ থাকার শাস্তি। এমন অজ্ঞতার শাস্তি জাতীয় জীবনেও ভয়াবহ বিপদ নিয়ে আসে। বাঙালি মুসলিমদের জীবনে সে বিপদ এসেছিল ১৯৭১’য়ে।

মনের অন্ধকারের কারণে মানুষ দূর ভবিষ্যতের বিশাল বিপদ দেখতে পায়না। ভবিষ্যতের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা সে বিপদকে দেখতে হলে চাই গভীর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দুরদৃষ্টি। অজ্ঞদের সে সামর্থ্য থাকে না। তখন তারা বিভ্রান্ত হয় ও বিপদে পড়ে। তাই প্রজ্ঞা এবং দূরদৃষ্টির অভাবই জনগোষ্ঠীর জীবনে সবচেয়ে বড় বিপদটি ডেকে আনে। তখন তারা রাজনৈতিক প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে। তখন বিজয়ী করে মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্র হত্যাকারী বাকশালী প্রতারক এবং ভারতীয় এজেন্ট। ১৯৭০’য়ের নির্বাচনে মুজিবের ন্যায় দুর্বৃত্তকে বিজয়ী করে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিরা সে গভীর অজ্ঞতারই প্রমাণ দিয়েছে। সে ভূলের মধ্য দিয়ে একাত্তরে তারা মুসলিমদের পরীক্ষিত শত্রু ভারতকে বিজয়ী করেছে। এটি হলো বাঙালি মুসলিমের সমগ্র ইতিহাসের দ্বিতীয় বিপর্যয়। প্রথম বিপর্যয়টি ঘটেছিল ১৭৫৭ সালে সিরাজুদ্দৌলার পতনের মধ্য দিয়ে। তখন চেপে বসেছিল ১৯০ বছরের জন্য উপনিবেশিক বৃটিশের নৃশংস শাসন।

চিন্তার মডেল বা প্যারাডাইম কিভাবে বিচারের রায় পাল্টিয়ে দেয় তার একটি উদাহরণ দেয়া যাক। যদি একজন নারী এবং একজন পুরুষ পারস্পারিক সম্মতিতে বছরের পর বছর বিয়ে ছাড়াই যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলে তথা ব্যভিচার করে, তবে সেকুলারিস্ট ও নাস্তিকের কাছে সেটি আদৌ কোন নিন্দনীয় বিষয় নয়। বরং সেটি প্রেম রুপে নন্দিত হয়। অথচ সে একই ঘটনা একজন ঈমানদার ব্যক্তির কাছে শাস্তিযোগ্য গুরুতর অপরাধ গণ্য হয়। বিবাহিত হলে সেই অপরাধের শাস্তি হলো পাথর মেরে হত্যা; এবং অবিবাহিত হলে শহরের গণজমায়েতে হাজির করে তার পিঠে ১০০ টি চাবুকের আঘাত। এটিই শরীয়তের বিচার। এ বিচার এসেছে সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহতালার পক্ষ থেকে। উল্লেখ্য হলো, এ বিচারকে যে অমান্য বা অবজ্ঞা করে সে আর মুসলিম থাকে না, সে কাফির হয়ে যায়।

তেমনি দুটি ভিন্ন রকম রায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল একাত্তরের ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ নিয়ে। পিনাকী ভট্টাচার্যের বয়ান শুনে মনে হয়, ১৯৭১ নিয়ে তাঁর রায়টি ইসলামের উপর ভিত্তি করে হয়নি। ‌ তিনি তাঁর বিচারে ইসলামশূণ্য সেকুলার মডেলকে গ্রহণ করেছেন। বাঙালি ফ্যাসিস্ট, সেক্যুলারিস্ট, কম্যুনিস্ট, নাস্তিক বা হিন্দুত্ববাদীর বিচারে একটি মুসলিম দেশ খণ্ডিত করা অতি প্রশংসনীয় কাজ। কারণ, মুসলিম উম্মাহর দেহ কর্তনের মাঝেই তাদের বিজয় উৎসব। এখানেই পিনাকীর সাথে একজন ইসলামপন্থীর মতের ভিন্নতা। ‌ফলে তার কাছে ইসলামপন্থীরা ভ্রান্ত ও অপরাধী গণ্য হবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। তার কাছে বরং প্রশংসিত হবে এবং অতি গর্বের বিষয় মনে হবে পাকিস্তান ভাঙ্গা। এক্ষেত্রে বাঙালি ফ্যাসিস্টদের বিচার এবং ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের বিচারের সাথে পিনাকীর বিচার এক ও অভিন্ন।

এক অপরাধ কখনোই আরেক অপরাধকে জায়েজ করেনা

এ নিয়ে নিয়ে বিতর্ক নেই যে, একাত্তরে গণহত্যা ঘটেছিল। তবে সে হত্যাকান্ডের শিকার শুধু বাঙালিরা হয়নি, বরং সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে অবাঙালিরা। তবে একাত্তরের পঁচিশে মার্চের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা নিয়ে প্রচুর মতভেদ রয়েছে। প্রকৃত সংখ্যাটি কারোই জানা নেই। কারণ ইচ্ছা করেই সে হিসাব বের করা হয়নি। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে তা নিয়ে প্রচণ্ড মিথ্যাচার হয়েছে। আর মিথ্যাচারীদের আগ্রহ থাকে না সত্য আবিষ্কারে। কারণ তাতে তাদের রটানো মিথ্যাটি ধরা পড়ে যায়। কাদের সিদ্দিকী তার বই "স্বাধীনতা ৭১"য়ে লিখেছে পচিশে মার্চের এক রাতেই তিন লক্ষ মানুষকে ঢাকা শহরে হত্যা করা হয়েছে। এটি হলো পর্বত প্রমান মিথ্যা। ‌কিন্তু শর্মিলা বোসের Death Reckoning বইয়ে এ সংখ্যাটি তার ধারে কাছেও নেই। তার হিসাবে কয়েক হাজারের বেশী হবেনা। দাবী করা শাখারী পট্টিতে ৫ হাজারের বেশী নিহত হয়েছে। শর্মিলা বোস সেখানকার হিন্দুদের সাথে কথা বলে জানতে পারেন সেখানে ১৫জনও মারা যায়নি। তবে নিহতদের সংখ্যা নিয়ে যত বিতর্কই থাক, একথা কেউ বলে না যে একাত্তরে হত্যাকান্ড হয়নি। ‌ তবে বিতর্কের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো ১৯৭১’য়ে পাকিস্তান ভাঙা নিয়ে। এখানেই যত রাজনীতি ও যত বিতর্ক।

কথা হলো, একটি দেশে দেশে হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, বৈষম্য, অবিচার এরকম নানারূপ অপরাধ থাকতেই পারে। কিন্তু সে অপরাধ গুলিকে অজুহাত বানিয়ে সে দেশটিকে ভাঙ্গা আরেক বিশাল অপরাধ। ইসলামে এটি ফিতনা; এটিকে মানব হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ বলা হয়েছে। একটি দেশে প্লাবন, সুনামি, মহামারি, ভূমিকম্প ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে লাখ লাখ লোক নিহত হয়। ‌ কিন্তু তাতে একটু জাতি শত্রুর হাতে অধিকৃত হয় না, স্বাধীনতাও হারায় না। কিন্তু একটি দেশকে বিভক্ত করার অর্থ হলো, একটি জাতিকে বিভক্ত করা, দুর্বল করা এবং শত্রুর হাতে পরাজিত হওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি করা। ‌ দেশ বিভক্তির কারণে এবং শত্রু শক্তির হাতে অধিকৃত হওয়ার কারণে সে দেশে মুসলমানের জন্য পূর্ণ ইসলাম পালনই অসম্ভব হয়। সে দেশটি অধিকৃত হতে পারে ভারতের ন্যায় ‌ইসলামের শত্রু শক্তির হাতে। তখন মুসলিমদের জন্য বিপদ শতগুণ বেড়ে যায়। ‌ তখন মুসলিমগণ অধিকৃত হয়ে যায় হিন্দুত্ববাদী কাফের শক্তি হাতে। তখন মুখে দাড়ি এবং টুপি মাথায় দিয়ে রাস্তায় নামলে জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করা হয়। এবং মসজিদ গুড়িয়ে দেয়া হয়। গরুর গোশতো ঘরে রাখার সন্দেহে পিটিয়ে লাশ বানানো হয়। বাংলাদেশীরা ভারতীয় অধিকৃতি দেখেছে একাত্তরে। দেশের স্বাধীনতা তখন কবরে গেছে, দেশ নৃশংস ভাবে লুণ্ঠিত হয়েছে এবং তাতে নেমে এসেছে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। তাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেগুলিই তো ঘটেছিল একাত্তরে।

১৯৪৭’য়ের স্বাধীনতা ও একাত্তরের পরাধীনতা

বাঙালি মুসলিমগণ বহু রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল ১৯৪৭‌’য়ে, তা হারিয়েছে ১৯৭১’য়ে। বাংলাদেশের ইতিহাসের বইয়ে যে সত্যটি গোপন করা হয় তা হলো, একাত্তরের ৯ মাসে যুদ্ধ শুরুর আগে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ -এ ২৩ বছরে পাকিস্তানে কখনোই বাঙালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা হয়নি। এই ২৩ বছরের সেনাবাহিনী ও পুলিশের হাতে ২৩ জনও বাঙালি নিহত হয়নি। অথচ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বার বার গণহত্যা হয়েছে। যেমন হয়েছে শেখ মুজিবের শাসনামলে, তেমনি হাসিনার শাসনামলে। গণহত্যা হয়েছে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর রাজপথে লগি বৈঠা দিয়ে। ২০০৯ সালে গণহত্যা হয়েছে ‌পিলখানায়। গণহত্যা হয়েছে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে। এরূপ গণহত্যার পাশে অবিরাম চলেছে গুম-খুন-ধর্ষণের রাজনীতি। এবং বিশাল গণহত্যা হয়েছে ২০২৪’য়ের জুলাই-আগস্টের বিপ্লব কালে। এবং সবচেয়ে বড় গণহত্যা হয়েছে ১৯৭৪ সালে ভায়াহ দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে। এ দুর্ভিক্ষ ছিল আওয়ামী দুর্বৃত্ত শাসক শ্রেণীর সৃষ্টি। সে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষটি যৌথভাবে ডেকে আনা হয়েছিল ভারতীয় লুণ্ঠন এবং আওয়ামী দুর্বৃত্তদের লুণ্ঠনের মধ্য দিয়ে।

অতি পরিতাপের বিষয় হলো, বাঙালি মুসলিমের সর্বকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বড় অপরাধগুলো সংগঠিত হয়েছে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার পর, অখণ্ড পাকিস্তান বেঁচে থাকা কালিন সময়ে নয়। পাকিস্তানের ২৩ বছরে এক বারও দুর্ভিক্ষ আসেনি। পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার ফলে আসন্ন বিপদটি শুধু ইসলামী দলের নেতাকর্মী, মসজিদের ইমাম, পীর সাহেবগণই শুধু নয়, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামপ্রেমী ছাত্ররাও বুঝতে পেরেছিল। বুঝতে পেরেছিল মাদ্রাসার ছাত্ররাও। তাই সেসব ইসলামপন্থীদের কেউ ভারতে যায়নি এবং মুক্তিবাহিনীতে নাম লেখায়নি। বরং তাদের মধ্য থেকে বহু হাজার ছাত্র সেদিন রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, পিনাকী ভট্টাচার্যের চোখে বাঙালি মুসলিমের সে দেশপ্রেম ধরা পড়েনি। পাকিস্তান তো বাঙালি মুসলিমদেরই গড়া দেশ ছিল। মুসলিম লীগকে তারাই ঢাকাতে জন্ম দিয়েছিল। বাংলা ছিল মুসলিম লীগের দুর্গ। সে দেশের সুরক্ষায় বাঙালি নাগরিকগণ রাজাকার হবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। তাই রাজাকারদের বয়ানে সেদিন ইসলাম দেখা গেছে।

পিনাকীর অপূর্ণতা

মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলিম দেশ ভাঙ্গাকে হারাম করেছেন, এবং একতাকে ফরজ করেছেন। পবিত্র কুর’আনে সে হুকুম বার বার এসেছে। মুসলিমের রাজনীতির ভিত্তি কখনোই তার ভাষা, বর্ণ, গোত্র ও আঞ্চলিকতা হতে পারেনা। সেটি হারাম। তাকে এসব ক্ষুদ্রতার উর্দ্ধে উঠে প্যান-ইসলামী হতে। মসজিদের জায়নামাজে আরব, ইরানী, কুর্দি, তুর্কী, হাবসী ইত্যাদি কাঁধে কাঁধে লাগিয়ে নামাজে খাড়া হতে হয়। সেরূপ বুনিয়ান মারসুস তথা সীসাঢালা প্রাচীর সম একতা থাকতে হয় রাজনীতির ময়দানেও। সে সামর্থ্যটি বাঙালি মুসলিমদের জীবনে দেখা গেছে ১৯৪৭’য়ে। তারা তখন পাঞ্জাবী, পাঠান, বিহারী, গুজরাতী, সিন্ধি, বেলুচ ইত্যাদি নানা পরিচয়ের মুসলিমদের সাথে একতাবদ্ধ হয়েছে। একতাবদ্ধ হওয়ার সে সামর্থ্য না থাকাটিই চরম বেঈমানী। সে বেঈমানী দেখা গেছে বাঙালি ফ্যাসিস্ট, সেক্যুলারিস্ট, কম্যুনিস্ট ও বামধারার রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জীবনে। অথচ পিনাকীর কাছে এরূপ বেঈমানেরাই হলো প্রশংসনীয় এবং গণহত্যার দায়ে অপরাধী হলো ইসলামপন্থীরা।
পিনাকীর বয়ান থেকে বুঝা যায় বাংলাদেশের মত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাস করলেও ইসলামের মৌলিক পাঠটি তিনি পাননি। ফলে ব্যর্থ হয়েছেন তাঁর মনকে ইসলামের মৌল শিক্ষায় আলোকিত করতে। এ ব্যর্থটি অধিকাংশ বাঙালি হিন্দুর। সে অজ্ঞতার কারণে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তান ভাঙ্গার হারাম বয়ানে ইসলাম আবিস্কার করেছেন। তার এ অজ্ঞতা স্বাভাবিক। এমন কি মুসলিম নামধারিগণ অনেকেই ইসলাম থেকে দূরে সরার কারণে পাকিস্তান ভাঙ্গার বিপদ বুঝতে পারেনি। ফলে তারা ভারতের কোলে আশ্রয় নিয়েছে এবং ভারতের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতকে বিজয়ী করার যুদ্ধে নেমেছে। ভারত আজ শক্তিশালী; ভারতের এ শক্তির পিছনে তো ১৯৭১ সালের বিজয়। এবং সে বিজয় ভারতের ঘরে তুলে দেওয়ার পিছনে কাজ করেছে বাঙালি ফ্যাসিস্ট, সেক্যুলারিস্ট, কম্যুনিস্ট ও বামধারার রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা।

বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নভঙ্গ
অথচ ১৯৭১’য়ে পাকিস্তান বেঁচে গেলে বাঙালি মুসলিমের ইতিহাস ভিন্নতর হতো। পাকিস্তান হতো ৪৪ কোটি জনসংখ্যার বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তি। পাকিস্তান খন্ডিত হয়ে গেছে; কিন্তু এরপরও দেশটি ভারতের বিরুদ্ধে সমানে সমানে লড়াই করছে। বিশাল ভারত এ ক্ষুদ্র দেশটিকে হারাতে পারছে না। ‌ সেটি বুঝা গেল কদিন আগের যুদ্ধে। অখণ্ড পাকিস্তানে থাকলে সে রাষ্ট্রের ড্রাইভিং সিটে থাকতো দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী বাঙালি মুসলিমরা। অখন্ড পাকিস্তানের ২৩ বছরে চারজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন বাঙালি মুসলিম। কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর পর তার চেয়ারে বসেছিলেন বাঙালি খাজা নাজিম উদ্দিন। দেশটির তিনজন স্পিকার হয়েছেন বাঙালি। কয়েকজন প্রধান বিচারপতি হয়েছে বাঙালি। পাকিস্তানের বহু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছে বাঙালি। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের বইয়ে বাঙালি মুসলিমের সে অর্জনের ইতিহাস পড়ানো হয় না। বরং পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ ভাবতে শেখানো হয়েছে।

পাকিস্তান ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র । ভারত, ইসরাইল ও সোভিয়েত রাশিয়াসহ ইসলামের কোন শত্রু রাষ্ট্রই চায়নি পাকিস্তান বেঁচে থাকুক। বাঙালি মুসলিমরা মুজিবের নেতৃত্বে ইসলামের শত্রুদের বিজয়ী করেছে। যার হৃদয়ে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে -সে কি এতো বড় জঘন্য নাশকতার কর্ম করতে পারে? সাড়ে ১৪ শত বছরের মুসলিম ইতিহাসে উম্মাহর বিরুদ্ধে এরূপ নাশকতার কর্ম কি কখনো ঘটেছে? বাঙালি ফ্যাসিস্টগণ, সেক্যুলারিস্ট ও বামধারার লোকেরা আর কোন কারনে না হোক, মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে এই নাশকতার কারণে শত শত বছর ইতিহাসে বেঁচে থাকবে। ‌

পাকিস্তানের সামনে প্রচুর সম্ভাবনা ছিল। মুসলিমদের জন্য হতে পারতো‌ বহুভাষা ও বহুবর্ণের মানুষদের নিয়ে একটি সিভিলাইজেশনাল রাষ্ট্র - যেমনটি হয়েছিল মুসলিমদের গৌরব কালে। খেলাফত ভেঙে যাওয়ার পর একটা সিভিলাইজেশনাল স্টেট নির্মাণই ছিল বাঙালি মুসলিমদের ১৯৪৭’য়ের স্বপ্ন। তাই মুসলিম লীগেরর স্লোগান ছিল: "পাকিস্তান কা মতলাব কিয়া? লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"। যারা “জয় বাংলা”র রাজনীতি করে তাদের কাছে রাষ্ট্র নির্মাণের সে ইসলামী ভিশন ভাল লাগার কথা নয়। বরং বিভক্তির মধ্য দিয়ে মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি সাধনের মধ্যেই তাদের আনন্দ। সেরূপ একটি নাশকতার নেশায় তারা ভারতকে সাথে নিয়ে ইসলামের শত্রুরা পাকিস্তানের বিশ্বশক্তি রূপে বেড়ে উঠার সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেয়।

পাকিস্তান ভাঙ্গার মধ্য দিয়ে মুসলিম উম্মাহর যে এই অপূরণীয় ক্ষতি হলো সেটি পিনাকী ভট্টাচার্যের চোখে ধরা পড়েনি। কারণ, পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার বেদনা তার মত একজন অমুসলিমের না বুঝারই কথা। সেটিই স্বাভাবিক। শুধু তিনি কেন, মুসলিম নামধারী কোটি কোটি বাঙালি মুসলিমের চোখেও সে বিপদটি ধরা পড়েনি। ধরা পড়ছে না এমন কি একালের বহু আধুনিক জামায়াত-শিবির কর্মীদের চোখেও। তাই তারা ১৬ ডিসেম্বর এলে বিজয় উৎসের নামে। সে বিপদটি কেবল তারাই বুঝতে পারে যারা মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার জিহাদ নিয়ে বাঁচে। কারণ, তারা গণমুখী নয়, বরং আল্লাহমুখী। তারা বাঁচে একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করার ব্রত নিয়ে। যারা সে ইসলামী ভিশন, মিশন ও জিহাদ নিয় বাঁচে না তারা চোখ থাকলেও চোখে দেখে না কিসে মুসলিমের গৌরব এবং কিসে বিপদ। ১৬ই ডিসেম্বর নিয়ে তারা তাই উৎসবে মাতে। অথচ এ দিনটি ভারত এবং ভারতের সহযোগী ইসলামের শত্রু পক্ষের কাছে সবচেয়ে বড় বিজয়ের দিন, কিন্তু প্রতিটি ইসলামপন্থীর কাছে প্রচণ্ড দুঃখভরা মাতমের দিন।

পিনাকীর ভ্রম

একাত্তরের গণহত্যা একটি যুদ্ধাপরাধ। তবে সে অপরাধকে অজুহাত বানিয়ে পাকিস্তান ভাগাটি ছিল আরেক বিশাল অপরাধ। বুঝতে হবে, একটি অপরাধ কখনোই আরেকটি ভয়ানক অপরাধের কারণ হতে পারে না। এরূপ অপরাধ সব সময়ই হারাম। সে বিষয়টি একাত্তরের সকল ইসলামপন্থী দল, সকল আলেম, সকল পীর, সকল ইসলামপন্থী লেখক ও বুদ্ধিজীবী বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তারা ভারতে যাননি; পাকিস্তান ভাঙার পক্ষে অবস্থানও করেনি। বরং হাজার হাজার ইসলামপন্থী যুবক এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্ররা রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছে। তাদের সংখ্যা ও মনবল দিন দিন আরো বাড়ছিল। এদের কারণেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর যুদ্ধে নামার আগে সাড়ে আট মাস যুদ্ধ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের একটি জেলা ও মহকুমা দূরে থাক, একটি থানাকেও দখলে নিতে পারেনি। ‌ মুক্তিবাহিনী সে ব্যর্থতা দেখে তাদের সহায়তা ভারত যুদ্ধে নামে আড়াই লক্ষ সৈন্যের বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে।

পিনকী ভট্টাচার্যের অভিযোগ, জামায়াতে ইসলামী কেন ২৫ মার্চের গণহত্যা দেখেও পাকিস্তানের পক্ষ নিল? তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সরকারের মন্ত্রিসভায় কেন অংশ নিল? পিনকীর যুক্তি ২৫ মার্চ এর গণহত্যার পর জামায়াতের উচিত ছিল পাকিস্তান ভাঙার পক্ষে অবস্থান নেওয়া। অথচ সেটি হারাম। সেটি করলে তা হতো এক অপরাধকে অজুহাত বানিয়ে আরেক ভয়ানক অপরাধের অংশীদার হওয়া। বরং তখন আরেকটি ফরজ দায়িত্ব তাদের সামনে হাজির হয়। সেটি হলো হিন্দুত্ববাদী কাফিরদের গ্রাস থেকে পাকিস্তান বাঁচানো। শুধু জামায়াত নয়, সকল ইসলামী দল, সকল আলেম ও সকল পীর সাহেবগণ সেটি বুঝতেন। তাই পাকিস্তান ভাঙ্গার বিশাল অপরাধে তারা কেউ যোগ দেননি। প্রশ্ন হলো, সে জন্য পিনাকী কেন শুধু জামায়াতকে অপরাধী বলছেন? এমন কি কিছু বামপন্থীগণও পাকিস্তান ভাঙ্গার মাঝে বিপদ দেখেছেন। পাকিস্তান ভাঙ্গার বিপদ দেখেছেন ভাষানী ন্যাপের সিনিয়র নেতা রংপুরের মশিউর রহমান যাদু মিয়া, যশোরের পূর্ব পাকিস্তান কম্যুনিস্ট পার্টির আব্দুল হক এবং এমন কি আওয়ামী লীগেরও বহু নেতা। তারাও একাত্তরে ভারতে যায়নি এবং পাকিস্তান ভাঙ্গার ভারতীয় প্রকল্পে অংশ নেয়নি।

প্রশ্ন হলো, এসব ইসলামপন্থী ও পাকিস্তানপন্থীরা কি ২৫ মার্চের হত্যাকাণ্ড দেখেননি? অবশ্যই তারা দেখেছেন। অনেকের আপনজনও একাত্তরে মারা গেছে। কিন্তু সেটি দেখার সাথে তারা স্পষ্ট ভাবে দেখতে পেয়েছিলেন ধেয়ে আসা আগ্রাসী ভারতীয় প্রকল্পের ভয়াবহ বিপদ। সে প্রকল্পের ধারাবাহিকতা নিয়েই মুজিব, এরশাদ ও হাসিনার স্বৈরাচার এসেছে। এবং এসেছে বাকশাল ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদ। এসেছে ভারতীয় লুণ্ঠন ও দুর্ভিক্ষ। এসেছে গণহত্যা, আয়নাঘর, নেতাদের ফাঁসি, ইসলামপন্থীদের দলন ও গণতন্ত্রের কবর।

পরিতাপের বিষয় হলো, পিনাকী ভট্টাচার্যের চোখে আগ্রাসী ভারতের পদতলে পিষ্ট হওয়ার সে বিপদ ধরা পড়েনি -যেমনটি ধরা পড়েছিল ইসলামপন্থী ও কিছু প্রজ্ঞাবান বামন্থীদের চোখে। বিস্ময়র বিষয় হলো, পিনাকীর কাছে অখণ্ড পাকিস্তানের অস্তিত্বই বেশী বিপদজনক মনে হয়েছে, হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসী ভারত নয়। এজন্যই তার কাছে পাকিস্তানপন্থী ও ইসলামপন্থীরা বড্ড অপরাধী গণ্য হয়। এখানেই পিনাকীর প্রচণ্ড ভ্রম। ১২/০৫/২০২৫

চায়না ক্যান্টন ফেয়ার, বিশ্ব বানিজ্যের এক মেলবন্ধন
                                  
সৈয়দ আতিক, চায়না থেকে ফিরে: চীনের আমদানি ও রপ্তানি মেলা সাধারণত ক্যান্টন ফেয়ার নামে পরিচিত। বিশ্ব বানিজ্য ক্যালেন্ডারে সবচেয়ে বড় ইভেন্টের মধ্যে এটি একটি। গুয়াংজু  শহরে ১৯৫৭ সাল থেকে এ মেলার প্রচলন শুরু হয়। তখন থেকেই মেলাটি সমস্ত শিল্প আমদানি এবং রপ্তানি উভয়ের জন্য বিশাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি হতে থাকে। প্রতিবছর বসন্ত ও শরৎ এই দুই ঋতুতে দুইবার বিশ্ব বাণিজ্যের এ বৃহত্তর মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।  প্রতি বছরের  ন্যায় এবারও ব্যাপক আয়োজনে চীনের গুয়াংজু শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ১৩৭ তম ক্যান্টন ফেয়ার-২০২৫ (বসন্ত পর্ব)। ১৫ এপ্রিল থেকে মে মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম এবং বিখ্যাত এ বাণিজ্য মেলা তিনটি ধাপে ৫ দিন করে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্ব ১৫ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল, দ্বিতীয় পর্ব ২৩ থেকে ২৭ এপ্রিল এবং তৃতীয় পর্ব ছিল ১ মে থেকে ৫ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যদিকে আগামী  ১৫ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ক্যান্টন ফেয়ার (শরৎ পর্ব) অনুষ্ঠিত হবে। ক্যান্টন ফেয়ার বা চায়না আমদানি ও রপ্তানি মেলা হংকংয়ের কাছে দক্ষিণ চীনে অবস্থিত গুয়াংজু শহরে হয়ে থাকে। ক্যান্টন ফেয়ারের "ক্যান্টন"  শব্দটি চীনের গুয়াংজু  শহরের আরেকটি নাম। তাই চীনের বিখ্যাত এই বাণিজ্য মেলা সকলের কাছে ক্যান্টন ফেয়ার নামে পরিচিত। এটি চীনের প্রাচীনতম বৃহত্তম এবং সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বশীল বাণিজ্য মেলা। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং গুয়াংজু  প্রদেশের প্রাদেশিক সরকারের যৌথ আয়োজনে এবং চায়না ফরেন ট্রেড সেন্টার দ্বারা এ ক্যান্টন ফেয়ার পরিচালিত হয়ে থাকে। এ মেলার মাধ্যমে চীনের বিভিন্ন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তাদের নিত্য নতুন পণ্যের সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মেলবন্ধনের এক বিশাল প্ল্যাটফর্ম তৈরী করেছে। এখানে আলাদা আলাদা ৪ টি ব্লকে প্রদর্শিত হয়েছে তাদের হাজার হাজার পণ্যের সমাহার। আর এখান থেকেই দেখে শুনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা সোর্সিং করে তাদের পছন্দের পণ্য। এর ফলে চীনের কোম্পানিগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে ব্যাপকভাবে সহায়তা করছে।  ক্যান্টন ফেয়ারের মিডিয়া সেন্টারের মাধ্যমে জানাযায়,গত ২ বছরে ২৫০০ টির বেশী কোম্পানি থেকে প্রায় ৫ হাজার পণ্য প্রদর্শিত হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৩০০ টি পণ্যের নকশা ছিল অসাধারণ।
এবারের উল্লেখযোগ্য পণ্যগুলোর মধ্যে একটি হল কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত দাবা রোবট, বাদ্যযন্ত্র বাজাতে এবং লেখার ক্ষমতা সম্পন্ন স্মার্ট বায়োনিক হাত, স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেয়াল পরিস্কার করতে পারা পরিষ্কারক রোবট, সেইসাথে স্মার্ট ডিভাইসের পাশাপাশি ব্যবহারিক পণ্যগুলোও ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এটি সম্ভবত বিশ্বের বৃহত্তম কনভেনশন সেন্টার, যার আয়তন ১২১৭৪০০০ বর্গফুট বা ১১৩১০০০ বর্গ মিটার। এই বিশাল এলাকা জুড়ে মেলায় নানা পণ্য সামগ্রী নিয়ে প্রদর্শিত বুথে সংখ্যা ছিল এবার ৬০ হাজারেরও বেশি। 
মেলায় কথা হয় বাংলাদেশ থেকে আসা কয়েকজন শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীর সাথে। এস এ ফেব্রিক্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, সঠিকভাবে সোর্সিং করতে পারলে চীনের সাথে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের একটা ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। চায়না বাংলা বিজনেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মাহাবুবুর রহমান জানান, দিনদিন ক্যান্টন ফেয়ারের প্রতি আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। এখান থেকে তারা কাঙ্ক্ষিত পণ্য সোর্সিং করে তাদের ব্যবসাকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলছেন। 
মিরপুরের মোবাইল এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান জানান, নিত্য নতুন মোবাইল এক্সেসরিজ এর জন্য চায়না পণ্যের প্রশংসা করতেই হয়। আমাদের বাংলাদেশে এখন এসব পণ্যের এক বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। উত্তরার তরুণ পোশাক ব্যবসায়ী হাদীকুল ইসলাম ফারদিন বলেন, প্রথম বারের মত চীনের ক্যান্টন ফেয়ারে এসে বেশ ভালো লাগেছে। আমার মনে হয় চায়নার সাথে পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য সামগ্রীর যে বাজার রয়েছে এতে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যবসায়ীদের জন্য চীন উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হতে পারে। একই সাথে চেষ্টা করলে তরুণরাও তাদের ব্যবসা ক্ষেত্রে ভিন্নমাত্রাসহ নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারেন। 
আয়োজকদের তথ্য মতে এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী বিদেশী ক্রেতার সংখ্যা এবং স্থানীয়ভাবে রপ্তানি লেনদেনের মত অনেক সূচক নতুন ঐতিহাসিক রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ২১৯ টি দেশের মোট ২ লাখ ৮০ হাজার ৯ শত বিদেশী ক্রেতা মেলায় অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয়ভাবে রপ্তানি লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫৪৪ কোটি মার্কিন ডলার,  যা গত বছরের মেলার তুলনায় তিন শতাংশ বেশি। উদীয়মান বাজারগুলো এখনও ক্যান্টন ফেয়ারের সবচেযে বড় গ্রাহক উৎস
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার এখনই কেন উপযুক্ত সময়?
                                  

ফিরোজ মাহবুব কামাল: আওয়ামী লীগ হলো চোর-ডাকাত, খুনি, ধর্ষক, সন্ত্রাসী ও ফ্যাসিস্টদের দল। সভ্য ও ভদ্র রাজনীতিতে তারা বিশ্বাসী নয়। তাদের পছন্দের রাজনীতি হলো ভোটডাকাতি করে ক্ষমতায় যাওয়া এবং দলীয় ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা। নিজেদের স্বার্থান্বেষী সে রাজনীতিত দেশের সামরিক বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, আদালতের বিচারক এবং প্রশাসনের কর্মচারীদের তারা চাকর-বাকরে পরিণত করে। এবং পরিকল্পিত ভাবে এবং রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, মিডিয়া এবং নির্বাচনের বাইরে রাখে। সেটি দেখা গেছে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে। বস্তুত আওয়ামী লীগ তার নিজ চরিত্রের পরিচয়টি জনগণের সামনে বিগত ১৬ বছরের শাসন আমলে ভাল ভাবেই পেশ করেছে। এর পূর্বে সে পরিচয়টি পেশ করেছিল শেখ মুজিব তার নিজের শাসনামলে। তাই আওয়ামী লীগের চরিত্র নিয়ে জনগণের জানার কিছু বাকি নাই।

জনগণের রাজনৈতিক অধিকার এবং মৌলিক মানবাধিকার কেড়ে নেয়াই হলো আওয়ামী লীগের রাজনীতি। মুজিব গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে এক দলীয় বাকশালী রাজনীতির প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল। হাসিনার প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল নৃশংস স্বৈরতন্ত্রের। উভয়েই বেছে নিয়েছিল বিনা বিচারে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যার পথ। বিশ্বের কোন গণতান্ত্রিক দেশে কি এমন অপরাধীদের রাজনীতিতে বৈধতা দেয়? তাদের স্থান হয় কারাগারে। নিরস্ত্র রাজনীতির শান্ত ময়দানে সশস্ত্র খুনিকে ঢুকতে না দেয়াই হলো সভ্য নীতি। এখন সে সভ্য নীতির প্রতিষ্ঠা দেয়ার সময় এসেছে বাংলাদেশেও। সে কাজে সফল না হলে সভ্য, ভদ্র ও মেধাবী দেশপ্রেমিকদের রাজনীতে অংশ নেয়াটি পূর্বের ন্যায়ই অসম্ভব থেকে যাবে।

সশস্ত্র খুনিদের সাথে কি কখনো নিরস্ত্র ও শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষদের প্রতিযোগিতা করতে দেয়া যায়? রাজনীতি দূরে থাক, তাদেরকে তো এক সাথে রাখাই বিপদজনক। আওয়ামী লীগ তার রাজনীতির লড়াইটি সব সময়ই অস্ত্র হাতে লড়ে, সে কাজের জন্য তাদের রয়েছে হাজার হাজার সশস্ত্র ‌ক্যাডার। আওয়ামী লীগের সে চরিত্র দেখা গেছে ১৯৭০ সালের নির্বাচন থেকে প্রতিটি নির্বাচনে। সভ্য ও সুষ্ঠ নির্বাচন ও রাজনীতি অসম্ভব করাই হলো আওয়ামী লীগের নীতি। রাজনীতির ময়দানে এরকর নৃশংস অপরাধীদের স্বাধীনতা দেওয়ার অর্থ হলো গণতন্ত্রকে বিপন্ন করা এবং সভ্য ও ভদ্র মানুষদের রাজনীতির বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া।

আওয়ামী লীগ অতীতে যেভাবে সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে রাজনীতির ময়দান দখলে নিয়েছে এবং ভোট ডাকাতি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে হাইজ্যাক করেছে, ‌সেটি আর কখনোই হতে দেয়া যায় না। এমনকি খেলার মাঠেও কঠোর নিয়ম কানুন থাকে। যে খেলোয়াড় ইচ্ছা করে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের পা ভেঙে দেয় বা তাকে অন্ধ করে দেয় তাকে লাল কার্ড দেখানো হয়। এমন অপরাধী চরিত্রের ব্যক্তিকে কখনোই আর খেলতে দেয়া হয় না। তাকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। রাজনীতিতেও তেমনি লাল কার্ড দেখানোর রীতি থাকতে হয়। যে দল বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম-খুন করে, আয়না ঘরে নেয়, ফাঁসিতে ঝুলায় এবং দেশে অত্যাচারের রাজত্ব কায়েম করে -তাদেরকে অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হয়। তাই বিশ্বের কোন দেশেই অপরাধীদের রাজনীতির অধিকার থাকে না। বাংলাদেশী বা থাকবে কেন? তাই অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি।

প্রফেসর ইউনুসের সরকার যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ন্যায্য কাজটি না করে তবে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। তখন জনগণ নিজেরাই আওয়ামী লীগের নির্মূলে ময়দানে নামবে। কারণ বিপ্লবের অর্থ শুধু হাসিনাকে সরানো নয়, জনগণের শত্রু এই আওয়ামী লীগের নির্মূলও। আওয়ামী লীগ হলো রাজনীতির অঙ্গণে নৃশংস খুনি জন্ম দেয়ার কারখানা। এ আওয়ামী লীগের গর্ভেই জন্ম নিয়েছে খুন মুজিব ও খুনি হাসিনার নৃশংস রাজনীতি। তাই আওয়ামী লীগ বাঁচলে অন্যরাও সে রাজনীতি নিয়ে অচিরেই হাজির হবে। বিষাক্ত সাপকে আধা বাঁচিয়ে রাখলে ছোবল দেয়ার সামর্থ্য তার থেকেই যায়।

এটি এখন সুস্পষ্ট যে, বিএনপির মত কিছু সংগঠন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিরোধী। তার কারণটিও সুস্পষ্ট। এক নেকড়ে বাঘ কখনোই আরেক নেকেড়ের ক্ষতি করে না। তারা বরং একই জঙ্গলে পাশাপাশি বাস করে ও ইচ্ছামত শিকার ধরে খায়। কেউ কারো শিকার ধরায় বাধা দেয় না। তাদের সম্মিলিত লড়াই তো বরং তাদের বিরুদ্ধে যারা হিংস্র নেকড়দের হত্যা করতে চায়। এজন্য বিএনপি যতটা আওয়ামী লীগ বিরোধী তার চেয়ে বেশী বিরোধী দেশের ইসলামী দলগুলির বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ যেমন দেশে ইসলামী শক্তির উত্থান চায় না, তেমনি বিএনপিও চায় না

তাছাড়া আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’র চরিত্রও এক ও অভিন্ন। তারা একই রকম সেকুলারিস্ট, ইসলামী চেতনাশূণ্য এবং জাতীয়তাবাদী -অর্থাৎ হারাম মতবাদের অনুসারী। এবং তাদের উভয়ের যুদ্ধই ইসলামের বিরুদ্ধে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সম্প্রতি কম্যুনিস্ট পার্টির নেতাদের সাথে এক বৈঠকে ইসলামের উত্থানকে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির উত্থান বলে অভিহিত করেছে। দেশের কম্যুনিস্টদের সাথে নিয়ে সে উত্থান প্রতিরোধের অঙ্গীকারও করেছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি -এ উভয় দলের নেতাকর্মীরা একই রূপ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজ। তারা উভয় ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র মনে করে। তারা মনে প্রাণে চায় দেশের রাজনীতির দখলদারি অতীতের ন্যায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি`র মধ্যে ভাগাভাগি করে চলুক। এবং তারা চায়, রাজনীতির অঙ্গনে কোন সভ্য ও ভদ্র মানুষের যেন আগমন না ঘটে।

কিন্তু বাংলাদেশের ইসলামপ্রেমী সভ্য ও ভদ্র মানুষের এ দুটি দলের অসভ্য রাজনীতিকে চলতে দিতে পারেনা। রাজনীতির ময়দান থেকে দুর্নীতিবাজ ফ্যাসিবাদী শক্তির অপসারণের এখনই উপযুক্ত সময়। বিএনপির মত স্বার্থান্বেষী এক দুর্নীতিবাজ ও স্বৈরাচারী দল ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কাজটি অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত রাজপথের লড়াই অব্যাহত রাখতেই হবে। লড়াইটি এখন শুধু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়, দলটির দোসরদের বিরুদ্ধেও। এটি বাংলাদেশের ঈমানদার মানুষের পবিত্র জিহাদ। পরিশুদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের এছাড়া ভিন্ন পথ নেই। বিপ্লবের এ নৌকাকে ঘাটের কাছে এনে কখনোই ডুবানো যাবে না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।

কারা রাজাকার ও কি তাদের মিশন-ভিশন-প্যাশন?
                                  

ফিরোজ মাহবুব কামাল: বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজকের বিরোধটি হিন্দু ও মুসলিমের নয়। বাঙালি ও অবাঙালিরও নয়। বরং প্রবল বিরোধটি এখন রাজাকার ও ভারতসেবী বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের মাঝে। এ দুটি ভিন্ন শিবির থেকে দুটি চেতনা কথা বলে। তাই জরুরি হলো এ দুটি পক্ষ ও তাদের চেতনাকে সঠিক ভাবে চেনা। কিন্তু বাংলাদেশে পাঠ্য বইয়ে তাদের সঠিক পরিচয়টি তুলে ধরার কাজটি হয়নি; বরং হয়েছে মিথ্যা ইমেজ গড়ার কাজ। কারা ভারতসেবী বাঙালি পক্ষ? বাংলাদেশে এ পক্ষটি পরিচিত একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা রূপে। এরাই ১৯৭১’য়ে ভারতে গিয়েছিল এবং ভারতের অস্ত্র নিয়ে ভারতীয় সেনাদের সাথে মিলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। এবং এরাই ভারতের ঘরে বিজয় তুলে দিয়েছিল।

ইসলামের বিরুদ্ধে এবং ভারতের বিরুদ্ধে এদের যুদ্ধ ১৯৭১’য়ে শেষ হয়নি। এরা বরং বাংলাদেশের প্রতি কোনে এখনো যুদ্ধ লড়ে যাচ্ছে। আবরার ফাহাদের মত যারাই দেশপ্রেমিক -তারাই তাদের হত্যার লক্ষ্যবস্তু। আবরার ফাহাদ তাদের কাছে নব্য রাজাকার। এরাই দেশের ইসলামবিরোধী সেক্যুলারিস্ট পক্ষ।

ইসলামবিরোধী এ সেক্যুলারিস্টদের ৫টি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো: এক). মুজিবের ন্যায় গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট ও ভারতের এজেন্টকে তারা বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা বলে; দুই).এরা মুজিবের মূর্তি গড়ে এবং সে মূর্তিতে পূজা দেয়া; তিন). এরা ভারত ও ভারতীয় রাজনৈতিক নেতাদের প্রশংসা গায়; চার). ক্ষমতায় গেলে ভারত যা চায়, তারা তাই দেয়। ভারতকে এরা ভারতীয় পণ্যের বাজার, বাংলাদেশের পেটের উপর দিয়ে করিডোর ও সমুদ্রবন্দরের সুবিধা দিয়েছে। তাদের কাছে গণতন্ত্র হলো জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে নৃশংস স্বৈরাচারের প্রতিষ্ঠা। পাঁচ). ইসলামপন্থীদের কুপানো। কারণ, ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের ন্যায় এ বাংলাদেশী সেক্যুলারিস্টদেরও রয়েছে প্রবল ইসলামভীতি।

কিন্তু কারা রাজাকার? কি তাদের পরিচয়? কি তাদের মিশন-মিশন? রাজাকার ফার্সি শব্দ। বিশেষ কোন রাজনৈতিক বা সামাজিক লক্ষ্যকে সফল করতে যারা স্বেচ্ছায় নিজেকে নিয়োজিত করে -তারাই হলো রাজাকার। ইংরেজী ভাষায় রাজাকার শব্দের অর্থ ভলেন্টেয়ার। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসের রাজাকার বলতে সেসব পূর্ব পাকিস্তানী স্বেচ্ছাসেবকদের বুঝায়, যারা ১৯৭১’য়ে অখণ্ড পাকিস্তান বাঁচাতে ভারত ও ভারতসেবীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে নেমেছিল। ভারতসেবীদের হামলা থেকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ও সম্পত্তি বাঁচানোর দায়িত্ব নিয়েছিল।

রাজাকারদের প্রবল একটি রাজনৈতিক দর্শন ছিল। তারা ছিল বিশ্বমুসলিম ভাতৃত্বে প্রবল বিশ্বাসী তথা প্যান-ইসলামী; ফলে তারা ছিল ভাষা, বর্ণ ও অঞ্চলের নামে মুসলিমদের মাঝে বিভক্তির দেয়াল গড়ার প্রবল বিরোধী। তারা গর্বিত ছিল পাকিস্তানের দেশপ্রেমিক নাগরিক রূপে। পাকিস্তানের অখণ্ডতা বাঁচানোকে তারা ঈমানী দায়িত্ব মনে করতো। যেসব বাঙালি মুসলিমগণ ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগ এবং ১৯৪৭ সালে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল -তারা ছিল তাদের উত্তরসুরি। তাদের অধিকাংশের পরিবার ছিল মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী বা অন্য কোন ইসলামী দলের নেতা, কর্মী বা সমর্থক। তারা স্বপ্ন দেখতো বিশ্ব শক্তি রূপে মুসলিম উম্মাহর বেড়ে উঠায়।

১৯৭১’য়ে ভারতের বিশাল সেনাবাহিনীর কাছে পাকিস্তানের ক্ষুদ্র সেনাবাহিনী পরাজিত হয়েছে। ভারত সেদিন একা ছিল না। ভারতের পাশে ছিল সোভিয়েত রাশিয়া ও ইসরাইল। সেদিন পাকিস্তান পরাজিত না হলে দেশটি আজ পরিণত হতো পারমানবিক অস্ত্রধারী ৪৩ কোটি জনসংখ্যার বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র। সে রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক রূপে বাঙালি মুসলিমগণ সেদিন দেশটির ড্রাইভিং সিটে বসতো এবং বিশ্বরাজনীতিতে প্রভাব ফেলার সুযোগ পেত। উল্লেখ্য যে, দেশটি ভেঙ্গে যাওয়ার আগে ৪ জন বাঙালি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছে।

১৯৭১’য়ে অখণ্ড পাকিস্তান বাঁচানো রাজাকারদের কাছে নিছক রাজনীতি ছিল না, বরং ছিল তাদের মিশন, পবিত্র স্বপ্ন ও ঈমানী তাড়না (mission, vision & passion)। কিন্তু যারা বাংলা ও বাংলা ভাষা ভিত্তিক বাঙালির জাতীয়তাবাদী পরিচয়ের উর্দ্ধে উঠতে রাজী নয় -তাদের কাছে রাজাকারের সে মিশন, পবিত্র স্বপ্ন ও মিশন ভাল লাগেনি। শয়তানের এই বর্ণবাদী বাঙালি খলিফাদের কাছে রাজাকারগণ একাত্তরের ন্যায় আজও তাই ঘৃণার পাত্র। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার কাছে যারা প্রিয়তর হতে চায় এবং একাত্ম হতে চায় কুর’আনে ঘোষিত তাঁর পবিত্র এজেন্ডার সাথে, তাদের সামনে শয়তানের সেবকদের থেকে গালি খাওয়া ছাড়া ভিন্ন পথ আছে কি? এরূপ গালি খাওয়া তো নবী-রাসূলদের সূন্নত।

রাজাকারদের বুঝতে হলে অবশ্যই বুঝতে হয় মহান আল্লাহ তায়ালার পবিত্র এজেন্ডাকে। আল্লাহ তায়ালা চান, মুসলিম উম্মাহ ভাষা, বর্ণ ও অঞ্চল ভিত্তিক পরিচয়ের উর্দ্ধে উঠুক এবং বেড়ে উঠুক প্যান-ইসলামী চেতনায় বিশ্বাসী বিশ্বশক্তি রূপে -যেমনটি দেখা গেছে নবীজী এবং সাহাবায়ে কেরামের যুগে। এবং যেমনটি দেখা গেছে উমাইয়া, আব্বাসীয় ও উসমানিয়া খলিফাদের আমলে। তাই ঈমানদারকে বীর দর্পে দাঁড়াতে হয় মুসলিম দেশকে খণ্ডিত করার যে কোন শয়তানী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। ভারত ও তার দোসরদের পক্ষ থেকে তেমনি একটি ষড়যন্ত্র যুদ্ধ রূপে হাজির হয় ১৯৭১’য়ে। সে যুদ্ধের লক্ষ্য ছিল, মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র পাকিস্তানকে খণ্ডিত করা।

শয়তানী শক্তির পক্ষ থেকে এরূপ হামলা হলে, যারা মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডার সাথে একাত্ম হয় তাদের সামনে রাজাকার হওয়া ছাড়া উপায় থাকে কি? রাজাকার হওয়াটাই তখন তাঁর ঈমানী পরিচয়ে পরিণত হয়। কারণ, ঈমানদার কি কখনো পাকিস্তানের ন্যায় একটি মুসলিম দেশ ভাঙ্গার ব্রত নিয়ে ভারতের ন্যায় কাফির দেশে গিয়ে অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষন নিতে পারে? সেটি তো হারাম।

বাঙালি জাতীয়তাবাদের সে প্রবল জোয়ারের মুখে রাজাকার হওয়া মামূলী ব্যাপার ছিলনা। সে জন্য তো মুসলিম উম্মাহকে বিশ্বশক্তি রূপে বেড়ে উঠার প্রবল স্বপ্ন থাকতে হয়। থাকতে হয় মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডার সাথে একাত্ম হওয়ার প্রবল তাড়না। সেটি না থাকলে জাতীয়তাবাদের স্রোতে ভেসে যাবে, ভারতের পক্ষ নিবে এবং রাজাকারদের গালি দিবে –সেটি অতি স্বাভাবিক। ১৯৭১’য়ে বাঙালি ফ্যাসিস্ট, সেক্যুলারিস্ট ও বাম কাপালিকদের জীবনে তো সেটিই দেখা গেছে। তারা ভারতের কোলে বসে প্রচুর নিমক খেয়েছে, অর্থ ও অস্ত্র নিয়েছে এবং যুদ্ধ করে ভারতকে বিজয়ী করেছে। ভারতের প্রতি নিমকহালালীই তাদের রাজনীতি। এবং আজও এটিই স্বাভাবিক যে, ইসলাম থেকে বাঙালি যতই দূরে সরবে ততই ঘৃনা করবে রাজাকারদের এবং নতজানু হবে ভারতের প্রতি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তো সেটি আজ প্রবল বাস্তবতা।

`১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের বিজয় ফিলিস্তিন ইস্যুর পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে ওঠে`
                                  

এমএম রহমাতুল্লাহ: ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের বিজয় ফিলিস্তিন ইস্যুর পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে ওঠে বলে মন্তব্য করেন আন্তর্জাতিক আল-কুদস দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার বক্তারা। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো আলকুদস দিবস উপলক্ষ্যে ‘কুদস ও ফিলিস্তিনের মুক্তি: অব্যাহত প্রতিরোধের অনিবার্যতা’ শীর্ষক আলোচনার সভার আয়োজন করে আল কুদস-কমিটি, বাংলাদেশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকিব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশস্থ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত এক্সিলেন্সী মানসুর চাভোশী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান। সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেজা মীর মোহম্মদী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ কে এম বদরুদ্দোজা এবং বিশিষ্ট ইসলামি স্কলার ড. একেএম আনোয়ারুল কবীর। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র সাংবাদিক ও চেঞ্জটিভির প্রতিষ্ঠাতা আমীরুল মুমিনীন মানিক।

সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আল-কুদস কমিটি বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক মুস্তফা তারিকুল হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ও আল-কুদস কমিটি বাংলাদেশ-এর সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহ্ কাউছার মুস্তাফা আবুল উলায়ী।

উপরোক্ত অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিন জুড়ে পবিত্র রমজানের মধ্যেই যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করে পশুশক্তি ইসরাইল আবারও শুরু করেছে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম গণহত্যা। মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস এর পবিত্র ভূমিতে এ অন্যায় ও হত্যাযজ্ঞ চলছে। বায়তুল মুকাদ্দাস পৃথিবীর সমস্ত শৌর্য বীর্যের ইতিহাস যেখানে স্থির হয়ে আছে। বায়তুল মুকাদ্দাস ও তার আশপাশের এলাকা তথা সমগ্র ফিলিস্তিন ভূখণ্ড বহু নবী-রাসূলের স্মৃতিবিজড়িত এবং কোরআন মজিদে এ পুরো ভূখণ্ডকে ‘পবিত্র ভূমি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই মসজিদুল আকসা, বায়তুল মুকাদ্দাস ও ফিলিস্তিনের প্রতি ভালোবাসা প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত। ১০৯৬ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপের ক্রুসেডার খ্রিস্টানরা সমগ্র সিরিয়া ও ফিলিস্তিন দখল করে নেয়ার পর বায়তুল মুকাদ্দাসের বিভিন্ন ইসলামী স্থাপনায় পরিবর্তন আনে। এরপর ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতান সালাহ উদ্দীন আইয়ুবি বায়তুল মুকাদ্দাস শহরকে আবারও মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন। তবে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানকার মুসলমানদের ওপর বিপদ নামতে শুরু করে।

বিংশ শতাব্দীর ৪০ এর দশকে ইহুদিবাদী ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনের ভূমি ও পবিত্র কুদস দখলের পর একটি কঠিন সময়কাল অতিবাহিত হয়েছে এবং সেখানকার রাজনৈতিক জীবনে অনেক উত্থান পতন হয়েছে। কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের বিজয় ফিলিস্তিন ইস্যুর পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে ওঠে। ইরানের বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী দখলদার ইহুদীবাদী সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পতাকা উড্ডীন করেন এবং কুদস শরীফ ও ফিলিস্তিনের ইসলামি ও পবিত্র ভূমির মুক্তির বিস্মৃত লক্ষ্য ও আদর্শকে পুনরুজ্জীবিত করেন। ইমাম খোমেনীর পক্ষ থেকে রমজান মাসের শেষ দশকের শুক্রবারকে আল কুদস দিবস নামকরণ ছিলো একটি বৃহৎ বুদ্ধিবৃক্তিক ও গঠনমূলক রাজনৈতিক উদ্যোগ, যা ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রামের পথকে পাল্টে দেয় এবং এই পথটিকে আলোকিত ও মসৃণ করে তোলে। সেই পথ ধরে আল কুদস কমিটি বাংলাদেশও সোচ্চার হচ্ছে সম্মিলিত প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাতে।

আলোচনা সভায় বক্তারা আরও বলেন, ফিলিস্তিনের সংকট কেবল ফিলিস্তিনের জনগণের সংকট নয়, এটা গোটা ইসলামী বিশ্বের সংকট। তাই বিশ্বের সকল মুসলমানকে এই সংকট নিরসনে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বক্তারা আরো বলেন, মুজলুমের বিরুদ্ধে জালেমের অত্যচার চিরকাল থাকতে পারে না।

শত প্রতিকূলতা সত্বেও অবৈধ দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যোদ্ধারা যেভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে তাতে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি একদিন স্বাধীন হবেই।

ইমাম খোমেনির ডাকে গঠিত আল-কুদস দিবস উপলক্ষ্যে এর আগে ২০২৪ সালেও আল-কুদস কমিটি, বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক নির্বাচন কমিশনার এবং বর্তমান নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান ও আল-কুদস কমিটি বাংলাদেশ এর সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহ কাওসার মুস্তাফা আবুল উলায়ীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাসের তৎকালীন কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেজা মীর মোহাম্মদী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট একেএম বদরুদ্দোজা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস এমন সময় পালিত হচ্ছে, যখন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের পাশবিক হামলা অব্যাহত রয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজা উপত্যকা এবং জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে মজলুম ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর নতুন করে গণহত্যা শুরু করে।

সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্বর ইসরাইলের হামলায় গত ১ বছরে নারী, শিশুসহ লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন অগণিত বনি আদম। এছাড়া, গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদীদের এই বর্বর হামলায় ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফিলিস্তিনে গত অল্প কয়েকমাসের মধ্যে এতো ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানীর পরও যদি বিশ্ব বিবেক জাগ্রত না হয়, তবে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক।

ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনীরা যেভাবে প্রতিরোধ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে ফিলিস্তিনের বিজয় একদিন আসবেই, ইনশা-আল্লাহ।
কিন্তু এতোগুলো শক্তিশালী মুসলিম দেশ থাকা সত্ত্বেও আজ তাদের নীরবতায় পৃথিবীর মানচিত্র থেকে গাজা ও রাফাসহ ফিলিস্তিনের নাম মুছে ফেলতে চায় ইসরাইলের হায়েনারা।

প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ শুক্রবার পালিত হয় আন্তর্জাতিক আল-কুদস দিবস। নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ এবং ফিলিস্তিনে ইহুদীবাদীদের আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে ও বিশ্বের মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করার উদ্দেশ্যে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনি (র.) এই দিবসটি পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন থেকেই এ দিবসটি উদযাপনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিন ও গাজার নিপীড়িত মানুষের সঙ্গে তাদের সংহতি ঘোষণা করছে। ফিলিস্তিনের সমস্যা সমাধানের জন্য ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে এই দিনটি বড় সুযোগ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। মুসলমানদের উচিত এই সুযোগকে সচেতনভাবে উপলব্ধি করা এবং সমস্যার সমাধানের জন্য ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। উল্লেখিত অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেজা মীর মোহাম্মদী উল্লেখ করেন, এ বছরের আন্তর্জাতিক কুদস দিবস অন্যান্য বছরের তুলনায় একেবারেই অন্যরকম। কেননা, এ বছর ফিলিস্তিনে মানবতার যে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে, ইতিহাসের ভয়াবহতম ও নৃশংসতম গণহত্যা চলছে, তা আমাদের হৃদয়কে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত করে তুলছে। নিরীহ ও নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি নারী-শিশুসহ বেসামরিক জনগনের উপর জায়নবাদী আগ্রাসী রাষ্ট্র ইসরায়েলের চলমান এই আক্রমণ ও গণহত্যা অভিযান থেকে আমরা দুটি জিনিস দেখতে পাচ্ছি- তাহলো এমন ভয়াবহতার মুখেও বিশ্বের নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোর আশ্চর্যজনক নীরব ভূমিকা। আর এর বিপরীতে এমন নৃশংসতম জুলুমের মধ্যেও ফিলিস্তিনিদের অবিশ্বাস্য ঈমানী দৃঢ়তা এবং প্রতিরোধ।” তারা আরো বলেন, “বর্তমানে ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তার প্রতিবাদ প্রতিরোধ করা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের ও রাষ্ট্রের মৌলিক, মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক দায়িত্ব। আর মুসলিম হিসেবে ইসলামি রাষ্ট্র ও জাতিগুলোর ওপর এই দায়িত্ব আরো বেশি।’

ইমাম খোমেনি (রহ.) এই দিনটিকে ইসলামি দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার এই ঘোষণার কারণেই আজ আল-কুদস দিবস একটি বৈশ্বিক রুপ পেয়েছে।

এদিকে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে পশ্চিমা দেশগুলোতেও ব্যপক গণজাগরণ, বিক্ষোভ ও মিছিল দেখা যাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ মানবিকতকর দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছে। ইসরাইল ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলোর ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশাবাদী এভাবেই একসময় এই নির্যাতক জুলুমকারী রাষ্ট্রের পতন ঘটবে ও ফিলিস্তিন ও আল কুদস আবার স্বাধীন হবে। আর ফিলিস্তিনের এই পথচলায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান তাদের পাশে রয়েছে, আগামীতেও থাকবে।

বিগত বছরগুলোতে একমাত্র ইরানই ইসরাইলকে শিক্ষাদেয়ার জন্য বারবার হামলা করে। কিন্তু ওআইসি`র সদস্যভুক্ত অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর নীরবতায় ফিলিস্তিনের বিজয় অর্জিত হয়নি।

পবিত্র নগরী আল কুদস বা বায়তুল মুকাদ্দাস হচ্ছে পবিত্র মক্কা মু‘আযযামা ও মদিনা মুনাওয়ারার পরে ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান; যেখানে অবস্থিত ইসলামের প্রথম কিবলা মসজিদুল আকসা। হজরত মুহাম্মদ (সা:) এ মসজিদুল আকসা থেকেই মিরাজে গমন করেছিলেন। তাই বায়তুল মুকাদ্দাস দুনিয়ার অন্য অনেক ভূখণ্ডের মতো কোনো সাধারণ ভূখণ্ড নয়। বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী চক্র সাম্প্রদায়িক ইহুদি জায়নিস্টদের ইন্ধন জুগিয়ে ফিলিস্তিনের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা একের পর এক গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে এবং মুসলমানদের বর্বরোচিতভাবে শহর ও গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করেছে। ফিলিস্তিন জবরদখলদার সাম্প্রদায়িক ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা সংগ্রাম ও যুদ্ধ করে চলেছে। বিশ্বের মুসলমানদের উচিত সংগ্রামী ফিলিস্তিনীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা। তাহলেই একদিন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হবে, শিশুদের কোলাহলে জেগে উঠবে ফিলিস্তিনের ভূমি।

আগ্রাসী দেশের হুমকি থেকে বাঁচতে হলে ইরানকে পারমানবিক অস্ত্রে সক্ষম হতে হবেঃ বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
                                  

নিজস্ব প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক ও দি এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা মোঃ তাজুল ইসলাম বলেছেন ইসরায়েলের মত পারমানবিক বোমার অধিকারি আগ্রাসী দেশের সাথে মোকাবেলা করে বেঁচে থাকতে হলে ইরানকে অবশ্যই পারমানবিক অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম হতে হবে। নচেৎ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে ইরানের পক্ষে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পরবে। বিশেষ করে ইসরায়েলের আগ্রাসন থেকে পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে বাঁচাতে ইরানকে পারমানবিক অস্ত্রে সজ্জিত হতে হবে।

এই বিশ্লেষক আরও বলেন, বাঁচার অধিকার সবারই আছে। বর্তমান বিশ্বে আগ্রাসী দেশের হাত থেকে বাঁচতে পারমানবিক বোমা রক্ষাকবচ হিসাবে কাজ করছে বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমেরিকার মুহুর্মহ ধমক-ধামক ও চোখ রাঙানি থেকে বাঁচতে হলেও শিল্প-সাহিত্যে অগ্রসর ইরানকে পারমানবিক অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম হতে হবে। নইলে পরাশক্তির দেশগুলো তাকে খেয়ে ফেলবে।
বিশ্লেষক তাজুল বলেন, আমেরিকা নামক দেশটি শক্তের ভক্ত আর নরমের যম। এই ট্রাম্প তার পূর্বের মেয়াদে পারমানবিক বোমা তৈরি থামানোর অজুহাতে আফগানিস্থানের উপর মাদার বোমা নামক সর্ব বৃহৎ বোমা নিক্ষেপ করে আফগানিস্থানের সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করে ও সেখানে বহু লোককে হত্যা করে। এরপর ঐ মাদার বোমা নিয়ে উত্তর কোরিয়ার উপর নিক্ষেপের জন্য অগ্রসর হয়। উত্তর কোরিয়ার নিকটবর্তী হতেই চীন আমেরিকাকে সতর্ক করে বলে যে, উত্তর কোরিয়ার উপর বোমা ফেলতে আমেরিকার দ্বিতীয়বার ভেবে দেখা উচিত। কারন আফগানিস্থান ও উত্তর কোরিয়া এক জিনিস নয়। উত্তর কোরিয়ার উপর বোমা ফেলে জান নিয়ে আমেরিকার জাহাজ ফিরে যেতে পারবে না। কারন ততক্ষনে উঃ কোরিয়া পারমানবিক বোমা তৈরি করে ফেলেছে। একথা শুনে আমেরিকা আর টু শব্দ না করে ওখান থেকে শটকে পরে। অর্থাৎ আমেরিকা শক্তের ভক্ত আর নরমের যম তা প্রমান পায়।
বিশ্লেষক তাজুল আরও বলেন পাকিস্তানের উপর এই একই ইস্যু নিয়ে আমেরিকা অনেক হামকি-ধামকি করেছিল। কিন্তু পাকিস্তান আমেরিকার হুমকি-ধামকি অগ্রাহ্য করে পারমানবিক বোমা তৈরি করলে পাকিস্তানের কাছে যুদ্ধ বিমান বিক্রয়ের জন্য আমেরিকা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের যে চুক্তি করেছিল সেই চুক্তি বাতিল করে এবং পাকিস্তানের নিকট থেকে নেয়া সেই বিপুল অংকের টাকাও আমেরিকা ফেরত দেয় নাই। কিন্তু পাকিস্তান থেমে থাকে নাই। পারমানবিক বোমা তৈরি করে তারা আগ্রাসী প্রতিবেশি দেশের সাথে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করেছে। নইলে উগ্র ও আগ্রাসী প্রতিবেশি দেশ এতদিন পাকিস্তানকে গিলে খেত।
রাশিয়া যখন ইউক্রেনের উপর আগ্রাসী আক্রমন চালায় তখন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকগণ বলেছিলেন যে, ইউক্রেন যদি সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়ে ইউক্রেনে থাকা বিপুল পরিমানে পারমানবিক বোমা রাশিয়ার কাছে ফেরৎ না দিত তবে রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রোমন করার সাহস করত না।
বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম আরও মনে করেন যে, পারমানবিক বোমা কোন দেশকে বহিঃশক্তির আগ্রাসন ও আক্রোমনে থেকে বাঁচার রক্ষা কবচ হিসাবে কাজ করে। অর্থাৎ পারমানবিক অস্ত্রে সজ্জিত কোন দেশে বহিঃশক্তি আক্রমোন করার সাহস করে না। এজন্য পারমানবিক অস্ত্র তৈরির অধিকার ইরানের অবশ্যই আছে। আজ ইসরায়েল ফিলিস্থিনে যেভাবে গণহত্যা চালাচ্ছে, যদি ঐ ভূখন্ডে পরাশক্তি ইসরায়েলের সমকক্ষ কোন শক্তি থাকত তাহলে ইসরায়েল একচেটিয়াভাবে মানুষ খুন করতে পারত না। ইসরায়েলকে পূর্ণ সামরিক সাহায্য অব্যাহত রেখে ইরানকে হুমকি-ধামকি দেওয়া আমেরিকার শিষ্টাচার লঙ্ঘনের চরম বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয় বলে এই বিশ্লেষক মত প্রকাশ করেন।
আমেরিকা ইরানকে দুই মাসের সময় বেধে দিয়েছে। দুই মাস পর আমেরিকা ইরানের সামরিক স্থাপনা বোমা মেরে গুড়িয়ে দেবে। কিন্তু এই বিশ্লেষক প্রশ্ন করেন কোন অধিকারে আমেরিকা এটা করবে? ইরানকে শক্তিহীন করে ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য দখল করতে? কিন্তু আশার বিষয় যে সৌদি, কুয়েত, কাতারসহ মধ্যপ্রচ্যের দেশগুলো আমেরিকার দূরভিসন্ধি দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছে। তারা আমেরিকাকে জানিয়ে দিয়েছে যে তারা তাদের দেশ ব্যবহার করে ইরানের উপর আক্রোমণ করতে দেবে না। এইভাবে যদি মুসলিম দেশগুলো এক হতে পারে তবেই তারা পৃথিবীতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে বলে বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম মত প্রকাশ করেন।
এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বোমা হামলার হুমকি বাস্তবায়ন করেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর প্রতিশোধমূলক জবাব পাবে। ঈদুল ফিতরের নামাজের পর দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে এমন কথা বলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা।
অন্যদিকে ট্রাম্প আবারও হুমকি দিয়ে বলেন, তেহরান যদি ওয়াশিংটনের সঙ্গে নতুন পরমাণু চুক্তিতে সম্মত না হয়, তাহলে ইরানে বোমা হামলা চালানো হবে। তিনি মার্চের শুরুর দিকে ইরানের নেতৃত্বের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন, যেখানে দুই মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
খামেনি বলেন, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের শত্রুতা সবসময় ছিল। তারা আমাদের আক্রমণের হুমকি দিচ্ছে, যা আমরা খুব সম্ভব বলে মনে করি না। তবে যদি তারা কোনও ধরণের দুষ্কর্ম করে, তাহলে অবশ্যই কঠোর প্রতিশোধমূলক জবাব পাবে।
তিনি আরও বলেন, আর যদি তারা অতীতের মতো আমাদের দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চিন্তা করে, তাহলে ইরানের জনগণ নিজেরাই তাদের মোকাবিলা করবে।
যাহোক গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের চিঠির জবাব দিয়েছে ইরান। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান জানান, তেহরান ওয়াশিংটনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় যাবে না। তবে সর্বোচ্চ নেতা খামেনির নির্দেশ অনুযায়ী পরোক্ষ আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাঘাইএক টুইট বার্তায় জানান, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য `বোমা হামলার` হুমকি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার মূলনীতির প্রতি গুরুতর অবমাননা।
তিনি বলেন, হিংসা হিংসার জন্ম দেয়। শান্তি শান্তির পথ দেখায়। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই পথ বেছে নিতে হবে এবং তার ফলাফল মেনে নিতে হবে।
তবে তেহরান বরাবরই বলেছে যে, তার পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ বেসামরিক শক্তি উৎপাদনের জন্য।

 

প্রফেসর মুহম্মদ ইউনুছ শুধুমাত্র একজন অর্থনীতিবিদই নয় বরং তিনি একজন সামাজিক শিষ্টাচার বিশেষজ্ঞও : তাজুল ইসলাম
                                  

আব্দুল খালেক খোন্দকার : সমসাময়িক বিষয়ক বিশ্লেষক ও দি এশিয়া বাণীর প্রধান পৃষ্টপোষক মোঃ তাজুল ইসলাম বলেছেন ড. মুহম্মদ ইউনুছ শুধু একজন বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদই নয় বরং তিনি একজন সামাজিক শিষ্টাচার বিশেষজ্ঞও বটে।

ঈদের শুভেচ্ছা বাণীতে প্রধান উপদেষটা ড. মুহম্মদ ইউনুছ দেশবাসির উদ্দেশ্যে বলেন, ছুটিতে আপনারা নিকট আত্নীয়দের কবর যিয়ারত করবেন। আত্নীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করবেন। গরীব আত্নীয়স্বজনদের খোঁজ খবর নিবেন ও তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করবেন। নিজ ছেলেমেয়েদের তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন।

বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম মনে করেন এটা একটা খুবই ভাল পরামর্শ, কারন শহরে বসবাস করার সুবাদে আমাদের অনেকের ছেলেমেয়েরা গ্রামে বসবাসরত তাদের ঘনিষ্ঠ নিকট আত্মীয়দেরও চেনে না। এটা সামাজিক বন্ধন ও মানবিক গুনাবলীর পরিপন্থী। অন্তত ঈদের ছুটিগুলিতে গ্রামে গিয়ে নিকট আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজখবর ও তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা আমাদের কর্তব্য।

বিশেষজ্ঞ ইসলাম বলেন আত্নীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নকারী প্রকৃত মুসলমান নয়। আল্লাহ এব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। অথচ অধুনা শহরায়নের যুগে আমাদের অনেকেই এতটাই শহরমূখী হয়ে পড়েছি যে আমাদের সন্তান সন্ততি অনেকেই তাদের পিতৃ ও মাতৃ কুলের নিকটতম আত্নীয়কেও চেনে না। এক্ষেত্রে নবেল বিজয়ী রাষ্ট্রপধান প্রফেসর ডক্টর মহম্মদ ইউনুসের বক্তব্য অত্যন্ত সময়পযোগী ও জ্ঞান-গর্ভপূর্ণ। এমন একজন বিজ্ঞ প্রবীন প্রধান উপদেষ্টা লাভ করা একটি জাতির জন্য আশির্বাদ বলেও বিশেষজ্ঞ তাজুল ইসলাম অভিমত প্রকাশ করেন।

তিনি আরও বলেন ড. মুহম্মদ ইউনুছের বক্তব্যে এটাই প্রমাণিত হয় যে তিনি শুধুমাত্র একজন অর্থনীতিবিদই নন বরং তিনি একজন সামাজিক শিষ্টাচার বিশারদও বটে।

সৌদির ঘারে কাঁঠাল ভেঙ্গে ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করছেন আর ইউক্রেনের অর্থে গাজায় বিলাসখানা তৈরির পরিকল্পনা করছেনঃ বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
                                  

বিশেষ প্রতিবেদক : সমসাময়িক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও দৈনিক এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা মোঃ তাজুল ইসলাম বলেছেন, সৌদি আরবের ঘারে কাঁঠাল ভেঙ্গে ট্রাম্প রাশিয়-ইউক্রেন যুদ্ধের মীমাংসা করছেন। অথচ পাশেই ইসরায়েল শত শত নিষ্পাপ নারী-পুরুষ ওশিশু হত্যা করছে সে ব্যাপারে এসব বড় বড় দেশের যেন কোন দৃষ্টিই নেই।

সৌদি আরব তার নিজের তেল-খরি পুড়িয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধ করছেন। আর ট্রাম্প ইউক্রেন থেকে অর্থ-খনি এনে ঐগুলি নিরীহ ফিলিস্থনি নারী ও শিশু হত্যার কাজে ব্যবহার করবেন ও গাজায় বিলাসখানা বানাবেন। আর সৌদি আরব ট্রাম্পের এই কুটিল চালের মধ্যস্থতা করছেন। এটা কেমন একটা প্রহসন।

বিশ্লেষক তাজুল বলেন সৌদি আরবের উচিত ছিল আগে ফিলিস্থিনে শান্তি স্থাপনের চষ্টা করা। আরব ভূখন্ডেই ইসরায়েল প্রায় দেড় বছর ধরে হাজার হাজার নিরপরাধ নারী ও শিশুকে হত্যা করে আসছে। যুদ্ধ বিরতির চুক্তি লংঘন করে ইসরায়েল এই পবিত্র রমজান মাসে প্রতিদিনই নিরীহ ফিলিস্থিনিদের হত্যা করছে। গত এক সপ্তাহে কয়েকশত মানুষ হত্যা করেছে যাদের ৭০ শতাংশই শিশু। ইসরায়েল এযাবত গাজায় ৫০ হাজারেরও বেশি নিরপরাধ মানুষ হত্যা করেছে।
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন গাজায় মানবতার পরাজয় হয়েছে। পৃথিবীর কোন দেশ নিরপরাধ শিশু সহ এত মানুষ ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে নাই। আমেরিকার সরাসরি মদদে ইসরায়েল পৃথিবীর ইতিহাসে এত জঘন্য হত্যাকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে অথচ আমেরিকা কখনও সৌদি আরবকে বলে নাই যে আপনি এই যুদ্ধের মীমাংসা বা মধ্যস্থতা করুন। কিন্তু এখন সৌদি আরবের দেন-দরবার ও মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ মীমাংসার পথে। ইউক্রেন থেকে ট্রাম্প ফায়দা লুটে নিয়ে নিবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

আজ অসহায় গাজাবাসীর চিৎকার ও আর্তনাদে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত সাহায্যের জন্য সেখানকার নারী-পুরুষ ও শিশু গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কান্না করছে। কিন্তু এই কান্নার ধ্বনি সৌদিআরব ও আমেরিকার কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না। সৌদি আরব রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য নিজের তেল-খড়ি পুড়িয়ে মধ্যস্থতা করছেন এটা খুব ভাল কথা। কিন্তু প্রতিবেশি একটি মুসলিম জনপদের নিরপরাধ মানুষকে যে নিষ্ঠুর ইসরায়েল প্রতিনিয়ত হত্যা করছে এই বিষয়টিকে সৌদি আরবের সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মুখপাত্র আব্দেল লতিফ আল-কানুয়া। উত্তর গাজার জাবালিয়ায় এক শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি বোমা হামলায় প্রাণ হারান এই নেতা।
যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করে গত ১৮ মার্চ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকা গাজায় হামলা শুরুর পর থেকে বেসামরিক নাগরিকদের পাশাপাশি হামাস ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গত ২৩ মার্চ ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন খান ইউনিসের শিক্ষা বিভাগের প্রধান সুপারভাইজার জিহাদ আল-আঘা। স্ত্রী ও ৩ সন্তান নিয়ে তিনি নিজ বাড়িতেই ছিলেন। বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে সপরিবারে তাঁকে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনারা।
এক দিন পর ২৪ মার্চ ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন মানার আবু খাতের নামের আরও এক সরকারি কর্মকর্তা। তিনি খান ইউনিস শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফের হামলায় প্রাণ হারায় তাঁর দুই পুত্রও।

এ দুই সরকারি কর্মকর্তাকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানানোর তীব্র নিন্দা করেছে মানবাধিকার সংস্থা ইউরো মেডিটারেনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটর।
এই দুজন ছাড়াও ১৫ মার্চ উপত্যকায় পুনরায় হামলা শুরুর পর ১৮ মার্চ পর্যন্ত তিন দিনে নিহত হয়েছেন আরও চারজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, যাঁরা বিচার বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১০ হামাস নেতার। তাঁরা হলেন সংগঠনটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইসমাইল বারহৌম, সালাহ আল বারদাওয়েল, সাবেক হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ে, সাবেক হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার, সালেহ আল সারাহ, মারওয়ান ইস্সা, জাকারিয়া মুয়াম্মার, জামিলা আশ-শান্তি এবং জাওয়াদ আবু শাম্মালা।
এছাড়াও গাজায় গত ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮২ জন আহত হয়েছে, জানায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হামাসের মুখপাত্র আবদুল-লতিফ আল-কানোয়া গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া শহরে নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে, এবং গ্রুপটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, নেতৃবৃন্দ ও মুখপাত্রদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলা তাদের মনোবল ভেঙে ফেলতে পারবে না।

লেবাননে, ইয়োহমোর আল-শাকিফ নামক দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় অন্তত তিন জন নিহত হয়েছে, বলে জানায় স্থানীয় মিডিয়া ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েল দাবি করেছে যে, তারা দক্ষিণ লেবাননের দেরদঘাইয়া এলাকায় একটি হিজবুল্লাহ কমান্ডারকেও হত্যা করেছে।
ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়াতেও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, লাতাকিয়া উপকূলীয় শহরটির আশেপাশে একাধিক আক্রমণ চালানো হয়েছে, বলে জানায় সিরিয়ার মিডিয়া।

সাধারন ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে কম অপরাধী পুলিশ সদস্যদের শুধরানোর সুযোগ দেয়া যেতে পারে : বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
                                  

আবদুল খালেক খোন্দকার : সমসাময়িক বিষয়ক বিশ্লেষক ও দৈনিক এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা জনাব তাজুল ইসলাম পুলিশ সংস্কার কমিশনের উদ্দেশ্যে বলেছেন, গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য ব্যতীত অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের সাধারন ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে তাদের শুধরানোর সুযোগ দেয়া উচিত।

দেশব্যপি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে হলে গণহারে পুলিশ ছাটাই ও বহিষ্কারের পরিবর্তে তাদের বিশেষ শর্তে ও কঠোর নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে কাজে লাগানো উচিত।

বিশ্লেষক ইসলাম বলেন, অপরাধ দমনে পেশাদারি পুলিশ বাহিনী বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ হয়ে থাকেন। এমন কথা প্রচলিত আছে যে, পুলিশ বাতাসেও অপরাধের গন্ধ পায়। এমন পেশাগত দক্ষ বাহিনীকে ঢালাওভাবে প্রত্যাহার করা হলে অপরাধ দমনে দক্ষতার অভাব দেখা দিতে পারে।

তিনি বলেন, বর্তমানে পুলিশ ব্যবস্থার বেহাল অবস্থার সুযোগ নিয়ে অপরাধিরা মাথা চারা দিয়ে উঠেছে। লক্ষ করলে দেখা যায়, সম্প্রতি দেশে ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে প্রকাশ্য প্রতারণা উদ্বেগহারে বেড়ে গেছে। সড়ক দূর্ঘটনাও উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। কিন্তু রাস্তা-ঘাটসহ সর্বক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা থাকলে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হতো যা বিকল্প ব্যবস্থায় কার্যকরী নয়।

এই বিশ্লেষক বলেন, ছাত্র পরিচালিত গণ আন্দোলনের পরে দেশের পুলিশ ব্যবস্থা সম্পূর্নরূপে ভেঙ্গে পরেছিল। ইতোমধ্যে বহু সংখ্যক পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তা পালিয়েছেন ও বহিষ্কার হয়েছেন। বাদ বাকীরাও মনোবল হারিয়ে বিপর্যস্ত ছিলেন।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা সহ রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ব্যর্থতার কথাও অনেকে বলাবলি করছেন। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন বলেও অনেকে দাবি করছেন। যার ফলে অপরাধের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে বলেও অনেকে মত প্রকাশ করেছেন।

এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম বলেন, যে সব পুলিশ সদস্য গুরুতর অপরাধে জরিত নয় সেই সকল পুলিশদের ভুল সংশোধনের নিমিত্ত সাধারন ক্ষমা ঘোষণা করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের সম্পৃত্ত রাখা উচিত।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ বিভাগে মৌলিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত, আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা এবং তাদের বেতনভাতা, আবাসন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং কল্যাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গীকার করা হয়েছে।

পুলিশ বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই বিশ্লেষক বলেন, দুর্ণীতি রোধ ও মানুষের মধ্যে নৈতিকতা বৃদ্ধি করতে এমন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের পুলিশসহ অন্যান্য বিভাগে নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জ্ঞানী ও মহৎ ব্যক্তিদের উচ্চপদে নিয়োগ প্রদানের ব্যবস্থা প্রচলন করতে হবে যাতে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির পাশাপাশি কর্মকর্তাদের নৈতিকগুনেরও প্রতিফলন ঘটে। তাদের নৈতিক গুনাবলীর কারনে সমাজ ও সাধারন মানুষ উপকৃত হবেন। আর এভাবেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে দুর্নীতি ও নৈতিক অবক্ষয় দূর হবে।
ড. বেনজির, ড. ওমুক ড. তমুক ও হারুনদের মত পুলিশ প্রধানদের ডিগ্রির অভাব ছিল না। কিন্তু তাদের নৈতিকতার অভাব ছিল। আর সে কারনেই গোটা পুলিশ বাহিনীকে তারা কলঙ্কিত করেছিল। তারা জনগণের জান-মাল রক্ষার পরিবর্তে বিভিন্ন অপকর্মে জরিয়ে পরে এবং দেশ ও জনগণের অকল্পনীয় ক্ষতি তো করেছনই বরং গোটা পুলিশ বাহিনীকে বদনামের ভাগিদার করেছেন যা সমসাময়িক কোন দেশের ইতিহাসে নাই।
বাংলাদেশে যে সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা রয়েছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে সময়ের পরিক্রমায় পুলিশ বিভাগে যুগোপযোগী সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন পেশাগত প্রণোদনা ও উৎকর্ষতা নিশ্চিত করা ক্রমাগত কঠিন হচ্ছে, তেমনিভাবে পুলিশ সেবার প্রত্যাশিত মানে ঘাটতিসহ এ বিভাগের প্রতি জনগণের প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির ঘাটতি হচ্ছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও কথার লড়াই বন্ধ হওয়া উচিত : তাজুল ইসলাম
                                  

আব্দুল খালেক খোন্দকার : দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দের মধ্যে ইদানিং ভুল বুঝাবুঝি, সন্দেহ ও কথার লড়াই চলছে। এ ব্যাপারে সমসাময়িক বিষক বিশ্লেষক ও দৈনিক এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা তাজুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ, ভুল বোঝাবুঝি ও কথার লড়াই বন্ধ হওয়া উচিত। বাস্তবিক ভাবে লক্ষ করলে দেখা যায় বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কথার লড়াই যেন বেড়েই চলেছে। বিশেষকরে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির মধ্যে এই কথার লড়াই বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য ও মন্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।

বিশ্লেষক তাজুল বলেন, ২০২৪ এর জুলাই-আগষ্টে একহাজার ছয়শত মানুষের মূল্যবান প্রাণ আর ২০ হাজার মানুষের ঝরে যাওয়া রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন এই দেশ। অথচ রাজনৈতিক দলগুলার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও কথার লড়াই জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলার উচিত হবে কথার লড়াই বন্ধ করা এবং দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা বজায় থাকতে সহায়তা করা। তা না হলে জনগণ যদি ভুলের মধ্যে পরে যায় তাহলে কারও জন্যে মঙ্গলজনক হবে না। তাই বিএনপির মতো বৃহৎ একটি দলের এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারও উষ্কানীতে কান না দিয়ে দলের ভিতর যেন শৃঙ্খলা বজায় থাকে সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এই বিশ্লেষক মনে করেন, চলমান সংষ্কার দেশের রাজৈনতিক দলগুলোর জন্য আত্নশুদ্ধির একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। এই আত্নশুদ্ধি কার্যক্রম সকল রাজনৈতিক দলকে সানন্দে গ্রহণ ও সহযোগিতা করা উচিত। এর ফলে প্রতিটি রাজনৈতিক দল আরও গণমূখী হয়ে উঠবে এবং দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারবে।
তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে যে জুলাই-আগষ্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবটিতে শিশু সহ কচিকাঁচা ছাত্র ও সাধারন মানুষের আত্নত্যাগ কোন নির্দিষ্ট দলকে ক্ষমতার মসনদে বসানোর জন্য সংঘটিত হয় নাই। এই বিপ্লব ছিল দেশের মালিকানা, দেশের মানুষের হাতে ফিরিয়ে দেয়া। সর্বোপরি ন্যায়কে অন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল এই বিপ্লবের প্রধান উদ্দেশ্য। কোন রাজনৈতিক দলেরই একথা ভাবার সুযোগ নাই যে, নিষ্পাপ শিশুদের রক্তের বিনিময়ে যে রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারীতা ও দুঃশাসন দেশ থেকে বিদূরীত হয়েছে সেই স্বেচ্ছাচারীতা ও দুঃশাসনের পূণঃসম্ভাবনা আবার কোন না কোনভাবে ফিরে আসুক। অন্যায় ও দূর্ণীতির কারণ দুর না করে হুট করে নির্বাচন করে ফুট করে কোন দলকে স্বৈরাচারী হতে দেয়ার সুযোগ করে দেয়া যাবে না বলে দেশের শান্তিকামী ও সচেতন মানুষ মনে করেন। এজন্য সঠিক সংষ্কারের মাধ্যমে দেশের সকল বিভাগকে পরিশুদ্ধ করা সময়ের দাবী।
বিশ্লেষক ইসলাম বলেন, তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের খবর শোনা যাচ্ছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য ভাল। এতে গণতন্ত্রের বিকাশে সহায়তা হবে। তরুণদের দল গঠনের ব্যাপারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, তরুণদের রাজনৈতিক দল গঠনে আমরা সাধুবাদ জানাই তবে সরকার ও প্রশাসনের সহায়তা নিলে জনগণ তাতে নিন্দা জানাবে। বিএনপির মহাসচিবও তরুণদের রাজনৈতিক দল গঠনকে স্বাগত জানিয়েছেন। এখানে উল্লেখ করতে হয় যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশে প্রথম বহুদলীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়া রাজনৈতিক সহনশীলতার পরাকাষ্টা দেখিয়ে নিজে একজন সামরিক বাহীনির ব্যক্তি হওয়া সত্বেও এই দেশে একাধিক গণতন্ত্র দলের কার্যক্রম ও বিকাশকে সহায়তা করেছিলেন। সে দিক বিবেচনা করলে বিএনপি একটি মহৎ দল। কাজেই বর্তমানের বিএনপিও তাদের প্রতিষ্ঠাতার পদাঙ্ক অনুসরন করবে বলে বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম মনে করেন। অবশ্য এরই মধ্যে অন্যান্য কিছু দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।
অনেকেই নতুন এই দলকে সরকারের এক অভিসন্ধি হিসাবে দেখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু গণতন্ত্রের কল্যানে দেশ ও জনগণের কল্যাণে এখন সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে সহমর্মিতার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত এবং সকলে মিলেমিশে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে গণতান্ত্রিকভাবে এগিয়ে নিতে হবে এটাই এখন সবার কামনা। আর উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানার উক্তিটি ধারণ করতে হবে "আমরা দায়িত্বে যাব ক্ষমতায় নয়।" এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যা জনৈক উপদেষ্টা মহাদয়া তাঁর একটি কথায় উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেন, সকল রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য "আমরা দায়িত্বে গেলে" "আমরা ক্ষমতায় গেলে" একথা সঠিক নয়। কারণ রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করে জন সেবা করার পরিবর্তে ক্ষমতা প্রদর্শন করলে তা গণবিরোধী কাজে পরিণত হয়। বিধায় রাজনৈতিক নেতাদের বলা উচিত "আমরা দায়িত্বে গেলে" “আমরা ক্ষমতায় গেলে” একথা তাদের বলা আদৌ উচিত নয়। উপদেষ্টা মহাদয়ার এই নীতি যদি দেশের রাজনৈতিক দল ও নেতারা মনে ধারন করেন তবে দেশে গণতন্ত্রের ঘোমটার আড়ালে আর কোন স্বৈরতন্ত্রের জন্ম হবে না, এটাই দেশের মানুষের বিশ্বাস। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে দেশের রাজনৈতিক দলগুলার শুভবুদ্ধি জাগ্রত হোক। এটাই সবার কামনা।

২০ জানুয়ারির মধ্যে হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধ বিরতির জোর প্রস্তুতি : ইসরায়েলকে যদি পূর্বেই থামানো যেত তাহলে গাজায় এত মানুষ নিহত হতো না : বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
                                  

আব্দুল খালেক খোন্দকার : সমসাময়িক বিষয়ক বিশ্লেষক ও দৈনিক এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা তাজুল ইসলাম বলেন, ২০ জানুয়ারির মধ্যে হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির শেষ সময় নির্ধারণ করে জোর প্রস্তুতি চলছে। জিম্মিদের মুক্তির বিষয়েও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ নেয়া হল ঠিকই, কিন্তু ততক্ষনে ইসরায়েল গাজাকে একটি মৃতপূরীতে পরণিত করে ফেলেছ। বিগত দেড় বৎসর যাবত ইসরায়েল গাজায় প্রায় ৪৭ হাজার নির্দোষ মানুষকে হত্যা করেছে ও লক্ষাধিক মানুষকে পঙ্গু ও মানুষিকভাবে চির অক্ষম করে দিয়েছে যাদের ৭০% শিশু। গাজার নারী, শিশু স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদ মানবতাবাদী বিশ্ব নেতাদের কর্ণ-কূহরে এতদিন প্রবেশ করে নাই।
বিশ্লেষক তাজুল বলেন, সৌদি আরবসহ পৃথিবীর সামর্থ্যবান পরাক্রমশালী দেশগুলো ইসরায়েলের এই নির্লজ্জ হত্যাকান্ড থামাতে যদি নূন্যতম কার্যকরী ভূমিকা রাখতেন তবে ইসরায়েল কখনই এত শিশু ও নির্দোষ সাধারন মানুষ হত্যা করার সাহস পেত না।
তাজুল ইসলাম বলেন, সবার উপরে হচ্ছে মানব ধর্ম। আজ লস এ্যানজেলস আগুনে পুরে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। সেখানে কে খ্রীষ্টান, কে আমেরিকার আর কে মুসলমান তা দেখার বিষয় নয়। মানুষের জান-মাল রক্ষাই মূখ্য বিষয়। মুসলিমেরা লস এ্যাঞ্ছেলস বাসীদের নিরাপত্তার জন্য আজান দিচ্ছেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন। এটাই তো স্বাভাবিক। ফিলিস্থিনে খ্রীষ্ট সম্প্রাদয়ের লোকজনও বাস করেন। এত মুসলিম শিশু হত্যার প্রতিবাদে তারা কখনও মিছিল করেছেন বা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন বলে জানা যায় নাই।
আমরা এখন শুনতে পাচ্ছি যে মিঃ ট্রাম্পের অভিষিক্ত দিনের পূর্বেই তড়িঘড়ি করে হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বিরতির আয়োজন চলছে। কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন যে, ইসরায়েল ও হামাস চুক্তির বিষয়ে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছেন। এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, আলোচনার বর্তমান অবস্থা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। তারা আশা করছে, যে এই দফার আলোচনায় `পরিষ্কার ও বিস্তারিত একটি চুক্তিতে` উপনীত হবে।
তাজুল ইসলাম প্রসঙ্গ টেনে আরও বলেন, আজ এতদিন পরে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে চুক্তি সম্পাদিত করার তরিঘরি করা হচ্ছে। এই যুদ্ধ বিরতি প্রকৃতই যদি নিরীহ মানুষের জীবন রক্ষার্থে হতো তাহলে দেড় বৎসর যাবত হাজার হাজার শিশু ও সধারন মানুষের প্রাণ রক্ষা পেত ও অকালে নিহত হত না।
য্দ্ধু বিরতি আলোচনার মধ্যেই গত কয়েক দিনে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৭০ জন শিশু নিহত হয়েছে। এটা কোন ধরনের আলোচনা! তাজুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন।
মূলত ১৬ মাসে গড়ানো এই যুদ্ধে গাজার ফিলিস্তিনি শিশুরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল গত ৮ জানুয়ারি বলেন, “নতুন বছর গাজার শিশুদের জন্য আরও বেশি মৃত্যু ও দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে।”
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গাজায় এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
ইউনিসেফ সহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে গাজার বেঁচে থাকাসব শিশুই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও আতঙ্ক নিয়ে অবশিষ্ট জীবন কাটাবে। বিষয়টি খুবই ভয়াবহ। এজন্য তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দরকার।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার হাজার হাজার শিশু যুদ্ধের মধ্যে সঙ্গীহীন বা তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আর ভূখণ্ডটির প্রায় সব শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দরকার।
এই যুদ্ধ শুরুর আগেই গাজার ৫ লাখ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক সমর্থন প্রয়োজন বলে ইউনিসেফ বিবেচনা করেছিল। আজ গাজার প্রায় সব শিশুর ঐ সহায়তাগুলো দরকার আর তাদের সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি।

২০০ টাকা মূল্যমানের নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্প ছাপিয়ে মূল্যবান কাগজের সাশ্রয় করা উচিত : বিশ্লষক তাজুল ইসলাম
                                  

আব্দুল খালেক খোন্দকার : সমসাময়িক বিষয়ক বিশ্লেষক ও এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা জনাব তাজুল ইসলাম মনে করেন, ২০০ টাকা মূল্যমানের নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্প ছাপিয়ে মূল‍্যবান কাগজের সাশ্রয় করা উচিত।


তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ১০০ টাকা মূল্যের ২টি ষ্ট্যাম্প ব্যবহার করে ২০০ টাকা মূল্য মানের ষ্ট্যাম্পের প্রয়োজন মেটানো হচ্ছে। ফলে এই অতি মূল্যবান কাগজের প্রচুর অপচয় হচ্ছে।


১০০ টাকা মূল্যের ষ্ট্যাম্পে যতটুক ফাঁকা স্থান থাকে সেখানেই পূর্ণ বক্তব্যটি লেখা সম্ভব। কিন্তু ২০০ টাকা মূল্যের ষ্ট্যাম্প না থাকায় ১০০ টাকা মূল্যের দু’টি পাতা ব্যবহার করার প্রয়োজন হচ্ছে। আর এর ফলে এই মূল্যবান কাগজের ব্যপক অপচয় হচ্ছে। সুতরাং এক পাতা বিশিষ্ট ২০০ টাকা মূল্যমানের ষ্ট্যাম্পের ব্যবস্থা থাকলে অযথা ১০০ টাকা মূল্যের দুইটি পাতা ব্যবহার করা লাগত না। ফলে বিপুল অর্থ ও সম্পদ সাশ্রয় করা সম্ভব হতো।


সুতরাং বিশ্লেষক মোঃ তাজুল ইসলাম মনে করেন, ২০০ টাকা মূল্যমানের নন-জুডিশিয়াল রেভিনিউ ষ্ট্যাম্পের পাতা ছাপানো ও এর প্রতুতলতা প্রাপ্যতা সার্বজনিন হলে দেশের প্রচুর অর্থও যেমন সাশ্রয় করা যেত তেমনিভাবে নন-জুডিশিয়াল সংক্রান্ত কার্যাবলী মানুষের জন্য সহজ হয়ে যেত।


এ কথা জানা যায় যে, দেশের চারটি বিভাগীয় শহরের নিম্ন আদালতে গড়ে প্রতিদিন ২০০, ১০০ তার চেয়ে কম মূল্যমানের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের ব্যবহার সবচেয়ে বেশী। আর মাঝে মাঝেই নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই সুযোগে বিক্রেতাদের একটি অংশ প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ছয় থেকে দশ গুণ বেশি স্ট্যাম্পের অতিরিক্ত মূল্য আদায় থাকে।


সংকটের কারনে একটি আদালত ভবন এলাকায় ১৫০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ৯০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে বলে খবরে জানা গয়েছিল। বন্দর নগরী এবং রাজধানী ঢাকায় আবাসিক প্লটের জন্য আবেদন করতে ইচ্ছুক লোকদের একটি ভাল সংখ্যক, কাঙ্ক্ষিত স্ট্যাম্প সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছিল বলেও জানা যায়।


নিরাপত্তা কাগজের অভাবে বাংলাদেশ সরকারি প্রেসে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ছাপানোর কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হয়ে থাকে।


স্ট্যাম্পের সরবরাহের অবস্থান প্রকৃত চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট অপর্যাপ্ত হওয়ায় ক্রেতারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।


নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পগুলি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সহ অন্যান্য বাণিজ্যিক চুক্তি ও সমস্ত ধরণের আইনি কার্যক্রমের সম্পাদনের জন্য অপরিহার্য।


উদাহরণস্বরূপ, সমস্ত ধরণের ব্যবসায়িক চুক্তিতে প্রবেশ করতে হলে, চূড়ান্তকরণ এবং আইনি সমাপ্তির জন্য এই স্ট্যাম্পগুলির ব্যবহার প্রয়োজন। স্ট্যাম্পগুলি অবশ্যই নথিতে ব্যবহার করতে হবে যাতে অ্যাটর্নির ক্ষমতা প্রসারিত করা, বিক্রয় এবং বিক্রয় চুক্তির জন্য চুক্তি করা, দলিলের প্রত্যয়িত অনুলিপি প্রস্তুত করা, বিবাহের চুক্তি, হলফনামা ঘোষণা করা ইত্যাদি। এইভাবে, এটা স্পষ্ট হওয়া উচিত যে এই স্ট্যাম্পগুলির প্রাপ্যতার সংকট বা ঘাটতি বিপুল সংখ্যক নিয়মিত ব্যবহারকারীদের পক্ষে সবচেয়ে অসুবিধার এসব কিছুই


তাই যে বক্তব্য এক পাতাতেই সাবলীলভাবে লিখে শেষ করা যায় সেই বক্তব্য লিখতে দুই পাতা ব্যবহার করা, আবার এই মূল্যবান কাগজ, নিতান্তই জাতীয় সম্পদের অপচয় ও অপব্যবহার।
লক্ষ্য করা যায় যে শুধু এই রেভিনিউ ষ্ট্যাম্পই নয়, সমাজে আমাদের জাতীয় সম্পদের ব্যপক অপচয় ও অপব্যবহার হচ্ছে। দেশের মূল্যবান প্রকৃতিক সম্পদের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই এই গ্যাস নানাভাবে অপচয় হচ্ছে। অযথা চুলা জ্বালিয়ে রেখে এই গ্যাসের মারাত্নক ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে। পানির অপচয় আমাদের দেশে সবচেয়ে বশী। এক বালতি পানিতে যে কাজ হয় তা করতে পাঁচ-ছয় বালতি পরিমান পানি ব্যবহার করছি।


ইসলাম ধর্মে অপব্যয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ। সূরাঃ আল-ইসরা, আয়াত-২৭.

এখানে ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। মধ্যপস্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “এবং যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করেনা, কৃপনতাও করেনা, আর তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী” [সূরা আল-ফুরকান: ৬৭]

যাহোক ব্যক্তি পারিবারিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রেই আমাদের অপব্যয় ও অপচয় বন্ধ করতে হবে তবেই আমরা জাতা হিসাবে উন্নতি করতে পারব।


   Page 1 of 6
     মতামত
বিশ্বের সবচেয়ে বড় খোয়ার বা জেলখানা
.............................................................................................
বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে যা করণীয়
.............................................................................................
পাকিস্তান কেন ভেঙ্গে গেল?
.............................................................................................
ভারত-পাকিস্তান; রাশিয়া-ইউক্রেন; ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধ থামিয়ে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার মাধ্যমে ট্রাম্প কি শান্তি স্থাপনের হ্যাট্রিক করতে পারবেন? বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
.............................................................................................
পিনাকী ভট্টাচার্যের কৃতিত্ব ও বিতর্কিত বিষয়
.............................................................................................
চায়না ক্যান্টন ফেয়ার, বিশ্ব বানিজ্যের এক মেলবন্ধন
.............................................................................................
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার এখনই কেন উপযুক্ত সময়?
.............................................................................................
কারা রাজাকার ও কি তাদের মিশন-ভিশন-প্যাশন?
.............................................................................................
`১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের বিজয় ফিলিস্তিন ইস্যুর পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে ওঠে`
.............................................................................................
আগ্রাসী দেশের হুমকি থেকে বাঁচতে হলে ইরানকে পারমানবিক অস্ত্রে সক্ষম হতে হবেঃ বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
.............................................................................................
প্রফেসর মুহম্মদ ইউনুছ শুধুমাত্র একজন অর্থনীতিবিদই নয় বরং তিনি একজন সামাজিক শিষ্টাচার বিশেষজ্ঞও : তাজুল ইসলাম
.............................................................................................
সৌদির ঘারে কাঁঠাল ভেঙ্গে ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করছেন আর ইউক্রেনের অর্থে গাজায় বিলাসখানা তৈরির পরিকল্পনা করছেনঃ বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
.............................................................................................
সাধারন ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে কম অপরাধী পুলিশ সদস্যদের শুধরানোর সুযোগ দেয়া যেতে পারে : বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
.............................................................................................
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও কথার লড়াই বন্ধ হওয়া উচিত : তাজুল ইসলাম
.............................................................................................
২০ জানুয়ারির মধ্যে হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধ বিরতির জোর প্রস্তুতি : ইসরায়েলকে যদি পূর্বেই থামানো যেত তাহলে গাজায় এত মানুষ নিহত হতো না : বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
.............................................................................................
২০০ টাকা মূল্যমানের নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্প ছাপিয়ে মূল্যবান কাগজের সাশ্রয় করা উচিত : বিশ্লষক তাজুল ইসলাম
.............................................................................................
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন এই মুহুর্তে বাংলাদেশের জন্য সময়োপযোগী নয় : বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
.............................................................................................
‘না’ ভোট ব্যবস্থা গণতন্ত্র বিকাশে বড় বাধা : বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
.............................................................................................
বিশ্লষক তাজুল ইসলামের অভিমত : বৈধভাবে গ্যাসের সংযোগ বাড়িয়ে গ্যাসের অপচয়রোধ ও দূর্ণীতিবাজদের টাকার পাহাড় গড়া বন্ধ করা যেত পারে
.............................................................................................
ঢাকা-করাচি সরাসরি বিমান যোগাযোগ : “নির্বিঘ্ন ভ্রমণে জনগণের আহ্বানের উত্তর"
.............................................................................................
কলকাতা প্রেসক্লাবের নিবন্ধন ৬৮ বছর পেরিয়ে- ২
.............................................................................................
কলকাতা প্রেসক্লাবের ৬৮ বছর পেরিয়ে - ১
.............................................................................................
অল্টারনেটিভ (বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা)
.............................................................................................
প্রাথমিক শিক্ষায় উন্নয়নের ধারা
.............................................................................................
প্রত্যাশা: আত্মশুদ্ধির উদ্বোধন
.............................................................................................
গণহত্যার শিকারদের স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস
.............................................................................................
বিনোদনের নামে অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বিরত থাকি
.............................................................................................
ভারত ও বাংলাদেশের উচিত তিস্তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করা
.............................................................................................
ভারত সীমান্তে বেআইনি হত্যাকাণ্ড: বিচার চাইছে বাংলাদেশি পরিবার
.............................................................................................
নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে?
.............................................................................................
বন্ধুত্বই গড়বে সম্প্রীতির বাংলাদেশ
.............................................................................................
বানালিটির কুফল এবং এর পরে যা হয়
.............................................................................................
মধ্যবিত্তের কান্নার শেষ কোথায়?
.............................................................................................
চীন বিশ্বের কাঠগোড়ায়: উইঘুরদের বলপূর্বক বন্ধাকরনের ফলে জন্মহারে হ্রাস
.............................................................................................
`ডা. মুরাদ আপনি দোষী থাকবেন দুনিয়া ও আখেরাতে`
.............................................................................................
বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ‘বঙ্গমাতা’
.............................................................................................
দেশে করোনার ২য় পর্যায়ের ধাক্কা আসতে পারে : ডা. বেনজির
.............................................................................................
মানুষের বিবেকবোধ কোথায়?
.............................................................................................
মার্কিন বিশেষজ্ঞের বার্তা, ১৯১৮ সালের ফ্লু`র মতোই মারণরূপ নিতে পারে করোনা
.............................................................................................
কোরবানির গরু অনলাইনে কিনবেন বাণিজ্যমন্ত্রী
.............................................................................................
এক মাসে চার বলিষ্ঠ নেতা হারাল আ.লীগ
.............................................................................................
টেস্ট কমায় বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের
.............................................................................................
পুষ্টি সঠিকভাবে না পেলে ওষুধ আর হাসপাতাল দিয়ে কাজ হবে না
.............................................................................................
করোনা ভাইরাস: সরকারী ত্রাণ, প্রণোদনা ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন
.............................................................................................
প্রতিনিয়ত শক্তিশালী হচ্ছে করোনাভাইরাস: গবেষণা
.............................................................................................
করোনা সন্দেহ হলে কী করবেন, কোথায় যাবেন?
.............................................................................................
গর্ভবতী মায়েরা প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হবেন না
.............................................................................................
‘১৩ ঘণ্টায় ১০ মিনিট’ অলৌকিকভাবে বাঁচার বর্ণনা দিলেন সুমন
.............................................................................................
করোনার আরো তিনটি নতুন উপসর্গের সন্ধান পেয়েছে সিডিসি
.............................................................................................
নিজে সচেতন হোন, অন্যকেও সচেতন হতে বলুন : হানিফ সংকেত
.............................................................................................

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : মো: তাজুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়: ২১৯ ফকিরের ফুল (১ম লেন, ৩য় তলা), মতিঝিল, ঢাকা- ১০০০ থেকে প্রকাশিত । ফোন: ০২-৭১৯৩৮৭৮ মোবাইল: ০১৮৩৪৮৯৮৫০৪, ০১৭২০০৯০৫১৪
Web: www.dailyasiabani.com ই-মেইল: [email protected]
   All Right Reserved By www.dailyasiabani.com Dynamic Scale BD