অনলাইন ডেস্ক : আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে বর্তমান মৌসুমে তরুণ-তরুণী ও ছাত্র-ছাত্রীসহ রাজশাহীর অনেক মানুষের কাছেই অনলাইনে আমের ব্যবসায়ে অর্থ উপার্জন আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে।
অনলাইন আম ব্যবসায়ে একদিকে যেমন তাদের কর্মসংস্থান হয়েছে, অন্যদিকে আম চাষীরাও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। এ ছাড়া ভোক্তারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী ফরমালিনমুক্ত ও তাজা আম পাচ্ছেন সময়মতো। অনলাইনে অর্ডার পাওয়ার পর, তারা বাগান থেকে আম পেড়ে নিয়ে ঘটনাস্থলেই প্যাকেজিং করে এবং পরে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পাঠান।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক সদরুল ইসলাম বলেন, অনেক শিক্ষার্থী ও অন্যান্য তরুণ-তরুণী আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে সরাসরি অনলাইনে আম কেনাবেচা করে লাভবান হচ্ছে। শহর ও গ্রামীণ উভয় ক্ষেত্রেই আমের ব্যবসা কেন্দ্রে ক্রেতাদের উপস্থিতি নগণ্য তবে ফোন-কল, ইমো, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং মেসেঞ্জারের মাধ্যমে ব্যবসার ব্যাপ্তি অনেকাংশে দৃশ্যমান হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ তার তিন বন্ধুকে নিয়ে বর্তমানে ‘রাজশাহী ম্যাঙ্গো প্রোডাক্টস’ নামে তাদের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জমজমাট আমের ব্যবসা করছেন। চারঘাট উপজেলার মীরগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা আহমেদ বলেন, ‘ ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে আমরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আম সরবরাহের অর্ডার পাচ্ছি।’ তারা ইতিমধ্যে প্রায় ১,৫০০ কেজি আম ডেলিভারি করেছে এবং আরও ৭,৫০০ কেজির অর্ডার পেয়েছে। আহমেদ বলেন, অনলাইনে আমের কেনাবেচা এই অঞ্চলের সর্বত্রই শীর্ষে পৌঁছেছে, যার ফলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই উপকৃত হয়েছে।
বর্তমান ভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে ক্রেতাদের দোরগোড়ায় আম পৌঁছে দিতে বিজনেস অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মতো ফেসবুক ও হোয়াটস অ্যাপের সর্বোত্তম ব্যবহারের পর, এই অঞ্চলের তরুণ উদ্যোক্তাদের অনেকেই অনলাইনে আম বিক্রি শুরু করেছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক ছাত্র রাশেদুল ইসলাম তার ফেসবুক পেজ `ম্যাঙ্গো শপ`-এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় সাত টন আম বিক্রি করেছেন। চলতি মৌসুমে প্রায় দেড়শ টন আম বিক্রির লক্ষ্য রয়েছে তার। তিনি মাঠ পর্যায়ে ২০ জন এবং বিভিন্ন এলাকায় আম সংগ্রহ ও প্যাকেজিং করার জন্য ৩৫ জন ব্যক্তিকে কাজ লাগিয়েছেন। আইসিটি খাতকে গ্রাম পর্যায়ে সম্প্রসারণের জন্য তিনি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাবেক সংবাদ উপস্থাপক সিয়াম রেজওয়ান গত কয়েক বছর ধরে রাজশাহীতে অনলাইন আমের ব্যবসা করছেন এবং চলতি মৌসুমে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে ইতিমধ্যে ৫০ মণ আম বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি ফেসবুক বন্ধু ও ফলোয়ারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন এবং বিভিন্ন বাগান থেকে সরাসরি আম কিনে প্যাকেজিং করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম পাঠাচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠানো আম নষ্ট হওয়ার অভিযোগ পাওয়ার পর, প্যাকেজিং ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হয়েছে। রেজওয়ান উল্লেখ করেন যে, আমের ডেলিভারি যাতে নিখুঁত থাকে, সেজন্য সম্পূর্ণ কুরিয়ার পরিষেবাগুলোকে স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক হতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, এ অঞ্চলে ২ লাখ ৬২ হাজারের বেশি আম চাষি ও বাগান মালিক রয়েছে এবং প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ আম সংগ্রহ, বিচ্ছিন্নকরণ, প্যাকেজিং, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ডিএই চলতি মৌসুমে এই অঞ্চলে ৮০,৫০০ হেক্টর জমি থেকে প্রায় ১০ লাখ টন আম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যেখানে গত বছর ৭২,৯০৯ হেক্টর জমি থেকে উৎপাদন হয়েছিল ৮,৩১,৯৪০ টন। কৃষি বিশেষজ্ঞ ওয়াদুদ বলেন, আম আহরণের মৌসুম অনেক শিক্ষার্থীর আয়ের পথ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। চলতি মৌসুমে বিপুল সংখ্যক লোককে আম কুড়ানো, পরিবহন, বিচ্ছিন্নকরণ ও প্যাকেজিং-এর কাজে ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। বাসস
|