Notice: Undefined offset: 26 in /home/kimballc/public_html/details.php on line 33

Notice: Undefined variable: l in /home/kimballc/public_html/details.php on line 85

Warning: mysqli_fetch_row() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /home/kimballc/public_html/details.php on line 108

Notice: Undefined variable: rq in /home/kimballc/public_html/details.php on line 132

Notice: Undefined variable: cw in /home/kimballc/public_html/details.php on line 150
ইসলামী রাষ্ট্র নির্মানের পাকিস্তানী প্রকল্প কেন ব্যর্থ হলো? (পর্ব-২)
বুধবার, নভেম্বর ২৬, ২০২৫
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * মানিকগঞ্জে আলেম-ওলামা ও তাওহিদী জনতার সংবাদ সম্মেলন : ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, সংঘর্ষ ও মামলাকে ঘিরে সতর্কবার্তা—“সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া কাউকে হয়রানি নয়”   * টেকসই নদীশাসন ও চরাঞ্চল উন্নয়নে তারেক রহমানের দৃষ্টিভঙ্গিই হতে পারে ভবিষ্যৎ সমাধান — এস.এ. জিন্নাহ কবির   * চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনা নিয়ে হাইকোর্টের রায় ৪ ডিসেম্বর   * গণভোট অধ‍্যাদেশ অনুমোদন   * প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি: শেখ রেহানার মামলার রায় ১ ডিসেম্বর   * মধ্যরাতে আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালাল পাকিস্তান, নিহত অন্তত ১০   * ভালো নির্বাচনের জন্য সবার সহযোগিতা লাগবে : সিইসি   * প্রাথমিক শিক্ষকদের ৩ দিনের কর্মবিরতি শুরু, বন্ধ পাঠদান   * উন্নত এবং স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিতেই ডায়ালাইসিস সেন্টার খোলা হয়েছে : রিতা   * দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারেই বিএনপির লক্ষ্য : রিতা  

   মতামত
ইসলামী রাষ্ট্র নির্মানের পাকিস্তানী প্রকল্প কেন ব্যর্থ হলো? (পর্ব-২)
  Date : 31-10-2025

ফিরোজ মাহবুব কামাল

ইসলামপন্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যর্থতা এবং সেক্যুলারিস্টদের নাশকতা

পরিতাপের বিষয় হলো, ১৯৪৭’য়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশটি জিম্মি হয় ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের হাতে প্রশিক্ষিত এক পাল সেক্যুলার সামরিক ও বেসমারিক আমলাদের হাতে। এসব আমলাদের গড়ে তোলা হয়েছিল ঔপনিবেশিক ব্রিটিশের প্রশাসন চালানোর জন্য, ইসলামী রাষ্ট্র চালানোর জন্য নয়। ফলে তারা পরিণত হয় দেশটির ঘরের শত্রুতে। রেল গাড়ির ইঞ্জিন দিয়ে যেমন বিমান চলে না। তেমনি সেক্যুলারিস্টদের দিয়ে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রশাসন চলে না। ফলে ব্রিটিশদের হাতে গড়া সামরিক ও বেসামরিক আমলাগণ পাকিস্তান রাষ্ট্রকে সবল করার বদলে ব্যর্থ করে দেয়। এভাবে তারা শুধু বাঙালি মুসলিমের নয়, সমগ্র উপমহাদেশের মুসলিমদের স্বপ্ন ভঙ্গ ঘটায়।  ফলে পাকিস্তান প্রজেক্ট  ব্যর্থ হয়ে যায় বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে। নতুন রাষ্ট্র হওয়ায় পাকিস্তান পর্যাপ্ত সুযোগ পায়নি প্রয়োজনীয় আদর্শিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, সাংস্কৃতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোগুলি গড়ে তোলার। অথচ শত্রুপক্ষের পূর্ণ প্রস্তুতি ছিল দেশটি ধ্বংসের।

পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যর্থতা। অর্থনীতিতে বিশেষ করে শিল্প ও কৃষিতে পাকিস্তান ভারতের চেয়ে ভাল করেছে। পাকিস্তানী রুপির দাম ছিল ভারতীয় রুপির চেয়ে বেশী। ভারতে তখন প্রায় খাদ্যে হাহাকার লেগেই থাকপর্বতো; দুর্ভিক্ষ প্রায় লেগেই থাকতো। এখনো ভারতের ৮০ কোটি মানুষ রেশনের উপর। কিন্তু পাকিস্তান ব্যর্থ হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণে। ইসলামপন্থীরা তখনো দেশে পর্যাপ্ত বুদ্ধিবৃত্তিক যোদ্ধা গড়ে তুলতে পারিনি। আর যারা বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণে ব্যর্থ হয়, তারা ব্যর্থ হয় রাজনৈতিক অঙ্গণেও। পাকিস্তানের সেক্যুলার আমলাগণ সোভিয়েত রাশিয়া ও চীন থেকে প্রকাশিত কম্যুনিজমের বই ও পত্র-পত্রিকার জন্য দরজা পুরোপুরি  খুলে দিলেও পাকিস্তান কেন সৃষ্টি হলো -তার উপর একখানী বইও প্রকাশ করেনি। অখণ্ড ভারতের বদলে কেন পাকিস্তানের সৃষ্টি অপরিহার্য ছিল -সেটির উপর তাত্ত্বিক দলিল মূলক বই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ানো উচিত ছিল। অথচ সে কাজটি কখনোই হয়নি। অথচ সে কাজটি করা হলে ছাত্র-ছাত্রীদের মনে পাকিস্তানের প্রতি দেশপ্রেম গড়ে উঠতো। এমন একটি বইয়ের উপর পাঠ্যদান ১৯৪৭ সালে থেকে শুরু করা জরুরি ছিল।

পাকিস্তানের stake holders এবং deep state চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছে দেশটির পক্ষে বুদ্ধিজীবী উৎপাদনে। সে সাথে ব্যর্থ হয়েছে অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে মজবুত বয়ান খাড়া করতে। অথচ পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল একটি বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির পর পাকিস্তানপন্থী বুদ্ধিজীবীরা ঝিমিয়ে পড়ে এবং বুদ্ধিবৃত্তির ফাঁকা মাঠটি দখলে চলে যায় শত্রু পক্ষের হাতে। আর এই বিরোধী পক্ষটি হলো ভারতসেবী বাঙালি ফ্যাসিস্ট ও বাঙালি বামপন্থী পক্ষ। ১৯৬৯ সালের দিকে প্রেসিডেন্ট ই্য়াহিয়ার আমলে  এয়্যার মার্শাল নূর খান যখন শিক্ষামন্ত্রী তখন বুদ্ধিবৃত্তির ব্যর্থতার বিষয়টি তিনি অনুধাবন করেন। তখন শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে একটি নতুন শিক্ষা নীতি পেশ করেন এবং “পাকিস্তান: দেশ ও কৃষ্টি” নামক একটি বই  স্কুলে পড়ানো উদ্যোগ নেন। কিন্তু ইতিমধ্যেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। ভারতসেবী পাকিস্তানের শত্রুপক্ষ ইতিমধ্যেই প্রচুর শক্তি সঞ্চয় করেছিল। ছাত্র লীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের মত ফ্যাসিবাদী ও বাম ধারার পাকিস্তান বিরোধ ছাত্র সংগঠনগুলি সে বই এবং নূর খানের শিক্ষা নীতি বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। কারণ পাকিস্তানের এই শত্রু পক্ষ এমন কিছু চাচ্ছিল না যা পাকিস্তানের সংহতিকে মজবুত করে।  সে আন্দোলনের মুখে “পাকিস্তান: দেশ ও কৃষ্টি” বইটি আরো পড়ানো হয়নি। 

সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্র লীগের পক্ষ থেকে নূর খান শিক্ষা নীতির উপর এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় মূল আলোচক ছিল শেখ মুজিবের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি। আমি সে সভায় উপস্থিত ছিলাম। জনাব মনি তার বক্তব্যে বলেন, “নূর খানের এ শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে প্যান ইসলামী চেতনাকে মজবুত করার লক্ষ্যে; তাই এটি বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিরোধী। এজন্যই এ শিক্ষানীতি আমরা গ্রহণ করতে পারিনা।” অথচ প্যান ইসলামী চেতনা হলো একজন মুসলিমের ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঈমানদার হওয়ার অর্থই এ চেতনাটি ধারণ করে বাঁচা। একমাত্র প্রতিষ্ঠিত বেঈমানগণই প্যান ইসলামী চেতনার বিরোধী হতে পারে। এ থেকে বুঝা যায় বাঙালি জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্টগণ কতটা ইসলাম বিরোধী এবং কতটা বদ্ধপরিকর ছিল পাকিস্তানের বিনাশে। উল্লেখ্য যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’তে নূর খান শিক্ষা নীতির উপর এক সেমিনারে উক্ত শিক্ষনীতির পক্ষে বক্তব্য রাখার জন্য ইসলামী ছাত্র সংঘ নামক একটি ইসলামী ছাত্র সংগঠনের ঢাকা শহর শাখার সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের ছাত্র আব্দুল মালেককে সোহরাওয়ার্দী উদ্দানের মাঝে ছাত্র লীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের গুণ্ডারা পিটিয়ে হত্যা করে। সে হত্যাকাণ্ডের জন্য কোন বিচার হয়নি।কারণ, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার  সরকার তখন আওয়ামী লীগের সাথে কোন সংঘর্ষে যেতে রাজী ছিল না। সে খুনের মামলার আসামী ছিল সে সময়ের ছাত্র লীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। ফলে মামলা তুলে নেয়া হয়।      

সেক্যুলারিজম তথা ইসলামে অঙ্গীকারহীন হয়ে মুসলিম দেশের সংহতি বাঁচানো অসম্ভব। তাতে বিভক্তি অনিবার্য। মুসলিমদের ভূ-রাজনৈতিক অঙ্গণে একতাবদ্ধ রাখার কাজে কুর’আনই হলো মহান রবের একমাত্র হাতিয়ার। এটি হলো তাঁর পবিত্র রশি -যার বর্ণনা এসেছে নিচে বর্ণিত সুরা আল ইমরানের ১০৩ নম্বর আয়াতে। মুসলিমগণ যত দিন কুর’আনকে আঁকড়ে ধরেছিল, ভূ-রাজনৈতিক ঐক্য ততদিন বেঁচেছিল।| ফলে মুসলিম উম্মাহর সংহতি বাড়াতে হলে কুর’আনের সাথে সম্পর্ক গড়তে হয় -অর্থাৎ কুর’আন থেকে জ্ঞানদান বাড়াতে হয়। পবিত্র কুর’আন পাঠের মধ্য দিয়ে মানুষ শুধু তাঁর রব’যের পরিচয় জানে না, তাঁর নিজের পরিচয়ও জানে।  সে তখন জানতে পরে, সে অপর মুসলিমের অতি আপন জন তথা ভাই -মহান আল্লাহ তায়ালা তার সে পরিচয়টি পছন্দ করেন। আর মুসলিম জীবনের বড় অপরাধ হলো মুসলিম ভাইয়ে সাথে সম্পর্ক ছেদ বা গাদ্দারী। সেটি মুনাফিকির আলামত। অথচ সে কুর’আনকেই পাকিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে দূরে রাখা হয়। আর এভাবে বিচ্ছেদ বাড়ানো হয় উম্মাহর দেহে। এটি ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে সেক্যুলারিস্টদের বিশাল নাশকতা।

বিচ্ছ্ন্নতা পবিত্র কুর’আন থেকে

পাকিস্তানে প্রচণ্ড অবহেলা হয়েছে স্কুল-কলেজে পবিত্র কুর’আন থেকে জ্ঞান দানে। অথচ কুর’আন শিক্ষাই হলো একমাত্র শিক্ষা -যা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজে আইন তথা বাধ্যতামূলক। চিকিৎসা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, অংক বা অন্য কোন শাস্ত্র  না পড়লে গুনাহ হয় না।  কিন্তু কুর’আন থেকে জ্ঞানার্জন না করলে কবিররা গুনাহ হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা নামাজ রোজার ফরজ করার বহু আগে কুর’আন থেকে জ্ঞানার্জনকে ফরজ করেছিলেন। কারণ কুর’আন থেকে জ্ঞান অর্জনের কাজটি না হলে মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার কাজটি সম্ভব হয়না। অথচ পাকিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থায় কুর’আন থেকে শিক্ষা লাভ সবচেয়ে অবহেলিত। অথচ কুর’আন যেমন পাকিস্তানীদের কল্যাণের পথ দেখাতে পারতো, তেমনি দেশটিকে একতাবদ্ধও রাখতে পারতো। বস্তুত পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝে একতার একমাত্র মাধ্যম ছিল এই কুর’আন। কুর’আনকে আঁকড়ে ধরার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুম:

وَٱعْتَصِمُوا۟ بِحَبْلِ ٱللَّهِ جَمِيعًۭا وَلَا تَفَرَّقُوا۟ ۚ وَٱذْكُرُوا۟ نِعْمَتَ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَآءًۭ فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِۦٓ إِخْوَٰنًۭا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍۢ مِّنَ ٱلنَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمْ ءَايَـٰتِهِۦ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ

অর্থ: “আর তোমরা সকলে সম্মিলিত ভাবে আল্লাহর রশি (কুর’আন)কে দৃঢ় ভাবে আঁকড়ে ধরো, এবং পরস্পরে বিভক্ত হয়ো না। আর তোমরা স্মরণ করো তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামতকে -যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা তো ছিলে আগুনের গর্তের কিনারায়, অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বয়ান করেন, যাতে তোমরা হিদায়েতের পথ হও।” –(সুরা আল ইমরান, আয়াত ১০৩)।   

উপরিউক্ত আয়াতটি আয়াতে মোহকামাত। অর্থাৎ এ আয়াতে ঘোষিত হয়েছে মহান রব’য়ের সুস্পষ্ট হুকুম। এ আয়াতটি বুঝার জন্য ভাষা বিজ্ঞানী বা কুর‌’আনের মোফাচ্ছের হওয়া লাগে না -যেমনটি প্রয়োজন পড়ে আয়াতে মোতাশাবেহাতগুলির ক্ষেত্রে। আর যখন এরূপ হুকুমের আয়াত আসে, সেটি মান্য করা তখন প্রতিটি মুসলিমের উপর তৎক্ষণাৎ ফরজ হয়ে যায়। সে হুকুম অমান্য করলে কেউ মুসলিম থাকে না। বুঝতে হবে একটি মাত্র হুকুম অমান্য করায় ইবলিস অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হয়েছিল। লক্ষণীয় হলো, উপরিউক্ত আয়াতে ফরজ করার হয়েছে কুর’আন আঁকড়ে ধরাকে। আর কুর’আন আঁকড়ে ধরার অর্থ, কুর’আনের শিক্ষাকে আঁকড়ে ধরা। সে আঁকড়ে ধরাটি সম্ভব করতেই ফরজ করা হয়েছে কুর’আন শিক্ষাকে। এতে ঈমানদারের বন্ধন বাড়ে মহান রব’য়ের সাথে; আর যাদের বন্ধনটি মহান রব’য়ের সাথে, তাদের মাঝে অনিবার্য কারণেই একতা গড়ে উঠে -কারণ সবাই তো একই রব’য়ের গোলাম। তখন তারা একে অপরের ভাইয়ে পরিণত হয়।

কুর’আন নাযিলের আগে আরবের মানুষ গোত্রে গোত্রে বিভক্ত ছিল এবং পরস্পরে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত থাকতো। তারা ছিল এক অভিশপ্ত ও বিপর্যস্ত জীবনের মাঝে নিমজ্জিত। মহান রব এখানে তাদেরকে সেদিনের কথা স্মরণ করতে বলেছেন। এবং স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, তাঁর নিয়ামতের বদলেই তারা গড়তে পেরেছে ভাই-ভাই’য়ের অটুট সম্পর্কের বন্ধন। মহান রব’য়ের সে বিশাল নিয়ামতটি হলো পবিত্র কুর’আন। এই কুর’আন অতীতে যেমন হিদায়েত দিয়েছে, তেমনি দিয়েছে ভাতৃত্বের বন্ধন। তাই কুর’আন থেকে বিচ্যুত হওয়ার অর্থ শুধু হিদায়েত থেকে বঞ্চিত হওয়া নয়, তেমনি পরস্পরে বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন হওয়াও। তাই পবিত্র কুর’আনের জ্ঞানশূন্যতা এবং কুর’আন থেকে দূরে সরার অর্থই হলো বিভক্তি। যারা কুর’আনকে আঁকড়ে ধরতে ব্যর্থ হয়, তারা একতা খোঁজে ভাষা, বর্ণ ও আঞ্চলিক পরিচয়কে আঁকড়ে ধরে। তখন সে রাষ্ট্রের বিভক্তি অনিবার্য হয়ে উঠে। তাই একটি দেশের ভেঙে যাওয়া দেখে নিশ্চত বলা যায়, দেশটির জনগণ কুর’আন থেকে দূরে সরেছে এবং পথ হারিয়েছে। কারণ, যারা কুর’আনের পথ পায় তারা কখনোই বিভক্তির পথ বেছে নেয় না।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল এক মহান লক্ষ্যকে সামন রেখে। সেটি ছিল ভাষা, বর্ণ, গোত্র ও অঞ্চল ভিত্তিক পরিচয়ের উর্দ্ধে উঠে প্যান ইসলামী মুসলিম ভাতৃত্বের পরিচয়ে একটি ইসলামী সিভিলাইজেশনাল রাষ্ট্রের নির্মাণ। উসমানিয়া খেলাফত বিলুপ্তির পর সেরূপ একটি অভিভাবক রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা ছিল অপরিসীম। উপমহাদেশের মুসলিমদের মনে সেরূপ একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন জাগিয়ে তুলেছিল আল্লামা ইকবাল এবং তার সমসাময়িক এক ঝাঁক মুসলিম কবি সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী। তবে সমস্যা হলো, জাতির সামনে শুধু স্বপ্ন থাকলেই চলে না। স্বপ্নের প্রাসাদ গড়তে যেমন যোগ্য স্থপতি, যোগ্য প্রকৌশলী ও যোগ্য রাজমিস্ত্রি লাগে, তেমনি স্বপ্নের রাষ্ট্র গড়তে লাগে যোগ্য রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও প্রশাসক। পাকিস্তানে তখন ছিল সে মাপের দক্ষ জনশক্তির প্রকট সংকট -বলতে গেলে শূন্যের কোঠায়।  ফলে উপমহাদেশের মুসলিমদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। রাজনীতিবিদগণ ব্যর্থ হয় জনগণে স্বপ্ন পূরণে। বরং রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও বুদ্ধিজীবীগণ ইসলামেরর পক্ষ ছেড়ে সেক্যুলারিজম, কম্যুনিজম ও জাতীয়তাবাদী শিবিরের লাঠিয়ালে পরিণত হয় -বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে। এরা পরিণত হয় পাকিস্তানে ঘরের শত্রুতে। একাত্তরে এরাই ভারতের কোলে গিয়ে উঠে। এরাই ভারতের অর্থ, অস্ত্র ও পরিকল্পনা নিয়ে পাকিস্তান ভাঙতে যুদ্ধ নামে। তখন ভারতের এজেন্ডাই তাদের এজেন্ডা হয়ে দাঁড়ায়।

                       
ব্যর্থ ও অপরাধী জনগণ

বাঙালি মুসলিম শুধু ব্যর্থই নয়, বড় রকমের অপরাধীও।  সামনে এগুতে হলে সে ব্যর্থতা ও অপরাধ নিয়ে গভীর গবেষণা হওয়া উচিত। নইলে একই রূপ ব্যর্থতা ও অপরাধ বার বার হতে থাকবে। কোন দেশ ব্যর্থ, পরাজিত বা খণ্ডিত হলে, বুঝতে হবে সে ব্যর্থতা ও পরাজয়ের দায় শুধু সরকারের নয়, জনগণেরও।  জনগণের সবচেয়ে বড় অপরাধটি হলো, দেশের নাগরিক রূপে দায়িত্ব পালনে অনাগ্রহ, নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা। উন্নত, নিরাপদ ও শক্তিশালী রাষ্ট্র নির্মাণের দায়টি শুধু সরকারের নয়, প্রতিটি নাগরিকেরও। সরকারি প্রশাসন ও নেতৃত্বে আর ক’জন থাকে; দেশের শতকরা ৯৯ ভাগেরও বেশি মানুষ তো সরকারের বাইরে। কিন্তু তারা যদি দায়িত্ব পালনে নিষ্ক্রিয়, উদাসীন ও ফাঁকিবাজ হয় -তবে সে জাতির পতন কি কেউ রুখতে পারে?

নবীজী (সা:)’র সাহাবাদের দ্রুত বিশ্বশক্তি রূপে উত্থানের মূল কারণ, প্রতিটি মুসলিম সেদিন নিজের সমগ্র সামর্থ্য নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে লাগিয়েছেন। অবস্থা এমন এক ফলবান বাগানের মত, যার প্রতিটি গাছই বিপুল ফল দেয় এবং ফলহীন কোন গাছই নাই। প্রত্যেক সাহাবী সেদিন জিহাদে প্রাণ দানে হাজির হয়েছেন এবং অর্ধেকের বেশি সাহাবা শহীদ হয়েছেন। নিষ্ক্রিয় থাকাটি সেদিন অপরাধ গণ্য হয়েছে এবং যারা নিষ্ক্রিয় থেকেছে তাদেরকে মুনাফিক বলা হয়েছে। জনগণের ব্যর্থতা মানেই রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। জাতির বা দেশের ভাগ্য বদলাতে হলে বদলানোর শুরুটি জনগণের স্তর থেকে  হতে হয়।  জনগণের নিজেদের ভাগ্য তাই নিজেদেরই পাল্টাতে হয়। এ বিষয়ে মহান রব’য়ের ঘোষণা:

إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا۟ مَا بِأَنفُسِهِمْ ۗ

অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন কওমের অবস্থা ততক্ষন পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে।”-(সুরা রাদ, আয়াত ১১)

তাই যে জাতি যে অবস্থায় আছে, সেটি তাদের নিজেদের অর্জন। তাই একটি জাতির পতিত অবস্থা দেখে সে জাতির চরিত্র ও সামর্থ্যের মান বুঝা যায়। ভাগ্য পাল্টানোর কাজটি পবিত্র জিহাদ তথা শ্রেষ্ঠ ইবাদত। এ ইবাদত অর্থ, শ্রম এবং রক্তের বিনিয়োগ চায়। যাদের যত বেশী বিনিয়োগ তারা ততই সামনে এগুয়।  এ জিহাদে জনগণ তাদের নিজেদের বিনিয়োগ বাড়ালে মহান আল্লাহও তাদের জন্য তাঁর বিনিয়োগ বাড়ান। একাজে জনগণ ব্যর্থ ও অপরাধী হলে কোন সরকারই জনগণের ঘরে বিজয় তুলে পারে না। তাই পাকিস্তানের জনগণের ব্যর্থতার কারণেই পাকিস্তান বিভক্তি হয়ে গেছে। একটি মুসলিম দেশ ভেঙে যাওয়া কখনো কোন অর্জন নয়, সে এক চুড়ান্ত ব্যর্থতা। সে ব্যর্থতা শুধু পশ্চিম পাকিস্তানের নয়, পূর্ব পাকিস্তানেরও। সে ব্যর্থতায় খুশি হয় একমাত্র শয়তান ও তার খলিফাগণ। তাই ১৯৭১’য়ে পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ায় খুশি হয়েছে শয়তানের পৌত্তলিক পক্ষ তথা ভারত এবং সে সাথে শয়তানের বাঙালি জাতীয়তাবাদী, বাঙালি সেক্যুলারিস্ট ও বাঙালি কম্যুনিস্ট পক্ষ। শয়তানের পক্ষের সে উৎসবে কখনোই কোন ঈমানদার যোগ দিতে পারেনা। একাত্তরের পৌত্তলিক পক্ষের বিজয় কখনোই মুসলিমের বিজয় হতে পারেনা।




Notice: Undefined variable: menu_old in /home/kimballc/public_html/details.php on line 743

Notice: Trying to access array offset on value of type null in /home/kimballc/public_html/details.php on line 743
  

Notice: Undefined variable: menu in /home/kimballc/public_html/details.php on line 873

Notice: Trying to access array offset on value of type null in /home/kimballc/public_html/details.php on line 873
     মতামত

Notice: Undefined offset: 26 in /home/kimballc/public_html/details.php on line 914
ইসলামী রাষ্ট্র নির্মানের পাকিস্তানী প্রকল্প কেন ব্যর্থ হলো? (পর্ব-২)

Notice: Undefined offset: 26 in /home/kimballc/public_html/details.php on line 914
ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণে পাকিস্তানী প্রকল্প কেন ব্যর্থ  হলো? (পর্ব-১)

Notice: Undefined offset: 26 in /home/kimballc/public_html/details.php on line 914
বিশেষজ্ঞ তাজুল ইসলামের অভিমত : প্রতিনিয়ত জেলেদের লক্ষ লক্ষ টাকার জাল পোড়ানো সমচীন নয়

Notice: Undefined offset: 26 in /home/kimballc/public_html/details.php on line 914
সুসময়েও ভিন্নমাত্রিক চ্যালেঞ্জে বিএনপির পথ

Notice: Undefined offset: 26 in /home/kimballc/public_html/details.php on line 914
আব্বার ওসিয়াত: ধৈর্যের পাহাড়ে দাঁড়িয়ে সিলসিলার বহমান ধারায় আমি

Notice: Undefined offset: 26 in /home/kimballc/public_html/details.php on line 914
সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমল ও সর্বনিকৃষ্ট পাপ এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
  সর্বশেষ

Notice: Undefined offset: 26 in /home/kimballc/public_html/details.php on line 1015
চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনা নিয়ে হাইকোর্টের রায় ৪ ডিসেম্বর

Notice: Undefined offset: 26 in /home/kimballc/public_html/details.php on line 1015
কলকাতার ওই প্রযোজকের বিরুদ্ধে তানজিন তিশার পাল্টা অভিযোগ

Notice: Undefined offset: 26 in /home/kimballc/public_html/details.php on line 1015
বগুড়ায় দুই শিশুকে গলা কেটে হত্যার পর ফাঁস নিলেন মা

Notice: Undefined offset: 26 in /home/kimballc/public_html/details.php on line 1015
খালেদা জিয়া নিবিড় পর্যবেক্ষণে, আপাতত নতুন কোনো জটিলতা নেই



প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : মো: তাজুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়: ২১৯ ফকিরের ফুল (১ম লেন, ৩য় তলা), মতিঝিল, ঢাকা- ১০০০ থেকে প্রকাশিত ।
ফোন: ০২৪১০৭০৯৯৬ মোবাইল: ০১৮৩৪৮৯৮৫০৪, ০১৭২০০৯০৫১৪

Web: www.dailyasiabani.com ই-মেইল: dailyasiabani2012@gmail.com