ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস বয়স্ক মানুষটি যোগ্য ব্যক্তিকে সম্মান করতে শিখি....
মিয়া আবদুল হান্নান : মুহাম্মদ ইউনূস (জন্ম: ২৮ জুন, ১৯৪০)চট্টগ্রামের হাটহাজারির কাপ্তাই সড়কের বাথুয়া গ্রামে একটি বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। একজন সামাজিক উদ্যোক্তা, সমাজসেবক ও নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।তিনি ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুদ্রঋণ ও ক্ষুদ্রবিত্ত ধারণার প্রেরণার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং ২০১০ সালে কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেলসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস সেই সাতজন ব্যক্তির একজন যারা নোবেল শান্তি পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন বাংলার ইতিহাসে গত ৯০ বছরে জন্ম নেয়া একমাত্র গ্লোবাল সেলিব্রেটি হলেন প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস। শতকরা ৮৩% লোকই জানেন না কে ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীতে সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার নোবেল, সেটা নিশ্চয়ই জানেন?
সম্মানসূচক হিসেবে নোবেলের পরে কোন পুরস্কারের অবস্থান তা কি জানেন? সম্মানসূচকে, ১.নোবেল ২.অ্যামেরিকার প্রসিডেন্সিয়াল এওয়ার্ড ৩.মার্কিন কংগ্রেশনাল এওয়ার্ড পৃথিবীর ইতিহাসে উপরের ৩ টা পুরস্কারই জিতেছেন এমন মানুষ আছে বা ছিলেন ১২ জন!বুঝতেই পারছেন পরের লাইনটা কি হবে, হ্যা, সেই ১২ জনের একজন প্রফেসর ড.মোহাম্মদ ইউনুস। মেসিকে নিশ্চয়ই চিনেন! যদি বলি এই লিওনেল মেসি লাইনে দাড়িয়ে ছিলেন প্রফেসর ডা ইউনুসের জন্য,বিশ্বাস হয়,না হলেও সত্য! অলিম্পিক গেমস` পৃথিবীর সম্মানজনক প্রতিযোগিতার একটি। আর অলিম্পিকে সবচেয়ে সম্মানিত মেহমান হলেন মশাল বাহক, জাপানে অনুষ্ঠিত ২০২০ অলিম্পিকে মশাল বাহক ছিলেন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুস বর্তমানে বিশ্বের লিডিং ইন্টালেকচুয়ালের যেকোনো তালিকায় টপ ১০ এর ভিতরে থাকেন ডা.ইউনুস। মুসলিম বিশ্বে নোবেল বিজয়ী ইউনুসের বিকল্প খুজে পাওয়া টা খুবি কঠিন,কিন্তু তিনি আমাদের বাংলাদেশের! এদেশে আর এমন ইউনুস জন্মাবে কিনা আজও সন্দেহ! ১. মাইক্রোসফটের বিল গেটস নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে প্রফেসর ইউনুসকে পুরো সিলিকন ভ্যালি শহর দেখিয়েছিলেন। ২. কোর্ট-কাছাড়ির ৮ তলার এজলাশে তাঁকে যখনই হাজিরা দিতে হত সেসময় কোর্ট বিল্ডিং এর লিফট বন্ধ করে দেয়া হত। ৮২ বছরের অশিতিপর এই আসামীকে প্রতিবারই হেঁটে হেঁটে ৮ তলায় যেতে হত। এবং এই ঘটনা নাকি ৪০ বারের মত ঘটেছে। সারা পৃথিবীর ১০৭টা ইউনিভার্সিটিতে মুহাম্মদ ইউনূস সেন্টার আছে। ইউনিভার্সিটিগুলো নিজেদের উদ্যোগে এটা করেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে তাঁর মাইক্রো-ফাইনান্স। যেটা তাঁকে এবং তাঁর গ্রামীন ব্যাংকে নোবেল শান্তি পুরষ্কার এনে দিয়েছিল। ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশ্রীভাবে `সুদখোর` ঢাকা হয় বারবার। মজার ব্যাপার হচ্ছে- মুহাম্মদ ইউনূসকে যারা পছন্দ করেন তাদের বেশীরভাগও জানেন না, মুহাম্মদ ইউনূসের সুদের ব্যবসা নাই। গ্রামীণ ব্যাংক তার প্রতিষ্ঠিত হলেও গ্রামীন ব্যাংকে তাঁর এক টাকার মালিকানাও নাই, শেয়ারও নাই। কখনোই ছিল না। জিনিসটা আপনার-আমার কাছে আশ্চর্যজনক মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই সত্যি। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মাইক্রো-ফাইনান্সের ধারণার মূল ভিত্তিই হচ্ছে এটা।এই ব্যবসার কেউ মালিক হতে পারবে না। সম্পূর্ণ নন-প্রফিট তথা অলাভজনক। এটাকে বলে সামাজিক ব্যবসা। নির্দিষ্ট কোনো মালিক নাই। জনগণই এর মালিক।
বাইর থেকে অনুদানের টাকা এনে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ড মুহাম্মদ ইউনূস। নিজে এটি প্রতিষ্ঠা করলেও প্রতিষ্ঠানে তার এক পয়সার মালিকানাও রাখেননি। বরং এর ২৫% মালিকানা সরকারের, বাকি মালিকানা গরীব মানুষের। নিজের প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকে ড মুহাম্মদ ইউনূস মাত্র ৩০০ ডলার বেতনে চাকরী করতেন।
তিনি যে নিজের কোনো শেয়ার রাখেননি তা না, কোম্পানীকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন যাতে কেউ এর একক মালিক হতে না পারে। কোম্পানী অধ্যাদেশ ২৮ ধারা অনুযায়ী তিনি এটি রেজিস্ট্রেশন করেন।শুধু যে গ্রামীন ব্যাংকে তিনি মালিকানা রাখেননি তা কিন্তু না। জর্জ সরোস, টেলিনরদের এনে তিনি গ্রামীন টেলিকম প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর কথায় টেলিনর বাংলাদেশে আসে। তাঁর কথায় তাঁর বিলিয়নিয়ার বন্ধুরা গরীবদের উন্নতির জন্য ফান্ড দেয়। তিনি গ্রামীন টেলিকম প্রতিষ্ঠা করেন। সেটাও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবেই। অনেকেই জানেন না গ্রামীন টেলিকমকে নন ফর প্রফিট কোম্পানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন ড মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানেও তিনি নিজের জন্য ১% মালিকানাও রাখেননি। তিনি চাইলে ইজিলি ১০-১৫ পার্সেন্ট মালিকানা নিজের জন্য রেখে দিতে পারতেন। অথচ লাভের এক টাকাও যাতে নিজের কাছে না আসে, সেটা নিশ্চিত করেন তিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সরকার নিয়ন্ত্রিত গ্রামীণ ব্যাংকে এখনো সুদের হার বাংলাদেশে সর্বনিম্ন। অথচ স্বাভাবিকভাবে আপনার মনে হবে গ্রামীন ব্যাংকের মত সুদ বোধহয় কেউ নেয় না। আর নিশ্চয় এই টাকায় প্রফিট করেন ড ইউনূস! আসলে আমাদের দেশের মানুষ এসব কল্পনাও করতে পারেন না, একজন মানুষ ব্যবসা করবে অথচ সেখান থেকে নিজে কোনো লাভ করবে না। এমন কথা আমরা ভাবতেই পারিনা। আমরা ভাবতে পারি কেবল টাকা কামানোর কথা। যেমনভাবে ড মুহাম্মদ ইউনূস বলেন- টাকা কামানোতে আছে সুখশান্তি, অন্যের উপকারে আছে প্রশান্তি। ওনার ভাষায় `নিজের জন্য টাকা কামানো হয়তো হ্যাপিনেস, অন্যের উপকার হচ্ছে সুপার হ্যাপিনেস।` মুহাম্মদ ইউনূস মনে করেন, সবাই এককভাবে সম্পত্তির মালিক হতে থাকলে গরীব আরো গরীব হয়ে যাবে, ধনী আরো ধনী হবে। ফলে বিশ্বব্যবস্থা অচল হয়ে পড়বে। এই বিশ্বাস থেকেই ওনি সব ননপ্রফিট বা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান তৈরী করে গেছেন, নিজের কোনো মালিকানা রাখেননি।
এরকমটা কি আপনি ভাবতে পারেন? আপনি বাংলাদেশের যেকোনো কোম্পানী দেখেন, তাদের সব নিজেদের মালিকানা। কোম্পানীর কথা বাদ দেন, এনজিও ব্র্যাক দেখেন! মালিকানা ফজলে হাসান আবেদের পরিবারের। বড় বড় পদে পরিবারের সদস্যরা আছে। কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূস সেটা করেননি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীতে নিজের বা পরিবারের কাউকে রাখেননি। অথচ ড মুহাম্মদ ইউনূস চাইলে এসব ব্যবসায় নিজের মালিকানা রেখে ইজিলি বিলিয়নিয়ার হয়ে যেতে পারতেন। খুব ইজিলি। তাঁর প্রায় সব বন্ধুবান্ধব বিলিয়নিয়ার, মাল্টি বিলিয়নিয়ার। তিনি সেদিকে যাননি। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে ড মুহাম্মদ ইউনূসের আয়ের উৎস কী? আমি নিশ্চিত, এটাও অনেকে জানেন না। ড মুহাম্মদ ইউনূস হচ্ছেন পৃথিবীর ওয়ান অব দ্যা হায়েস্ট পেইড স্পীকার। স্পীচ দেয়ার জন্য ওনাকে টাকা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ওনার বক্তব্য শোনার জন্য খরচ করতে হয় ৭৫ হাজার থেকে ১ লাখ ডলার মত। কখনো আরো বেশী।
বিশ্বের নামীদামী প্রতিষ্ঠান গুলো ওনাকে নিয়ে যান ওনার বক্তব্য শুনতে। ওনাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনার জন্যও ডাকা হয়।২০২৪ সালের ফ্রান্সে অনুষ্ঠিতব্য প্যারিস অলিম্পিকের আয়োজক কমিটির ৩ জনের একজন হচ্ছে মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে আরেকজন প্রেসিডেন্ট ম্যাঁখ্রো।
২০২৬ ইতালী অলিম্পিকের জন্য ইতালীয়ানরা ওনাকে পাওয়ার জন্য তদবির করছে। যাতে ওনি পরামর্শ দেন। এদিকে আমরা মনে করি গ্রামীন ব্যাংক আর গ্রামীন টেলিকমের মত ওনার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানী থেকে টাকা পান তিনি। যেন গ্রামীন ব্যাংকের সুদগুলো সরকার খায় না, ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস খায়। এরা কখনো প্রকাশ্যে স্বীকারই করে না যে, এগুলোতে তার ০.০১% শেয়ারও নাই।
ওনি একটা বিশ্ববিদ্যালয় করতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশে, কিন্তু অনুমতি পাননি। একটা আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হতো। ওনি বললে পৃথিবীর সেরা সেরা প্রফেসররা সেখানে এসে ক্লাস নিয়ে যেতো। ওনি ডাকলে এমনকি বিল গেটস কিংবা আমেরিকান প্রেসিডেন্টও তাঁর ইউনিভার্সিটিতে স্পীচ দিতে চলে আসতো। কিন্তু সেটা হতে দেয়া হয়নি। তাঁকে ইউনিভার্সিটি করতে দেয়া হয়নি।
ড মুহাম্মদ ইউনূসকে যত জানবেন, আপনার মনে হবে- দেশ এবং জাতি হিসেবে আমরা ড মুহাম্মদ ইউনূসকে ডিজার্ভই করিনা। একটা প্রশ্ন করি, আপনি কি জানতেন মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীনব্যাংক কিংবা গ্রামীন টেলিকমের মত ওনার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীতে নিজের জন্য কোনো শেয়ার রাখেননি? আসুন যোগ্য ব্যক্তিকে সম্মান করতে শিখি..
|
মিয়া আবদুল হান্নান : মুহাম্মদ ইউনূস (জন্ম: ২৮ জুন, ১৯৪০)চট্টগ্রামের হাটহাজারির কাপ্তাই সড়কের বাথুয়া গ্রামে একটি বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। একজন সামাজিক উদ্যোক্তা, সমাজসেবক ও নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।তিনি ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুদ্রঋণ ও ক্ষুদ্রবিত্ত ধারণার প্রেরণার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং ২০১০ সালে কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেলসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস সেই সাতজন ব্যক্তির একজন যারা নোবেল শান্তি পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন বাংলার ইতিহাসে গত ৯০ বছরে জন্ম নেয়া একমাত্র গ্লোবাল সেলিব্রেটি হলেন প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস। শতকরা ৮৩% লোকই জানেন না কে ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীতে সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার নোবেল, সেটা নিশ্চয়ই জানেন?
সম্মানসূচক হিসেবে নোবেলের পরে কোন পুরস্কারের অবস্থান তা কি জানেন? সম্মানসূচকে, ১.নোবেল ২.অ্যামেরিকার প্রসিডেন্সিয়াল এওয়ার্ড ৩.মার্কিন কংগ্রেশনাল এওয়ার্ড পৃথিবীর ইতিহাসে উপরের ৩ টা পুরস্কারই জিতেছেন এমন মানুষ আছে বা ছিলেন ১২ জন!বুঝতেই পারছেন পরের লাইনটা কি হবে, হ্যা, সেই ১২ জনের একজন প্রফেসর ড.মোহাম্মদ ইউনুস। মেসিকে নিশ্চয়ই চিনেন! যদি বলি এই লিওনেল মেসি লাইনে দাড়িয়ে ছিলেন প্রফেসর ডা ইউনুসের জন্য,বিশ্বাস হয়,না হলেও সত্য! অলিম্পিক গেমস` পৃথিবীর সম্মানজনক প্রতিযোগিতার একটি। আর অলিম্পিকে সবচেয়ে সম্মানিত মেহমান হলেন মশাল বাহক, জাপানে অনুষ্ঠিত ২০২০ অলিম্পিকে মশাল বাহক ছিলেন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুস বর্তমানে বিশ্বের লিডিং ইন্টালেকচুয়ালের যেকোনো তালিকায় টপ ১০ এর ভিতরে থাকেন ডা.ইউনুস। মুসলিম বিশ্বে নোবেল বিজয়ী ইউনুসের বিকল্প খুজে পাওয়া টা খুবি কঠিন,কিন্তু তিনি আমাদের বাংলাদেশের! এদেশে আর এমন ইউনুস জন্মাবে কিনা আজও সন্দেহ! ১. মাইক্রোসফটের বিল গেটস নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে প্রফেসর ইউনুসকে পুরো সিলিকন ভ্যালি শহর দেখিয়েছিলেন। ২. কোর্ট-কাছাড়ির ৮ তলার এজলাশে তাঁকে যখনই হাজিরা দিতে হত সেসময় কোর্ট বিল্ডিং এর লিফট বন্ধ করে দেয়া হত। ৮২ বছরের অশিতিপর এই আসামীকে প্রতিবারই হেঁটে হেঁটে ৮ তলায় যেতে হত। এবং এই ঘটনা নাকি ৪০ বারের মত ঘটেছে। সারা পৃথিবীর ১০৭টা ইউনিভার্সিটিতে মুহাম্মদ ইউনূস সেন্টার আছে। ইউনিভার্সিটিগুলো নিজেদের উদ্যোগে এটা করেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে তাঁর মাইক্রো-ফাইনান্স। যেটা তাঁকে এবং তাঁর গ্রামীন ব্যাংকে নোবেল শান্তি পুরষ্কার এনে দিয়েছিল। ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশ্রীভাবে `সুদখোর` ঢাকা হয় বারবার। মজার ব্যাপার হচ্ছে- মুহাম্মদ ইউনূসকে যারা পছন্দ করেন তাদের বেশীরভাগও জানেন না, মুহাম্মদ ইউনূসের সুদের ব্যবসা নাই। গ্রামীণ ব্যাংক তার প্রতিষ্ঠিত হলেও গ্রামীন ব্যাংকে তাঁর এক টাকার মালিকানাও নাই, শেয়ারও নাই। কখনোই ছিল না। জিনিসটা আপনার-আমার কাছে আশ্চর্যজনক মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই সত্যি। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মাইক্রো-ফাইনান্সের ধারণার মূল ভিত্তিই হচ্ছে এটা।এই ব্যবসার কেউ মালিক হতে পারবে না। সম্পূর্ণ নন-প্রফিট তথা অলাভজনক। এটাকে বলে সামাজিক ব্যবসা। নির্দিষ্ট কোনো মালিক নাই। জনগণই এর মালিক।
বাইর থেকে অনুদানের টাকা এনে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ড মুহাম্মদ ইউনূস। নিজে এটি প্রতিষ্ঠা করলেও প্রতিষ্ঠানে তার এক পয়সার মালিকানাও রাখেননি। বরং এর ২৫% মালিকানা সরকারের, বাকি মালিকানা গরীব মানুষের। নিজের প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকে ড মুহাম্মদ ইউনূস মাত্র ৩০০ ডলার বেতনে চাকরী করতেন।
তিনি যে নিজের কোনো শেয়ার রাখেননি তা না, কোম্পানীকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন যাতে কেউ এর একক মালিক হতে না পারে। কোম্পানী অধ্যাদেশ ২৮ ধারা অনুযায়ী তিনি এটি রেজিস্ট্রেশন করেন।শুধু যে গ্রামীন ব্যাংকে তিনি মালিকানা রাখেননি তা কিন্তু না। জর্জ সরোস, টেলিনরদের এনে তিনি গ্রামীন টেলিকম প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর কথায় টেলিনর বাংলাদেশে আসে। তাঁর কথায় তাঁর বিলিয়নিয়ার বন্ধুরা গরীবদের উন্নতির জন্য ফান্ড দেয়। তিনি গ্রামীন টেলিকম প্রতিষ্ঠা করেন। সেটাও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবেই। অনেকেই জানেন না গ্রামীন টেলিকমকে নন ফর প্রফিট কোম্পানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন ড মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানেও তিনি নিজের জন্য ১% মালিকানাও রাখেননি। তিনি চাইলে ইজিলি ১০-১৫ পার্সেন্ট মালিকানা নিজের জন্য রেখে দিতে পারতেন। অথচ লাভের এক টাকাও যাতে নিজের কাছে না আসে, সেটা নিশ্চিত করেন তিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সরকার নিয়ন্ত্রিত গ্রামীণ ব্যাংকে এখনো সুদের হার বাংলাদেশে সর্বনিম্ন। অথচ স্বাভাবিকভাবে আপনার মনে হবে গ্রামীন ব্যাংকের মত সুদ বোধহয় কেউ নেয় না। আর নিশ্চয় এই টাকায় প্রফিট করেন ড ইউনূস! আসলে আমাদের দেশের মানুষ এসব কল্পনাও করতে পারেন না, একজন মানুষ ব্যবসা করবে অথচ সেখান থেকে নিজে কোনো লাভ করবে না। এমন কথা আমরা ভাবতেই পারিনা। আমরা ভাবতে পারি কেবল টাকা কামানোর কথা। যেমনভাবে ড মুহাম্মদ ইউনূস বলেন- টাকা কামানোতে আছে সুখশান্তি, অন্যের উপকারে আছে প্রশান্তি। ওনার ভাষায় `নিজের জন্য টাকা কামানো হয়তো হ্যাপিনেস, অন্যের উপকার হচ্ছে সুপার হ্যাপিনেস।` মুহাম্মদ ইউনূস মনে করেন, সবাই এককভাবে সম্পত্তির মালিক হতে থাকলে গরীব আরো গরীব হয়ে যাবে, ধনী আরো ধনী হবে। ফলে বিশ্বব্যবস্থা অচল হয়ে পড়বে। এই বিশ্বাস থেকেই ওনি সব ননপ্রফিট বা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান তৈরী করে গেছেন, নিজের কোনো মালিকানা রাখেননি।
এরকমটা কি আপনি ভাবতে পারেন? আপনি বাংলাদেশের যেকোনো কোম্পানী দেখেন, তাদের সব নিজেদের মালিকানা। কোম্পানীর কথা বাদ দেন, এনজিও ব্র্যাক দেখেন! মালিকানা ফজলে হাসান আবেদের পরিবারের। বড় বড় পদে পরিবারের সদস্যরা আছে। কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূস সেটা করেননি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীতে নিজের বা পরিবারের কাউকে রাখেননি। অথচ ড মুহাম্মদ ইউনূস চাইলে এসব ব্যবসায় নিজের মালিকানা রেখে ইজিলি বিলিয়নিয়ার হয়ে যেতে পারতেন। খুব ইজিলি। তাঁর প্রায় সব বন্ধুবান্ধব বিলিয়নিয়ার, মাল্টি বিলিয়নিয়ার। তিনি সেদিকে যাননি। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে ড মুহাম্মদ ইউনূসের আয়ের উৎস কী? আমি নিশ্চিত, এটাও অনেকে জানেন না। ড মুহাম্মদ ইউনূস হচ্ছেন পৃথিবীর ওয়ান অব দ্যা হায়েস্ট পেইড স্পীকার। স্পীচ দেয়ার জন্য ওনাকে টাকা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ওনার বক্তব্য শোনার জন্য খরচ করতে হয় ৭৫ হাজার থেকে ১ লাখ ডলার মত। কখনো আরো বেশী।
বিশ্বের নামীদামী প্রতিষ্ঠান গুলো ওনাকে নিয়ে যান ওনার বক্তব্য শুনতে। ওনাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনার জন্যও ডাকা হয়।২০২৪ সালের ফ্রান্সে অনুষ্ঠিতব্য প্যারিস অলিম্পিকের আয়োজক কমিটির ৩ জনের একজন হচ্ছে মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে আরেকজন প্রেসিডেন্ট ম্যাঁখ্রো।
২০২৬ ইতালী অলিম্পিকের জন্য ইতালীয়ানরা ওনাকে পাওয়ার জন্য তদবির করছে। যাতে ওনি পরামর্শ দেন। এদিকে আমরা মনে করি গ্রামীন ব্যাংক আর গ্রামীন টেলিকমের মত ওনার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানী থেকে টাকা পান তিনি। যেন গ্রামীন ব্যাংকের সুদগুলো সরকার খায় না, ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস খায়। এরা কখনো প্রকাশ্যে স্বীকারই করে না যে, এগুলোতে তার ০.০১% শেয়ারও নাই।
ওনি একটা বিশ্ববিদ্যালয় করতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশে, কিন্তু অনুমতি পাননি। একটা আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হতো। ওনি বললে পৃথিবীর সেরা সেরা প্রফেসররা সেখানে এসে ক্লাস নিয়ে যেতো। ওনি ডাকলে এমনকি বিল গেটস কিংবা আমেরিকান প্রেসিডেন্টও তাঁর ইউনিভার্সিটিতে স্পীচ দিতে চলে আসতো। কিন্তু সেটা হতে দেয়া হয়নি। তাঁকে ইউনিভার্সিটি করতে দেয়া হয়নি।
ড মুহাম্মদ ইউনূসকে যত জানবেন, আপনার মনে হবে- দেশ এবং জাতি হিসেবে আমরা ড মুহাম্মদ ইউনূসকে ডিজার্ভই করিনা। একটা প্রশ্ন করি, আপনি কি জানতেন মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীনব্যাংক কিংবা গ্রামীন টেলিকমের মত ওনার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীতে নিজের জন্য কোনো শেয়ার রাখেননি? আসুন যোগ্য ব্যক্তিকে সম্মান করতে শিখি..
|
|
|
|
প্রতি বছর অক্টোবরের প্রথম সোমবার সারাদেশে এই দিবসটি পালিত হয়। ১৯৮৫ সালে এই দিনটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। বিশ্ব জুড়ে সব মানুষের নিরাপদ ও মানসম্মত বাসস্থান নিশ্চিতের সচেতনতা বাড়াতে ১৯৮৬ সাল থেকে এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে। এই বছরও অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে।
“আশ্রয় আমার অধিকার” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ১৯৮৬ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে প্রথম বিশ্ব বসতি দিবস পালন করা হয়। ১৯৮৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট ৩৬টি প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করা হয়েছে। এ বছর তুরস্কের বালিকেসিরে “বৈষম্য হ্রাসের অঙ্গিকার করি, সবার জন্য টেকসই নগর গড়ি’’ প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করা হবে। এই প্রতিপাদ্য বিষয়ের লক্ষ্য হলো Triple ‘C’ Crises: Covid-19, Climate Change, Conflict এর কারণে নগরায়নের বৈষম্য ও Vulnerabilities গুলো চিহ্নিত করে যথাযথ কাযক্রম গ্রহণ।
২০২২ সালের তিনটি অগ্রাধিকারের প্রথমটি হল সবার জন্য পর্যাপ্ত আবাসন সরবারহ। দ্বিতীয় অগ্রাধিকারে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে জলবায়ু সমাধানে অবদানকারী হিসেবে শহরগুলির মূল ভুমিকাকে সম্বোধন করা এবং ২০২২-২০২৩ এর তৃতীয় অগ্রাধিকার হল টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা স্থানীয়করণ।
আমাদের সংবিধানের ১৬ নং অনুচ্ছেদে এর ১৮(ক) উপঅনুচ্ছেদেও নগর এবং গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য দুর করার কথা উল্লেখ আছে।
নগরায়ন আজকের বিশ্বের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা এবং প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আসে। শহরগুলি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের কেন্দ্রস্থল। এই ক্ষেত্রে পরিবেশগত, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অসুবিধা নানান প্রতিবন্ধকতার মূল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জাতিসংঘ কর্তৃক ২০১৬ সালে নতুন আরবান এজেন্ডা গৃহীত হওয়ার সাথে সাথে সারা বিশ্বে জাতীয় এবং পৌর সরকারগুলি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য- ১১ (SDG-11) অর্জনের জন্য একটি রূপান্তরমূলক পথে যাত্রা শুরু করেছে।
কক্সবাজার বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলির মধ্যে একটি। কক্সবাজার শহরে বিশ্ব বসতি দিবসের লক্ষ্যগুলি সফলভাবে পুরণ করার বিভিন্ন সম্ভাবনা রয়েছে। উপকুলীয় শহর হিসেবে Cox’s Bazar এর ক্ষেত্রে কিছু ভিন্ন মাত্রা আছে। শহরটি Climate related impact এর Ground Zero| অপরদিকে কক্সবাজারে প্রায় ১.২০ মিলিয়ন রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ায় এখানকার জনসংখ্যার ঘনত্ব জাতীয় গড়ের প্রায় ৩/৪ গুণ। এ কারণে এখানে বিভিন্ন জায়গায় অপরিকল্পিত আবাসন গড়ে উঠেছে ও এগুলো বর্ণিত বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে এবং প্রাকৃতিক ইকো-সিস্টেমে একটি বিরাট চাপ সৃষ্টি করছে।
ফলাফল হিসেবে কক্সবাজার বাংলদেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় শহরগুলির মধ্যে একটি, তাই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করার এবং স্থানীয় উপায়গুলি যাচাই করার মাধ্যমে এই অঞ্চল কার্যকরভাবে জলবায়ু সমাধানে অবদান রাখতে পারে। শহরটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা স্থানীয়করণের অবদান রাখার সম্ভাবনা রাখে, ইহা টেকসই পদ্ধতিতে সুনীল অর্থনীতি, মৎস এবং ইকো-ট্যুরিজম খাতের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব। এ বিষয়ে কক্সবাজার স্থানীয় সরকার, বিশেষ করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিশ্ব বসতি দিবসের উদ্দেশ্য পূরণ এবং সঠিক প্রতিফলন নিশ্চিত করার একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করতে পারে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা, জলবায়ু সংকট মোকাবেলার সম্ভাব্য সমাধান বের করা এবং এসডিজি আরও স্থানীয়করণ করা সম্ভব।
কমোডর এম. এন. আবছার (অবঃ) চেয়ারম্যান কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : বাসার পাশের স্কুলে এসএসসি পরীক্ষা চলছে। বাসা থেকে বের হতেই দেখলাম অভিভাবকরা খুব উদ্বিগ্ন অবস্থায় বাচ্চাদের নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হলো দোয়া দরুদও পড়ছে। একটু সামনে গিয়ে বিপরীত চিত্রও লক্ষ্য করলাম।তিনটি ছেলে কোন এক স্কুলের ড্রেস পরে একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকছে। হাতে স্বচ্ছ ফাইলে প্রবেশপত্র দেখা যাচ্ছে। বোঝা গেল ওরাও কিছুক্ষণের মধ্যে পরীক্ষার হলে ঢুকবে। আসলে সিগারেট ফোকার জন্য বিষয়টা বলা না। এই বয়সের ছেলেদের মধ্যে একটু হিরোইজন ভাব থাকে। হয়তো জীবনের একটা পর্যায়ে তাদের জন্য এটা বড় একটা গল্পের খোরাক হবে যে, এসএসসি পরীক্ষার হলে ঢোকার আগেও তারা সিগারেট ফুকেছিল। আর সেই ভাবনা থেকেই হয়তো তারা সেটা করছে। অমন বয়সে বাবার প্যাকেট থেকে সিগারেট চুরি করে বা টাকা চুরি করে সিগারেট কিনে একটু চেখে দেখেনি এমন জন হয়ত খুব কমই আছে।কিন্তু বিষয়টা হলো, জীবনের প্রথম সবচেয়ে বড় পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে সিগারেট ফোকাটাকেই তাঁরা আদর্শ মনে করছে কিনা! যদি ওদের এই বিষয়টা শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ না থেকে অন্য কিছু ঘটে? শঙ্কাটা সেখানেই। ওরা যদি নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে একটু আপডেট ভার্সনে চলে যায় তাহলে তো সর্বনাশ! কোমলমতি এই ছেলেগুলো যদি সিগারেট থেকে মাদকের নেশার জগতে চলে যায়!
থানায় যখন কাজ করতাম তখন দেখেছি অনেক অভিভাবক থানায় গিয়ে তার মাদকাসক্ত সন্তানকে জেলে পুরে রাখা বা সেভ কাস্টডিতে রাখার জন্য অনেক কাকুতি মিনতি করেন। নেশার টাকার জন্য তার ছেলে তাদেরকে মারধর করে, বাইরে চুরি-ছিনতাই করে বলে জানান। ভিতরে পুরে না রাখলে যেকোন সময় তাদের মেরে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করেন। বাবা-মায়ের সেই ভয়াবহ কথাবার্তাগুলো সব সময় চোখের সামনে ভাসে। যে ছেলেগুলোকে এভাবে দেখলাম নিশ্চয়ই তাদের বাবা-মা আছে। তারা কতটুকু সচেতন আমি জানিনা। তবে একটু নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিন্তু অবুঝ ছেলেগুলো যেকোনো সময় বিপদগামী হয়ে যেতে পারে। তখন পুরো পরিবার ভয়ানক বিপদে পড়ে যেতে পারে। এমন আশঙ্কা সত্য না হোক কামনা করি। ওদের জন্য শুভকামনা রইল।
লেখক:- কাজী ওয়াজেদ আলী : পুলিশ কর্মকর্তা। (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত) ৩০ /৯/২০২২
|
|
|
|
বোরহানউদ্দীন ইউসুফ : হামদর্দ একটি ইউনিক বা আক্ষরিক অর্থে অনন্য প্রতিষ্ঠান। শুধু ইউনানী আয়ুর্বেদিক বা ন্যাচারাল মেডিসিনের নেতৃত্ব দানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবেই নয়; এর অনেকগুলো বিশেষত্ব এটিকে অন্যদের চেয়ে আলাদা ও ইউনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।
ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ের মেঘনা সেতু সংলগ্ন গজারিয়ায় ফুলদি নদীর তীরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ। এ ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি ত্রিমাত্রিক জেনারেল হাসপাতাল। বাংলাদেশে একমাত্র এখানেই রয়েছে একই হাসপাতালে অ্যালোপ্যাথিক, ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক পদ্ধতির সমন্বিত চিকিৎসার ত্রিমাত্রিক ব্যবস্থা। নিঃসন্দেহে এটি একটি অনন্য নজির। হাসপাতালটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়াকফ প্রশাসক সাজ্জাদ হোসেন। যেহেতু হামদর্দ একটি ওয়াক্ফ প্রতিষ্ঠান। তাই এ ক্ষেত্রে তাঁর মূল্যায়ন শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয- তাৎপর্যপূর্ণও বটে! তিনি বলেন- দেশে নথিভূক্ত ওয়াক্ফ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৪ হাজারেরও বেশি। এর বাইরেও অনেক ওয়াক্ফ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যে কোন বিবেচনায় সেরা ও অন্যদের জন্য অনুকরণীয় প্রতিষ্ঠান হলো হামদর্দ।
বলছিলাম- হামদর্দ কেন ইউনিক বা অনন্য। বাংলাদেশ ইউনানী ওষুধ শিল্প সমিতির সেমিনারে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ন্যাচারাল মেডিসিনের জগতে একমাত্র হামদর্দ ওষুধের গুণগত মান রক্ষা করে উৎপাদন এমনকি নির্ধারিত এমআরপিতে বিক্রির নজির স্থাপন করেছে। যারা ভাবছে এটা সম্ভব না- তাদের সামনে হামদর্দ একটি বড় দৃষ্টান্ত।
হামদর্দ কেন ইউনিক প্রতিষ্ঠান? কারন এ প্রতিষ্ঠানের পেছনে রয়েছে একজন নিবেদিত প্রাণ আলোকিত ব্যক্তিত্বের বরকতময় হাতের ছোঁয়া। তিনি দায়দেনায় জর্জরিত, লে-অফ ঘোষিত প্রতিষ্ঠানকে কর্মীবান্ধব করে ধীরে ধীরে সাফল্যের চুঁড়ায় নিয়ে আসেন। এ আলোকিত মানুষ এই সেক্টরকে আলোকিত করেন। ইউনানী আয়ুর্বেদিক সেক্টর কিংবা বৃহত্তর স্বাস্থ্য শিক্ষাখাতের কথাই বলি কিংবা শিল্প ও কর্মসংস্থানের কথা বললে ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়ার কথা আসবে। জানা যাবে তার দীপ্তি ছড়ানোর কথা।
|
|
|
|
মোঃ মজিবর রহমান শেখ
২০১৬-২০২০ এর জন্য চীনের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং মেইড ইন চায়না ২০২৫ উদ্যোগ উভয়ই ৫জি কে একটি কৌশলগত উদীয়মান শিল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যার লক্ষ চীনা কোম্পানীগুলো বিশ্ববাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক এবং উদ্ভাবনী হয়ে ওঠা। ফাইভ আইস ইন্টারন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স অ্যালায়েন্সের চার সদস্য- অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং ইউএস চীনের হুয়াওয়ে টেলিকমিউনিকেশন্স যন্ত্রপাতির ব্যবহারকে বিশেষ করে ৫জি নেটওয়ার্কে উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে ঘোষণা করেছে।
জাপানও চীনা সরঞ্জামের ব্যবহারকে ব্যাপকভাবে নিরুৎসাহিত করেছে। ২০১২ সালে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিপোর্ট করেছিল যে, কানাডিয়ান টেলিকম যন্ত্রপাতি সংস্থা নর্টেল নেটওয়ার্কস ২০০০ সালে চীনা হ্যাকারদের দ্বারা ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার মাধ্যমে অনুপ্রবেশের বিষয় ঘটেছে। যা অভ্যন্তরীণ নথিপত্র এবং অন্যান্য মালিকানা তথ্য অ্যাক্সেস করেছিল।
মার্কিন সিনেটর রুবি হুয়াওয়ে এবং জেডটিইকে রাষ্ট্র নির্দেশিত হিসাবে উল্লেখ করেছেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের আমেরিকার ৫জি নেটওয়ার্কগুলিকে দুর্বল ও বিপন্ন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে সতর্ক থাকতে তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- হুয়াওয়ে বাণিজ্য ও গোপনীয়তা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি চুরি করে এবং চীনা সরকার দ্বারা সমর্থিত কৃত্রিমভাবে কম দামের মাধ্যমে বিদেশী প্রতিযোগীতাকে দুর্বল করে।
২০১৮ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে, নিউজিল্যান্ডের গোয়েন্দা সংস্থা গভর্নমেন্ট কমিউকেশন্স সিকিউরিটি ব্যুরো টেলিকমিউকেশন্স কোম্পানি স্পার্ককে তার পরিকল্পিত ৫জি আপগ্রেডে হুয়াওয়ে সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে অবরুদ্ধ করে। তারা দাবি করে যে, এটি একটি উল্লেখযোগ্য নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে। ২০১৮ সালের আগষ্টে অস্ট্রেলিয়াও অনুরুপ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের অভিমত হলো- বাংলাদেশ সরকারের ৫জি প্রযুক্তিতে কোনো চীনা বিনিয়োগের আগে, চীনা কোম্পানিগুলোর সমস্যা বিবেচনা এবং চীনা কোম্পানিগুলোর সাথে নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
লেখক : মোঃ মজিবর রহমান শেখ ০১৭১৭৫৯০৪৪৪
|
|
|
|
মজিবর রহমান শেখ : ভুটানের প্রদীপ চিনা দৃষ্টিভঙ্গির বৈশিষ্ট্য হল ভোটার এবং চীনের মধ্যে সাম্প্রতিক সীমান্ত আলোচনা ভুটানের ক্ষুদ্র হিমালয় রাজ্যের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গির সাধারণ চিনা দ্বৈততা প্রকাশ করেছে। চীনের কুনমিং এ ৬ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত চীন ভুটান সীমানা ইস্যুতে বিশেষজ্ঞ গ্রুপের ১০ তম বৈঠকের পরে জারি করা যৌথ প্রেস রিলিজের শব্দগুলি সন্দেহজনক। চীন ও ভুটানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এর পরিপ্রেক্ষিতে, বিশেষজ্ঞ গ্রুপের বৈঠকটি একটি উষ্ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এটি সীমানা সংক্রান্ত বিষয়ে গভীর ও ফলপ্রসূ আলোচনা করেছে এবং চীন-ভুটান কে দূতগত করার জন্য একটি রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা করেছে। "সীমান্ত সমস্যার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগে উভয়পক্ষ সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থির অবস্থা বজায় রাখতে সম্মত হয়েছে"। বৈঠকে খুব বেশি অর্জন হয়নি। "দুই পক্ষ চীন-ভুটান সীমান্ত আলোচনার ২৫ তম দফা এবং ১১ তম বিশেষজ্ঞ বৈঠকে সম্মত হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে গ্রুপ মিটিং, যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে। তবে, আগস্ট ২০১৬ থেকে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য এটি ছিল দুই দেশের মধ্যে প্রথম বৈঠক। এর মধ্যে, ভুটান সীমান্তে চীনের সাথে দেখা করেনি। ভুটানের রাজা ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জন্য চীনের একজন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর থিম্পু সফরে তাৎপর্যপূর্ণভাবে যখন চিনা মুখপাত্র গ্লোবাল টাইমস দুই দেশের মধ্যে বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীর বৈঠকের বিষয়ে তার প্রতিবেদনে কথা বলেছিল, ভুটানের জাতীয় সংবাদপত্র কুয়েনসেলের অনলাইন সংস্করণ তার প্রতিবেদনে যৌথ প্রেস কমিউনিকের পাঠ্যের বাইরে যায়নি, যা চীন অবশ্যই চাপ প্রয়োগ করেছে। এটা অনুমান করা কঠিন যে বৈঠকটি "উষ্ণ বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে" হয়েছিল যখন মাত্র কয়েক মাস আগে ভুটান পূর্ব ভুটানের সাক্টেং বন্যপ্রাণী অভায়ারণ্যে অভূতপূর্ণ চীনা দাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। সাধারণত চীন একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম বেছে নিয়েছিল ভুটানের পূর্ব অংশে তার দাবি দাখিল করার জন্য যা কখনোই দুই দেশের মধ্যে বিবাদের অংশ ছিল না। ২০২০ সালের জুন মাসে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফোরামের একটি কাউন্সিল সবাই তার দাবির কথা তুলে ধরে, জিইএফ ভুটানকে সাক্টেং অভয়ারণ্যে পরিবেশ সুরক্ষায় সহায়তা প্রদানের বিষয়ে আপত্তি তুলেছিল যে প্রকল্পটি "চীন-ভুটান বিতর্কিত এলাকায় অবস্থিত ছিল" চীন ভুটান সীমান্ত আলোচনার এজেন্ডায়। জিইএফ সভার কার্যবিবরণী তে ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা এবং ভুটানের অন্যান্য কাউন্সিল সদস্যদের আপত্তি যেমন উল্লেখ করা হয়েছে; ভুটান চীনের কাউন্সিল সদস্যের দাবি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। সাকতেং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এবং ভুটানের কূটনৈতিক সম্পর্ক দিল্লিতে চীনা দূতাবাসের মাধ্যমে চীনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা হয়। সীমান্ত ইস্যুতে বিশেষজ্ঞ দলই একমাত্র ফোরাম যেখানে ভুটান ও চীন দ্বিপাক্ষিকভাবে মিলিত হয়। গ্লোবাল টাইমস অফ চায়না- এর দাবি হাস্যকর যে কুনমিং-এ বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীর বৈঠক ভারতকে বিরক্ত করবে কারণ এটি ভুটানের স্বাধীনভাবে চীনের সাথে সীমান্ত বিষয়গুলি পরিচালনা করার ইচ্ছা দেখিয়েছিল। শুরুতে, ১৯৮৪ সাল থেকে ভুটান চীনের সাথে দ্বিপাক্ষিকভাবে সীমান্ত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৪ দফা আলোচনা হয়েছে কোন সমাধান ছাড়াই বরং সমস্যা আরো গভীর হয়েছে। ২০১৭ সালের ডোকলাম ঘটনাটি ভুটানের সাথে চীনা উচ্চ হাতের আচরণের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিল, যার অনুসরণ করে ভুটান প্রায় চার বছর ধরে চীনের সাথে সীমান্ত আলোচনা স্থগিত রাখছে। যদিও চীন ভারতীয় সেনাবাহিনীকে চীনা এলাকায় লংঘন করার জন্য অভিযুক্ত করেছিল, ভুটান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের জারি করা বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয়েছে যে চীন-ই ভুটানের ভূ খ-ে প্রবেশ করেছিল, সেখানে একটি রাস্তা তৈরি করেছিল। ভুটানি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "১৬ জুন ২০১৭- এ, চীনা সেনাবাহিনী ডোকলাম এলাকার ডোকোলা থেকে জোমপেলরিতে ভুটান সেনা শিবির এর দিকে একটি মোটর যোগ্য রাস্তা নির্মাণ শুরু করে"। ভুটান মাটিতে এবং কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে চীনা পক্ষকে জানিয়ে দিয়েছে যে ভুটানের ভূখ-ের অভ্যন্তরে রাস্তা নির্মাণ চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন এবং দুই দেশের মধ্যে সীমানা নির্ধারণের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। আসলে শুধু ডোকলাম নয়, চীন গত কয়েক দশক ধরে ভুটানের উত্তরাঞ্চলে ভুটানের ভূখ-ের মধ্যে প্রায় অর্ধডজন রাস্তা তৈরি করেছে এই অঞ্চলের ওপর তাঁর দাবি প্রসারিত করার জন্য, এটি একটি ভুটানি কর্মকর্তার কাছ থেকে জানা গেছে। ভারত সীমান্তে কৌশলগত উচ্চতা দখল করে, বেইজিং হাজার ১৯৯৭ সালে থেকে থিম্পুর উপর চাপ দিচ্ছে যাতে ভুটানের উত্তর উচ্চতায় এই বিতর্কিত কিছু এলাকা কে ভুটানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এলাকা গুলির সাথে সিকিম সংলগ্ন চুম্বি উপত্যকার নিকটবর্তী অঞ্চল গুলির সাথে অদল বদল করা যায়। চীন ভুটানের উত্তর-পশ্চিমের ডোকলাম, সিনচুলুং, ড্রামানা এবং সাখাতোয়র চরণ ভূমির যার মোট এলাকা ২৬৯ বর্গ কিলোমিটার উপর নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার বিনিময়ে উত্তর ভুটানের পাসমলুং এবং জাকারলুং উপত্যকা যার মোট এলাকা ৪৯৫ বর্গ কিলোমিটার ভুটানকে দিতে চায়। পূর্ব অংশে সাক্টেং এ পা রাখা চীনকে তাওয়াং- এর কাছাকাছি আসতে সাহায্য করবে, একটি ভারতের ভূখ- যার সাথে ভুটানের ঘনিষ্ঠ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, ডোকলাম এবং সাকতেংয়র পটভূমিতে ভুটানের সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে সীমান্ত আলোচনার চীনা দাবি বিশ্বাসযোগ্য নয়। একই গ্লোবাল টাইমস নিবন্ধনটি অসাবধানতাবশত স্বীকার করেছে যে ভারতের "ঐতিহাসিক ভাবে ভুটানের ওপর বিশেষ সাংস্কৃতিক প্রভাব রয়েছে"। উত্তরবঙ্গের কোচবিহার রাজ্যের সাথে ভুটানকে শাসন করে শব্দরাং এবং দেব রাজার মধ্যে সম্পর্ক ছাড়াও, বৌদ্ধধর্ম ভুটান এবং ভারতের মধ্যে একটি অবিচ্ছেদ্য বন্ধন গঠন করে। এটা উল্লেখ করার মতো যে ভুটান ২০১৭ এবং ২০১৯ সালে বেইজিং কর্তৃক আহ্বান করা ইজও বৈঠক গুলি এড়িয়ে গিয়ে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটে যোগ দিতে অস্বীকার করেছে। ২০১৮ সালে জাপান সফরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে "জাপান জাতিসংঘের সেক কাউন্সিলের স্থায়ী সদস্য হওয়ার জন্য" চীনের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছিলেন। বোধগম্য ভাবে তার দৈত্যাকার প্রতিবেশী দ্বারা অভিভূত, ভুটান এটিকে খুব আপত্তিজনক না করে নিরাপদে চীনের সাথে খেলতে পছন্দ করে। ভুটান উদাহরণস্বরূপ, ভুটানে তিব্বতি শরণার্থীদের প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করে "এক চীন" নীতিতে সদস্যতা নেয়। তবুও ভুটানের পক্ষে মাও জেদং এর দৃষ্টিভঙ্গি ভুলে যাওয়া কঠিন হবে যে তিব্বত চীনের তালু এবং ভুটান একটি আঙ্গুল ও বাকি চারটি আঙ্গুল লাদাখ, নেপাল, সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশ । চীনের সম্ভাব্য দখলদারিত্বের হুমকি এইভাবে চিরকালের জন্য ভুটান ও চীনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের স্থির হয়ে যাবে।
|
|
|
|
উপ-সম্পাদকীয় : রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ধারণ করা। জলাধারকে ধারণ করে গড়ে উঠেছে অনিন্দ্যসুন্দর এই প্রকল্প। প্রতিদিন হাতিরঝিলের রাস্তায় গাড়ি চলাচলের অতিরিক্ত শত শত মানুষ এখানে ঘুরতে যায় একটুখানি প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে।
কিন্তু হাতিরঝিলের জলাধার এখন ভ্রমণপিপাসুদের জন্য অস্বস্তি বয়ে আনছে। এই ঝিলের পানিতে এখন উৎকট গন্ধ। চলতি মৌসুমে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়ার পর থেকে ঝিলের পানিতে দুর্গন্ধ বাড়ছে। ভ্রমণপিপাসু নগরবাসী এখানে এলেও দুর্গন্ধের কারণে বেশিক্ষণ থাকতে পারছে না।
শুধু এ মৌসুমে নয়, প্রকল্পটি উদ্বোধনের পর থেকেই শুষ্ক মৌসুমে দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। সমালোচিত হয় রাজউক। পানির উৎকট গন্ধের কারণে যেসব নাগরিক এই রুট ব্যবহার করে গাড়িতে যাতায়াত করেন, তারা এখন রুট পরিবর্তন করছেন। আর বিকালবেলায় আগে যে পরিমাণ দর্শক হাতিরঝিল এলাকায় যেতেন, সেই সংখ্যা এখন কমে গেছে অনেক।
হাতিরঝিল প্রকল্পটি নির্মিত হয়েছিল ২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে। পানির উৎকট গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে গত বছর ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পানিশোধন প্রকল্প হাতে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এরই মধ্যে এক বছর পেরিয়ে গেলেও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।
প্রকল্পটি আগামী বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত যেহেতু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি, তাই প্রশ্ন উঠেছে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা জলে যাবে কি না। হাতিরঝিলের পানি দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ার কারণ স্পষ্ট। এই প্রকল্প নির্মিত হয়েছিল বৃষ্টির পানি ধারণ করার জন্য।
কিন্তু সেখানে ওয়াসার ড্রেনের মাধ্যমে স্যুয়ারেজের বর্জ্য ঢুকছে, এ কারণেই পানি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়েছে। বস্তুত হাতিরঝিলে স্যুয়ারেজ বা শিল্পবর্জ্যরে সংযোগ বন্ধে যেসব উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন ছিল, সেগুলো নেয়া হয়নি। এখন হাতিরঝিলের পানিকে দুর্গন্ধমুক্ত করতে হলে স্যুয়ারেজ ও পয়ঃবর্জ্য সংযোগ বন্ধ করতে হবে।
এ দায়িত্ব নিতে হবে রাজউক অথবা অন্য কোনো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে বুয়েট এবং হাতিরঝিল বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোরও দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই।
রাজধানী ঢাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশ পাওয়া ভার। ব্যতিক্রম হাতিরঝিল প্রকল্প। দৃষ্টিনন্দন এ এলাকায় এলে বুক ভরে নিশ্বাস নেয়ার সুযোগ আসে, দেখার সুযোগ ঘটে মনোরম দৃশ্য।
আমরা আশা করব, অচিরেই হাতিরঝিলের পানি দুর্গন্ধমুক্ত করে প্রকল্পটিকে নিষ্কলুষ করা হবে। তা না হলে যে উদ্দেশ্যে এ প্রকল্পটি নির্মিত হয়েছিল, তা নস্যাৎ হয়ে যাবে।
|
|
|
|
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এই ক্রান্তিকালে জাতি হিসেবে আমাদের সকলের কাঙিক্ষত, প্রত্যাশিত ও অলংঘনীয় গুরুদায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। জাতীয় জীবনের এই সংকট মোকাবেলায় আপনি আমি ও আমাদের যে যার আবস্থান থেকে রাষ্ট্রের সুনাগরিক হিসেবে সঠিক ও যর্থাথ দায়িত্ববোধে উদ্ভ’দ্ধ হয়ে নিজেদের মেধা, মমনশীলতা, দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে যুগোপযোগি কৌশল অবলম্বন পূর্বক সাহায্য ও সহযোগিতা করা নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। এছাড়াও ক্ষুধা, দারিদ্র্য মুক্ত, বৈষম্যহীন, সমৃদ্ধ ও উন্নত সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে মুজিব শতবর্ষের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে দেশের তরে ত্যাগ স্বীকার করে প্রতিদান দ্য়োও দেশের ,দশের ,সময়ের দাবী। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) থেকে উদ্ভ’ত এই মহাদুর্যোগ রাষ্ট্র কিংবা সরকারের পক্ষে একা মোকাবেলা প্রায় অসম্ভব। এ জন্য আমাদের ধর্ম, বর্ণ, দল-মত, বিভিন্ন শ্রেণীপেশার-গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের মধ্যকার স্বার্থগত দ্ব›দ্ব -বিরোধর ঊর্ধ্বে ওঠে কিংবা মিমাংশা-নিষ্পত্তি করে জাতীয় একাত্মতা সৃষ্টি করতে হবে। কারণ দল-মত-পথের চেয়ে দেশের স্বার্থই সবচেয়ে বড়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এখনো সে রকম কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ পর্যবেক্ষণে পরিলক্ষিত হয়নি। দৃশ্যত হবে কি-না তাও নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ,সংশয় রয়েছে। যদি আমরা এমনটাই করতে না পারি বা ব্যর্থ হই তা হলে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা তথা সরকারী ত্রাণ ,প্রণোদনাসহ অন্যান্য সরকারী সাহায্য সুপরিকল্পিত ,সমন্বিত ও সুষমভাবে বন্টন করতে ব্যর্থ হবো। ইতোমধ্যে সরকারী ত্রাণ বিতরণে বিশৃংখলা, সমন্বয়হীনতা, স্থান-কাল-পাত্র ভেদাভেদ, দলীয় পরিচয় বিবেচনা, দলীয় পরিচয়ে ডিলারশীপ প্রদান, অসম বন্টনসহ নানা অনিয়ম সকলের দৃষ্টিগোচরীভ’ত হয়েছে। এছাড়াও জনপ্রতিনিধি নামধারী তথাকথিত মেম্বার, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, মেয়র এবং স্বার্থান্বেষী দলবাজ নেতা-কর্মী কর্তৃক সরকারী ত্রাণ আত্মসাৎ, চুরি এবং ইদুরের বৈশিষ্টধারণ করে গর্তে লুকিয়ে রাখার মত নির্লজ্জ্ব, ন্যাক্কারজনক ,অমার্জনীয়, আত্মঘাতী ঘটনা সংগঠিত হয়েছে যা জাতীয় জীবনে আরো একটি নেতিবাচক ইতিহাস রচিত হয়েছে। যে কোন রাষ্ট্র জাতীয় সংকটকাল মোকাবেলা ও সংকট উত্তরণের নিমিত্তে জাতীয় মাসসিক শক্তি, চেতনা, ইতিহাস -ঐতিহ্য এর শক্তিতে বলীয়ান হয়ে কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাষ্ট্র ,জনগণ ও রাষ্ট্রূীয় যন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে পুনরোজ্জীবিত করে অর্থনৈতিক চাকা সহ সামগ্রিক সূচক সচল ও গতিশীল করা হয়। এ জন্য কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দেয়া হয়। এতদপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র তথা রাষ্ট্রীয় সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টদের পুর্ণ্যদ্যেমে সেবা প্রদানের জন্যও উৎসাহমূলক প্রণোদন্ াঘোষনা করা হয়। বর্তমান প্রেক্ষিতে আমাদের দেশের সরকারও করোনা সংকট মোকাবেলায় কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য , সেবাখাত সহ বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করা হয়েছে। পাতা/০২ জাতি প্রত্যাশা করে, রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা বন্টনে সংর্কীণ দলীয় পরিচয়, নির্দিষ্ট ধর্ম-বর্ণ,দল-মত, গোষ্ঠী, স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা না করে সততা, নৈতিকতা ও মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটিয়ে সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় এনে সুপরিকল্পিত, সমন্বিত ও সুশৃংখলভাবে দক্ষতার সাথে সুষমভাবে বন্টন করা হবে। আর এ জন্য সর্বাগ্রে যেটি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে জাতীয় ঐক্য। কারণ ঐক্যমত্যেই ঐশ্বর্য, মতানৈক্যই মাশুল। এই জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে সবার মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ গড়ে ওঠবে । সবার মাঝে ন্যায়বোধ ও জাতীয় মানসিক শক্তি এবং মানবিক গুলাবলীর বিকাশ ঘটব্।ে আর এর মাধ্যমে বর্তমান সংকট ও তৎপরবর্তী নানা চ্যালেঞ্জ এর সুষ্ঠু ও সফলভাবে সমাধান করা যাবে মর্মে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি স্বস্তিদায়ক নয়। এমন কি বিদ্বেষপূর্ণ, বিবেদপূর্ণ, একগুয়ে, অনমনীয়, অসৌজন্যমূলক এবং অগণতান্ত্রিক। ফলশ্রæতিতে রাজনৈতিক ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় যন্ত্র বা রাষ্ট্রীয় সংগঠন, অর্থনৈতিক বিবিধ শক্তি তথা রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক বিবিধ শক্তি বা উপাদান ভারসাম্যপূর্ণ নয়। অর্থনৈতিক শক্তি তথা কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা ,কর্তৃত্ব, প্রভাব-প্রতিপত্তি সমাজের মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে পুঞ্জিভ’ত। অর্থ্যাৎ যারা দলীয় নেতা-কর্মী তাঁরাই এমপি, তাঁরাই সরকার, তাঁরাই মন্ত্রি, তাঁরাই আইনপ্রণেতা। আবার তাঁরাই কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-ব্যাণিজ্যের মালিক। অধিকন্তু তাঁরাই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, এনজিও, দাতাগোষ্ঠী, বহুজাতিক কোম্পানী, চাপসৃষ্টিকারীগোষ্ঠী , মিডিয়া, সিভিল সোসাইটি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণকর্তা। এই রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে সরকারী প্রণোদনা যখন যেভাবে বন্টন করা হোক না কেন তা চক্রাকার আবর্তে বৃত্তের মধ্যেই থাকবে। আপামর জনসাধারণ এর সুফল ভোগ থেকে বরাবরই বি ত থাকবে কিংবা বৈষম্যের শিকার হবে। যে মহৎ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে দেশের সর্বস্তরের শ্রেণী-পেশার মানুষকে টার্গেট করে ন্যায়নীতির ভিত্তিতে প্রণোদনা বন্টনের কথা তা ব্যর্থতায় পর্যবশিত হবে। রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার মধ্যকার সর্ম্পক যদি একাকার হয় কিংবা পার্থক্য নিরূপন করা যায় না, তখন রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়ন ঘটে। সমাজের বিপুল সংখ্যক জনগণ যদি আইন সভার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, তখন অর্থনৈতিক শক্তি বা গোষ্ঠীর নেতারা রাজনৈতিক ক্ষমতায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বা চাপসৃষ্টি করে নিজেদের স্বার্থের অনুক’লে রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পরিচালনা করে। ফলশ্রæতিতে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে চরম অরাজকতা, বিশৃংখলা, অস্তিতিশীলতা , সহিংসতা, পেশী শক্তির ব্যবহার, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি সহ নানা অসামাজিক, অনৈতিক ,অমানবিক অপকর্ম সংঘঠিত হয়। ইতোমধ্যে জাতি এই দুষ্টচক্রের মুখোশ উন্মোচন করেছে অথবা নিজেদের কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিজস্ব স্বরূপ প্রদর্শন করেছে। সম্প্রতি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সফল রাষ্ট্রনায়ক, দেশরতœ, স্বাধীন বাংলাদের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে অকপটে স্বীকার করে বলেছেন-” বৃত্তবানদের চাই চাই গেল না”। এই দুষ্ট দুর্বৃত্তচক্রের চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই, সীমা নেই,শুধুই অতৃপ্তি, অসন্তুষ্টি, আগা-গোড়া গ্রাস করার লালসা-বাসনা। সাম্প্রতিক কালের সরকারী ত্রাণ চুরি, আত্মসাৎ, ইদুর পাতা/০৩ স্বভাবের মত চাল-ডাল-তেল গর্তে লুকিয়ে রাখা, নগদ সহায়তা প্রদানে অনিয়ম, পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ইত্যাদি ছিল পরবর্তী বিষয়গুলোর দীর্ঘদিনের ধারাবাহিকতা । যেমন খাদ্যে ভেজাল, সড়ক দূর্ঘটনা, ক্যাসিনো কান্ড, রূপপুরের বালিশ কান্ড, হসপিটালের পর্দা কান্ড, ব্যাংক কেলেংকারী, শেয়ার বাজার কেলেংকারী, দিবালোকে নরহত্যা ইত্যাদি। করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং তৎপ্রেক্ষিতে করোনা উত্তর জটিল সমীকরণ ঘটবে, থাকবে নানা চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাও। যেমনঃ সামাজিক অস্তিরতা, দারিদ্য্র, দুর্ভিক্ষ, বেকারত্ব, কর্মসংস্থান, মুদ্রাস্ফীতি, বাজার সংকোচন, অর্থনৈতিক মন্দাসহ অনাকাঙিক্ষত অস্তিতিশীল পরিবেশ। এমন কি রাজনৈতিক অস্তিরতার দরুণ নেতৃত্বের সংকট, বৈধতার সংকট, জনবিক্ষোভ-বিদ্রোহ ও ঘটতে পারে। যদি আমরা এই রাজনৈতিক দুষ্ট চক্রাকার বৃত্তকে বা রাজনৈতিক দূর্বৃত্তপনা ভাঙতে না পারি কিংবা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হই তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের জাতীয় জীবনে নানা সংকট, সমস্যা ও মানবিক বিপর্যয়ও সৃষ্টি হতে পারে। সরকারই হচ্ছে জনগণের আশা-ভরসার কেন্দ্র স্থল। সরকারের সদিচ্ছা ও মহৎ উদ্যোগ যেমনঃ বিচারবুদ্ধি, সংযম, সহিষ্ণুতা, নৈতিকতা, উদার গণতান্ত্রিক মনোভাব, রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে পরিচালনা, জনগণকে সুশিক্ষিত, সুনাগরিক, ন্যায়পরায়ন, বিবেকবান ও মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন করে গড়ে তোলা এবং অপর পক্ষে জনগণের অধিকার ও দায়িত্ববোধ সচেতন হ্ওয়া, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ,পারস্পরিক সমঝোতা ও সহমর্মিতাই পারে মোদ্দাকথায়, সরকারের সদিচ্ছা ও জনগণের সচেতনতাই পারে রাজনৈতিক দূর্বৃত্তপনা ভাঙতে কিংবা নিয়ন্ত্রণ করে সংকট মোকাবেলা ও উদ্ভ’ত সমস্যা, চ্যালেঞ্জ এর সুষ্ঠু সমাধান করতে। দেশের প্রতি আনুগত্য ও কৃতজ্ঞা প্রকাশের এখনই সময়। এখনই সময় দেশ মাতৃকার কল্যাণে প্রতিদান দেওয়ার। কারণ মানুষ র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্বাঁচে আশায়, দেশ বাঁচে মানুষের ভালবাসায়। মা, মাটি ও মানুষকে সুরক্ষা করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে জীবনকে স্বার্থক ও মহৎ করে তুলি। কবির কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলি- ”স্বার্থক জন্ম মাগো, জন্মেছি এই দেশে স্বার্থক জনম মাগো, তোমায় ভালবেসে”। -----০---- লেখকঃ মো. আবদুস সালাম, ব্যাংকার এবং কক্সবাজার সুইমিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও চীফ কোচ।
|
|
|
|
এ বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্তের পর সরকারিভাবে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল, যা পরে কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে।
অবশেষে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে লম্বা সর্বমোট ৬৬ দিনের ছুটির অবসান ঘটেছে গত ৩০ মে। এর ফলে রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ সাপেক্ষে সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
একই সঙ্গে দেশের সব সমুদ্র, বিমান ও স্থলবন্দরসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সার্বক্ষণিক খোলা রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু হয়েছে শেয়ারবাজারসহ যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ক্ষুদ্রঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও শুরু করেছে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম। পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতি সচল করতে সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে হাটবাজার।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী বহন সাপেক্ষে চলাচল করবে বাস ও অভ্যন্তরীণ বিমান।
অবশ্য এক্ষেত্রে বিদ্যমান ভাড়ার সঙ্গে ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া যুক্ত হবে বলে জানা গেছে। তবে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রির বিধান রেখে বিদ্যমান ভাড়ায়ই আপাতত ১৬টি আন্তঃনগর ট্রেনের চলাচল শুরু হয়েছে এবং ৩ জুন থেকে ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়বে।
এছাড়া নদীপথও উন্মুক্ত করা হয়েছে; লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে সারা দেশে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক জনসাধারণের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের জন্য সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জারিকৃত ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করার কথা বলা হলেও যাতায়াত ও কর্মক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব রক্ষা করা সম্ভব হবে, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে বৈকি!
মূলত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টিকে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যাবে।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশের মানুষের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সাধারণ শিষ্টাচার মেনে চলাসহ সচেতনতার ব্যাপক অভাব রয়েছে।
এছাড়া ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি, প্রথমবার ছুটি ঘোষণার পরপরই সাধারণ মানুষ বাস, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশনগুলোয় হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। সবকিছু উন্মুক্ত করার পর যে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কী?
মানুষজন যদি তাদের পূর্বের অভ্যাস, আচরণ ও কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেয় তাহলে তা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার ও সংক্রমণে সহায়ক হবে, এ কথা বলাই বাহুল্য।
মনে রাখা দরকার, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বজুড়ে বারবার সাবানপানি দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে স্পর্শ না করা, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলাসহ অন্য যে বিষয়টির কথা বারবার মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে, তা হল সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।
সামাজিক দূরত্বকে গুরুত্ব দেয়ার কারণ হল, এটি সংক্রামক রোগ বিস্তার প্রতিরোধের জন্য ওষুধবিহীন এক পদক্ষেপ। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, আক্রান্ত ব্যক্তি যেন অপরের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে অর্থাৎ রোগ সংবহন কমানো; সর্বোপরি মৃত্যুহার কমানো।
সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পক্ষ থেকে রোগের সঞ্চালন ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য মানুষের মধ্যকার সংস্পর্শের ঘটনা কমানোর পদ্ধতিকে সামাজিক দূরত্ব স্থাপন হিসেবে বর্ণনা করে করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর সময় সমাবেশজনিত ঘটনা পরিহার, গণসমাগম এড়ানো এবং প্রায় ৬ ফুট বা ২ মিটার দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়টি আমরা সঠিকভাবে পরিপালন করতে পারব কিনা, এটাই হল বড় প্রশ্ন। এজন্য জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি ও সাধারণ শিষ্টাচার মেনে চলার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ব্যাপকভাবে সচেতন করা জরুরি। সরকার যদিও পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তবে এতে আমরা কতটুকু সচেতন হয়েছি- এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ব্যাপারে সরকার ও জনসাধারণকে স্বীয় কর্তব্য নির্ধারণ ও পরিপালন করতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি এমন আকার ধারণ করতে পারে, যা থেকে উদ্ধার পাওয়া হয়তো কঠিন হবে।
|
|
|
|
গোপাল অধিকারী
শিক্ষা। মানবিক গুণসমৃদ্ধ যা কিছু অর্জন তাই আমার কাছে তাই শিক্ষা। আর প্রাথমিক পর্যায়ে বা জীবনের শুরুতে যে শিক্ষা অর্জন করে তাই প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক পর্যায়ে বা জীবনের শুরুতে যে বিদ্যালয়ে বা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা অর্জন করে তাই প্রাতিষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা। একটা সময় ছিল এই প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পাড়ি দিতে হতো দীর্ঘপথ। তৎকালীন সময়ে যে কারণে শিক্ষার হার ছিল নগন্য। বিদ্যালয়গামী ছাত্র-ছাত্রী ছিল সংখ্যায় কম। শিক্ষক ছিল অপ্রতুল। বই কিনতে হতো অর্থ দিয়ে লাইব্রেরি থেকে। ফলে দারিদ্রতার কারণে ঝড়ে পরত অনেক শিক্ষার্থী। সবকিছু মিলিয়ে পড়ালেখার প্রতি মানুষের আগ্রহ ছিল কম। বর্তমান চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। এখন প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে। রয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষক রয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক। বই দেওয়া হচ্ছে সরকার থেকে বিনামূল্যে। যার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে এখন বিদ্যালয়মুখী। তাছাড়া পড়ালেখার ব্যাপারে এখন অনেক পরিবারই সচেতন। সন্তানের পড়ালেখা করাতে অনেক পরিবারই দরিদ্রতাকে জয় করছে। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের প্রাথমিক থেকেই গুরুত্বসহকারে তৈরি করছে। আমাদের সময় যে যতœটার অভাব ছিল বর্তমান সময়ে সেই যতœটা প্রাক-প্রাথমিক থেকেই পাচ্ছে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। আর কেনই বা করবে না, একটি বাড়ির ভিত্তি যদি মজবুত না থাকে তাহলে সেই বাড়ি কিন্তু বেশিদূর পর্যন্ত উঁচু করা যাবে না। ঠিক তেমনি একটি সন্তানকে যদি শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই যতœ না করা যায় তাহলে রতœ হবে না। যেমন আপনি যদি শুরু থেকেই আপনার সন্তানের হাতের লেখা সুন্দর করতে জোর না দেন তাহলে পরবর্তীতে তার লেখার কাঠামো পরিবর্তন করাতে সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না। আবার শিশুবেলা থেকেই যদি একজন শিক্ষার্থীকে বই রিডিং পড়ার উপর জোর না দেওয়া যায় তাহলে সে পরবর্তী শ্রেণিতে গিয়ে স্পষ্ট উচ্চারণসহকারে পড়তে পারে না। তাই আমার কাছে মনে হয় প্রাথমিক শিক্ষাই শিক্ষার মূলভিত্তি। তাই এই সময়ে অভিভাবকদের উচিত মানসম্মতভাবে গড়ে তোলা এবং গড়ে তুলতে মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেছে নেওয়া ও সন্তানের যতœ নেওয়া। আর সেই কারণে সরকার প্রাথমিক শিক্ষার উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তারপরও কিছু অচেতন অভিভাবক আছে যারা সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে চান না বা শিক্ষার মর্মটা উপলব্ধি করেন না। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০ বছরের প্রথম দিনে দেশের ৪ কোটি ২০ লাখেরও বেশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩৫,৩১,৪৪,৫৫৪টি বই বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ কোটি ৫৪ লাখ ২ হাজার ৩৭৫টি বই বিনা মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। যা প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে মাইলফলক। বর্তমান সরকার শিক্ষাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। তাই ২০১০ সাল থেকে বর্তমান সরকার বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করছে। এছাড়াও চালু রয়েছে বৃত্তিমূলক ব্যবস্থা। সরকারি শিক্ষকদের বেতন হয়েছে দ্বিগুণ। কিন্তু যত সুবিধা দিচ্ছে তার থেকে ভালোটা কম পাচ্ছে বলে আমার মনে হয়। শিক্ষার দিক থেকে যদি বলি তবে সবকিছুর মাঝেও দেখা যায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো কিছু ঘাটতি রয়েছে। দুর্বল শিক্ষার্থীদের উন্নতি করাতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। আবার মেধাবী শিক্ষার্থীদেরও মানসম্মত উন্নতি করাতে পারছে না। আর কেজি স্কুলগুলো সেই সুযোগটা লুফে নিচ্ছে। তবে পূর্বের প্রাথমিকের কিছু চিত্র বর্তমানে অনেকাংশে কমেছে। পূর্বে যেমন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত ক্লাস হতো না। শিক্ষিকাদের ক্লাসে না গিয়ে মাঠে বসে রোদ পোহাতে দেখা যেত। শিক্ষকদের ক্লাস না করে ক্লাসচলাকালীন সময়ে বাজার করতে দেখা যেত। বর্তমানে তা বহুলাংশে কমেছে। এখন যে বিষয়গুলো আমার কাছে ঘাটতি বলে মনে হয় তা হলো (১) এক ক্লাসে অধিক ছাত্র-ছাত্রী (২) শিক্ষার্থী অনুপাতে ক্লাসের সময়সীমা স্বল্প (৩) শিক্ষকদের যোগ্যতা আর সবচেয়ে বেশি যে বিষয় নিয়ে আমি চিন্তিত তা হলো (৪) পাঠ্যপুস্তক ও প্রশ্নকাঠামো। সরকার বইপ্রদানসহ বিভিন্ন সুযোগ দিলেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো একটি ক্লাসে ছাত্রছাত্রী রয়েছে অধিক পরিমাণে। যার ফলে শিক্ষকরা যথাযথ ক্লাস নিতে পারছে না বলে আমার মনে হয়। পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার এয়ারপোর্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তথ্য থেকে জানতে পারি সেখানে একটি শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ৮৬ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তার বিপরীতে ক্লাসের সময় ৫৫ মিনিট। একটি শিক্ষার্থীকে ১ মিনিট করে যদি পড়া ধরা হয় সেখানে সময় লাগবে ৮৬ মিনিট। এর সাথে শিক্ষককে পড়াটা বোঝানোর একটা ব্যাপার থাকে। লেখানো ও লেখা দেখার একটি বিষয় থাকে। কারণ অনেক অভিভাবকই বাড়িতে গেলে শ্রেণির কাজ দেখতে চাই। আসলে কিভাবে শিক্ষকরা পড়াটাকে বুঝিয়ে যাচাই-বাছাই করবে বা লেখাবে? আমার বোধগম্য হয় না। অভিভাবকদের আবেদন কিন্তু থাকে যে শিক্ষক প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন ধরবেন। আমার মনে হয় যদি শ্রেণিকে স্বল্প শিক্ষার্থী দিয়ে ভাগ করা যায় অথবা ক্লাসের সময় বাড়ানো যায় তবেই পড়াটা বা ক্লাসটা আরও কার্যকর হতো। স্বল্প সময়ে শিক্ষকরা বোঝাতে সক্ষম হচ্ছে না বলে বাধ্য হচ্ছেন প্রাইভেট পড়াতে। আর অভিভাবকরাও বাধ্য হচ্ছেন প্রাইভেটে দিতে। এইবার আলোচনায় আসি যোগ্যতা নিয়ে। বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণির যে সিলেবাস বা প্রশ্নকাঠামো তাতে একটি দক্ষ ইংরেজি শিক্ষক প্রয়োজন। বিভিন্ন শিক্ষকদের মন্তব্য থেকে জানা যাই যে পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি বিষয়টি তুলনামূলক জেএসসি থেকে কঠিন। কিন্তু সেখানে অনেক শিক্ষিকা রয়েছে যারা এসএসসি পাশ। ফলে আমার মনে হয় তাদের যোগ্যতার অনেক ঘাটতি রয়েছে। একসময় সৃজনশীল ছিল না বা পড়ালেখার কারিকুলাম এমন ছিল তা সেই সময়ের জন্য তারা উপযুক্ত ছিল। কিন্তু বর্তমান পেক্ষাপটে তাদের যোগ্যতা নিয়ে আমি চিন্তিত। ইংরেজি ও গণিতে ভাল করতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রীধারীদের নেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আর প্রাথমিকে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টা নিয়ে আমি চিন্তিত বা যে বিষয়টা আমি গতবছর ভাবলেও লিখতে পারি নাই তা হলো পাঠ্যপুস্তক ও প্রশ্নকাঠামো। গতবছর লিখি নাই এই ভেবে যে বইতো অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়ে যায়। তবুও এবছর বিষয়টি তুলে ধরতে চাইছি কারণ এখনো প্রশ্নকাঠামো দেওয়া হয় নাই বা আগামী ২০২১ সালের বই তৈরির কাজ হয়ত এখনো শুরু হয় নাই। তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন সাময়িক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বা প্রশ্নকাঠামোর দিকে তাকালে লক্ষ্য করা যায় সেখানে কিছু অংশ পাঠ্যপুস্তক বর্হিভ’র্ত। যদি বাংলার বিষয়ে বলি সেখানে রয়েছে বিরামচিহ্ন। অথচ বিরামচিহ্নের যে নিয়মটা রয়েছে কোথায় কি থাকলে কোন চিহ্ন হয় তা পাঠ্যপুস্তকে নাই। ফলে শিক্ষার্থীরা মুর্খস্থ করছে। ইংরেজির প্রায় অর্ধেকের বেশি অংশ থাকে পাঠ্যপুস্তক বর্হিভ’ত। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কোন গ্রামার নাই অথচ পরীক্ষাতে আসছে ডব্লিউ এইচ কশচিন। এটা করতে গেলে সাবজেক্ট, নম্বর, ভার্ব, টেন্স জানা দরকার। এগুলো না পড়িয়ে রিয়ারেঞ্জ বা ডব্লিউ এইচ কশচিন করালে “গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল” দেবার মত পরিস্থিতি করা হয়। তাছাড়া যেখানে টেন্স শেখানো হচ্ছে না সেখানে আনসিন প্যাসেজ দিলে কিভাবে লেখা সম্ভব? ধাপে ধাপে না শেখালে ভিত্তি কিভাবে মজবুত হবে? আমার মতে তৃতীয় শ্রেণি থেকে কিছু কিছু গ্রামার যোগ করা দরকার। তাছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হিমশিম খেতে হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, প্রাথমিক বিজ্ঞান ও ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষায় সৃজনশীল প্রশ্ন আসে কিন্তু কোনও অধ্যায়ে সৃজনশীল প্রশ্নের নমুনা নেয়। পূর্বে কেমন প্রশ্ন হবে তার নমুনা দেওয়া হতো এখন কেন নেই? তাতে কি গাইড বিক্রেতাকে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে না? নমুনা দিলে কি খুব ক্ষতি হত? জানি জাতীয় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন কমিটি অতি দক্ষ ও মেধাবী তবুও আমার স্বল্প মেধায় একজন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে এই বিষয়গুলো আমার কাছে পরিবর্তন বা সংযোজন প্রয়োজন বলে মনে হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে এবং যে সৃজনশীলতা নিয়ে জাতি গঠনে এগিয়ে চলছে তাতে পাঠ্যপুস্তক সংশ্লিষ্ট প্রশ্নকাঠামো করলে উদ্দেশ্য বেগবান হবে। ফলাফল আরও সুন্দর হবে সর্বোপরি সৃজনশীলতা এগিয়ে যাবে বলে আমার মনে হয়। তাই হয় পাঠ্যপুস্তক নয়ত প্রশ্নকাঠামো পরিবর্তনের জোর দাবি করছি। সেই সাথে উপরোক্ত সমস্যাবলী আসলে সমস্যা কি না তা যাচাইয়ে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন কমিটি সর্বোপরি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট। [email protected]
|
|
|
|
মুঈদ রহমান
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আক্রমণে সারা বিশ্বের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। প্রাণসংহারের পাশাপাশি দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে-পরে জীবনধারণের সম্ভাবনাকেও আশঙ্কার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রচেষ্টায় চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে; অন্যদিকে অনিশ্চিত অর্থনীতিকে নিশ্চয়তা দিতে বিনিদ্র রজনী পার করছেন সমাজবিজ্ঞানী ও রাজনীতিকরা।
এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়ে দিয়েছে, এ বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ কমে যাবে। বাংলাদেশের অবস্থাও তাই। কিন্তু সমস্যা হল, এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলা করার মতো যথেষ্ট অভিজ্ঞতা বর্তমান পৃথিবীর নেই। আর একটি অনিশ্চয়তার বিষয়ে কোনো তত্ত্বেরও সন্ধান লাভ করার সুযোগ নেই। তাই আমাদের এগোতে হচ্ছে অনেকটাই সাধারণ জ্ঞানের দ্বারা। চলার পথ রুদ্ধ না করে এটাই হতে পারে এক ধরনের চলা।
বাংলাদেশ সে পথেই এগোচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় কার্যকরী কিছু পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই সরকার নিয়েছে। শিল্প ও ব্যবসা খাতে ৫০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে; রফতানি উন্নয়ন খাতে ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার বাড়তি জোগান দেয়ার কথা বলেছে; পোশাক শিল্পে ৫ হাজার কোটি টাকা আর ঋণ পুনঃতফসিলে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষিত হয়েছে। এর সঙ্গে গত ১২ এপ্রিল কৃষিখাতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে আর্থিকভাবে অর্থনীতির প্রতিটি খাতই ক্ষতবিক্ষত হতে বাধ্য। আমার ধারণা, এ অবস্থা যদি আর দু’মাস চলমান থাকে তাহলে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে কমপক্ষে ৩ লাখ কোটি টাকা। এ কথা সত্য, যে কোনো দুর্যোগে সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয়; তবে সব দেশের সব সরকারের সক্ষমতা একরকম নয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এরই মধ্যে দুই ট্রিলিয়ন বা দুই লাখ কোটি ডলারের (যা আমাদের চলতি জাতীয় বাজেটের ৩৩ গুণ) আর্থিক সহযোগিতার কথা ঘোষণা দিয়েছে। আমেরিকার অর্থনীতি আমাদের চেয়ে ৭০ গুণ শক্তিশালী, তাই আমেরিকাকে আমরা উদাহরণ হিসেবে নিতে পারব না।
কাপড়ের মাপেই আমাদের কোট কাটতে হবে। আমাদের বাজেটের অবস্থাটাও বিবেচনায় নিতে হবে। চলতি বাজেটে ঘাটতি ধরা আছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ নিতে হবে। অভ্যন্তরীণভাবে ঋণ নেয়া হবে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। এই অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা নেয়া হবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে। এখন যে প্রণোদনা ঘোষিত হয়েছে, তাতেও ব্যাংকগুলোর ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সুতরাং, আমাদের দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংকগুলো তা কতটা সামাল দিতে পারবে, সেটাই এখন ভাবনার বিষয়।
অন্যদিকে, বাজেটে আয়ের উৎস ও বণ্টনের কথাটা বিবেচনায় নেয়া যাক। সরকারি আয়ের ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ আসবে মূল্য সংযোজন কর থেকে; ৩৫ শতাংশ আয়কর থেকে; আমদানি শুল্ক ১১ দশমিক ২ শতাংশ; সম্পূরক শুল্ক ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ আর অন্যান্য খাত থেকে ১ দশমিক ২ শতাংশ। এই দুর্যোগ সময়ে আমরা যে ধরনের পণ্য ব্যবহার করছি, তার বড় অংশই ভ্যাটের আওতামুক্ত। সুতরাং কাক্সিক্ষত মাত্রায় মূল্য সংযোজন কর আদায় করা সম্ভব হবে না। একইভাবে আমদানি ও সম্পূরক শুল্কও ধার্যকৃত মাত্রায় পাওয়া যাবে না। তাই সরকারেরও স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে আমাদের যেটা করণীয় তা হল, স্বল্প সম্পদকে পুরো মাত্রায় সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানো।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথম প্যাকেজ ঘোষণার সময়েই বলেছিলেন, এসব প্রণোদনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কথায় যতটা আশাবাদী হতে পারি, ততটা আস্থা রাখতে পারছি না। কারণ অতীতেও এ ধরনের বক্তব্যের বিপরীতে যথাযথ বাস্তব চিত্র দেখতে পাইনি। শিল্পখাতে তদারকি অধিকতর করা গেলেও কৃষিখাতটি অগোছালোই রয়ে গেছে। শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি দুগ্ধজাত পণ্য, পশুখামার, হ্যাচারি ও পোলট্রি খামারগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। আরেকটি বিষয় হল, চাষের রীতি পাল্টেছে।
এক সময়ের বর্গাচাষের প্রচলন এখন আর নেই। বেশির ভাগ জমিই চাষ হয় ‘পত্তনি’ বা ‘লিজ’ ব্যবস্থায়। এ ব্যবস্থায় ভূমি মালিককে বার্ষিক একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ (গড়ে বিঘাপ্রতি ৪ হাজার টাকা) অর্থ দিতে হয়। কৃষক তার পণ্যের বাজার দাম পাক বা না পাক, ওই নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমির মালিককে দিতেই হবে। তাই প্রকৃত কৃষকের তালিকা তৈরি করে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রণোদনার টাকা দিতে হবে।
সরকার ঘোষিত প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার সবটাই ব্যয় করা হবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য, উৎপাদন ব্যবস্থা যাতে ভেঙে না পড়ে এবং সাপ্লাই চেইনে যেন ছেদ না পড়ে। কিন্তু শুধু উৎপাদন ব্যবস্থা ঠিক রাখলেই চলবে না, তার সঙ্গে চাহিদার স্তরকেও কার্যকর রাখতে হবে। সেজন্য প্রয়োজন হল মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় রাখা। অর্থ জোগানের ভেতর দিয়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে ধরে রাখতে হবে। তা না হলে বাজারে পণ্যের জোগান থাকলেও তা মানুষের ঘরে নেয়ার ক্ষমতা থাকবে না।
আমরা যে ধরনের ব্যবস্থাই নিই না কেন, তার উদ্দেশ্য ও নিয়ামক হল মানুষ। মানুষের জন্য এবং মানুষের দ্বারাই সে কার্য সম্পাদন করতে হবে। ‘মানুষ বাঁচাও’ স্লোগান সামনে রেখে একটি পরিষ্কার চিত্র আমাদের হাতে রয়েছে। অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারকাত মনে করেন, যদি মানুষকে বাঁচাতে হয় তাহলে আগামী ছয় মাসে এক কোটি ৫০ লাখ পরিবারকে সরাসরি সাহায্যের আওতায় আনতে হবে। এতে করে মোট ছয় কোটি মানুষের দৈনিক খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি মনে করেন, মানুষের ন্যূনতম ক্যালরি বজায় রাখতে একজন মানুষের দৈনিক ৭৫ টাকা প্রয়োজন; একটি পরিবারের খরচ হবে মাসে ৯ হাজার টাকা। এটি একটি বিশ্বাসযোগ্য হিসাব। কেননা অধ্যাপক বারকাতের লেখার এক সপ্তাহ পরে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) প্রতিটি পরিবারকে মাসে ৮ হাজার টাকা অনুদান দেয়ার সুপারিশ করেছে। সুতরাং, এটা কাল্পনিক নয়। সে হিসাবে আমাদের ৮১ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। তবে অবস্থার অবনতি হলে এই অঙ্কটা কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে।
এই অর্থের সংস্থান করতে না পারলে মানুষ বাঁচানো সম্ভব হবে না। ওয়াশিংটনভিত্তিক ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির মতে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে সাত হাজার কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় তা ৫ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা)। মহাদুর্যোগের সময় সরকার তার নৈতিক অবস্থানকে শক্ত করে এ অর্থ উদ্ধার করতে পারে। তাছাড়া উন্নয়ন ব্যয়কে পরিমার্জন করে হলেও এই পরিমাণ অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে হবে।
বাজার ব্যবস্থার ওপর আস্থা না রেখে সরকারি উদ্যোগ বাড়াতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে চর্চিত মুনাফাভিত্তিক মানসিকতা বাজার ব্যবস্থাকে অচল প্রমাণিত করেছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই বোরো মৌসুমের ধান বাজারে আসবে। সরকারের উচিত হবে, যতটা সম্ভব সে ধান সরকারি গুদামে সংরক্ষণ করা। খাদ্যমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, সরকারি গুদামগুলোতে ১৫ লাখ টন খাদ্য মজুদ আছে। সম্পূর্ণ গুদাম খালি করে হলেও, গুদামের বিকল্প তৈরি করে হলেও নতুন ধান-চালের সংরক্ষণ বাড়াতে হবে।
সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৬ লাখ টন ধান এবং ১১ লাখ টন চাল কেনার কথা। এর পরিমাণ বাড়াতে হবে, কেননা এই অঙ্কটা আমাদের মোট উৎপাদনের মাত্র ৬ শতাংশ। আর কৃষকের ন্যায্যমূল্য না পাওয়াটা এদেশে একটি রীতিতে পরিণত হয়েছে। গত বছরও সরকার মণপ্রতি ধানের মূল্য নির্ধারণ করেছিল ১ হাজার ২০০ টাকা; কিন্তু অনেক কৃষকই ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকার বেশি পাননি। কৃষক বাঁচাতে ধানের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আমাদের অর্থনীতির চাকা যদি সচল থাকে, আমাদের আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ যদি জোগাড় করা যায়; তারপরও সমস্যা থেকেই যাবে- সেটা হল বণ্টনের দুর্বলতা। আমরা বিগত এক দশক ধরে উন্নয়নের নানা গল্প শুনে আসছি। আর্থিক উন্নয়ন যতটা হয়েছে, ততটাই অধঃপতিত হয়েছে নৈতিক উন্নয়ন। এই মহামারীতে, এই কোটি মানুষের আহাজারি চলাকালেও শোনা যাচ্ছে ত্রাণ চুরির কথা। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ত্রাণ চুরির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। আবার যেখানে চুরি নেই, সেখানে রয়েছে পরিকল্পনার অভাব এবং সমন্বয়হীনতা।
ব্যক্তিগতভাবে যে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে, তাও এলোমেলো। কেউ কেউ একাধিকবার পাচ্ছেন, আবার কারও ভাগ্যে কিছুই জুটছে না। তাই গ্রামে-গ্রামে, মহল্লায়-মহল্লায় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং আর্থিকভাবে তুলনামূলক সচ্ছল ব্যক্তির সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা প্রয়োজন; প্রয়োজন সাহায্য প্রাপ্তদের প্রকৃত তালিকা তৈরি। কারণ, করোনা মোকাবেলায় আমাদের অনেক দূর পর্যন্ত যেতে হবে। একমাত্র সমন্বিত প্রচেষ্টাই আমাদের দুর্গম পথচলা সুগম করতে পারে।
মুঈদ রহমান : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
|
|
|
|
সারোয়ার আলম
প্রযুক্তির সুফলের পাশাপাশি কুফলও বাস্তবতা। ব্যবহারকারীর মানসিকতা ও অভিপ্রায় অনুযায়ী প্রযুক্তির ব্যবহার কিংবা অপব্যবহার ঘটে থাকে। দুঃখজনক হলো দেশে প্রাযুক্তিক উন্নয়নের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইমও বেড়ে চলেছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হচ্ছে। পর্নোগ্রাফি, অনলাইন প্রতারণা ও অনলাইন ব্যাংক জালিয়াতি তো আছেই। এক বছরে ৩২১টি অভিযোগের মধ্যে সাইবার অপরাধে ৯৯ জনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বছরের শুরুতেই ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উপলক্ষে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সুন্দরভাবে সবাইকে সচেতন করার প্রয়াস পেয়েছিলেন। তিনি ইন্টারনেটে ক্ষতিকর ডিজিটাল কনটেন্ট ফিল্টারিং করার ওপর গুরুত্বারোপ করে সত্য-মিথ্যা যাচাই ছাড়া ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন কিছু শেয়ার বা পোস্ট না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। না জেনেবুঝে মন্তব্য করা এবং সবার মাঝে অসত্য খবর বা বক্তব্য ছড়িয়ে দেবার মধ্য দিয়ে কোন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অজান্তেই নিজেকে বিপদগ্রস্ত করে তুলতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের মর্মকথা স্মরণে রাখলে তা শুধু নিজের জন্যই নয়, দেশ ও জাতির জন্যও কল্যাণকর হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।
সাইবার বিশ্বে বাংলাদেশ নতুন। এর সম্ভাবনা ও সঙ্কট সম্পর্কে সরকার সম্যক অবগত। সরকার ইতোমধ্যে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর সাইন্স এ্যান্ড টেকনোলজি (এনসিএসটি) গঠন করেছে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কোর্স চালু করা দরকার যাতে করে আমাদের নতুন প্রজন্ম সাইবার নিরাপত্তা এবং ইনফরমেশন সিকিউরিটি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে দেশের আইসিটি অবকাঠামো গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।
দেশে অনলাইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি জ্যামিতিকহারে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। তাই এই সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ ও দমন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। কোন থানার অধীনস্থ এলাকায় যদি খুনের মতো অপরাধ সংঘটিত হয়, তাহলে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে অপরাধের আলামত সংগ্রহের। তেমনি সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রেও কিছু অত্যাবশ্যক ব্যবস্থা নিতে হয়। সেসব ব্যাপারে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনও শতভাগ সক্ষম ও সচেতন নয়। উন্নত বিশ্ব সাইবার অপরাধ নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক ও সচেতন। এ ব্যাপারে আমাদের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। সাম্প্রতিককালে দেশে যেসব সাইবার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার ভেতরে প্রধান হচ্ছে ব্যক্তিগত হয়রানি। কারও সম্পর্কে মানহানিকর বা আপত্তিকর কথা ও ছবি পোস্ট করা। সামাজিক মাধ্যমের ব্যাপক প্রসারের ফলে এই অপরাধের মাত্রা অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে নারী সংক্রান্ত সাইবার অপরাধের মাত্রা বেশি। অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যাচ্ছে। অনেকে লজ্জা বা সঙ্কোচের জন্য সেটাও করছে না। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নারীদের ৭৩ শতাংশই নানা ধরনের সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। এর ২৩ শতাংশ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন না। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সাইবার অপরাধ দমনে অত্যন্ত সক্রিয়। ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধের অন্যপিঠে ইন্টারনেটে তথ্যের প্রবাহ ঠিক রেখে পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) অপরাধ দমনে দিনরাত কাজ করছে। সাইবার জগতকে সরকারের তিনটি সংস্থা সর্বক্ষণিক মনিটর করার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছে। সংস্থাগুলোতে বাড়তি জনবল নিয়োগও করে সাইবার জগতকে নিরাপদ রাখার কাজ চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আর আগের মতো দেশবিরোধী অপপ্রচার হচ্ছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের ফলে ব্যক্তি পর্যায়ে অপরাধও কমে আসছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার রোধে ‘কন্টেন্ট ফিল্টারিং’ করা হচ্ছে। এ জন্য একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। কোন পরিস্থিতিতেই রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তা বিঘিœত হতে দেয়া হবে না।
|
|
|
|
মোমিন মেহেদী
বাংলাদেশকে কখনোই ভালো না বেসে পারেন নি যারা; তারা আজো জীবন্ত ইতিহাসের পাতায়। সেই ইতিহাসের রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে যেতে বলতে তৈরি হই আলোর কথা-ভালোর কথা। আর একারণেই সাহসের সাথে বলছি- পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার পর এবার মৃত্যুকূপ হলো আধুনিক ঢাকার বনানী। বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউর এফ আর টাওয়ার নামের ২২তলা ভবনের কয়েকটি ফ্লোর আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে। আগুনে ২৫ জন নিহত ও ৭৫ জন আহত হয়েছে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৭১ জন নিহত ও ৬৭ জন আহত হয়। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বনানীতে ঘটল এই মর্মান্তিক ঘটনা। আধুনিক ঢাকায় কোনো ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে এত প্রাণহানির ঘটনা এই প্রথম। আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রাণ মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পৃথক চারটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি উদ্ধারকারী দল ভবনে প্রবেশ করে। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দলও ভেতরে যায়। বিভিন্ন তথ্য সূত্র থেকে জানতে পেরেছি- ভবনের ৭ থেকে ১১ তলা পর্যন্ত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এফ আর টাওয়ারের ৯ তলা থেকে ১৩ তলা পর্যন্ত পাঁচটি ফ্লোর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। ফাল্গুনের তপ্ত দুপুরেও ধোঁয়ার কারণে ওই এলাকা ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। ধোঁয়ায় আটকেপড়া অসংখ্য মানুষ বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিল। এই আকুতি তৈরি করেছে আমার মত অসংখ্য মানুষের মনে প্রশ্নের পর প্রশ্ন। তবে উত্তর এসেছে দায়সাড়া গোছের। আর একারণেই বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, দায়সাড়া গোছের রাষ্ট্রপরিচালনাকারীদের জন্যই যে ২২ তলা ভবনটির সবকটি ফ্লোরেই কোনো না কোনো অফিস আছে, আর নিচের দুটি তলায় মার্কেট; সেই সহ¯্র মানুষের ভবনটিতে ১২ জন করে ধারণ ক্ষমতার তিনটি লিফট ও জরুরি সিঁড়ি আছে দুটি। বেজমেন্টে পার্কিং আছে। আগুনের পর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে লিফট বন্ধ হয়ে যায়। প্রচন্ড ধোঁয়ার কারণে সাততলা থেকে উপরে যারা ছিল তারা সিঁড়ি দিয়ে নামতে পারেনি। যে কারণে একাধিক ব্যক্তিকে লোহার রড হাতে নিয়ে ভবনের কাচ ভাঙতে দেখা যায়। যাতে ভাঙা কাচ দিয়ে ধোঁয়া বেরিয়ে যায়। অন্যান্য ফ্লোরেও একইভাবে ধোঁয়া বের করার জন্য আটকেপড়া লোকজন কাচ ভেঙে দেন। আতঙ্কিত মানুষ লাফিয়ে নিচে পড়ে। কেউ কেউ পাইপ বা তার বেয়ে নিচে নামেন। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে লাফ দিয়ে অন্য ভবনে চলে যান। অসহনীয় জ্যাম আর জনারণ্যের কারনে নির্মম চুড়িহাট্টা ট্রাজেডি, বনানী ট্রাজেডি সহ প্রায় সকল ট্রাজেডিতে ফায়ার সার্ভিস ইউনিট পৌছেছে দেরিতে। তবুও আমাদের ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- আগুন দ্রুততার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে বনানী-গুলশান এলাকায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেত। ভবনটির ফায়ারের ছাড়পত্র ছিল কিনা, বা নকশার বাইরে ভবনে কিছু ছিল কিনা খতিয়ে দেখা হবে। ফায়ার সার্ভিস দেরিতে আসা ও অগ্নিনির্বাপণের কাজ বিলম্বের প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল। তা ছাড়া আমাদের অত্যাধুনিক গাড়িগুলো সম্পূর্ণ ডিজিটাল। এগুলো সেট করতে কিছুটা সময় লাগে। ভবনে সোফা সেট, পর্দাসহ সিনথেটিকের তৈরি বিভিন্ন উপকরণ ছিল, যা অতিমাত্রায় দাহ্য। এগুলো থেকে প্রচন্ড ধোঁয়া হওয়ায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রচন্ড বেগ পেতে হয়। আমরা আগুন পেয়েছি ১২ ও ১৩ তলাতে। আগুন ৮ তলা থেকেও উঠতে পারে ৯ তলা থেকেও উঠতে পারে। তবে আমরা ১২ তলাতে আগুন পেয়েছি। আগুন কোন ফ্লোরে কীভাবে লেগেছে তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। আমরা আটকে পড়া অন্তত ১০০ জনকে উদ্ধার করেছি। উঁচু ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা বিশ্বের সবচাইতে বিপজ্জনক ফায়ার ফাইটিং। ভবনটির দুই পাশে খালি জায়গা ছিল না। এ ধরনের ভবনে আগুন লাগলে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। আমাদের ২২টি টিম কাজ করেছে। শুরুতে ডিফেন্সিভ ও পরে অফেন্সিভ মুডে কাজ করি। আগুন লাগার খবর পাওয়ার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। রাস্তায় যানজটের বিষয়টিও আপনার বিবেচনায় রাখতে হবে। কোথায় থেকে আগুনের সূত্রপাত সেটা তদন্ত করে বলা যাবে। প্রাথমিক সার্চে ভেতরে কেউ আটকা পড়েনি। আমরা বড় লেডার দিয়ে উদ্ধার করেছি। ভবনের এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে লোকজন চলে গেছে। চরম বাস্তবতা হলো- নির্মম অগ্নিকান্ডগুলোর পর আমরা দেখেছি যে, আগুনের কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, নির্মাণজনিত ত্রুটি অনুসন্ধানসহ এ ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ করার জন্য চারটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ফায়ার সার্ভিস এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এসব কমিটি করেছে। বাংলাদেশে সমস্যায় আক্রান্ত জনগনের জন্য সমাধান নিয়ে কে কি ভেবেছে আমার জানা নেই। তবে আমি বরাবরই সমস্যা দেখলে সমাধানের জন্য নিরন্তর রাজনৈতিক কর্মসূচী ও লেখালেখি করে যাচ্ছি। কেন যেন কানে বাজছে- নরককুন্ডের ক্ষেত্র যেন ‘তৈরি হয়েই ছিল’; যেভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল চকবাজারের আগুন; ক্যানেস্তারাগুলো কাজ করেছে ‘বোমার মত’। অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর এক কর্মী কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন আজগর লেনের পাশে। কিন্তু সরু রাস্তা দেখে কোন পথে যাবেন, তা নিয়ে পড়েন দ্বিধায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন- ‘মানুষ পালাচ্ছিল। কেউ বলছিল হায়দার বক্স দিয়ে যেতে, কেউ বলছিল আজগর লেন দিয়ে ঢুকতে। আজগর লেনের উত্তর মাথা থেকে চুড়িহাট্টা মসজিদের সামনের আগুন দেখা যাচ্ছিল। তখন আজগর লেন দিয়েই গাড়ি ঢুকালাম। আগে আসলে কী হবে? প্রায় সাড়ে ৪ হাজার লিটার পানির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন গাড়িটি সরু রাস্তা দিয়ে ঢুকাতে বেগ পেতে হয়েছে চালককে। চালক আমাদের বলে, ‘ভাই গাড়ি আজগর লেনের রাস্তা দিয়ে ঢুকবে না’। তখন আমরা চালককে অভয় দিয়ে ঢুকাই। গাড়িটি যদি তখন না ঢোকানো যেত, তাহলে আগুন আরও উত্তরে চলে আসত। রাস্তায় যানজট থাকলেও বোর্ড অফিসের সামনে দিয়ে আমার গাড়ি লালবাগ ফায়ার স্টেশন থেকে আনতে সময় লেগেছে ৩ মিনিট ৫২ সেকেন্ড। গাড়ি ঢোকানোর পরই ফায়ারম্যান শাহজালাল আর দিপুল পাইপ টান দিয়ে নামিয়ে পানি ছুড়তে শুরু করেন। আগুনের তীব্রতা দেখে আরও ইউনিটের প্রয়োজনের কথা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানান তিনি। অগ্নিকান্ডস্থল থেকে সোয়া এক কিলোমিটার দূরত্ব থেকে লালবাগ ফায়ার স্টেশনের গাড়ি আসার পরপরই চলে আসে পলাশী ফায়ার স্টেশনের গাড়ি। ভয়াবহ এই আগুন নেভাতে আরও ৩৫টি ইউনিট পরে যুক্ত হয়। এত কিছুর পরও সত্য কথাটি হলো- রাস্তা সরু হওয়ার কারণে হাইরাইজ ভবনে অগ্নিনির্বাপণের জন্য আমাদের যেসব গাড়ি আছে, তার একটাও ঢোকেনি। ওই সব গাড়ি ঢোকানো গেলে আরও তাড়াতাড়ি আগুন নেভানো যেত। কারণ সরু রাস্তা আর এ ধরনের অবস্থায় প্রচুর ক্রাউডি হয়।’ উন্নত বিশ্বে যেখানে আগুন লাগে, সেখানেই পৌছে যায় অত্যাধুনিক ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। শুধু পৌছে গিয়েই শেষ নয়; উদ্ধার করার জন্য একদিকে থাকে ক্রেন, উন্নমানের ট্রলি সহ বিভিন্ন উদ্ধার যন্ত্র এবং পানি বোঝাই গাড়ি। অথচ বাংলাদেশে? তা নেই-ই, বরং গিয়ে আগুন নেভাতে পানি খুঁজতে থাকে। কোথাও নেই পানি উত্তলন যন্ত্রও। এমন অনেক কারনেই আজ যখন গবেষষার চেষ্টা করি, তখনজানতে পারি- বাংলাদেশে নানা ধরনের দুর্ঘটনায় যতই প্রাণ যায়, তার ৭১ শতাংশই কেড়ে নেয় সড়ক। অর্থাৎ, বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় ১০০ জন নিহত হলে তার ৭১ জনই প্রাণ হারায় সড়ক দুর্ঘটনায়। দুর্ঘটনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জীবনহানি ঘটছে নৌপথে। ২০১৮ সালে দেশে সাত ধরনের দুর্ঘটনায় যত মানুষ মারা গেছে, তার ১৮ শতাংশই প্রাণ হারিয়েছে নৌ দুর্ঘটনায়। জীবন কেড়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে পরের অবস্থানে রয়েছে আগুন। গত বছর দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে শতকরা প্রায় ২ জন নিহত হয় অগ্নিকান্ডের ঘটনায়। গত মাসে আগুনে চুড়িহাট্টায় ৭১ জন নিহত হওয়ার পর বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুনে ২৫ জনের প্রাণ যায়। অর্থাৎ, এ বছরের প্রথম তিন মাসে অগ্নিকান্ডের এ দুটি বড় দুর্ঘটনায় ৯৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ সংখ্যা ২০১৬-১৭ সালে অগ্নিকান্ডে সারা দেশে নিহতের সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৩৫০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১ হাজার ৬৯ জন। আগের বছর সড়ক দুর্ঘটনায় জীবন গেছে ২ হাজার ২১৭ জনের। যদিও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা এর কয়েক গুণ বেশি। সরকার প্রদত্ত তথ্য সবসমই বাংলাদেশে সীমিত এসেছে। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী এই সংখ্যা দ্বিগুন ছাড়িয়ে গেছে। কারণ হিসেবে বহু বিষয় থাকলেও একটি বিষয় সবচেয়ে বড়; আর তা হলো- অপরিকল্পিত নগর। আইন না মানার প্রবণতা। কর্তৃপক্ষের অবহেলা। সব মিলিয়ে মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে বাস রাজধানী ঢাকার মানুষের। পুরনো ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকা হিসেবে খ্যাত নিমতলী ও চুড়িহাট্টায় আগুনের বিভীষিকার কথা এখনও কেউ ভুলতে পারেনি। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার অভিজাত এলাকা হিসেবে খ্যাত বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে ফারুক-রুপায়ন টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মুহূর্তের মধ্যে নিভে গেল ২৫ তাজা প্রাণ। প্রশ্ন হলো, কত অশ্রুজলে থামবে এমন মৃত্যু। কত স্বজনহারা মানুষের গগনবিদারী আর্তনাদে কর্তৃপক্ষের টনক লড়বে। কত অসহায় পরিবার বাড়লে কার্যকর হবে আইন। কত বিপর্যয়, চোখের সামনে বিভীষিকাময় মৃত্যু হলে গড়ে উঠবে নিরাপদ নগরী। বাড়বে নাগরিক সচেতনতা। প্রশ্নগুলো ফের সামনে এসেছে। নগরীর ৯৫ ভাগ ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ভবনে অগ্নি নিরাপত্তায় নেয়া হয়নি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। যেমন ছিল না বনানীর এফআর টাওয়ারে। ভবনটির সিঁড়িপথও ছিল অপ্রতুল। অনুমোদনহীন কয়েকটি তলা বাড়ানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই এফআর টাওয়ারের চারপাশে গা ঘেষে ঘেষে নির্মাণ করা হয়েছে একের পর এক সুউচ্চ ভবন। অথচ বিল্ডিং কোড অনুযায়ী এক ভবন থেকে অন্য ভবনের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম রয়েছে। চরম বাস্তবতা হলো- এফআর টাওয়ার থেকে বেরিয়ে আসার জরুরী পথ ছিল না; যা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক। ফায়ার এক্সিট বা আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জরুরী নির্গমন পথ থাকলে হয়ত এত হতাহত হতো না। কিংবা আগুন নেভানোর নিজস্ব ভাল ব্যবস্থা থাকলে ক্ষয়ক্ষতি এতটা হতো না। তাছাড়া বিল্ডিং কোড অনুযায়ী- প্রতিটি ভবনে থাকতে হবে স্মোক ডিটেক্টর বা ধোঁয়া শনাক্তকারী যন্ত্র। এই যন্ত্র বসানো হলে কোন তলায় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা এর ওপর উঠে গেলেই একটি শব্দ করে ভবনের সবাইকে সতর্ক করে দেবে। থাকবে হিট ডিটেক্টর সিস্টেম। এই যন্ত্র বসানো হলে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে সবাইকে জানিয়ে দেবে। এ ছাড়া একজন অগ্নিনির্বাপক কর্মকর্তা থাকবেন, যিনি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সবকিছু তদারক করবেন। সুউচ্চ ভবনে হেলিপ্যাড থাকা বাধ্যতামূলক। প্রতি সাড়ে ৫০০ বর্গফুট আয়তনের জন্য একটি করে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকতে হবে। এরপরও প্রতি তিন মাস পর পর ফায়ার ড্রিল বা অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সুউচ্চ ভবনে কমপক্ষে দুটি সিঁড়িপথ থাকবে। এমনটা হলে আর হারাতে হতো না তাজা প্রাণগুলো। সবকিছুর নেপথ্য কারণ দুর্নীতি। ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজউক সহ সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রেই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অসংখ্য ভবন নির্মিত হচ্ছে। ঝুঁকি বাড়ছে আমাদের মৃত্যুর। এমতবস্থায় সকল সেক্টরের দুর্নীতি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি সময়ের আলোচিত দৈনিক এশিয়া বানীর প্রকাশক জনাব তাজুল ইসলামের যুক্তিনুসারে ভ্রাম্যমান ফায়ার সার্ভিস পয়েন্ট প্রত্যাশা করছি। তাঁর মতে যদি চকবাজারে ফায়ার সার্ভিস যথাযথ সময়ে পৌছতে পারতো, তাহলে কিছু প্রাণ হয়তো আরো বেঁেচ যেতো, ক্ষয় ক্ষতিও কম হতো। একই কথা বনানী বা গুলশানের বেলাও। যেহেতু একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছেই, সেহেতু সতর্কতার সাথে ভ্রাম্যমান ফায়ার সার্ভিস ইউনিট কিছু গুরুত্ত্বপূর্ণ ও ঝুঁকির্পূর্ণ এলাকায় রাখলে নিরাপত্তায় অগ্রসর হবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি আমি ব্যাক্তিগতভাবে চাই ঋরৎব যুফৎধহঃ -এর ব্যবস্থা করা হোক। যেহেতু ১ কিলোমিটার দূরের পুকুর থেকে পানি সংযোগ দেওয়া হয়েছিলো চকবাজারে। মানুষের পায়ের চাপে সেই পানি প্রবাহ বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো; সেহেতু তার থেকে উত্তরণের জন্য ঋরৎব যুফৎধহঃ খুবই জরুরী। যা আমাদের দেশের রাজনীতিক বা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ভাবেনইনি। অথচ ১৮০১ সালে আবিষ্কার হয়েছে। ২১৮ বছরেও এদেশে কোথাও ঋরৎব যুফৎধহঃ লাগানো হয়নি। আমরা কি এতটাই পিছিয়ে?’ হ্যাঁ, আমরা রাজনীতি-ক্ষমতা আর দুর্নীতির গ্যারাকলে পড়ে অনেক পিছিয়ে আছি। পুরো জাতি পিছিয়ে আছে। কেননা, প্রতিদিন এই দেশে শত কোটি টাকার রাজনৈতিক কর্মসূচী পালিত হয়; দুর্নীতি হয় অন্তত ৩ থেকে ৪ শত কোটি টাকার। চাঁদা ওঠে ঠেলা গাড়ি-রিক্সা-সিএনজি-বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে বড় বড় জুয়ার কোটে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৭০ কোটি টাকা। তবু বাংলাদেশ পিছিয়ে যায়, কারণ একটাই এই টাকা জনগনের রক্ত চুষে চুষে পাচার হয় আমেরিকায়-মালয়েশিয়ায়-অস্টেলিয়ায়-কানাডায়-লন্ডনে আর রাশিয়া বড় বড় পতিতার দেশে। বউকে নিয়ে দেশে থাকেন নেতারা, বিদেশ গেলে সেখানে থাকেন রক্ষিতাদের সাথে। তাই গজব নেমে আসে বাংলাদেশে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য সবসময় বলে এসেছেন নীতিহীন নেতা-দুর্নীতিবাজদের বেলায় তিনি জিরো টলারেন্সে। কিন্তু তার ক্ষমতার এই মসনদ তো ধরে রেখেছেন নেতা নামক জুয়ারী-চাদাবাজ-জঙ্গী-সন্ত্রাসী আর আমলা-প্রশাসনের রাঘব বোয়ালরা। তারা যেভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিকে ঘোরায়, সেদিকেই ঘোরে বাংলাদেশ। পাশাপাশি শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-সমাজ এমনকি ধর্মীয় কমূসূচীও চলে তাদের মত করে। তারা হয়তো জানেই না যে, এই ঢাকায় ৩০৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় আড়াই কোটি লোক থাকে (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২৩০০০+ জন) আর কোন দুর্ঘটনা ঘটতেছে না বলে বলে মুখে ফেনা উঠাচ্ছেন নীতি আদর্শ বিবর্জিত রাজনীতি ও প্রশাসনিক কর্তাগন। উত্তরণ প্রয়োজন, খুবই প্রয়োজন তাই সবার প্রতি অনুরোধ জানাই- চলুন নিবেদিত থাকি সত্য-সাহস-আদর্শ আর নীতির সাথে সকল সমস্যা সমাধানের জন্য নিরন্তর...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি ও প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় পরিবেশধারা
|
|
|
|
| ইকতেদার আহমেদ |
প্রায় সব রাষ্ট্রই জাতিসংঘের সদস্য। এগুলোর মধ্যে কেবল পাঁচটি রাষ্ট্র- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন- নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। এ পাঁচ রাষ্ট্রের প্রতিটির রয়েছে ভেটো ক্ষমতা। ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন যে কোনো রাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এ ক্ষমতা প্রয়োগ করলে সিদ্ধান্তটি কার্যকারিতা হারায়। এই পাঁচটি রাষ্ট্রই আবার পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন। এসব রাষ্ট্রের অস্ত্রভাণ্ডারে পারমাণবিক বোমার পাশাপাশি হাইড্রোজেন বোমাও রয়েছে। হাইড্রোজেন বোমা পারমাণবিক বোমার চেয়ে একশ` গুণ অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন। সমর বিশারদদের মতে, বর্তমান পৃথিবীকে ধ্বংস করার জন্য তিনটি হাইড্রোজেন বোমাই যথেষ্ট।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ছাড়াও সংস্থাটির আরও কতিপয় সদস্যরাষ্ট্রের স্বীকৃত পারমাণবিক বোমা রয়েছে। এ রাষ্ট্রগুলো হল ভারত, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়া। উত্তর কোরিয়ার দাবি, তাদের কাছে হাইড্রোজেন বোমাও রয়েছে। ইসরাইলের হেফাজতে পারমাণবিক বোমা থাকার বিষয়টি স্বীকৃত না হলেও রাষ্ট্রটি যে পারমাণবিক শক্তিধর তা অনেকটাই নিশ্চিত। পাকিস্তান, ভারত ও ইসরাইল পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। অপরদিকে উত্তর কোরিয়া এ চুক্তিটি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
সাদ্দাম হোসেনের জীবদ্দশায় ইরাক পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের কাজ শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরাইল ১৯৮১ সালে বোমাবর্ষণ করে ইরাকের পারমাণবিক স্থাপনাটি গুঁড়িয়ে দেয়। এরপর ২০০৭ সালে ইসরাইল আবারও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় সিরিয়ার পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে স্থাপনাটি ধ্বংস করে দেয়। লিবিয়ার শাসক গাদ্দাফিকে ২০১১ সালে হত্যা করার আগে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররাষ্ট্র যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইসরাইল সেখানে ব্যাপকভাবে বোমাবর্ষণ করে পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করে দেয়। ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়ার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের যে যুক্তি তা হল- এসব রাষ্ট্র পারমাণবিক শক্তিধর হলে ইসরাইলসহ পৃথিবীর অপরাপর রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বহুজাতিক বাহিনী কর্তৃক ইরাক ও লিবিয়ায় আগ্রাসন চালানোর আগে দাবি করা হয়েছিল, ওই দুই রাষ্ট্রের কাছে গণবিধ্বংসী রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র রয়েছে, যা ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। কিন্তু উভয় রাষ্ট্রে আগ্রাসন চালানোর পর দেখা গেল রাষ্ট্র দুটির হেফাজতে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র থাকার অভিযোগ মিথ্যা। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে তার ও তার মিত্রদের বাণিজ্যিক স্বার্থে ইরাক ও লিবিয়ায় হামলা চালিয়ে রাষ্ট্র দুটির শাসকদ্বয়কে হত্যা করার পর সেখানে যে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে অদ্যাবধি তার অবসান হয়নি। উভয় রাষ্ট্রে হামলাজনিত কারণে কয়েক লাখ লোক নিহত ও আহত হওয়া ছাড়াও অগণিত মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে দেশান্তরী হতে বাধ্য হয়েছে। এ দুটি রাষ্ট্রকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যেভাবে অস্থিতিশীল করেছে, অনুরূপ পন্থায় তারা সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করে অনেকটা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে।
ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের মদদে ইরাক ইরান আক্রমণ করলে কোনো লক্ষ্য অর্জন ছাড়াই সর্বাত্মক যুদ্ধ দ্বারা উভয় রাষ্ট্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এত কিছুর পরও ইরান অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। ইরানের একাধিক পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে; তবে দেশটির দাবি তা শুধু শান্তিপূর্ণ কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু ইসরাইল ইরানের এ দাবি মানতে অপারগ এবং ইতিপূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের মদদে দেশটি একাধিকবার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ইরানের ওপর যে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, তা প্রকারান্তরে ইরানকে সব ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে এগিয়ে নিয়েছে। এটি দেখে যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্ররা হয়েছে বিস্মিত। ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র না থাকলেও তার অস্ত্রভাণ্ডারে তিনশ` থেকে পনেরোশ` মাইল পাল্লার দেড় লক্ষাধিক মিসাইল রয়েছে। এগুলোর আওতা ইসরাইল অবধি বিস্তৃত এবং ইসরাইলের যে কোনো আগ্রাসন ইরান যে অত্যন্ত কঠোরভাবে দমন করতে সক্ষম, সে সত্যটি আজ ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই অনুধাবন করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোরিয়া উপদ্বীপে রাজনৈতিক সংঘাত দেখা দিলে যুক্তরাষ্ট্রের মদদে তা ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধে রূপ নেয়। এ যুদ্ধ তিন বছর চলার পর উপদ্বীপটিকে দু`ভাগে ভাগ করে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া নামে দুটি রাষ্ট্র তৈরি করা হলেও উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে আজও যুদ্ধাবস্থা অব্যাহত রয়েছে। উত্তর কোরিয়া ইতিমধ্যে দূরপাল্লার মিসাইলের কয়েকটি পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করেছে এবং একটি উৎক্ষেপণ রয়েছে সম্পন্নের অপেক্ষায়। উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে জাতিসংঘ কর্তৃক আরোপিত অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে পড়ে আজ বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উত্তর কোরিয়াকে হুশিয়ারি প্রদান করে বলা হয়েছে- রাষ্ট্রটি পুনরায় দূরপাল্লার মিসাইলের পরীক্ষা চালালে তার ওপর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত মার্কিন বিমানবাহী রণতরী থেকে হামলা চালানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন হুমকির বিপরীতে উত্তর কোরিয়া থেকে পাল্টা হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে- উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আক্রান্ত হলে তারা তাদের বিমানবাহী রণতরীসহ পার্শ্ববর্তী ঘাঁটিগুলো ও মূল ভূখণ্ডে পারমাণবিক হামলা চালাতে কোনোরূপ দ্বিধা করবে না।
এটি অনস্বীকার্য যে, উত্তর কোরিয়া আজ পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হওয়ার কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের মতো ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের হুমকি ও আগ্রাসন মোকাবেলার সাহস দেখাতে সমর্থ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক উত্তর কোরিয়া আক্রান্ত হলে উভয় রাষ্ট্র পারমাণবিক ও হাইড্রোজেন বোমার অধিকারী হওয়ার কারণে সে যুদ্ধ কোনো রাষ্ট্রের জন্যই যে চূড়ান্ত বিজয় বয়ে আনতে পারবে না, তা তাদের উপলব্ধিতে থাকলেও পারস্পরিক অনাস্থার কারণে যুদ্ধাবস্থা থেকে রাষ্ট্র দুটি সরে আসার ব্যাপারে অনেকটাই দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে ইরাকের সাদ্দাম হোসেন ও লিবিয়ার গাদ্দাফিকে যে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে, রাষ্ট্র দুটির অস্ত্রভাণ্ডারে পারমাণবিক বোমার মজুদ থাকলে তা হতো না। ইরাক ও লিবিয়ার দুর্ভাগ্য, উভয় রাষ্ট্রে যুক্তরাষ্ট্রের মদদে আগ্রাসন পরিচালনার সময় রাশিয়া ও চীন ছিল নিষ্ক্রিয়। বর্তমানে সিরিয়া ও উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে রাশিয়া ও চীনের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত। সিরিয়ায় রাশিয়ার প্রত্যক্ষ উপস্থিতির কারণে সে দেশে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সমর্থন নিয়ে যেসব বিদ্রোহী দল যুদ্ধ করছে আজ তারা অনেকটা নিশ্চিহ্নের পথে।
বিগত শতকের শেষ দশকের সূচনালগ্নে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর প্রায় দু`যুগ ধরে য্ক্তুরাষ্ট্র এককভাবে বিশ্বে পরাশক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিল। বর্তমানে রাশিয়া ও চীন অর্থনৈতিক ও সামরিক উভয় দিক থেকে সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্য স্তিমিত হওয়ার পথে। এখন উত্তর কোরিয়াকে আগের মতো চোখ রাঙিয়ে পদাবনত করার সাহস দেখাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও একাধিকবার ভাবতে হয়।
সিরিয়ার বিমানঘাঁটিতে ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত মার্কিন রণতরী থেকে ক্রুজ মিসাইল হামলা পরিচালনার আগে রাষ্ট্রটির পক্ষ থেকে সিরিয়ার ক্ষমতাসীন আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এ বিষয়ে সিরিয়া ও রাশিয়ার দাবি, আসাদ সরকার কোনোরূপ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেনি, বরং যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার বিমানঘাঁটিতে হামলার অজুহাত সৃষ্টির অভিপ্রায়ে আসাদ সরকার কর্তৃক রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অলীক অভিযোগ এনেছে। প্রণিধানযোগ্য যে, সিরিয়ার বিমানঘাঁটিতে মার্কিন ক্রুজ মিসাইল হামলা পরিচালনার বিষয়ে জাতিসংঘের কোনো অনুমোদন ছিল না।
সিরিয়ায় ক্রুজ মিসাইল হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই যুক্তরাষ্ট্র পাক-আফগান সীমান্তে আফগানিস্তানের নানগড়হার প্রদেশের অচিন জেলায় সবচেয়ে শক্তিধর অপারমাণবিক বোমা `মোয়াব` নিক্ষেপ করে তালেবানদের সুরক্ষিত সুড়ঙ্গপথ ও ভূঅভ্যন্তরস্থ কাঠামো ধ্বংসের দাবি করেছে। বিভিন্ন নিরপেক্ষ সামরিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, আফগানিস্তানে যখন সোভিয়েত সমর্থনপুষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে তালেবানরা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় যুদ্ধে লিপ্ত ছিল, তখন নানগড়হার প্রদেশের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ`র প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এ সুড়ঙ্গপথ ও ভূগর্ভস্থ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক যে সুড়ঙ্গপথ ও স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে, তা তারাই সৃষ্টি করেছিল তৎকালীন আফগান সরকার ও সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত তালেবানদের শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম পরিহাস, আজ সেই তালেবানদের অবস্থান আফগানিস্তানের বর্তমান মার্কিন মদদপুষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে। আর তাই নিজ সৃষ্ট সুড়ঙ্গ ও ভুগর্ভস্থ স্থাপনা তাদের নিজেদেরই ধ্বংস করতে হয়! এর চেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা আর কী হতে পারে!
উত্তর কোরিয়া ও ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকা যদি যুক্তরাষ্ট্রের দাবিমতে বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি হয়, তাহলে এ কথা বলার অবকাশ আছে কি- যুক্তরাষ্ট্র ও নিরাপত্তা পরিষদের অপর চার রাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করতে সহায়ক হয়েছে? বস্তুত পৃথিবীর সব রাষ্ট্রের হেফাজতে থাকা পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করেই কেবল পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের মাধ্যমে বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া ও আফগানিস্তানে যে ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে, তা যে মিথ্যা অজুহাতে করা হয়েছে এটি আজ বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের কাছে স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তা এখন তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসী বা আগ্রাসী আখ্যা দেয়া হলে বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র তা মানতে নারাজ। যুক্তরাষ্ট্র নিজে তার সামরিক প্রাধান্য অক্ষুণ্ন রাখার জন্য যখন উন্নততর মিসাইল উদ্ভাবন নিয়ে ব্যস্ত এবং যখন তার অস্ত্রভাণ্ডার তার অন্যায় আচরণের বিরোধিতাকারী কোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ, তখন অপর কোনো রাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা কি দোষণীয়, নাকি তা মার্কিন আগ্রাসন ও অন্যায় আচরণ মোকাবেলায় ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক- বিষয়টি ভেবে দেখা প্রয়োজন।
ইকতেদার আহমেদ : সাবেক জজ; সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
[email protected]
|
|
|
|
আলী যাকের :
এই পরিণত বয়সে এসে আমার এই পরম আশাবাদী মনটাকে আর বদলাতে চাই না। থাকুক না সে যেমন আছে? জীবনের সেই কোন বিহানবেলা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমার জীবনে রোদ, বৃষ্টি এবং দাবদাহের প্রচণ্ডতা অথবা কালো মেঘের ভয়াবহ কটাক্ষ আমাকে জীবনবিমুখ করতে পারেনি। বড় সৌভাগ্য নিয়ে জন্মেছিলাম বোধ হয়, যে কারণে আমার জীবনের কোনো সমস্যাই আমি মাটিচাপা দিয়ে রাখতে পারিনি; বরং অতি স্বচ্ছন্দে মুখোমুখি হয়েছি তার। জীবন কখনো আমাকে ফিরিয়ে দেয়নি। সব সমস্যার একটা না একটা সমাধান খুঁজে পেয়েছি। এভাবেই জীবন কেটেছে যুগের পর যুগ। এভাবেই চালিয়ে যেতে চাই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।
আমাদের সমাজে সাম্প্রতিককালে চিন্তাশীল একটি জনগোষ্ঠী অনেক লেখাপড়া করে, অনেক চিন্তাভাবনা করে যেকোনো সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করে। আমি এ পর্যন্ত দেখিনি যে তারা কখনো কোনো বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পেরেছে। বাল্যকালে বাবার কাছে শুনেছি যে একজন ইংরেজ সাহেবকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, `এই পরিস্থিতিতে আমি কী করব?` তার উত্তরে তিনি ভেবেচিন্তে বলবেন, `আমি যদি তুমি হতাম এবং সমস্যাটা যদি ঠিক একই রকম হতো, একচুলও এদিক-ওদিক না হয়ে, তাহলে আমি হয়তো তুমি যা ভাবার চেষ্টা করছ সেই সম্পর্কে আরো একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, ভেবেচিন্তে অতঃপর একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করতাম।` এমনই জটিল ছিল তাঁদের সহজীকরণ প্রক্রিয়া। কোনো একটা জটিল বিষয় নিয়ে যদি একাধিক পণ্ডিত ব্যক্তি একসঙ্গে বসে সেই জটিলতার সমাধানে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার চেষ্টা করেন, তাহলে সাধারণত এই রকম দাঁড়ায়, যেমন লর্ড বার্ট্রান্ড রাসেল বলেছেন, `একটি সম্মেলনের সংজ্ঞা হচ্ছে কতিপয় বিদ্বান, বুদ্ধিমান এবং সবজান্তা মানুষের দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে তর্কবিতর্কে প্রবৃত্ত হওয়া। এর ফলে তাঁরা এককভাবে সমস্যাটির সমাধানের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেন না বটে, তবে যৌথভাবে এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে সমস্যাটির আসলেই কোনো সমাধান নেই। `
হবুচন্দ্র রাজার পায়ে ধুলা লাগে, তাই তাঁর মন্ত্রী গোবুচন্দ্রকে তিনি কড়া ধমক দিয়ে বললেন—এ সমস্যার একটি সমাধান করা দরকার। এর পরে রবীন্দ্রনাথের বর্ণনায় আছে—শুনিয়া গোবু ভাবিয়া হল খুন/দারুণ ত্রাসে ঘর্ম বহে গাত্রে/পণ্ডিতের হইল মুখ চুন/পাত্রদের নিদ্রা নাহি রাত্রে/রান্নাঘরে নাহিকো চড়ে হাঁড়ি/কান্নাকাটি পড়িল বাড়ি-মধ্যে/অশ্রুজলে ভাসায়ে পাকা দাড়ি/কহিলা গোবু হবুর পাদপদ্মে—/‘যদি না ধুলা লাগিবে তব পায়ে/পায়ের ধুলা পাইব কী উপায়ে!`
আমরা সাধারণ মানুষরা বড় বড় তত্ত্বকথা শুনে অভ্যস্ত। শুরুতে ভাবতাম যে এর মধ্যে অন্তর্নিহিত কোনো উপদেশ কিংবা পরামর্শ নিশ্চয়ই আছে, যার দ্বারা সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এখন যেন মনে হয় যে যেকোনো বিষয়ে অভিমত কিংবা বচনকে যদি একটু ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে শক্ত করা হয় অথবা যদি মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বলা যেতে পারে যে এই সমস্যার সমাধান এভাবেও সম্ভব, ওভাবেও সম্ভব; কিন্তু তৃতীয় কিছু চিন্তা করতে হবে, তাহলে বোধ হয় পণ্ডিতরা পালে হাওয়া পান। সাধারণ মানুষ মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে ভাবে, `বাহ, বেশ জবরদস্ত কথা বলেছে তো!` সমস্যাটি কিন্তু যেমন গ্যাঁট হয়ে বসেছিল, তেমনি বসে থাকে। বছরের পর বছর পার হয়ে যায়। কিছু সমস্যা নিজ থেকেই সমাধান হয়ে যায়, অন্যদিকে কিছু সমস্যা কিছুদিন বাদে আর সমস্যা থাকে না। বিশেষজ্ঞরা এতে বড় স্বস্তি পান। সাধারণ মানুষ তাঁদের কথা ভুলে গিয়ে নিজ নিজ জীবনধারণের চিন্তায় মগ্ন হয়।
সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে যে সমস্যার আয়তন ও সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত আরো বেশি জটিল ও অবোধগম্য হওয়ায় গণমাধ্যম এ নিয়ে বেশ খেলাধুলা করে। তারা একবার এই কথা বলে, আরেকবার সেই কথা। এসব সমস্যা, যেমন সড়ক দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে পুলিশের স্বেচ্ছাচারিতা, রাজনীতির কূটকচাল, এমনকি দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক—সব বিষয়েই আজকাল গণমাধ্যম আমাদের অহরহ তাদের মন্তব্যে ভারাক্রান্ত করছে। যদি কোনো ব্যক্তি এ নিয়ে উদ্ভট একটি মন্তব্য করে, আমি জিজ্ঞেস করে দেখেছি, তাদের জবাব সাধারণত হয় `ওই যে অমুক টিভিতে দেখলাম কিংবা তমুক পত্রিকায় পড়লাম?` কেবল পড়া এবং দেখাটাই কি যথেষ্ট? এ কথা জিজ্ঞেস করলে বলে, `আমরা তবে আর কী করব? আমরা হতদরিদ্র জনগণ, লোকে যা বলে তা-ই শুনি।` আজকাল তো এমন হয়েছে যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রায় সবারই একটি নিজস্ব মত আছে। অবশ্য এই মতটি কান-কথার ওপর নির্ভরশীল। কানের কথায় অতি পুরনো একটি কৌতুক মনে পড়ে গেল। এক লোককে বলা হলো, চিলে তার কান নিয়ে গেছে। সে নিজের কানে হাত দিয়ে পরীক্ষা না করেই চিলের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে জীবন দান করে ফেলল। এই যে নিজের কানটি আছে কি না তা না দেখা বা নিজের জ্ঞানের পরিমিতির মধ্যে যে বোধগম্যতা আছে, তা দিয়ে কোনো বিষয় বোঝার চেষ্টা না করে কেবল চিলের পেছনে পেছনে দৌড়ানো—এতে আমরা দিন দিন বড়ই কাহিল হয়ে পড়ছি।
একটু লক্ষ করলেই পাঠক বুঝতে পারবেন, আমাদের এই যে যেকোনো বিষয়ে ত্বরিত অভিমত সৃষ্টি করা এবং তা নিয়ে গণমাধ্যম থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত কথাবার্তা অবলীলায় এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বলে যাওয়া—এতে সমূহ বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে আজ ৪৫ বছর হলো। আমরা সবাই বলে বেড়াই যে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে হবে। আমরা যদি এতে সত্যিকার অর্থেই বিশ্বাস করে থাকি, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটিও আমাদের জানা দরকার। জানা দরকার কী কারণে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, যুদ্ধের সময় কারা আমাদের বন্ধু ছিল, যুদ্ধের পরেই বা কারা আমাদের দিকে সব ব্যাপারে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। এই মৌল বিষয়গুলো যদি আমরা জানি এবং বিশ্বাস করি, তাহলে একটি ইতিবাচক স্থান থেকে সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় যেকোনো বিষয়ে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি।
কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। এর আগে যে তিনজন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে একজন আই কে গুজরাল। আই কে গুজরালের বাংলাদেশ সফরের পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেছে। আমার মনে হয়েছে যে ১৯৭৪-এ মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি স্বাক্ষরের পর এই প্রথম একটি সত্যিকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সব সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে। আমরা যদি কেউ আশা করে থাকি যে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর একটি সফরেই অথবা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সফরের মাধ্যমে আমরা সব সমস্যার সমাধান করতে পারব, তাহলে সেটা নিতান্তই বালখিল্যের চিন্তা হবে। যে সমস্যাগুলো আমাদের এই দুই দেশের মধ্যে ৪২ বছর ধরে, অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিরাজ করছে এবং যে সমস্যাগুলোর সমাধানের চেষ্টা কোনো সরকারই করেনি, বিশেষ করে তারা, যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে যারা হাতে মারণাস্ত্র নিয়ে মার্শাল লর মাধ্যমে আমাদের দেশে ক্ষমতায় এসেছে, সেসব সমস্যার সমাধান একটি বা দুটি সফরেই হয়ে যাবে ভাবলে আমরা মূর্খের রাজ্যে বাস করছি। গত ৪২ বছরে সমস্যা লাঘবের চেষ্টা না করে সমস্যাকে আমরা আরো জটিল করে তোলার চেষ্টায় ব্যাপৃত ছিলাম। কথায় আছে—বাঘের ঘা হলে সে সেই ঘাটিকে সারতে দেয় না। চুলকে চুলকে জীবিত রাখে এবং জিবে চেটে পরম আনন্দ লাভ করে। আমাদের সরকারগুলোও এই বাঘের ঘায়ের নীতি অনুসরণ করেছিল। আমরা চেষ্টা করছি, ভারতের মধ্যে একটি কৃত্রিম শত্রু সৃষ্টি করে তার সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ করতে এবং সে সম্পর্কে অপার মিথ্যা কথা আমাদের দেশের মানুষকে বুঝিয়েছি নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য। আমরা যখন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন লক্ষ করেছি যে পাকিস্তানি সরকার এই একই নীতি অনুসরণ করত। কেউ যদি চিৎকার করে কেঁদে উঠত এই বলে যে `আমি খেতে পাচ্ছি না, আমায় খাবার দাও`, তাহলে পাকিস্তানি সরকার বলত, `ভারতীয় আগ্রাসনের জন্য পাকিস্তানের নিরাপত্তা হুমকির মুখে` (!) নিজস্ব সমস্যাগুলো সমাধান করতে অক্ষম এই ক্ষমতালোভীরা সব বিষয়ে অন্যকে দোষারোপ করতে বড় সিদ্ধহস্ত হয়। আমরা লক্ষ করেছি যে ভারতের যেকোনো সরকারপ্রধান যখন এখানে আসেন তখন আমাদের মধ্যে যেসব রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দল সর্বদাই ভারতবিরোধী মনোভাব পোষণ করে, তারাও একেবারে গদগদ হয়ে হামলে পড়ে তাঁদের সান্নিধ্য পেতে। কিন্তু সেসব সরকারপ্রধান চলে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তারা আবার আড়মোড়া ভেঙে তাদের ভারতবিরোধী চরিত্রের বিষবাষ্প ছড়াতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, রবীন্দ্রনাথের কণিকার একটি পদ্যের উল্লেখ করছি, `যথাসাধ্য-ভাল বলে, ওগো আরো-ভাল/কোন্্ স্বর্গপুরী তুমি করে থাকো আলো?/আরো-ভাল কেঁদে কহে, আমি থাকি হায়/অকর্মণ্য দাম্ভিকের অক্ষম ঈর্ষায়।` এবারের ভারত-বাংলাদেশ সংলাপে অনেক বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ার কথা ছিল। সব কটিতে হয়নি। এবং এই না হওয়ার পেছনে ভারতের অপারগতাই ছিল প্রধান কারণ। যত দূর জানি, অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে এবং অন্যগুলো অচিরেই হবে বলে আশা করা যায়। কেননা এগুলো সম্পর্কে দ্বিপক্ষীয় একটি বোঝাপড়া আনুষ্ঠানিক চুক্তি সইয়ের আগেই হয়ে গেছে।
দীর্ঘদিন সামরিক শাসনের জাঁতাকলে থেকে আমাদের মানসিকতা এমন হয়ে গেছে যে আমরা ধরেই নিই, যেকোনো রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে দেশের নির্বাহী প্রধানের সম্মতিই যথেষ্ট। এর কারণ এই যে এখনো আমরা সত্যিকারের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন হইনি। ভারত একটি বিশাল দেশ এবং সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর যথেষ্ট ক্ষমতা। কিন্তু যেকোনো বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোনো মুখ্যমন্ত্রী যদি গররাজি থাকেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রীরও কোনো বিষয়ে সম্মত হওয়া দুষ্কর হয়ে যায়। কিন্তু অচিরেই সব সমস্যার সমাধান হবে যদি দুই দেশের মধ্যে হৃদ্যতা থাকে, থাকে উষ্ণতা এবং সহমর্মিতা।
সব শেষে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে চাই, `তপন-উদয়ে হবে মহিমার ক্ষয়/তবু প্রভাতের চাঁদ শান্তমুখে কয়/অপেক্ষা করিয়া আছি অস্তসিন্ধুতীরে/প্রণাম করিয়া যাব উদিত রবিরে।`
অতএব, আমি অর্ধপ্রাপ্তিকে পূর্ণপ্রাপ্তি বলেই ধরে নিতে চাই। আশা করি, আশাহত হব না।
লেখক : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
|
|
|
|
একটা জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ পেয়েছে, এবার লাখো কন্ঠে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের `বিদ্রোহী` কবিতাটি আবৃত্তির আয়োজন করতে যাচ্ছে নজরুল চর্চা কেন্দ্র `বাঁশরী`। বিদ্রোহী কবির মানবতাবোধ, বিভেদহীন সমাজ গঠনের চেতনাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে এই আয়োজনটি করা হচ্ছে বলে জানান বাঁশরীর সভাপতি মোঃ খালেকুজ্জামান। তিনি জানান, ১ মে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিকেল ৪টায় লাখো কন্ঠে `বিদ্রোহী` কবিতা পাঠের আয়োজন হবে।
এই আয়োজনকে আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাবো। `বিদ্রোহী` কবিতাটি নজরুল রচনা করেছিলেন ১৯২২ সালে। `বিদ্রোহী` কবিতা প্রথম ছাপা হয় বিপ্লবী বারীন ঘোষের সহবন্দী শ্রী অবিনাশ চন্দ্র ভট্টাচার্য সম্পাদিত সাপ্তাহিক বিজলী পত্রিকায় ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারী তারিখে, শুক্রবার। মুজফ্ফর আহমদ জানিয়েছেন, `আসলে `বিদ্রোহী` কবিতা রচিত হয়েছিল ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে।` (নজরুল ইসলাম: স্মৃতিকথা, মুক্তধারা ১৯৯৯, পৃ: ১৬৭)। তখনো পর্যন্ত নজরুলের কোনো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। এই একটি কবিতা তাঁকে এতটা খ্যাতি এনে দিয়েছিলো যে, তিনি বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের পাশে দাঁড়াবার যোগ্যতা অর্জন করেন। নজরুল বিদ্রোহী অভিধা পেয়ে যান এই কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই। নজরুলের অন্য কোনো কবিতা, কোনে গল্প, প্রবন্ধ কিংবা উপন্যাস তাঁকে এত খ্যাতি এনে দিতে পারেনি। হ্যাঁ, তবে এরপর `কারার ঐ লৌহ কপাট` গানটি প্রায় বিদ্রোহীর সমতুল খ্যাতি এনে দিয়েছে।
নজরুলের বহুমুখী প্রতিভা এবং তাঁর দ্রোহী সত্তার সর্বোচ্চ বাঙময় প্রকাশ ঘটেছে এই কবিতায়। এই কবিতার অগ্নিকুন্ডু ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়েছিলো। নজরুলের সাহিত্যিক-সাহসের চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছিলো `বিদ্রোহী` কবিতার ভেতরে। তিনি যখন বলেন, `আমি মানি নাকো কোনো আইন,` তখন স্বভাবতই এই ঘোষণা ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায়। ইংরেজের টনক নড়ে যায়। ইংরেজ দুই বাঙালিকে নিয়ে বিচলিত থাকতো, নেতাজী সুভাস চন্দ্র বোস এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাই দেখা যায় প্রেমের কাব্যগুলো বাদ দিয়ে নজরুলের প্রায় সব কাব্য ও প্রবন্ধ গ্রন্থ ইংরেজ সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিলো। তিনি জেল খেটেছিলেন `আনন্দময়ীর আগমনে` কবিতা লেখার অপরাধে, `ধূমকেতু` পত্রিকাও ইংরেজ সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিলো। কারণ ওই কবিতায়ও যে বিদ্রোহের প্রকাশ ঘটেছিলো, তাও ইংরেজ সরকার মেনে নিতে পারেনি।
কিন্তু `বিদ্রোহী` কবিতার ধরণ আলাদা, তার পৌরুষত্ব আলাদা, তার আত্মপ্রত্যয়ের সংহত প্রকাশ আলাদা, তার বলিষ্ঠতা আলাদা, তার দ্রোহ আলাদা। শুধু ইংরেজ নয় তিনি স্বসম্প্রদায়েরও শত্রু হয়েছিলেন। তিনি যখন বলেন, `খোদায় আসন আরশ ছেদিয়া উঠিয়াছি চির বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাত্রীর,` তখন তিনি ইংরেজ সরকারের চেয়েও ক্রুর তাঁর সম্প্রদায়ের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। `বিদ্রোহী` কবিতা লেখার পর থেকেই তিনি `কাফের` উপাধী পেতে থাকেন।
`বিদ্রোহী` কবিতার প্রচন্ডতা দিয়ে বাংলা কবিতার এমন কি বাংলা সাহিত্যের যাত্রাপথ পাল্টে দিয়েছিলেন। বলাই বাহুল্য যে, ১৯৭১ সালে যখন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলে তখন কবির জ্যেষ্ঠপুত্র সব্যসাচী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে `বিদ্রোহী` কবিতাটি আবৃত্তি করে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন। নজরুল প্রতিভার মূল বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছিলো এ কবিতায়। বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে দিয়েছিলেন এই একটি কবিতা দিয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বিপদের ঝুঁকি নিয়েছিলেন `বিদ্রোহী` লিখে। `আমপারা পড়া` হামবড়া মোল্লাদের প্রচলিত ধ্যান ধারনাকে তিনি এ কবিতায় তছনছ করে দিয়েছেন। তিনি যখন বলেন, `আমি স্রষ্টা সূদন, শোক-তাপ-হারা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন।`
তখন তিনি সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক সাহসের পরিচয় দেন। স্বসম্প্রদায়ের প্রচলিত ধর্মানুভূতিকে উত্তীর্ণ হওয়া সর্বাধিক বিপজ্জনক। এ কাজটি তিনি করেছিলেন- সাহসের দিগন্ত খুলে দিয়েছিলেন। অসামান্য সাফল্যের সঙ্গে নজরুল এই কবিতায় হিন্দু মুসলমানের পৌরাণিক ঐতিহ্য ব্যবহার করেছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর ষোলো আনা মুনশিয়ানার প্রকাশ ঘটেছে। হিন্দু মুসলমানের মিলনের কবি তিনি। যথার্থ বাঙালি তিনি। `বিদ্রোহী` কবিতায়ও হিন্দু-মসুলমানের মিলিত ঐতিহ্য ব্যবহার করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি হয়েছেন ৭ মার্চের অগ্নিগর্ভ ভাষণের গুনে, নজরুলও শতাব্দীর অন্যতম শেষ্ঠ বাঙালি হয়েছেন `বিদ্রোহী` কবিতার গুনে। আর মাত্র দু`বছর পরে `বিদ্রোহী` কবিতার ১০০ বছর পূর্তি হবে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণটিও অর্ধশতাব্দীতে পা দিতে চলেছে। এই কবিতাটি লিখে নজরুল বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে দিয়েছিলেন, বাঙালিকে অসাম্প্রদায়িক-ধর্মনিরপেক্ষতা দান করেছিলেন এই কবিতায় যৌথ ঐতিহ্যচেতনা ব্যবহার করে; আর সেই জাতিকে বঙ্গবন্ধু একটি সেক্যুলার স্টেট এনে দিয়েছিলেন একটি ভাষণ দিয়ে। বঙ্গবন্ধুও উপাধী পেয়েছিলেন `রাজনীতির কবি`। আর নজরুল তাঁর `বিদ্রোহী` কবিতায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক চেতনার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন, সামন্তবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। ঘোষণা দিয়েছেন যতদিন পর্যন্ত উৎপাড়িতের ক্রন্দন বন্ধ না হবে, ততদিন তিনি অশান্ত থাকবেন।
আজ ১০০ বছর হতে চলেছে নজরুল `বিদ্রোহী` কবিতা লিখেছেন কিন্তু এর আবেদন এক বিন্দুও কমেনি। আরো ১০০ বছরেও এই কবিতার আবেদন কমবে বলে মনে হয় না। আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করছি, `লাখো কন্ঠে বিদ্রোহী কবিতা` আবৃত্তির অনুষ্ঠানটি সার্বিক ভাবে সফল হবে।
মাহমুদুল বাসার কলাম লেখক, গবেষক।
|
|
|
|
|
|
|
|