মিয়া আবদুল হান্নান : বর্তমানে আমাদের লক্ষ্য দিনের ভোট রাতে এবং ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জয়ী হওয়া সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্পন্ন করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। এবং জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। ১৯৭৯ সালে প্রথম জাতীয়বাদী ছাত্রদল ডাকসু`র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। সেই সময় ডাকসুতে ৪টি পদ পেয়েছিল। এজিএস, সমাজকল্যাণ সম্পাদক আর দুইটি সদস্য। গোলাম মোস্তফা ছিলেন এজিএস। সদস্য ছিলেন গোলাম মাওলা মানিক। `৭৩-এর ডাকসু`র নির্বাচন ছাত্রলীগ ব্যালট ছিনতাই করে অনুষ্ঠিত করেছিল। `৭৯ সালে যখন ডাকসু নির্বাচন হলো, তারা `৭৩-এর পুনরাবৃত্তি করতে চেয়েছিল।
জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, যদি আমাদের ছাত্রদলের প্যানেল এক ভোটও না পায়, তাহলেও শিক্ষাঙ্গনে কোনো দখলবাজি করা চলবে না। নিরপেক্ষভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। ছাত্ররা পছন্দ অনুযায়ী যাকে ভোট দেবে, তিনি নির্বাচিত হবেন এবং ডাকসু পরিচালনা করবেন।
জিয়াউর রহমানের কঠোর বক্তব্যের কারণেই `৭৯ সালের ডাকসুর সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ৮০, `৮১ সালেই জিয়াউর রহমানের সময় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছিল ডাকসু`তে। এই জন্য জিয়াউর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সবাই আদর্শ মনে করতেন। যার কারণে শিক্ষাঙ্গনের নির্বাচনে ছাত্র সংসদ বলেন, হল বলেন, প্রত্যেক জায়গায় ছাত্ররা তাদের পছন্দের নেতা নির্বাচন করতেন। নির্বাচনের বাহিরে কেউ জোর করে কারো উপর কিছু প্রয়োগ করতে পারবেন না, নেতা নির্বাচন করতে পারবেন না, এটাই ছিল ছত্রদলের আদর্শ। এরপর জিয়াউর রহমান জীবিত থাকা অবস্থায় ডাকসুতে মাত্র চারটি পদ এবং হলে দুটি পদ পেয়েছিল। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর আদর্শকে লালনকারী ছাত্র সংগঠন ১৯৯০ সালে ৬ জুন অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে জয়লাভ করে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি হল ব্যতীত সব হলেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল জয়লাভ করে। এটা সম্ভব হয়েছে জিয়াউর রহমানের কঠিন সিদ্ধান্ত, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোসহীন নেতৃত্বের জন্য। জীবিত জিয়ার চেয়ে মৃত জিয়া অনেক শক্তিশালী।স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী ১৯৭২-৭৫ সাল। তখন মানুষের প্রতি জুলুম অত্যাচার নির্যাতন চলতো, বেহাল অবস্থা ছিল সমাজে। মানুষ রাতে বাড়িতে থাকতে পারতো না। চোর-ডাকাতের উপদ্রব ছিল অনেক। আমিও যখন ছুটিতে বাড়িতে যেতাম তখন ঘরে ঘুমাতে পারতাম না। মানুষ জাংলার ভিতরে গিয়ে ঘুমাতো।
এমনি এক প্রেক্ষাপটে ১৯৭৯ সালে ছাত্রদল প্রতিষ্ঠিত হয়, জিয়াউর রহমানের রাজনীতি শুরু হয়, দেশ গড়ার রাজনীতি, মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার রাজনীতি। সেখান থেকে আমি রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হই। আমি ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে যোগদান করি।
১৯৮২ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসীম উদ্দীন হলে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদল থেকে সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হই। এই নির্বাচনে আমি সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমি এই একই হল শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হই। ১৯৮২ সালে আমাকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়। এরপর ১৯৮৩ সালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক, ১৯৮৬ সালে যুগ্ম সম্পাদক, ১৯৮৭ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর।
১৯৮৮ সালে আমি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হই। ১৯৯০ সালের ১ এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক নির্বাচিত হই। ১৯৯০ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত আমান-খোকন-আলম পরিষদে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে আমি ভিপি ও অন্যান্য পদে আমাদের পরিষদ নির্বাচিত হয়। এরই মধ্যে অনেক ঘটনাবহুল বিষয় রয়েছে। সেই ঘটনাগুলো বলতে গেলে অনেক অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে। তার পরও কিছু বিষয় বলতে হয়।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে যখন ফজরের আজান হচ্ছে, ঠিক তখনই, দেশ-বিদেশী চক্রান্তে কিছু বিপথগামী আর্মি অফিসার বাংলার রাখাল রাজা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযোদ্ধা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে গুলি করে হত্যা করে।পরবর্তীতে ওই চক্রের খুন, হত্যা, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক জান্তা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নির্বাচিত প্রেসিডন্ট বিচারপতি আবদুস ছাত্তারকে হটিয়ে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সংবিধানকে স্থগিত করে ক্ষমতা দখল করে। সামরিক শাসন জারি করে। দেশের রাজনৈতিক সংকটের বীজ বপন করে স্বৈরশাসক এরশাদ। বাংলার ছাত্র-জনতা সহজভাবে তা মেনে নেয়নি। জিয়াউর রহমান হত্যার পর দিশেহারা জাতিকে পথ দেখাতে বেগম খালেদা জিয়ার আবির্ভাব ঘটে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলার স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের কথা চিন্তা করে ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের হাল ধরেন। শুরু হলো নতুন উদ্দীপনায় পথ চলা-শুরু হলো নতুন বিপ্লবের।
(নব্বইর অভ্যুত্থান ও কিছু কথা ধারাবাহিক লেখা) চলমান-:(৪৩ পর্ব) ;এবং ৪৪পর্বে পড়ুন : প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর বিএনপি পরিচালিত হতো যেভাবে