জুমার বয়ানের সময় নামাজ পড়া যাবে কি?
মিয়া আবদুল হান্নান : জুমার খুতবা জুমার নামাজের অংশ এবং তা শোনা ওয়াজিব। খুতবাপূর্ব বাংলা বয়ান জুমার অংশ নয় এবং তা শোনা ওয়াজিবও নয়। তাই জুমার বয়ানের সময় নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ নয়। তবে এটা যেহেতু যেহেতু দীনী আলোচনা তাই এ সময় কথা বলা বা ব্যক্তিগত কাজ করাসহ মজলিসের আদব পরিপন্থী যে কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
জুমার মূল খুতবা জুমার নামাজের অংশ। যেসব কাজ নামাজের মধ্যে হারাম, তা খুতবা চলাকালীন সময়ও হারাম। খুতবার সময় সুন্নত-নফল নামাজ পড়া বৈধ নয়। রাসুল (সা.) খুতবার সময় চুপ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে কেউ কথা বললে তাকে ‘চুপ কর’ বলতেও নিষেধ করেছেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন,
জুমার দিন খুতবার সময় যদি তুমি তোমার সঙ্গীকে বলো, চুপ কর, তাহলেও তুমি অনর্থক কথা বললে। (সহিহ বুখারি) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন,
যে জুমার দিন ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় কথা বলে সে কিতাবের বোঝা বহনকারী গাধার মতো। (মুসনাদে আহমদ)
|
মিয়া আবদুল হান্নান : জুমার খুতবা জুমার নামাজের অংশ এবং তা শোনা ওয়াজিব। খুতবাপূর্ব বাংলা বয়ান জুমার অংশ নয় এবং তা শোনা ওয়াজিবও নয়। তাই জুমার বয়ানের সময় নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ নয়। তবে এটা যেহেতু যেহেতু দীনী আলোচনা তাই এ সময় কথা বলা বা ব্যক্তিগত কাজ করাসহ মজলিসের আদব পরিপন্থী যে কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
জুমার মূল খুতবা জুমার নামাজের অংশ। যেসব কাজ নামাজের মধ্যে হারাম, তা খুতবা চলাকালীন সময়ও হারাম। খুতবার সময় সুন্নত-নফল নামাজ পড়া বৈধ নয়। রাসুল (সা.) খুতবার সময় চুপ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে কেউ কথা বললে তাকে ‘চুপ কর’ বলতেও নিষেধ করেছেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন,
জুমার দিন খুতবার সময় যদি তুমি তোমার সঙ্গীকে বলো, চুপ কর, তাহলেও তুমি অনর্থক কথা বললে। (সহিহ বুখারি) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন,
যে জুমার দিন ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় কথা বলে সে কিতাবের বোঝা বহনকারী গাধার মতো। (মুসনাদে আহমদ)
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : জাগতিক চিকিৎসা ও ওষুধে বাইরে আল্লাহর শক্তি ছাড়া অন্য কোনো অদৃশ্য বা অলৌকিক শক্তিকে ক্ষমতাবান মনে করা, সুস্থতার কারণ মনে করা, আল্লাহর সমান শক্তিমান মনে করা শিরক। তাবিজকে সত্তাগত শক্তিতে প্রভাব সৃষ্টিকারী হিসেবে বিশ্বাস করা, শিরকি শব্দ, কুফরি কালাম বা অনর্থক লেখা সম্বলিত তাবিজ ব্যবহার করা নাজায়েজ। এরকম তাবিজ সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তাবিজ ঝোলাল, সে শিরক করল। (মুসনাদে আহমদ)
ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন নবি করিম (সা.) এক ব্যক্তির হাতে চুড়ি দেখে বললেন, এটা কি? তিনি বললেন, এটা এক প্রকার হাড়। রাসুল (সা.) বললেন, এটা খুলে ফেল, এটা শুধু তোমার দুর্বলতাই বাড়াবে। যদি এটা বাঁধা অবস্থায় তোমার মৃত্যু হয়, তবে কখনো তুমি সফল হবে না। (ইবনে মাজা)
তবে কেউ যদি কোরআন-হাদিসে বর্ণিত দোয়া, আয়াত, সুরা, জিকির, সঠিক অর্থবহ কোনো দোয়া লিখে শরীরে ধারণ করে, তাহলে তা অবৈধ হবে না।
শিরক আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণ্য ও জঘন্যতম পাপ। কোররআনে শিরকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জুলুম বলা হয়েছে এবং বিভিন্ন আয়াতে বারবার শিরক থেকে বেঁচে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করলেও শিরক ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ বলেন,
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। এবং যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে এক মহাপাপ করে। (সুরা নিসা : ৪৮)
শিরক যারা করবে, তাদের জন্য জান্নাত হারাম ঘোষণা করে আল্লাহ বলেন,
আর যে আল্লাহর সাথে শরিক করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। (সুরা মায়েদা: ৭২)
তাই আমাদের কাজে বা বিশ্বাসে কোনোভাবেই যেন শিরক স্থান না পায় এ ব্যাপারে খুব সাবধান থাকা কর্তব্য।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : জুমার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ওয়াজিব আমল হলো জুমার নামাজ। জুমার নামাজের গুরুত্ব বোঝাতে রাসুল (সা.) বলেছেন,
যে ব্যক্তি অলসতা করে ধারাবাহিকভাবে তিনটি জুমা ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তা’আলা তার অন্তরে মোহর মেরে দেন। (সুনানে নাসাঈ: ১৩৭২)
অর্থাৎ সেই অন্তর হেদায়াত পাওয়ার অযোগ্য হয়ে যায়।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুল (সা.) জুমার জামাত সংশ্লিষ্ট ৪টি আমলের নির্দেশনা দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
জুমার দিন যে ব্যক্তি মাথা ধুয়ে গোসল করে, উত্তম আতর ব্যবহার করে এবং তার উত্তম পোশাক পরিধান করে, তারপর নামাজের উদ্দেশে বের হয়, মসজিদে গিয়ে কাতার ডিঙিয়ে সামনে যায় না, মনোযোগের সাথে ইমামের খুতবা শোনে, ওই ব্যক্তির এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ ইবনে খুজায়মা: ১৪০৩)
এ হাদিস থেকে যে আমলগুলোর নির্দেশনা পাওয়া যায়
১. জুমার জামাতে উপস্থিত হওয়ার জন্য পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ভালোভাবে গোসল করতে হবে।
২. সাধ্যের মধ্যে সর্বোত্তম সুগন্ধী ব্যবহার করে এবং উত্তম পোশাক পরিধান করে জুমার জামাতে যেতে হবে।
৩. জুমার জামাতে দ্রুত উপস্থিত হতে হবে এবং কারো কষ্টের কারণ হওয়া যাবে না। কাতার ডিঙিয়ে, মানুষের ঘাড়ের ওপর দিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা বা অন্যদের জন্য কষ্টকর যে কোনো কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. জুমার খুতবার সময় কথা বলা যাবে না। মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনতে হবে।
জুমার দিন এ সহজ ৪টি আমল করলে আশা করা যায় আল্লাহ আমাদের দশ দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : মুসলমানদের জন্য জুমার দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল (সা.) বলেছেন,
নিশ্চয় আল্লাহ এ দিনটিকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। তাই যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (সুনানে ইবনে মাজা: ৮৩)
জুমার দিনকে ইদুল ফিতর ও ইদুল আজহার দিনের চেয়েও মহান উল্লেখ করে আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন,
জুমার দিন দিনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। জুমার দিন আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে মহান দিন। এমনকি এ দিন আল্লাহ তাআলার কাছে ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর তথা ইসলামের দুই ঈদের দিন থেকেও মহান। জুমার দিনের বিশেষ পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ দিন আল্লাহ তাআলা আদমকে (আ.) সৃষ্টি করেছেন। এ দিনই তাঁকে জান্নাত থেকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এ দিনেই আল্লাহ তাঁকে মৃত্যু দান করেছেন। জুমার দিন একটা সময় আছে, যে সময় বান্দা আল্লাহর কাছে যা চাইবে আল্লাহ তাআলা তাকে তা-ই দান করবেন, যদি না সে হারাম কোনো বিষয়ের প্রার্থনা করে। কেয়ামতও সংঘটিত হবে জুমার দিন। জুমার দিন নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতারা কেয়ামতের আশঙ্কায় ভীত-সন্ত্রস্ত থাকেন। উদ্বিগ্ন থাকে পৃথিবী, আকাশ, বাতাস, পাহাড়, পর্বত, সাগর সবকিছু। (মুসনাদে আহমাদ: ১৫৫৪৮, সুনানে ইবনে মাজা: ১০৮৪১)
জুমার দিন অন্যান্য ফরজ ও নফল আমলসমূহের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ এই ৪টি আমল করুন
১. উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে দ্রুত মসজিদে যান, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনুন এবং জুমার নামাজ আদায় করুন। রসূল সা. বলেন,
যে ব্যাক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর মসজিদে যায়, মানুষকে ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া থেকে বিরত থাকে, তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ নামাজ আদায় করে, ইমাম যখন খুতবার জন্য বের হন তখন চুপ থাকে, তার এ জুমা এবং পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি: ৯১০)
২. বেশি বেশি দরূদ পাঠ করুন। রাসুল (সা.) বলেছেন,
তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমআর দিন। সুতরাং ঐ দিন তোমরা আমার উপর অধিকমাত্রায় দরূদ পড়। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩৩)
৩. আল্লাহর কাছে দু’আ করুন। জুমার দিনের যে কোনো একটি সময় আল্লাহ তা’আলা দু’আ করার সাথে সাথেই কবুল করে নেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একদিন রাসুল সা. জুমার উল্লেখ করে বলেছেন,
এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্র কাছে কিছু চায়, তা হলে তিনি তাকে অবশ্যই তা দান করে থাকেন। রাসুল (সা.) হাত দিয়ে ইশারা করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। (সহিহ বুখারি: ৯৩৫)
৪. সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করুন। জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন,
যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার তার জন্য পরবর্তী জুমা পর্যন্ত নুর হবে। (সহিহুল জামি: ৬৪৭০)
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : জুমার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ওয়াজিব আমল হলো জুমার নামাজ। জুমার সালাতের গুরুত্ব বোঝাতে রাসুল (সা.) বলেছেন,
যে ব্যক্তি অলসতা করে ধারাবাহিকভাবে তিনটি জুমার জামাতে অনুপস্থিত থাকে, আল্লাহ তা’আলা তার অন্তরে মোহর মেরে দেন। (সুনানে নাসাঈ: ১৩৭২) অর্থাৎ সেই অন্তর হেদায়াত পাওয়ার অযোগ্য হয়ে যায়।
তবে সবার ওপর জুমা আদায় করা ওয়াজিব নয়। জুমার নামাজ ওয়াজিব মুসলমান প্রাপ্তবয়স্ক, জ্ঞানসম্পন্ন (যিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন নন) মুকিম (যিনি মুসাফির নন) স্বাধীন (যিনি ক্রিতদাস নন) নগর বা লোকালয়ের অধিবাসী পুরুষদের ওপর; যার এমন কোনো গ্রহণযোগ্য অসুবিধা, অসুস্থতা বা বার্ধক্য নেই যে কারণে তিনি মসজিদে উপস্থিত হতে ও জুমা আদায় করতে অক্ষম।
জুমার সময় যারা চলন্ত নৌকা, ফেরি, লঞ্চ ইত্যাদিতে অবস্থান করবে, তারা লোকলয় বা শহরের বাইরে রয়েছেন বলে গণ্য হবে। তাদের ওপর জুমা ওয়াজিব নয়। চলমান লঞ্জ বা ফেরিতে জুমা আদায় করলে তা শুদ্ধ হবে না। কারণ জুমার নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য একটি শর্ত হলো, জুমা হতে হবে কোনো শহরে বা এমন কোনো গ্রামে যেখানে শহরের সুযোগ সুবিধা থাকে। যেমন, নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র পাওয়া যায় এমন বাজার থাকে, রাস্তা-ঘাটের সুব্যবস্থা থাকে এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাও থাকে ইত্যাদি। চলন্ত লঞ্চ বা ফেরিতে এসব শর্ত পাওয়া যায় না।
তবে লঞ্চ বা ফেরি যদি এমন কোনো জায়গায় নোঙর করা থাকে যেখানে জুমা আদায় করার শর্তগুলো পাওয়া যায়, তাহলে ওই লঞ্চ বা ফেরিতে জুমা আদায় করা যাবে। কারণ নোঙর করা অবস্থায় লঞ্চ ও ফেরির হুকুম ওই পাড় সংলগ্ন জায়গার মতোই।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : ইসলামে জুমার দিন সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। ইদুল ফিতর ও ইদুল আজহার দিনের চেয়েও জুমার দিনের মর্যাদা ও গুরুত্ব বেশি। রাসুল (সা.) বলেছেন,
আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন,
নিশ্চয় আল্লাহ এ দিনটিকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। তাই যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (সুনানে ইবনে মাজা: ৮৩)
জুমার দিনের বহু বৈশিষ্ট্যের একটি হলো, এ দিন আল্লাহ তাআলার দরবারে মানুষের আমলসমূহ পেশ করা হয়। আবু হোরায়রার (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) জুমার দিনের এ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বলেছেন, আল্লাহ তাআলা এ দিন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের আমল কবুল করেন না। রাসুল (সা.) বলেন,
জুমার রাতে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে আদম সন্তানের আমল আল্লাহর সামনে পেশ করা হয়। তখন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের আমল কবুল করা হয় না। (মুসনাদে আহমাদ: ১০২৭২)
ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা অর্থাৎ আত্মীয় স্বজনদের প্রতি নিজের কর্তব্যগুলো পালন করা, তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ফরজ। বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লিখিত হাদিসটি থেকে বোঝা যায় জুমার দিন বিশেষভাবে আত্মীয়দের খোঁজখবর নেওয়া উচিত। কারো সাথে ঝগড়া বা মনোমালিন্য থাকলে মিটিয়ে ফেলা উচিত।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : আল্লাহর নবি মুসার (আ.) অনুসারীরা- যারা মুসার (আ.) পর প্রেরিত আল্লাহর দুজন নবি ইসা (আ.) ও মুহাম্মাদকে (সা.) নবি হিসেবে স্বীকার করে না, তারা ‘ইহুদি’ নামে পরিচিত। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহর নবি মুসার (সা.) অনুসারীদের ইহুদি বলা হয়েছে। যেমন সুরা বাকারায় ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ বলেছেন,
আর ইহুদিরা বলে, নাসারাদের কোন ভিত্তি নেই আর নাসারারা বলে ইহুদিদের কোন ভিত্তি নেই। অথচ তারা কিতাব পাঠ করে। এভাবেই, যারা কিছু জানে না, তারা তাদের কথার মতো কথা বলে। যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে তাদের মধ্যে ফয়সালা করবেন। (সুরা বাকারা: ১১৩)
ইহুদিদের নাম ইহুদি কেন হলো এ ব্যাপারে আলি (রা.) ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা.) বক্তব্য পাওয়া যায়। তাবরানি ও ইবনে আবি হাতেম এ দুজন সাহাবি থেকে বর্ণনা করেছেন, ইহুদিদের নাম ইহুদি হওয়ার কারণ হলো তুর পাহাড়ে নবি মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়ায় বলেছিলেন, ‘ইন্না হুদনা ইলাইক’ অর্থাৎ আমরা তোমার কাছে প্রত্যাবর্তন করলাম বা তওবা করলাম।
কোরআনে একটি ঘটনার বিবরণে মুসার (আ.) এ বক্তব্য উল্লিখিত হয়েছে। ঘটনাটি হলো, একবার মুসা (আ.) বনি ইসরাইলের সত্তর জনের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে তুর পাহাড়ে যান। সেখানে ওই দলটি আল্লাহকে সরাসরি দেখার দাবি করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি নেমে আসে এবং তারা সবাই মারা যায়। কোরআনে ঘটনাটির বর্ণনা এসেছে এভাবে,
আর মুসা নিজের জাতি থেকে সত্তর জন লোককে আমার নির্ধারিত স্থানের জন্য নির্বাচন করল। তারপর যখন ভূমিকম্প তাদেরকে পাকড়াও করলো তখন সে বললো, ‘হে আমার রব, আপনি চাইলে আগেও এদের ধ্বংস করতে পারতেন এবং আমাকেও। আমাদের মধ্যে নির্বোধরা যা করেছে তার কারণে কি আমাদেরকে ধ্বংস করবেন? এটাতো আপনার পরীক্ষা ছাড়া কিছু না। এর মাধ্যমে যাকে চান আপনি পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে চান হিদায়াত দান করেন। আপনি আমাদের অভিভাবক। সুতরাং আমাদের ক্ষমা করে দিন এবং আপনি উত্তম ক্ষমাশীল। আর আমাদের জন্য এ দুনিয়াতে ও আখিরাতে কল্যাণ লিখে দিন। নিশ্চয়ই আমরা আপনার দিকে প্রত্যাবর্তন করেছি।’ তিনি বললেন, আমি যাকে চাই তাকে আমার আযাব দেই। আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে। সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং জাকাত প্রদান করে আর যারা আমার আয়াতসমূহের ওপর ইমান আনে। (সুরা আরাফ: ১৫৫, ১৫৬)
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : মুসলমানদের জন্য জুমার দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ এ দিনটিকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তাই যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (সুনানে ইবনে মাজা: ৮৩)
জুমার দিনের বিশেষ মর্যাদার অন্যতম কারণ হলো, এ দিন সৃষ্টিকুলের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে ও ঘটবে। এভাবেও বলা যায় যে জুমার দিনটিকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে আল্লাহ জুমার দিনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন এবং আরও কিছু কাজের জন্য এ দিনটিকে নির্ধারণ করে রেখেছেন। একটি হাদিসে জুমার দিন ঘটিত ও ঘটিতব্য পাঁচটি বিশেষ ঘটনার কথা উল্লেখ করে নবিজি (সা.) বলেন,
জুমার দিন দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। জুমার দিন আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে মহান দিন। এ দিন আল্লাহ তাআলার কাছে ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর তথা ইসলামের দুই ঈদের দিন থেকেও মহান। জুমার দিনের বিশেষ পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ দিন আল্লাহ তাআলা আদমকে (আ.) সৃষ্টি করেছেন। এ দিনই তাকে জান্নাত থেকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এ দিনই আল্লাহ তাকে মৃত্যু দিয়েছেন। জুমার দিন একটা সময় আছে, যে সময় বান্দা আল্লাহর কাছে যা চাইবে আল্লাহ তাআলা তাকে তা-ই দান করবেন, যদি না সে হারাম কোনো কিছু প্রার্থনা করে। কেয়ামতও সংঘটিত হবে জুমার দিন। জুমার দিন নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতারা কেয়ামতের আশঙ্কায় ভীত-সন্ত্রস্ত থাকেন। উদ্বিগ্ন থাকে পৃথিবী, আকাশ, বাতাস, পাহাড়, পর্বত, সাগর সবকিছু। (মুসনাদে আহমাদ: ১৫৫৪৮, সুনানে ইবনে মাজা: ১০৮৪১)
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। এ দিন আল্লাহ তাআলা আদমকে (আ.) সৃষ্টি করেছেন। তাকে দুনিয়াতে নামানো হয়েছে এ দিন। তার মৃত্যুও হয়েছে এ দিন। তার তাওবা কবুল হয়েছে এ দিন। এ দিনই কেয়ামত সংঘটিত হবে। মানুষ ও জিন ছাড়া এমন কোনো প্রাণী নেই, যা কেয়ামত কায়েম হওয়ার ভয়ে জুমার দিন ভোর থেকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত চিৎকার করতে থাকে না। জুমার দিন একটা সময় আছে, কোনো মুসলিম যদি সে সময় নামায আদায় করে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে তা দান করবেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১০৪৬, সুনানে নাসাঈ: ১৪৩০)
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : জুমার দিন জুমার নামাজ আদায় করা ওয়াজিব প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, জ্ঞানসম্পন্ন (যিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন নন) মুকিম (যিনি মুসাফির নন) স্বাধীন (যিনি ক্রিতদাস নন) নগর বা লোকালয়ের অধিবাসী মুসলমান পুরুষদের ওপর; যার এমন কোনো গ্রহণযোগ্য অসুবিধা, অসুস্থতা বা বার্ধক্য নেই যে কারণে তিনি মসজিদে উপস্থিত হতে ও জুমা আদায় করতে অক্ষম। রাসুল সা. বলেছেন,
জুমার নামাজ প্রত্যেক মুসলিমের উপর জামাআতের সাথে আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু তা চার প্রকার লোকের উপর ওয়াজিব নয়; ক্রীতদাস, মহিলা, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তি। (সুনান আবু দাউদ: ১০৬৭)
ইমাম দারাকুতনি ও বায়হাকির বর্ণনায় এসেছে,
আল্লাহ ও পরকালের ওপর যাদের ইমান আছে, তাদের ওপর জুমা ওয়াজিব। তবে অসুস্থ, মুসাফির, নারী, শিশু ও ক্রিতদাসদের ওপর জুমা ওয়াজিব নয়।
জুমার দুই রাকাত নামাজের পাশাপাশি জুমা পূর্ববর্তী ইমামের দুটি খুতবা শোনাও ওয়াজিব। রাসুলুল্লাহ এর নির্দেশনা হলো, জুমার দিন যত দ্রুত সম্ভব মসজিদে চলে যেতে হবে। মসজিদে গিয়ে যদি দেখা যায়, ইমাম খুতবার জন্য বসেননি, তাহলে নফল নামাজ পড়বে। ইমাম খুতবার জন্য বসে গেলে খুতবা শুনবে। রাসুল (সা.) বলেন,
মুসলমান ব্যক্তি যদি জুমার দিন গোসল করে মসজিদে যায়, কাউকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকে, ইমাম বের হয়নি দেখলে যে পরিমাণ ইচ্ছা নামায পড়ে, ইমাম বের হয়ে থাকলে বসে যায় ও চুপ থেকে খুতবা শোনে ও ইমামের সাথে নামাজ আদায় করে, তাহলে ওই জুমায়ই এ ব্যক্তির জীবনের সব গুনাহ যদি মাফ না-ও হয়, এটা তো অবশ্যই হবে যে, পরবর্তী জুমা পর্যন্ত তা তার জন্য কাফফারা হয়ে যাবে। (মুসনাদে আহমদ: ২০৭২১)
আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যাক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর মসজিদে যায়, মানুষকে ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া থেকে বিরত থাকে, তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ নামাজ আদায় করে, ইমাম যখন খুতবার জন্য বের হন তখন চুপ থাকে, তার এ জুমা এবং পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি: ৯১০)
তাই জুমার আগের সুন্নাত পড়ার জন্য খুতবার আগেই মসজিদে উপস্থিত হতে হবে। খুতবা শুরু হয়ে গেলে খুতবা শোনা ওয়াজিব। তখন আর সুন্নাত পড়া যাবে না।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) বলেন, একদিন ফজরের নামাজের পর রাসুল (সা.) আমাদেরকে অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী নসীহত করলেন। সবার চোখ অশ্রুসিক্ত হলো, হৃদয় ভীত-শঙ্কিত হলো। এক লোক বলে উঠলো, এটি বিদায়ী নসীহতের মতো শোনাচ্ছে! তাই বলুন আপনি আমাদের থেকে কী অঙ্গীকার নেবেন? রাসুল (সা.) বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি অর্জনের ওসিয়ত করছি, নেতার কথা মান্য করা ও তার আনুগত্যের নির্দেশ দিচ্ছি, যদি সে হাবশী দাসও হয়। তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে তারা অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশিদিনের সুন্নাত আকড়ে ধরো, মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্ত করে কামড়ে ধরো। আর সব নবঅবিস্কৃত বিষয় থেকে বেঁচে থাকো, সব নবআবিস্কৃতি বিষয়ই বিদআত আর সব বিদআতই পথভ্রষ্টতা। (সুনানে তিরমিজি, সুনানে আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)
এ হাদিস থেকে যে শিক্ষাগুলো আমরা পাই
১. এ হাদিস থেকে বোঝা যায় শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো নবিজির (সা.) সুন্নাত বা আদর্শ। নবুয়তপ্রাপ্তির পর থেকে নবিজিরি (সা.) প্রতিটি কথা, কাজ ও সম্মতি আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। নবিজির (সা.) সাহাবায়ে কেরামও (রা.) আমাদের জন্য আদর্শ। তাদের কথা ও কাজও অনুসরণীয়।
২. যে হোদায়াতপ্রাপ্ত খলিফারা নবিজির (সা.) আদর্শ ও কর্মপন্থা অনুযায়ী তাদের জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, তাদেরও রাসুল (সা.) আদর্শ ঘোষণা করেছেন। তাদের আদর্শ ও কর্মপন্থাকেও নিজের আদর্শ ও কর্মপন্থার মতো অনুসরণীয় গণ্য করেছেন। তাদেরকে ‘রাশেদিন’ ঘোষণা করেছেন। ‘রুশদ’ অর্থ ভালো ও কল্যাণের পথ। এ পথের পথিক তারাই যারা আল্লাহর এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছে,
এটিই আমার সরল পথ। তোমরা এই পথ অনুসরণ করো এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে সেগুলো তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দূরে সরিয়ে নেবে। আল্লাহ তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিচ্ছেন, যেন তোমরা সতর্ক হও। (সুরা আনআম: ১৫৩)
হাদিসের এ নির্দেশনা থেকে বোঝা যায় সালাফে সালেহ বা নেক পূর্বপুরুষদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত, তাদের পথ ও কর্মপন্থা অনুসরণ করা উচিত।
৩. এ হাদিস থেকে বোঝা যায় শরিয়তের উৎসগুলোকে সম্মানের সাথে গ্রহণ করা এবং শক্তভাবে আঁকড়ে ধরা আমাদের কর্তব্য। রাসুল (সা.) শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার ওপর অনেক বেশি গুরুত্বারোপ করেছেন। শেষে বলেছেন, ‘মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরো!’ তাই সব কাজে সুন্নাত অনুসরণকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নাই। বিদআতের ব্যাপারে নমনীয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : বাংলাদেশের আকাশে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। এজন্য আগামী রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে রবিউল আউয়াল মাস গণনা শুরু হবে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর (১২ রবিউল আউয়াল) বৃহস্পতিবার পালিত হবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.)।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার।
সভায় সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, আবহাওয়া অধিদপ্তর, মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৫ হিজরির রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। এজন্য শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সফর মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হচ্ছে। রোববার থেকে রবিউল আউয়াল মাস গণনা শুরু হবে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর (১২ রবিউল আউয়াল) দেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) পালিত হবে।
আরবি ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’র শাব্দিক অর্থ- মহানবীর (স.) জন্মদিনের আনন্দোৎসব। মুসলমানরা ১২ রবিউল আউয়াল মহানবী হয়রত মুহম্মদ (স.) এর জন্ম ও মৃত্যু (ওফাত) দিবস হিসেবে পালন করে। কারণ এ দিনেই রাসুলে করীম (স.) ইন্তেকালও করেন। সেই হিসেবে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ১২ রবিউল আউয়াল। বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবীর (স.) দিন সাধারণ ছুটি।
মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের হিজরি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে মক্কার কুরাইশ বংশে জন্ম নেন। আরবের মরুপ্রান্তরে শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রচার শুরু করেন তিনি। তার আবির্ভাব এবং ইসলাম ধর্মের প্রচার সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
দীর্ঘ ২৩ বছর ইসলাম ধর্ম প্রচার করে ৬৩ বছর বয়সে ১২ রবিউল আউয়ালই মহানবী (স.) মৃত্যুবরণ করেন। দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) হিসেবে সারা পৃথিবীর মুসলমানরা পালন করে থাকে।
ঈদে মিলাদুন্নবীর (স.) দিনে মসজিদ ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মহা. বশিরুল আলম, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মহা. আসাদুর রহমান, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন, বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের সহকারী প্রশাসক মো. শাহরিয়ার হক, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, লালবাগ শাহী জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুহাম্মদ নিয়ামতুল্লাহ, সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার আল-কোরআন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ, চকবাজার শাহী জামে মসজিদের খতিব মুফতি শেখ নাঈম রেজওয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান :
রাসুল (সা.) বলেছেন,
যে ব্যক্তি প্রতিদিন ও রাতে বারো রাকাত নামাজ আদায় করবে, তার জন্যে জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। (সহিহ মুসলিম: ৭২৮)
এ হাদিস সম্পর্কিত ৩টি শিক্ষা:
১. হাদিসে উল্লিখিত ১২ রাকাত নামাজ আমাদের কাছে সুন্নাতে মুআক্কাদা নামে পরিচিত। সুনানে তিরমিজির বর্ণনায় বিস্তারিত উল্লিখিত রয়েছে ওই ১২ রাকাত নামাজ কখন কীভাবে আদায় করতে হবে। নবিজি (সা.) বলেছেন,
চার রাকাত জোহরের ফরজের আগে, দুই রাকাত জোহরের ফরজের পরে, দুই রাকাত মাগরিবের ফরজের পরে, দুই রাকাত ইশার ফরজের পরে আর দুই রাকাত ফজরের ফরজের আগে আদায় করতে হবে। (সুনানে তিরমিজি: ৪১৫)
প্রতিদিন ফরজ নামাজের সাথে এই সুন্নাত নামাজগুলো আদায় করলে হাদিসে উল্লিখিত সওয়াব ও নেয়ামত আমরা লাভ করতে পারবো।
২. এই ১২ রাকাত নামাজ নিয়মিত আদায় করা উচিত। কখনও ছুটে গেলে পরে পড়ে নেওয়া উচিত। যেমন কেউ যদি ফজরের ফরজ নামাজের আগে দুই রাকাত সুন্নাত না পড়তে পারে, তাহলে ফরজ নামাজের পরে পড়ে নেবে অথবা সূর্য ওঠার পর পড়ে নেবে, জোহরের ফরজ নামাজের আগের চার রাকাত সুন্নাত ফরজের আগে পড়তে না পারলে পরে পড়বে।
৩. সাহাবি ও তাবেয়িরা এই ১২ রাকাত নামাজকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। কখনও এই নামাজ ছাড়তেন না। হাদিসটির বর্ণনাকারী সাহাবি উম্মুল মুমিনিন উম্মে হাবিবা (রা.) বলেন, আমি রাসুলের (রা.) কাছ থেকে এই কথা শোনার পর কখনও এই ১২ রাকাত নামাজ ছাড়িনি। তার ভাই আনবাসা ইবনে আবু সুফিয়ান যিনি উম্মে হাবিবা থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, তিনিও বলেন, আমি উম্মে হাবিবার কাছে এই হাদিসটি শোনার পর কখনও এই ১২ রাকাত নামাজ ছাড়িনি। হাদিসটির বর্ণনাকারী আমর ইবনে আওস ও নোমান ইবনে সালেমও একই কথা বলেছেন। সুতরাং আমাদেরও এই ১২ রাকাত নামাজকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ও নিয়মিত আদায় করা উচিত।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : জুমা অর্থ সম্মিলন বা জমায়েত। জুমা শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো কিছু সংখ্যাক মানুষের জমায়েত। কিছু সংখ্যাক মানুষ একসাথে জামাতবদ্ধ হয়েই জুমার নামাজ আদায় করতে হয়। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ একা আদায় করা গেলেও জুমার নামাজ একা আদায় করা যায় না। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় জুমার নামাজ কোনো জামে মসজিদে আদায় করাই বাঞ্চনীয়।
তবে কখনও যদি বিশেষ প্রয়োজন দেখা দেয়, যেমন কোনো বড় সমাবেশ বা মাহফিলে যদি বহু সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হয়, যাদের জুমা আদায় করার মতো জায়গা আশপাশের জামে মসজিদগুলোতে নেই, তাহলে তারা জুমার শর্তগুলো পূরণ করে সমাবেশস্থলে বা কোনো মাঠেও জুমার নামাজ আদায় করতে পারেন।
যে সব শর্ত পূরণ করলে জুমা শুদ্ধ হয়
১. জুমার সময় হওয়া জুমার নামাজ আদায়ের নির্ধারিত সময় হলো জুমার দিনের জোহরের সময়। জুমার দিন জোহরের সময়ের মধ্যেই জুমা আদায় করতে হবে।
২. জুমার আগে খুতবা দেওয়া নামাজের আগে খুতবা দেওয়া জুমা শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত। খুতবা ছাড়া জুমা শুদ্ধ হয় না। জুমার খুতবায় আল্লাহর প্রশংসা করা হয়, শরিয়তের বিধি বিধান বর্ণনা করা হয় এবং নবিজি (সা.), তার সাহাবায়ে কেরাম ও মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা হয়।
৩. জামাতবদ্ধ হয়ে জুমা আদায় করা এই শর্তটির কথা আগেই উল্লেখ করেছি। জুমা শুদ্ধ হওয়ার জন্য জামাত অত্যাবশ্যক এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই। তবে জামাত কত বড় হতে হবে এ নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। ইমাম আবু হানিফার (রহ.) মতে ইমাম ছাড়া কমপক্ষে তিনজন মুসল্লি থাকলে জুমা শুদ্ধ হবে। ইমাম মালেকের (রহ.) মতে জুমা শুদ্ধ হওয়ার জন্য ইমামের সাথে কমপক্ষে বারোজন পুরুষ মুসল্লি থাকতে হবে। ইমাম শাফেঈ ও আহমদের (রহ,) মতে জুমা শুদ্ধ হওয়ার জন্য কমপক্ষে চল্লিশজন মুসল্লি থাকতে হবে। চল্লিশজনের জামাত ছাড়া জুমা শুদ্ধ হবে না।
৪. জুমার জামাত সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া জুমার জামাত সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া জুমা শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত। এ কারণে সবার জন্য উন্মুক্ত নয় এমন জায়গায় জুমা শুদ্ধ হয় না। যেমন জেলখানা মসজিদ, অফিসের নামাজ ঘর, কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য বিশেষায়িত মসজিদ ইত্যাদি।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : জুমার দিনের একটি বিশেষত্ব হলো এই দিনে এমন কিছু মুহূর্ত রয়েছে, যখন আল্লাহর কাছে যে কোনো দোয়া কবুল হয়। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন,
জুমার দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, কোনো মুসলিম বান্দা যদি এ সময় নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্র কাছে কিছু চায়, তা হলে তিনি তাকে অবশ্যই তা দান করেন। (সহিহ বুখারি: ৯৩৫)
জুমার দিন বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। বিশেষত জুমার খুতবা শুরু হওয়ার পর থেকে জুমার নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত এবং আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত দোয়া কবুলের সময়; এ সময় দোয়ায় নিমগ্ন থাকা উচিত।
আল্লাহর শেখানো যে ৪টি দোয়া জুমার দিন পাঠ করতে পারেন:
১. কোরআনে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন-
হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন। (সুরা বাকারা: ২০১)
২. দ্বীনের ওপর অবিচলতা ও পথভ্রষ্টতা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে আল্লাহ আমাদের দোয়া করতে শিখিয়েছেন,
হে আমাদের রব, আপনি হেদায়াত দেওয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (সুরা আলে ইমরান: ৮)
৩. জীবনের সব গুনাহ ক্ষমা এবং উত্তম অবস্থায় ওফাত চেয়ে আল্লাহ আমাদের দোয়া করতে শিখিয়েছেন,
হে আমাদের রব আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং বিদূরিত করুন আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি, আর আমাদেরকে মৃত্যু দিন নেককারদের সাথে। (সুরা আলে ইমরান: ১৯৩)
৪. নিজের পাশাপাশি নিজের বাবা-মা, ভবিষ্যত প্রজন্ম এবং সব মুমিনদের কল্যাণ প্রার্থনা করে আল্লাহ দোয়া করতে শিখিয়েছেন,
হে আমার রব, আমাকে সালাত কায়েমকারী বানান এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও, হে আমাদের রব, আর আমার দো‘আ কবূল করুন। হে আমাদের রব, যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। (সুরা ইবরাহিম: ৪০, ৪১)
জুমার দিন আল্লাহর শেখানো বরকতময় এ ৪টি দোয়া বেশি বেশি পাঠ করুন। হতে পারে হাদিসে বর্ণিত দোয়া কবুলের ওই বিশেষ সময়ে আপনার দোয়া আল্লাহর কাছে পৌঁছবে এবং তিনি কবুল করে নেবেন।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : আল্লাহ তাআলা এ মহাবিশ্বের স্রষ্টা। এই পৃথিবী, আকাশ, গ্রহ-নক্ষত্র সবই তার সৃষ্টি। এগুলোর মধ্যে আল্লাহর বহু নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, যা তার অস্তিত্বের প্রমাণ বহন করছে। আল্লাহ বলেন,
নিশ্চয়ই নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টিতে এবং দিন ও রাতের পরিবর্তনে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে। (সুরা আলে ইমরান: ১৯০)
চাঁদ আল্লাহর এক বিরাট সৃষ্টি ও নিদর্শন। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ চাঁদের কথা বলেছেন। চাঁদ ও সূর্যকে নিজের সৃষ্টি ও নিদর্শন উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন,
আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চাঁদ। তোমরা না সূর্যকে সিজদা করবে, না চাঁদকে। আর তোমরা আল্লাহকে সিজদা কর যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত কর। (সুরা হা মিম সিজদা: ৩৭)
চাঁদ ও সূর্য যেহেতু আল্লাহর একটি বিরাট ও দীপ্তিময় সৃষ্টি, মানুষ যেন ভুল করে চাঁদের উপাসনা শুরু না করে এ ব্যাপারেও সাবধান করা হয়েছে এ আয়াতে। এছাড়া কোরআনের অন্য দুটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা চাঁদের শপথ করেছেন। আল্লাহ বলেন,
কখনো নয়, চাঁদের শপথ (সুরা মুদদাসসির: ৩২) আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,
আর চাঁদের কসম, যখন তা পরিপূর্ণ হয়। (সুরা ইনশিকাক: ১৮)
চাঁদকে কোরআনে বলা হয়েছে নুর বা আলো এবং মানুষের জন্য মাওয়াকিত বা ক্যালেন্ডার। আল্লাহ চাঁদের জন্য বিভিন্ন মঞ্জিল নির্ধারণ করেছেন যেন মানুষ বছরের গণনা ও সময়ের হিসাব করতে পারে। আল্লাহ বলেন,
তিনিই সূর্যকে করেছেন দীপ্তিময় এবং চাঁদকে আলোকময় আর তার জন্য নির্ধারণ করেছেন বিভিন্ন মঞ্জিল, যাতে তোমরা জানতে পার বছরের গণনা ও সময়ের হিসাব। আল্লাহ এগুলো অবশ্যই যথার্থভাবে সৃষ্টি করেছেন। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। (সুরা ইউনুস: ৫)
চাঁদ সূর্যসহ সব গ্রহ-নক্ষত্র আল্লাহর নির্দেশে পরিচালিত হয়। আল্লাহ এগুলো মানুষের সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন। আল্লাহ বলেন,
নিশ্চয় তোমাদের রব আসমানসমূহ ও জমিন ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। তারপর আরশে উঠেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন। প্রত্যেকটি একে অপরকে দ্রুত অনুসরণ করে। আর তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চাঁদ ও তারকারাজি, যা তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। জেনে রাখ, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই। আল্লাহ মহান, যিনি সকল সৃষ্টির রব। (সুরা আরাফ: ৫৪)
কেয়ামতের দিবসে যখন মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন চাঁদও আল্লাহর নির্দেশে জ্যোতিহীন, নিষ্প্রভ হয়ে পড়বে। আল্লাহ বলেন,
মানুষ প্রশ্ন করে, কবে কেয়ামতের দিন? যখন চক্ষু হতচকিত হবে, চাঁদ কিরণহীন হবে আর চাঁদ ও সূর্যকে একত্র করা হবে, সেদিন মানুষ বলবে, আজ পালানোর জায়গা কোথায়? (সুরা কিয়ামাহ: ৬-১০)।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : তিনটি আমলের সওয়াব অপরিসীম; বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে এই আমলগুলোর জন্য অপরিমিত সওয়াবের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
১. ক্ষমা: ক্ষমা আল্লাহর প্রিয় ও পছন্দনীয় কাজ। আল্লাহ নিজে ক্ষমাশীল; ক্ষমার মহত্ব তিনি বান্দাদের মধ্যেও দেখতে চান। আল্লাহ বলেন,
আর মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই; তবে যে ক্ষমা করে ও আপস করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে; নিশ্চয় তিনি অত্যাচারীদের পছন্দ করেন না। (সুরা শুরা: ৪০)
অর্থাৎ কেউ যদি কারও প্রতি অন্যায় করে, তার অধিকার আছে তাকে অন্যায়ের সমপরিমাণ শাস্তি দেওয়ার, কিন্তু যে ক্ষমা করে দেবে, তার প্রতিদান আল্লাহ দেবেন। আর কোনো অবস্থাতেই বাড়াবাড়ি বা সীমালঙ্ঘন করা যাবে না। আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।
২. ধৈর্য: বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করা, আল্লাহর ওপর ভরসা করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে ধৈর্যশীলদের মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। ধৈর্যশীলদের অপরিসীম সওয়াব দানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আল্লাহ বলেন,
বল, ‘হে আমার মু’মিন বান্দাগণ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। যারা এই দুনিয়াতে কল্যাণকর কাজ করে, তাদের জন্যে আছে কল্যাণ। আর আল্লাহর জমিন প্রশস্ত, ধৈর্যশীলদের তো অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে। (সূরা যুমার: ১০)
অর্থাৎ পৃথিবীতে বান্দাদের কৃত সব কাজের অনুরূপ প্রতিদান দেওয়া হবে আর ধৈর্যশীলদের দেওয়া হবে অপরিমিত পুরস্কার।
৩. রোজা: রোজা ফজিলতপূর্ণ আমল। শুধু ফরজ রোজা অর্থাৎ রমজানের রোজাই নয়, নফল রোজার ফজিলতও অনেক। ফরজ রোজা তো অবশ্যই রাখতে হবে, পাশাপাশি আমাদের বেশি বেশি নফল রোজা রাখার চেষ্টা করা উচিত। রোজার অপরিসীম সওয়াবের কথা বর্ণনা করে নবিজি সা. বলেন,
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, রোজা ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তাঁর নিজের জন্য, কিন্তু রোজা আমার জন্য, তাই আমিই এর প্রতিদান দেব। রোজা ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন রোজা পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। কেউ যদি তাঁকে গালি দেয় অথবা তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি রোজাদার। যার কবজায় মুহাম্মদের প্রাণ, তাঁর শপথ! রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ্র নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও সুগন্ধিপূর্ণ। রোজাদারের জন্য রয়েছে দুটি আনন্দের মুহূর্ত। যখন সে ইফতার করে, সে আনন্দিত হয় এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন রোজার বিনিময়ে সে আনন্দিত হবে। (সহিহ বুখারি: ১৯০৪)
আসুন আল্লাহর প্রিয় এ তিনটি কাজ বেশি বেশি করি। মানুষের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করি, কেউ অন্যায় করলে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ক্ষমা করি ও সমঝোতা করে নেই, বিপদে-আপদে আল্লাহর ওপর ভরসা করি ও ধৈর্য ধারণ করি এবং সুযোগ পেলেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সওয়াবের নিয়তে রোজা রাখি। রমজানের সবগুলো রোজা রাখার পাশাপাশি প্রতি মাসে অন্তত তিনটি নফল রোজা রাখি।
|
|
|
|
|
|
|