‘দুধ না খেলে, হবে না ভালো ছেলে’—এই বাক্যটি ছেলেবেলায় শুনেছেন নিশ্চয়ই। একটি সুষম খাবার এটি। দুধের কথা বলতে গেলেই গরু, ছাগল, মানুষ কিংবা কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীর কথা মাথায় আসা স্বাভাবিক। কিন্তু কখনো কি শুনেছেন কোনো পাখি দুধ দেয়?
হ্যাঁ, অবাক করা এই ঘটনাই ঘটে। আর এই পাখিটি আমাদের অতি পরিচিত কবুতর। পাখি হয়েও কবুতর দুধ দেয়। বিজ্ঞানীরা এই দুধের নাম দিয়েছেন ‘পিজন মিল্ক’ (Pigeon Milk)। কবুতরছানারা জীবনের শুরুতে একমাত্র খাবার হিসেবে এটি খেয়ে থাকে।
এই দুধ স্তন্যপায়ীদের মতো স্তনগ্রন্থি থেকে আসে না। বরং কবুতরের গলার ভেতরে থাকা ‘ক্রপ’ (crop) নামক একটি থলি সদৃশ অঙ্গ থেকে নিঃসৃত হয় এটি। মূলত কবুতররা যে শস্য দানা খায়, সেই খাবার থেকে কিছু খাদ্য তাদের বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য খাদ্য থলিতে রাখে। সেখানে তাদের গ্রন্থি থেকে এক ধরনের সাদা তরল নিঃসরিত হয়, যাতে ঐ খাবার ভিজে তরল মণ্ডের মতো হয়।
বাচ্চাদের খাওয়ানোর সময় কবুতর সেই তরল খাদ্য তাদের খাদ্য থলি থেকে মুখের দিকে বের করে নিয়ে আসে। ছানার যেন খাবার গিলতে কষ্ট না হয় তার জন্য এমনটা করে তারা। কবুতরের দুধ সাধারণ দুধের তুলনায় কিছুটা পুরু আর হলদেটে। ছানা ফুটে বের হওয়ার পর মা-বাবা উভয়েই ঠোঁটের মাধ্যমে ছানাকে এই দুধ খাওয়ায়। সাধারণত ছানার জন্মের পর প্রথম ১০ দিন এই দুধ খাওয়ানো হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, কবুতরের দুধে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাট, অ্যান্টিবডি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ইমিউন সেল। এসব উপাদান নবজাতক কবুতরছানার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করে। এই দুধে থাকা ইমিউন কোষ ও প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া ছানাকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং দ্রুত বৃদ্ধি ঘটায়।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো— পুরুষ ও স্ত্রী উভয় কবুতরই এই দুধ তৈরি করতে পারে। প্রাণিজগতে এমন উদাহরণ অত্যন্ত বিরল। সাধারণত দুধ উৎপাদন মা প্রাণীদের কাজ হলেও কবুতরের ক্ষেত্রে বাবারাও ছানার খাবার তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
শুধু কবুতর নয়, ফ্লেমিংগো ও সম্রাট পেঙ্গুইন প্রজাতির পাখিরাও দুধজাতীয় তরল উৎপাদন করে। তবে কবুতরের দুধ সবচেয়ে বেশি পুষ্টিকর এবং জৈবিকভাবে জটিল বলে মনে করা হয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পিজন মিল্কের রাসায়নিক গঠন ও জৈব প্রক্রিয়ার সঙ্গে মানুষের বুকের দুধের আশ্চর্য মিল রয়েছে। এটি শুধু পুষ্টির উৎস নয়, বরং এক ধরনের ইমিউন সিস্টেম ট্রেনার— যা নবজাতক ছানাকে প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধে সক্ষম করে।
বর্তমানে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে এই দুধ নিয়ে বায়ো টেকনোলজিক্যাল গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীরা খুঁজে দেখছেন, এটি থেকে মানব ব্যবহারের উপযোগী কোনো ইমিউন বুস্টার বা প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট তৈরি করা সম্ভব হয় কি না।