সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও ব্যবসায়ীদের ওপর সরাসরি আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। এসব অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীদের হাতে জুয়েলারি ব্যবসায়ী খুন ও হত্যাচেষ্টার ঘটনাও বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা জানমালের নিরাপত্তা প্রদানে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে জুয়েলারি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ঘিরে সংঘটিত অপরাধ ও অপরাধীদের দমনে বর্তমান সরকারের নেওয়া কার্যকর উদ্যোগের জন্য কৃজ্ঞতা প্রকাশ করেছে দেশের পণ্যভিত্তিক সর্ববৃহৎ বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।
গণমাধ্যমের তথ্য পর্যালোচনা করে বুধবার (১২ মার্চ) বাজুস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চোর ও ডাকাতচক্রের মূল লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ৮ মাসে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ১৭টি প্রতিষ্ঠানে চুরি ও ডাকাতি হয়েছে। যাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ প্রসঙ্গে বাজুসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গুলজার আহমেদ বলেন, বারবার টার্গেট করা হচ্ছে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের ওপর। এসব ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে ব্যবসায়ীদের মাঝে। এই পরিস্থিতিতে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এই পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতির জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সহযোগিতা কামনা করছি।
বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায় বলেন, এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তিরোধে দেশের জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ও স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স করা অস্ত্র অনতিবিলম্বে ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়- নতুন বছরের প্রথম তিন মাসেই সারাদেশে চুরি ও ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে ১১টি, যার মধ্যে গত ৩ জানুয়ারি সীমান্ত সম্ভার মার্কেটের ক্রাউন ডায়মন্ড অ্যান্ড জুয়েলার্স থেকে ১৫৯ ভরি সোনার অলংকার, ৯ জানুয়ারি সিলেটের নুরানী জুলোর্স থেকে ২৫০ ভরি সোনা, একই দিন ফরিদপুরের প্রগতি জুয়েলার্সে ভরদুপুরে চুরির চেষ্টা, ১২ জানুয়ারি পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ঐশী জুয়েলার্স থেকে ৬০ ভরি সোনার অলংকার ও নগদ ২ লাখ টাকা, ২৪ জানুয়ারি ঢাকার হাজারীবাগের ইতি জুয়েলার্স থেকে ৭০ ভরি সোনার অলংকার, ৯ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে ২৫ ভরি সোনা, ২০ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের পুস্পিতা জুয়েলার্স থেকে ১৪ ভরি সোনা ও নগদ ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যায়।
এছাড়া গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে ২০০ ভরি সোনা ও ২ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
২৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর-১০ এর শাহআলী প্লাজা মার্কেটে জুমার নামাজের সময় ১৪-১৫ জনের একটি ডাকাতচক্র লুনা জুয়েলার্স থেকে তালা কেটে ডাকাতির চেষ্টা করে। দিন-দুপুরেও এরূপ ঘটনা ব্যবসায়ীদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয় গত ৯ মার্চ ঝালকাঠিতেও স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির চেষ্টা করে। সর্বশেষ ৯ মার্চ রাতে আশুলিয়ায় নিজ দোকানে দিলীপ কুমারকে কুপিয়ে হত্যা করে ১৫-২০ ভরি সোনা লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর রাতে রামপুরায় অবস্থিত মোল্লা টাওয়ারের দি মনিকা জুয়েলার্স ও দি সুলতানা জুয়েলার্স নামক দুইটি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি করে নিয়ে যাওয়া হয় এক হাজার ৯৫ ভরি সোনা, ৪৫০ ভরি রূপা ও নগদ ১৩ লাখ টাকা।
এছাড়া ৮ নভেম্বর লক্ষ্মীপুরে নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফেরার পথে ছুরিকাঘাতে খুন হন হিরা লাল দেবনাথ এবং ৯ নভেম্বর মিরপুরের স্পার্কেল জুয়েলার্স ও আবান গোল্ড থেকে সোয়া তিন কোটি টাকা মূল্যের সোনার অলংকার, তার আগে ২৮ অক্টোবর খুলনার দৌলতপুরে দত্ত জুয়েলার্স থেকে ৫ ভরি সোনার অলংকার ও নগদ ২ লাখ টাকা লুটসহ মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ার মার্কেটে একটি ডায়মন্ডের দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে।