গণহত্যার শিকারদের স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস
মো: জুবাইর: প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস হিসাবে পালিত হয়, যা গণহত্যার অপরাধ এবং এই অপরাধ প্রতিরোধের শিকারদের স্মরণ ও মর্যাদার আন্তর্জাতিক দিবসও।
১৯৪৯ সালের ৯ই ডিসেম্বরে প্রথমবারের মত জাতিসংঘে গণহত্যা প্রতিরোধ ও এ সংক্রান্ত শাস্তি বিষয়ক প্রথাটি গৃহীত হয়। এই দিবসের মূল লক্ষ্য হল গণহত্যা বিষয়ক প্রথাটির ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং গণহত্যায় মৃত ব্যক্তিদের স্মরণ ও সম্মান করা। এই দিবসের মূল লক্ষ্য হল গণহত্যা বিষয়ক প্রথাটির ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং গণহত্যায় মৃত ব্যক্তিদের স্মরণ ও সম্মান করা। এটি জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রকে এ-ও স্মরণ করিয়ে দেয় যে তাদের নিজ জনগণকে গণহত্যার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য দায়িত্ব আছে। গণহত্যার উস্কানি বন্ধ করা ও গণহত্যা ঘটলে তা প্রতিরোধ করা এই দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্ত জেলা কক্সবাজারে বিস্তীর্ণ শিবিরে বসবাসকারী রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা মুসলমানরা ১.২ মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা, যাদের অধিকাংশই ২৫শে আগস্ট, ২০১৭-এ মিয়ানমারে নৃশংস সামরিক দমনপীড়ন থেকে পালিয়েছিল, সচেতনতা বাড়াতে সমাবেশ করে দিনটিকে চিহ্নিত করেছে। তাদের দুর্দশার কথা এবং রাখাইন রাজ্যে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অঙ্গীকারের কথা মনে করিয়ে দেয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, "গণহত্যা স্মরণ দিবস" স্মরণে রোহিঙ্গারা ৩৪টি ক্যাম্পের মধ্যে ১২টিতে সমাবেশ করেছে। সমাবেশে, রাষ্ট্রহীন জনগণের সম্প্রদায়ের নেতারা রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। সমাবেশে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাতটি দাবি তুলে ধরে, যার মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গা গণহত্যার শিকারদের বিচার, নাগরিকত্বের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মিয়ানমারের বিতর্কিত ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল করা যা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নাগরিকত্ব অস্বীকার করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, প্রত্যাবাসন, সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ। প্রত্যাবাসনের পর জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ধ্বংস এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। অনেক মানবাধিকার গোষ্ঠী হিংসাত্মক সামরিক দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি ভারতের উদাসীনতাকে চিহ্নিত করেছে। আনুমানিক ৪০,০০০ রোহিঙ্গা ভারতে রয়েছে, যাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০,০০০ ইউএনএইচসিআর-এ নিবন্ধিত। একইভাবে, ২০১৬ সাল থেকে, অতিজাতিবাদী হিন্দু গোষ্ঠীগুলি ভারতে মুসলমানদের উপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণের অংশ হিসাবে ভারতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের টার্গেট করেছে এবং তাদের দেশ থেকে বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছে। অক্টোবর ২০১৮ থেকে, ভারত সরকার ১২ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে, দাবি করেছে যে তারা স্বেচ্ছায় চলে গেছে। সহায়তা বাড়াতে জাতিসংঘের বিশেষ দূত: ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয় থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত রোহিঙ্গা শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থন বাড়ানোর জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। “যেমন মহাসচিব এই গৌরবময় অনুষ্ঠানে পুনর্ব্যক্ত করেছেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অধিগ্রহণের পরে, মিয়ানমারে মানবিক, মানবাধিকার এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংকটের ব্যাপক, টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এটিকে ভুলে যাওয়া সংকট হতে দিতে পারি না, "তিনি বিবৃতিতে বলেছিলেন। তিনি যোগ করেছেন: "আমি এই অঞ্চলের দেশগুলির বৃহত্তর নেতৃত্বের জন্য বাংলাদেশকে সমর্থন এবং মিয়ানমারের সাথে তাদের প্রভাব কাজে লাগানোর জন্য শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখব।" বিশেষ দূত আরও জোর দিয়েছিলেন যে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করা শেষ পর্যন্ত মিয়ানমারের দায়িত্ব। তিনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রস্তুত করার হাতিয়ার হিসেবে শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবহারের ওপর জোর দেন। এদিকে, বার্মা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক একটি পৃথক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে যে প্রায় ৬০০,০০০ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে বৈষম্যমূলক আইন ও নীতির অধীনে আটকে আছে যা রাখাইন রাজ্যে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং চলমান গণহত্যার সমান। “রোহিঙ্গা এবং বার্মার বাকি জনগণের দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে চাইলে বিশ্বকে সিদ্ধান্তমূলকভাবে কাজ করতে হবে,” বলেছেন অধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কিয়াউ উইন।
|
মো: জুবাইর: প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস হিসাবে পালিত হয়, যা গণহত্যার অপরাধ এবং এই অপরাধ প্রতিরোধের শিকারদের স্মরণ ও মর্যাদার আন্তর্জাতিক দিবসও।
১৯৪৯ সালের ৯ই ডিসেম্বরে প্রথমবারের মত জাতিসংঘে গণহত্যা প্রতিরোধ ও এ সংক্রান্ত শাস্তি বিষয়ক প্রথাটি গৃহীত হয়। এই দিবসের মূল লক্ষ্য হল গণহত্যা বিষয়ক প্রথাটির ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং গণহত্যায় মৃত ব্যক্তিদের স্মরণ ও সম্মান করা। এই দিবসের মূল লক্ষ্য হল গণহত্যা বিষয়ক প্রথাটির ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং গণহত্যায় মৃত ব্যক্তিদের স্মরণ ও সম্মান করা। এটি জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রকে এ-ও স্মরণ করিয়ে দেয় যে তাদের নিজ জনগণকে গণহত্যার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য দায়িত্ব আছে। গণহত্যার উস্কানি বন্ধ করা ও গণহত্যা ঘটলে তা প্রতিরোধ করা এই দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্ত জেলা কক্সবাজারে বিস্তীর্ণ শিবিরে বসবাসকারী রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা মুসলমানরা ১.২ মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা, যাদের অধিকাংশই ২৫শে আগস্ট, ২০১৭-এ মিয়ানমারে নৃশংস সামরিক দমনপীড়ন থেকে পালিয়েছিল, সচেতনতা বাড়াতে সমাবেশ করে দিনটিকে চিহ্নিত করেছে। তাদের দুর্দশার কথা এবং রাখাইন রাজ্যে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অঙ্গীকারের কথা মনে করিয়ে দেয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, "গণহত্যা স্মরণ দিবস" স্মরণে রোহিঙ্গারা ৩৪টি ক্যাম্পের মধ্যে ১২টিতে সমাবেশ করেছে। সমাবেশে, রাষ্ট্রহীন জনগণের সম্প্রদায়ের নেতারা রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। সমাবেশে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাতটি দাবি তুলে ধরে, যার মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গা গণহত্যার শিকারদের বিচার, নাগরিকত্বের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মিয়ানমারের বিতর্কিত ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল করা যা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নাগরিকত্ব অস্বীকার করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, প্রত্যাবাসন, সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ। প্রত্যাবাসনের পর জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ধ্বংস এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। অনেক মানবাধিকার গোষ্ঠী হিংসাত্মক সামরিক দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি ভারতের উদাসীনতাকে চিহ্নিত করেছে। আনুমানিক ৪০,০০০ রোহিঙ্গা ভারতে রয়েছে, যাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০,০০০ ইউএনএইচসিআর-এ নিবন্ধিত। একইভাবে, ২০১৬ সাল থেকে, অতিজাতিবাদী হিন্দু গোষ্ঠীগুলি ভারতে মুসলমানদের উপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণের অংশ হিসাবে ভারতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের টার্গেট করেছে এবং তাদের দেশ থেকে বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছে। অক্টোবর ২০১৮ থেকে, ভারত সরকার ১২ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে, দাবি করেছে যে তারা স্বেচ্ছায় চলে গেছে। সহায়তা বাড়াতে জাতিসংঘের বিশেষ দূত: ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয় থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত রোহিঙ্গা শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থন বাড়ানোর জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। “যেমন মহাসচিব এই গৌরবময় অনুষ্ঠানে পুনর্ব্যক্ত করেছেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অধিগ্রহণের পরে, মিয়ানমারে মানবিক, মানবাধিকার এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংকটের ব্যাপক, টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এটিকে ভুলে যাওয়া সংকট হতে দিতে পারি না, "তিনি বিবৃতিতে বলেছিলেন। তিনি যোগ করেছেন: "আমি এই অঞ্চলের দেশগুলির বৃহত্তর নেতৃত্বের জন্য বাংলাদেশকে সমর্থন এবং মিয়ানমারের সাথে তাদের প্রভাব কাজে লাগানোর জন্য শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখব।" বিশেষ দূত আরও জোর দিয়েছিলেন যে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করা শেষ পর্যন্ত মিয়ানমারের দায়িত্ব। তিনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রস্তুত করার হাতিয়ার হিসেবে শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবহারের ওপর জোর দেন। এদিকে, বার্মা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক একটি পৃথক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে যে প্রায় ৬০০,০০০ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে বৈষম্যমূলক আইন ও নীতির অধীনে আটকে আছে যা রাখাইন রাজ্যে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং চলমান গণহত্যার সমান। “রোহিঙ্গা এবং বার্মার বাকি জনগণের দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে চাইলে বিশ্বকে সিদ্ধান্তমূলকভাবে কাজ করতে হবে,” বলেছেন অধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কিয়াউ উইন।
|
|
|
|
মোঃ আরিফ ঊল্লাহ
বিনোদন মানুষের আগ্রহের একটি কেন্দ্রবিন্দু। মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের বিরক্তিকর রুটিন থেকে বের হয়ে নিজেকে অন্য এক জগতে নিয়ে যেতে চায়। পেতে চায় ভিন্ন রকম এক স্বাদ, যেখানে থাকবে না কোনো কাজের কিংবা পরিবারের চাপ এবং পাবে মানসিক প্রশান্তি। এই বিনোদনের জন্য এক এক মানুষের পছন্দ এক এক ধরণের। কেউ বিনোদন খোঁজে তার প্রিয় গায়কের গানে, কেউ তার প্রিয় লেখকের লেখায়, কেউ মিশে যেতে চায় প্রকৃতির মাঝে, কেউ তার আপন মানুষের সাথে আড্ডায় বা তার প্রিয় দলের খেলায়। যাই হোক আমরা যদি বিনোদনকে এক কথায় বলতে চাই তাহলে বলতে হবে, বিনোদন এমন এক ধরণের কাজ যা দেখে, শ্রবণ করে, ধারণা করে বা নিজে সেই কাজ করে আনন্দ পায়। আমার মতে বিনোদন হলো এমন কাজ যা মানুষকে আনন্দ বা মজা দেয়ার পাশাপাশি তার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে সহায়তা করে, তাই বিনোদন।
বিনোদনের অনেক দিক রয়েছে। যেমন শরীর চর্চা, গল্পবলা, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, নাটক, কবিতা, বই, নৃত্য, কমিক নাটক, খেলাধুলা ইত্যাদি। বর্তমান সময়ে মানুষ কিছু বিষয়ে সিজনাল সমর্থক আবার কিছু বিষয়ে রেগুলার। যেমন আমরা অনেকেই নিয়মিত বই পড়ি কিন্তু কোনো উৎসবকে ঘিরে আমাদের সমর্থন সেই দিকে চলে যায়, এর সব থেকে উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো “গ্রেটেস্ট শো অন দা আর্থ” বা ফুটবল বিশ্বকাপ। অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও খেলাধুলা নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই বরং এবার ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে আমাদের উম্মাদনা অন্য যেকোনো বিশ্বকাপের তুলনায় একটু বেশী বলেই মনে হচ্ছে। আমাদের ব্যবসায়ী ভাইয়েরা এই বিশ্বকাপকে ঘিরে তাদের জার্সি ও পতাকা বিক্রয়ের সন্তুষ্টি দেখেই বুঝা যায় খেলাধুলার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের উম্মাদনা কেমন, এমন কি অনেক বিক্রেতা জানায়, তারা ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী জার্সি দিতে হিমশিম খাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস ২৪ এর সূত্র মতে, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে ফুটবল, প্রায় ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি সমর্থক রয়েছে এই খেলায়, এর থেকেও মজার বিষয় হলো যে পরিমাণ মানুষ ক্রিকেট এর ভক্ত তার চেয়ে বেশী মানুষ প্রায় ২.৫ বিলিয়ন মানুষ ফুটবল খেলে থাকেন।
বিনোদনের কিছু নিয়ামক রয়েছে যা দর্শকের সন্তুষ্টি লাভে সহায়ক বা যে নিয়ামক সমূহ বিনোদনে থাকা খুবই জরুরী অথবা দর্শকমহলের উচিৎ এ সকল নিয়ামক তার বিনোদনে উপস্থিত আছে কিনা তা খুঁজে দেখা। যেমন বিনোদনের বিষয় টি কতটা বাস্তবসম্মত, বিনোদনের ধরণ বর্তমান পরিস্থিতিকে কতখানি প্রভাবিত করে, এই বিনোদন আপনাকে আপনার জীবনের গুরুত্ব বুঝাতে সক্ষম কিনা, আপনি এই বিনোদন থেকে কি শিখতে পারলেন, নতুন কোন বিষয়টি আপনি জানতে পারলেন ইত্যাদি। সর্বোপরি বিনোদন হবে সেই সকল কাজ যা আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে সহায়তা করবে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের উম্মাদনা এতোটাই বেশি যে, আমরা কোনো কিছু চিন্তা করতে চাই না, আমরা আবেগে ভেসেতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। হাজার ফুটের লম্বা পতাকা বানিয়ে রাস্তার পাশে ঝুলিয়ে রাখছি। জমি বিক্রি করে নিজ বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি পর্যন্ত পতাকা লাগানোর ঘটনাও ঘটাচ্ছি। কিন্তু দেশের মানুষ না খেয়ে শীতের রাতে রাস্তায় ঘুমাচ্ছে, বিকৃত পতাকা বানাচ্ছি আর অহংকার করছি কিন্তু পতাকার নামে যে অপমাননা করছি তার খবর কিন্তু কেউ রাখছি না। নিজ দলের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে বিশাল আকৃতির পতাকা টাঙ্গিয়েছি। কিন্তু আমার দেশের পতাকা সেখানে স্থান পায়নি, দলের সমর্থনে যা ইচ্ছে তাই বলছি এমনকি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ প্লেয়ারদের নিয়ে কটাক্ষ করতেও দ্বিধা করছি না। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে নষ্ট হচ্ছে অনেক ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব ও প্রিয়জনের সাথে গড়ে উঠা মধুর সম্পর্ক। দল যখন হেরে যায় তখন হয়তো ঘরবন্দি নয়তো মিথ্যে বা কাল্পনিক ফন্দি আড়তে থাকি। রাত বিরাতে এলাকায় আতশবাজি আর বিজয় মিছিল করছি। এতে করে এলাকাবাসীর যতই সমস্যা হোক তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। আমরা এতোটাই আবেগি যে, দলের জন্য জীবন দিতেও দ্বিধা করিনা। আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচ পরাজিত হওয়ার পর কুমিল্লায় একজন মারা যায়। কেভিন ডেভিস নামক ৬৬ বছর বয়সী এক ওয়েলস সমর্থক মারা যায়। পতাকা টাঙ্গাতে গিয়ে কক্সবাজারে ২ জন কিশোর নিহত হয়। কিছু দিন আগে নেত্রকোনার শামিম মিয়াঁ নামে ২৮ বছর বয়সের একজন হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। বিগত বছরগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায় ১৯৬৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৩ শত ছাব্বিশ জন সমর্থক গাদাগাদি, হুড়োহুড়ি এবং পদদলিত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। এরমধ্যে সর্বাধিক করুণ ঘটনা টি ঘটে ১৯৬৪ সালে পেরুতে। যেখানে প্রায় ৩২০ জন মারা যায় এবং ২০০১ সালে ১২৬ জন ঘানায়। এছাড়াও চলতি বছরে ইন্দোনেশিয়ায় ১২৭ জন সমর্থক স্টেডিয়ামে পদপিষ্ট হয়ে মারা যায়।
এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের নিজেদেরকে সচেতন হতে হবে। আবাসিক এলাকার বাহিরে বিজয় উৎসব পালন করতে হবে। খেলার মধ্যে হার জিত অবশ্যই থাকবে এবং একথা মেনে নেয়ার মতো মানসিকতা থাকতে হবে। অতি আবেগি হওয়া যাবে না, কারো সাথে তর্কে জড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। সকল দলের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। বিনোদনকে ব্যবহার করে অন্যকে হেয় করা যাবে না। কাজ করার পূর্বে এর ফলাফল কি হতে পারে তা নিয়ে ভাবতে হবে। মানবিক মানসিকতা পোষন করতে হবে। দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা লালন করতে হবে। কোনক্রমে বিনোদন যেন ক্ষতির কারণ হতে না হয়, এই দিকটি বিশেষভাবে খেয়াল করতে হবে। মনে রাখতে হবে খেলা কেবল মাত্র একটি বিনোদন, আর বিনোদন আপনার জন্য, বিনোদনের জন্য আপনি নন। লেখকঃ মোঃ আরিফ ঊল্লাহ উন্নয়ন কর্মী, কোস্ট ফাউন্ডেশন Email: arifcbiu@gmail.com
|
|
|
|
বিশেষ সংবাদদাতা: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর একটি হলো তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে আলোচনা চলছে। কিন্তু আশ্বাসে থেমে গেছে তিস্তা ইস্যু। ১৯৯৬ সালে গঙ্গা চুক্তির পর তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। ১৯৮৩ সালের আগস্ট মাসে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি শুরু হয়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকা সফর করেন। সে সময় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। অন্তর্র্বতী চুক্তির মেয়াদ ছিল ১৫ বছর। চুক্তি অনুযায়ী তিস্তার পানির ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশের ওপর ভারতের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতার কারণে চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। এই ভারত সফর তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের আশা জাগিয়েছে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু তারপরও রাজি হননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, তার মতবিরোধের মূল কারণ উত্তরবঙ্গের মানুষকে বঞ্চিত করে তিনি বাংলাদেশকে পানি দিতে রাজি নন। এমনকি ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঢাকা সফর করেছিলেন। সে সময় তিস্তা চুক্তি নিয়ে ইতিবাচক বক্তব্য দেওয়া হলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদী বা অভিন্ন নদী রয়েছে। এর মধ্যে ৪৩টি অভিন্ন নদীর পানির বেশির ভাগই ভারতের দখলে, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি কার্যত অন্যায্য। ৫৪টি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি কমিটি ৫ জানুয়ারী, ২০২১ থেকে দুই দিনের জন্য বৈঠক করেছে। করোনভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বৈঠকটি কার্যত শেষ হয়েছে। বৈঠকে অভিন্ন নদীতে পানি বণ্টনের জন্য একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। এর আগে, বাংলাদেশ সরকার ত্রিপুরার সাব্রুম শহরে পানি সংকট মোকাবেলায় মানবিক কারণে ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি তুলতে সম্মত হয়। তবে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি দিনের পর দিন অমীমাংসিতই থেকেছে। একটি আন্তঃসীমান্ত নদী জুড়ে জল ভাগাভাগির ক্ষেত্রে চুক্তিটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এটি একটি দেশের জল ভাগ এবং প্রাপ্যতা নিশ্চিত করেছিল। চুক্তি সম্পন্ন না হলে সাব্রুম শহরে এমনকি বাংলাদেশেও পানির ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে না, পাম্প হাউস দিয়ে সেচ প্রকল্প নির্মাণ করে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। চুক্তির ফলে উভয় দেশই লাভবান হবে। গজলডোবা বাঁধটি ১৯৯৮ সালে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজার মহকুমায় নীলফামারীর তিস্তা নদীর উজানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে তিস্তা নদীর নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে চলে যায়। বাঁধের ৫৪টি গেট রয়েছে যা তিস্তার মূল স্রোত থেকে বিভিন্ন সেক্টরে পানি সরানোর জন্য বন্ধ রয়েছে। বাঁধটি মূলত তিস্তার পানি তিস্তা-মহানন্দা খালে প্রবাহিত করার জন্য নির্মিত হয়েছিল। গজলডোবা বাঁধের আগে তিস্তা অববাহিকায় ২৫০০ কিউসেক পানি পাওয়া যেত, এখন পানির প্রবাহ ৪০০ কিউসেক কম। বাংলাদেশে ১৯৯৭ সালে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানির প্রবাহ ছিল প্রায় ৬,৫০০ কিউসেক, যা ২০০৬ সালে ১,৩৪৮ কিউসেকে নেমে আসে এবং ২০১৪ সালে তা দাঁড়ায় মাত্র ৮০০ কিউসেকে। পানির অভাবে অনেক জমি চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে সাধারণ কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, যার প্রভাব পড়ছে তাদের জীবিকা। অপর্যাপ্ত পানির প্রবাহে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে চরগুলোতে। গ্রীষ্মকালেও নদীতে একেবারেই পানি থাকে না। মানুষ পায়ে হেঁটে নদী পার হয়। মরা নদীতে পরিণত হয়েছে তিস্তা। এভাবে চলতে থাকলে শুধু জনজীবনই নয়, জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়বে। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এখন সময়ের দাবি। কিন্তু তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির ব্যাপারে ভারতের দেরি বোঝায় যে তারা এটা মানতে নারাজ। তিস্তা প্রকল্প বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর ১১৫ কিলোমিটার খনন করবে। খননের মাধ্যমে নদীর গভীরতা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। নদী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অনেক নদী উদ্ধার করা হবে। নদীর তীরবর্তী জমি চাষের উপযোগী করা হবে। এমনকি তিস্তা নদীর উভয় তীরে শিল্পনগরী গড়ে তোলা সম্ভব হবে, যা বহু লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এতে দেশের সমগ্র অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। মূলত, তিস্তা নদী চুক্তি স্বাক্ষর না করা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিবেশী মনোভাবকে ক্ষুণ্ন করছে। ভারতের মনে রাখা উচিত বাংলাদেশ এই অঞ্চলে একটি বিশ্বস্ত মিত্র। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিতে স্বাক্ষর না করলে বাংলাদেশ অবশ্যই বিকল্প পথ খোঁজার চেষ্টা করবে। প্রায়ই বলা হয় বাংলাদেশ ও আমি হফরধ বর্তমানে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বর্ণযুগের সাক্ষী। বাংলাদেশ ইস্যুতে চীনের সহযোগিতা গ্রহণ করার আগে ভারতের উচিত বিরোধ নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ হতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা এখনও ভারতকে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং মিত্র হিসাবে বিবেচনা করে। ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে শেখ হাসিনা তিস্তা নদীর বণ্টন সমস্যা সমাধানে আগ্রহী। তবে ভারতের পক্ষ থেকে দেরি হলে বিকল্প পথের কথা ভাবতে পারে বাংলাদেশ। তিস্তা সমস্যার ফলপ্রসূ সমাধান শুধু বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত করবে না বরং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতেও সাহায্য করবে। তিস্তা চুক্তি ভারতকেও দারুণভাবে উপকৃত করবে। এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এগিয়ে গেলে তা বাংলাদেশের সকল স্টেকহোল্ডারদের সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হবে। ভারত অবশ্যই বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী মিত্র হিসেবে তার অবস্থানকে শক্তিশালী করতে এবং একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। তিস্তা নদীর রয়েছে অপার সম্ভাবনা। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি বা তিস্তা প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন সম্ভব হলে শুধু তিস্তা উপকূল বা উত্তরবঙ্গের মানুষ নয়, সমগ্র বাংলাদেশ এর সুফল ভোগ করবে। পরিবর্তন আসবে উত্তরবঙ্গের জনজীবনে। বাংলাদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। সব মিলিয়ে তিস্তা চুক্তি বা তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
|
|
|
|
বিশেষ সংবাদদাতা: পরিবারগুলো তাদের দড়ির শেষ প্রান্তে! তারা কয়েক দশক ধরে ভারতীয় বাহিনী কর্তৃক সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশী বেসামরিক নাগরিকদের "বেআইনি হত্যার" বিচার দাবি করে আসছে। একটি স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন অধিকার দাবি করেছে যে গত দুই দশকে ভারতীয় বাহিনীর হাতে সীমান্তের ওপারে ১,২০০ জনেরও বেশি বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিক। ঐতিহাসিক বন্ধু হিসেবে বিবেচিত তার প্রতিবেশী সীমান্ত বাহিনী কর্তৃক বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষও অনেকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কয়েকদিন আগে ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ বুধবার রাত ১১টার দিকে দাইনুর সীমান্তের ৩১৫ নম্বর পিলারের কাছে এ ঘটনায় আরো দুজন নিখোঁজ হয়।
নিহত মিনার (১৮) উপজেলার খানপুর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীরের ছেলে। নিখোঁজরা হলেন একই এলাকার লতিফুলের ছেলে এমদাদুল (২৮) ও সালমানের ছেলে সাগর (২০)। স্থানীয়রা জানান, প্রায় পাঁচজন শুঁটকি মাছ আনতে সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। বাংলাদেশে ফেরার সময় বিএসএফের একটি টহল দল তাদের দেখতে পায়। বিএসএফ সৈন্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালালে মিনার ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ সময় আরও দুইজন নিখোঁজ হন। দাইনুর বিপিও নায়েক সুবেদার আক্তার হোসেন জানান, ভারতীয় ভূখণ্ডের দক্ষিণ দিনাজপুর এলাকায় লাশটি পড়ে ছিল যা পরে উদ্ধার করা হয়। সাম্প্রতিক অতীতে আনাদোলু এজেন্সির সাথে কথা বলার সময়, বাংলাদেশী আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ পরামর্শ দিয়েছেন যে সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বাংলাদেশের উচিত ভারতীয় নাগরিক সমাজ এবং মানবাধিকার কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করা এবং উভয় সরকারকে আলোচনায় বসতে এবং এই গুরুতর সমস্যাটির সমাধান করার জন্য চাপ দেওয়া উচিত। "যদি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মিডিয়া এই মানবিক ইস্যু সম্পর্কে ভারতীয় জনগণ এবং সুশীল সমাজের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সক্ষম হয়, তবে এটি সীমান্ত হত্যা শূন্যে নিয়ে আসার জন্য ভারত সরকারের উপর জোরালো চাপ সৃষ্টি করবে," আহমেদ জোর দিয়েছিলেন।
|
|
|
|
মোঃ আরিফ উল্লাহ
স্বাধীনতার অর্ধশতক পরেও যেন লাল-সবুজের এই দেশ পরাধীন। স্বাধীন দেশে বসবাস কিন্তু স্বাধীনতার অর্থ যেন আজও অজানা। এখনও বাংলার নারী তথা আমার আপনার মা, বোন স্বাধীনভাবে চলাচলের স্বাধীনতা পায়নি, পায়নি পরিপূর্ণ বাকস্বাধীনতা। এখনও প্রায় প্রতি মুহূর্তে দেশের কোথাও না কোথাও ঘটে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন। মানুষ নামের হায়েনারা ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে। দেশকে নিয়ে যাচ্ছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে, এ মানুষ নামের পশুগুলিকে পশু বললে পশুকে অপমান করা হবে এরা তো অবুঝ হিংস্র প্রাণীর চেয়েও বদতর। বলছি ধর্ষকের কথা যারা মানুষ রুপী নরপশু। আর এ ধর্ষকেরা সমাজ, দেশ ও সমগ্র মানব জাতীর জন্য কলঙ্ক।একটি দেশকে শত বছর পিছিয়ে নেয়ার জন্য এ ধর্ষকেরাই যথেষ্ট।
যে শিশুদের উপর নির্ভর করছে আগামীর ভবিষ্যৎ,এই শিশুরা যদি নসিক,শারীরিক,যৌন ও অন্যান্য অত্যাচারের শিকার হয়, এমন পরিবেশে বেড়ে উঠে, তাহলে তাদের নিকট থেকে ইতিবাচক কিছু আশা করা নিছক বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। আর যে নারীকে জাতি গড়ার কান্ডারী বলা হয় সেই নারী যদি প্রতি ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয় তবে সেই নারী জাতি গঠনে কতখানি ভূমিকা রাখতে পারবে তাও প্রশ্নবিদ্ধ।
বর্তমানে ধর্ষনের চিত্র দেখলে শরীর শিহরিয়ে উঠে। প্রশ্ন জাগে লাখো শহিদের আত্মত্যাগের সাথে আমরা কতখানি ব্যবিচার করছি? কি পরিমান অন্যায় করছি সেই মানুষটির সাথে যিনি তার জীবনের প্রতি টি ক্ষণ উৎসর্গ করেছেন এবং স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সোনার বাংলাদেশের। তিনি হচ্ছেন আমাদের সবার প্রিয় নেতা আত্মত্যাগী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে কি আমরা এই অদম নরপশুদের কাছে হেরে যাবো? ১৬ কোটি মানুষ কি তাহলে এই নরপশুদের সামনে অসহায় হইয়ে পড়েছে? কিন্তু বাঙ্গালী জাতি তো হারতে শিখেনি। আমরা জয় করতে শিখেছি, বিজয় ছিনিয়ে আনতে শিখেছি, শিখেছি নিজের অধিকার আদায় করতে। তবে আজ কেন আমরা অসহায়ের মতো আচরণ করছি? কেন আমরা আজ নিশ্চুপ? এর প্রধান কারন আমরাই। কারন আজ আমারা আত্মকেন্দ্রিক। আমাদের মধ্যে দিন দিন দেশপ্রেম হারিইয়ে যাচ্ছে। বাঙ্গালীয়ানা আমাদের সমাজ থেকে লোপ পাচ্ছে। আমরা এখন ব্যস্ত ওয়েস্টার্ন কালচার নিয়ে, আমরা এখন যৌথ পরিবার ভেঙ্গে আলাদা থাকতে পছন্দ করি, নিজের স্বার্থ আদায় করতে ব্যস্ত থাকি, অন্যের দূরাবস্থায় নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করি, সহযোগিতার পরিবর্তে মোবাইলে ভিডিও করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, তাই বর্তমান সময়ে আত্মত্যাগী মানুষ খোঁজে পাওয়া আজ বড় দুষ্কর, এবং এর ফল স্বরূপ ধর্ষনের মতো সামাজিক ব্যাধি, যার কাছে আমরা আজ অসহায় হইয়ে পড়েছি। আর নয় আত্মকেন্দ্রিকতা এবার জেগে উঠার পালা। আমাদেরকে ৭১ এর বীর সৈনিকদের ন্যায় অস্ত্র হাতে নিতে হবেনা, হবেনা কোনো বিশাল সৈনিকের বহরের বিপরীতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে। শুধু একটু সচেতন হতে হবে। অন্যায়কে “না” বলা শিখতে হবে। অন্যায় দেখলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কে অবহিত করতে হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মনোভাব তৈরি করতে হবে এবং যার যার ধর্মকে শ্রদ্ধার সাথে অনুসরন করতে হবে। তবেই আমাদের শিশু ও মা বোনেরা স্বাধীন ও মুক্ত ভাবে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে। যদি বিগত কয়েক বছরের নারী ও শিশু নির্যাতনের চিত্র দেখি তাহলে দেখা যায়, বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থার মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন এর তথ্যমতে ১০বছর পূর্ন হওয়ার আগেই দেশের ৫.১৭ শতাংশ শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। ৮০.২ ভাগ নারী কোনো না কোনো সময় আর্থিক , মানসিক, যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। অন্যদিকেবাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও মানবাধিকারকর্মী সালমা আলীর তথ্য মতে ২০২১ সালে বাল্যবিবাহের হার পূর্বের তুলনায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় ২০ হাজার শিশু ও নারী পাচার হয়। এসময়ে ১ হাজার ২৫৩ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যেখানে ধর্ষণের পর ৪৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। শুধু তাই নয় ২০২১ সালে প্রায় ১৯ হাজার নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলা হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এ নরপশু ধর্ষকদের কাছে ফুলের মত নিষ্পাপ শিশু আর প্রাপ্ত বয়স্ক কোনো ভেদাভেদ নেই। এর সাথে এদের অত্যাচারের মাত্রা আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এতোটাই অমানসিক নির্যাতন করে যা আমরা কল্পনায় ভাবতেও ভয় পাবো। দিন টি ৩০ জুলাই ২০১৭, ৩৫ বছর বয়সি সিপন, চার বছরের এক শিশুকে ধর্ষন করে এবং ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশুটি মৃত্যু্র কুলে ঢলে পড়ে। গত ২৫ আগূপা, রুপা বগুরা থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে চলন্ত বাসে তাকে ধর্ষন করা হয়।২৬ মার্চ ২০১৮ কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় ৫ বছরের এক কন্যা শিশুকে ধর্ষণ করা হয়। আর সবুজ ঘাসের উপর পরে থাকা বিউটির লাশ যেন চিৎকার করে বলছে, "হে বাঙ্গালী আর ঘুমিয়ে থেকোনা। জেগে উঠো, নয়তো লাল সবুজের পতাকার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।" কি এমন অন্যায় করেছিল রূপা বা বিউটি? কি দোষ করেছিল ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশু গুলি যার শাস্তি হিসেবে এমন করুন পরিনতির শিকার তারা?
রূপা হয়তো তার পরিবারের মধ্যমণি ছিল। চার বছরের শিশুটি কে তার মা কোলে তুলে গল্প শুনিয়ে নিজ হাতে খাওয়াবে বলে হয়তো সেই দিন ও বসে ছিল।বাবা ও হয়তো তার রাজকন্যার জন্য সেই দিন ও সারপ্রাইজ গিফট কিনবে বলে ভেবেছিল কিন্তু তা আর হইয়ে উঠেনি, এক হায়েনার নির্মম অত্যাচারে শিশুটির জীবনের ইতি ঘটলো।এভাবেই প্রতি দিন কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো মা হারাচ্ছে তার সন্তান, ভাই হারাচ্ছে তার বোন, একটি পরিবার হারাচ্ছে তার হাসি খুশির মধ্যমণিকে, এবং এ হারানোর বেদনা সেই মায়ের থেকে বেশি কেউ বুঝবে না যে মা তার শিশু সন্তান কে হারিয়েছে।শুধু একটি জীবনের ইতি ঘটেনি, ইতি ঘটেছে একটি স্বপ্নের, একটি প্রতিভার, একটি বিশ্বাসের এবং অবিশ্বাসের জন্ম হইয়েছে এ দেশের প্রতি সাথে মানব জাতীর প্রতি। এ ব্যাধি নিরসনে বর্তমান সরকারকে এখনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় আমাদের সকল অর্জনকে বিলীন করার জন্য “ধর্ষণ “ নামক সামাজিক ব্যাধিটিই যথেষ্ট। অতি শিগ্রই সকল সামাজিক ব্যাধির প্রকোপ থেকে দেশ রক্ষা পাবে, আর কোনো ধর্ষনের মতো নিকৃষ্ট ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবেনা এই কামনা করি। আমাদের শিশুরা বেড়ে উঠবে বাদভাংগা আনন্দে ,আমাদের মায়েরা গড়বে এক বলিষ্ঠ জাতি।
লেখক : মোঃ আরিফ উল্লাহ, উন্নয়ন কর্মী Email: arifcbiu@gmail.com
|
|
|
|
রাহাত হুসাইন :
মানব সমাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নাম হচ্ছে বন্ধুত্ব। রক্তের সম্পর্কের বাহিরে গিয়ে, আস্থা-বিশ্বাস ও স্নেহাস্পদ হচ্ছে এ সম্পর্কের ভিত্তিমূল। আত্মার সঙ্গে আত্মার শক্তিশালী বন্ধনের মধ্য দিয়েই এ সম্পর্কের ভিত্তি আরও মজবুত হয়। ধন-দৌলত, টাকা-পয়সা দিয়ে বন্ধুত্বের মূল্যায়ন হয় না। বন্ধুত্বে টাকা-পয়সা নগণ্য বিষয়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা, ধর্ম-বর্ণের মানুষজন আমাদের সমাজে বাস করেন। তাদের সঙ্গেই আমাদের চলাফেরা, ওঠাবসা আর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সমবয়সী, প্রতিবেশী, সহপাঠী, অফিসের সহকর্মীদের মধ্যেই আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এমকি একই আদর্শ ও চিন্তা-ভাবনার লোকজনের মধ্যেও বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে পারে। প্রতিনিয়ত বিশ্বজুড়ে বন্ধুরা গড়ছে নিত্যনতুন ইতিহাস। সৎ-মননশীল চিন্তা ও কর্ম উদ্যোগ থাকলে বন্ধুরা মিলে যেকোনো কাজেই সফলতা লাভ করতে পারে। বন্ধুত্বের সলতাই ছড়াতে পারে সম্প্রীতির আলো। দেশে যখন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস চোখ রাঙাচ্ছে, সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মালম্বীদের ঘর-বাড়ী ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা হচ্ছে, ঠিক তখনই সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে আসলো বিশ্ব বন্ধু দিবস-২০২২।প্রাচীনকাল থেকেই বাঙলায় নানা জাতি-গোষ্ঠী ও ধর্ম-বর্ণের মানুষজন পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে বসবাস করছেন। একে অপরকে শ্রদ্ধাবোধের মধ্য দিয়েই আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির বজায় রেখে চলছে। সম্প্রীতি বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য। বাঙালিরা সবর্দা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে। তবুও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দেশে হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধাতে ফাঁক-ফোকর খোঁজে। হিংসা ছড়িয়ে দিয়ে সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়। শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। সহিংস পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। ধর্মীয় সম্প্রীতি ও বন্ধুত্ব নষ্ট করতে একটি চক্র প্রতিনিয়ত অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টির পায়তারা করছে। মানুষ ও মনুষত্বের উপর আঘাত করছে। মানবতা ভূলন্ঠিত হচ্ছে। ইসলাম ধর্মের প্রাণপুরুষ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স)’কে অবমাননা করে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। আরেকটি চক্র এই তথ্যটি যাচাই-বাছাই না করেই উন্মাদনা সৃষ্টি করে, আইন নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তির আধুনিক যুগেও বাঙালি মুসলিমদের একটা অংশ হুজুগে থাকে। তথ্যের সততা নিশ্চিত না হয়েই ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে, দলবদ্ধ হয়ে হামলা করে সনাতন ধর্মালম্বীদের ঘর-বাড়ী, দেব-দেবীর মূর্তি ও পূজারস্থানে ভাঙচুর চালায়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে সাম্প্রদায়িক নিপিড়ন করে। আবার এর ফাঁকে কেউ কেউ লুটে নিচ্ছে অর্থ-কড়ি ও মূল্যবান জিনিসপত্র। রক্ষা পাচ্ছে না সনাতন ধর্মের নারী, শিশুরাও। আগুন লাগিয়েও তাদের সমুদয় সম্পদ জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। বে-ঘর করা হচ্ছে সংখ্যালঘু জাতিগত সম্প্রদায়কে। সাম্প্রদায়িক অশুভ চেতনা আমাদের সমাজে রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। সুযোগ পেলেই ছোবল মারে। আসলে হিন্দু হোক বা মুসলমান, সাধারণ মানুষ প্রকৃতপক্ষে অ-সাম্প্রদায়িক। তার মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বুনে দেয় ধুরন্ধর শয়তানরা। সমাজ থেকে সাম্প্রতিক অপশক্তি রুখার পথ কি? একমাত্র বন্ধুত্বই পারে সাম্প্রদায়িকমুক্ত সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস মোকাবিলার অন্যতম উপায় হচ্ছে বন্ধুত্ব। আমাদের সমাজের সকল শ্রেণি-পেশা ও ধর্ম-বর্ণের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব সম্পর্ক আরও দূঢ় করতে হবে। চিন্তার জগতের আমূল-পরিবর্তন করতে হবে। দেশের সমৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষের মানবিক সমৃদ্ধি গঠনেও কাজ করতে হবে। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের মাঝে মায়া-মমতা, সহমর্মিতা, সমবেদনা আর বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করা। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দরদী হওয়া। জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নয়, আমরা সবাই মানুষ; মহান স্রষ্টার শ্রেষ্ট সৃষ্টি, এই চেতনা ধারণা করা। ধর্মের সঠিক ব্যাখা ও তথ্যউপাত্ত প্রচারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ঘরে-ঘরে বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে। একে অপরের বিপদ আপদে পাশে দাঁড়াতে হবে। আজ চিকিৎসা বিজ্ঞান আর জীবনের প্রয়োজনে হিন্দু-মুসলমানের রক্ত আদান-প্রদান হচ্ছে। মুসলিমদের শরীরে বইছে হিন্দুর রক্ত। আবার হিন্দুর শরীরে বইছে মুসলিমদের রক্ত। ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে রক্তের সঙ্গে রক্তের বন্ধন তৈরি হচ্ছে। এই বন্ধনকে আরও মজবুত করা প্রয়োজন। মানুষের মঙ্গলের জন্য ধর্মের সঠিক ব্যাখা ও তথ্য-উপাত্ত প্রচার করার জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ধর্মীয় পন্ডিতদের উদ্যোগী হতে হবে। পাশাপাশি বন্ধুত্বের শক্তি কাজে লাগিয়ে সম্প্রীতির বাংলাদেশ নির্মাণের পথে এগিয়ে যেতে হবে। দেশের প্রতিটি পড়া-মহল্লায় সব ধর্মের বন্ধুরা ঐক্যবদ্ধ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। বিদ্যার্থীদের শ্রেণিকক্ষেই দিতে হবে সম্প্রীতির শিক্ষা। প্রতিটি ধর্মের পন্ডিত ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে গ্রাম-গঞ্জের সর্বত্র মাসে একবার হলেও সম্প্রীতির সভা করতে হবে। বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা বেশি। ইসলামসহ সকল ধর্মই মানুষের কল্যাণের কথা বলেছে। কোনো ধর্মই মানুষে-মানুষে দাঙ্গা হাঙ্গামা চায় না। মানুষের অমঙ্গল চায় না। ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। ইসলাম কখনও অন্য ধর্মের মানুষের উপরে আঘাত করতে বলে না। বরং ইসলাম সব সময় সহবস্থানের কথা বলে। ইসলাম প্রতিবেশী বন্ধুর অধিকার রক্ষার কথা বলে। ইসলাম মানুষের সঙ্গে সর্বোত্তম আচরণের কথা বলে। দেশে যারা ধর্মকে পুঁজি করে অন্য ধর্মের মানুষের ওপরে হামলা করবে বন্ধুরা সবাই মিলে সেই ইবলিশ- অসুরদের প্রতিহত করতে হবে। গ্রিক দর্শনিক মহামতি প্লেট বলেছেন `বন্ধুদের মধ্যে সবকিছুতেই একতা থাকে’। বন্ধুত্বের ঐকবদ্ধ শক্তিই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মোকাবিলায় কাজ করতে হবে। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কঠোর থেকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে । আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতিতে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না। সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের মাঝে সৌহার্দ ও সম্প্রীতির বন্ধন চীর অটুট রাখতে হবে। এবারের বন্ধু দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক, সম্প্রীতির বাংলাদেশ নির্মাণে সব ধর্মের বন্ধুরা হাঁটবো এক সঙ্গে। বন্ধুত্বের সুর দূর করবে সকল অসুর। বন্ধুত্বের জয় হোক, মানবতার জয় হোক, জয়বাংলা।
লেখক-সাংবাদিক ও সংগঠক
E-mail: r.hossainnfo@gmail.com
|
|
|
|
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিভিন্ন সংঘী এবং মন্ত্রীদের দ্বারা করা অযৌক্তিক এবং হাস্যকর বিবৃতিগুলিকে উপহাস করা উচিত নয় কারণ তারা শেষ পর্যন্ত নীতিতে পরিণত হয়।
কি হাস্যকর মানুষ হয়ে গেছি আমরা। এখানে আমাদের চারপাশের অযৌক্তিকতার একটি নমুনা রয়েছে – একটি টিভি চ্যানেল দাবি করেছে যে আসামে বন্যা সৃষ্টিকারী একটি বাঁধ মুসলিম সন্ত্রাসীরা একটি `বন্যা জিহাদের` অংশ হিসাবে লঙ্ঘন করেছিল, অন্যান্য মিডিয়া ব্যক্তিরা এটি টুইট করেছেন এবং রাহুল সাগর, যিনি ভারতীয় জনতা পার্টির পরিচালনা করেন। (বিজেপি) ওবিসি সোশ্যাল মিডিয়াও এটিকে সমর্থন করেছে। সরকার কথিত লঙ্ঘনের অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে, সমস্ত মুসলিম। জাতীয় শিক্ষা নীতির কর্ণাটক টাস্ক ফোর্সের প্রধান, মদন গোপাল বলেছেন যে উভয়ই প্রস্তাব করেছিলেন যে নিউটনের মাথায় একটি আপেল পড়ে যাওয়া এবং পিথাগোরাসের উপপাদ্য "ভুয়া খবর" - এটির বেশিরভাগই পৌরাণিক অতীতে আমাদের পণ্ডিতদের কাছে পরিচিত ছিল, অর্থাৎ। হিন্দুরা প্রথমে সেখানে পৌঁছেছিল। তিনি ছঁড়ৎধ-তে এই তথ্যটি পেয়েছেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই এটি অবশ্যই ১০০% সত্য। রাজ্য সরকার এখন কেন্দ্রের কাছে এই লাইনগুলিতে একটি অবস্থানের কাগজপত্র জমা দিয়েছে। ইতিমধ্যে, লোকসভা সচিবালয় `বিশ্বাসঘাতক`, `অযোগ্য,` `দুর্নীতিগ্রস্ত` এবং `ভণ্ডামি`-এর মতো শব্দগুলিকে সংসদীয় হিসাবে নিষিদ্ধ করেছে। আরও মর্মান্তিক যেটি তা হল যে অনেক লোক এটি বিশ্বাস করে এবং একমত। হোয়াটসঅ্যাপ ডিগ্রিধারীরা শান্তভাবে বলবেন যে তারা একটি ফরোয়ার্ড পেয়েছেন যা প্রমাণ করে যে এই `ঐতিহাসিক দাবিগুলি` সত্য। বৈদিক যুগের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার আজকাল বেশ জনপ্রিয়। সরকার বা দলীয় কর্মকর্তাদের দ্বারা বিবৃত বা সমর্থন করা বানালিটির ব্যারেজ আরও অনেক বেশি পিছিয়ে যায় - ২০১৪ এর চেয়ে কম নয় যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিজ্ঞানী এবং ডাক্তারদের একটি সমাবেশে বলেছিলেন যে গণেশ এবং কর্ণের জন্মে হাতির মাথা প্রমাণ করে যে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কসমেটিক সার্জারি বহু শতাব্দী আগে ভারতে করা হয়েছিল। বিজেপি সাংসদ সত্যপাল সিং, মুম্বাইয়ের একজন প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার, ডারউইনের তত্ত্বগুলিকে খারিজ করে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে তিনি বনমানুষের সন্তান নন। রোগের চিকিৎসার জন্য প্রস্রাবের থেরাপির শ্রেষ্ঠত্ব অবশ্যই সংঘ পরিবারের জন্য বহুবর্ষজীবী বিষয়। আর মধ্যপ্রদেশের এক বিজেপি মন্ত্রী এই বছরের শুরুতে বলেছিলেন যে নরেন্দ্র মোদি হলেন ভগবান রামের অবতার। ইডিওটিক, কেউ বলতে পারে এবং তাদের দেখে হাসতে পারে। এসব দাবি নিয়ে এক হাজার মেম তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এসব বক্তব্যের অনেকগুলোই নীতিতে পরিণত হয়। এবং যা হাস্যকর শোনায় তা শীঘ্রই অশুভ হয়ে ওঠে। মধ্যপ্রদেশের এক বিজেপি মন্ত্রীর ছেলের অভিযোগের ভিত্তিতে স্ট্যান্ডআপ কমিক মুনাওয়ার ফারুকীকে এমন একটি কৌতুক করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছিল যা তিনি ক্র্যাক করেননি। এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে অব্যাহত সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের দুঃখজনক পরিণতি হয়, কখনও কখনও সম্প্রদায়ের বাইরেও। এবং অর্থনৈতিক বয়কটের আহ্বানের সাথে `গুজরাটের পুনরাবৃত্তি` করার হুমকি রয়েছে। ১৯৩০-এর দশকে, আমেরিকান লেখক ক্লারা লিজার রাজনৈতিক বন্দীদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার জন্য বেশ কয়েকবার জার্মানি সফর করেছিলেন। সেই আলোচনার উপর ভিত্তি করে নিবন্ধগুলির পাশাপাশি, তিনি একটি বইও প্রকাশ করেছিলেন, লুনাসি বিকমস আস, সাংবাদিক সহ নাৎসি নেতা, অনুসারী এবং সমর্থকদের মূর্খ এবং বোকা বক্তব্যের একটি সংকলন। বইটি একটি উদ্ধৃতি দিয়ে শুরু হয় যা আমরা পরিচিত পেতে পারি - `দ্য গ্রেস অফ গড আমাদের ফুহরারে অংশগ্রহণ করে`, জুলিয়াস স্ট্রেইচার, রাইখস্ট্যাগের সদস্য এবং একটি ইহুদি-বিরোধী সংবাদপত্রের প্রকাশক। অভ্যন্তরে, মাস্টার রেস তৈরি করার জন্য মহিলাদের কর্তব্য সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে কিছু রত্ন রয়েছে। `শুদ্ধতম স্টকের এক হাজার জার্মান মেয়েকে রাউন্ড আপ করুন। তাদের একটি শিবিরে বিচ্ছিন্ন করুন। তারপর তাদের সাথে যোগ দেওয়া হোক একশত জার্মান পুরুষের সমান বিশুদ্ধ স্টকের। যদি এই ধরনের একশটি শিবির স্থাপন করা হয়, তবে আপনার এক স্ট্রোকে এক লাখ শুদ্ধ জাত শিশু থাকবে, "ডাঃ উইলিবাল্ড হেনশেল পরামর্শ দেন। `যীশু পিতামাতার উভয় পক্ষেরই আর্য ছিলেন,` একটি পুস্তিকা বলে। কুখ্যাত ডঃ গোয়েবলস বলেছেন, `বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যকলাপ চরিত্র গঠনের জন্য একটি বিপদ। আমরা এখন জানি, এই সব মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সময়ের একটির দিকে পরিচালিত করেছিল। অ্যাডলফ হিটলারের ক্রমাগত দেবীকরণ এবং ইহুদি, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্যদের দানবীয়করণ, হলোকাস্টের দিকে পরিচালিত করেছিল। নাৎসিরা ইহুদিদের মতো করে ভারত মুসলমানদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার ধারে কাছেও নেই, কিন্তু তার অনেক আগে থেকেই তাদের বিরুদ্ধে একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রচারণা ঘটেছিল – তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া এবং ইহুদি বিরোধী আইন প্রণয়ন – নিশ্চিত করেছিল যে যখন কনসেনট্রেশন ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল এবং ক্ষুব্ধ হয়েছিল ভুক্তভোগীদের চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাদের ভিলেনে পরিণত করা হয়েছিল যাদের প্রতি কারও কোন সহানুভূতি ছিল না। আজ ভারতে মুসলমানদের ‘দেশবিরোধী’ এবং ‘দেশদ্রোহী’ ধারণাটি বহুদূরে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু কট্টর সংঘের অনুসারীরাই নয়, যারা বছরের পর বছর ধরে মগজ ধোলাই করা হয়েছে, নব্য ধর্মান্তরিতরাও - শহুরে, শিক্ষিত এবং সুবিধাভোগীরা - এটি কিনেছে। তাদের সাম্প্রদায়িক চুলকানি আঁচড় দেওয়া হয়েছে এবং তারা তাদের আওয়াজ তুলতে যাচ্ছে না; তারা সঙ্ঘ পরিবারের মিথ্যা ঐতিহাসিক দাবীগুলোকে ঝেড়ে ফেলতে প্রস্তুত কারণ তাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন কুসংস্কার, দীর্ঘদিনের লুকানো, এখন স্বাধীন মত প্রকাশ করা হচ্ছে। যেকোনো গণতন্ত্রে ঘৃণা ও সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে; এখানে তাদের একটি বিনামূল্যে হাত দেওয়া হয় এবং এমনকি সংবর্ধিত করা হয়। এই দায়মুক্তি আকস্মিক নয়; তারা স্পষ্টভাবে সমর্থন করে কারণ তারা অকথ্য বলে, যদিও বেআইনি, জঘন্য হতে পারে। যোগী আদিত্যনাথ এই বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির থেকে অনেক বেশি এগিয়ে গেছেন কিন্তু এমন অনেক কিছু আছে যা তিনি বলতে বা করতে পারেন না – যেগুলো ‘ফ্রিঞ্জ এলিমেন্টস’-এর ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মাঝে মাঝে, তারা অনেক দূরে চলে যায় এবং রাষ্ট্র এটি সহ্য করবে না দেখানোর জন্য পদক্ষেপ নেয়, যখন ইয়াতি নরসিংহানন্দ গিরি মুসলমানদের গণহত্যার আহ্বান জানিয়েছিলেন। অধিকাংশ অংশ জন্য এটি দূরে দেখায়. সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বাগাড়ম্বর এবং সহিংসতার সাথে রাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে যে আইন করে। একবার স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলি আইনি সমর্থন প্রদান করে, নতজানু মিডিয়া নিশ্চিত করে যে বৃহত্তর জনসাধারণ এই বার্তাটি পায় যে মুসলমানরা এক নম্বর শত্রু। হাস্যকর এবং মন্দের মধ্যে রেখাটি তখন খুব পাতলা হয়ে যায় এবং অবশেষে অদৃশ্য হয়ে যায়। এবং নাশকতাকারীরা তখন শত্রুতে পরিণত হয়।
|
|
|
|
মোঃআরিফ উল্লাহ
করোনা ভাইরাস নামক এক অদৃশ্য দূর্যোগের থাবায় নাকাল মধ্যবিত্তের কপালে নতুন চিন্তার ভাজ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি। দুবেলা ভাত খাওয়াই যেন আজ দুরূহ হয়ে পড়েছে। কোভিড ১৯ এর কারণে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত অনেক পরিবার শহর ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমিয়েছে কিন্তু তাতেও যেন রক্ষা মেলেনি, বর্তমানে দিনের পর দিন দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েই চলেছে, আজ তেলের দাম বাড়লো তো কাল ডালের দাম আর সেইসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাসা ভাড়া, যাতায়াত খরচ ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ এর ফলে মধ্যবিত্ত পরিবারের একবেলার খাবারের চাহিদা যোগানোর চিন্তাও বেড়ে যাচ্ছে, এক গবেষণায় দেখা যায় কোভিড ১৯ এর কারণে আয় কমে যাওয়ায় ৫২ শতাংশ মানুষ তাদের খাবার কমিয়ে দিয়েছে। পরিবারের কর্তাদের হতাশার বার্তা আর মনের সুপ্ত আর্তনাদ যেন কোনো ভাবেই আমাদের সরকারের কর্মকর্তাদের নিকট পৌছাতে পাড়ছে না।
একটি পণ্যের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে অন্য পণ্যের দাম না বাড়ালে যেন চলেই না, হোক সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির পণ্য। বলছি গ্যাস ও পানির কথা। কিছু দিন আগে ১৩ লিটার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ছিল ৯৫০ টাকার যা বেড়ে এখন ১৬০০ টাকা অন্যদিকে পানির দাম ২০ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য সুপারিশ করছে ওয়াসা। একটু অদ্ভুত মনে হলেও সত্য যে গত ১৩ বছরে ১৬ বার পানির দাম বৃদ্ধি করেছে আমাদের ওয়াসা। দাম বৃদ্ধির পরপর ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তাদের ভ্রাম্যমাণ পন্য বিক্রয় সেবা চালু করে থাকে যা দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্তের একমাত্র ভরসা। আর তাই এই পরিবারের মানুষগুলী ট্রাক আসার আধাবেলা আগে থেকে অপেক্ষমাণ থাকে কারণ দিন শেষে যে আবার কাজে যেতে হবে নাহয় কাল চুলায় আগুণ জলবে না।
আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের মোট জনসংখ্যার একতৃতীয়াংশ মানুষকে মধ্যবিত্ত অবস্থানে দেখতে চাই, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সূত্র থেকে জানা গেছে বর্তমানে মোট জনসনংখ্যার ২০ শতাংশ মধ্যবিত্ত কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে ১ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ অতি দরিদ্র আর মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ দারিদ্র মানুষ রয়েছে। আমাদের স্বপ্নের সাথে বর্তমান পরিস্থিতির তফাৎ অনেক কিন্তু আমরা বাঙ্গালী তাই আমরা অসাধ্যকে সাধ্যের কাতারে নিয়ে আসতে পারি, যেমন পেরেছি ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাকে নিজের করেনিতে তেমনি পেরেছি পদ্মা সেতুর মত বড় প্রকল্পকে সফল করতে। সকলের মনে আজ একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিশেষ করে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের মাঝে, তা হলো “স্বাধীন হয়েও কিছু অসাধু মানুষের কাছে আমরা আজও কেনো পরাধীন?”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এটাও বলছে আমাদের মাথাপিছু আয় ৩২৭ ডলার বেড়ে ২ হাজার ৫৫৪ ডলার হয়েছে যা ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ২২৭ ডলার। তবে কি তৈলাক্ত মাথায় তৈল পড়ছে আর মধ্যবিত্ত দরিদ্র হচ্ছে, দরিদ্র পথের ভিখারি হচ্ছে? উন্নয়ন আমরা সকলেই চাই আর এই উন্নয়ন হতে হবে সমতার ভিত্তিতে। অন্যথায় জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন কিছু অসাধু স্বার্থলোভী ব্যবসায়ীর কাছে এভাবে জিম্মি হয়ে থাকবে, এর সাথে লাখো শহিদের আত্নদানে অর্জিত মহান স্বাধীনতা জাতীর কল্যাণের বিপরিতে কিছু অসাধু স্বার্থলোভী কারবারির স্বার্থ হাসিলে ব্যবহার হবে যা কখনো হতে দেয়া যাবে না। স্বাধীনতা সমতা ও ন্যায্যতার কথা বলে, কেউ খাবার অপচয় করবে আর কেউ ৩বেলা না খেয়ে থাকবে, ধনী আরো ধনী হবে আর গরীব আরো গরীব হবে এমন নীতি কেবল স্বাধীনতা বিরোধীরাই অনুসরণ করতে পারে।
দেশের উন্নয়নের সাথে কোনো ভাবেই যেন পাল্লা দিয়ে চলতে পাড়ছে না আমাদের দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত নামক এই বিশাল শ্রেণী, আত্নসম্মানের ভয়ে সকল কষ্ট মুখ বুঝে সয্য করে যাওয়া এই মানুষগুলী তখনি নিজের কষ্টের কথা প্রকাশ করে যখন তারা নিতান্তই অপারগ। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে দেশের নাগরিকের চাহিদার বিষয়কেও সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখার দায়িত্ব সরকারের। তাই দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যে ভর্তুকির ব্যবস্থা ও কঠোর তদারকির মাধ্যমে বাজার স্থিতিশীল রাখা। অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। সামনে রমজানকে পুঁজি করে দ্রব্যমূল্যের দাম যেন বৃদ্ধি করতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া, যাতে করে ২০৩০ সালে আমরা আমাদের নির্ধারিত স্বপ্ন পূরণে ও এসডিজি অর্জনে ব্যর্থ না হই।
লেখকঃ মোঃ আরিফ ঊল্লাহ উন্নয়ন কর্মী, ইমেইলঃ arifcbiu@gmail.com
|
|
|
|
মোঃ মজিবর রহমান শেখ
উইঘুর জনগণের বিরুদ্ধে চীনের অধিকার লঙ্ঘনের মূল্যায়নের জন্য লন্ডনে যে জনগণের ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়েছে, চীন হয়তো তাকে নিন্দা করেছে, কিন্তু এখন তুর্কি মুসলমানদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জঘন্য ঘটনা সম্পর্কে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্থার দ্বারা আরো প্রমাণ পাওয়া গেছে। চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে বসবাসকারী, অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাটেজি পলিসি ইনস্টিটিউট, একটি অস্ট্রেলিয়ান থিংক-ট্রেংক, একটি বিশ্লেষণে উপসংহারে পৌঁছেছে যে জিনজিয়াং সুদুর পশ্চিম চীনে, সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিশ্বের সমস্ত অঞ্চলের মধ্যে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছে।
জন্মহারের তীব্রতম পতন, ফলাফলগুলি অন্যান্য গবেষকদের রিপোর্ট কে সমর্থন করে যে চীন উইঘুর জনগণের বিরুদ্ধে কঠোর জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউটের রিপোর্ট দেখায় যে উইঘুর, কাজাখ এবং অন্যান্য মুসলিম জাতিগত সংখ্যালঘুদের ঘনত্ব সহ এলাকার জন্মহার ৪৮.৭৪ শতাংশ কমেছে।২০১৭ এবং ২০১৮ এর মধ্যে, এই দুই বছরের প্রথম টিতে, সংখ্যালঘু কাউন্টিতে জন্মহার ৪৩.৭ শতাংশ কমেছে, যেখানে ১ লক্ষ ৬০ হাজার কম শিশুর জন্ম হয়েছে। এটা হাস্যকর ভাবে চীনের হান সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার কাউন্টিতে জন্মের সামান্য বৃদ্ধির সাথে তুলনা করে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি ২০২১ সালের মে মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সহ-লেখক নাথান রুসার কে উদ্বৃত্ত করেছে, জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী উর্বরতার পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা শুরু করার পর থেকে ৭১ বছরের জন্মহার এই এতটা চরম পতন হয়েছে যা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় অভিজ্ঞ পতন এবং রুয়ান্ডা এবং কম্বোডিয়ার গণহত্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। ফলাফলগুলি ২০২০ সালে জার্মান গবেষকদের একটি প্রতিবেদন কে সমর্থন করে যা পাওয়া গেছে যে চীনা সরকার পদ্ধতিগতভাবে উইঘুর জন্মের হার কমিয়েছে জীবাণুমুক্তকরণ, গর্ভপাত এবং অন্তঃসত্ত্বা ডিভাইস ব্যবহার করে এবং তিন বা ততোধিক শিশু আছে এমন ব্যক্তিদের জরিমানা ও আটক করে। এপি নিশ্চিত করেছে যে অস্ট্রেলিয়ান প্রতিবেদনের অনেক পরিসংখ্যান চীনা সরকারি পরিসংখ্যান এর ভিত্তিতে ছিল।
এপি রিপোর্ট অনুসারে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে জিনজিয়াংয়ের উচ্চপদস্থ অধিকারীরা অবৈধ জন্মের কার্যকর নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ করে দক্ষিণ জিনজিয়াংয়ে যেখানে বেশিরভাগ উইঘুর বাস করে। চীন প্রায় চার বছর আগে উইঘুরদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন শুরু করেছিল স্পষ্টতই বৃদ্ধি রোধ করতে। জিনজিয়াং অঞ্চলে একটি বিচ্ছিন্ন বাদী আন্দোলন, জোরপূর্বক আত্তীকরণের একটি নৃশংস প্রচারণা চালায়, এক মিলিয়নেরও বেশি লোককে সদ্য নির্মিত ক্যাম্প এবং কারাগারের নেটওয়ার্কে ফেলে দেয়। তবে ক্র্যাক ডাউনের আসল কারণ হতে পারে কৌশলগত চীনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিশ্লেষক রা বলেছেন যে পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর যা উইঘুর স্বায়ও শাসিত অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে যায় এবং পূর্ব তুর্কিস্তানের একটি পৃথক রাষ্ট্রের দাবিকে কুঁকড়ে ফেলেছেন। উইঘুর রা জিনজিয়াংয়ে হান আধিপত্যের চিনা প্রচেষ্টা এবং জনগণের সংস্কৃতিকে আত্তীকরণ এর প্রতি অসন্তুষ্ট। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ অঞ্চলের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ হান চীনা যারা সবচেয়ে ভালো চাকরি ও ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করে।
উইঘুর জনগণের বিরুদ্ধে চীনের অধিকারের অপব্যবহার গনহত্যার সমান কিনা তা মূল্যায়ন করার জন্য লন্ডনে পিপলস ট্রাইবুনাল এর শুনানির জন্য একটি বিশাল বিব্রতকর অবস্থায় এসেছে। ২০২০ সালের জুন মাসে বিশ্ব উইঘুর কংগ্রেস,কাজাখ এবং অন্যান্য তুর্কি মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে "চলমান নৃশংসতা এবং সম্ভাব্য গণহত্যা" তদন্ত করার জন্য একটি স্বাধীন জনগণের ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠা করার জন্য ব্রিটিশ ব্যারিস্টার সার জিওক্রে নাইস কিউসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছিল। ট্রাইবুনালটি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে চালু করা হয়েছিল। যদি চীনের গণপ্রজাতন্ত্রীকে আন্তর্জাতিক আদালতের সামনে আনা সম্ভব হত তবে জনগণের ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হতো না। তবে চীন জেনেভা কনভেনশনের অনুসমর্থন কারী হলেও হেগভিত্তিক আদালতের এখতিয়ার সম্পর্কে চীনের সংরক্ষণের মতো কোনো সম্ভাবনা ছিল না।
উইগুর ট্রাইবুনাল ওয়েবসাইট বলে, "ট্রাইব্যুনালের সামনে সমস্যাগুলি মোকাবেলা করতে পারে এমন অন্য কোন আদালতে যাওয়ার কোন পরিচিত পথ নেই"। পিআরসি উইঘুর, কাজাখ এবং অন্যান্য তুর্কি মুসলিম জনসংখ্যা কে বন্দী শিবিরে আটকে রেখেছে, তাদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ধর্ষণ এবং অন্যান্য যৌন সহিংসতা, দাসত্ব, জোরপূর্বক বন্ধাকরন, জোরপূর্বক নির্বাসন, জোরপূর্বক অঙ্গ সংগ্রহ এবং উইঘুর পরিবার গুলোতে হান চাইনিজ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
লন্ডন ট্রাইব্যুনালের সামনে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত বন্দিশিবির গুলি বলেছে যে তাদের যৌবনে বন্দিরা বন্দিদশায় নিখোঁজ হয়েছিল এবং ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি তে চীনের কালো বাজার বাণিজ্যের সেবা করার জন্য তাদের অঙ্গ অপসারণের পরে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কোষ, অজানা ওষুধ দেওয়া এবং কঠোর শারীরিক শাস্তির শিকার হয়েছে। একজন মহিলা এপি কে বলেছেন যে সাড়ে ছয় মাসের গর্ভবতী অবস্থায় তাকে গর্ভপাত করতে বাধ্য করা হয়েছিল। উইঘুর ট্রাইব্যুনালের অনুমোদনের ক্ষমতা নেই, তবে যদি পিআরসি র বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলি প্রতিষ্ঠিত হয় তবে তা হবে গণহত্যার পরিমাণ এবং রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলি চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্য ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
ট্রাইবুনালের দুটি অধিবেশন নির্ধারিত হয়েছে; প্রথম অধিবেশন ৪ জুন থেকে ৭ জুন ২০২১ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্বিতীয় অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ পর্যন্ত। ট্রাইব্যুনালের কোন গুরুত্ব না দেওয়ার ভান করার সময়, চীন প্রথম অধিবেশনের কার্যক্রমকে গুরুত্বের সাথে চিহ্নিত করে এবং ৯ জুন একটি অফিসিয়াল সংবাদ সম্মেলনে লন্ডনে সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত হওয়া কয়েকজন আত্মীয়কে হাজির করে যাতে পরবর্তী দের দ্বারা অভিযোগ গুলিকে মিথ্যা বলে নিন্দা করা যায় । উইঘুরদের সাথে অমানবিক আচরণ ইতিমধ্যে চীনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আকর্ষণ শুরু করেছে, চীনের কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার দ্বারা সমন্বিত প্রচেষ্টায় ১৯৮৯ সালে তিয়ানানমেন স্কয়ার গণহত্যার পর এই প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনের উপর মানবাধিকার ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
এপ্রিল মাসে, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস এবং কানাডার আইনসভা অনুসরণ করে উইঘুরদের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের নীতিকে গণহত্যা এবং অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করে। প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পাম্পে ও অফিসে বসার আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে জিনজিয়াং মুসলিম এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চীনের নীতি মানবতা এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে অপরাধ। তার উত্তরাধিকারী এন্টনি ব্লিক্ঙেন অফিসে প্রথম দিনে একই দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন।
ব্লিক্ঙেন বলেছেন, "যুক্তরাষ্ট্র গ্লোবাল ম্যাগনিটসকী নিষেধাজ্ঞা কর্মসূচির মাধ্যমে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টায় একটি শক্তিশালী নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা অবিলম্বে PRC এর অপরাধ শেষ করার আহ্বান জানিয়ে বিশ্বজুড়ে আমাদের মিত্রদের পাশে দাঁড়াতে থাকব। গ্লোবাল ম্যাগনিটসকি হিউম্যান রাইটস একাউন্টেবিলিটি এ্যাক্ট ২০১৬ সালে মার্কিন কংগ্রেস দ্বারা প্রণীত হয়েছিল, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত বিশ্বের যে কোন বিদেশী সরকারি কর্মকর্তাদের অনুমোদন করার অনুমতি দেয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং কানাডা ২০২১ সালের মার্চ মাসে একটি যৌথ বিবৃতিতে বলেছিল,: চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে একটি স্পটলাইট উজ্জ্বল করতে আমরা একসাথে দাঁড়াতে থাকবো। আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছি এবং জিনজিয়াংয়ে যারা ভুক্তভোগী তাদের জন্য ন্যায় বিচারের আহ্বান জানাই।
লেখক : মোঃ মজিবর রহমান শেখ ০১৭১৭৫৯০৪৪৪
|
|
|
|
অনলাইন ডেস্ক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের সঙ্গে ঢালিউডের চিত্রনায়ক ইমন ও নায়িকা মাহিয়া মাহির মধ্যকার কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টিকে নারীর প্রতি অবমাননাকর বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম।
সোমবার রাতে তিনি নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে একথা বলেন। পোস্টে তারানা হালিম লিখেছেন, ‘ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও লিখেছেন, মুরাদ হাসান আপনি কর্মক্ষেত্রে যা করেছেন তা conflict of interest। আপনি যে ভাষায় কথা বলেছেন তা বিকৃত রুচির, অশালীন, নারীর প্রতি অবমাননাকর। আপনি দলের ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষু্ণ্ণ করেছেন। শাস্তি আপনার প্রাপ্য।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন- ভালো মানুষ নারীকে সম্মান করে। তাই আপনি দোষী থাকবেন দুনিয়াতে ও আখেরাতে। আমরা যারা দলকে ভালোবাসি তারা জানি এই সিদ্ধান্ত নেবার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে কঠিন , কঠোর হতে হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছ থেকে এটাই আশা করি আমরা।
সরকারপ্রধানের প্রতি নিজের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, ভবিষ্যতে সব লুটেরা, ঘুষখোর, লম্পটের বিরুদ্ধে আপনার এমন কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত থাকুক। এই দৃষ্টান্ত যেন সবার জন্য শিক্ষার কারণ হয়।
|
|
|
|
‘সারা জীবন তুমি সংগ্রাম করেছ, তুমি জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছ, তুমি জানো যে এ দেশের মানুষের জন্য কী চাই, তোমার থেকে বেশি কেউ জানে না, তোমার মনে যে কথা আসবে তুমি শুধু সেই কথাই বলবে, কারো কথা শুনতে হবে না। তুমি নিজেই জানো তোমাকে কী বলতে হবে। তোমার মনে যে কথা আসবে তুমি সে কথাই বলবা।’
যে মহীয়সী নারীর এমন দৃঢ়প্রত্যয় সাহস জোগানোর ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন ৭ই মার্চের অমর ভাষণ দিয়েছিলেন, বাঙালি জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন, ৭ই মার্চের ভাষণের নেপথ্য শক্তি—তিনি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ডাকনাম রেণু। ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা শেখ জহুরুল হক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের জ্ঞাতি সম্পর্কের চাচা এবং গ্রামের বর্ধিষ্ণু কৃষক পরিবার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন, ‘একটা ঘটনা লেখা দরকার, নিশ্চয়ই অনেকে আশ্চর্য হবেন। আমার যখন বিবাহ হয় তখন আমার বয়স বারো-তেরো বছর হতে পারে। রেণুর বাবা মারা যাবার পরে ওর দাদা আমার আব্বাকে ডেকে বললেন যে আমার সাথে তার এক নাতনির বিবাহ দিতে হবে। কারণ তিনি তাঁর সমস্ত সম্পত্তি ওদের দুই বোনকে লিখে দিয়ে যাবেন। রেণুর দাদা আমার আব্বার চাচা। মুরব্বির হুকুম মানার জন্যই রেণুর সাথে আমার বিবাহ রেজিস্ট্রি করে ফেলা হলো। আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে। তখন কিছুই বুঝতাম না, রেণুর বয়স তখন বোধ হয় তিন বছর হবে। রেণুর যখন পাঁচ বছর বয়স তখন তার মা হোসনে আরা বেগম মারা যান। একমাত্র রইল তার দাদা। রেণুর সাত বছর বয়সে দাদাও মারা যান। তারপর সে আমার মায়ের কাছে চলে আসে। রেণুদের ঘর আমার ঘর পাশাপাশি ছিল, মধ্যে মাত্র দুই হাত ব্যবধান।’
শেখ মুজিবের মা বেগম সায়রা খাতুন পাঁচ বছর বয়সে মাতৃহীন রেণুকে ঘরে তুলে নেন এবং নিজের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে শিক্ষাদীক্ষা ও গৃহকর্মে বড় করে তোলেন। শৈশব থেকেই রেণু শেখ মুজিবসহ পরিবারের ছোট-বড় সব সদস্যের কাছে নিজেকে আপন হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন। বিশেষ করে বড় সন্তান খোকা (শেখ মুজিবের ছোটবেলার ডাকনাম), যাঁর সঙ্গে তাঁর বিশেষ সম্পর্ক, তাঁর চলাফেরা, কিশোর বয়স থেকেই নানা কর্মকাণ্ড, খানিকটা দুরন্তপনা, বেপরোয়া ও সাহসী মনোভঙ্গি কিশোরী ফজিলাতুন্নেছা রেণুর জন্যও বড় হওয়ার প্রেরণা ও মুগ্ধতার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের যেকোনো বিপর্যয়ে, অসুখ-বিসুখে উদ্ধারকর্মী হিসেবে শেখ মুজিবের সঙ্গে নিজেও তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ান।
মহীয়সী এই নারী প্রেমময়ী স্ত্রী, স্বার্থ বিসর্জক, ত্যাগী নারী ও আদর্শ মাতা যেমন ছিলেন, অন্যদিকে নিজেকে একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গড়ে তোলেন। চিন্তাচেতনা ও আদর্শের সমান অংশীদারি অর্জনে সমর্থ হন। বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের সুখ-দুঃখের সঙ্গী বহুমাত্রিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এই নারী মানুষের ভালোবাসা অর্জন করে হয়ে ওঠেন বঙ্গমাতা।
প্রাথমিক জীবনে নিজের লেখাপড়া বেশি দূর না এগোলেও স্বামীর শিক্ষার ব্যাপারে তাঁর নজর ছিল অতন্দ্র। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন “কলকাতা যাব, পরীক্ষাও নিকটবর্তী। লেখাপড়া তো মোটেই করি না। ভাবলাম কিছুদিন লেখাপড়া করব। মাহিনা বাকি পড়েছিল, টাকা-পয়সার অভাবে। রেণুর কাছে আমার অবস্থা প্রথমে জানালাম। আব্বাকে বললে তিনি অসন্তুষ্ট হলেন মনে হলো। কিছুই বললেন না। টাকা দিয়ে আব্বা বললেন, ‘কোনো কিছুই শুনতে চাই না। বিএ পাস ভালোভাবে করতে হবে। অনেক সময় নষ্ট করেছ, ‘পাকিস্তানের আন্দোলন’ বলে কিছুই বলি নাই। এখন কিছুদিন লেখাপড়া কর।’ আব্বা-মা, ভাই-বোনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রেণুর ঘরে এলাম বিদায় নিতে। দেখি কিছু টাকা হাতে করে দাঁড়িয়ে আছে। ‘অমঙ্গল অশ্রুজল’ বোধ হয় অনেক কষ্টে বন্ধ করে রেখেছে। বলল, ‘একবার কলকাতা গেলে আর আসতে চাও না। এবার কলেজ ছুটি হলেই বাড়ি এসো।’” প্রয়োজনে নিজের জমির ধান বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি নিয়মিত স্বামীকে সহযোগিতা করে গেছেন। স্বামীর পাশে থেকে মানবতার জন্য কাজ করে গেছেন। জীবনে ঝুঁকি নিয়েছেন বহুবার। আড়াল থেকেই তিনি বাংলার মানুষের সেবা করে গেছেন আজীবন।
বঙ্গবন্ধু তাঁর আত্মজীবনীর প্রথম পাতা শুরু করেছিলেন সঙ্গী সহধর্মিণীর কথা দিয়ে। কেননা বেগম মুজিবের তাগিদেই এই প্রজন্মের বাঙালি আজ হাতে পেয়েছে স্বাধিকার আন্দোলনের এক অমূল্য দলিল। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের কাহিনি রচনার পেছনে স্ত্রীর যে উদ্যোগ ও উৎসাহ পেয়েছেন তাঁর বর্ণনায় লিখেছেন— “আমার স্ত্রী আমাকে কয়েকটা খাতাও কিনে জেল গেটে জমা দিয়ে গিয়েছিল। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কয়টা আমাকে দিয়েছেন। রেণু আরো একদিন জেল গেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। ‘বসেই তো আছ, লেখো তোমার জীবনের কাহিনি।’ বললাম, লিখতে যে পারি না; আর এমন কী করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলো জেনে জনসাধারণের কি কোনো কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না। শুধু এইটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।”
সেই ছোট্টবেলা থেকে এবং পরবর্তীকালে স্বামীর রাজনৈতিক জীবনের এক আত্মত্যাগী সহযোগী হয়ে ওঠেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। শেখ মুজিবের রাজনৈতিক সংগ্রাম, আন্দোলন ও কারাজীবনেও তিনি এক অনুকরণীয় ত্যাগী নারী হিসেবে আদর্শ স্থাপন করে গেছেন। স্ত্রী হিসেবে তাঁর জীবনকালে কখনো স্বামীকে একনাগাড়ে দুই বছর কাছে পাননি। কিন্তু কোনো দিন কোনো অনুযোগ-অভিযোগ ছিল না, কখনো বলেননি যে তুমি রাজনীতি ছেড়ে দাও, চলে আসো বা সংসার করো বা সংসারের খরচ দাও। জীবনে কোনো প্রয়োজনে কোনো দিন বিরক্ত হননি। যত কষ্টই হোক কখনো ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি তাঁকে।
একদিকে ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার সামলানো, আবার কারাগারে গিয়ে স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করে তাঁর মনোবল দৃঢ় রাখা; অন্যদিকে আইনজীবীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মামলার খোঁজখবর নেওয়া। নিজের সোনার অলংকার বিক্রি করেও মামলার খরচ জুগিয়েছেন। নিজেকে বঞ্চিত করে তিনি স্বামীর আদর্শ ও সংগঠনের জন্য নিজের সম্বল প্রায় সবই বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, তাঁর স্বামী দেশের জন্য কাজ করছেন, মানুষের কল্যাণের জন্য করছেন। টাকার অভাব, সংসার চালাতে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতাদের সাহায্য দরকার, কেউ অসুস্থ তাকে টাকা দিতে হচ্ছে। কিন্তু কখনোই এসব কথা কাউকে বলতেন না। নীরবে কষ্ট করে সমস্যার সমাধান করেছেন।
এমনও দিন গেছে মামলা চালাতে গিয়ে তাঁর কাগজপত্র, উকিল জোগাড় করতে অনেক খরচ হয়ে গেছে। এদিকে বাজারও করতে পারেননি। কোনো দিন বলেননি যে টাকা নাই, বাজার করতে পারলাম না। চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করেছেন। আচার দিয়ে ছেলে-মেয়েদের বলেছেন যে প্রতিদিন ভাত-মাছ খেতে ভালো লাগে নাকি। আসো, আজকে আমরা গরিব খিচুড়ি খাই, এটা খেতে খুব মজা। একজন মানুষ, তাঁর চরিত্র কতটা সুদৃঢ় থাকলে যেকোনো অবস্থা মোকাবেলা করার মতো ক্ষমতা ধারণ করতে পারেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে পদে পদে তিনি আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে গেছেন। প্রকাশ্যে প্রচারে কখনোই আসেননি।
১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু প্রথম তিন মাসে আটবার গ্রেপ্তার হন। পাকিস্তান সরকার ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে আবার গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করে। ৭ জুন ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ও আটক নেতাদের মুক্তির দাবিতে ধর্মঘট সফলভাবে পালনে বেগম মুজিবের ভূমিকা ছিল অন্যতম। গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি লুকিয়ে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে তাঁদের ছোট ফুফুর ফ্ল্যাট বাসায় চলে যেতেন। ওখানে গিয়ে নিজের স্যান্ডেল বদলাতেন, কাপড় বদলে, বোরকা পরে একটা স্কুটার ভাড়া করে ঢাকায় পড়ুয়া ছোট ভাইকে নিয়ে ছাত্রনেতা আর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতেন। আন্দোলন চালাবে কিভাবে তার পরামর্শ, নির্দেশনা তিনি নিজেই দিতেন। আবার ওই বাসায় ফিরে এসে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে নিজের বাসায় ফিরতেন। বঙ্গবন্ধু ও আটক নেতাদের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে এই ধর্মঘট যাতে পালিত হয় এবং চলমান আন্দোলনের সফলতার জন্য তিনি নিরলস কাজ করে যেতেন। সবই করতেন গোপনে এবং রাজনৈতিক মেধায়।
একটা সময় এলো ছয় দফা, না আট দফা? পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নেতারা চলে এলেন ঢাকায়। তদানীন্তন শাহবাগ হোটেলে থাকতেন নেতারা। বেগম মুজিব মাঝে মাঝে বড় মেয়ে হাসুকে (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাননীয় শেখ হাসিনা) পাঠাতেন তাঁদের স্ত্রীদের একটু খোঁজখবর নিয়ে আসার জন্য, আর সেই সঙ্গে কে কে আছে একটু দেখে এসে তাঁকে জানাতে। ছোট ভাই রাসেলকে সঙ্গে নিয়ে রুমে রুমে গিয়ে সব দেখেশুনে মাকে এসে রিপোর্ট দিতেন শেখ হাসিনা। বেগম মুজিবের একটা ভালো নেটওয়ার্ক ছিল সারা দেশে। কোথায় কী হচ্ছে তার সব খবর চলে আসত তাঁর কাছে। সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন তিনি। রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনেক নেতাই বেগম মুজিবের প্রতি আস্থাশীল ছিলেন।
আওয়ামী লীগের মধ্যে সে সময় খুব গোলমাল। একদল পিডিএমএ যোগদান করার পক্ষে, আর একদল ছয় দফা। ১৯ মে ১৯৬৬ সালে ৩২ নম্বর ধানমণ্ডির বাড়িতে ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিত সভা। ডেকোরেটর, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সে যুগে ছিল না, নিজ হাতে রান্না করে তিন দিন সবাইকে খাইয়েছেন বেগম মুজিব। সঙ্গে বিভক্ত নেতাদের নানা পরামর্শ দিয়েছেন, সাবধান করেছেন যেন ছয় দফা থেকে আট দফার দিকে চলে না যায়। বেগম মুজিবের মানসিক দৃঢ়তা সেই সময়ের রাজনৈতিক জাতীয় সংকট উত্তরণে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত অত্যন্ত কার্যকর ছিল।
নেতাদের নানামুখী পরামর্শে তিনি শুধু বলতেন, ‘লেখাপড়া জানি না কী বুঝব, খালি এটুকু বুঝি যে ছয় দফা আমাদের মুক্তির সনদ, এর বাইরে আমি কিছু জানি না।’ জেলখানা থেকে শেখ মুজিব দৃঢ় উচ্চারণে জানিয়ে দিয়েছেন, আর যাই হোক ছয় দফা থাকতেই হবে। ছয় দফা থেকে একচুল এদিক-ওদিক হওয়া যাবে না। বিশেষ কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত হলো ছয় দফা ছাড়া আর কিছু হবে না।
বেগম মুজিবের স্মরণশক্তি ছিল অসাধারণ। একবার যা শুনতেন তা আর ভুলতেন না। স্লোগান থেকে শুরু করে অনেক রাজনৈতিক পরামর্শ, নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত আসত বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে।
১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকাকালে প্রতিদিন কী বিপুল আগ্রহে স্ত্রীর আগমনের প্রতীক্ষায় থাকতেন তা তাঁর লেখনীতে দেখতে পাই। ঘরে-বাইরে বেগম মুজিবই ছিলেন তাঁর পরামর্শক, উপদেষ্টা, সহচর আর নির্ভরতার আশ্রয়স্থল। সে সময়ের লেখা কারাগারের রোজনামচা থেকে কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।
১৫ জুন ১৯৬৬ দুঃখ করে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘মাত্র ২০ মিনিট সময় যাবতীয় আলাপ করতে হবে। কথা আরম্ভ করতেই ২০ মিনিট কেটে যায়। নিষ্ঠুর কর্মচারীরা বোঝে না যে স্ত্রীর সাথে দেখা হলে আর কিছু না হউক একটা চুমু দিতে অনেকেরই ইচ্ছা হয়, কিন্তু উপায় কী? আমরা তো পশ্চিমা সভ্যতায় মানুষ হই নাই। তারা তো চুমুটাকে দোষণীয় মনে করে না। স্ত্রীর সাথে স্বামীর অনেক কথা থাকে, কিন্তু বলার উপায় নাই।’
২৬ জুন ১৯৬৬ রেণু স্যারিডন খেতে দিতে চাইত না। ভীষণ আপত্তি করত। বলত, হার্ট দুর্বল হয়ে যাবে। বলতাম, আমার হার্ট নাই, অনেক পূর্বেই শেষ হয়ে গেছে। বাইরে তার কথা শুনি নাই কিন্তু জেলের ভিতর তার নিষেধ না শুনে পারলাম না।
৬ জুলাই ১৯৬৬ বিকালে চা খাবার সময় সিকিউরিটি জমাদার সাহেবকে আসতে দেখে ভাবলাম বোধ হয় বেগম সাহেবা এসেছেন। গত তারিখে আসতে পারেন নাই অসুস্থতার জন্য। ‘চলিয়ে, বেগম সাহেবা আয়া।’ আমি কি আর দেরি করি? তাড়াতাড়ি পাঞ্জাবি পরেই হাঁটা দিলাম গেটের দিকে। রেণুকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘খুব জ্বরে ভুগেছ। এখন কেমন আছ?’ ‘পায়ে এখনো ব্যথা। তবে জ্বর এখন ভালোই।’ বললাম, ‘ঠাণ্ডা লাগাইও না’। আজ অনেক সময় কথা বললাম। সময় হয়ে গেছে, ‘যেতে দিতে হবে।’ বিদায় দিয়ে আমার স্থানে আমি ফিরে এলাম। কখনো কখনো স্ত্রীর উপস্থিতি কামনায় আকুল হয়ে উঠতেন, অপেক্ষা করে থাকতেন, না এলে মুষড়ে পড়তেন কিছুক্ষণের জন্য—
২১ জুলাই ১৯৬৬ ভেবেছিলাম আজ রেণু ও ছেলে-মেয়েরা দেখতে আসবে আমাকে। হিসাবে পাওয়া যায় আর রেণুও গত তারিখে দেখা করার সময় বলেছিল, ‘২০ বা ২১ তারিখে আবার আসব।’ চারটা থেকে চেয়েছিলাম রাস্তার দিকে। মনে হতে ছিল এই বোধ হয় আসে খবর। যখন ৫টা বেজে গেল তখন ভাবলাম, না অনুমতি পায় নাই।
শেখ মুজিবের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে, সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বেগম ফজিলাতুন্নেছা ছিলেন অফুরান প্রেরণার উত্স। ১৯৬৬-তে ছয় দফা ঘোষণার পর থেকে শেখ মুজিব যখন বারবার জেলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন তখন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা বেগম মুজিবের কাছে ছুটে আসতেন। তিনি তাঁদের বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন নির্দেশনা পৌঁছে দিতেন এবং লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জোগাতেন। জেলখানায় দেখা করার সময় ছেলে-মেয়েদের শিখিয়ে নিতেন একটু হৈচৈ করার জন্য, আর ওই ফাঁকে বাইরের সমস্ত রিপোর্ট স্বামীর কাছে দেওয়া আর তাঁর কাছ থেকে পরবর্তী করণীয় নির্দেশনা জেনে নেওয়া। নির্দেশনাগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
১৭ মার্চ ১৯৬৭ আজ আমার ৪৭তম জন্মবার্ষিকী। আমার জন্মবার্ষিকী আমি কোনো দিন নিজে পালন করি নাই। বেশি হলে আমার স্ত্রী এই দিনটাতে আমাকে ছোট্ট একটি উপহার দিয়ে থাকত। পাঁচটাও বেজে গেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে জমাদার সাহেব বললেন, ‘চলুন, আপনার বেগম সাহেবা ও ছেলে-মেয়েরা এসেছে।’ তাড়াতাড়ি কাপড় পরে রওয়ানা করলাম জেলগেটের দিকে। ছোট মেয়েটা আর আড়াই বত্সরের ছেলে রাসেল ফুলের মালা হাতে করে দাঁড়াইয়া আছে। মালাটা নিয়ে রাসেলকে পরাইয়া দিলাম। ছেলে-মেয়েদের চুমা দিলাম। সিটি আওয়ামী লীগ একটা বিরাট কেক পাঠাইয়া দিয়াছে। রাসেলকে দিয়েই কাটালাম, আমিও হাত দিলাম। জেলগেটের সকলকে কিছু কিছু দেওয়া হলো।
ছয়টা বেজে গিয়াছে, তাড়াতাড়ি রেণুকে ও ছেলে-মেয়েদের বিদায় দিতে হলো। রেণুও বড় চাপা, মুখে কিছুই প্রকাশ করে না। ফিরে এলাম আমার অস্তানায়।
১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রথমে মুক্তি দিয়ে জনগণের প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে জেলগেটেই সেনাবাহিনীর লোকজন পুনরায় গ্রেপ্তার করে ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে যায়। পাঁচ মাস তাঁর পরিবার জানতেও পারেনি তিনি কোথায় আছেন, কিভাবে আছেন, বেঁচে আছেন কি না? পুরো পরিবার নিয়ে চরম উত্কণ্ঠা, উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তায় কেটেছে বঙ্গমাতার। আগরতলা মামলায় সামরিক বাহিনীর ইন্টারোগেশনের সম্মুখীনও হতে হয়েছে একাধিকবার ।
দেশের অনেক, এমনকি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নেতারা বেগম মুজিবের কাছে আসতেন দেখা করতে, পরামর্শ নিতে, নির্দেশনা জানতে। আইয়ুব খান ভুট্টোকে মন্ত্রিত্ব থেকে বের করে দিলে সে-ও ৩২ নম্বর ধানমণ্ডির বাসায় ছুটে আসে। পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা এলে পর্দার আড়াল থেকে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতেন বেগম মুজিব। কখনোই সামনে আসতেন না। ছেলে-মেয়েদের বলতেন, ‘ওদের সাথে তো আর আমরা থাকব না, কেন দেখা করব? ওদের চেহারাও আমার দেখতে ইচ্ছা করে না।’ বঙ্গবন্ধু এমএনএ, এমপি-মন্ত্রী থাকাকালে অনেকবার করাচি গেছেন। বেগম মুজিব একবারের জন্যও তাঁর সঙ্গী হন নাই। কখনো যেতে চাইতেন না। সবার আগে তিনিই বুঝেছিলেন এ দেশ স্বাধীন হয়ে যাবে। তাঁর মধ্যে এই চেতনা অত্যন্ত তীব্র ছিল এবং বিশ্বাসও ছিল।
আগরতলা মামলা নিষ্পত্তির জন্য আইয়ুব খান লাহোরে গোলটেবিল বৈঠক ডাকে। প্রস্তাব দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে ছাড়া হবে প্যারোলে। বেগম মুজিব স্বামীর কাছে খবর পাঠালেন যেন তাঁর সঙ্গে পরামর্শ না করে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত না নেন। জানালেন দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ আছে। মামলা তুলে বঙ্গবন্ধুসহ বন্দি ৩৫ জনের সবাইকে মুক্তি দিলেই গোলটেবিল বৈঠক হতে পারে, অন্যথা একা যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে যে দূরদর্শিতা তিনি সেদিন দেখিয়ে ছিলেন তা পরবর্তী সময়ে আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের পথের নির্দেশনা দিয়েছিল।
নেপথ্যে থেকে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে এবং ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সময় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। বন্দি থেকেও পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার চোখ এড়িয়ে দলের নেতাদের নির্দেশনা পৌঁছে দিতেন। বেশ কয়েকবার গোয়েন্দা সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদ ও শাস্তি-নির্যাতনের হুমকি দেয়, তবু তিনি ছিলেন অকুতোভয়।
দেশের উত্তাল পরিস্থিতিতেও প্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছেন জাতির জনককে। পাঁচ সন্তানকে যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন এই মহীয়সী নারী। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ইতিহাসে শুধু একজন রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিণী নন, বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের নেপথ্যের অন্যতম অনুপ্রেরণাদানকারী মহীয়সী নারী। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন তিনি। ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডের সময়ও জীবনের মতো মরণের সহযাত্রী হলেন শেখ মুজিবের। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আজ সশরীরে বেঁচে না থাকলেও তিনি বেঁচে আছেন প্রত্যেক দেশপ্রেমিক বাঙালির হূদয়ে। তাঁর দেশপ্রেম ও আদর্শ অনুপ্রেরণার উত্স হয়ে থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য নীরবে-নিভৃতে কাজ করে যাওয়া এক মহীয়সী নারী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব একে অপরের সম্পূরক। বঙ্গবন্ধুর আপসহীন নেতৃত্ব ও বজ্রকঠিন ব্যক্তিত্বের যে দুর্বারতা তার উেস ছিলেন বেগম মুজিব। স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু; কিন্তু এই নেতৃত্বকে সহায়ক শক্তি, নির্যাতনবরণের ধৈর্য ও প্রেরণা জুুগিয়েছেন এই মহীয়সী সংগ্রামী নারী। মনেপ্রাণে একজন আদর্শ বাঙালি নারী ছিলেন বঙ্গমাতা। ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থেকেও সুখ-শান্তি তাঁর কাছে বড় হয়ে ওঠেনি। ত্যাগের মনোভাব নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণা ও শক্তি জুগিয়েছেন। রাজনৈতিক ও জাতীয় সংকট উত্তরণে দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম যেমন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে চিরকাল ইতিহাসের পাতায় অম্লান থাকবে, তেমনি বাঙালি জাতি চিরকাল স্মরণ করবে তাঁর প্রিয়তমা পত্নী ‘বঙ্গমাতা’ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে। আজ ৮ আগস্ট বঙ্গমাতার জন্মদিন। তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
রিয়াজ আহমেদ , লেখক : অধ্যাপক
|
|
|
|
মহামারি করোনাভাইরাসে দেশে দ্বিতীয় পর্যায়ের ধাক্কা লাগতে পারে বলে গণমাধ্যমে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ। দীর্ঘ সময় ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার বাংলাদেশে নিম্নমুখী না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি একথা বলেন। ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, যেসব দেশ করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে, তারা যে কাজগুলো সঠিকভাবে করেছে আমরা সেই কাজগুলো সঠিকভাবে করতে না পারার কারণেই আমাদের দেশে করোনাভাইরাস দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও নিম্নগামী হচ্ছে না। এক্ষেত্রে চীনের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। চীন খুব কম সময়ে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করছে। চীন থেকেই করোনা ভাইরাসের শুরু হয়। চীনের আগে কোনো দেশেতো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়নি। ‘করোনাভাইরাস সম্পর্কে চীনের কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না। তারপরেও তারা তো খুব কম সময়েই করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করেছে। দেড়শ কোটি লোকের বাসস্থান চীনে, তারা করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেললো। চীন কী করেছে- ট্রেসিং, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন এবং লকডাউন। পাশাপাশি থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম অস্ট্রেলিয়া সঠিকভাবে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করেছে। এই কাজগুলো সঠিকভাবে করতে না পারার কারণেই আমরা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। করোনাভাইরাস বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে হয়তো করোনাভাইরাসের সেকেন্ডারি একটা ওয়েব আসতে পারে। আমাদের দেশের চিত্রটা হয়তো যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ভারতের মতো হতে পারে। কিছুদিন করোনাভাইরাস দম ধরে থেকে আবারো ঊর্ধ্বগতিতে যেতে পারে। আমরা একদিকে ট্রেসিং করতে পারছি না, আক্রান্ত ব্যক্তিদের ট্রেসিং করে আইসোলেটেড করা, কোয়ারেন্টিন করা, তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছিল তাদের আইডেন্টিফাই করা, এগুলোর কোনটাই সঠিক ভাবে হচ্ছে না। ‘করোনাভাইরাসের মতো একটা জীবাণু, সেটাতো আর বসে থাকবে না। লোকজনের মাস্ক পরা কমে যাচ্ছে, অফিস আদালত খুলে যাচ্ছে, পরিবহনও চলছে। তাহলে বিষয়টা দাঁড়াচ্ছে করোনাভাইরাস যদি নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করে, সংক্রমণের ক্ষমতা কমিয়ে না ফেলে, তাহলে বাংলাদেশ সেকেন্ডারি একটা ওয়েবের দিকে যাবে। ’ বর্তমানে দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য করণীয় জানতে চাইলে আইইডিসিআরের সাবেক এ প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কিছুটা আক্ষেপ করে বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের জন্য করণীয় বিষয় আমরাতো বহুবার বলেছি। আমরাতো বলেই যাচ্ছি, কিন্তু যারা প্রয়োগ করার কথা তারাতো কানে তুলো দিয়ে বসে আছে। এখন সব থেকে জরুরি হলো করোনাভাইরাসের হট স্পটগুলোতে অনুসন্ধান চালানো, কারা ওইসব স্পটের লোকজনের সংস্পর্শে এসেছেন। তাদের ট্রেস করা। এখন জরুরিভিত্তিতে এন্টিজেন কিট দিয়ে দ্রুত করোনাভাইরাস শনাক্তের ব্যবস্থা করা। বাড়িতে বসেই যেন ১৫ মিনিটের মধ্যেই করোনা আক্রান্তদের শনাক্ত করা যায়। ‘এরপর আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুত আইসোলেটেড করার ব্যবস্থা করা। ঠিক একইভাবে যারা করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন তাদের কোয়ারেন্টিন করা। মানুষের চলাচল সীমিত করা। ঠিক যেমনটা আমরা পূর্ব রাজাবাজার ও ওয়ারীতে করেছি। এগুলোর কোনোটাই তো এখন হচ্ছে না। আমরা শুধু বলেই যাচ্ছি। কিন্তু করার কেউ নেই।
|
|
|
|
বিশ্বসহ সারাদেশ যখন করোনা মহামারীতে আক্রান্ত এবং সাথে আমাদের দেশের মানুষগুলো বন্যায় বিপর্যস্ত ঠিক সেই সময় কিছু বিবেকহীন মানুষ বন্যার পানি নিয়ে কি উল্লাসে মেতে উঠেছে। তাহলে মানুষের বিবেকবোধ আর কোথায় রইল? ইতিমধ্যে এই পানিতে পড়ে মারাও গেছেন। পানি নিয়ে এত আনন্দিত হওয়ার কি আছে পারলে অসহায় মানুষের মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। বললেন জেলা- শেরপুর পৌর শাখা আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত
|
|
|
|
১৯১৮ সালের ফ্লুর মতোই মারণরূপ নিতে পারে করোনাভাইরাস, এমনই সতর্কবার্তা দিলেন বিশিষ্ট মার্কিন সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফসি।
তাই বিশেষভাবে যুবসম্প্রদায়কে তার সাবধানবাণী, বেপরোয়া মনোভাব দেখিয়ে বিপত্তি যেন না বাড়ান তারা। ঘটনাচক্রে এদিনই যুক্তরাষ্ট্রে ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬৭ হাজার টপকে গেল, এখনও পর্যন্ত যা সর্বোচ্চ। আর মৃত্যু হয়েছে ৯০০ জনের। সম্প্রতি একটি বক্তৃতায় ফসি বলেন, কমবয়সীরা বলতেই পারেন, বয়স্কদের তুলনায় আমাদের সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে নিজেকে যেমন সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে হবে, তেমনই এটি দেখতে হবে যে তোমার থেকে অন্য কারও দেহে যেন সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের যা পরিস্থিতি তাতে ফসির এমন বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি জানান, ইচ্ছাকৃতভাবে নয়, অজান্তেই এই বিপত্তির অংশ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন যুবসম্প্রদায়।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরাগভাজন এই বিশেষজ্ঞের পিছনে অবশ্য আদাজল খেয়ে লেগেছে হোয়াইট হাউস। তার মতামত নির্ভরযোগ্য নয় বলে প্রচার চলছে নানা ভাবে।
|
|
|
|
আসন্ন ঈদুল আজহায় পশু বিক্রির অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ডিএনসিসি ডিজিটাল হাট’ থেকে গরু কেনার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
আজ শনিবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে ডিএনসিসি ডিজিটাল হাটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আসন্ন কোরবানিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কোরবানি পশু বিক্রির অনলাইন প্লাটফর্ম এ সময়ের জন্য প্রয়োজন ছিল। তাই ডিএনসিসি ডিজিটাল হাট সময়োপযোগী একটি পদক্ষেপ। মানুষ যাতে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে সে জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমিও এই অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ডিজিট্ল পদ্ধতিতে গরু কিনতে চাই এবং কোরবানি দিতে চাই।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান, এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশেনের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইমরান হোসেন।
|
|
|
|
এক মাসের মধ্যে সামনের সারির চার নেতাকে হারাল বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের মৃত্যু হয়। এর আগে মোহাম্মদ নাসিম, শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যু হয়।
রাজনৈতিক জীবনে তারা প্রত্যেকেই প্রভাবশালী ছিলেন এবং দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংকট উত্তরণ ও উন্নয়নে নিজেদের মেধার সর্বোচ্চ পরিচয় দিয়েছেন। এই চার নেতার মধ্যে মোহাম্মদ নাসিম, শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও বদরউদ্দিন আহমদ কামরান করোনা পজিটিভ ছিলেন।
মোহাম্মদ নাসিম:
১৩ জুন শনিবার রাজধানীর ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
৫ জুন থেকে তিনি কোমায় ছিলেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে ১ জুন রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। পরে তার করোনা টেস্ট করা হয়। ওইদিন রাতে তার করোনা পজিটিভ আসে।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হলেও পরদিন মোহাম্মদ নাসিমের অবস্থার উন্নতি হয়। ৫ জুন ভোরে তিনি স্ট্রোক করেন। ওই দিনই তার অপারেশন করা হয়। পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। অপারেশনের পর চিকিৎসকরা তাকে ৭২ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখেন। ওই সময় পার হওয়ার পরও তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় মেডিকেল বোর্ড নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। ওই বোর্ডের তত্ত্বাবধানেই তিনি কোমায় ছিলেন। এরমধ্যে ৯ জুন তার করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে।
মোহাম্মদ নাসিম স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী। ১৯৯৬ সালে স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনে ৬ বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।
ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতির জীবন শুরু হলেও পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর সরাসরি প্রভাবে ছাত্রলীগে যোগদান করেন মোহাম্মদ নাসিম। ছাত্র অবস্থায় ১৯৬৬ সালে তিনি পাবনা অঞ্চলে `ভুট্টা আন্দোলন` সংগঠিত করলে বাবা মনসুর আলীর সঙ্গে কারারুদ্ধ হন। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর নাসিম আওয়ামী লীগের পাবনা জেলা শাখার যুগ্মসচিব হন। ১৯৭৩ সালের পর তাকে বাংলাদেশ যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের পরে তাকে এর সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত করা হয়। পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদ নাসিমকেও গ্রেপ্তার করা হয়। সেসময় দীর্ঘদিন তাকে কারাগারে থাকতে হয়।
১৯৮১ সালের আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন নাসিম। ওই সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালে নাসিমকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালের সম্মেলনে দলের প্রচার সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে তিনি দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০০২ সালের আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ একটি ছিল। এরপর থেকে বিভাগভিত্তিক সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০২ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দলের সম্মেলনে তাকে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য পদে রাখা হয়। ২০১২ সালের সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। পরপর তিন মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৬ সালে মোহাম্মদ নাসিম প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। সিরাজগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন (কাজীপুর) থেকে ৫বার বিজয়ী হন তিনি। ১৯৯১-এ তিনি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের চিফ হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ১/১১ সরকারের দেয়া মামলার কারণে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। ওই নির্বাচনে তার ছেলে তানভীর শাকিল জয় দলীয় মনোনয়ন পান। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে নাসিম মনোনয়ন পান এবং আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন। ২০১৯ সালের নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন।
মোহাম্মদ নাসিম পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে পড়াশোনা করেন। তিনি ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা আন্দোলনের এক সমাবেশে অংশ নিতে পাবনায় যান এবং পরে তিনি মনসুর আলীর বাড়িতে যান। তিনি জানতে পারেন যে নাসিম ছাত্র ইউনিয়নের নেতা। এরপর শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠতায় নাসিম আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের একটি অনুষ্ঠানে হাজির হন এবং পরবর্তীকালে এই ছাত্র সংগঠনে যোগ দেন। এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর তিনি ঢাকায় এসে জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন ও এখান থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায়। তার বাবা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী এবং স্বাধীন বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী।
অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন:
বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তার বয়স হয়েছিলো ৭৭ বছর। তিনি নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন।
গত ২ জুন জ্বর, অ্যালার্জিসহ বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য সাহারা খাতুনকে। অবস্থার অবনতি হলে ১৯ জুন সকালে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। এরপর অবস্থার উন্নতি হলে ২২ জুন দুপুরে তাকে আইসিইউ থেকে এইচডিইউতে (হাইডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়। পরে ২৬ জুন সকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আবার তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়।
এরপর তার অধিকতর উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৬ জুলাই চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে থাইল্যান্ড নেয়া হয়। সেখানে বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ২৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
সাহারা খাতুনের জন্ম ১৯৪৩ সালের পহেলা মার্চ ঢাকার কুর্মিটোলায়। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া, তিনি আন্তর্জাতিক মহিলা আইনজীবী সমিতি ও আন্তর্জাতিক মহিলা জোটের সদস্য। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে একজন আইনজীবী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন।
সাহারা খাতুন ছাত্র জীবনেই রাজনীতিতে যুক্ত হন। বাংলাদেশ সরকারের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন।
শেখ মো. আবদুল্লাহ: ১৩ জুন রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনিও করোনা পজেটিভ ছিলেন। শেখ আবদুল্লাহ ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
আবদুল্লাহ কর্মজীবনের শুরুতে সুলতানশাহী কেকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে গোপালগঞ্জ ও ঢাকা জজকোর্টে ওকালতি পেশায় জড়িত হন। প্রথমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বোর্ড অব গভর্নরস`র সদস্য ও পরবর্তীকালে ওই বোর্ডের চেয়ারম্যান হন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক ছিলেন তিনি।
১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার কেকানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শেখ মো. আবদুল্লাহ। আযম খান সরকারি কমার্স কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং সেসময় যুবলীগে যোগ দিয়ে গোপালগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। তিনি ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০ সালের সাধরণ নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুজিব বাহিনীতে যোগ দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। স্বাধীনতার পর তিনি গোপালগঞ্জ জেলা শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বদরউদ্দিন আহমদ কামরান: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৫ জুন সোমবার ভোররাত তিনটায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।
৫ জুন সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে কামরানের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়। পরদিন তীব্র জ্বর ও বমির জন্য নগরীর শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ৭ জুন তাকে ঢাকায় এনে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। ৮ জুন তাকে প্লাজমা থেরাপি দেয়া হয়। প্লাজমা থেরাপির পর কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। তবে তাকে সেখানে আইসিইউতে রেখে অক্সিজেন সাপোর্টে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এবং তিনি মারা যান।
কামরান সিলেট পৌরসভার কনিষ্ঠ কমিশনার হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি সিলেট পৌরসভায় কমিশনার হিসাবে তিনবার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ সালে সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সিলেট নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন হলে তিনি হন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন।
২০০৩ সালের মার্চে মুহাম্মদ আবদুল হককে পরাজিত করে তিনি সিলেট মহানগরের মেয়র হন। ২০০৫ সালে, একটি টেনিস কোর্টের উদ্বোধন করতে গেলে, হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী বাংলাদেশ সদস্যরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালায়।
২০০৭ সালে তিনি সিলেট কিচেন মার্কেট ঘুষ মামলায় গ্রেপ্তার হন। মামলায় জামিন পেলেও কামরানকে জরুরি ক্ষমতা বিধিমালার দায়ের করা অন্য মামলায় আটক করা হয়। ২০০৮ সালে কারাবন্দি অবস্থায় মেয়র নির্বাচনের প্রতিযোগিতা করার জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দেন ও মেয়র হিসেবে দ্বিতীয়বার নির্বাচনে জয় লাভ করেন। ২০০৮ সালের ১৭ আগস্ট তাকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। ২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। পরে, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের মেয়র নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন তিনি।
২০০২ সালের সম্মেলনে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০৫ এবং ২০১১ সালের সম্মেলনেও পুনরায় নির্বাচিত হয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন।
|
|
|
|
|
|
|