বাংলার জন্য ক্লিক করুন
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * বাংলাদেশে এইচএমপিভিতে আক্রান্ত নারীর মৃত্যু   * লস অ্যাঞ্জেলেসে এবার ‘আগুন টর্নেডোর’ শঙ্কা   * বিদায়ী ভাষণে রাজনৈতিক জীবনের ইতি টানলেন বাইডেন   * পুতুলকে ডব্লিউএইচওর পরিচালক নিয়োগে হাসিনার হস্তক্ষেপের অভিযোগ   * যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরও গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত, নিহত ৩০   * ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হামাস   * ২০ জানুয়ারির মধ্যে হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধ বিরতির জোর প্রস্তুতি : ইসরায়েলকে যদি পূর্বেই থামানো যেত তাহলে গাজায় এত মানুষ নিহত হতো না : বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম   * ডেসটিনির এমডিসহ ১৯ জনের ১২ বছরের কারাদণ্ড   * অপরাধে জড়িত সব কর্মকর্তাকে ধরা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা   * সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নামে মামলা  

   মতামত -
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                 
২০ জানুয়ারির মধ্যে হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধ বিরতির জোর প্রস্তুতি : ইসরায়েলকে যদি পূর্বেই থামানো যেত তাহলে গাজায় এত মানুষ নিহত হতো না : বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম

আব্দুল খালেক খোন্দকার : সমসাময়িক বিষয়ক বিশ্লেষক ও দৈনিক এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা তাজুল ইসলাম বলেন, ২০ জানুয়ারির মধ্যে হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির শেষ সময় নির্ধারণ করে জোর প্রস্তুতি চলছে। জিম্মিদের মুক্তির বিষয়েও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ নেয়া হল ঠিকই, কিন্তু ততক্ষনে ইসরায়েল গাজাকে একটি মৃতপূরীতে পরণিত করে ফেলেছ। বিগত দেড় বৎসর যাবত ইসরায়েল গাজায় প্রায় ৪৭ হাজার নির্দোষ মানুষকে হত্যা করেছে ও লক্ষাধিক মানুষকে পঙ্গু ও মানুষিকভাবে চির অক্ষম করে দিয়েছে যাদের ৭০% শিশু। গাজার নারী, শিশু স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদ মানবতাবাদী বিশ্ব নেতাদের কর্ণ-কূহরে এতদিন প্রবেশ করে নাই।
বিশ্লেষক তাজুল বলেন, সৌদি আরবসহ পৃথিবীর সামর্থ্যবান পরাক্রমশালী দেশগুলো ইসরায়েলের এই নির্লজ্জ হত্যাকান্ড থামাতে যদি নূন্যতম কার্যকরী ভূমিকা রাখতেন তবে ইসরায়েল কখনই এত শিশু ও নির্দোষ সাধারন মানুষ হত্যা করার সাহস পেত না।
তাজুল ইসলাম বলেন, সবার উপরে হচ্ছে মানব ধর্ম। আজ লস এ্যানজেলস আগুনে পুরে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। সেখানে কে খ্রীষ্টান, কে আমেরিকার আর কে মুসলমান তা দেখার বিষয় নয়। মানুষের জান-মাল রক্ষাই মূখ্য বিষয়। মুসলিমেরা লস এ্যাঞ্ছেলস বাসীদের নিরাপত্তার জন্য আজান দিচ্ছেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন। এটাই তো স্বাভাবিক। ফিলিস্থিনে খ্রীষ্ট সম্প্রাদয়ের লোকজনও বাস করেন। এত মুসলিম শিশু হত্যার প্রতিবাদে তারা কখনও মিছিল করেছেন বা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন বলে জানা যায় নাই।
আমরা এখন শুনতে পাচ্ছি যে মিঃ ট্রাম্পের অভিষিক্ত দিনের পূর্বেই তড়িঘড়ি করে হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বিরতির আয়োজন চলছে। কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন যে, ইসরায়েল ও হামাস চুক্তির বিষয়ে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছেন। এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, আলোচনার বর্তমান অবস্থা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। তারা আশা করছে, যে এই দফার আলোচনায় `পরিষ্কার ও বিস্তারিত একটি চুক্তিতে` উপনীত হবে।
তাজুল ইসলাম প্রসঙ্গ টেনে আরও বলেন, আজ এতদিন পরে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে চুক্তি সম্পাদিত করার তরিঘরি করা হচ্ছে। এই যুদ্ধ বিরতি প্রকৃতই যদি নিরীহ মানুষের জীবন রক্ষার্থে হতো তাহলে দেড় বৎসর যাবত হাজার হাজার শিশু ও সধারন মানুষের প্রাণ রক্ষা পেত ও অকালে নিহত হত না।
য্দ্ধু বিরতি আলোচনার মধ্যেই গত কয়েক দিনে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৭০ জন শিশু নিহত হয়েছে। এটা কোন ধরনের আলোচনা! তাজুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন।
মূলত ১৬ মাসে গড়ানো এই যুদ্ধে গাজার ফিলিস্তিনি শিশুরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল গত ৮ জানুয়ারি বলেন, “নতুন বছর গাজার শিশুদের জন্য আরও বেশি মৃত্যু ও দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে।”
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গাজায় এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
ইউনিসেফ সহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে গাজার বেঁচে থাকাসব শিশুই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও আতঙ্ক নিয়ে অবশিষ্ট জীবন কাটাবে। বিষয়টি খুবই ভয়াবহ। এজন্য তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দরকার।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার হাজার হাজার শিশু যুদ্ধের মধ্যে সঙ্গীহীন বা তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আর ভূখণ্ডটির প্রায় সব শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দরকার।
এই যুদ্ধ শুরুর আগেই গাজার ৫ লাখ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক সমর্থন প্রয়োজন বলে ইউনিসেফ বিবেচনা করেছিল। আজ গাজার প্রায় সব শিশুর ঐ সহায়তাগুলো দরকার আর তাদের সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি।

২০ জানুয়ারির মধ্যে হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধ বিরতির জোর প্রস্তুতি : ইসরায়েলকে যদি পূর্বেই থামানো যেত তাহলে গাজায় এত মানুষ নিহত হতো না : বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
                                  

আব্দুল খালেক খোন্দকার : সমসাময়িক বিষয়ক বিশ্লেষক ও দৈনিক এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা তাজুল ইসলাম বলেন, ২০ জানুয়ারির মধ্যে হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির শেষ সময় নির্ধারণ করে জোর প্রস্তুতি চলছে। জিম্মিদের মুক্তির বিষয়েও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ নেয়া হল ঠিকই, কিন্তু ততক্ষনে ইসরায়েল গাজাকে একটি মৃতপূরীতে পরণিত করে ফেলেছ। বিগত দেড় বৎসর যাবত ইসরায়েল গাজায় প্রায় ৪৭ হাজার নির্দোষ মানুষকে হত্যা করেছে ও লক্ষাধিক মানুষকে পঙ্গু ও মানুষিকভাবে চির অক্ষম করে দিয়েছে যাদের ৭০% শিশু। গাজার নারী, শিশু স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদ মানবতাবাদী বিশ্ব নেতাদের কর্ণ-কূহরে এতদিন প্রবেশ করে নাই।
বিশ্লেষক তাজুল বলেন, সৌদি আরবসহ পৃথিবীর সামর্থ্যবান পরাক্রমশালী দেশগুলো ইসরায়েলের এই নির্লজ্জ হত্যাকান্ড থামাতে যদি নূন্যতম কার্যকরী ভূমিকা রাখতেন তবে ইসরায়েল কখনই এত শিশু ও নির্দোষ সাধারন মানুষ হত্যা করার সাহস পেত না।
তাজুল ইসলাম বলেন, সবার উপরে হচ্ছে মানব ধর্ম। আজ লস এ্যানজেলস আগুনে পুরে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। সেখানে কে খ্রীষ্টান, কে আমেরিকার আর কে মুসলমান তা দেখার বিষয় নয়। মানুষের জান-মাল রক্ষাই মূখ্য বিষয়। মুসলিমেরা লস এ্যাঞ্ছেলস বাসীদের নিরাপত্তার জন্য আজান দিচ্ছেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন। এটাই তো স্বাভাবিক। ফিলিস্থিনে খ্রীষ্ট সম্প্রাদয়ের লোকজনও বাস করেন। এত মুসলিম শিশু হত্যার প্রতিবাদে তারা কখনও মিছিল করেছেন বা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন বলে জানা যায় নাই।
আমরা এখন শুনতে পাচ্ছি যে মিঃ ট্রাম্পের অভিষিক্ত দিনের পূর্বেই তড়িঘড়ি করে হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বিরতির আয়োজন চলছে। কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন যে, ইসরায়েল ও হামাস চুক্তির বিষয়ে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছেন। এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, আলোচনার বর্তমান অবস্থা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। তারা আশা করছে, যে এই দফার আলোচনায় `পরিষ্কার ও বিস্তারিত একটি চুক্তিতে` উপনীত হবে।
তাজুল ইসলাম প্রসঙ্গ টেনে আরও বলেন, আজ এতদিন পরে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে চুক্তি সম্পাদিত করার তরিঘরি করা হচ্ছে। এই যুদ্ধ বিরতি প্রকৃতই যদি নিরীহ মানুষের জীবন রক্ষার্থে হতো তাহলে দেড় বৎসর যাবত হাজার হাজার শিশু ও সধারন মানুষের প্রাণ রক্ষা পেত ও অকালে নিহত হত না।
য্দ্ধু বিরতি আলোচনার মধ্যেই গত কয়েক দিনে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৭০ জন শিশু নিহত হয়েছে। এটা কোন ধরনের আলোচনা! তাজুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন।
মূলত ১৬ মাসে গড়ানো এই যুদ্ধে গাজার ফিলিস্তিনি শিশুরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল গত ৮ জানুয়ারি বলেন, “নতুন বছর গাজার শিশুদের জন্য আরও বেশি মৃত্যু ও দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে।”
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গাজায় এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
ইউনিসেফ সহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে গাজার বেঁচে থাকাসব শিশুই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও আতঙ্ক নিয়ে অবশিষ্ট জীবন কাটাবে। বিষয়টি খুবই ভয়াবহ। এজন্য তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দরকার।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার হাজার হাজার শিশু যুদ্ধের মধ্যে সঙ্গীহীন বা তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আর ভূখণ্ডটির প্রায় সব শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দরকার।
এই যুদ্ধ শুরুর আগেই গাজার ৫ লাখ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক সমর্থন প্রয়োজন বলে ইউনিসেফ বিবেচনা করেছিল। আজ গাজার প্রায় সব শিশুর ঐ সহায়তাগুলো দরকার আর তাদের সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি।

২০০ টাকা মূল্যমানের নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্প ছাপিয়ে মূল্যবান কাগজের সাশ্রয় করা উচিত : বিশ্লষক তাজুল ইসলাম
                                  

আব্দুল খালেক খোন্দকার : সমসাময়িক বিষয়ক বিশ্লেষক ও এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা জনাব তাজুল ইসলাম মনে করেন, ২০০ টাকা মূল্যমানের নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্প ছাপিয়ে মূল‍্যবান কাগজের সাশ্রয় করা উচিত।


তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ১০০ টাকা মূল্যের ২টি ষ্ট্যাম্প ব্যবহার করে ২০০ টাকা মূল্য মানের ষ্ট্যাম্পের প্রয়োজন মেটানো হচ্ছে। ফলে এই অতি মূল্যবান কাগজের প্রচুর অপচয় হচ্ছে।


১০০ টাকা মূল্যের ষ্ট্যাম্পে যতটুক ফাঁকা স্থান থাকে সেখানেই পূর্ণ বক্তব্যটি লেখা সম্ভব। কিন্তু ২০০ টাকা মূল্যের ষ্ট্যাম্প না থাকায় ১০০ টাকা মূল্যের দু’টি পাতা ব্যবহার করার প্রয়োজন হচ্ছে। আর এর ফলে এই মূল্যবান কাগজের ব্যপক অপচয় হচ্ছে। সুতরাং এক পাতা বিশিষ্ট ২০০ টাকা মূল্যমানের ষ্ট্যাম্পের ব্যবস্থা থাকলে অযথা ১০০ টাকা মূল্যের দুইটি পাতা ব্যবহার করা লাগত না। ফলে বিপুল অর্থ ও সম্পদ সাশ্রয় করা সম্ভব হতো।


সুতরাং বিশ্লেষক মোঃ তাজুল ইসলাম মনে করেন, ২০০ টাকা মূল্যমানের নন-জুডিশিয়াল রেভিনিউ ষ্ট্যাম্পের পাতা ছাপানো ও এর প্রতুতলতা প্রাপ্যতা সার্বজনিন হলে দেশের প্রচুর অর্থও যেমন সাশ্রয় করা যেত তেমনিভাবে নন-জুডিশিয়াল সংক্রান্ত কার্যাবলী মানুষের জন্য সহজ হয়ে যেত।


এ কথা জানা যায় যে, দেশের চারটি বিভাগীয় শহরের নিম্ন আদালতে গড়ে প্রতিদিন ২০০, ১০০ তার চেয়ে কম মূল্যমানের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের ব্যবহার সবচেয়ে বেশী। আর মাঝে মাঝেই নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই সুযোগে বিক্রেতাদের একটি অংশ প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ছয় থেকে দশ গুণ বেশি স্ট্যাম্পের অতিরিক্ত মূল্য আদায় থাকে।


সংকটের কারনে একটি আদালত ভবন এলাকায় ১৫০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ৯০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে বলে খবরে জানা গয়েছিল। বন্দর নগরী এবং রাজধানী ঢাকায় আবাসিক প্লটের জন্য আবেদন করতে ইচ্ছুক লোকদের একটি ভাল সংখ্যক, কাঙ্ক্ষিত স্ট্যাম্প সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছিল বলেও জানা যায়।


নিরাপত্তা কাগজের অভাবে বাংলাদেশ সরকারি প্রেসে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ছাপানোর কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হয়ে থাকে।


স্ট্যাম্পের সরবরাহের অবস্থান প্রকৃত চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট অপর্যাপ্ত হওয়ায় ক্রেতারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।


নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পগুলি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সহ অন্যান্য বাণিজ্যিক চুক্তি ও সমস্ত ধরণের আইনি কার্যক্রমের সম্পাদনের জন্য অপরিহার্য।


উদাহরণস্বরূপ, সমস্ত ধরণের ব্যবসায়িক চুক্তিতে প্রবেশ করতে হলে, চূড়ান্তকরণ এবং আইনি সমাপ্তির জন্য এই স্ট্যাম্পগুলির ব্যবহার প্রয়োজন। স্ট্যাম্পগুলি অবশ্যই নথিতে ব্যবহার করতে হবে যাতে অ্যাটর্নির ক্ষমতা প্রসারিত করা, বিক্রয় এবং বিক্রয় চুক্তির জন্য চুক্তি করা, দলিলের প্রত্যয়িত অনুলিপি প্রস্তুত করা, বিবাহের চুক্তি, হলফনামা ঘোষণা করা ইত্যাদি। এইভাবে, এটা স্পষ্ট হওয়া উচিত যে এই স্ট্যাম্পগুলির প্রাপ্যতার সংকট বা ঘাটতি বিপুল সংখ্যক নিয়মিত ব্যবহারকারীদের পক্ষে সবচেয়ে অসুবিধার এসব কিছুই


তাই যে বক্তব্য এক পাতাতেই সাবলীলভাবে লিখে শেষ করা যায় সেই বক্তব্য লিখতে দুই পাতা ব্যবহার করা, আবার এই মূল্যবান কাগজ, নিতান্তই জাতীয় সম্পদের অপচয় ও অপব্যবহার।
লক্ষ্য করা যায় যে শুধু এই রেভিনিউ ষ্ট্যাম্পই নয়, সমাজে আমাদের জাতীয় সম্পদের ব্যপক অপচয় ও অপব্যবহার হচ্ছে। দেশের মূল্যবান প্রকৃতিক সম্পদের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই এই গ্যাস নানাভাবে অপচয় হচ্ছে। অযথা চুলা জ্বালিয়ে রেখে এই গ্যাসের মারাত্নক ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে। পানির অপচয় আমাদের দেশে সবচেয়ে বশী। এক বালতি পানিতে যে কাজ হয় তা করতে পাঁচ-ছয় বালতি পরিমান পানি ব্যবহার করছি।


ইসলাম ধর্মে অপব্যয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ। সূরাঃ আল-ইসরা, আয়াত-২৭.

এখানে ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। মধ্যপস্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “এবং যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করেনা, কৃপনতাও করেনা, আর তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী” [সূরা আল-ফুরকান: ৬৭]

যাহোক ব্যক্তি পারিবারিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রেই আমাদের অপব্যয় ও অপচয় বন্ধ করতে হবে তবেই আমরা জাতা হিসাবে উন্নতি করতে পারব।

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন এই মুহুর্তে বাংলাদেশের জন্য সময়োপযোগী নয় : বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
                                  

আব্দুল খালেক খোন্দকার : আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন বা পিআর পদ্ধতিতে ভোটের বিষয়টি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বেশ জোরে-শোরেই উচ্চারিত হয়ে আসছে।
এ ব্যাপারে সমসাময়িক বিষয়ক বিশ্লেষক ও দৈনিক এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা মো: তাজুল ইসলাম বলেন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন বা পিআর পদ্ধতিতে ভোট বাংলাদেশের বর্তমান পেক্ষাপটে সময়যোগী নয়। এই ভোট ব্যবস্থায় কলাণের চেয়ে অকল্যাণই বয়ে আনতে পারে। তার চেয়ে চলমান পদ্ধতিতে ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত হলে জবাবদিহিতা বেশী নিশ্চিত করা যাবে।
প্রচলিত পদ্ধতিতে জনগণ প্রার্থী দেখে-শুনে ভোট প্রদান করে পছন্দমত প্রার্থী নির্বাচিত করতে পারেন। পছন্দকরা নিজ এলাকার প্রতিনিধির কাছে জনসধারনের চাওয়া-পাওয়া ও তাকে বুঝা সহজ হয়। পক্ষান্তরে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন বা পিআর পদ্ধতিতে ভোট হলে প্রতিনিধি জনগণের এলাকার না হয়ে ভিন্ন এলাকার ব্যক্তিও প্রতিনিধি হতে পারেন যার কাছে জনসাধারন স্বাচ্ছন্দভাবে আগমন ও তার দাবী-দাওয়া পেশ করতে কুণ্ঠা বোধ করতে পারেন। জনগণ তাকে ভালভাবে বুঝবে না আবার তিনিও ঐ এলাকার জনসাধারনকে ভালভাবে বুঝবে না।
মো: তাজুল ইসলাম এই পদ্ধতির আরও কিছু ত্রুটিপূর্ণ দিক তুলে ধরে বলেন পিআর পদ্ধতির ভোটে যে সরকার গঠন হয় সেটি স্থিতিশীল হয় না। কারণ এই পদ্ধতিতে ভোট হলে বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না। স্বৈরতন্ত্র ঠেকাতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি নয়, প্রয়োজন কার্যকর গণতান্ত্রিক সংস্কার।
আনুপাতিক ব্যবস্থার আরেকটি প্রধান অসুবিধা হলো, এটি রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে খণ্ডিত করতে পারে যা কখনও কখনও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। এছাড়াও, দলীয় তালিকার পদ্ধতির অর্থ হলো ভোটারদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কারন প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়ার সময় রাজনৈতিক দলকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেয়া হয়। ভোটাররা একটি দলকে ভোট দেয়। পরবর্তীতে দলের পাওয়া মোট ভোটের শতাংশ হিসেবে প্রার্থী তালিকা অনুসারে আসন বণ্টন করা হয়।
অপরদিকে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর হচ্ছে নির্বাচনি ব্যবস্থার এমন একটি পদ্ধতি যেখানে আসন বণ্টন হয় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে।
উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, যদি কোন দল মোট প্রদত্ত ভোটের শতকরা ১০ শতাংশ পায়, তাহলে সেই দল আনুপাতিক হারে সংসদের ১০ শতাংশ বা ৩০টি আসন পাবেন।
কোনো দল নির্বাচনে যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তারা সেই অনুপাতে আসন পাবে।
কিছু বিশ্লেষকে রা বলছেন, এ পদ্ধতিতে একটি নির্বাচনে দেয়া প্রত্যেকটি ভোট কাজে লাগে এবং প্রতিটি ভোট সংসদে সমানভাবে প্রতিনিধিত্ব করে। তাছাড়া একটি নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ও হারের ভিত্তিতে সংসদে আসন বণ্টন হয়। সব ভোটারদের মতামতের প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব এই পদ্ধতিতে ভোটের মাধ্যমে।
বিশ্বের যে সব দেশে এই পদ্ধতিতে ভোট হচ্ছে তার উদাহরণ টেনে আবার কিছু বিশ্লেষকরা বলছেন, শিগগিরই চালু না হলেও ধীরে ধীরে আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোটের পথে হাটতে পারে বাংলাদেশ।
যাক বাংলাদেশে বর্তমানে নির্বাচন ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারে বিভিন্ন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রশ্নে অনেক রাজনৈতিক দল আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন বা পিআর পদ্ধতিতে ভোটের দাবিও তুলছেন।
সম্প্রতি এ নিয়ে একটি সেমিনারে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, কমিউনিস্ট পার্টিসহ অনেক রাজনৈতিক দল আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোটের পক্ষে দাবি তুলেছিলেন।
তবে বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষেই অবস্থান করছে।
এখানে আরও উল্লেখ করা যেতে পারে সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসেন মুহম্মদ এরশাদ একসময় এই পদ্ধতির কথা প্রথম আলোচনায় এনেছিলেন। কিন্তু ঐ সময় দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো এব্যাপারে কোনো উৎসাহ দেখায়নি। ফলে বিষয়টি এখানেই থেমে যায়। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের আমলে আগামী নির্বাচন আনুপাতিক পদ্ধতিতে করার ব্যাপারে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল উৎসাহ প্রকাশ করছে। তবে এত অল্প সময়ের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে চলে আসা একটি নির্বাচন পদ্ধতিকে হঠাৎ করে পরিবর্তন করাটা সহজ হবে না। কারণ, ভোটারদের আগে বুঝাতে হবে এই আনুপাতিক ভোট পদ্ধতিটা আসলে কি।
তাছাড়া একটা অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে এধরনের এই বিশাল পরিবর্তন আনার অধিকার আছে কি-না সে বিষয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। তবে এই পদ্ধতি আগামীতে গ্রহণযোগ্য হবে কি হবে না তার সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকার সংসদে আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারে। সুতরাং নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন যদি আনতেই হয় তাহলে তা আনবে বাংলাদেশের আসছে জাতীয় সংসদ, একটি নির্বাচিত সরকার। একটি অনির্বাচিত সরকার কর্তৃক এ ধরনের পরিবর্তন আনা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক বলে বিবেচিত হওয়ার সম্ভবনা আছে। তবে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হওয়া ইতিবাচক। তাহলে জনগণ কিছুটা হলেও আগে থেকেই সিস্টেমটা বুঝার সুযোগ পাবে।
বর্তমান বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় ৩০০টি আসনে আলাদা আলাদা প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে রাজনৈতিক দলগুলো।
ধরা যাক, বর্তমান পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনে একটি আসনে মোট চারজন প্রার্থী চারটি দল থেকে নির্বাচন করছে। এই নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮৫ শতাংশ।
এর মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তিনজন প্রার্থীই ২০ শতাংশ করে ভোট পেল। আর চতুর্থ প্রার্থী পেলো ২৫ শতাংশ ভোট।
বর্তমান পদ্ধতি অনুযায়ী চতুর্থ প্রার্থীই এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। আর ওই তিনটি দলের ৬০ শতাংশ ভোট তেমন কোন কাজে আসছে না।
একই ভাবে সারাদেশের অন্তত ২৯০ আসনে যদি একই হারে ভোট পেয়ে চতুর্থ দলটির প্রার্থীরা জয়লাভ করে, তাহলে মাত্র ২৫ শতাংশ ভোট নিয়ে তারা সরকার গঠনসহ সংসদে একচ্ছত্রভাবে আধিপত্য করবে।
অথচ বাকি তিন দল মিলে ৬০ শতাংশ ভোট পেলেও তাদের কোন প্রতিনিধিত্ব থাকলো না সংসদে। এতে সংসদে প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণ থাকে না। যে কারণে আনুপাতিক নির্বাচন করতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতেই জোর দিচ্ছেন কিছু বিশ্লেষকরা।

‘না’ ভোট ব্যবস্থা গণতন্ত্র বিকাশে বড় বাধা : বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
                                  

আব্দুল খালেক খোন্দকার : আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক ও দ্য এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা তাজুল ইসলাম মনে করেন ‘না’ ভোট ব্যবস্থা গণতন্ত্র বিকাশে একটি

বড় বাধা। বর্তমান নির্বাচন সংস্কার কমিশনে ‘না’ ভোটের যে বিষয়টির প্রস্তাবনা উল্লেখ করা হয়েছে সে ব্যাপারে বিশ্লেষক তাজুল বলেন, ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা দ্বারা নির্বাচন সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হবে একথা ধারনা করা ভুল। কারন ‘না’ ভোটের ব্যালোটও প্রভাবিত করা সম্ভব। কোন নির্দিষ্ট দল ও প্রার্থীর পক্ষে যেমন প্রশাসনের প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারন করা সম্ভব ঠিক তেমনিভাবে ‘না’ ভোটের পক্ষেও প্রভাব খাটানো এবং নির্বচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা সম্ভব। তিনি প্রশ্ন করেন, ধরা গেল ‘না’ ভোটের ব্যালটই সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করল, সেক্ষেত্রে নির্বাচনের ফলাফল কি ঘোষিত হবে? নির্বাচনটি কি বাতিল ঘোষণা করা হবে?

নির্বাচনে যদি ‘না’ জয়যুক্ত হয় তাহলে ধরে নিতে হবে জনগণ নির্বাচন চায় না অথবা দেশ পরিচালনার মত কোন যোগ্য প্রার্থী বা দল দেশে নাই; সে ক্ষেত্রে দেশে গণতন্ত্রের কি হবে? তাজুল ইসলাম নির্বাচন কমিশন সংষ্কার কর্তৃপক্ষের নিকট প্রশ্নটি রাখেন। উল্লেখ্য নির্বাচন সংষ্কার ব্যবস্থায় ‘না’ ভোট রাখাসহ তিনটি প্রস্তাবের বিষয়ে ইতোমধ্যে নির্বাচন সংষ্কার কমিশন মত দিয়েছেন।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, সদস্য মো. আবদুল আলীম, জেসমিন টুলী প্রমুখ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
‘না’ ভোট ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচন করতে গেলে বলতে হয়, বিগত ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের ইতিহাসে ভোটাররা প্রথমবারের মতো ‘না ভোট’ প্রয়োগ করেছিল। ওই সময় জারি করা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ধারা ৩১(৫)(বিবি)-তে এ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ বিধান অনুযায়ী ব্যালট পেপারের সবশেষ প্রার্থীর স্থানে লেখা থাকে ‘ওপরের কাউকে নয়’ এবং ভোটারদের সহজ পরিচিতির জন্য মার্কা রাখা হয় ‘ক্রস’। এটাই অন্য কথায় ‘না’ ভোট। তখন সারা দেশে মোট প্রদত্ত ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫৯ হাজার ২১০ ভোটের মধ্যে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪৩৭টি ‘না ভোট’ পড়েছিল। উল্লেখ্য, ওই নির্বাচনে ৩৮টি দল অংশগ্রহণ করলেও মাত্র ৬টি দল ‘না ভোটের’ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল। তার মানে ‘না ভোট’ সপ্তম স্থানে ছিল। আর বাঁকি ৩১ টি দল ‘না’ ভোটের নিচে অবস্থান করেছিল। কোন প্রচারণা, তদবির ছাড়াই জনপ্রিয়তার দিক থেকে ‘না’ ভোট সপ্তম স্থানে ছিল। সুতরাং বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘না’ ভোট বিজয়ী হলে সেক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে? ২০০৮ এর এ বিধান নিয়ে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিকরা সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাই পরবর্তী সময়ে সরকার এ ধারাটি বাদ দেয়।
তাই তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থাকে এমনভাবে সংষ্কার করতে হবে যাতে ‘না’ ব্যালটের প্রয়োজন না হয়। প্রতিটি রাজনৈতিক দল সহ ভোট প্রার্থীগণ এমনভাবে বাছাই করতে হবে এবং সর্বোপরি নির্বাচন ব্যবস্থার সাথে জড়িত প্রতিটি পদ্ধতি এমনভাবে পরিচালনা করতে হবে যেন জনণণ নির্বাচনের ব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ ও অপছন্দের অবকাশ খুঁজে না পায়। দেশের মানুষ নির্বাচনের ব্যাপারে পুরোপুরি স্বচ্ছতা ও গ্রহনযোগ্যতা খুঁজে না পাওয়ার কারন বিগত বছরগুলির নির্বাচন যা পতিত সরকারের সময় ধারবাহিকভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল। তাই ‘না’ ভোটের পরিবর্তে গণতন্ত্র চর্চায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আর এটা নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়ন, উৎকর্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতার মাধ্যমেই সম্ভব। তাই বিশ্লষক তাজুল ইসলাম মনে করেন, ‘না’ ভোট ব্যবস্থা কেবলমাত্র গণতন্ত্রের প্রতিপক্ষ ও বাধাই হতে পারে কিন্তু গণতন্ত্রের বিকাশ ও উৎকর্ষতায় ‘না’ ভোটের কোনই ভূমিকা নাই।

 

বিশ্লষক তাজুল ইসলামের অভিমত : বৈধভাবে গ্যাসের সংযোগ বাড়িয়ে গ্যাসের অপচয়রোধ ও দূর্ণীতিবাজদের টাকার পাহাড় গড়া বন্ধ করা যেত পারে
                                  

আব্দুল খালেক খোন্দকার : জ্বালানি গ্যাস বাংলাদেশের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। এই ছোট্র দেশে তেমন প্রাকৃতিক সম্পদ নেই বললেই চলে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাস মওজুদ আছে এবং এই গ্যাস উত্তলোন ও সরবরাহের মাধ্যমে দেশে জ্বালানীর চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এই গ্যাসের মওজুদ সীমাবদ্ধ। এমন নয় যে, এই প্রকৃতিক সম্পদ কখনও ফুরাবে না।

জরুরী এই উপাদান নিয়ে বাংলাদেশে জালিয়াতি ও দুর্নীতির প্রচুর অভিযোগ রয়েছে, এবং তা পুরোপরি সত্যও প্রমানিত হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ দিয়ে গ্যাস চুরির অভিযোগ আছে গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে। এসব চুরিকে ‘গ্যাস কারিগরি তির সিস্টেম লস’ নামে অপচয় ধরে চালিয়ে দেওয়া হয়। এ তির পরিমাণ বাড়ছে। এখন এর কিছুটা ভাগ করে চাপানো হয়েছে সঞ্চালন লাইনে।

এ বিষয়ে এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা ও বিশ্লেষক মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, যেখানে গ্যাস নাই বা যেখানে চুরি করে গ্যাস দেয়া-নেয়া হয়, সে সব জায়গায় সরকার যদি গ্যাস সংযোগ প্রদান করে তবে সরকার সিষ্টেম লসের নামে কোটি-কোটি টাকার লোকসান খাওয়া থেকে বাঁচতে পার। অনিয়মের কারনে সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাসের যে অপচয় হচ্ছে তা বৈধ সংযোগ প্রদানের ফলে সেই অপচয়ের কুফল থেকে সরকার ও দেশবাসি রেহাই পেতে পারে।

জনাব ইসলাম বলেন, গ্যাস একটি সীমিত সম্পদ। এটার অপচয় ও অপব্যবহার অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। অবৈধ সংযোগ ও নিরবচ্ছিন্ন চুরির মাধ্যমে গ্যাসের যে পরিমান তি হচ্ছে ঐ গ্যাস বৈধ্য সংযোগ ও সরবরাহের মাধ্যমে সরকার আরও লাভবান হতে পারে।

তিনি বলেন, পেট্রোবাংলার হিসাবে বিতরণ খাতে কারিগরি তির নামে অপচয় হয়েছে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) ৯৮ কোটি ঘনমিটার। খোলাবাজার থেকে প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানির খরচ প্রায় ৮০ টাকা। এ হিসাবে রাষ্ট্রের অপচয় হয়েছে ৭ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এই বিপুল তি পুষিয়ে ওঠার একমাত্র উপায় গ্রাহকেদের বৈধ উপায়ে গাসের সংযোগ প্রদান করা। যাদর গ্যাসের চাহিদা আছে অথচ গ্যাসের সংযোগ পাচ্ছেন না তাদের কাছেই অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জালিয়াতির মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করে অবৈধ টাকার পাহাড় গড়ছে। অথচ সরকার একপয়সাও পাচ্ছে না, বরং অবৈধ সরবরাহের কারনে এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ গ্যাসের যত্র-তত্র অপচয় হচ্ছে যা দেশের জন্য মারাত্নক তির বিষয়।

 

কারিগরি তি হতেই পারে। গ্যাস অপচয়ে পাইপলাইনে লিকেজ (ছিদ্র) একটা বড় কারণ। তবে চুরি বা অপচয় যাতে না হয়, সেটা নজরদারি করা বেশী গুরুত্বপূর্ণ । দো যায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্ন করলেও আবার তা বসানো হয়। আবাসিক সংযোগ চালু রেখে এটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।


একটি সমীায় দেখা যায়, চুরি, অনিয়ম ও অবৈধ গ্যাস ব্যবহার বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস। গত অর্থবছরে প্রায় আড়াই লাখ অবৈধ চুলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এতে কোন স্থায়ী সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। একটি খবরে জানা যায়,ডোবা দিয়ে নেওয়া হত অবৈধ গ্যাস সংযোগ।

চুরি, অনিয়ম ও অবৈধ গ্যাস ব্যবহার বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস। গত অর্থবছরে প্রায় আড়াই লাখ অবৈধ চুলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আগের বছর এটি ছিল পৌনে তিন লাখ। এর বাইরে শিল্প, সিএনজি ও বাণিজ্যিক মিলে ছয় শতাধিক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে গত বছর। তবুও অপচয় কমানো যাচ্ছে না।


বিশ্লষক জনাব তাজুল আরও বলেন, সরকার উচ্চ পর্য্যায়ের একটি অনসন্ধান কমিটি গঠণ করতে পারেন। এই অনুসন্ধান টিমের মাধ্যমে দেখবেন যে কোন কোন স্থানে গ্যাস সংষোগ নাই। সে সকল স্থানে বৈধ ভাবে গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা নাই সে সকল স্থানে বৈধভাবে গ্যাস সংযোগ লাইন প্রদান করলে পকৃত গ্রাহক অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ পেতে বিরত থাকবেন। ফলে সরকার প্রতি মাসে বিপুল পরিমানে অর্থ আয় করতে পারবেন এবং মহামূল্যবান এই জ্বালানি সম্পদেরও অপচয় বন্ধ হবে।।

ঢাকা-করাচি সরাসরি বিমান যোগাযোগ : “নির্বিঘ্ন ভ্রমণে জনগণের আহ্বানের উত্তর"
                                  

আব্দুল খালেক খন্দকার

বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান, যদিও এখন দুটি পৃথক জাতি কিন্তু তারা একটি গভীর শিকড় ও ইতিহাস ধারন করে। ১৯৪৭ সালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ হিসাবে আবির্ভূত হয়, যা ইসলামের আদর্শ এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ে একটি শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার আশা দ্বারা চালিত হয়। তবে, ১৯৭১ সালে রক্তাক্ত বিভাজন বাংলাদেশের জন্মের দিকে পরিচালিত করে ও দুই অঞ্চলের মধ্যে সম্পর্কের গতিপথ পরিবর্তন করে। তারপর থেকে সম্পর্কটি অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, বিশেষ করে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে।

৫ আগস্ট ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল হিসেবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলী বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে বিভিন্ন সংস্কার বাস্তবায়িত হচ্ছে। অন্যান্য দেশের মতো পাকিস্তানও অভিনন্দন জানিয়েছে ডঃ ইউনূস তার নিয়োগের সময়, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। 

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মমতাজ জেহরা বালোচ বাংলাদেশের সাথে একটি ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, "এখানে চ্যালেঞ্জ ছিল, কিন্তু যখন সেগুলি কাটিয়ে ওঠার জন্য একটি যৌথ ইচ্ছা থাকে, তখন আমরা উভয় দেশের স্বার্থে আমাদের সম্পর্কের প্রকৃত সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত করতে পারি।"

ঢাকা এবং করাচি/লাহোর/ইসলামাবাদের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট পুনরুদ্ধারের মধ্যে এই বন্ধনকে শক্তিশালী করার একটি মূল সুযোগ রয়েছে। দৈনিক এশিয়া বাণী কর্তৃক সাধারণ বাংলাদেশীদের মধ্যে পরিচালিত একটি জরিপে পাকিস্তানের সাথে সরাসরি বিমান যোগাযোগ পুনরুদ্ধারের জন্য অপ্রতিরোধ্য সমর্থন প্রকাশ করা হয়েছে। অনেক বাংলাদেশি পাকিস্তানে যেতে আগ্রহী, শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদের সাথে পুনরায় সংযোগ করতে নয়, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক অন্বেষণ করতেও।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে ব্যয়বহুল, পরোক্ষ এবং দীর্ঘ ভ্রমণ রুটের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। একটি সরাসরি ঢাকা-করাচি ফ্লাইট এই চ্যালেঞ্জগুলিকে সহজ করবে এবং দুই দেশের মধ্যে পর্যটন, বাণিজ্য, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জন্য উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করবে। ঢাকার একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন তার হতাশা প্রকাশ করেছেন: "আমার সব চাচা-চাচাতো ভাইয়েরা পাকিস্তানে থাকেন, কিন্তু রাউন্ডঅবাউট বা ঘূর পথে ভ্রমণের রুট বা পথ আমাদের সাথে দেখা করা কঠিন করে তোলে। সরাসরি ফ্লাইট সবকিছু বদলে দেবে।"

একইভাবে আশুলিয়ার আবুল কালাম আজাদ তার পরিবারের সাথে পাকিস্তানে যাওয়ার দীর্ঘ দিনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। "পাকিস্তান অসংখ্য পর্যটন আকর্ষণের প্রস্তাব দেয়, কিন্তু দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল ভ্রমণ রুটগুলি পরিদর্শন করা কঠিন করে তুলেছে কিন্তু এখন যেহেতু পাকিস্তান বাংলাদেশিদের জন্য বিনামূল্যে ভিসা নীতি চালু করেছে, সরাসরি ফ্লাইট অবশেষে এই স্বপ্নকে সম্ভব করবে।"

ব্যক্তিগত সংযোগের পাশাপাশি, সরাসরি ফ্লাইট পুনরুদ্ধারের ফলে বাংলাদেশিরা পাকিস্তানে উচ্চমানের চিকিৎসা সেবা পেতে সক্ষম হবে। পাকিস্তানের অনেক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হাসপাতাল দীর্ঘস্থায়ী এবং জটিল অসুস্থতার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। বাংলাদেশে পাকিস্তানের হাইকমিশনারের মতে, অনলাইন আবেদনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভিসা ইস্যু করে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। ভ্রমণের এই সহজলভ্যতা উন্নত চিকিৎসা সেবার জন্য বাংলাদেশী রোগীদের ব্যাপকভাবে উপকৃত করবে।

অর্থনৈতিক ফ্রন্টে বা বিষয়ে, সরাসরি বিমান সংযোগ পুনরুদ্ধার করা হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদার হবে। পাকিস্তান ইতিমধ্যেই কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সার্ক এবং ওআইসির মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য হিসেবে উভয় দেশেরই আঞ্চলিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।

সাংস্কৃতিক বিনিময় সুবিধার জন্য দাঁড়ানো. পাকিস্তানি সাহিত্য, চলচ্চিত্র এবং পোশাক বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়, যা দুই দেশের মধ্যে সামাজিক-সাংস্কৃতিক মিল প্রতিফলিত করে। সরাসরি ফ্লাইট শিল্পী, লেখক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে বৃহত্তর মিথস্ক্রিয়াকে সহজতর করবে, উভয় দেশের সাংস্কৃতিক কাঠামোকে সমৃদ্ধ করবে।

বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সুবিধা:

বাংলাদেশ-পাকিস্তান বাণিজ্য সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা দেখিয়েছে, যেখানে পাকিস্তান বাংলাদেশের চামড়া, টেক্সটাইল, ব্যাংকিং এবং বাণিজ্য খাতে যথেষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগ করেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী। পাকিস্তান বাংলাদেশে তুলা, কাপড়, রাসায়নিক, ডলোমাইট এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি রপ্তানি করে, যেখানে বাংলাদেশ পাকিস্তানে পাটজাত পণ্য, হাইড্রোজেন পারক্সাইড, সিন্থেটিক ফাইবার এবং কিছু চিকিৎসা পণ্য রপ্তানি করে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে, সরকারী তথ্য দেখায় যে পাকিস্তান বাংলাদেশে $৬৬০ মিলিয়ন মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, যেখানে পাকিস্তানে বাংলাদেশের রপ্তানি $ ৫৬ মিলিয়নের বেশি ছিল। যদিও এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বাণিজ্য ঘাটতি প্রতিফলিত করে, পররাষ্ট্র নীতি উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন উল্লেখ করেন যে এই নির্ভরতা সহজাতভাবে সমস্যাযুক্ত নয়, এটিকে ভারত ও চীনের মতো প্রধান অর্থনীতির সাথে বাংলাদেশের অনুরূপ সম্পর্কের সাথে তুলনা করে। মিঃ হোসেন হাইলাইট করেন যে পাকিস্তানি তুলার মতো প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি বাংলাদেশের নিজস্ব রপ্তানি-চালিত শিল্প, বিশেষ করে গার্মেন্টস, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

ফাহাম আবদুস সালামের মতে, পাকিস্তানে বাংলাদেশের উপস্থিতি সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। তিনি পরামর্শ দেন যে পাকিস্তানে বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের আউটলেট থাকা এবং সেখানকার উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের জন্য খাবার সরবরাহ করা সুবিধাজনক হবে। তিনি বলেন, পাকিস্তানে অনেক বাংলাদেশি রয়েছে। "যদি সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়, আমরা এই বাণিজ্য সংযোগগুলি গড়ে তুলতে পারি এবং অপ্রয়োজনীয় সুযোগগুলি অন্বেষণ করতে পারি।"

অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ডঃ সালেহউদ্দিন আহমেদ একটি শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিবাচক অর্থনৈতিক দিকগুলিও উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মমতাজ জেহরা বালোচ বাণিজ্য, কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সহযোগিতা বাড়াতে পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি সার্ক এবং ওআইসির মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। বেলুচ যোগ করেছেন যে বন্ধুত্ব, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিকভাবে উপকারী সম্পর্কের জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি প্রদান করে।

মানুষে মানুষে সম্পর্ক এই অংশীদারিত্বের আরেকটি মূল দিক। অনেকে বিশ্বাস করেন যে দুই জাতির মধ্যে সামাজিক-সাংস্কৃতিক মিল, ধর্মের বাইরেও প্রসারিত, এই বন্ধনগুলিকে শক্তিশালী করে। সাংস্কৃতিক বিশ্লেষক আসিফ মুনিরের মতে, বাংলাদেশে পাকিস্তানি সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র এবং পোশাকের প্রশংসা করা হয়। 

উপসংহারে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট পুনরুদ্ধার শুধুমাত্র একটি লজিস্টিক প্রয়োজনীয়তা নয়, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বন্ধন পুনর্গঠনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং ব্যক্তিগত সংযোগের জন্য নতুন দ্বার উন্মোচন করবে, যা উভয় দেশের মানুষকে কাছাকাছি নিয়ে আসবে। আমরা যখন এগিয়ে যাচ্ছি, এটা স্পষ্ট যে এই এয়ার লিঙ্ক বা বিমান সংযোটি একটি সেতু হিসেবে কাজ করবে, যা দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে বৃহত্তর বোঝাপড়া এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে।

কলকাতা প্রেসক্লাবের নিবন্ধন ৬৮ বছর পেরিয়ে- ২
                                  

প্রথমেই গ্রন্থটিতে ভারতীয় ওই দুই নির্ভীক শহীদ সাংবাদিককে উৎসর্গ করে তাঁদের অবদানের স্বীকারোক্তির চিহ্ন এঁকেছেন গ্রন্থসত্ত্বাধিকারি। গ্রন্থের প্রায় অর্ধশত পৃষ্ঠায় ওই সময়ে কলকাতার গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিকদের বাংলাদেশের চলমান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কলাম/মতামত স্থান পেয়েছে। সেসব তথ্যবহুল লেখা পত্রিকার পাতা থেকে তুলে আনা হয়েছে এই গ্রন্থে। এসব লেখা কলকাতার সংবাদমাধ্যম কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাদের মর্মস্পর্শী ভূমিকাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও সুনীল বসুর মতো প্রথিতযশা লেখক-সাংবাদিকগণ মুক্তিকামী জনগণের সঙ্গে লেখনির মাধ্যমে সংহতি জানিয়েছিলেন। এছাড়া ৪৭ জন প্রথিতযশা সাংবাদিক মুক্তিযুদ্ধে কীভাবে খবর সংগ্রহ করেছেন, খবর ব্যবস্থাপনা করেছেন, কীভাবে দেখেছেন মুক্তিযুদ্ধ প্রভৃতি অভিজ্ঞতা-সাক্ষ্য বর্ণনাসহ তাদের প্রবন্ধে অজানা আরেক ইতিহাস রচিত হয়েছে। ৩৬৮ পৃষ্ঠার গ্রন্থটি একটি প্রবন্ধ শুধু ইংরেজিতে লেখা। বাকি সবই সাবলীল বাংলায় পশ্চিম বাংলার ভাষারীতিতে রচিত। ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ : কলকাতার সাংবাদিক ও কলকাতা প্রেসক্লাব’ গ্রন্থটি সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর। ২০১৯ সালে কলকাতা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বর্ষ উপলক্ষে গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশ করে কলকাতা প্রেসক্লাব। ২০২০ সালে গ্রন্থটি ঢাকা থেকে প্রকাশ করেন বাংলাদেশ জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান সাবেক এমপি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবছর গ্রন্থটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করা হয়েছে। নিপুণভাবে শব্দসজ্জা-পৃষ্ঠাসজ্জাসহ পুনর্মুদ্রণে গ্রন্থের অবয়বে মুকুট পরিয়েছে ঢাকার ফ্রেন্ডশিপ প্রিন্টার্স। ঢাকা প্রকাশনার দ্বিতীয় সংস্করণ করা হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ ছিল বিদেশি সাংবাদিকদের জন্য নিষিদ্ধ অঞ্চল। আর কলকাতা মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী দপ্তর ও লাখ লাখ বাংলাদেশের শরণার্থীর আশ্রয়স্থল। এসব কারণেই ১৯৭১ সালের মার্চ থেকেই কলকাতা আন্তর্জাতিক সংবাদ সংগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়। বিশ্বের প্রথম শ্রেণির নিউজ এজেন্সি থেকে শুরু করে ইউরোপ, আমেরিকা ও জাপানের সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা প্রায়ই কলকাতায় যেতেন বাংলাদেশের খবর সংগ্রহের জন্য। ব্রিটেনের টেলিগ্রাফ, টাইমস, গার্ডিয়ানও বাদ যায়নি। সংবাদমাধ্যম, শরণার্থী, ত্রাণপ্রতিষ্ঠান, কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, আমলা-মন্ত্রী গোয়েন্দাসহ সবাই কলকাতায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী, আমেরিকান সিনেটর, জাতিসংঘের মহাসচিব থেকে আগা খান পর্যন্ত যুদ্ধের অবস্থা জানতে কলকাতায় এসেছেন। বাংলাদেশের যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে ইন্দিরা গান্ধী কলকাতা প্রেসক্লাবে কমপক্ষে চারবার এসেছেন এবং দু’বার সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধ কভার করার জন্য কলকাতার গ্রান্ড হোটেল হয়ে ওঠে বিদেশি সাংবাদিকদের আস্তানা। বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধ কলকাতা প্রেসক্লাবকে সুধারসে ভরিয়ে তোলে। কেউ আসে খবর সংগ্রহ করতে, কেউ খবর হতে। কলকাতার সংবাদমাধ্যমের সংবাদ ও ছবি বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। বিশ্ববাসী জানতে পারে মুক্তিকামী জনগণের ওপর পাকিস্তানি আর্মির পৈশাচিক বর্বরতা। এভাবেই বিভিন্ন তীর্যক লেখার মাধ্যমে তৎকালীন কলকাতার সাংবাদিকরা অভিজ্ঞতার বয়ান করেছেন এই গ্রন্থে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই আমেরিকা ও পাকিস্তান সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। মুজিবনগর সরকারের পরাষ্ট্রমন্ত্রী খোন্দকার মোস্তাক আহমেদ, তাঁর সচিব মহাবুবুল আলম চাষী, সাংবাদিক তাহের উদ্দিন ঠাকুর ও চার-পাঁচজন মিলে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনে গিয়ে তাঁরা ভাষণ দেবেন এই বলে যে তারা স্বাধীনতা চান না, পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চান। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রস্তুতকৃত ভাষণের ওই খসড়াটি ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাতে আসে। নিউইয়র্কের যাত্রার জন্য বিমানে ওঠার আগেই ভারতীয় গোয়েন্দারা ধরে ফেলেন তাদের। গোয়েন্দাদের ইঙ্গিতে সাংবাদিকরা বিমানবন্দরে যান। দেখেন কীভাবে ওই ষড়যন্ত্রের যাত্রা ভণ্ডুল করে দিলো ভারতীয় গোয়েন্দারা মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে বর্তমান চুয়াডাঙ্গায় ভারতীয় সাংবাদিকদের সাথে আমেরিকান সাংবাদিকের এক বাকযুদ্ধ হয়। কারণ ওই আমেরিকান সাংবাদিক ভারতীয় সাংবাদিকের কাছে জানতে চান, ‘ইজ ইট ইস্ট পকিস্তান?’ ভারতের পিটিআইয়ের রিপোর্টাররা উত্তরে বলেছিলেন, ‘নো, দিস ইজ বাংলাদেশ।’ ইতিহাসের এমন চরম সত্য ঘটনা সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাশগুপ্তের লেখনিতে উঠে এসেছে, স্থান পেয়েছে এ গ্রন্থে। তাই গ্রন্থখানি ইতিহাসের আরেকটি আকর গ্রন্থ বলা যায় নির্দ্বিধায়। গ্রন্থের বাংলাদেশ সংস্করণের প্রকাশক জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান এমপি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কত বড়, কত বিস্তৃত ছিল তার আরেকটি উদাহারণ মিলে এ গ্রন্থে; যেখানে ভারতের সব বিখ্যাত সাংবাদিক মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতার বয়ান করেছেন। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন করেছে। কারণ ভিন্ন দেশের সংবাদিকদের ভাষ্য বিশ্ববাসীর কাছে আরো বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে বর্তমান প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, সিক্রেটস ডকুমেন্টসের মতো আকর গ্রন্থগুলো অবশ্যই পড়তে হবে। এছাড়া সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতায় মুক্তিযুদ্ধকে জানার জন্য আবশ্যকীয় পাঠ্য এ গ্রন্থও।’ মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে ভারতের দুই তরুণ শহীদ সাংবাদিককে স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ইন্দিরা গান্ধীসহ ভারতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও কলমযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর তাঁর গ্রন্থাভাষে বলেছেন, ‘একটি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রতিবেশী দেশের সহায়তা এবং ফলশ্রুতিতে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম, এই বিশাল কর্মকাণ্ডের প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের অভিজ্ঞতায় ভরা সংকলন গ্রন্থটি এক ঐতিহাসিক দলিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্ধশত বর্ষের প্রাক্কালে গ্রন্থটি ইতিহাসের নতুন দলিল হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা ইতিহাস জানার খোরাক জোগাবে। সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, গবেষকসহ ইতিহাস পিপাসুদের গ্রন্থখানি জ্ঞানপিপাসা মেটাবে বলেই আমার বিশ্বাস। সাংবাদিকরা ইতিহাসের স্রষ্টা নন, ইতিহাসের দ্রষ্টা। ইতিহাসের নির্মম সত্য উৎঘাটিত হয় সাংবাদিকদের লেখনিতে। গ্রন্থখানি সাংবাদিক তথা কলমযোদ্ধাদের অভিজ্ঞতা-সমৃদ্ধ লেখনিতে ভরপুর বাংলাদেশের ঐতিহাসিক তথ্যের নিরেট দলিল। অসিযুদ্ধ, মসিযুদ্ধ ও বাকযুদ্ধের ফলশ্রতিতেই এই স্বাধীন সোনার বাংলাদেশ। এসবের বয়ান-বিবরণ উঠে এসেছে কলমযোদ্ধাদের লেখনিতে। তাই গ্রন্থখানি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।

কলকাতা প্রেসক্লাবের ৬৮ বছর পেরিয়ে - ১
                                  

ভারতের কলকাতা থেকে মিয়া আবদুল হান্নান : কলকাতা প্রেসক্লাবের আজ খুব কমই কোনো পরিচয়ের প্রয়োজন আছে ৷ ক্লাবটি এই উপমহাদেশে কর্মরত সংবাদকর্মী সাংবাদিক রিপোর্টারদের সবচেয়ে পুরানো প্রেসক্লাব এবং এটি তার দরকারী অস্তিত্বের ৬৮ বছর পূর্ণ করেছে৷ ক্লাবটি পশ্চিমবঙ্গ সমিতি আইন, ১৯৬২এর অধীনে নিবন্ধিত করা। কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদক মহাদয়ের সৌজন্য সাক্ষাৎ পাওয়ার উদ্দেশ্য গত ২৯ এপ্রিল ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন রুহিতপুর ইউনিয়ন থেকে বাই রোডে বাসে করে রওনা করি।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ : ইতিহাস ও ঐতিহ্য কলকাতার সাংবাদিক কলকাতা প্রেসক্লাব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের (১৯৬৭-৬৯) সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে সদ্য-উত্তীর্ণ, কৃতি, সাহসী, উদ্যমী তরুণ দুই ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুরজিৎ ঘোষাল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন থেকে সরাসরি খবর সংগ্রহের তাগিদে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধরত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢোকেন। এরপর তাঁদের আর খোঁজ মেলেনি। ধারণা করা হয়, তাঁরাও শহীদ হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে। শুধু এই দু’জন নয়, মুক্তিযুদ্ধের খবর সংগ্রহে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন কলকাতার অনেক সাংবাদিক। কলকাতার লেখক-সাংবাদিক তথা সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছে।

কলকাতা প্রেসক্লাবও বাদ যায়নি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনায়। অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার নিরব সাক্ষী কলকাতা প্রেসক্লাব। এর মধ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম অন্যতম। অসিযুদ্ধের সাথে মসিযুদ্ধও চলতো সমানতালে, কলকাতা প্রেসক্লাবে ও কলকাতার গণমাধ্যমে। তবে বেশিরভাগ কলমযুদ্ধা কলকাতা থেকেই হতো। কারণ যুদ্ধরত বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের কালি-কলম নিয়ন্ত্রিত। অন্যদিকে কলকাতার সাংবাদিকরা খবর সংগ্রহ করেছেন রণাঙ্গন থেকে, কলকাতা প্রেসক্লাবে বসে মুক্তিযুদ্ধের খবর লিখেছেন, বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। প্রকৃত কলমযুদ্ধা হয়েছে কলকাতা থেকে। প্রতিবেশী আলাদা একটি দেশ ভারতে যেভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কলমযুদ্ধ চলেছে, তা বিশ্বের অন্য কোন যুদ্ধের ইতিহাসে দেখা যায়নি। বিবিসি, আকাশবাণী ও স্বাধীন বাংলা বেতারের খবর আর ভারতের ছোট-বড়- মাজারী- ছোট সব সংবাদপত্র যুদ্ধের খবর প্রচারে ব্যতিব্যস্ত থেকেছে।
সেসময় বাংলাদেশের খবরই প্রধান খবর ভারতে। কলকাতার সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের সব খবর সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। রণাঙ্গনের ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে সবকিছুর দ্রষ্টা হয়ে রিপোর্টাররা লিখেছেন। কলকাতার রিপোর্টাররা সে সময় বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের কলম সৈনিকেরা যোদ্ধা হয়ে উঠেছিলেন। বাংলাদেশ সরকার ভোলেনি ওইসব কলম সৈনিক যোদ্ধাদের, মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু হিসেবে সম্মাননা দিয়েছে। কলকাতার সাংবাদিকদের মুক্তিযুদ্ধের ওইসব ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা এবং যুদ্ধের নির্মমতা ও হত্যাজ্ঞের অজানা সব কাহিনী বর্ণিত হয়েছে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ : কলকাতার সাংবাদিক কলকাতা প্রেসক্লাব’ শীর্ষক গ্রন্থ সংকলন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। চলবে...

অল্টারনেটিভ (বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা)
                                  

ডা. নার্গিস মার্জান এমবিবিএস

পরিচালক, হামদর্দ ল্যাবরেটরীজ (ওয়াকফ) বাংলাদেশ এবং সহযোগী অধ্যাপক, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ।
আধুনিক চিকিৎসায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পরও অল্টারনেটিভ চিকিৎসায় যুক্ত থেকে এর আধুনিকায়ন ও উৎকর্ষতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

প্রশ্নঃ মানুষ এক সময় তারে রোগ নিরাময়ের জন্য প্রকৃতির উপরই নির্ভর করত। কিন্তু পরবর্তীতে তারা ক্রমান্বয়ে সিন্থেটিক ওষুধ ব্যবহার শুরু করে। বর্তমানে তারা কেন আবার প্রাকৃতিক ওষুধের দিকে ঝুঁকে পড়ছে?

উত্তরঃ দেখুন একটি সময় ছিল যখন গাছ-পালা, শিকর-বাকর দিয়ে প্রদত্ত চিকিৎসাই ছিল একমাত্র চিকিৎসা ব্যবস্থা। মানব জাতির আবির্ভাবের পূর্ব হতেই রোগ নিরাময়ে এসকল প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এসময় প্রকৃতিতে বিচরণকারী কোন কোন প্রাণী কোন কারণে অস্বস্থি বোধ করলে কিংবা অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা তাদের আশে-পাশে বিদ্যমান লতা-গুল্ম, পাতা, ফুল, ফল, ছাল-বাকল, গাছ-পালা সেবন করত। কখনো কখনো তারা সুফল পেত আবার কখনো কখনো তারা সুফল পেত না। সুফল পেলে ঐসকল প্রাণী মনে রাখতো তারা কোন গাছ সেবন করে সুফল পেয়েছে। পরবর্তীতে তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে ঐ গাছের শরণাপন্ন হতো। পৃথিবীতে মানব জাতির আবির্ভাবের পরে ঠিক এভাবেই মানুষ রোগ মুক্তির জন্য গাছ-পালা নির্বাচন করেছে। আপনি নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন, জঙ্গলে সাপ ও বেজির লড়াইয়ে সাপ বেজিকে দংশন করলে বেজি অতি দ্রুত জঙ্গলের গভীরে চলে যায় এবং নির্দিষ্ট গাছের পাতা সেবন করে, যারফলে বেজির শরীরে সাপের বিষের কোন প্রভাব পড়ে না। এছাড়াও মাঝে মাঝে বিড়াল ঘাস খায়। ঘাস বিড়ালের দৃষ্টিশক্তি অক্ষুন্ন রাখে বলেই বিড়াল ঘাস খায়। ইতিহাস থেকে জানা যায় প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে এই উপ-মহাদেশে প্রাকৃতিক চিকিৎসার চর্চা শুরু হয়ে ব্যাপক সমৃদ্ধশালী হয়। এসময় হামান-দিস্তাই ছিল এসকল ওষুধ তৈরীর একমাত্র উপায়। আধুনিক ওষুধের মত সিরাপ, অয়েন্টমেন্ট, ট্যাবলেট কিংবা ক্যাপসুল এর মত কোন ডোসেজ ফর্মে এই ওষুধ তৈরী হত না। প্রাকৃতিক এই ওষুধের সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হলো এর কোন ধরনের পাশর্^-প্রতিক্রিয়া নেই। তাই বছরের পর বছর পরম নির্ভরতায় শতভাগ আস্থার সহিত মানুষ এওষুধ সেবন করে আসছে।

প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হয়। জেমস ওয়াটের আবিষ্কৃত বাষ্প চালিত যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে বড় বড় ফ্যাক্টরি গড়ে উঠে এবং শিল্পোৎপাদনের হার বৃদ্ধি পায়। এসময় শিল্প কারখানায় সিন্থেটিক বিভিন্ন আকর্ষণীয় পণ্য উৎপাদিত হতে থাকে। নতুনত্বের প্রতি মানুষের প্রবল আগ্রহের ফলে মানুষ এসকল সিন্থেটিক পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠে। বাণিজ্যিক প্রচারণা ও ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত এই চিকিৎসা পদ্ধতি, তদস্থলে প্রতিষ্ঠিত হয় সিন্থেটিক মেডিসিনের প্রভাব। থমকে দাঁড়ায় আমাদের দেশীয় চিকিৎসার ধারা।

সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়ে ন্যাচারাল মেডিসিন আজ উচ্চমাত্রায় অবস্থান করছে। গত কয়েক দশকে এর উন্নতিতে বিশ^ব্যাপী এক বিস্ময়কর আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বব্যাপী মানুষ পুনরায় ন্যাচারাল মেডিসিনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। এর কারণ হলো-
মানুষ এখন অনেক অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন। তারা এমন একটি স্বাস্থ্য সেবা চায় যেখানে সফল রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষ এবং অবাদ তথ্যের এই যুগে মানুষ সিন্থেটিক ওষুধের ক্ষতিকর মারাত্মক পাশর্^-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পেরেছে, জানতে পেরেছে প্রাকৃতিক ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। থাকলেও তা তুলনামূলকভাবে কম এবং প্রাকৃতিক ওষুধ দীর্ঘমেয়াদী ও অত্যন্ত কার্যকরী। একারণেই মানুষ পুনরায় প্রাকৃতিক ওষুধের প্রতি আস্থাশীল হয়ে পড়ছে।

তাছাড়াও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় রোগ নিরাময়ে শুধুমাত্র রোগীর লক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ না করে রোগীর দেহ, মন, আত্মার, সামাজিক, পারিপার্শ্বিক এবং পরিবেশগত বিভিন্ন দিক বিচার-বিশ্লেষণ করে রোগের মূল কারণ খুজে বের করে রোগটি সমূলে উপশমের জন্য চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এতে রোগী দীর্ঘমেয়াদী উপকার লাভ করে। ফলে রোগী সাধারণ ক্রমান্বয়ে প্রাকৃতিক চিকিৎসার দিকে ঝুকে পড়ছে।

এছাড়াও প্রাকৃতিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় মানুষের রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধের উপর অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়। এতে মানুষের খাদ্য, পথ্য, পুষ্টি, ব্যায়াম এবং লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে সুস্থতার উপর জোড় দেওয়া হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী বর্তমান জেনারেশনের নিকট এই চিকিৎসা পদ্ধতি অধিক গ্রহণযোগ্য ও ফলপ্রসূ বিবেচিত হওয়ায় তারা অধিকহারে প্রাকৃতিক চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিকস বিভিন্ন সিন্থেটিক ওষুধ রেজিস্ট্যান্ট হওয়ায়, সিন্থেটিক ওষুধের প্রতি রোগীর নির্ভরতা (আসক্তি সৃষ্টি) সৃষ্টি হওয়া, ওষুধের দুষ্প্রাপ্যতা এবং চিকিৎসার ব্যয়বহুলতার জন্যও মানুষ ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক ওষুধের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।

প্রশ্নঃ আপনিতো অল্টারনেটিভ মেডিসিনের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। আপনার এই কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ কোনো সম্মাননা বা পদক পেয়েছেন কী?

উত্তরঃ ধন্যবাদ আপনাকে। খেুন আমি এই চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর যাই করছি, তা সম্পর্ণ প্রাকৃতিক ওষুধের প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহের কারণেই করছি। কারণ আমি পারিবারিকভাবেই খুব ছোট বয়স থেকেই এই চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর জ্ঞান লাভ করি। এরপর উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় শেষে কিন্তু আমি প্রথমেই অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থার ডিইউএমএস কোর্সে ভর্তি হই। যদিও পরবর্তীতে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করি। এর মধ্যে আমি ডিইউএমএস কোর্সে এত বেশি ইন্টারেস্ট পাই যে রেকর্ড পরিমাণ নম্বর পেয়ে আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। এতে আমাকে গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে আমি অল্টারনেটিভ মেডিসিনের বিভিন্ন গ্রন্থ রচনার জন্য ‘বাংলাদেশ দেশীয় চিকিৎসক সমিতি’ কর্তৃক প্রদত্ত ‘বেস্ট রাইটার অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করি। এছাড়াও ইউনানী এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অসামান্য অবদানের জন্য হামর্দ ল্যাবরেটরীজ ওয়াক্ফ বাংলাদেশ আমাকে ইউনানী এন্ড আয়ুর্বেদিক মেডিসিনাল অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন।

প্রশ্নঃ অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থা কী? বাংলাদেশে কী কী অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে?
কোনো একটি দেশে সমসাময়িককালীন বহুল প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি বিদ্যমান অন্য সকল চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বর্তমানে সরকার অনুমোদিত চার পদ্ধতির চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। যেমন- (১) অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা (২) ইউনানী চিকিৎসা ব্যবস্থা (৩) আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং (৪) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। তন্মধ্যে ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থাকে অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থায় মূলতঃ উদ্ভিজ্জ, প্রাণীজ, খনিজসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান, খাদ্য, পথ্য, আবহাওয়া পরিবর্তন এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের রোগ উপশম করা হয়। অল্টারনেটিভ চিকিৎসা পদ্ধতিতে চিকিৎসক প্রধানতঃ রোগীর আতœনিরাময় শক্তিকে পুনরুদ্ধার এবং তার শরীরের ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রোগ উপশমের লক্ষ্য নিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।

তবে উপরোক্ত তিনটি পদ্ধতি ছাড়াও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রকার অল্টারনেটিভ বা বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। যেমন- কাপিং থেরাপী, আকু প্রেসার, আকুপাংচার, লিচ থেরাপী, মেডিটেশন, রেজিমেন্টাল থেরাপী, মিউজিক থেরাপী, হাইড্রো থেরাপী, অ্যারোমা থেরাপী, সানবাথ, স্টিমবাথ, কায়রো-প্র্যাক্টিস, ব্যাচ ফ্লাওয়ার থেরাপী, হিপনো থেরাপী, ম্যাসাজ থেরাপী, রিফ্লেক্সোলজি, মাইন্ড-বডি থেরাপী, ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ দেশে-বিদেশে অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আপনার ধারনা কী?
বিগত কয়েক দশকে অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থার ওষুধ উচ্চ শিখরে তার অবস্থান অধিষ্ঠিত করেছে। অল্টারনেটিভ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রাগৈতিহাসিক কালের প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞানের কষ্টি পাথরে যাচাই হয়ে সুপ্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। বিগত কয়েক দশকে অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থা সারা বিশ্বে মহা আলোড়ন ও নবজাগরণ সৃষ্টি করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) বিশ্বব্যাপী অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থার যৌক্তিক ব্যবহারের লক্ষ্যে এর পরবর্তী উন্নয়ন ও সম্প্রসারনকে জোরালো সমর্থন জানিয়েছে। তারা বলেছে এই ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নাই যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই শাখাটি সবার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আমাদের কাংখিত লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এবং রাখবে। আজ তাই সচেতন জনগণঅল্টারনেটিভ ওষুধকে নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য মনে করছে। তাই বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থার নবজাগরনের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশে অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থার শিক্ষা পদ্ধতির বর্তমান চিত্র সম্পর্কে আমাদের একটু বলুন।

ব্যাচেলর ডিগ্রী পর্যায়ের শিক্ষার বর্তমান চিত্র-
দেশে বর্তমানে ৮টি প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের অল্টারনেটিভ পদ্ধতির ব্যাচেলর ডিগ্রী প্রদান করছে। তন্মধ্যে ইউনানী/আয়ুর্বেদিক বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রী প্রদান করছে ৪টি প্রতিষ্ঠান (যেমন- সরকারী ইউনানী এন্ড আয়ুর্বেদিক ডিগ্রী কলেজ, হামদর্দ ইনস্টিটিউট অব ইউনানী এন্ড আয়ুর্বেদিক মেডিসিন, রওশন জাহার ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজে ও হাসপাতার, লক্ষীপুর এবং হামদর্দ ইউনানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বগুড়া) এবং ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যাচেলর ডিগ্রী প্রদান করছে।

ডিপ্লোমা পর্যায়ের শিক্ষার বর্তমান চিত্র-
দেশে ডিপ্লোমা ইউনানী মেডিকেল কলেজ ১৭ টি, ডিপ্লোমা আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ১০টি এবং ডিপ্লোমা হোমিওপ্যঅথিক মেডিকেল কলেজ ৫৯ টি রয়েছে।



বাংলাদেশে অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থার ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্তমান চিত্র-
দেশে অল্টারনেটিভ চিকিৎসা পদ্ধতিতে চিকিৎসকগণ উদ্ভিজ্জ, প্রাণীজ, খনিজ এবং অন্যান্য ওষুধি উপকরণ সমূহ ঔষধ হিসেবে মূলতঃ তিনভাগে ব্যবহৃত হয়ে করে থাকেন। যেমন- (১)ঔষুধি উপাদান সরাসরি ঔষধ হিসেবে। (২) আংশিক প্রক্রিয়াজাতকরণের পর ঔষধ হিসেবে এবং (৩) বিভিন্ন শিল্প কারখানায় ঔষধি উপাদানসমূহ সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন ডোসেস ফর্মের ঔষধ হিসেবে।বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪৫০টি ইউনানী/আয়ুর্বেদিক ঔষধ শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং হোমিওপ্যাথিক ল্যাবরেটরি রয়েছে প্রায় ১০০। যার মাধ্যমে সিরাপ, ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, অয়েন্টমেন্টসহ বিভিন্ন আধুনিক পরিবেশনায় ঔষধ উৎপাদন ও বিপণন হয়ে আসছে।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশে অল্টারনেটিভ চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের পেশাগত অবস্থার বর্তমান চিত্র কেমন?
দেশে বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে ২৫০ জনের মতো অল্টারনেটিভ উচ্চশিক্ষিত চিকিৎসক কর্মতর রয়েছে। এছাড়াও দেশের প্রায় ৫৫০টি অল্টারনেটিভ ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠানে উক্ত অল্টারনেটিভ চিকিৎসকগণ ওষুধ উৎপাদনের সাথে জড়িত। হামদর্দ দেশব্যাপী প্রায় ৩০০ চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এর প্রতিটিতেই অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থার (ইউনানী/আয়ুর্বেদিক) চিকিৎসকগণ চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। এছাড়াও দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা কেন্দ্রে এবং ব্যক্তিগত চেম্বারে অসংখ্য অল্টারনেটিভ চিকিৎসক দেশব্যাপী রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন এবং উন্নত জীবন-যাপন করছেন।
ফলশ্রুতিতে বর্তমানে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীগণ অধিক হারে অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। তার এই পদ্ধতির শিক্ষা এবং গবেষণায় আতœনিয়োগ করছে। এইধারা চলতে থাকলে অচিরেই বাংলাদেশে অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থার অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হবে।

প্রশ্নঃ আপনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের বলবেন কি অল্টারনেটিভ চিকিৎসায় কোন্ রোগসমূহে অধিক সফলতা পাওয়া যাচ্ছে, অর্থাৎ কোন্ রোগীরা চিকিৎসা গ্রহণের জন্য অধিক হারে অল্টারনেটিভ চিকিৎসকদের নিকট আসছেন?
অল্টারনেটিভ চিকিৎসকগণ তাদের প্রতিদিনের প্র্যাক্টিসে ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগে সাফল্যজনকভাবে চিকিৎসা প্রদান করছেন। রোগীগণও আস্থার সাথে ওষুধ সেবন করছেন এবং কোন প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই উপকার পাচ্ছেন। এমতাবস্থায় অল্টারনেটিভ চিকিৎসায় কোনো বিশেষ রোগের ক্ষেত্রে বেশি নির্ভর করা উচিত সেভাবে বিষয়টি বলা কষ্টকর বলে আমি মনে করি।
তবে বর্তমানে পরিপাকতন্ত্র, শ্বসনতন্ত্র, হেপাটোবিলিয়ারি সিস্টেম, ইউরিনারি সিস্টেম, পুরুষ এবং স্ত্রী প্রজননতন্ত্র এবং অপুষ্টি ও বাত-ব্যথার রোগীগণ অধিক হারে অল্টারনেটিভ চিকিৎসকদের নিকট চিকিৎসার জন্য আসছেন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করে ভাল ফলাফল পাচ্ছেন।

প্রশ্নঃ বর্তমানে অল্টারনেটিভ মেডিসিনের বিশ্ববাজার সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
বিগত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী হার্বাল ওষুধের এক নবজাগরণের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমানে সারা বিশ্বের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ কোন না কোন ভাবে হার্বাল ওষুধ ব্যবহার করছে। ১৯৮০ সালে হার্বাল মেডিসিনের বিশ্ববাজার ছিল ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৯৯০ সালে ১৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১০ বছরে প্রবৃদ্ধির হার ২৪৫%)। ২০০০ সালে ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১০ বছরে প্রবৃদ্ধির হার ৩৫১%)ও ২০১০ সালে তা বেড়ে দায়িয়েছে ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১০ বছরে প্রবৃদ্ধির হার ৪৭১%)।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পূর্বাভাস দিয়েছে ২০৫০ সালে হার্বাল প্রোডাক্টের বিশ্ব বাজার দাঁড়াবে ৫ (পাঁচ) ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (৪০০ লক্ষ কোটি টাকা প্রায়)।(তথ্যসূত্র-ড. হাকীম রফিকুল ইসলাম)।এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, অ্যাজমা, ক্যান্সার, এইডসসহ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন সংক্রামক ব্যাধির অল্টারনেটিভ ওষুধ উদ্ভাবনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে হার্বাল ঔষধ ইন্হেলার, ইন্জেকশন ও স্প্রে ইত্যাদি অত্যাধুনিক ফর্মের উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে।


প্রশ্নঃ বাংলাদেশে অল্টারনেটিভ মেডিসিনের বর্তমান ও ভবিষ্যত বাজার সম্পর্কে একটু বলুন?
কনভেনশনাল অ্যলোপ্যাথিক ওষুধের ব্যাপক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, ব্যয়বহুলতা এবং সহজলভ্য না হওয়ায় বর্তমানে মানুষ অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। পক্ষান্তরে অল্টারনেটিভ চিকিৎসা নিরাপদ, কার্যকরী, অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী মূল্য এবং সহজলভ্য হওয়ায় এটি মানুষের আস্থা ফিরে পেতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশ্বের অসংখ্য দেশে অসংখ্য গবেষণাগারে এই ওষুধের উপর ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়েছে। বর্তমানে অনেক জটিল ও কঠিন রোগের হার্বাল ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। বাংলাদেশেও হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনানী/আয়ুর্বেদিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের মাধ্যমে গবেষণার নতুন দ্বার উন্মুচিত হয়েছে। মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই পদ্ধতির প্রতি আগ্রহী হচ্ছে, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ ও গবেষণায় মনোনিবেশ করছে। পাশাপাশি এই ব্যবস্থার ওষুধের গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আধুনিক ও উন্নত পরিবেশনায় ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে। আমি আশাবাদি এই ধারা অব্যহত থাকলে অচিরেই দেশের চাহিদা পূরণ করে আমরা বিদেশে ওষুধ রপ্তানী করে একদিকে যেমন হাজার হাজার কোটি টাকার বিদেশী মুদ্রা আয় করতে সক্ষম হবো, পাশাপাশি দেশের বেকারত্ব ও দারিদ্র দূরীকরণেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থা। বাংলাদেশে বিগত ১৯৮০ সালে ছিল ১ কোটি টাকা। ১৯৯০ সালে ৮ কোটি টাকা (১০ বছরে প্রবৃদ্ধি ৭০০%)। ২০০০ সালে ৮০ কোটি টাকা (১০ বছরে প্রবৃদ্ধির হার ৯০০%)। ২০১০ সালে বেড়ে দাড়ায় ১০০০ কোটি টাকা (১০ বছরে প্রবৃদ্ধি ১১৫০%)।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পূর্বাভাস মতে ২০৫০ সালে হার্বাল প্রোডাক্টের বিশ্ব বাজার দাঁড়াবে ৫ (পাঁচ) ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (৪০০ লক্ষ কোটি টাকা প্রায়)। আমরা যদি সেই সুযোগ গ্রহণ করতে পারি তবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২.৫% হারে বিশ্ব হার্বাল বাজারে নিজেদের শেয়ার নিশ্চিত করা গেলে ২০৫০ সালে বাংলাদেশে হার্বাল প্রোডাক্ট দিয়ে ১০ লক্ষ কোটি টাকা আয় করতে পারবো।

প্রশ্নঃকি কি কারণে বাংলাদেশ অল্টারনেটিভ চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য অধিক সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে পরিগণিত?
বাংলাদেশের মানুষ বংশানুক্রমিকভাবেই অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল। যুগযুগ ধরেই আমাদের পূর্ব পুরুষগণ তাদের জটিল ও কঠিন সকল রোগব্যাধীতে অল্টারনেটিভ চিকিৎসাই গ্রহণ করে সুস্থতা লাভ করেছেন। এমনকি বিগত ৯০ এর দশকের পূর্ব পর্যন্ত যখন অ্যলোপ্যাথিক ঔষধ এতটা পরিচিতি পায়নি তখন পর্যন্তও অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থাই ছিল রোগ নিরাময়ের একমাত্র উপায়। এছাড়াও নি¤œলিখিত বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য অনেক সম্ভাবনাময় একটি দেশ। যেমন-
১। এদেশে রয়েছে ওষুধি উদ্ভিদের এক বিশাল প্রাকৃতিক ভান্ডার। বাংলাদেশে প্রায় ৫০০০ (পাঁচ হাজার) উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে বিভিন্ন রোগে কার্যকরী ১০০০ (এক হাজার) এরও অধিক মূল্যবান ওষুধি উদ্ভিদের এক বিশাল সম্ভার রয়েছে।
২। বাংলাদেশের ভূমি যথেষ্ট উর্বর এবং বৈচিত্রময় ঔষধি উদ্ভিদ চাষাবাদের জন্য আবহাওয়াও অত্যন্ত অনুকূল।
৩। আমাদের দেশে অন্যান্য দেশের তুলনায় উৎপাদন খরচ কম। কারণ এখানে অপেক্ষাকৃত কম মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া যায়।
৪। আমাদের দেশে উন্নতমানের হার্বাল ঔষধ তৈরী হয়, দেশে-বিদেশে যার ব্যাপক গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে।
৫। আমাদের দেশে চমৎকার বিধিবদ্ধভাবে ঔষধ প্রশাসনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাসায়নিক ঔষধের ন্যায় হার্বাল ঔষধ নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে যা পৃথিবীর কম দেশেই বিদ্যমান।
৬। প্রচুর সংখ্যক শিল্পোদ্যোক্তা রয়েছে এদেশে, যারা অল্টারনেটিভ তথা হার্বাল মেডিসিনের গবেষণা, উন্নয়ন এবং উৎপাদনে বিনিয়োগে আগ্রহী।
৭। এদেশে কনভেনশনাল অ্যালোপ্যাথিক উচ্চশিক্ষিত চিকিৎসকগণ তাদের প্রতিদিনের প্র্যাক্টিসে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের পাশাপাশি অল্টারনেটিভ ওষুধও প্রেসক্রাইব করে থাকেন। রোগীরাও অধিক আতœবিশ্বাসের সাথে এই ওষুধ সেবন করেন।


প্রশ্নঃ আপনি কি মনে করেন দেশে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই চিকিৎসা ব্যবস্থার কোনো সীমাবদ্ধতা আছে?
বাংলাদেশে অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে। তথাপিও আমি মনে করি এই চিকিৎসা ব্যবস্থায় এখনো অনেক সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন-
* যদিও হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ-এ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল ইনস্টিটিউট স্থাপনের ফলে এই চিকিৎসা ব্যবস্থায় গবেষণা ও উচ্চ শিক্ষা লাভের নতুন দ্বার উন্মুচিত হয়েছে। তথাপিও বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থার যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে এবং ওষুধের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে সেই তুলনায় বাংলাদেশে অর্জিত অগ্রগতি পর্যাপ্ত নয়। অল্টারনেটিভ মেডিসিনের ক্রমবর্ধমান বিশ্ব বাজারে প্রবেশ করে এর সুবিধা ভোগ করতে চাইলে দেশে বিশেষতঃ সরকারিভাবে এই চিকিৎসা ব্যবস্থায় উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
* হামদর্দ কর্তৃক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার যথাযথ মান বজায় রেখেই শিক্ষা প্রদান করছে। এছাড়াও দেশে অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও যেন শিক্ষার মান বজায় রাখতে পারে সেই লক্ষ্যে সরকারিভাবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করতে হবে। শিক্ষকদের জন্য বেসরকারী স্কুল-কলেজের ন্যায় বেতন-কাঠামোর প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।
* অল্টারনেটিভ চিকিৎসদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে হামদর্দ সাধ্যানুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। দেশব্যাপী প্রায় ৩০০ চিকিৎসা কেন্দ্র, কারখানাসহ বিভিন্ন বিভাগ/সেকশনে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। সরকারীভাবে চাকুরীর কিছু সুযোগ সৃষ্টি হলেও এটি পর্যাপ্ত নয়। পাশাপাশি ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারীদেরকেও সরকারী চাকুরীতে সুযোগ করে দিতে হবে।
* ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, অ্যাজমাসহ কিছু রোগের পর্যাপ্ত চিকিৎসা দিতে হলে ফর্মুলেশন উন্নত করতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে ইন্হেলার, ইন্জেকশন ও স্প্রে ফর্মে হার্বাল ওষুধ উৎপাদন হলেও আমাদের দেশে এখনো সম্ভব হয়নি।
* আমাদের দেশে সম্প্রতি এই ব্যবস্থার ওষুধের চাহিদা যতটা বৃদ্ধি সাথে এর কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত ওষুধি উদ্ভিদের উৎপাদন বাড়েনি। আমদানীর উপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হয়। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ সরবরাহ সম্ভব হয়না। তাই দেশে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে ওষুধি উদ্ভিদের উৎপাদন আরো বাড়াতে হবে।


প্রশ্নঃআপনার মতে অল্টারনেটিভ চিকিৎসা পদ্ধতির কোন কোন দিকে আরোও উন্নয়ন করা উচিত?
অল্টারনেটিভ চিকিৎসার উন্নয়নে নিম্মোক্ত বিষয়ে কাজ করা উচিৎ বলে আমি মনে করি-
১. এই পদ্ধতির শিক্ষার সম্প্রসারণ ও শিক্ষা কারিকুলাম পূণঃমূল্যায়ন ও আরোও উন্নয়ন করা প্রয়োজন।
২. সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার আরো অধিক সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
৩. ডিগ্রী অর্জনের পর অল্টারনেটিভ পদ্ধতির চিকিৎসকগণের কর্মসংস্থান নিশ্চয়ত করণের ব্যবস্থাকরা প্রয়োজন।
৪. সরকারী বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজসমূহে আরও অধিক হারে চাকুরীর সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার।
৫. দেশে ওষুধি উদ্ভিদ চাষাবাদের প্রতি অধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত যাতে ওষুধি উদ্ভিদের জন্য বিদেশী
নির্ভরতা কমে এবং আরো সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ সরবরাহ প্রদান করা সম্ভব হয়।
৬. হাকীম, কবিরাজ, ফার্মাসিস্ট, বোটানিস্ট, কেমিস্ট, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং হার্বাল বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের
নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করা।

প্রাথমিক শিক্ষায় উন্নয়নের ধারা
                                  

আব্দুল্যাহ আল মামুন

এ অঞ্চলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষার সূচনা হয় ১৯১৯ সালে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামলে। তবে তখন প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পৌর এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে ১৯৩০ সালে বেঙ্গল (রুরাল) প্রাইমারি এডুকেশন অ্যাক্ট প্রণয়নের মধ্য দিয়ে গ্রাম অঞ্চলের ৬ থেকে ১১ বছরের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা লাভের সুযোগ তৈরি হয়। এরপর ১৯৫১ সালে ব্রিটিশ-উত্তর পাকিস্তান শাসনামলে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদে পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্প গৃহীত হয়। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট কর্তৃক উত্থাপিত ২১ দফার মধ্যে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিশ্রুতির ঘোষণা করা হয়। ১৯৫৯ সালের জাতীয় শিক্ষা কমিশন ১০ বছরের মধ্যে পাঁচ বছরমেয়াদি এবং ১৫ বছরের মধ্যে আট বছরমেয়াদি বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করে। উল্লিখিত কিছু পদক্ষেপ ছাড়া স্বাধীনতা-পূর্বকালে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা খাত ছিল একেবারেই অবহেলিত।

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে রচিত ১৯৭২ সালের সংবিধানে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। প্রাথমিক শিক্ষাকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে স্থান দেওয়া হয়। প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনা করেই বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেন। ১৯৭৩ সালে একযোগে ৩৬ হাজার ১৬৫ প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রযাত্রার সূচনা করেন। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গঠিত ‘কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন’ প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করার সুপারিশ করে। বঙ্গবন্ধুর গৃহীত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপগুলোর ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ প্রণীত হয়। ওই শিক্ষানীতিতে বলা হয়, ‘প্রাথমিক শিক্ষা হবে সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক, অবৈতনিক এবং সবার জন্য একই মানের।’ এ নীতিতে শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং শিক্ষার উন্নয়নে করণীয় ধারাবাহিকভাবে লিপিবদ্ধ আছে।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়নে এবং প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের গৃহীত আরও পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে চার দফার প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন কর্মসূচির গ্রহণ। বছরের প্রথম দিনে শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া এ কর্মসূচির আওতায় অসাধারণ উদ্যোগ। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সব শিক্ষার্থীকে বছরের প্রথম দিনে পাঠ্যবই বিতরণ পৃথিবীতে নজিরবিহীন। এ কর্মসূচির অন্য উদ্যোগগুলো হলো শতভাগ উপবৃত্তি কার্যক্রম, অনগ্রসর এলাকায় স্কুল ফিডিং চালু, সরকারি বিদ্যালয়ে দপ্তরি-কাম-নৈশপ্রহরী নিয়োগ, খুদে ডাক্তার, স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠন, ই-মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যালয় পরিদর্শন ইত্যাদি। উপবৃত্তির অর্থ ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে। শিশু শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার মাধ্যমে মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটাতে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু ও সব বিদ্যালয়ে সুসজ্জিত প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ প্রস্তুত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টিসহ প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ ও পুল শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য বাড়তি ৩৭ হাজার ৭২৬ সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা, ঝরে পড়ার হার প্রায় শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সমতা আনা, নতুন শিক্ষাক্রমে নতুন পাঠ্যবই ছাপানো, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালু, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানা ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রাইমারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (পিইডিপি-৪), জিপিএস, এনএনজিপিএস প্রজেক্টের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন ভবন, ওয়াশ ব্লক, বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, আসবাব ক্রয়, নিরাপদ খাবার পানির উৎস স্থাপনসহ ব্যাপক ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে স্কুল লেভেল ইম্প্রুভমেন্ট প্ল্যান (স্লিপ), প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উপকরণ ও শ্রেণিকক্ষ সজ্জিতকরণ, বিদ্যালয়ের মেইনটেন্যান্স ও কন্টিজেন্সি বাবদ এবং স্কিমের আওতায় সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। সরকার ডিজিটাল কন্টেন্টের মাধ্যমে আনন্দঘন শিক্ষণ ব্যবস্থা চালুর জন্য বিদ্যালয়গুলোতে আইসিটি সামগ্রী হিসেবে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর দেওয়া এবং শিক্ষকদের আইসিটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলায় একটি করে বিদ্যালয়ে ওয়েল ইকুইপড ডিজিটাল স্মার্ট ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে।

শিক্ষার উন্নয়নে শিক্ষক সমাজের ভূমিকা সবার ওপরে। ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বর্তমান সরকার শিক্ষার মানোন্নয়নে যে কয়েকটি অসাধারণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এর একটি হলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীতকরণ। সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেলও একধাপ উন্নীত করা হয়। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১ এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৩। এ ছাড়া ৩৪তম বিসিএস চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যারা ক্যাডার পাননি, তাদের মধ্য থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দ্বিতীয় শ্রেণির নন-ক্যাডার পদমর্যাদায় নিয়োগ করা হয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং গুণগত শিক্ষার ধারা নিশ্চিত করতে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার পর্যায়ক্রমে বিপুলসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। সম্প্রতি নতুন করে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকসহ আগের বেশিরভাগ শিক্ষকের স্নাতক বা তদূর্ধ্ব ডিগ্রি রয়েছে। শিক্ষক প্রশিক্ষণের মানও এরই মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষকদের পর্যায়ক্রমে দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ, নিড বেজড সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ, আইসিটি প্রশিক্ষণ, প্রধান শিক্ষকদের লিডারশিপ প্রশিক্ষণ ও ইংরেজি বিষয়ে দক্ষ করতে সরকারি অর্থায়নে ব্রিটিশ কাউন্সিল কর্তৃক মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণসহ নানাবিধ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যালয় পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

রূপকল্প ২০৪১, স্মার্ট বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘ ঘোষিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ (এসডিজি) বাস্তবায়নের জন্য মানবসম্পদ উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’-এর প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সব শিশুর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা, যা অর্জনে বাংলাদেশ দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে। স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি ভিত্তির অন্যতম ভিত্তি ‘স্মার্ট নাগরিক’ তৈরির জন্যও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫(ক) অনুচ্ছেদে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয় ও চিকিৎসার পাশাপাশি শিক্ষাকে মৌলিক প্রয়োজন হিসেবে স্বীকৃত দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০, রূপকল্প ২০৪১, স্মার্ট বাংলাদেশ ও এসডিজির লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনে সরকার উপর্যুক্ত যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছে। তথাপি, প্রাথমিক শিক্ষার সুষম উন্নয়নে কিছু অন্তরায় এখনো বিদ্যমান। সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে শিক্ষকদের আন্তরিকতা বাড়াতে এবং পেশাদারিত্বের মনোভাব তৈরি করতে হবে। শিক্ষকতাকে শুধু পেশা নয়, ব্রত হিসেবে গ্রহণ করলে সেই শিক্ষক কর্তৃক পুরো জাতি উপকৃত হবে। শিক্ষকদের পাঠাভ্যাসের অনীহা দূর করা প্রয়োজন। পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে শিক্ষা উপকরণ ও ডিজিটাল কন্টেন্ট ব্যবহার করে শ্রেণি পাঠদান নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষকদের কার্যকর যোগাযোগের অভাব রয়েছে। পরিদর্শনে দেখা যায়, একজন শিক্ষক বাড়ির নিকটতম একই বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত আছেন এবং ব্যবসাসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকছেন। ফলে তিনি শিক্ষকতায় পরিপূর্ণভাবে মনোনিবেশ করতে পারছেন না। এ ছাড়া শিক্ষকদের পাঠদানের বাইরে অন্য কাজে সম্পৃক্ত করা থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিরত থাকতে হবে। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থাকে বাণিজ্যিকীকরণ মুক্ত করার মতো জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব প্রয়োজন। অভিভাবকদের অসচেতনতা, নিরক্ষরতা ও আর্থসামাজিক অবস্থা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের অন্যতম অন্তরায়। পিছিয়ে পড়া ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল প্রান্তিক পরিবারের শিশুদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও সচেতন থাকা প্রয়োজন। বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক গোষ্ঠী, অঞ্চল, জাতি, লিঙ্গ ও স্বাস্থ্যগত অবস্থানের সব শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বোপরি, উল্লিখিত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে সরকার কর্তৃক গৃহীত নীতি ও পরিকল্পনার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সবার জন্য একই মানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে সব অংশীজনের সমন্বিত প্রয়াস প্রয়োজন।

লেখক: যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম থেকে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ে মাস্টার্স

প্রত্যাশা: আত্মশুদ্ধির উদ্বোধন
                                  

মোছা: আয়েশা সিদ্দিকা (শিক্ষার্থী)

আত্মশুদ্ধির অর্থ আসলে আত্মার শুদ্ধি। নানা উপায় আত্মাকে শুদ্ধ রাখতে হয়। তা না হলে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠা হয় না। গবেষকরা বলে থাকেন, মানুষের শরীর অসুস্থ হলে যেমন চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তুলতে হয়, তেমনি আত্মা অসুস্থ হলে তাকেও পরিশুদ্ধ করে তুলতে হয়। কারণ আত্মা শুদ্ধ ব্যক্তিই পারে তার কর্মকাণ্ড দিয়ে চারপাশের পরিবেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে। আত্মা অশুদ্ধ থাকলে ব্যক্তির বাহিক আচার-আচরণ সহ তার কাজকর্মে অশুদ্ধতা ও অকল্যাণ নেমে আসে। মানব জীবনে তাই আত্মশুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
আমরা আমাদের চারপাশে তাকালে দেখতে পাই, নানা অনাচারে ভরে উঠেছে সমাজ। কি ব্যক্তি জীবন? কি পারিবারিক জীবন? কি কর্ম জীবন? সর্বত্রই অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, অনাচারে ছড়াছড়ি। কারণ কি? কারণ আমাদের মধ্যে আত্মশুদ্ধির অভাব।

পবিত্র ধর্ম গ্রন্থেও এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, `সে-ই সফলকাম হয়েছে, যে তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে এবং যে তার আত্মাকে কলুষিত করেছে সেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে আত্মাকে শুদ্ধ করা যায়? বিষয়টি দুইভাগে ব্যাখ্যা করতে পারি।

( ক) বর্জনীয়; যাবতীয় পাপ, অন্যায় ও অপবিত্র কাজ থেকে মুক্ত হওয়া অর্থাৎ যাবতীয় অসৎ গুণাবলী বর্জন করা। (খ) করণীয়; উত্তম গুনাবলী দ্বারা আত্মার উন্নতি সাধন করা অর্থাৎ প্রশংসনীয় গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে পরিত্যক্তিত অসৎ গুণাবলী শূন্যস্থান পূরণ করা।

বর্জনীয় ও করণীয়- এর চর্চার কাজটা শুরু করতে হবে নিজের ভেতর থেকে। তারপর পরিবার এবং কর্মক্ষেত্রে। কেননা অশুদ্ধ ও পচনশীল আত্মার বিষয়ে আমরা অভিমত-
` না উড়ে না পড়ে বোধ মহাকাল নেয় পঁচনশীল আত্মার শোধ
না ওড়ে না পোড়ে বোদ, মহাকাল নেবে অশুদ্ধ আত্মার শোধ`
(সম্ভবত ইহলোকেই এইসব দৃশ্যমান হয় কিংবা হবেই)
তাই প্রত্যাশা- আত্মশুদ্ধির উদ্বোধন হোক আমার, আপনার, আমাদের মাঝে।

গণহত্যার শিকারদের স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস
                                  

মো: জুবাইর: প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস হিসাবে পালিত হয়, যা গণহত্যার অপরাধ এবং এই অপরাধ প্রতিরোধের শিকারদের স্মরণ ও মর্যাদার আন্তর্জাতিক দিবসও।

১৯৪৯ সালের ৯ই ডিসেম্বরে প্রথমবারের মত জাতিসংঘে গণহত্যা প্রতিরোধ ও এ সংক্রান্ত শাস্তি বিষয়ক প্রথাটি গৃহীত হয়। এই দিবসের মূল লক্ষ্য হল গণহত্যা বিষয়ক প্রথাটির ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং গণহত্যায় মৃত ব্যক্তিদের স্মরণ ও সম্মান করা।
এই দিবসের মূল লক্ষ্য হল গণহত্যা বিষয়ক প্রথাটির ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং গণহত্যায় মৃত ব্যক্তিদের স্মরণ ও সম্মান করা। এটি জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রকে এ-ও স্মরণ করিয়ে দেয় যে তাদের নিজ জনগণকে গণহত্যার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য দায়িত্ব আছে। গণহত্যার উস্কানি বন্ধ করা ও গণহত্যা ঘটলে তা প্রতিরোধ করা এই দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্ত জেলা কক্সবাজারে বিস্তীর্ণ শিবিরে বসবাসকারী রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা মুসলমানরা ১.২ মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা, যাদের অধিকাংশই ২৫শে আগস্ট, ২০১৭-এ মিয়ানমারে নৃশংস সামরিক দমনপীড়ন থেকে পালিয়েছিল, সচেতনতা বাড়াতে সমাবেশ করে দিনটিকে চিহ্নিত করেছে। তাদের দুর্দশার কথা এবং রাখাইন রাজ্যে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অঙ্গীকারের কথা মনে করিয়ে দেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, "গণহত্যা স্মরণ দিবস" স্মরণে রোহিঙ্গারা ৩৪টি ক্যাম্পের মধ্যে ১২টিতে সমাবেশ করেছে।
সমাবেশে, রাষ্ট্রহীন জনগণের সম্প্রদায়ের নেতারা রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাতটি দাবি তুলে ধরে, যার মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গা গণহত্যার শিকারদের বিচার, নাগরিকত্বের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মিয়ানমারের বিতর্কিত ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল করা যা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নাগরিকত্ব অস্বীকার করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, প্রত্যাবাসন, সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ। প্রত্যাবাসনের পর জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ধ্বংস এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা।
অনেক মানবাধিকার গোষ্ঠী হিংসাত্মক সামরিক দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি ভারতের উদাসীনতাকে চিহ্নিত করেছে।
আনুমানিক ৪০,০০০ রোহিঙ্গা ভারতে রয়েছে, যাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০,০০০ ইউএনএইচসিআর-এ নিবন্ধিত।
একইভাবে, ২০১৬ সাল থেকে, অতিজাতিবাদী হিন্দু গোষ্ঠীগুলি ভারতে মুসলমানদের উপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণের অংশ হিসাবে ভারতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের টার্গেট করেছে এবং তাদের দেশ থেকে বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছে। অক্টোবর ২০১৮ থেকে, ভারত সরকার ১২ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে, দাবি করেছে যে তারা স্বেচ্ছায় চলে গেছে।
সহায়তা বাড়াতে জাতিসংঘের বিশেষ দূত: ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয় থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত রোহিঙ্গা শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থন বাড়ানোর জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
“যেমন মহাসচিব এই গৌরবময় অনুষ্ঠানে পুনর্ব্যক্ত করেছেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অধিগ্রহণের পরে, মিয়ানমারে মানবিক, মানবাধিকার এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংকটের ব্যাপক, টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এটিকে ভুলে যাওয়া সংকট হতে দিতে পারি না, "তিনি বিবৃতিতে বলেছিলেন।
তিনি যোগ করেছেন: "আমি এই অঞ্চলের দেশগুলির বৃহত্তর নেতৃত্বের জন্য বাংলাদেশকে সমর্থন এবং মিয়ানমারের সাথে তাদের প্রভাব কাজে লাগানোর জন্য শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখব।"
বিশেষ দূত আরও জোর দিয়েছিলেন যে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করা শেষ পর্যন্ত মিয়ানমারের দায়িত্ব।
তিনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রস্তুত করার হাতিয়ার হিসেবে শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবহারের ওপর জোর দেন।
এদিকে, বার্মা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক একটি পৃথক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে যে প্রায় ৬০০,০০০ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে বৈষম্যমূলক আইন ও নীতির অধীনে আটকে আছে যা রাখাইন রাজ্যে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং চলমান গণহত্যার সমান।
“রোহিঙ্গা এবং বার্মার বাকি জনগণের দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে চাইলে বিশ্বকে সিদ্ধান্তমূলকভাবে কাজ করতে হবে,” বলেছেন অধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কিয়াউ উইন

বিনোদনের নামে অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বিরত থাকি
                                  

মোঃ আরিফ ঊল্লাহ

বিনোদন মানুষের আগ্রহের একটি কেন্দ্রবিন্দু। মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের বিরক্তিকর রুটিন থেকে বের হয়ে নিজেকে অন্য এক জগতে নিয়ে যেতে চায়। পেতে চায় ভিন্ন রকম এক স্বাদ, যেখানে থাকবে না কোনো কাজের কিংবা পরিবারের চাপ এবং পাবে মানসিক প্রশান্তি। এই বিনোদনের জন্য এক এক মানুষের পছন্দ এক এক ধরণের। কেউ বিনোদন খোঁজে তার প্রিয় গায়কের গানে, কেউ তার প্রিয় লেখকের লেখায়, কেউ মিশে যেতে চায় প্রকৃতির মাঝে, কেউ তার আপন মানুষের সাথে আড্ডায় বা তার প্রিয় দলের খেলায়। যাই হোক আমরা যদি বিনোদনকে এক কথায় বলতে চাই তাহলে বলতে হবে, বিনোদন এমন এক ধরণের কাজ যা দেখে, শ্রবণ করে, ধারণা করে বা নিজে সেই কাজ করে আনন্দ পায়। আমার মতে বিনোদন হলো এমন কাজ যা মানুষকে আনন্দ বা মজা দেয়ার পাশাপাশি তার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে সহায়তা করে, তাই বিনোদন।

বিনোদনের অনেক দিক রয়েছে। যেমন শরীর চর্চা, গল্পবলা, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, নাটক, কবিতা, বই, নৃত্য, কমিক নাটক, খেলাধুলা ইত্যাদি। বর্তমান সময়ে মানুষ কিছু বিষয়ে সিজনাল সমর্থক আবার কিছু বিষয়ে রেগুলার। যেমন আমরা অনেকেই নিয়মিত বই পড়ি কিন্তু কোনো উৎসবকে ঘিরে আমাদের সমর্থন সেই দিকে চলে যায়, এর সব থেকে উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো “গ্রেটেস্ট শো অন দা আর্থ” বা ফুটবল বিশ্বকাপ। অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও খেলাধুলা নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই বরং এবার ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে আমাদের উম্মাদনা অন্য যেকোনো বিশ্বকাপের তুলনায় একটু বেশী বলেই মনে হচ্ছে। আমাদের ব্যবসায়ী ভাইয়েরা এই বিশ্বকাপকে ঘিরে তাদের জার্সি ও পতাকা বিক্রয়ের সন্তুষ্টি দেখেই বুঝা যায় খেলাধুলার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের উম্মাদনা কেমন, এমন কি অনেক বিক্রেতা জানায়, তারা ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী জার্সি দিতে হিমশিম খাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস ২৪ এর সূত্র মতে, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে ফুটবল, প্রায় ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি সমর্থক রয়েছে এই খেলায়, এর থেকেও মজার বিষয় হলো যে পরিমাণ মানুষ ক্রিকেট এর ভক্ত তার চেয়ে বেশী মানুষ প্রায় ২.৫ বিলিয়ন মানুষ ফুটবল খেলে থাকেন।

বিনোদনের কিছু নিয়ামক রয়েছে যা দর্শকের সন্তুষ্টি লাভে সহায়ক বা যে নিয়ামক সমূহ বিনোদনে থাকা খুবই জরুরী অথবা দর্শকমহলের উচিৎ এ সকল নিয়ামক তার বিনোদনে উপস্থিত আছে কিনা তা খুঁজে দেখা। যেমন বিনোদনের বিষয় টি কতটা বাস্তবসম্মত, বিনোদনের ধরণ বর্তমান পরিস্থিতিকে কতখানি প্রভাবিত করে, এই বিনোদন আপনাকে আপনার জীবনের গুরুত্ব বুঝাতে সক্ষম কিনা, আপনি এই বিনোদন থেকে কি শিখতে পারলেন, নতুন কোন বিষয়টি আপনি জানতে পারলেন ইত্যাদি। সর্বোপরি বিনোদন হবে সেই সকল কাজ যা আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে সহায়তা করবে।
কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের উম্মাদনা এতোটাই বেশি যে, আমরা কোনো কিছু চিন্তা করতে চাই না, আমরা আবেগে ভেসেতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। হাজার ফুটের লম্বা পতাকা বানিয়ে রাস্তার পাশে ঝুলিয়ে রাখছি। জমি বিক্রি করে নিজ বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি পর্যন্ত পতাকা লাগানোর ঘটনাও ঘটাচ্ছি। কিন্তু দেশের মানুষ না খেয়ে শীতের রাতে রাস্তায় ঘুমাচ্ছে, বিকৃত পতাকা বানাচ্ছি আর অহংকার করছি কিন্তু পতাকার নামে যে অপমাননা করছি তার খবর কিন্তু কেউ রাখছি না। নিজ দলের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে বিশাল আকৃতির পতাকা টাঙ্গিয়েছি। কিন্তু আমার দেশের পতাকা সেখানে স্থান পায়নি, দলের সমর্থনে যা ইচ্ছে তাই বলছি এমনকি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ প্লেয়ারদের নিয়ে কটাক্ষ করতেও দ্বিধা করছি না। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে নষ্ট হচ্ছে অনেক ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব ও প্রিয়জনের সাথে গড়ে উঠা মধুর সম্পর্ক। দল যখন হেরে যায় তখন হয়তো ঘরবন্দি নয়তো মিথ্যে বা কাল্পনিক ফন্দি আড়তে থাকি। রাত বিরাতে এলাকায় আতশবাজি আর বিজয় মিছিল করছি। এতে করে এলাকাবাসীর যতই সমস্যা হোক তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। আমরা এতোটাই আবেগি যে, দলের জন্য জীবন দিতেও দ্বিধা করিনা। আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচ পরাজিত হওয়ার পর কুমিল্লায় একজন মারা যায়। কেভিন ডেভিস নামক ৬৬ বছর বয়সী এক ওয়েলস সমর্থক মারা যায়। পতাকা টাঙ্গাতে গিয়ে কক্সবাজারে ২ জন কিশোর নিহত হয়। কিছু দিন আগে নেত্রকোনার শামিম মিয়াঁ নামে ২৮ বছর বয়সের একজন হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। বিগত বছরগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায় ১৯৬৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৩ শত ছাব্বিশ জন সমর্থক গাদাগাদি, হুড়োহুড়ি এবং পদদলিত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। এরমধ্যে সর্বাধিক করুণ ঘটনা টি ঘটে ১৯৬৪ সালে পেরুতে। যেখানে প্রায় ৩২০ জন মারা যায় এবং ২০০১ সালে ১২৬ জন ঘানায়। এছাড়াও চলতি বছরে ইন্দোনেশিয়ায় ১২৭ জন সমর্থক স্টেডিয়ামে পদপিষ্ট হয়ে মারা যায়।

এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের নিজেদেরকে সচেতন হতে হবে। আবাসিক এলাকার বাহিরে বিজয় উৎসব পালন করতে হবে। খেলার মধ্যে হার জিত অবশ্যই থাকবে এবং একথা মেনে নেয়ার মতো মানসিকতা থাকতে হবে। অতি আবেগি হওয়া যাবে না, কারো সাথে তর্কে জড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। সকল দলের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। বিনোদনকে ব্যবহার করে অন্যকে হেয় করা যাবে না। কাজ করার পূর্বে এর ফলাফল কি হতে পারে তা নিয়ে ভাবতে হবে। মানবিক মানসিকতা পোষন করতে হবে। দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা লালন করতে হবে। কোনক্রমে বিনোদন যেন ক্ষতির কারণ হতে না হয়, এই দিকটি বিশেষভাবে খেয়াল করতে হবে। মনে রাখতে হবে খেলা কেবল মাত্র একটি বিনোদন, আর বিনোদন আপনার জন্য, বিনোদনের জন্য আপনি নন।
লেখকঃ মোঃ আরিফ ঊল্লাহ
উন্নয়ন কর্মী, কোস্ট ফাউন্ডেশন
Email: [email protected]

ভারত ও বাংলাদেশের উচিত তিস্তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করা
                                  

বিশেষ সংবাদদাতা: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর একটি হলো তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে আলোচনা চলছে। কিন্তু আশ্বাসে থেমে গেছে তিস্তা ইস্যু। ১৯৯৬ সালে গঙ্গা চুক্তির পর তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। ১৯৮৩ সালের আগস্ট মাসে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি শুরু হয়।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকা সফর করেন। সে সময় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। অন্তর্র্বতী চুক্তির মেয়াদ ছিল ১৫ বছর। চুক্তি অনুযায়ী তিস্তার পানির ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশের ওপর ভারতের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতার কারণে চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি।
পরবর্তীতে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। এই ভারত সফর তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের আশা জাগিয়েছে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু তারপরও রাজি হননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, তার মতবিরোধের মূল কারণ উত্তরবঙ্গের মানুষকে বঞ্চিত করে তিনি বাংলাদেশকে পানি দিতে রাজি নন। এমনকি ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঢাকা সফর করেছিলেন। সে সময় তিস্তা চুক্তি নিয়ে ইতিবাচক বক্তব্য দেওয়া হলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদী বা অভিন্ন নদী রয়েছে। এর মধ্যে ৪৩টি অভিন্ন নদীর পানির বেশির ভাগই ভারতের দখলে, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি কার্যত অন্যায্য। ৫৪টি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি কমিটি ৫ জানুয়ারী, ২০২১ থেকে দুই দিনের জন্য বৈঠক করেছে। করোনভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বৈঠকটি কার্যত শেষ হয়েছে। বৈঠকে অভিন্ন নদীতে পানি বণ্টনের জন্য একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। এর আগে, বাংলাদেশ সরকার ত্রিপুরার সাব্রুম শহরে পানি সংকট মোকাবেলায় মানবিক কারণে ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি তুলতে সম্মত হয়। তবে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি দিনের পর দিন অমীমাংসিতই থেকেছে। একটি আন্তঃসীমান্ত নদী জুড়ে জল ভাগাভাগির ক্ষেত্রে চুক্তিটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এটি একটি দেশের জল ভাগ এবং প্রাপ্যতা নিশ্চিত করেছিল। চুক্তি সম্পন্ন না হলে সাব্রুম শহরে এমনকি বাংলাদেশেও পানির ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে না, পাম্প হাউস দিয়ে সেচ প্রকল্প নির্মাণ করে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। চুক্তির ফলে উভয় দেশই লাভবান হবে। গজলডোবা বাঁধটি ১৯৯৮ সালে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজার মহকুমায় নীলফামারীর তিস্তা নদীর উজানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে তিস্তা নদীর নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে চলে যায়। বাঁধের ৫৪টি গেট রয়েছে যা তিস্তার মূল স্রোত থেকে বিভিন্ন সেক্টরে পানি সরানোর জন্য বন্ধ রয়েছে। বাঁধটি মূলত তিস্তার পানি তিস্তা-মহানন্দা খালে প্রবাহিত করার জন্য নির্মিত হয়েছিল। গজলডোবা বাঁধের আগে তিস্তা অববাহিকায় ২৫০০ কিউসেক পানি পাওয়া যেত, এখন পানির প্রবাহ ৪০০ কিউসেক কম। বাংলাদেশে ১৯৯৭ সালে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানির প্রবাহ ছিল প্রায় ৬,৫০০ কিউসেক, যা ২০০৬ সালে ১,৩৪৮ কিউসেকে নেমে আসে এবং ২০১৪ সালে তা দাঁড়ায় মাত্র ৮০০ কিউসেকে। পানির অভাবে অনেক জমি চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে সাধারণ কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, যার প্রভাব পড়ছে তাদের জীবিকা। অপর্যাপ্ত পানির প্রবাহে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে চরগুলোতে। গ্রীষ্মকালেও নদীতে একেবারেই পানি থাকে না। মানুষ পায়ে হেঁটে নদী পার হয়। মরা নদীতে পরিণত হয়েছে তিস্তা। এভাবে চলতে থাকলে শুধু জনজীবনই নয়, জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়বে। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এখন সময়ের দাবি। কিন্তু তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির ব্যাপারে ভারতের দেরি বোঝায় যে তারা এটা মানতে নারাজ। তিস্তা প্রকল্প বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর ১১৫ কিলোমিটার খনন করবে। খননের মাধ্যমে নদীর গভীরতা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। নদী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অনেক নদী উদ্ধার করা হবে। নদীর তীরবর্তী জমি চাষের উপযোগী করা হবে। এমনকি তিস্তা নদীর উভয় তীরে শিল্পনগরী গড়ে তোলা সম্ভব হবে, যা বহু লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এতে দেশের সমগ্র অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। মূলত, তিস্তা নদী চুক্তি স্বাক্ষর না করা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিবেশী মনোভাবকে ক্ষুণ্ন করছে। ভারতের মনে রাখা উচিত বাংলাদেশ এই অঞ্চলে একটি বিশ্বস্ত মিত্র। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিতে স্বাক্ষর না করলে বাংলাদেশ অবশ্যই বিকল্প পথ খোঁজার চেষ্টা করবে। প্রায়ই বলা হয় বাংলাদেশ ও আমি হফরধ বর্তমানে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বর্ণযুগের সাক্ষী। বাংলাদেশ ইস্যুতে চীনের সহযোগিতা গ্রহণ করার আগে ভারতের উচিত বিরোধ নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ হতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা এখনও ভারতকে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং মিত্র হিসাবে বিবেচনা করে।
ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে শেখ হাসিনা তিস্তা নদীর বণ্টন সমস্যা সমাধানে আগ্রহী। তবে ভারতের পক্ষ থেকে দেরি হলে বিকল্প পথের কথা ভাবতে পারে বাংলাদেশ। তিস্তা সমস্যার ফলপ্রসূ সমাধান শুধু বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত করবে না বরং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতেও সাহায্য করবে। তিস্তা চুক্তি ভারতকেও দারুণভাবে উপকৃত করবে। এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এগিয়ে গেলে তা বাংলাদেশের সকল স্টেকহোল্ডারদের সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হবে। ভারত অবশ্যই বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী মিত্র হিসেবে তার অবস্থানকে শক্তিশালী করতে এবং একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
তিস্তা নদীর রয়েছে অপার সম্ভাবনা। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি বা তিস্তা প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন সম্ভব হলে শুধু তিস্তা উপকূল বা উত্তরবঙ্গের মানুষ নয়, সমগ্র বাংলাদেশ এর সুফল ভোগ করবে। পরিবর্তন আসবে উত্তরবঙ্গের জনজীবনে। বাংলাদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। সব মিলিয়ে তিস্তা চুক্তি বা তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

ভারত সীমান্তে বেআইনি হত্যাকাণ্ড: বিচার চাইছে বাংলাদেশি পরিবার
                                  

বিশেষ সংবাদদাতা: পরিবারগুলো তাদের দড়ির শেষ প্রান্তে! তারা কয়েক দশক ধরে ভারতীয় বাহিনী কর্তৃক সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশী বেসামরিক নাগরিকদের "বেআইনি হত্যার" বিচার দাবি করে আসছে। একটি স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন অধিকার দাবি করেছে যে গত দুই দশকে ভারতীয় বাহিনীর হাতে সীমান্তের ওপারে ১,২০০ জনেরও বেশি বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিক। ঐতিহাসিক বন্ধু হিসেবে বিবেচিত তার প্রতিবেশী সীমান্ত বাহিনী কর্তৃক বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষও অনেকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কয়েকদিন আগে ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ বুধবার রাত ১১টার দিকে দাইনুর সীমান্তের ৩১৫ নম্বর পিলারের কাছে এ ঘটনায় আরো দুজন নিখোঁজ হয়।

নিহত মিনার (১৮) উপজেলার খানপুর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীরের ছেলে। নিখোঁজরা হলেন একই এলাকার লতিফুলের ছেলে এমদাদুল (২৮) ও সালমানের ছেলে সাগর (২০)। স্থানীয়রা জানান, প্রায় পাঁচজন শুঁটকি মাছ আনতে সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। বাংলাদেশে ফেরার সময় বিএসএফের একটি টহল দল তাদের দেখতে পায়। বিএসএফ সৈন্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালালে মিনার ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ সময় আরও দুইজন নিখোঁজ হন। দাইনুর বিপিও নায়েক সুবেদার আক্তার হোসেন জানান, ভারতীয় ভূখণ্ডের দক্ষিণ দিনাজপুর এলাকায় লাশটি পড়ে ছিল যা পরে উদ্ধার করা হয়।
সাম্প্রতিক অতীতে আনাদোলু এজেন্সির সাথে কথা বলার সময়, বাংলাদেশী আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ পরামর্শ দিয়েছেন যে সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বাংলাদেশের উচিত ভারতীয় নাগরিক সমাজ এবং মানবাধিকার কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করা এবং উভয় সরকারকে আলোচনায় বসতে এবং এই গুরুতর সমস্যাটির সমাধান করার জন্য চাপ দেওয়া উচিত।
"যদি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মিডিয়া এই মানবিক ইস্যু সম্পর্কে ভারতীয় জনগণ এবং সুশীল সমাজের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সক্ষম হয়, তবে এটি সীমান্ত হত্যা শূন্যে নিয়ে আসার জন্য ভারত সরকারের উপর জোরালো চাপ সৃষ্টি করবে," আহমেদ জোর দিয়েছিলেন।

 

নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে?
                                  

মোঃ আরিফ উল্লাহ

স্বাধীনতার অর্ধশতক পরেও যেন লাল-সবুজের এই দেশ পরাধীন। স্বাধীন দেশে বসবাস কিন্তু স্বাধীনতার অর্থ যেন আজও অজানা। এখনও বাংলার নারী তথা আমার আপনার মা, বোন স্বাধীনভাবে চলাচলের স্বাধীনতা পায়নি, পায়নি পরিপূর্ণ বাকস্বাধীনতা। এখনও প্রায় প্রতি মুহূর্তে দেশের কোথাও না কোথাও ঘটে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন। মানুষ নামের হায়েনারা ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে। দেশকে নিয়ে যাচ্ছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে, এ মানুষ নামের পশুগুলিকে পশু বললে পশুকে অপমান করা হবে এরা তো অবুঝ হিংস্র প্রাণীর চেয়েও বদতর। বলছি ধর্ষকের কথা যারা মানুষ রুপী নরপশু। আর এ ধর্ষকেরা সমাজ, দেশ ও সমগ্র মানব জাতীর জন্য কলঙ্ক।একটি দেশকে শত বছর পিছিয়ে নেয়ার জন্য এ ধর্ষকেরাই যথেষ্ট।

যে শিশুদের উপর নির্ভর করছে আগামীর ভবিষ্যৎ,এই শিশুরা যদি নসিক,শারীরিক,যৌন ও অন্যান্য অত্যাচারের শিকার হয়, এমন পরিবেশে বেড়ে উঠে, তাহলে তাদের নিকট থেকে ইতিবাচক কিছু আশা করা নিছক বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। আর যে নারীকে জাতি গড়ার কান্ডারী বলা হয় সেই নারী যদি প্রতি ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয় তবে সেই নারী জাতি গঠনে কতখানি ভূমিকা রাখতে পারবে তাও প্রশ্নবিদ্ধ।

বর্তমানে ধর্ষনের চিত্র দেখলে শরীর শিহরিয়ে উঠে। প্রশ্ন জাগে লাখো শহিদের আত্মত্যাগের সাথে আমরা কতখানি ব্যবিচার করছি? কি পরিমান অন্যায় করছি সেই মানুষটির সাথে যিনি তার জীবনের প্রতি টি ক্ষণ উৎসর্গ করেছেন এবং স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সোনার বাংলাদেশের। তিনি হচ্ছেন আমাদের সবার প্রিয় নেতা আত্মত্যাগী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে কি আমরা এই অদম নরপশুদের কাছে হেরে যাবো? ১৬ কোটি মানুষ কি তাহলে এই নরপশুদের সামনে অসহায় হইয়ে পড়েছে? কিন্তু বাঙ্গালী জাতি তো হারতে শিখেনি। আমরা জয় করতে শিখেছি, বিজয় ছিনিয়ে আনতে শিখেছি, শিখেছি নিজের অধিকার আদায় করতে। তবে আজ কেন আমরা অসহায়ের মতো আচরণ করছি? কেন আমরা আজ নিশ্চুপ? এর প্রধান কারন আমরাই। কারন আজ আমারা আত্মকেন্দ্রিক। আমাদের মধ্যে দিন দিন দেশপ্রেম হারিইয়ে যাচ্ছে। বাঙ্গালীয়ানা আমাদের সমাজ থেকে লোপ পাচ্ছে। আমরা এখন ব্যস্ত ওয়েস্টার্ন কালচার নিয়ে, আমরা এখন যৌথ পরিবার ভেঙ্গে আলাদা থাকতে পছন্দ করি, নিজের স্বার্থ আদায় করতে ব্যস্ত থাকি, অন্যের দূরাবস্থায় নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করি, সহযোগিতার পরিবর্তে মোবাইলে ভিডিও করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, তাই বর্তমান সময়ে আত্মত্যাগী মানুষ খোঁজে পাওয়া আজ বড় দুষ্কর, এবং এর ফল স্বরূপ ধর্ষনের মতো সামাজিক ব্যাধি, যার কাছে আমরা আজ অসহায় হইয়ে পড়েছি। আর নয় আত্মকেন্দ্রিকতা এবার জেগে উঠার পালা। আমাদেরকে ৭১ এর বীর সৈনিকদের ন্যায় অস্ত্র হাতে নিতে হবেনা, হবেনা কোনো বিশাল সৈনিকের বহরের বিপরীতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে। শুধু একটু সচেতন হতে হবে। অন্যায়কে “না” বলা শিখতে হবে। অন্যায় দেখলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কে অবহিত করতে হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মনোভাব তৈরি করতে হবে এবং যার যার ধর্মকে শ্রদ্ধার সাথে অনুসরন করতে হবে। তবেই আমাদের শিশু ও মা বোনেরা স্বাধীন ও মুক্ত ভাবে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে।
যদি বিগত কয়েক বছরের নারী ও শিশু নির্যাতনের চিত্র দেখি তাহলে দেখা যায়, বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থার মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন এর তথ্যমতে ১০বছর পূর্ন হওয়ার আগেই দেশের ৫.১৭ শতাংশ শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। ৮০.২ ভাগ নারী কোনো না কোনো সময় আর্থিক , মানসিক, যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। অন্যদিকেবাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও মানবাধিকারকর্মী সালমা আলীর তথ্য মতে ২০২১ সালে বাল্যবিবাহের হার পূর্বের তুলনায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় ২০ হাজার শিশু ও নারী পাচার হয়। এসময়ে ১ হাজার ২৫৩ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যেখানে ধর্ষণের পর ৪৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। শুধু তাই নয় ২০২১ সালে প্রায় ১৯ হাজার নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলা হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এ নরপশু ধর্ষকদের কাছে ফুলের মত নিষ্পাপ শিশু আর প্রাপ্ত বয়স্ক কোনো ভেদাভেদ নেই। এর সাথে এদের অত্যাচারের মাত্রা আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এতোটাই অমানসিক নির্যাতন করে যা আমরা কল্পনায় ভাবতেও ভয় পাবো। দিন টি ৩০ জুলাই ২০১৭, ৩৫ বছর বয়সি সিপন, চার বছরের এক শিশুকে ধর্ষন করে এবং ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশুটি মৃত্যু্র কুলে ঢলে পড়ে। গত ২৫ আগূপা, রুপা বগুরা থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে চলন্ত বাসে তাকে ধর্ষন করা হয়।২৬ মার্চ ২০১৮ কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় ৫ বছরের এক কন্যা শিশুকে ধর্ষণ করা হয়। আর সবুজ ঘাসের উপর পরে থাকা বিউটির লাশ যেন চিৎকার করে বলছে, "হে বাঙ্গালী আর ঘুমিয়ে থেকোনা। জেগে উঠো, নয়তো লাল সবুজের পতাকার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।" কি এমন অন্যায় করেছিল রূপা বা বিউটি? কি দোষ করেছিল ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশু গুলি যার শাস্তি হিসেবে এমন করুন পরিনতির শিকার তারা?

রূপা হয়তো তার পরিবারের মধ্যমণি ছিল। চার বছরের শিশুটি কে তার মা কোলে তুলে গল্প শুনিয়ে নিজ হাতে খাওয়াবে বলে হয়তো সেই দিন ও বসে ছিল।বাবা ও হয়তো তার রাজকন্যার জন্য সেই দিন ও সারপ্রাইজ গিফট কিনবে বলে ভেবেছিল কিন্তু তা আর হইয়ে উঠেনি, এক হায়েনার নির্মম অত্যাচারে শিশুটির জীবনের ইতি ঘটলো।এভাবেই প্রতি দিন কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো মা হারাচ্ছে তার সন্তান, ভাই হারাচ্ছে তার বোন, একটি পরিবার হারাচ্ছে তার হাসি খুশির মধ্যমণিকে, এবং এ হারানোর বেদনা সেই মায়ের থেকে বেশি কেউ বুঝবে না যে মা তার শিশু সন্তান কে হারিয়েছে।শুধু একটি জীবনের ইতি ঘটেনি, ইতি ঘটেছে একটি স্বপ্নের, একটি প্রতিভার, একটি বিশ্বাসের এবং অবিশ্বাসের জন্ম হইয়েছে এ দেশের প্রতি সাথে মানব জাতীর প্রতি। এ ব্যাধি নিরসনে বর্তমান সরকারকে এখনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় আমাদের সকল অর্জনকে বিলীন করার জন্য “ধর্ষণ “ নামক সামাজিক ব্যাধিটিই যথেষ্ট। অতি শিগ্রই সকল সামাজিক ব্যাধির প্রকোপ থেকে দেশ রক্ষা পাবে, আর কোনো ধর্ষনের মতো নিকৃষ্ট ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবেনা এই কামনা করি। আমাদের শিশুরা বেড়ে উঠবে বাদভাংগা আনন্দে ,আমাদের মায়েরা গড়বে এক বলিষ্ঠ জাতি।

লেখক :
মোঃ আরিফ উল্লাহ, উন্নয়ন কর্মী
Email: [email protected]


   Page 1 of 5
     মতামত
২০ জানুয়ারির মধ্যে হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধ বিরতির জোর প্রস্তুতি : ইসরায়েলকে যদি পূর্বেই থামানো যেত তাহলে গাজায় এত মানুষ নিহত হতো না : বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
.............................................................................................
২০০ টাকা মূল্যমানের নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্প ছাপিয়ে মূল্যবান কাগজের সাশ্রয় করা উচিত : বিশ্লষক তাজুল ইসলাম
.............................................................................................
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন এই মুহুর্তে বাংলাদেশের জন্য সময়োপযোগী নয় : বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
.............................................................................................
‘না’ ভোট ব্যবস্থা গণতন্ত্র বিকাশে বড় বাধা : বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
.............................................................................................
বিশ্লষক তাজুল ইসলামের অভিমত : বৈধভাবে গ্যাসের সংযোগ বাড়িয়ে গ্যাসের অপচয়রোধ ও দূর্ণীতিবাজদের টাকার পাহাড় গড়া বন্ধ করা যেত পারে
.............................................................................................
ঢাকা-করাচি সরাসরি বিমান যোগাযোগ : “নির্বিঘ্ন ভ্রমণে জনগণের আহ্বানের উত্তর"
.............................................................................................
কলকাতা প্রেসক্লাবের নিবন্ধন ৬৮ বছর পেরিয়ে- ২
.............................................................................................
কলকাতা প্রেসক্লাবের ৬৮ বছর পেরিয়ে - ১
.............................................................................................
অল্টারনেটিভ (বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা)
.............................................................................................
প্রাথমিক শিক্ষায় উন্নয়নের ধারা
.............................................................................................
প্রত্যাশা: আত্মশুদ্ধির উদ্বোধন
.............................................................................................
গণহত্যার শিকারদের স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস
.............................................................................................
বিনোদনের নামে অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বিরত থাকি
.............................................................................................
ভারত ও বাংলাদেশের উচিত তিস্তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করা
.............................................................................................
ভারত সীমান্তে বেআইনি হত্যাকাণ্ড: বিচার চাইছে বাংলাদেশি পরিবার
.............................................................................................
নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে?
.............................................................................................
বন্ধুত্বই গড়বে সম্প্রীতির বাংলাদেশ
.............................................................................................
বানালিটির কুফল এবং এর পরে যা হয়
.............................................................................................
মধ্যবিত্তের কান্নার শেষ কোথায়?
.............................................................................................
চীন বিশ্বের কাঠগোড়ায়: উইঘুরদের বলপূর্বক বন্ধাকরনের ফলে জন্মহারে হ্রাস
.............................................................................................
`ডা. মুরাদ আপনি দোষী থাকবেন দুনিয়া ও আখেরাতে`
.............................................................................................
বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ‘বঙ্গমাতা’
.............................................................................................
দেশে করোনার ২য় পর্যায়ের ধাক্কা আসতে পারে : ডা. বেনজির
.............................................................................................
মানুষের বিবেকবোধ কোথায়?
.............................................................................................
মার্কিন বিশেষজ্ঞের বার্তা, ১৯১৮ সালের ফ্লু`র মতোই মারণরূপ নিতে পারে করোনা
.............................................................................................
কোরবানির গরু অনলাইনে কিনবেন বাণিজ্যমন্ত্রী
.............................................................................................
এক মাসে চার বলিষ্ঠ নেতা হারাল আ.লীগ
.............................................................................................
টেস্ট কমায় বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের
.............................................................................................
পুষ্টি সঠিকভাবে না পেলে ওষুধ আর হাসপাতাল দিয়ে কাজ হবে না
.............................................................................................
করোনা ভাইরাস: সরকারী ত্রাণ, প্রণোদনা ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন
.............................................................................................
প্রতিনিয়ত শক্তিশালী হচ্ছে করোনাভাইরাস: গবেষণা
.............................................................................................
করোনা সন্দেহ হলে কী করবেন, কোথায় যাবেন?
.............................................................................................
গর্ভবতী মায়েরা প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হবেন না
.............................................................................................
‘১৩ ঘণ্টায় ১০ মিনিট’ অলৌকিকভাবে বাঁচার বর্ণনা দিলেন সুমন
.............................................................................................
করোনার আরো তিনটি নতুন উপসর্গের সন্ধান পেয়েছে সিডিসি
.............................................................................................
নিজে সচেতন হোন, অন্যকেও সচেতন হতে বলুন : হানিফ সংকেত
.............................................................................................
মহামারী রোধে মহানবী (সা.) এর নির্দেশনা অত্যন্ত কার্যকর: মার্কিন গবেষক
.............................................................................................
করোনা প্রতিরোধে বিনামূল্যে মাস্ক দিতে হাইকোর্টে ব্যারিস্টার মওদুদের পরামর্শ
.............................................................................................
করোনা নিয়ে মোদির পরামর্শ
.............................................................................................
বিদেশিদের ঘরে থাকার পরামর্শ আইইডিসিআরের
.............................................................................................
ঢাকা প্রেসক্লাব দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন ২০২০-২১ : সভাপতি- মোঃ মাসুদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক- মোঃ মোসলেহ উদ্দিন বাচ্চু
.............................................................................................
আগামী সপ্তাহ থেকে অনলাইন পোর্টালের নিবন্ধন শুরু : তথ্যমন্ত্রী
.............................................................................................
সাংবাদিক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আর নেই
.............................................................................................
ক্র্যাবের সাবেক সভাপতি লাবলু আর নেই
.............................................................................................
দুদককে ক্ষমা চাইতে হবে, সাংবাদিকদের বিক্ষোভ
.............................................................................................
নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড নিয়ে নোয়াবের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে বিএফইউজে-ডিইউজে
.............................................................................................
ডিআরইউ`র দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত
.............................................................................................
৬৫ বারের মতো পেছালো সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন
.............................................................................................
বাসস`র সাবেক বিশেষ সংবাদদাতা মুজিবুল হকের ইন্তেকাল
.............................................................................................
নবম ওয়েজ বোর্ড কার্যকর ও গণমাধ্যম কর্মী আইন পাসের দাবি সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের
.............................................................................................

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : মো: তাজুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়: ২১৯ ফকিরের ফুল (১ম লেন, ৩য় তলা), মতিঝিল, ঢাকা- ১০০০ থেকে প্রকাশিত । ফোন: ০২-৭১৯৩৮৭৮ মোবাইল: ০১৮৩৪৮৯৮৫০৪, ০১৭২০০৯০৫১৪
Web: www.dailyasiabani.com ই-মেইল: [email protected]
   All Right Reserved By www.dailyasiabani.com Dynamic Scale BD